এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌশিক মাইতি | ***:*** | ০৮ জুন ২০১৮ ১০:৩০375341
  • পাট থেকে বাদাম চাষঃ চাষবাসের আমূল পরিবর্তন

    জ্যৈষ্ঠমাসে, মাঠের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তায় একা গেলে গা ছমছম কার না করে? দু পাশে উঁচু পাটের জঙ্গল, এই বোধহয় কেউ বেরিয়ে এল! এই সময়টায় সন্ধ্যের পর বেরতে সবাই ভয় পায়।

    হ্যাঁ, একটা সময় ছিল যখন এ রাজ্যে প্রচুর পাটচাষ হতো, যেদিকেই তাকাও পাটগাছ, আর কিছুই দেখা যায় না। খুন-খারাপি, বেআইনি কাজের জন্য এই সময়টা উপযুক্ত সময় ছিল।

    পাটের ব্যবহার কমেছে, ফলত পাটচাষ কমেছে। পাটচাষ প্রচণ্ড কষ্টসাধ্য চাষ, তদুপরি লাভের পরিমান ধীরে ধীরে কমে গেছে। হুগলীতে শীতে আলু চাষ হয়। আলু তোলার পর পাট বোনা হতো। জমিতে অনেকটা জল দিয়ে বুড়িয়ে (জল দাঁড়িয়ে যাওয়া) পাটের বীজ ছড়ানো হতো। সেই শুরু, তারপর চারা বেরোলে, নিঁড়ানো শুরু। চাঁচুনি দিয়ে আগাছা সাফ করা, পাটের ঘনত্ব বেশি হলে চারাগাছ কমানো, প্রচণ্ড গরমে চলতে থাকে পাটের পরিচর্যা। বৃষ্টি না হলে বা কম হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হতো। নিঁড়ানো হতো দু-তিনবার।

    তারপর পাটগাছ বড় ও পরিণত হয়ে গেলে, হেঁসো দিয়ে পাট কাটা হতো। থাকে থাকে সাজিয়ে রাখা হতো পাটগাছ গুলো। এভাবে কদিন শুকনো হতো, তারপর পাতা ঝরিয়ে তাড়ি বাঁধা হতো। সেগুলোকে মাথায় বয়ে পুকুর বা ডোবার পাড়ে রাখা হতো। তারপর তাড়িগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে পর পর বেঁধে, তার উপর মাটি চাপিয়ে পুকুরে বা ডোবায় হালকা ডোবানো হতো। বেশ কিছুদিন রাখলে পাটগাছ পচে যায়। পচা জলে দাঁড়িয়ে পাটের আঁশ ও প্যাকাটি আলাদা করা হতো। এখনকার প্রজন্ম এটা ভাবতেই পারবে না। প্রচণ্ড গন্ধ বের হয়, মশা দখল নেয় পুরো গ্রামের। এরপর পাট ও প্যাকাটি শুকনো করা। সময়টা বর্ষাকাল, ফলে পাট শুকনো করা মাথাব্যাথার বড় কারণ। এই শুকনো হয়, তো এই ভেজে!

    বুঝতে পারছেন? কতটা কষ্টকর পাটচাষ। প্রতি বিঘাতে মোটামুটি তিন ক্যুইন্টাল পাট হতো। আট দশবছর আগে পাটের দাম থাকতো ক্যুইন্টাল প্রতি গড়ে ১৫০০-১৮০০ টাকা। প্যাকাটি জ্বালানীর জন্য ব্যবহৃত হতো। এক বিঘা জমি পাটচাষ করে সর্বোচ্চ ৬০০০-৭০০০ টাকার পাট হতো। এত কষ্ট, শ্রমিক এসব বাদ দিয়ে এটা তিন মাসের আয়। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগীই ছোটো চাষী। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, পাট চাষীদের কি দুর্দশা হতো।

    আমরা তখন ক্লাস ফোরে পড়ি, সালটা ২০০০ মতো হবে। আমাদের এলাকায় (হুগলীর পুরশুড়া) বাদাম চাষ শুরু হয়। প্রথমবারই লাভ হয় অনেকটা। তখন দুটো জমি বাদাম, দুটো জমি তিল ও দু-তিনটে জমিতে পাট চাষ করা শুরু হয়। আমাদের ওখানে উর্বর দোঁয়াশ মাটি। ফি বছর বন্যা হয়, পলি পড়ে। এই মাটি বাদাম চাষের উপযুক্ত। সামনে নদী থাকায় চাষের জলের অভাব হয় না। এভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাদাম চাষ। পাল্লা দিয়ে কমে পাট বা তিল চাষ। রান্নার জ্বালানী হিসাবে প্যাকাটির ব্যবহার কমে গেছে। বেশিরিভাগ বাড়িতেই রান্নার গ্যাস আছে। ফলে সব দিক থেকে প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে পাটচাষ।

    এখন যেদিকে তাকাই, শুধুই বাদাম চাষ। সবুজ বাদামের ক্ষেত। এখন বাদাম তোলার সময়। ফাল্গুন মাসে আলু তোলার পর বাদাম লাগানো হয়েছে। আলু ও বাদাম লাগানোর পদ্ধতি একই। বাদাম লাগানোর পর নিঁড়াতে হয় দু একবার। মাটি দিতে হয় বাদামে। তারপর খুব একটা কাজ নেই বাদাম তোলার আগে পর্যন্ত। জলের অভাব হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়, প্রয়োজন মতো সারও দিতে হয়। প্রতি বিঘা বাদাম চাষে গড়ে ২০ কেজি বাদাম বীজ লাগে। বাদাম বীজের দাম গড়ে ৬৫-৮০ টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে বাদাম হয় ৩।৫ ক্যুইন্টাল, দাম থাকে ক্যুইন্টাল প্রতি ৪০০০-৫০০০ হাজার টাকা। এবছর দাম বেশ খানিকটা কম, ২৮০০-৩০০০ টাকা। তবে চাষীরা আশাবাদী, দাম কমপক্ষে ৪০০০ হবেই।

    বাদাম গাছ গোড়া সমেত উপড়াতে হয়। মাটির নীচেই গোড়ায় বাদাম থাকে। সাবধানে উপড়াতে হয় যাতে মাটির নীচে গোড়া ছিঁড়ে রয়ে না যায়। তারপর বাদাম সমতে গোড়া গুলো কেটে নেওয়া হয়। তারপর গোড়াগুলো বয়ে বাড়িতে বা খামারে নিয়ে আসা হয়। রোদে শুকানো হয়, বাদামের গোড়া নাড়িয়ে বাদামের আওয়াজ শুনে বুঝতে হয়, ঠিকঠাক শুকিয়েছে কিনা। এরপর বাদাম গাছের গোড়া থেকে বাদাম ছেঁড়া হয়। এর জন্য বাড়ির সব লোক হাত লাগায় এবং পাড়ার মহিলারা(যাদের চাষবাস কম বা নেই) যোগ দেয়। ঝুড়ি পিছু দাম দেওয়া হয় বাদাম টোকার জন্য। এরপর আর একবার বাদাম শুকনো করে বিক্রি করা হয় বা গুদামজাত করা হয় পরে বিক্রির জন্য।

    এই ভাবে ধীরে ধীরে গ্রামে চাষের চরিত্র বদলেছে। পাট চাষ কমে বা বন্ধ হয়ে বাদাম চাষ হচ্ছে রমরমিয়ে। বেশ লাভজনক চাষ। চাষের ধান বেশিরভাগ বাড়িতে খেতে লেগে যায়, আলু খুব অনিশ্চিত চাষ। ফলন ও দাম- কেউ বলতে পারে না। তাই বাদাম চাষ বেশ ভরসাযোগ্য। নিশ্চিত আয়ের রাস্তা চাষীর কাছে।
  • | ***:*** | ০৮ জুন ২০১৮ ১২:১৩375342
  • বাঃ বাঃ বেশ অন্য একটা জিনিষ জানা গেল।
    বাদাম মানে চীনাবাদাম?
    মোটামুটি একরপিছু কত বাদাম হয়? আর খরচ খরচা বাদ দিয়ে কিরকম লাভ থাকে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন