এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভূতের গল্প

    Indralekha Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ২৮৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Indralekha Bhattacharya | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫382304
  • আসানসোলের সেই বাড়িটা।।

    ঘটনাটা বহুযুগ আগের।আমার মায়ের ছোটবেলায় ঘটেছিল। মায়ের, ও দিদার মুখ থেকে যেমনটি শুনেছি তেমনটাই বলছি।
    আমার মায়ের বাবা, মানে দাদুর মৃত্যু হয় ভারি অকালেই। পিছনে পড়ে রইলেন দিদা, আর তাঁদের ছেলেমেয়েরা, মানে আমার মা ও অন্যান্য মামা-মাসিরা। কেউ সদ্য কৈশোর পেরিয়েছেন, কেউ বা একেবারেই ছোটো। মোটের উপর অধিকাংশই তখনো পেরোননি নাবালকত্বের চৌকাঠ।

    কিন্তু হলে কি হবে, মাথার উপর থেকে বাবার ছায়া হারিয়ে ইতোমধ্যই শুরু হয়ে গেছে তাঁদের জীবন-সংগ্রাম। মাসিরা তখন কেউ চাকরি খুঁজতে, ও কেউ চাকরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। মা, ও বড়মামা তখনো স্কুলে। ছোটোমামা খুবই ছোটো।
    রেলওয়ে-অফিসার দাদুর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা যথাযথ পেলেও, দিদাকে ছাড়তে হলো সরকারি আবাসন। আসানসোল শহরে তখন বাসার তেমন অভাব না থাকলেও সদ্যবিধবা অনভিজ্ঞ দিদা ও অল্পবয়সী মামা মাসিরা সাধ্যের মধ্যে বাসোপযোগী, মনোমত বাসা খুঁজতে যথেষ্ট অসুবিধা ভোগ করছিলেন। পরপর কয়েকবার বাসা পাল্টানোর পর দিদা তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুঁজেপেতে অল্প ভাড়ায় একটি সেকেলে বাড়িতে এসে উঠলেন ( বলতে ভুলে গিয়েছি যে, তখন ওঁরা সব ছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা)। এতোবড় বাড়িটি সস্তায় ভাড়া পেয়ে খুশি সবাই।
    কিন্তু নতুন বাড়িতে আসার কিছুদিনের মধ্যেই কেমন যেন এক অজানা ভয়ের গন্ধ এসে লাগলো সবার নাকে। যেন হঠাৎ বয়ে আসা কোনো অশুভ হাওয়া থেকে থেকেই গায়ে লাগিয়ে যেতে লাগলো কেমন অদ্ভুত শিরশিরানি। টের পেয়েছে প্রত্যেকেই, বিভিন্ন দিন ও মূহুর্তে।
    পড়াশুনা-খেলাধূলো-কাজকর্মে ভরা দিনগুলো মাঝে মাঝেই থমকে দাঁড়াতে শুরু করলো ভয়ের চাবুকে। নিত্যিরাতে নিয়মিতসময়ে বাড়ির ছাদে এমন ভারি শব্দ হয় যেন জোড়াপায়ের লাফ। সবাই সবার মুখ চায়, আর মনের ভয় লুকিয়ে কপট আত্মবিশ্বাসে নানা সম্ভাব্য কারণের ব্যাখ্যান করে। কিন্তু জিজ্ঞাসাটা থেকেই যায়, শব্দের উৎস জানা যায়না।
    চাঁদনি রাতে বারান্দায় দাঁড়ালো রোম্যান্টিক ছোটোনমাসি। আহা, কি অপরূপ জোছনা! কিন্তু ওকি?! ছাদের ভাঙ্গা পাঁচিলের ধার ঘেঁষে লম্বা খোলাচুলে কে যেন এদিকে উঁকি মারছেনা?! ওমাগো!! চিৎকার করে ওঠার আগেই সে গায়েব! যেন চোখের পলকে! সত্যি না চোখের ভুল? মাসি ততক্ষণে সেখান থেকে পড়িমরি ছুট। টলটলে জোছনায় সেদিন যেন লেগেছিলো ভয়ের রঙ।
    একবার চিকেনপক্স হল আরেক ডানপিটে বোন মিতুনমাসির। অন্ধকারে একলাঘরে ঘুমোচ্ছিল।ভাইবোনেরা দরজার ঠিক বাইরেই লাগানো বারান্দায় বসে পড়াশুনায় ব্যস্ত। হঠাৎ সবার কানে এলো মিতুনমাসির ভয়ার্ত চীৎকার, “ওরে, তোরা এখানে আয়! শিগগির!" দৌড়ে গেলো সবাই। ভয়ে কাঁপছে তখন সাহসী মিতুনমাসি। ভয়ের কারণ হিসাবে মাসি যা বলেছিল, তা হল, আধো জ্বর ও আধো তন্দ্রার ঘোরের মধ্যেও ওই অন্ধকার ঘরে সে ঠিক অনুভব করে কে যেন তৃতীয় ব্যক্তি রয়েছে তার শিয়রের কাছেই। তার মুখের উপর ঝুঁকে দেখছে। মাসি অন্ধকারে তাকে চোখে দেখতে পাচ্ছিলোনা ঠিকই, কিন্তু মুখের উপর টের পাচ্ছিলো তার ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস।
    আবার একদিন ধরো, সবাই পড়ছে; হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে বন্ধ দরজার ওপারে যেন কেউ দড়াম করে ধাক্কা দিয়ে পড়লো। চট করে লাফিয়ে উঠে দরজা খুললো বড়মামা। ওমা, কোথায় কী!কেউ নেই। সব নিঝুম। পাড়ায় শুক্লামাসিমার বাড়িতে প্রথম বেড়াতে যাওয়া হলো। কথার ফাঁকে একবার বললেন, ‘‘ওবাড়িটা নিলে?’’ ‘কেন মাসিমা, কেন মাসিমা?’ আর উত্তর নেই। “না, থাক। কিছু নয়।”
    বলা বাহুল্য ওবাড়িতে থাকতে পারেননি ওঁরা। পরে জানা গেছিলো আসানসোলের একটা কুখ্যাত ভূতুড়েবাড়ি ওটা। প্রায় দশবচ্ছর খালি পড়েছিলো, হাজার চেষ্টাতেও বেচা যায়নি। আবার বাড়তি সংযোজন হল বাড়ির ইতিহাসের সাথে জড়িত একটি করুণ স্টোভ অ্যাকসিডেন্ট-এর গল্প। শিকার এক গর্ভবতী মহিলা। আবার তার উপর সংযোজন হল, বাড়ির খুব কাছে অবস্থিত শেরশাহের আমলের একটি ঐতিহাসিক ইঁদারা। যাকে বলে সোনায় সোহাগা।

    এসব বহুযুগের কথা। এখন সে বাড়ির কী হাল, জানিনা। মায়ের মুখে যেমন শুনেছি, বললাম। বিশ্বাস না করলে কিছু করার নেই।
  • Atoz | ***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩382305
  • প্রোমোটাররা নিয়ে হয়তো ভেঙে বহুতল করেছে। ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে যে কী অবস্থা! আস্তিকে নাস্তিকে ভূতে ভগবানে ছয়লাপ কান্ড। ঃ-)
  • aranya | ***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৭382306
  • তেনারা আছেন, এ আমি বরাবরই জানি :-)
    বেশ লাগল। আরও হোক অলৌকিক জগতের কথা।
  • সিকি | ***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:০৬382307
  • সেই নায়হাতির শ্বেতা যে কোথায় গেল ...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন