এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জয় কানহাইয়া লাল কি

    Suvendu Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৩০১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Suvendu Debnath | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১৭380862
  • সম্প্রতি কলকাতা এসেছেন কানহাইয়া কুমার। উঠে এসেছেন শিরোনামে। পেশাগত কারণে ২০১৬র এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম তার বাড়ি, গোটা গ্রাম এমনকী গোটা জেলা ঘুরে ঘুরে জেনেছি কানহাইয়ার উঠে আসার নেপথ্য কাহিনী। এমনকী যে কলেজ থেকে তার উঠে আসা, যার হাত ধরে উঠে আসা, সন্ধান করেছি সেখানেও। ভিন্নচর্চার ২০১৬ মে সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রাসঙ্গিক বিষয় বলেই আবারও তুলে আনলাম লেখাটি।

    হাথি ঘোড়া পালকি
    মদিনা গোপাল কি
    ভারতমাতা কি লাল কি
    জয় কানহাইয়ালাল কি

    ২০১৪র গোড়ার দিকে পরিচালক সইদ আহমেদ আফজল পরিচালিত একটি ফিল্ম দেখেছিলাম ইয়ংগিস্থান। তরুণ নায়ক তার বাগ্মিতায় যুব সম্প্রদায়কে, দেশকে তারুণ্য আর উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায়। সাম্প্রতিক আরেক তরুণ কানহাইয়া কুমার তার বাগ্মিতায় সারা দেশকে প্রায় নাড়িয়ে দিয়েছেন। পক্ষে হোক বা বিপক্ষে সারা ভারতের সমস্ত শ্রেনীর মানুষকে তার ভাষণে মত প্রকাশ করতে বাধ্য করেছেন। ফিল্মের নায়কের সাথে বাস্তবের কানহাইয়ার পার্থক্য প্রচুর। রাজনীতিতে অনিহা ফিল্মের নায়ক প্রধানমন্ত্রী বাবার মৃত্যুতে রাজনিতীতে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর লড়াইটা ছিল ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতাধারীদের বিরুদ্ধে। কানহাইয়ার লড়াইটা সেখানে একেবারে বিপরীত – ক্ষমতার অলিন্দে না থেকেও ক্ষমতার বিরুদ্ধে। কে এই কানহাইয়া কুমার? তাঁর বেড়ে ওঠা, সামাজিক শিকড়ের খোঁজ করতে করতে পৌঁছে গেলাম বিহারের বেগুসরাই জেলায়।
    বেগুসরাই নামটি বেগম (রানী) সরাই (অতিথী নিবাস) থেকে এসেছে। ভাগলপুরের বেগম সিমারিয়া ঘাট দর্শন করতে এসে বেগুসরাইতেই থাকতেন। বেগুসরাই এর স্থাপনা ১৮৭০ সালে মুঙ্গের জেলার সাব-ডিভিসান হিসাবে। ১৯৭০ এ বেগুসরাইকে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ২০১১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী২৫১,১৩৬ জন মানুষ এখানে বসবাস করেন। এরমধ্যে ১৩,৩৯৩১ জন পুরুষ ও ১১৭,২০৫ জন মহিলা। বেগুসরাই বিখ্যাত আই.ও.সি.এল ও বেগুসরাই অয়েল রিফাইনারির জন্য।
    বেগুসরাই এর প্রত্যন্ত গ্রাম বিহটের মসনদপুর টোলায় ১৯৮৭ সালে কানহাইয়ার জন্ম। বাবা জয়শঙ্কর সিং, মা মীনা দেবী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে কানহাইয়া মেজো। বড় ভাই মণিকান্ত অল্প শিক্ষিত এবং অসমের বঙ্গাইগাঁওতে একটি বেসরকারি সংস্থায় গত ১৪ বছর ধরে সাত হাজার টাকার বেতনে সুপারভাইজারের পদে কর্মরত। দিদি জুহি কুমারী বিবাহিত। ছোট ভাই প্রিন্স দিল্লীতেই থাকেন ও কানহাইয়ার তত্ত্বাবধানে ইউ.পি.এস.সি র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কানহাইয়ার ঠাকুরদা দশ পয়সা দৈনিক মজুরীতে কাজ করতেন একটি চিনি মিলে। তারপর কিছুদিন বিহারের গোরখপুরে রেলে কাজ করেন, পরে বন্ধু তথা কংগ্রেসের বিখ্যাত নেতা বিহারের প্রথম কেবিনেট মন্ত্রী রাম চরিত্র সিংয়ের সুপারিশে বারাউনি থার্মাল পাওয়ারে হেড ফোরম্যানের কাজ পান। কানহাইয়ার বাবার সে ভাবে কোন বাঁধা চাকরি ছিলো না। কিছুদিন তিনি গাড়ি চালিয়েছেন, কিছুদিন দৈনিক মজুরীতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন, শেষে বাড়িতে একটি স্টোনস চিপ ভাঙার চাক্কি অর্থাৎ কল বসিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৭ এর পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত জয়শঙ্কর সিংই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। বিভিন্ন রোগ এবং ২০০৯ এ প্রথম হার্ট অ্যাটাক, ও তার পরে উপর্যুপরি অ্যাটাক তাকে সম্পুর্ণ শয্যাশায়ী করে ফেলে। ২০১৩ সালে তিনি লাক্‌য়া অর্থাৎ প্যারালাইজড হয়ে যান, পড়ে গিয়ে কোমর ভাঙেন। তারপর থেকে বিছানাই তার একমাত্র জায়গা। ২০০৭ সাল থেকে সংসারের হাল ধরেন মীনা দেবী। মনিকান্ত চলে যান আসামে। বহু চেষ্টায় গ্রামের অঙ্গনওয়ারি তে কাজ পান মীনা দেবী। মাইনে ৩০০০ টাকা।
    বড়ভাই মণিকান্তের মতে কানহাইয়া ছোট থেকেই ছিলেন একদম অন্যরকম। বুদ্ধিমান, কোন পরিস্থিতিতেই হার না মানা ধীর স্থির। তারা ঠিক করেন যে করেই হোক কানহাইয়ার পড়াশুনা চালিয়ে যাবেন। মসনদপুরের প্রাইমারি স্কুলে পড়া শেষ করে কানহাইয়াকে তাই তারা ভর্তি করেন ৪ কিমি দূরের সানরাইজ পাবলিক স্কুলে। কেমন ছাত্র ছিলেন কানহাইয়া ছোটবেলায়? প্রাইমারি স্কুলের টিচার ও দূর সম্পর্কের আত্মীয় চন্দ্রকুমার সিং বলেন: ছোটবেলা থেকেই যে কানহাইয়া ভীষণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন তা নয়, কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের তুলনায় কিছুটা ভালো ছাত্র ছিলেন। তার সবচেয়ে বড় গুন ছিল বিচার বিশ্লেষন করার ক্ষমতা। যে কোনো বিষয়েই তিনি বিশ্লেষণ করে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মেনে নিতেন না। কানহাইয়া ছিলেন নরম স্বভাবের, ধীর স্থির। এবং ছোটবেলা থেকেই গরিবঘরের ছেলে হওয়াতে বড়লোকদের প্রতি তার ধারণা খুব একটা ভালো ছিলনা।
    চন্দ্রকুমার বাবু ও স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা কিছুতেই মানতে নারাজ যে কানহাইয়া কোনোরকম দেশবিরোধী স্লোগান দিতে পারেন। আরেক শিক্ষিকা কানহাইয়ারই সমবয়সী ও বিহটের বাসিন্দা সঙ্গীতা কুমারীর মতে তার সঙ্গে কানহাইয়ার রাজনৈতিক মত পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বাস করেন না যে কানহাইয়া এমন করতে পারেন। ঘটনার সূত্রপাতের সময় থেকেই তিনি চোখ রাখছেন টিভির পর্দায়। তার মতে এই বিহাট গ্রামের মাটি বারে বারে দেশপ্রেমের নিদর্শন রেখেছে। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে এখন অবধি কোনো প্রমান কেউ দেখাতে পারেনি যেখানে কানহাইয়া কুমার দেশ বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টও তাকে জামিন দিয়েছে। প্রায় একই কথা সানরাইজ পাবলিক স্কুলের হেড মাষ্টার রাম কুমার সিং এর গলাতেও। এখানেই কানহাইয়া ফাইভ থেকে ক্লাস সেভেন অব্ধি পড়াশোনা করেছেন। তার মতে কানহাইয়া কিছুতেই দেশ বিরোধী হতে পারেন না। ছোট থেকেই কানহাইয়া ছিলেন অন্য প্রকৃতির মানুষ। স্কুলে কোন রকম দুষ্টুমি করতেন না। টিফিন টাইমেও একজায়গায় চুপচাপ বসে থাকতেন। রামরতন বাবুর কথায় : সাব জি ইয়ে বিহট ক্রান্তিকারিওকা জনম ভূমি হ্যায়। ইহা কি মিট্টিমে ক্রান্তিকারী উগতে হ্যায়।
    রামবাবুর কাছেই জানলাম বিহটের ইতিহাস। বেগুসারাইয়ের একটি বড় গ্রাম বিহট। জনসংখ্যা পঞ্চাশ হাজার। বাইশটি টোলা অর্থাৎ ছোট ছোট এলাকা নিয়ে বিহট গ্রাম। বছর পাঁচেক আগে অব্ধি এই গ্রামটি চারটে পঞ্চায়েতে বিভক্ত ছিল। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ মিউনিসিপ্যালিটি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যা পনেরোটি ওয়ার্ডে বিভক্ত। গ্রামের পশ্চিমে গড়হাড়া এক্সচেঞ্জ ইয়ার্ড এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় এক্সচেঞ্জ ইয়ার্ড। পূর্বদিকে আই.ও.সি.এল রিফাইনারি, দক্ষিণে হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজ কর্পোরেশান ও বারাউনি থার্মাল পাওয়ার স্টেশান। উত্তরে রয়েছে এনএইচ ৩১। বিহট গ্রামকে ঘিরে রয়েছে দুটি হাইওয়ে। একটি এনএইচ ৩১ দ্বিতীয়টি এনএইচ ২৮। বিহটে মোট কুড়িটি মিডল স্কুল (পঞ্চম – অষ্টম), তিনটি হাই স্কুল ও দুটি কলেজ রয়েছে। এই গ্রামের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর উচিত সিং ১৯৪২ এ ইংরেজ পুলিশের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন। বিহারের প্রথম কেবিনেট মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা রাম চরিত্র সিং, যিনি বিহারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিং এর মন্ত্রীসভার সেচ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী ছিলেন; এই গ্রামের মানুষ। ১৯৫৭ সালে বিহারের প্রথম বামপন্থী বিধায়ক প্রবাদপ্রতিম সিপিআই নেতা তথা রাম চরিত্র সিংয়ের ছেলে চন্দ্রশেখর সিং, বাজপায়ী সরকারের আমলে ইউনিয়ন হোম সেক্রেটারি ও বর্তমানে সিকিমের রাজ্যপাল বাল্মিকি প্রসাদ সিং, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রামশরন শর্মা প্রভৃতি এই গ্রামের মানুষ। সিমারিয়া গ্রামের মানুষ রাষ্ট্রকবি রামধরি সিং দিনকরও বিহটেই এসে থাকতেন পরবর্তী কালে। রামরতন সিং আরো জানালেন “সাহেব আপ জান লেই ও এক আলগহি কিসিমকা লৌন্ডা থা। কাভি কিসিসে আথি লড়াই ঝগড়া নেহি, হামেশা দুসরে কি মদতবা মে খাড়া হো জানে ওয়ালা বাচ্চা থা ওহ। অ্যায়সান বাচ্চা কাভি দেশদ্রোহ জ্যায়সা ঘিনোনা কাম করহি না সাকথ হো”। তাহলে সত্যিটা কি? ঠিক কি ঘটেছিল ৯ই ফেব্রুয়ারী? কেনইবা ১২ তারিখ কানহাইয়াকে গ্রেপ্তার করে দিল্লী পুলিশ আর ১৩ তারিখে ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ১২৪-এ ধারায় দেশদ্রোহিতা ও ১২০-বি ধারায় অপরাধমুলক ষড়যন্ত্রের চার্জ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে? ঘটনাক্রম থেকে একটু পিছিয়ে দেখা যাক। দেশকে আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই সাথে দেশীয় রাজনিতীতে ঘটে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় চিরকালই এক স্বতন্ত্র স্বর। তারা রোহিত ভেমুলার মৃত্যুতে দোষীদের শাস্তি ও ইউজিসি অকুপায়ী নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এরই মধ্যে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী জেএনইউ র ক্যাম্পাসে একদল ছাত্র একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের অনুষ্ঠানটি ছিল পার্লামেন্টে হামলাকারী জঙ্গী নেতা আফজাল গুরুর মৃত্যু দিন পালন। সেখানে তারা স্লোগান দেয় আফজলের সমর্থনে এবং দেশের বিরুদ্ধে। এবং বলা হয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজক জেএনইউ র ছাত্র সভাপতি কানহাইয়া কুমার। এরপরই বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি এবং বিজেপির ছাত্র সংগঠন এভিবিপি কানহাইয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। যার ভিত্তিতে কানহাইয়া কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ই ফেব্রুয়ারি। সেই সাথে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে দেখানো হয় সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও। ভীড়ের ভিতর কানহাইয়া কুমারকে দেখা যায় স্লোগান দিতে। এরপরই দেশ জুড়ে নেমে আসে প্রতিবাদের ঝড়। চ্যানেলে চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ, খবরের কাগজের প্রথম পাতায় উঠে আসেন কানহাইয়া। ১৫ই ফেব্রুয়ারি কানহাইয়াকে পাটিয়ালা কোর্টে তোলার সময় একদল আইনজিবী কানহাইয়া সহ জেএনইউর ছাত্র অধ্যাপক এবং সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। অভিযোগের তীর যায় বিজেপি বিধায়ক ওপি শর্মার দিকে। সুপ্রিম কোর্ট কানহাইয়ার নিরাপত্তার দিকচিহ্ন নির্দেশ করে দেয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয়বার কোর্টে তোলার সময় আবার কানহাইয়ার উপর হামলা হয়। তাকে মারধর করা হয় সেই সাথে তার প্যান্ট খুলে নেওয়া হয়। পুলিশ ছিল নির্বাক দর্শক। সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্যের একটি প্যানেল গঠন করে যারা পুলিশের গাফিলতিকেই দায়ি করে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট করেন। সুপ্রিম কোর্ট পুলিশকে কানহাইয়ার বিরুদ্ধে প্রমান দাখিল করতে বললে পুলিশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ কোর্টে পেশ করে যার একটি জি নিউজ চ্যানেলের ভিডিও। কোর্টের নির্দেশে ভিডিওগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। ফরেন্সিক রিপোর্টে প্রকাশ পায় সেই ভিডিও গুলি ডক্টরড ভিডিও অর্থাৎ জাল। তিন চারটি ভিডিও ফুটেজ মিলে তৈরি করা। এবং তার ভয়েসও ট্যাম্পারিং করা। এরপরই ২রা মার্চ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস প্রতিভা রানি কানহাইয়া কুমার কে ১০০০০ টাকার বিনিমিয়ে অন্তরিম জামিনে মুক্তি দেন। তিনি বলেন পুলিশ এমন কোন ভিডিও রেকর্ডিং নেই যেখানে কানহাইয়াকে দেশ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাকে মুচলেখা দিতে হয় জামিনে থাকা কালিন তিনি কোন দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
    এতসব ঘটার পর সাধারণ মানুষ ভেবে উঠতে পারছিলেন না তারা কানহাইয়া কে কি চোখে দেখবেন! দেশদ্রোহী নাকি দেশপ্রেমী। ছবিটা বদলে যেতে শুরু করলো ৩রা মার্চ সন্ধ্যেবেলা থেকে। জামিনে মুক্ত কানহাইয়া কুমার জেএনইউ র ক্যাম্পাসে ৫৬ মিনিটের একটি দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। কি ছিল সেই বক্তৃতায়? কানহাইয়া খুব সহজ ভাষায় সেই বক্তৃতায় বলেন তিনি দেশ তেকে মুক্তি চাননা, মুক্তি চান দেশের মধ্যে থেকে। মুক্তি চান দুর্নিতি থেকে, মুক্তি চান অনাহার থেকে, মনুবাদ থেকে, মৌলবাদ থেকে, ধর্মের নামে হানা হানি থেকে, মুক্তি চান শিক্ষার ব্যবসায়ী করন থেকে। তার সহজ ভাষা, তার হাল্কা চালের রসিকতা, এবং যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য তাকে হঠাৎ করেই খলনায়ক থেকে নায়ক বানিয়ে দেয়। সারা দেশ জুড়ে হইচই পড়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকেই যায়। না তার দেশপ্রেম অথবা দেশদ্রোহীতা নিয়ে নয়। প্রশ্ন তার এই বাগ্মিতা নিয়ে। অসাধারণ এই বাগ্ময়ী ছেলেটির রহস্য ভেদ করেন তার বড় ভাই মনিকান্ত। মনি বলেন তার ভাই ছোট থেকে অন্যরকমের। স্কুলে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক কি ডিবেট সবেতেই কানহাইয়া যোগ দিত সবার আগে। এবং কোনো বিষয়ের একেবারে গভীরে ঢুকে নিখুঁত এবং তীক্ষ্ণ বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই কানহাইয়া তার বক্তব্য রাখতো। সেই কারণেই সে মসনদপুর ও আসেপাশের টোলা গুলিতে ছিল ভীষণ জনপ্রিয়। সমস্ত মসনদ পুর ও বিহট জুড়ে আমি এমন একজনকেও খুঁজে পাইনি যারা বিশ্বাস করে কানহাইয়া দেশদ্রোহী বক্তব্য রাখতে পারে। কানহাইয়ার গ্রাম বিহট মুলত বিহারের ভুমিহারদের গ্রাম। এবং বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিআই এর দূর্ভেদ্য দুর্গ বলে বেগুসরাই এবং বিহটকে গন্য করা হয়। বিহাটকে বলা হতো বিহারের বারদৌলি। প্রবাদপ্রতিম নেতা কমঃ চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে বিহট এবং বেগুসরাই হয়ে উঠেছিল বাম আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। বেগুসরাইকে বলা হত লেলিনগ্রান্ট আর বিহট বলা হত মিনি মস্কো। চন্দ্রশেখর সিং প্রায় পাশের বাড়ির লোক হওয়াতে কানহাইয়ার পরিবার বাম সমর্থক। কানহাইয়ার জীবনে চন্দ্রশেখরের প্রভাব ছিল অপরিসীম। ছোট থেকেই তার আদর্শে বড় হয়েছে সে। আরেক নেতা শিবশঙ্কর শর্মার প্রভাবও ছিল তার জীবনে। গ্রামতুতো ঠাকুরদা বালকৃষ্ণ সিং এর হাতেই তার রাজনৈতিক জ্ঞান। সেই সাথে তার পারিবারিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থাও তাকে মানসিক ভাবে শক্ত করে তুলেছিল। বাড়ি থেকে প্রায় ২ মাইল দূরে ১৯৯৫ সালে ক্লাস ফাইভে সে ভর্তি হয় সানরাইজ পাবলিক স্কুলে। ১৯৯৭ সাল অব্ধি ক্লাস সেভেনে সে সেখানেই পড়াশুনা করত। স্কুলে যেত পায়ে হেঁটে। এক অদ্ভুত গল্প শোনালো কানহাইয়ার সহপাঠি প্রদীপ কুমার সিং। তাদের দুজনকে স্কুলের সব থেকে কুলেস্ট বয় বলা হতো। কারণ গ্রীষ্মের ভর দুপুরে গরমে যখন সবাই ঘামতো আর কাগজের পাখা নিয়ে হাওয়া খেত তখন কানহাইয়া আর প্রদীপ নির্বিকার বসে থাকতো। জিঞ্জাসা করলে বলতো তাদের গর্মি লাগে না। কেন গরম লাগতো না প্রশ্ন করাতে মিটিমিটি হাসতে লাগল প্রদীপ। তারপর হেসে বলল “ কানহাইয়া বহুত সিয়ানা চিজবা থা। উসকা দিমাগবা কাফি তেজ থা। মেরা আউর উসকা একহিঠো সকুল ডেরেস থা। টিফিনমা আগার হাম খেলত হ্যায় অথি ঘরমা লাগেগা পিটাই। ইসিলিয়ে কানহাইয়া নে দিমাগবা লাগায়া থা কি হাম টিফিনমা খেলত নেহি লাগে। আগার নেহি খেলত হ্যায় তো কাপড়া গন্দা বি না হই আউর গর্মী ভি না লাগে” অবাক হলাম কানহাইয়া ছোটবেলায় অন্য বাচ্ছাদের মত খেলত না? আবার প্রদীপ হাসে “খেলত নেহি? আরে বোলা না উ তো জিনিয়াস হ্যায় ভাই, ফরেন দিমাগ। সকুল সে ওয়াপ আনে কি বাদ দুসরা কাপড়া পেহেনকার খেলত হো। ফুলওয়ারি মে হাম লুকাছুপি খেলত থা। হাম সব ইশ পেড় মে ঊস ঝোপ মে ছুপতা থা আউর উ সয়তান উঁচি পের কা সবসে উচি ডালি মা যাকে বৈঠতা থা। জবতক কই উসে ঢুন্ডে দুসরা কই পাকড় যাতা থা”। চা নিয়ে এলেন কানহাইয়ার মা। তাকে জিঞ্জাসা করলাম কি খেতে ভালোবাসে আপনার ছেলে? মীনাদেবী বললেন ‘চাওল’ দিনে একবার তার ভাত চাই-ই চাই, নইলে মন ভরে না। কোনো কারনে ভাত না হলে সেদিন কানহাইয়ার তৃপ্তি হত না। মীনা দেবীকে প্রশ্ন করি যখন তিনি খবর পেলেন কানহাইয়া দেশ বিরোধী স্লোগান দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে তার কি মনে হয়েছিল। কানহাইয়ার মা জানান প্রথমে তিনি একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন, তারা গরিব আদমি, কিন্তু তাঁর পরওয়ারিশ এর উপর তাঁর পুরো ভরসা ছিল তার আদরের মেজো ছেলে এমন করতে পারে না। রাজনিতীর জন্য ছেলে ফাঁসানো হয়েছে। মোদির সম্বন্ধে তার কি ধারণা প্রশ্ন করাতে তার সপাট জবাব, আমি আর ওনাকে কি বলবো?আমি একজন মা, উনি নিজেকে একজন চাওয়ালার ছেলে বলেন আর আমার ছেলে কে ফাঁসিয়ে দিলেন মিথ্যে আরোপে। আগর ওনার ছেলে যদি এমন করতো তখন কি উনি নিজের ছেলেকে ফাসাতেন? আমি একজন সাধারণ মহিলা আমি আর এর বেশি কি বলবো! একটু দুষ্টুমি করে জিঞ্জাসা করেছিলাম যদি মোদি এক মাসের জন্য ওনার কাছে এসে থাকেন ছেলের মতন উনি কি শেখাবেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে? হাসলেন মীনা দেবী, “ম্যায় আউর ক্যা সিখাউঙ্গী উনহে, উহ তো আনেওয়ালা হ্যায় নেহি, ফিরভি আগার আতে হ্যায় তো ম্যায়নে জিস তরহা সুখা রোটি খিলাকে আপনে বাচ্চে কো পালী হু, উসি তরহা পালুঙ্গী উনহে। আউর সিখাউঙ্গি জিতনা মিলতে হ্যায় উত্নে মে হি খুশ রহো। আর কাহুঙ্গী ইশ তরহ কা প্রলোভন না দে, জো খুদ কর সাকতে হো উতনা হি করে”। আরেকটু খুঁচিয়ে প্রশ্ন করি মোদিজির কোন দোষটাকে উনি বদলাতে চান? একটু ও না ভেবে গ্রামের সেই সাধারণ মহিলা উত্তর দিলেন, “ওহি ঝুট যো উহ বলতে হ্যায়”। পাশ থেকে মনিকান্ত বলে উঠলেন মোদিজির বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। উনিও লোগতন্ত্র বাস করেন আমরাও করি, আমাদের আপত্তি শুধু ওনার কট্টরপন্থা নিয়ে। তবে যে ব্যাপারটা মনিকান্তর ভালো লেগেছে তা হলো এই পুরো ঘটনায় মোদি কোন মন্তুব্য করেননি অন্য বিজেপি নেতাদের মত। কোথাও না কোথাও গিয়ে হয়ত মোদি জানেন যে তার ভাই নির্দোষ। মোদিজি খারাপ মানুষ নন। বিজেপি সাংসদ উষা ঠাকুরের মন্তব্য ছিল কানহাইয়ার মা তার ছেলেকে ছোটবেলায় দেশ ভক্তির গান শোনায় নি। এই কথার উপর মীনা দেবী বলে ওঠেন “জ্যায়সে এক বিধায়ক বলি বিধায়ক কি তরহ, মা কি তরহ আগার বলতে তো অ্যায়সা থোড়ি বল পাতে”? প্রশ্ন করেছিলাম স্মৃতি ইরানিকে কি শেখাতে চান? মুখের উপর বললেন কিচ্ছু না। “ওহ মুঝসে শিখনে কি লায়েক নেহি তো ক্যাসান ম্যায় উসে সিখাতি” স্মৃতি ইরানির সিরিয়াল কখনো দেখেছেন জিঞ্জাসা করাতে বললেন সিরিয়ালের তুলসিকে দেখে মনে হত ভালো মেয়ে এখন বুঝতে পারছেন ঐ সিরিয়ালের খলনায়িকার থেকেও ভয়ংকর। ওইরকম ভোলাভালা একটা মুখের পেছনে এমন একটা মুখ লুকিয়ে আছে জানলে দেখতেন না।
    কথা বলতে বলতেই ফিরলেন বলবন্ত সিং কানহাইয়ার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। সাথে কানহাইয়ার জ্যাঠা রাজিন্দর সিং , ভাই প্রিন্স। তারা গিয়েছিলেন বিজেপি যুবনেতা কুলদীপ ভার্সনৈ আর উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল সেনা দলের নেতা আদর্শ শর্মার বিরুদ্ধে করা কেসের শুনানিতে। কুলদীপ হুমকি দিয়েছেন যে কানহাইয়ার জিভ কেটে আনতে পারবে তাকে তিনি পাঁচ লাখ টাকা দেবেন আর আদর্শ দিল্লীতে পোষ্টার লাগিয়েছেন যে কানহাইয়ার মুন্ডু কেটে আনতে পারবেন তাকে তিনি ১১ লাখ টাকা দেবেন। বলবন্ত সিং এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আজ কোর্ট সেই মামলাকে মঞ্জুরি দিয়েছে। তাদের সবারই এক বক্তব্য কানহাইয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। কানহাইয়ার মতন ছেলে এমন কাজ করতেই পারেন না। মনিকান্ত শোনালেন কানহাইয়া জেলে থাকাকালীন তারা গিয়েছিলেন দেখা করতে। তাকে দেখে কানহাইয়া প্রথম বলেছিলেন কিরে কি খবর কেমন আছিস? যেনো কিছুই হয়নি। ভয়ডরহীন ঠাট্টায় মেতেছিলেন ছোট ভাই। অবাক হয়েছিলেন মনিকান্ত, তারপর ভাই যেদিন জেল থেকে বেরলো সেদিন ফিরে এসেছিলেন খবর পেয়েই দ্বিতীয়বার দেখা করার প্রয়োজনবোধই করেন নি। একবারের জন্যও প্রশ্ন করেননি ভাইকে সে এমন করেছে কিনা। এতটাই বিশ্বাস। প্রিন্স জানালো কানহাইয়া নিজে তো পড়েইছে তাকেও মোটিভেট করে পড়িয়েছে। প্রিন্স দিল্লীতেই এখন ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মুখেই শুনলাম কানহাইয়াও এমএ পাশ করার পর একই পথে হেঁটেছিল কিন্তু পরীক্ষা দেয় নি। দাদা ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক কেমন? প্রিন্স বলে তারা পিঠোপিঠি ভাই ফলে তারা বন্ধুর মতন। এখন কানহাইয়া আর তার ছাত্রসংগঠন এক হবার ফলে তারা সহকর্মী। বন্ধুত্বপূর্ণ তাদের সম্পর্ক। তার মতে এটা সম্পূর্ণ একটা পরিকল্পিত প্ল্যান। কারণ রোহিত এবং ইউজিসি র ব্যাপারটায় কানহাইয়া নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার স্মৃতি ইরানীর সাথে তাঁর ঝামেলা হয়েছিল। তিনবার তাদের উপর লাঠি চার্জও করে পুলিশ। ফলে কানহাইয়ার উপর একটা রাগ আগে থেকেই বিজেপির ছিল। ভাই কানহাইয়ার আর নেতা কানহাইয়ার মধ্যে প্রিন্সের পছন্দ নেতা কানহাইয়াকে। কারণ নেতা হিসাবে অনেক বেশি দায়িত্ববান তিনি। পিঠোপিঠি হবার ফলে দুজনের মধ্যে ঝগড়া খুনসুটি হতো কিন্তু বাড়িতে বেশি নালিশ আসতো ছোট ভাইয়ের নামে কারণ বুদ্ধি করে কানহাইয়া বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতেন। প্রিন্স জানায় ছোট থেকেই কানহাইয়া বিতর্কে অংশ নিতেন। ক্লাস ফাইভে মাদার টেরেসার উপর ডিবেটে অংশ নিয়ে একটি ডিকশেনারি পেয়েছিলেন তিনি। প্রিন্স আর তিনি একই স্কুলে পড়েছেন একই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশান এবং এমএ করেছেন। দিল্লি গিয়ে শুধু দুজনের পড়াশুনার গতিপথ আলাদা হয়ে যায়। বিহট থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে বারাউনির রাধাকৃষ্ণ চামারিয়া হাইস্কুল থেকে পাশ করে দুজনেই পাটনার কলেজ অফ কমার্স থেকে গ্রাজুয়েশান করেন। কানহাইয়া বিএতে জিওগ্রস্কুল থেকে পাশ করে দুজনেই পাটনার কলেজ অফ কমার্স থেকে গ্রাজুয়েশান করেন। কানহাইয়া বিএতে জিওগ্র্যাফি অনার্স নিয়ে পড়তেন। মাস্টার ডিগ্রিতেও দুজনের একই কলেজ। নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে কানহাইয়া সমাজতত্ত্ব নিয়ে এমএ করেন। তারপর চলে যান জেএনইউতে এমফিল করতে। বিহার সরকার কানহাইয়ার বাড়িতে নিরাপত্তা দিয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে কথা বলেও কানহাইয়ার সম্বন্ধে একই মত পেলাম। তারাও মনে করেন কানহাইয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। যত দেখছি অবাক হচ্ছিলাম। একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নিতান্তই গরিব ঘরের ছেলে কোন জাদু মন্ত্রবলে এতগুলো মানুষ কে বশ করে রেখেছে। এসব ভাবতে ভাবতে গ্রামের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে হোটেলের দিকে ফিরে চলেছি পথে দেখা মসনদপুর গ্রামের ফুলেন সিং এর সাথে। কানহাইয়ার বাড়ি থেকে আসছি শুনে জোর করে বাড়িতে নিয়ে চা খাওয়ালেন। ভুমিহার ফুলেন সিং পেশায় একজন চাষী। আজন্ম কংগ্রেসী। তার কথায় দেশে স্বাধীনতা এনেছে কংগ্রেস। বিহটে থারমল পাওয়ার , আইওসিএল হয়েছে কংগ্রেসের জামানায়। দেশ তরক্কির পথে চলেছে কংগ্রেসের আমলে। তার কথায় “ কুছ ভি বোলাথো স্যার, ই কতই নেহি হো সাকথ। হামার গাও কা বাছুয়া এয়সান কাম না কার সকে। আরে উসে গোদি মে অথি খিলায়া উ বাচ্চা সাচ্চা হ্যায়। উ সব নেতাও কা চালাথ লগে। আপ হি কহো, দিখা না উসকা ঘর আপনে, কাইসান ওয়া ঘার কা ছোড়া হ্যায়। উসকা ঘর কা লোগো কো দিখো, শরিফ লোগ হ্যায়। উ এয়সান কাম না কর সকেথ হো। আপ লিখনা স্যার উসনে এইসান নাই কিয়া”। আশ্চর্য! একই কথা হোটেলের রুমবয় কিসেনের মুখে। মসনদ পুর থেকে ফিরে ৩টে নাগাদ সবে একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম, চোখটাও লেগে এসেছিল পরিশ্রমে, এমন সময় ঠক ঠক শব্দে দরজা খুলে দেখি কিসান দাঁড়িয়ে, বলল কথা বলতে চায়। ভেতরে এসে বলল ও জেনেছে আমি রিপোর্টার। কানহাইয়ার গ্রামে থাকে ছোটবেলায় ও কানহাইয়াকে দেখেছে আইওসিএল এর মাঠে ক্রিকেট খেলতে। ওরা শুধু বল কুড়িয়ে এনে দিত। বড়লোকের ছেলেদের সাথে ওদের খেলতে দিত না। কিন্তু কানহাইয়া ভাইয়াই প্রথমে গ্রামের ছেলদের নিয়ে আলাদা দুটো টিম বানায়। একটা বড়দের একটা ছোটদের। ফলে ওরা এখনো খেলতে পারে। কিসান বিজেপির সাপোর্টার। কুছ ভি হো যায়ে বিজপির সাপোর্টারই থাকবে। কিন্তু কানহাইয়া ভাইয়া এমন করতে পারে না। নেতারা ফাঁসিয়েছে তাদের কানহাইয়া দাদা কে। আমি যেনো আচ্ছা করে লিখে দিই পেপারে তাদের দাদা এমন করতে পারেনা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি বছর বাইশের ছেলেটির দিকে। বিকেলের দিকে আবার গিয়েছিলাম কানহাইয়ার গ্রামে। আমাকে পেয়েই ছেঁকে ধরলো গ্রামের লোক। খবর শুনেছে তারা কানহাইয়ার বিরুদ্ধে আবার চক্রান্ত হয়েছে। কানহাইয়া নাকি সেনা দের রেপিস্ট বলেছে। একজন বলল আচ্ছা বলুন সেনা রা রেপ করেনা? শর্মিলা চানু তাহলে কেন মনিপুরে অনশন করছে? যারা কানহাইয়াকে সবাই দেশদ্রোহী বলছে তারা কি জানে কানহাইয়ার এক জ্যাঠতুতো দাদা দিলীপ কুমার সিআরপিএফ জওয়ান মনিপুরে পাঁচ বছর আগে নক্সালীদের গুলিতে শহীদ হয়েছে? আরেক দাদা অবিনাশ ও তার বউ কেরলে সিআইএসএফ এ পোস্টেড। এসবিবি তে কর্মরত আরেক ভাই গৌরব ওরফে গুড্ডু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ইলেকশান ডিউটিতে আছে। আরেক ভাই দিল্লীতে সিআরপিএফ জওয়ান, আর্মিতে আরেক ভাই জম্মুতে কর্মরত। সেই বাড়ির ছেলে হয়ে সেনাদের গালি দেবে কানহাইয়া? হতেই পারে না। কানহাইয়ার দুই বন্ধু আর্মিতে আছে, জেএনইউ কান্ডের পর গ্রামে এসেছে ছুটিতে। টিভিতে নিউজ শুনে তারা সেনা ছাউনিতে পরিচয় দিয়েছিল কানহাইয়ার বন্ধু হিসাবে। সেখানে তাদের কিভাবে অপমান সইতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা ছুটি নিয়ে গ্রামে এসেছে। তারা এর বিহিত চায়। তাদের আদরের কানহাইয়াকে এভাবে ফাঁসানো হচ্ছে কেনো। একই কথা শোনা গেলো স্থানীয় সিপিআই পার্টি অফিসে। সিপিআই অঞ্চল প্রধান ও গতবারের এমএলএ প্রার্থী রামরতন সিং রাগে ফেটে পড়ছিলেন। তার কথায় সমস্ত বিজেপির চক্রান্ত। কোন ভাবেই তারা কানহাইয়ার বিরুদ্ধে প্রমান না পেয়ে এখন কুৎসায় নেমেছে কানহাইয়াকে ছোট করার জন্য। কারণ কানহাইয়া দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।বিজেপি ক্ষমতায় থেকেও জেএনিউ দখল করতে পারেনি। তাদের ছাত্রদল হাজার হাজার ক্যাডার নিয়ে যা করতে পারেনি, ক্যাডার ছাড়া মাত্র পাঁচজন সমর্থক নিয়ে শুধু নিজের ব্যবহার ও বাগ্মিতা কে সম্বল করে কানহাইয়া সেই অসাধ্য সাধন করেছে। বিজেপি তার শোধ তুলছে। একটা গোটা জেলার মানুষকে কানহাইয়া কোন মন্ত্রবলে এমন সম্মোহিত করে রেখেছে দলমত নির্বিশেষে? রামরতন সিং জানান গতবছর ভোটের সময় কানহাইয়া গ্রামে এসেছিল ছুটিতে সেখানে তার হয়ে প্রচার করতে তাকে জোর করে মঞ্চে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার বক্তৃতার জোরে দলমত নির্বিশেষে ভীর ছিল দেখার মত। যেখানেই কানহাইয়া গেছেন, তার কথা শোনার জন্য ভীর উপছে পড়েছে। দ্বিমত যে নেই তা একেবারে নয়। তবে কানহাইয়া যে দেশদ্রোহী নন সে বারে সবাই একমত। রাধাকৃষ্ণ চামারিয়া হাই স্কুলের শিক্ষক রামবরণ সিং যেমন। তার কথায় কানহাইয়া মোটেও দেশদ্রোহী নয়। কিন্তু কানহাইয়া একটু বেশিই বলে ফেলেছে। স্কুলে থাকাকালীন কানহাইয়া এমন ভালো বক্তা ছিলনা এই গুনটা জেএনইউতে গিয়ে তার মধ্যে এসেছে। কানহাইয়ার এত বেশি বলা উচিত হয়নি। বলার একটা সীমা থাকা উচিত ছিল। তিনি ভেবেছিলেন কানহাইয়া পিএইচডি করে ভালো চাকরিবাকরি করে মা বাবা কে দেখবে। তার রাজনিতীতে আসা মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না কানহাইয়ার এই প্রাক্তন শিক্ষক। তারমতে জেএনইউর অধ্যাপিকা নিবেদিতা মেননের মত কিছু বিকৃত মস্তিকের মানুষ কানহাইয়াকে বিপথে চালিত করছেন, সেই সাথে কিছু বিপক্ষের নেতা, সিপিআইয়ের কিছু নেতা কানহাইয়ার ঘাড়ে বন্ধুক রেখে কানহাইয়াকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেন যে নেতা হবার একটা সীমা আছে। এখন কানহাইয়ার পড়াশুনার করার সময়, পিএইচডি শেষ করে কোন দলে না যোগ দিয়ে কানহাইয়ার উচিত অন্যভাবে দেশের সেবা করা। তিনি আশা করেছিলেন কানহাইয়া পড়াশুনে শেষ করে এই দেশের একজন সৎ নাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রামবরণ বাবুর সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে কানহাইয়াকে সমর্থন করছেন শিক্ষক ও সমাজ কর্মী অক্ষয় কুমার। পাটনায় কলেজে পড়ার সময় থেকেই কানহাইয়া এনার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার জীবনে এই মানুষটির প্রভাব অপরিসীম। সমস্ত পাটনাবাসীর কাছে দাদা নামে পরিচিত ষাটোর্ধ এই সমাজকর্মী মানুষটিই আজকের কানহাইয়ার প্রতিবাদী কানহাইয়া হয়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর। ওর কাছ থেকে জানা গেলো রাতের পর রাত দুজনে মিলে আলোচনা করতেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে কি করে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। কখনো কখনো কানহাইয়া তাকে ডেকে নিয়ে যেত অন্য বন্ধুদের বাড়িতে আলোচনা সভায়। সারারাত ধরে চলত আলোচনা। এই মানুষটির পরামর্শেই আইপিএস পরীক্ষায় না বসে কানহাইয়া সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করে জেএনইউ যায় পিএচডি করতে। আজকের এই টেকনোলজির যুগেও অক্ষয়বাবু মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননা। তার ভাবশিষ্য কানহাইয়ারও এখনো অব্দি মোবাইল নেই। তার মুখেই শোনা গেলো এক আশ্চর্য কাহিনী। প্রতিবাদী কানহাইয়া এই প্রথম নন এর আগেও পাটনা কলেজ অফ কমার্স প্রতিবাদী কানহাইয়াকে দেখেছে। কানহাইয়া যখন কমার্স কলেজে ভর্তি হন সেই সময় এই কলেজটি ছিল লম্পটদের আখড়া। কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে পরীক্ষার টুকলি করা, মেয়েদের ইভটিজিং থেকে নেশাখোরদের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই কলেজ। এআইএসএফ এর বর্তমান সম্পাদক ও সেই সময় কানহাইয়ার সহপাঠি বিশ্বজিৎকে নিয়ে কানহাইয়া লড়াই চালিয়েছিলেন। সেই সময় স্থানীয় গুন্ডারা কানহাইয়াকে ভীষণ মারধর করেছিলো। খবর পেয়ে অক্ষয় বাবু সেখানে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত কানহাইয়া সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। অক্ষয় বাবু তাকে বলেন মার খেলি তাহলে। কানহাইয়া যাতে ভয় না পেয়ে যায় তাই তিনি বলেন কাল থেকে তোদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তখন কানহাইয়ার সহাস্য জবাব ছিল, “ক্যা দাদা হাম পর ভরোসা নেহি হ্যায় ক্যা”? সেইসময় এসইউসিআই এর এআইডিএসইউ ছাত্র শাখার নেতারা অক্ষয় বাবুকে বলেন কানহাইয়াকে বোঝানোর জন্য।এই গুন্ডার খুব খতরনাখ, এবার ওর জীবনও নিয়ে নিতে পারে। এই ধরনের হামলা কয়েকবার হয়েছে। অক্ষয়বাবু কানহাইয়াকে বোঝাতে গেলে কানহাইয়া জবাব দিয়েছিলেন, “আপনি আমাকে সরে যেতে বলছেন? এখানে এতগুলো ছাত্রের ভবিষ্যত জড়িত, আর আমি প্রাণ নিয়ে পালাবো? কাল যখন আমার ইতিহাস লেখা হবে তখন লোকে বলবে আমি কাপুরুষ।আমি কিসের ছাত্র নেতা যদিনা নিজেরই সহপাঠী নিজেরই কলেজ কে বাঁচাতে না পারি। মরতে হলে মরব আমি পালাবো না”। ভয়ংকর জেদ, আদম্য সাহসিকতা আর বিপদের মুখেও রসিকতা করার মানসিকতা নিয়ে লড়ে গিয়েছিলেন কানহাইয়া। নিজের কলেজকে দূর্নীতি মুক্ত করে তাকে পাটনার সেরা কলেজের তকমা এনে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো যখন নিতিশ কুমার প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন বিহারে তখন তিনি মাস অবলাইজেশানের জন্য তিনি কমন স্কুলেরউপর একটি আয়োগ কমিশন নিয়োগ করেছিলেন। এই কমিশন একদিন স্থানীয় এন.সিনহা ইনস্টিটিউটে গণশুনানী্র আয়োজন করেছিলেন। সেই শুনানিতে ছিল অনেক ছাত্র বিরোধী, শিক্ষক বিরোধী, ও অবিভাবক বিরোধী সিদ্ধান্ত। সেই শুনানিতে কানহাইয়া কমিশানের সদস্যদের সাথে ডিবেট করে তাদের সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য করেছিলেন। যখন আমি পাটনার রাজেন্দ্রনগরের মুন্না চকের পুরোনো পোষ্ট অফিসের গলিতে অক্ষয় বাবুর বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি সেই সময় অক্ষয় বাবুর বাড়ির কাছেই দেখা হয়ে যায় দুটি ছেলের সাথে। কানহাইয়ার নাম শুনেই তাদের চোখ চকচক করে ওঠে। ওরা অক্ষয় বাবুর বাড়িতেই থাকে। তার কাছেই কানহাইয়ার গল্প শুনে তাদের অবসর সময় কাটে। কানহাইয়া তাদের কাছে আইডল। এরকম অভিঞ্জতা আমার পাটনা কমার্স কলেজে গিয়েও হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন পুলিশের চোখ এড়িয়ে অনেক কষ্টে ঢুকতে পেরেছিলাম কলেজের ভেতর। সেখানেই আলাপ হয়ে যায় জিওগ্র্যাফি ডিপার্টমেণ্টের পিওন জনার্দন রায়ের সাথে।জন্মসূত্রে বিহারী হলেও পড়াশুনা কলকাতার খিদিরপুরে। চাকরি করতেন ভবানীপুরে। ঘুরে ঘুরেকলেজ দেখালেন, তালা খুলে নিয়ে গেলেন ডিপার্টমেণ্টে। ছবি তুলতে দিলেন। আলাপ করিয়ে দিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কার্তিক কুমার ওরফে কুক্কুর সাথে। জানালেন কানহাইয়ার সময় জিওগ্র্যাফি ডিপার্টমেণ্টের হেড ছিলেন পূর্নিমা শেখর, যিনি বিহারের হোম সেক্রেটারি অঞ্জনি কুমার সিং এর স্ত্রী। খুঁজে পেতে বার করে দিলেন কানহাইয়া কুমার এর কলেজে ভর্তির ফর্ম। অবাক হচ্ছিলাম কোথায় জেএনইউ, কোথায় বিহাট, কোথায় পাটনা কলেজ, আর কোথায় এই রাজেন্দর নগরের মুন্নাচকের পুরোনো পোষ্ট অফিসের গলির একচিলতে ঘর। সব যেনো এক সুতোয় বাঁধা। সেই সুতোর নাম কানহাইয়া কুমার। অক্ষয় বাবু কানহাইয়া কুমারের আরেক সহপাঠি সুশীল কুমারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করে দিলেন বিহার বিধানসভার উল্টোদিকে জগজীবন রাম সামাজিক শিক্ষা সংস্থানে চলা একটি সভায় যাবার। সেখানে তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন জেএনইউর অধ্যাপক সুবোধ নারায়ন মালাকার। এই অধ্যাপকের অধীনেই কানহাইয়া আফ্রিকান আদিবাসিদের সমাজতত্ত্ব নিয়ে পিএইচডি করছেন। সেই সভায় উপস্থিত জেএনইউতে কানহাইয়ার পূর্ববর্তী ছাত্র সভাপতি আশুতোষ, বিহারের পূর্ব বিধায়ক উদয়নারায়ন চৌধুরী, খগেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সংস্থার ডিরেক্টর শ্রীকান্ত, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রমাশংকর আর্য়া প্রমূখ। সুশীল কুমারের সহযোগীতায় অধ্যাপক মালাকারের সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় জানতে চেয়েছিলাম ঠিক কি ঘটেছিল ৯ই ফেব্রুয়ারী। প্রফঃ মালাকার বলেন সম্পূর্ণ ঘটনাটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। কারণ ৭০ শতাংশ ছাত্র এখানে দলিত পরিবার থেকে পড়তে আসে। এখানে পড়াশুনা করে তারা যে চিন্তাধারা নিয়ে বাইরে যায়, সেই চিন্তা ভাবনার ধারাকে ভয় পায় শাসকদল। আর এটা নিয়েই যত ঝামেলার সূত্রপাত। সরকার ইউজিসির মাধ্যমে এখানকার সাবসিডি বন্ধ করে দিতে চায় যার বিরুদ্ধে লড়ছেন কানহাইয়া। তাতেই সরকারের রাগ গিয়ে পড়েছে কানহাইয়ার উপর। তাহলে ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন? মালাকার বাবুর কথায় সেদিন একদল স্টুডেন্ট একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সেখানে। কানহাইয়া সেই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন না, সেই অনুষ্ঠানেও ছিলেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই অনুষ্ঠান শুরুর দুঘন্টা আগেই সেই অনুষ্ঠা্নের অনুমতি বাতিল করে দেন। কিন্তু ততক্ষনে সেখানে অনেকেই চলে এসেছিলেন। তারা অনুষ্ঠানটি করেন। এর খানিক পরেই মিছিল জেএনইউর অন্যদিকে গেলে তাদের নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষ বাধে। তখন কানহাইয়া সেখানে যান সংঘর্ষ থামাতে এবং পুলিশকে বলেন বহিরাগতদের বের করে দিতে। কানহাইয়া কোন দেশবিরোধী স্লোগান দেন নি। এর প্রশাসন যখন কানহাইয়াকে সাসপেন্ড করে দেন তার দুদিন পরে ১১ তারিখ কানহাইয়া ভাষণ দেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিঙে। সেখানেও কোথাও তিনি দেশবিরোধী রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেননি। তিনি বলেন কানহাইয়া বেল পেলেও উমর খলিদ আর অনির্বান কে এখনো জেলে রাখা হয়েছে, কোর্টে কেস উঠলে বোঝা যাবে কবে তাদের ছাড়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল, তারা তাদের বেঁধে দেওয়া মেয়াদের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে না পারায় কানহাইয়া সহ সমস্ত ছাত্রের সাসপেনশান তুলে নেওয়া হয়েছে। উমর খলিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে জেরায় উমর খালিদ শাহরুখ খানকে নকল করে বলেছেন “মেরা নাম উমর খালিদ হ্যায়, কই আতঙ্কবাদী নেহি”। ছাত্র হিসাবে কানহাইয়া কেমন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কানহাইয়া কেরিয়ারিস্ট মেধাবী ছাত্র নেহি হ্যায়, কেরিয়ারিস্ট হোনে কে লিয়া যো মেধাবীপন কা তরাজু হ্যায় ওহ উসমে নেহি হ্যায়; লেকিন সমাজ বদলনে কে লিয়ে যো উসকা সমঝকা মেধাবীপন হ্যায় ওহ বহুত হি নায়াব অউর উন্নত কিসিমকা হ্যায়”। সত্যি সেটা তার বক্তব্যেই বোঝাযায়।
    একথা বললে অত্যুক্তি হবে না বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম বিহটের মসনদপুর টোলার ভূমিহার দলিত ছেলে কানহাইয়া কুমার তার বাগ্মীতার সম্মোহন আর লড়াই করার ক্ষমতায় ভারতীয় রাজনিতীর বুকে ঝড় তুলে দিয়েছেন। আজ তিনি শুধু আর দলিতদের কণ্ঠ নন, ছাত্রদের কণ্ঠ নন সারা ভারতের এক কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
  • aranya | ***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:১৩380863
  • ভাল লাগল
  • | ***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:১০380864
  • খ একটা বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে এত আহা উহু করার কি আছে। চমৎকার বক্তৃতা দিয়েছে, গরীব পরিবারের ছেলে, রাজধানী শহরের ছেলে নয়, নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ফাইট দিয়েছে, ইউনিভার্সিটির রাজনীতি কে ইউনিভার্সিটির বিষয় নিয়েই হতে হবে, এই ধারণাটাকে একটা নতুন লেফ্টি আঘাত দিয়েছে, দিল্লীর ছেলে বলে হিন্দী ভাষী বলে ন্যাশনাল টেলিভিশন এ ইম্প্যাক্ট হয়েছে।

    অবশ্যই বিজেপি কে হারাতে হবে, কিন্তু এই লেভেলের চালিশা কি দরকার বুঝলাম না, গুরুতে বেগুসরাই এর ভোটার আছে নাকি ঃ-) বামপন্থী রা হিন্দী বলতে পারে না সমস্যা টা তো সিপিএম এর ছিল, সিপিআই এর তো ছিল না, লিবারেশন এর ও ছিল না, বুঝলাম না একটা রাজনীতিবিদ তৈরী হবার সময়েই এত আহা উহু করার কি আছে।

    আগে নেক্স্ট পনেরো কুড়ি বছর মোটামুটি হনেস্ট থাকুক, যদি সক্রিয় রাজনীতি তে আসে। বা আসার সুযোগ পায়, যদি পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্য স্ক্রুটিনি একটু কম হবে।
  • র২হ | ***:*** | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:০৩380865
  • কানহাইয়া উমর খালিদ অনির্বানদের চার্জশিট দিয়েছে দেখলাম দুয়েকদিন হলো, কী পরিকল্পনা কে জানে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন