এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দ্যুতি | ***:*** | ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:১৬382706
  • সকাল থেকে অনিন্দ্য আর কণার কথা কাটাকাটি চলছে।অনিন্দ্য কিছুতেই ব্যাপারটা মেনে নেবে না, আর কণাও মানবে না। পুটুস বুড়ির চুল কাটা নিয়ে এই ঝগড়াঝগড়ি। পুটুস বুড়ি এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। বেশ গরম পরেছে। দু বছরের ছোট্ট পুটুসকে তার মাম্মাম চাইছে নেড়ুমুন্ডি করে দিতে। আর অনিন্দ্য সেটাই মানতে পারছে না। ইদানীং পুটুস মায়ের ওড়না মাথায় জড়িয়ে বড় চুল করে। কখনো ওড়নাটা বুকে ফেলে চলে বেড়ায়। পাকা পাকা চোখ করে পুতুলদের নিয়ে বা কখনো টেডিদের নিয়ে হাজার খেলা তার। সে জানেও না ন্যাড়া হওয়া কি! কিন্তু অনিন্দ্য তো জানে। এই মিষ্টি কোঁকড়া চুল, এই দুষ্টু মিষ্টি হাসি, আর ওই ন্যাড়া মুখ জাস্ট নিতে পারছে না অনিন্দ্য। কণার আজ সেকেন্ড হাফে অফিস। অনিন্দ্যর রোজের দশটা পাঁচটা জীবন। কণা ঠিক করেইছে, অনিন্দ্য বেরোলেই সে পুটুসকে নিয়ে গিয়ে পাড়ার সেলুনে নেড়ু করে আনবে। সান ডে বা অনিন্দ্যর জন্য এ কাজ রাখলে হবে না। অনিন্দ্য এ কাজ নিজে করবেই না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কতক্ষণে অনিন্দ্য অফিস বেরোয়। আর অনিন্দ্যও জানে আজ কণা পুটুসকে ন্যাড়া করাবেই। বাড়ি এসে সন্ধ্যেতে সে দেখবে পুটুস নেড়ু।

    কি আশ্চর্য, এই নিয়ে যে এমন বচসা হবে ওদের মধ্যে কে জানতো , ঘাম মুছতে মুছতে বাসে বসে অনিন্দ্য এসব ভাবছে। তার অফিস মৌলালিতে। এই বাসে যেতে যেতে রোজ কত অভিজ্ঞতা তার। ভিড় যেন দিন দিন বাড়ছে। কলকাতা শহরটা হুড়হুড়িয়ে আধুনিক হয়ে গেল। অনিন্দ্যর ছোটবেলায় এত মল এত ফ্ল্যাট কোথায়! বাসে উঠলে বোঝা যায় কি জনসংখ্যা চারদিকে। কণা তো মা হতেই চাইছিল না এই ক বছর আগে। সে নাকি পৃথিবীর ভার আর বাড়াতে চায় না। কি সব অদ্ভুত যুক্তি, অনিন্দ্যকে অনেক বোঝাতে হয়েছে। অবশেষে পুটুস আসে তাদের ঘর আলো করে। পুটুস নামটা কণারই দান। নরম্যাল ডেলিভারিতে হয়েছে, কণা বলে, 'পুচুস করে বেরিয়ে এলো একটা ছোট পুটুস'। সেই থেকে ওর নাম পুটুস। আর ভালো নামটা অনিন্দ্য দিয়েছে, আরাত্রিকা। আজকাল বাবা মায়েরা খুব সচেতনভাবেই নাম রাখতে গিয়ে অ্যাল্ফাবেটের ব্যাপারটা মাথায় রাখেন। যাইহোক, অনিন্দ্য সারাদিনে ব্যাপারটা ভুলতে পারছে না। মনটাই কেমন খারাপ খারাপ। অফিসের ফুরসতে মোবাইল খুলতেই কণার পাঠানো ছবি, স্টেপে স্টেপে পুটুসের নেড়ু হবার ছবি হোয়াটসঅ্যাপে আবার ফেসবুকেও। তাতে এর মধ্যেই কত লাইক কমেন্ট, ওয়াও, লাভের ছড়াছড়ি। পুটুসের মুখে কেমন হাসিটা নেই, ভুরুজোড়া যেন কুঁচকে আছে। এসব কেউ দেখছে না। অনিন্দ্য খুব বুঝছে। পুটুস তো জানেই না ন্যাড়া কি, জানলে প্রতিবাদ করতো। ছবি পাঠিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কণা লিখে রেখেছে, রাগ করো না। ওটা পড়েই অনিন্দ্যর আরো রাগ হচ্ছে।

    আজ পুটুসের জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে অফিস ফেরার পথে। একটা দম দেওয়া ঘাড় নাড়া বুড়ো কিনলো, এসব আর দেখাই যায় না তেমন। দম দিলেই বুড়োটা ঘাড় নাড়তে নাড়তে আর ড্রাম বাজাতে বাজাতে এগোবে। বড় দোকানটার একদম কোণে এটা রাখা ছিল। অনিন্দ্যর চোখ যেতেই ওটাই নিয়ে এলো। কলিং বেল বাজাতে মানার মা দরজা খুলে দিল। মানার মা এই বাড়ির অল ইন অল।সে আছে বলেই কণা এই ইভনিং শিফট করতে পারে। মানার মায়ের পিছু পিছু পুটুসও হাজির। অনিন্দ্য জুতো ছেড়ে আগে হাত ধুলো। জামা ড্রেস চেঞ্জ করে পুটুসের কাছে এলো। এটা অনিন্দ্য পুটুস হওয়ার সময় থেকেই চালিয়ে আসছে। পুটুসের মাথায় হাত বুলিয়ে অনিন্দ্য কিছু বলতে যাবে পুটুস বলে, ' নেই নেই '! অনিন্দ্য হেসে ফেললো। চোখ গোল গোল করে জানতে চাইলো কোথায় গেল? পুটুস নিজের ভাষায় সব বললো। পুটুস সব কথা গড়গড় করে বলে না। তবে মোটামুটি বুঝিয়ে দেয় হাত পা নেড়ে। তবে বেশ কিছু ছড়া রাইমস হাত শিখেছে। সামনের জুনে একটা মন্টেসরি স্কুলে দেবার কথা হচ্ছে। অনিন্দ্য এরপর সেই ঘাড়নাড়া বুড়োকে দম দিয়ে পুটুসের সামনে হাজির করলো। পুটুস বলে উঠলো, 'দাদাই'! অনিন্দ্যর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সদ্য একবছর হয়েছে বাবাকে হারিয়েছে অনিন্দ্য। সে ন্যাড়া হয়নি। কাছা নিলে,ন্যাড়া হলেই কি বাবাকে ভালোবাসা হয়? ওসব অনিন্দ্য বোঝে না। বাবা তো রোজের যাপনে। বাবাকে ছাড়া যে অনিন্দ্যরও চলতো না এক মুহূর্ত। পুটুসের মুখে দাদাই শুনে অনিন্দ্যর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। অনিন্দ্য একবারও কেনার সময় এটা ভাবেনি যে পুটসের এমন মনে হবে। বাবার দাড়ি ছিল, কবি মানুষ ছিলেন। এসব ভাবতে ভাবতে বুড়োটার দম ফুরিয়ে গেল। একটু দূরে গিয়ে থেমে যেতেই পুটুস গিয়ে তাকে কোলে করলো,দাদাই দাদাই বলে চুমু খেলো, আদর করলো। অনিন্দ্যর ভিতরটা কেমন অস্থির হতে লাগলো। পুটুস যে দাদাইকে এভাবে খুঁজে পাবে সে ভাবেই নি।

    হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ! মানার মা দরজা খুলে দিলো সাড়া পেয়ে, কণা আজ তাড়াতাড়ি ম্যানেজ করে এসে গেছে। কণাও চাইছিল ডিনারের আগে বাড়ি ঢুকতে, অন্যদিন রাত বারোটা বাজে। কণাকে দেখে অনিন্দ্য যেন একটু হাল্কা হলো। আর ঝগড়াঝগড়ি না, কাল শনিবার, উইক এন্ডে মাকে দেখতে যায় ওরা, বাবা চলে যাবার পর মা আরো ডিপ্রেশনে চলে গেছেন, ডাক্তারবাবুদের সাজেশনেই একটা মেন্টাল হেলথকেয়ারে মাকে রাখা হয়েছে। শহর থেকে একটু দূরে, মা এখন অনেকটা ভালো। অনিন্দ্য দিন গুনছে কবে আবার মাকে বাড়ি নিয়ে আসবে। কণাকে দেখে পুটুস সেই খেলনা দেখিয়ে 'দাদাই' বলে উঠলো। কণার হাতটা চেপে ধরলো অনিন্দ্য, পাশে বসা কণার কোলে পুটুস এসে উঠলো। ওদিকে মানার মা টেবিলে ডিনার সাজিয়ে হাঁক দিলো, ' দাদাবাবু, বৌদিমনি, খাবার রেডি'। আজ আর কোনো কথা না, শুধু অনুভূতিগুলো খাবি খাক সারারাত।
  • Sanghamitra Dasgupta | ***:*** | ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৩৯382707
  • Darun laglo. Bachhar matha nyara tar sathe Baba k haranor koshto r Mar depression shob mile mishe ekakar.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন