এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৮ ১৮:৩৮377309
  • #বাঈবিলাস

    "দেখ আমার পিতা 4/5 লক্ষ টাকা রাখিয়া গিয়াছিলেন তাহা আমি কেবল বাই নাচ ও বাই সঙ্গে মজা করিয়া উড়ায়েছি।"

    উনিশের শেষে বাঙালি বাবু কালচারের এক জ্বাজল্যমান উদাহরণ ভবানীচরণের এই উক্তি। আসলে বাঙালি মাত্রেই যে "মেজাজটা তো আসল রাজা"। তাই একদিকে যেমন চলেছে বিদেশি প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য বাঈনাচের আসর, তেমনি আবার হঠাৎ-সভ্য বাবুদের জাতে ওঠার প্রথম ধাপই চিহ্নিত হয়েছিল এই বাঈজি সঙ্গের নিরিখে। যিনি যত দামী বাঈ পুষতে বা সঙ্গ করতে পারবেন, তিনি ততো বড়ো বাবু।

    তা বলে সবাই যে বাঈজিদের শরীর সম্ভোগে মত্ত হতেন তেমনও বলা যায় না। কেউ কেউ নেহাতই গানবাজনার জন্যও বাঈজিদের ভাড়া করে আনতেন।

    যেমন ধরুন নিকিবাঈ-এর কথা। উনিশের প্রথম দিকে কলকাতা মাতোয়ারা ছিল তাঁর চমকে ঠমকে কণ্ঠে। ফ্যালি পার্কস, স্বয়ং রামমোহনের মজলিশে নিকিকে দেখেছিলান। নিকির সমসময়ে কলকাতার আরও কয়েকজন বিখ্যাত বাঈ ছিলেন বেগমজান, হিঙ্গুল বাঈ, নান্নিজান, সুপনজান প্রমুখ। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন নিকি, যাঁকে the Catelani of the East বলে সম্বোধন করা হতো।

    বাঈনাচ তথা গানকে অধিকাংশ গবেষকই এক ক্লেদাক্ত সংস্কৃতির অঙ্গ বলে গণ্য করে। তাতে ভুলও নেই বিশেষ। অধিকাংশ বাঈজিই বেশ্যাও ছিলেন। আর বাবু কালচারের সবচেয়ে অন্ধকার অংশ এই বেশ্যাগমন। সাহেব বিবি গোলামের বউঠানের কথা কেউ ভোলেননি নিশ্চয়। আর মেজবাবুর কথা, যিনি বারোটায় ঘুমিয়ে থেকে ওঠার পর কিঞ্চিত বিশ্রাম নিয়ে চারটে নাগাদ রক্ষিতার কাছে যেতেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে আসত।এমনটাই তো ছিল সেকালের ধনিক শ্রেণির রীতিনীতি। দ্বারকনাথের বাঁধা কোনো রক্ষিতা ছিল না বলে নাকি তিনি ঠিক বাবু হতে পারছিলেন না। কিন্তু তিনি স্বয়ং প্রিন্স দ্বারকনাথ। জবাব দিলেন স্বমহিমায়।একটা গোটা বেশ্যাবাড়ির মালিক হয়ে। বউবাজার স্ট্রিটে তেতাল্লিশটা ঘর সমন্বিত এক ব্রথেলের মালিক ছিলেন তিনি।

    কলকাতা শহরের বুকে উত্তরভারতীয় ঘরানার বাঈজিদের আগমন অনেকে বলেন মেটেবুরুজের নবাবের হাত ধরে। আবার অনেকের মতে নবমুন্সির আমদানি এ সংস্কৃতি।

    বাঈ সংস্কৃতি যতই কলুষিত হোক না কেন, অমিয়নাথ লিখেছেন: "এই যে এত বড় বড় বাইজি, যাঁদের লোকে ঘৃণা করে, আমার মতে তাঁরা, এক-একজন গান্ধর্বী।"

    বাঈজিদের সাথে গান্ধর্বীদের তুলনাটা একদম যুক্তিযুক্ত। উর্বশী, রম্ভা, মেনকা প্রভৃতিরা স্বর্গবেশ্যার বেশি কিছু তো নন। তবু তাঁরা নিন্দনীয়ও নন। অর্জুনের অভিশাপ তো একথাও প্রমাণ করে যে, এই স্বর্গীয় বারবণিতারা ইনসেস্টেরও পরোয়া করতেন না মিলনকালে। এতটাই ছিল তাঁদের যৌনক্ষুধা। তবুও তাঁরা বিভিন্ন পুরাণে বেশ সম্মানিত।

    কিন্তু কেন? একটা কারণ এটা হতে পারে যে কামসূত্রের যে দেশে জন্ম সে দেশে যৌনতা নোংরামো বলে গণ্য হয়নি মধ্যযুগের আগে পর্যন্ত। আরেকটা কারণ আবার এটাও যে, ভিক্টোরিয়ান মরালিটির ঠুলি আমাদের সবই দেখাতে চায় গণিকালয়ের লাল-নীল আলোয়। এতটাই সে মানসিকতার প্রভাব ও বিস্তার, যে আপনি আমি তো কোন্ ছাড়, বিবেকানন্দও নিস্তার পাননি।

    বাঈ তথা বারবণিতাদের অস্পৃশ্য ও নিন্দনীয় করে রাখার পেছনে অনেক জটিল কারণ বর্তমান। ফেসবুকে ততো গভীরে প্রবেশ সম্ভবপর নয়। বরং ফেরা যাক বিবেকানন্দ প্রসঙ্গে।

    ব্যক্তিগত স্তরে উদার ও প্রগতিশীল হওয়া সত্বেও, সামাজিকভাবে জন্মগত বিশ্বাসকে তিনিও অস্বীকার করতে পারেননি প্রথমে। সমাজের "ওই" শ্রেণির মহিলাদের সম্মুখীন হতে তাঁর তীব্র আপত্তি ছিল, একমাত্র সেবাকর্ম প্রয়োজন ব্যতিরেকে। এমনকি, যে-কোনো মহিলার গান শুনতেই নাকি তাঁর নাকি ছিল তীব্র আপত্তি।

    তো একবার বিবেকানন্দ গেছেন খেতুরীর রাজার আমন্ত্রণ রক্ষা করে। মজলিশের শেষ অনুষ্ঠান, বাঈজি গান। বিবেকানন্দ সভা ছেড়ে বেরোনোর উপক্রম করছেন। কিন্তু খেতুরীর রাজার আত্মিক অনুরোধে শেষ অবধি আর না বলতে পারলেন না। বসতেই হল সে গান শুনতে।

    অতঃপর? বাঈজি গান ধরলেন:
    প্রভু মোর অবগুণ চিত্ না ধর।
    সমদরশি হ্যায় নাম তোমার।।...

    গান শোনার পর দেখা গেল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। একটানা জল গড়িয়ে পড়ছে বিবেকানন্দর দু চোখ দিয়ে। সন্ন্যাস গ্রহণের পরও ঘৃণিত-মান্য বিভেদ মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ভেবে তিনি আত্মগ্লানিতে নিমজ্জিত হলেন। সেদিন আর কিছু হয়নি। কিন্তু এই ঘটনার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীকালে বিবাকেনন্দ যতবার খেতুরী গেছেন, তাঁর একটাই দাবী ছিল: "আমার মা-কে ডাক। আমি ওর গান শুনব।"
  • sm | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৮ ১৯:২০377310
  • পুরো গানটা লিখে ফেলুন দিকি, ইন্দ্রজিৎ বাবু। নয় তো একটা লিংক দিন দেখি।

    তবে ওটা কি ক্ষেত্রী হবে না খেতুরি ?
  • একক | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৮ ২২:২৪377311
  • সুরদাসের লেখা গান এটা । অবগুন চিত না ধরো , সমদরশি হায় নাম তিহারো অব মোহে পার করো । ভুলে গেলে দেখে লিখলেই পারতেন গানের কথা না ঘেঁটে :|

    যাগ্গে , রইলো :

  • একক | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৮ ২২:২৮377312
  • আর একটা কথা । "ফেসবুকে গভীরে প্রবেশ সম্ভব নয় " । ঠিক । কিন্তু এটা গুরুচন্ডালী সাইট । ফেসবুক নয় । এখানে একটু বিস্তৃত , কাল ধরে ধরে বেটার লেখা আশা করা হয় । ফেসবুকের লেখা কপি পেস্ট করার চে এই লেখাটা ঠিকভাবে বিস্তার করে লিখলে লেখক , এখানকার পাঠকদের প্রতি ন্যায় করতেন । সরাসরি ফেবু স্টেটাস কপি হয়েচে দেকলে পাঠক হিসেবে বিরক্ত লাগে ।
  • pi | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৮ ২৩:৪৯377313
  • বন্দিশের কিন্তু অনেক প্রকারভেদ হয়। মানে তিনচারটে শব্দ এদিকওদিক আকছার হয়।

    যাহোক, বন্দিশের আগে আরো বিস্তার হলে ভাল হত। অনেক জায়গা। ছিল। আশা করি লিখবেন, বিস্তারে।
  • Ekak | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৯377314
  • হ্যা হয় তো । এই গানটা ই দুরকম বইতে আছে "অব মোহে পার করো" আবার " চাহে তো পার করো " । উনি হঠাৎ হিন্দির মধ্যে বাংলা ঢুকিয়ে "সমদরশি হ্যায় নাম তোমার" লিখেছেন বলে বলেছি :)
  • | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ১০:৪৫377315
  • এককের রাত 10.28 এর পোস্টে একমত। আর ফেসবুকেও চাইলে গভীরে যাওয়াই যায়।
  • ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:০৩377317
  • দেখুন সমালোচনা নিশ্চয় করুন। সেটা পাঠকের অধিকার। লেখক সেটা মাথা পেতে নেবেন। কিন্তু সমস্যা হল,আমায় ফেবুর লেখাই পোস্ট করতে বলা হয়েছে। আজ কথা হবার পর বিষয়টা ক্লিয়ার হল। ভবিষ্যতে নিশ্চয় চেষ্টা করব ব্লগের জন্য স্বতন্ত্র লেখা দেওয়ার। আর ফেবু বা ব্লগে যদি সূত্র সহ লেখা হয় তবে সেটা অনেকাংশেই কুম্ভীলকদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে। ক্ষমা করবেন সেটা পারব না। আর গানটা ভুল কোট করার জন্য দুঃখিত।
  • ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:০৩377316
  • দেখুন সমালোচনা নিশ্চয় করুন। সেটা পাঠকের অধিকার। লেখক সেটা মাথা পেতে নেবেন। কিন্তু সমস্যা হল,আমায় ফেবুর লেখাই পোস্ট করতে বলা হয়েছে। আজ কথা হবার পর বিষয়টা ক্লিয়ার হল। ভবিষ্যতে নিশ্চয় চেষ্টা করব ব্লগের জন্য স্বতন্ত্র লেখা দেওয়ার। আর ফেবু বা ব্লগে যদি সূত্র সহ লেখা হয় তবে সেটা অনেকাংশেই কুম্ভীলকদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে। ক্ষমা করবেন সেটা পারব না। আর গানটা ভুল কোট করার জন্য দুঃখিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন