এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গোরা নকশাল- কল্লোল লাহিড়ী ; কিছু কথা

    ঋক ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ | ২৫৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঋক ঘোষ | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৫382386
  • ★গোরা নকশাল- কল্লোল লাহিড়ী
    গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত, অর্থমূল্য-৬০.০০

    "একজন কিশোর ছিল, একেবারে একা
    আরো একজন ক্রমে বন্ধু হল তার।
    দুয়ে মিলে একদিন গেল কারাগারে;
    গিয়ে দেখে তারাই তো কয়েক হাজার!"
    ('জেলখানার কবিতা'- বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

    বইয়ের ভূমিকা তে প্রকাশকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উপন্যাসিকা 'পাঠ খুব সুখকর অভিজ্ঞতা নয়'! অতএব, সাধু সাবধান!! দুটো সমান্তরাল সময় এবং সমান্তরাল খাতে বয়ে চলা জীবন, সমাজ, রাজনীতি এবং অভিন্ন মনন কে তুলে আনতে টানা ন্যারেটিভ এবং দুটো সময়ের লিঙ্ক করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান এর ব্যবহার, চমকপ্রদ। প্রতিটা আখ্যান এর বা phase বলা ভালো, সূচনা হচ্ছে এক বা দু-চার পঙতি কবিতা দিয়ে, যেগুলো নিঃসন্দেহে পাঠক কে প্রস্তুত করে দেবে আখ্যান টিকে আত্মস্থ করতে।
    গোরা নকশাল, একজন মাঝবয়সী উদ্বাস্তু মানুষ, যার এক পা খোড়া হয়ে গিয়েছিল, হাতের মাংস খুবলে গিয়েছিল সরকারী অতিথিশালা য় থাকাকালীন - যে ফিরে আসছে বারবার, যেমন সন্ধ্যামণি গাছের গাঢ় সবুজ পাতার আড়ালে রক্তিম ফুল আসে, তেমনই অমোঘ তার প্রত্যাবর্তন। এই মানুষটা সজীব হয়ে ওঠে টুকনু র স্মৃতির পটে, যখন সে ঠিক করে চিত্রনাট্য লিখবে তার ছোটবেলার পছন্দের মানুষ টির উপর। সেই স্মৃতি মধুর নয় মোটেই, বরং তেতো, অবশ্যই পাঠকের কাছে কারণ এই তেতো স্বাদ না চাখলে গোরা নকশালের কাছে ঘেঁষতে পারা যাবে না। রোম্যান্টিজম এর মোড়ক টা খসে পড়ার পরে সেইসব 'গরীবের নেতা যাদের দূর থেকে দেখা যায়', বা তাদের সরকার ও তাদের পুলিশ, পাঠকের ভাবার বিষয় নতুন প্রবাহ লাভ করবে। চরিত্রনির্মাণে মুন্সিয়ানা প্রথম আখ্যান থেকেই দেখা যায়, যেখানে টুকনুর কাকা হাঁদার পোষা পায়রার নাম 'নকশাল'-টুকনু বিশ্বাস করে যে পায়রাদের টাইটেল হয় নকশাল, যারা নির্দ্বিধায় যেখানে সেখানে উড়ে বেড়াতে পারে! এই বিশ্বাস পরে উপলব্ধিতে পৌছয়। কারখানা ও শ্রমিক রাজনীতির বিভিন্ন চরিত্রের সাথে, চুনু হজমিওয়ালা, ঠুলি, সুশান্ত (চরিত্র..) রা যখন আসে, প্রতিক্ষেত্রেই নতুন করে পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয় গোরা নকশাল, এক এক আঙ্গিকে। লেখক সামনে এনেছেন, গোরা নকশালের দিনবদলের স্বপ্ন যা সে আমৃত্যু লালন করেছে, দৌড়েছে সবার দুমুঠো ভাত-মাথা গোঁজার স্থান-শিক্ষার জন্য, এবং সেই বিপ্লবের বীজমন্ত্র বপন করে চলেছে পিছনে ফেলে আসা মাটিতে, আগামী সম্ভাবনাময় দিনের জন্য। ফলত এই উপন্যাস কখনই রম্য নয়, যখন তেতো অস্বস্তি গলার কাছে দলা বেঁধে আসে, যখন গোরাদের সামান্য দাবীর বদলে গরীবের সরকার কমরেড প্রিয়াংশুর খুলি উড়িয়ে দেয়, খুবলে নেয় প্রেসিডেন্সী র বছর উনিশের সুশান্তর চোখ, খুবলে যায় গোরার হাতের মাংস।
    পাঠক এর কাছে দুটো আঙ্গিকে উপন্যাসিকা টা রাখা যেতে পারে, পৃথকভাবে বা সমান্তরালী। প্রথমত, নকশাল আমলে বন্দুক হাতে উত্তর কলকাতার গলি দিয়ে ছুটে চলার রোম্যান্টিজম কে দূরে রেখে বাস্তবের কাছাকাছি সেই সৈনিকদের মানসিকতা এবং বজ্রনির্ঘোষ এর ধ্বনী স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা - পাঠক কে অবগত করে সেই মূল্যবোধ বা নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের, যার জন্য কোলহারা শত শত মা।
    দ্বিতীয়ত, রাজনীতি নিয়ে সচেতন পাঠক পড়বেন এই উপন্যাস, প্রথম থেকে শেষ শব্দ, প্রতিটা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে। ক্ষমতার কালো রঙে যে কোনো রঙ মিশলে অন্তিমে যে অমানিশা আসে- তা উপলব্ধি করা যাবে। তবে, একজন বিপ্লবীর প্রত্যয় ও আজীবন তার স্বপ্ন কে ধাওয়া করে যাওয়ার প্রয়াস এবং তার পারিপার্শ্বিক এর উপর প্রভাব, পাঠক প্রায় দেখতে পারবেন, লেখকের শৈলীর সুচারু ব্যবহার ও সময়কাল কে উপন্যাসিকার চরিত্র রূপে নির্মাণ করার ফলে।

    পড়ে ফেলুন আর ভাবুন, উপলব্ধিতে পৌছবার যাত্রাপথের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
  • π | ১৯ মে ২০২১ ২৩:২৩734418
  • #পাঠপ্রতিক্রিয়া

    বই  -  গোরা নকশাল
    লেখক -- কল্লোল লাহিড়ী
    প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯
    প্রথম প্রকাশ -- ২০১৭
    মূল্য ৬০ টাকা

    "একজন কিশোর ছিল , একেবারে একা
    আরও একজন ক্রমে বন্ধু হল তার ।
    দুয়ে মিলে একদিন গেল কারাগারে;
    গিয়ে দেখে তারাই তো কয়েক হাজার !"

    জেলখানার কবিতা
    কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    একটা ছোট্ট লাল টুকটুকে বই , বাংলা চটি সিরিজের বই , একটি গুরুচণ্ডালী প্রকাশনা । বইটির পিছনের মলাটে লেখা আছে , এটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত উপন্যাস নয় । অথচ  একটি দুপুর , একটি বিকাল জুড়ে হু হু করে পড়ে ফেললাম বইটি , অব্যক্ত অনুভূতিতে ।

    একটি বালকের দৃষ্টিতে, বালকের জবানীতে  যে উপন্যাস শুরু  , আটের দশক জুড়ে যে বড় হয়ে উঠছে , গঙ্গার ধারে চটকল ও শ্রমজীবী মানুষের সুখ দুঃখ,সমস্যা ও লড়াইএর পটভূমিকায়, পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু পরিবারের সাংসারিক টানাপোড়েনে লালিত যার শৈশব কৈশোর , তার বয়ানে উপন্যাসটি একটু একটু করে পাঠককে আকর্ষণ করতে থাকবে পাতার পর পাতায় ।
    দিনবদলের স্বপ্নদেখা , শারীরিক ভাবে ক্ষয়ে যাওয়া এক সন্তান যখন বইটির চতুর্থ পাতায় , উপন্যাসের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে , সমগ্র রচনাটিতে একটি আলাদা মাত্রা যোগ হয়ে যায় । একটু একটু করে বালক টুকনুর সাথে ভাব হয়ে যায় গোরা নকশালের । একটু একটু করে লালিমাযুক্ত হতে থাকে কাহিনিটি , সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে , ভাষায় , বর্ণনে , চরিত্রে , আদর্শবাদিতায় , মূল্যবোধে , মনুষ্যত্বে আর দুরন্ত গতিশীলতায় ।

    বইটির বক্তব্যের আকূতি, লেখার স্টাইল , সমস্তরকম জীবনবোধকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া  এই সবকিছু আমার ভালো লেগেছে । লেখক তাঁর   নিজস্ব ভঙ্গিতে ,তীব্র গতিতে, অন্তরের ভালোবাসায়  উপন্যাসটিকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন পাঠকের তোয়াক্কা না করে । কাহিনি বুননের সময় কোথাও এতটুকু আপোস করেননি তিনি , যখন যেমন খুশি বিচরণ করেছেন , যে কোনো সময়কালে , যেকোনো চরিত্র চিত্রণে , আর তাঁর এই  বেপরোয়া আচরণ উপন্যাসটিকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে অধ্যায়ে অধ্যায়ে । পাঠককে আকর্ষণ করেছে তীব্রভাবে।
    এইখানে এই বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে যাওয়া ধৃষ্টতা হবে , উপরন্তু পাঠকের পাঠের মজা নষ্ট করা উচিত নয় । এ শুধু পড়ে দেখার বই , অনুভব করার কথন , এক বিকেল জুড়ে এ বই পড়ে উঠলে মন ভরে থাকবে বহুক্ষণ । রাতে শুতে যাবার সময় মনে পড়ে যাবে , গোরা নকশাল ঘুমের ওষুধ খেত না , পাছে সে ঘুমিয়ে পড়ে আর  দেখতে না পায় দিনবদল ।

    অনেক দিন পড়ে 'চিলিতে গোপনে' বইটির উল্লেখ পেয়ে আমার নিজের সংগ্রহের বইটি শেল্ফ থেকে টেনে বের করি , ২০০৯ এর বইমেলায় কেনা । আবার করে পড়তে ভালো লাগছে খুব । গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর ' ক্ল্যাণ্ডেস্টাইন ইন চিলি' বইটির যিনি ভাষান্তর করেছিলেন সেই শ্রদ্ধেয় মানুষ টির আরোগ্য কামনা করছি এই মুহূর্তে ।

    শেষে বলি , বইটির ছাপা খুব পরিচ্ছন্ন , কিন্তু হয়তো আকারে আরেকটু বড় হলে পড়তে , হাতে ধরতে সুবিধা হতো ।
    লেখক ও প্রকাশককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

    ভাস্বতী দাশগুপ্ত
    কলকাতা ২৬

  • π | ১৯ মে ২০২১ ২৩:২৮734421
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন