এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • কবিতার সিনেমা, সিনেমার কবিতা দ্য কিন্ডেরগার্টেন টিচার

    Riten
    সিনেমা | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ১৫৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Riten | ***:*** | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ১০:১২379951
  • কবিতার সিনেমা, সিনেমার কবিতা

    ছবির নাম দ্য কিন্ডেরগার্টেন টিচার। আমি আমেরিকান ভার্শান টা দেখেছি। ওরিজিনালটা একটি ইসরায়েলি ছবি ,যেটা পড়লাম, আরো অনেক ভাল। কিন্তু দেখার সুযোগ হয়নি। সিনেমাটি নিয়ে বিশেষ হই-্চই দেখলাম না (বাই দ্য ওয়ে, নেটফ্লিক্সে আছে!)। কিছু কাজ অদ্ভুত কারণে পার্সোনালি নাড়া দেয়, এটাও তেমন। এই ক্ষেত্রে এডুকেটারের রোল, শিশু প্রতিভার আশ্চর্য গল্প না সিম্প্ললি কবিতা, কোন থিমটা জাপটে ধরল, সেটা বুঝে উঠতে পারিনি। যাই হোক, একটু overwehelmed হয়েই সাইটে একটা ছোট সামারি লিখে ফেললাম। এটা থ্রিলার নয়, তাই স্পয়েলারের ভয় নেই। আশা করি সামারিটা ছবিটা দেখার উৎসাহ যোগাবে।
    আপাতত কিছু কবি এণ্ড/ওর শিক্ষক দের ট্যাগ করছি।
    ----------

    লিজা স্পিনেলি একজন মধ্যবিত্ত কিন্ডের্গার্টেন টিচার। শিক্ষকতা ছাড়াও লিজা একটা এডাল্ট এডুকেশান সেন্টারে কবিতার কোর্স এটেন্ড করে। পেশাদারী লেখালিখি শুরু করতে হলে এরম একটা ডিগ্রি হলে ভাল। সেন্টারে লিজার মত মানুষেরা নিজেরা কবিতা পড়ে, অন্যদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করে। লিজার কবিতাগুলো ঠিক জমে না, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।
    একদিন লিজা হঠাত শুনতে ওর কিন্ডেরগার্টেনের এক বছররে শিশু পাইচারি করতে করতে কি একটা বলছে-- কবিতা! আর যে সে কবিতা নয়, লাইনগুলো বেশ "ডিপ"।
    anna is beautiful, beautiful enough for me
    the sun hits her yellow house
    its almost like a sign from God
    লিজা কবিতাটা টুকে নেয় আর সেন্টারে নিজের বলে চালায় ।ইন্স্ট্রাককটর আর সহপাঠিদের কাছ থেকে দারুণ পজিটিভ ফিডব্যাক পায়। জিমির আরো কবিতা আসে। কবিতাগুলো নিয়ে সেন্টারে রীতিমত তাত্ত্বিক আলোচনা হয়--শব্দচয়ন,
    রূপকের ব্যবহার, মোটিভেশান --যেরম বিখ্যাত কবিদের কাজ নিয়ে হয়ে থাকে ( কেই বা বিশ্বাস করবে এগুলো এক কিন্ডের্গার্টে শিশুর লেখা !) কিন্তু লিজার জীবনে এই বাচ্চাটা শুধু পিয়ার এপ্রুভাল আনে না, প্রথম আধ্যাত্মিকতা বা যৌনতার উন্মেষের মত লিজাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
    কখন যে জিমির কবিতা "পায়", বোঝা দায়। জিমির দিনের ৯৯ শতাংশ ভাগ কাটে অন্য বাচ্চাদের মতই। খেলাধূলা, মারপিট, স্কুল। কোন বই বা আর্টের প্রতি কোন আগ্রাহ নেই, সমাজ প্রেম রাজনীতি নিয়ে কোন ভারী বৌদ্ধিক মতামত নেই। শুধু মাঝে মাঝে পায়চারি করা শুরু করে আর অদ্ভুত কিছু সুন্দর লাইন বলে। লিজা এই মুহুর্তগুলো ক্যাপচার করতে চাই। এমনকি ওকে নিজের পর্সোনাল ফোন নাম্বার ও দিয়ে দেয় আর মোবাইল করা শিখিয়ে বলে-- যখনি কবিতা পাবে ওকে কল করতে।

    লিজা বাচ্চাটার জীবনে একটু বেশীই নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। ওর জীবন ঘুরপাক খায় শুধু একটা লক্ষ্য ঘিরে-- জিমির প্রতিভাকে বিকশিত করা। এখানে লিজার চরিত্রটা একটা টাইট দড়ির ওপর হাঁটে আর থ্যান্ক্স টু আ নুয়ান্স্ড স্ক্রিনপ্লে, সুক্ষ্ম ভারাসাম্য বজায় রাখে। কোনসমেয়েই মনে হয় না, লিজা পুরো ওবসেসড। কোন পেডোফিলিক টেন্ডেন্সির ইঙ্গিত ও দেয়া হয় না। (মাকে --প্রাক্তন কলেজ শিক্ষিকা-- দেখেছি, প্রিয় ছাত্রীদের নিয়ে অত্যুত্সাহী হতে। ছাত্রাবস্থায় নিজে দু একবার এই অতিরিক্ত উৎসাহের রিসিভিং এন্ডে থেকেছি, আবার শিক্ষক হিসেবে উল্টোদিকের স্বাদটাও নিয়েছি) ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয় লিজার আচরণ এর থেকে আর এমন কি আলাদা? আবার কখনো কখনো প্রশ্ন জাগে --বর্ডার্লাইন ওব্সেশান না তো? বেশ কিছু জায়াগায় লিজাকে বিপজ্জনকের থেকেও এবসার্ড/রিডিকুলাসলি হাস্যকর লাগে।
    লিজার মনে হয়, জিমির কাছের মানুষরা-- জিমির বাবা (শহরের এক বড় কেউকেটা, বারের মালিক), জিমির কাকা, কর্পো কেরাণী-- এরা জিমিকে ওর প্রতিভার উপযোগী পরিবেশ দেয়া তো দূর, ওকে ধরতেই পারছে না। আর ঠিকি তো, একটা বাচ্চা পাইচারি করে কিছু বিড়বিড় করে .. সে অনেক বাচ্চায় টিভিতে শোনা গানের লাইন মনে রেখে আউড়াই, সেরমি কিছু হবে। তাছাড়া এগুলো কবিতা না র‌্যান্ডম ভাট এটার তফাত করার মত ইন্ট্লেকচুয়াল ট্রেনিং ই তো ওদের নেই। জিমির ন্যানি, একটা কলেজ পাস আউট তরূণী। হাসিখুশী , ভাল মেয়ে কেয়ারিং, সবি ঠিক আছে. কিন্তু ঐ, টিপিকাল, অগভীর। জিমিকে খালি বেবিটক করে। একবার লিজা জিমিকে সাজুগুকু করিয়ে, মিথ্যে কথা বলে জিমির শিডিউলড বেসবল প্র্যাকটিস স্কিপ করিয়ে (কোথায় একটা কবি-প্রডিজির ফিউচার আর কোথায় বেসবল!) কবি-সম্মেলনে প্রেসেন্ট করাতে নিয়ে যায়। তার আগে ফাঁকা স্টেজে রিহার্সাল করাই । ওকে শেখায় -- " ওখানে উল্টোদিকের চেয়ারগুলোয় বোদ্ধারা থাকবে, তোমায় জিগেস করবে, "মিস্টার জিমি রয়, এই এনা টি কে?" তুমি বলবে, এনা যে কেউ হতে পারে।.. শি কুড বি এনবডি ইউ লাভ .. কী, এইসব বলতে পারবে তো?"।

    সিনেমাটির "থিম" যদি কিছু থেকে থাকে তা পরিচালক লিজাকে দিয়ে দু একবার হালকাভাবে বলাই। লিজা নিজে ইন্ট্লেকচুয়ালিস্ম আর শিল্প ক্রেভ করে যেটা ওর পরিপার্শ্ব (কিন্ডের্গার্টেনের চাকরি, ফ্যামিলি) ওকে দিতে ব্যর্থ। জিমি ম্যাজিকের মত সেই জায়গাটা এনে দেয় । লিজার ফ্রাস্ট্রেশান, ওর নিজের কথায়, এই "মেটেরিয়ালিস্ট" "শ্যালো" কালচার কে নিয়ে যা শিল্পের কদর করে না আর শিগ্গিরি জিমির প্রতিভাকেও খুন করবে। লিজার নিজের দুই টিনেজার সন্তান, এক ছেলে এক মেয়ে। দুজনেই ভাল, স্ট্রেট এ স্টুডেন্ট কিন্তু ঐ আর কি, এখনকার সব বাচ্চাদের মতই মোবাইলে মুখ ঢেকে থাকে। জিমির প্রথম কবিতাটা শোনার দিন লিজা কন্যার রুমে ঢুকে আক্স্মিক ভাবে জিগেশ করে "আচ্ছা তোর যে ফোটোগ্রাফির শখ ছিল, ওটা আর ফলো করিস না কেন রে?" লিজার নিজের অপ্রাপ্তিও একটা ফ্যাক্টর চিল বোধহয়। শেষের দিকে একটা সিনে লিজাকে দেখা যাবে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে আর বলতী যে ওর নিজের মধ্যেও সম্ভাবনা ছিল।

    ছবির শেষটা, আর অন্য ডিটেলসগুলো আর লিখলাম না।
    -----
    এই নানা সাবথিমের মধ্যে একটা জিনিস যেটা আলাদা করে একাডেমিকালি ভাবিয়েছে তা "ক্রিয়েটিভ প্রোসেস" নিয়ে ফিল্মটার থিওরী। ম্যাথেমেটিকস, মিউজিক বা স্পোর্টসে চাইল্ড প্রডিজি হলেও, কবিতা বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এটা দেখা তো যায় ই না, সায়েন্টিফিকালি হওয়াটাও অসম্ভব মনে হয়। আমি সাইকোলজি/ কগনিটিভ সায়ন্সের লোক নই, তাই জোরের সাথে এই ক্লেমটা করার জায়গায় নেই। কিন্তু লুজলি মনে হয় "সাহিত্য" বোধ জিনিসটা বেশ কয়েকটা সামাজিক সম্পর্ক "অনুভব" (দেখা, সেগুলোর মধ্যে দিয়ে যাওয়া, সাহিত্য পড়া) করার পরেই জাগতে পারে আর তার জন্য একটা সেন্সে "বড়" হতে লাগে। (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তিরিশের আগে কারুর নভেল লেখায় উচিত না। নভেল না হোক, "গভীর" কবিতার জন্য পিউবার্টি মনে হয় প্রিরিকুইসিট, কি জানি ) .. দুর্দ্ধর্ষ ভোকেবুলারি বা ছন্দ মেলানোর প্রতিভা বলছি না, "এনা"র মত কবিতা লেখার প্রতিভার কথায় বলছি।
    এটা অবশ্যই সিনেমাটার "ত্রুটি" নয়, এটা একটা ওয়ার্ক ওফ ফিকশান। এই অতি-প্রাকৃতিক প্রতিভার ব্যাপরটাই ছবিটাকে একটা সাররিয়াল, মায়াবী আমেজ দেয়। জিমি সম্পূর্ণ অসচেতন তার এই প্রতিভার ব্যাপারে, সে কবিতা বানাতে পারে, কিন্তু ক্রিটিকদের মত তার নিজের কবিতার এনালিসিস করার ক্ষমতা তার নেই।
  • প্রতিভা | ***:*** | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:২৪379952
  • একদম সহমত যে সাহিত্যবোধ একটি অর্জন। একেবারে অপরিণত বয়সে কেউ মহাকাব্য লিখছে বিশ্বে এই উদাহরণ আছে কি ?
    অনেক চিন্তার খোরাক দিলো লেখাটা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন