এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে - জল জঙ্গল পাহাড়ের গল্প

    ঋক আর কিছুনা লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ জুলাই ২০১৭ | ২৪৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঋক আর কিছুনা | ০৪ জুলাই ২০১৭ ২২:০০368143
  • প্রেমে পড়া ব্যাপারটা কে কিভাবে বোঝে জানিনা, আমি বুঝি বিরহে। মানে প্রেমে পড়েছি এটা বুঝতেও আমায় তার থেকে দূরে যেতে হয়। পাহাড় ব্যাপারটা যেমন , খুব ইনটারেস্টিং লাগেনি ছোটবেলায়, এক তো আমার বমি পেতো পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িতে, তায় একই রকম দৃশ্য মনে হতো। সব মিলিয়ে পাহাড়ের থেকে সমুদ্রেই ছিলো বেশী পছন্দের বা জঙ্গল। এমন কি উত্তরাখন্ড এর অমন চমৎকার দৃশ্যপট, গ্যাংটক বা পেলিং থেকে দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘা ( দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমি কখনোই দেখতে পাইনি) কিছুই আমার মন কাড়তে পারেনি। প্রেমে পড়েছিলাম হিমালয় এর চেয়ে অনেক কম কুলীন রকিজের। কলোরাডোতে দু বছর থাকতে থাকতেই কখন পাহাড়ের প্রেমে পড়েছি টের পাইনি। পেলাম ওখান থেকে ফিরে আসার সময়, ফিরে আসার পরে।
    দেশে ফিরেছি আট মাস হয়ে গেছে এর মাঝে একবারও পাহাড়ে যাইনি। বেশ কিছুদিন ধরে মন খারাপ করছে আর পাহাড়ে হাঁটছি দেখছি। মার্চের অযোধ্যা যাওয়া হলো না, এপ্রিলের রডোডেনড্রন দেখা হলো না ভার্সেতে। শেষমেশ দুত্তোর নিকুচি করেছে যাবোই পরের সপ্তাতেই যাবো বলে কচাত করে ট্রেনের টিকিট কাটা। স্বাভাবিকভাবেই ওয়েটিং লিস্ট কিন্তু ভাগ্য ভালো সঞ্জয়দা সে টিকিট কনফার্ম করে দিতে পারবে জানিয়েছিলো। টিকিট কেটেছিলাম টংলু ট্রেক করবো বলে। একা একা পাহাড়ে হাঁটছি স্বপ্ন দেখতে দেখতে কোড করছি, ফেসবুক করছি, আড্ডাচ্ছি, পারলে এ সপ্তাতেই চলে যাই। হঠাৎ পাহাড়ে গোলমাল শুরু হয়ে গেলো। বনধ অবরোধ কিছুই বাকি নাই। টংলু দার্জিলিং শহরে না পড়লেও ওই রাস্তাতেই। তবু আমি জানি আমি যাবো। অফিসে বাড়িতে সব জায়গায় বলছি আমি দার্জিলিং তো যাচ্ছিনা অসুবিধে হবেনা। বুকিং তো কোথাওকার নেই একা মানুষ কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়েই যাবে এ আশায়। তাছাড়া এখন তো জানিও না কোথায় যাচ্ছি, মনে মনে কিন্তু জানি টংলু যাওয়া চাপ আছে। অল্টারনেট হিসেবে জয়ন্তী মহাকাল ট্রেক করা যায় কিন্তু জঙ্গল বন্ধ থাকবে আর উপায় হলো ভার্সে ট্রেক করা। ভার্সে মার্চ এপ্রিলেই ভালো কারন রডোডেনড্রনের সময়, তাছাড়া আকাশও ক্লিয়ার থাকে সে সময়। কিন্তু বর্ষায় পাহাড় জঙ্গলের আলাদা মজা আছে।
    টিকিট লাস্ট মোমেন্টে কনফার্ম হবে এমারজেন্সি কোটায় মানে যদি হয়, কোথায় যাচ্ছি এখনো জানিনা, পাহাড়ে নাকি বেজায় গন্ডগোল, শিলিগুড়ির মুখেই আটকে দিলে আর কিছু বলার নেই। এরকম অবস্থায় ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে নিতে গিয়ে খেয়াল পড়লো আমি রুক্স্যাক কিনিনি, জুতো জোড়াও ঠিক বর্ষায় হাঁটার উপযুক্ত না। তা এতো ভেবে চললে তো হয়েই যেত। জোঁক ইত্যাদি অগ্রাহ্য করে বর্ষায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করার কথাই ভাবতাম না। সুতরাং চলো মুসাফির উঠাও গাঁঠরি, ইয়ে মানে ব্যাকপ্যাক।

    শুক্রবার দিন সকালেই দার্জিলিং এর পরিবেশ আরো খারাপ হয়ে উঠলো সুতরাং ভার্সের রুটটা দেখে নিলাম একবার। অফিস থেকে সোজা বেরিয়ে যাবো। সেই মতো গাব্দা ব্যাগ নিয়ে অফিসে হাজির, অফিসে পৌঁছে খেয়াল হলো আমি ক্যামেরা আনিনি, পাওয়ার ব্যাঙ্কটাও না। অতএব ফের বাড়ি।
    ঘটনাচক্রে আজ আষাঢ় এর পয়লা। যক্ষ টক্ষ ভেবে মেঘভায়া আবার না থাবড়া লাগায়, "গতবার খুব খাটিয়েছিলি ভাই ইয়ার্কি পায়া ফের আয়া" বলে।

    ভার্সের রাস্তা এম্নিই খুব পপুলার টুরিস্ট স্পট না তায় অফ সিজন। জোড়থাং অব্দি গাড়ি পেলাম না। একটা গ্যাংটক যাবার গাড়িতে বসে মল্লি। মল্লিতে নেমেই মন টন ফুরফুরে হয়ে গেলো। কি চমৎকার নীল আকাশ, পাহাড়ে মেঘ নেমে আসছে নীচ দিয়ে তিস্তায় বর্ষার ঘোলা জল বয়ে চলেছে। আমার কোথাও পৌঁছনোর তাড়া নেই তাই চুপ করে রাস্তার ধারে খানিক্ষন বসে রইলাম। সৌগতদা ফোন করে খোঁজ নিলো ওয়েস্ট বেঙ্গল পেরিয়ে গেছি কিনা, সব সহি সালামত আছে কিনা।

    পিঠে ব্যাগ গলায় ক্যামেরা ট্যুরিস্ট ছাড়া আর কি কিন্তু এ সময় পাহাড়ে ট্যুরিস্ট তাও এরকম অফরুটে! লোকজন দেখি নেপালি ভাষায় কিসব বলছে আমায় দেখে, যাকগে মরুগগে আমায় নিয়ে গেলেই হলো জোড়থাং।

    মল্লি থেকে জোড়থাং এর রাস্তা খারাপ। বৃষ্টি পড়ছে না,ধূলো উড়ছে। পাশে একটা বাঙালী, টুরিস্ট না, ব্যাবসার কাজে এসেছে, যথারীতি বাঙালসুলভ কৌতূহল। কত বয়েস, কি করি, একা কেন, বিয়ে করলে আর একা ঘুরতে হয়না, বউ থাকলে কত ভালো লাগে এসব জায়গা এইসব শুরু হলো। বোর হচ্ছি বোঝাতে কানে হেডফোন গুঁজতেও পারছিনা, এক তো চার্জ যথা সম্ভব বাঁচাতে হবে তাছাড়া গাড়ির সিট একেবারে টাইট ফিট। নড়া চড়া করার উপায় নাই। খুব অভদ্রভাবে জানলা দিয়ে বাইরে থাকিয়ে রইলাম শেষঅব্দি।

    জোড়থাংেও বেশ ভালোই গরম দেখছি। এটা আসলে একটা জংশন টাইপ। সব জায়গাতে গাড়ি যায় এখান থেকে, মানে ওয়েস্ট সিকিমের নানান জায়গায়। গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞেস করছি এদিক সেদিক, একটা গাড়ির লোক কোথায় যাবো জেনে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বলল, 'ও ওখ্রে? পিডি ভাই যাবে গাড়ি আছে। দাঁড়াও ফোন করো তো এ নাম্বারে। তার নাম নামডিং। দিব্যি ফূর্তিবাজ লোক। আমার ফোন থেকে কল করে পিডিভাইকে খানিক চমকালো, 'কি হে গাড়ি কই তোমার হ্যাঁ? খালি ফাঁকিবাজি, ফাইন নেবো'। যাহোক পিডিভাই তখন গাড়ি সারাচ্ছিল। গাড়িতে ব্যাগ রেখে আমি চক্কর খেতে বেরোলাম। গাড়ি সারাতে সময় নেবে।
    চারদিক পাহাড় ঘেরা ছিপছিপে জনপদ। গাছপালার মধ্যে মেঘ এসেছে একদিকে অন্যদিকে ঝকঝকে নীল আকাশ। এরম আকাশ কোলকাতায় কেন দেখা যায়না কে জানে। অবস্থান গত কারন হবে বোধহয়। ছোট ছোট দোকান, বেকারির জিনিস বেশি দেখছি। আমার খিদে পেয়েছে কিন্তু কি খাবো বুঝতে পারছিনা। ভাত খাবার ইচ্ছে নাই, মোমো বলছে ভেজ হবে খালি। এদিকে আমার ভেজ খাওয়া মানা, দীক্ষা নেওয়া আছে কিনা। শেষব্দি একটা কোল্ড কফি কিনে কেক খেতে খেতে এগোলাম খানিক। বেশী দূরে যেতেও ভরসা হচ্ছে না, আদতে তো সেই শহুরে সন্দেহবাতিক লোক। পাহাড়ের ইনোসেন্স আর পাবো কোথায়। ব্যাগ টা গাড়িতে আছে, যদি গাড়ি ছেড়ে দেয় এইসব আজেবাজে চিন্তা টুকটুক করে হানা দিচ্ছে দেখি। নিজেকেই এক ধমক লাগালাম, ভাগ ব্যাটা কি আছে তোর ব্যাগে হ্যাঁ, গামছা টর্চ মোমবাতি লাইটার ব্রাশ জ্যাকেট রেনকোট (তাও তোর মাপের) নিয়ে কার কি হবে রে পাগলা। ব্রিজ অব্দি ঘুরে এলাম। একটা মাত্র মিষ্টির দোকান আর সেটাও কোনো বাঙালীর না একজন মাড়োয়ারি ভদ্রলোক ভুঁড়ি বাগিয়ে বসে।
    পিডি ভাই বেশ হাসিখুশি লোক। নামডিং কে বলল আরে বাচ্ছা পেসেঞ্জার নিয়ে এসেছ দেখি। তার গাড়িতে আরো দু তিনজন উঠলো। বকবক করতে করতে চললাম। চলতে চলতে দেখি নীচে রঙ্গিতের উপর ড্যাম না কি হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে বলে আরে সিকিম তো সুইজারল্যান্ড হচ্ছে জানোনা। আমি একটু বোকা হাসি হাসছি, মানে হবে হয়ত, হতেই পারে। দেখি বলে আরে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, নির্বাচনী প্রচারের সময় বলল আমাদের ঘর সিকিমকে সুইজারল্যান্ড বানাবে তারপর সুইজারল্যান্ডএ নিজের ঘর বানিয়ে নিলো, হোলো না সিকিম ইজ সুইজারল্যান্ড? বলে আমার দিকে চোখ মটকে দিলো।

    এ গাড়িটা শেয়ারের গাড়ি, সব শরিকি জিনিসের মতোই ভারী ক্যাজ হাবভাব। আমারো তাড়া নেই গাড়িরও। একজন বাড়িতে ব্যাগ ফেলে এসেছে সুতরাং দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা উচিত। একজনের একটা বস্তা নিয়ে যেতে হবে উপরে( আহা উপরে মানে স্বর্গে না রে বাবা, ওখ্রেতে), তাই গাড়িটা একটু ঘুরিয়ে নিলো। একজনের বাজারে একটু কাজ আছে তাহলে কি তাকে ফেলে চলে যাবে নাকি? তারপর সে যাবে কিভাবে? সুতরাং সেখানে হল্ট, চা পানি খাও না। চারদিকে মেঘ নেমে এসেছে, বেকারির গন্ধ আসছে দেখো খাও হাত পা ছাড়াও। এমনি ট্যুরে এলে হয়ত বিরক্ত লাগত কিন্তু আমার বিরক্ত লাগছে না। ঘুরছি এলোমেলো, গল্প গুজব তেমন হচ্ছে না কারন ইচ্ছে করছে না। আকাশ দেখছি, নদী দেখছি। এরকম টুকটুক করে পৌঁছে গেলাম একসময়। তখন সূর্য নেমে গেছে। মেঘ নেমে এসেছে চারদিকে। পিডি ভাই আমায় ওর বাড়ি নিয়ে গেলো আগে তারপর ও ওর বোনের হোমস্টেতে নিয়ে যাবে।
    পিডি ভাই এর বাড়িতেও হোমস্টের ব্যাবস্থা আছে। বাবা মা, বউ বাচ্ছা মিলে সংসারী মানুষ পিডি ভাই এর এরকম একা একা বাউণ্ডুলে ট্যুরিস্ট দেখে খুব অবাক লাগছে বুঝতে পারছি। খালি বলছে 'একা একা এত্ত দূরে চলে এলে হ্যাঁ বাহ বাহ। আমিও ট্রেক করেছি একবার'। ওর বাড়িটা একটু নীচে, পাহাড়ের গা বেয়ে নামতে হয়, আলু ভুট্টার চাষ করেছে একটা কুকুর বাঁধা। সব মিলিয়ে সম্পন্ন পাহাড়ি। চা খেতে দিলো। এখানে বলে না আমি বেশীর ভাগ জায়গায় দেখেছি চা এর মধ্যে একগাদা চিনি আর দুধ দিলে সেটা খাতিরের চা বলে ধরা হয়। এখানেও দিলো ওরম গরম দুধের সরবত। চা না বলে তাকে যদি মালাই কুল্পি বল্লেও চলে এমন জিনিসও জ্যাক ড্যানিয়েল খাচ্ছি মুখে খাই তবুও।
    একটা আপেল গাছ বসিয়েছে পিডি ভাই, কলকে ফুলের মতো কি একটা বুনো ফুল ফুটেছে পাশেই একটা জংলা গাছে, সারি সারি ভুট্টা ফলে আছে, ফুল হীন রডোডেন্ড্রন গাছ দাঁড়িয়ে সব মিলিয়ে মন ভালো হতে শুরু করেছে। বেশীক্ষন বসিনি, মনস্ট্রিতে প্রার্থনা শুরু হয়ে যাবে, বোনের ওখানে পৌঁছতে হবে।
    মনস্ট্রীতে পৌঁছতে পৌঁছতে সুর্য্য আরো নেমে গেছে।চারদিকে মেঘের ফাঁকে অল্প আলো আসছে। ভোঁ ভোঁ, প্যাঁ পোঁ করে নানান রকম আওয়াজ আর প্রার্থনা সঙ্গীত ভেসে আসছে। এর আগে আমি কখনো প্রার্থনার সময় কোনো গুম্ফায় থাকিনি। ব্যাগটা ঘরে রাখতে গিয়ে জানলাম আমার মতোই আরেকটা ছেলে একা একা এসেছে ট্রেকে। হাই হ্যালো টাইপ করে তাড়াতাড়ি চা নিয়ে গেলাম গুম্ফায়। সাধারণত পুজোর সময় কিছু খাওয়া মানা থাকে বলে আমি ইতস্তত করছিলাম ঢুকবো কি ঢুকবোনা বলে, কিন্তু আমায় দেখে বাচ্ছা লামা গুলোই ডেকে নিল। ওরা একটা কাপে গরন জল খায় আর প্রেয়ার করে!! এর যে কি মানে কে জানে। যাই হোক আমি চা হাতে একদিকে পা মুড়ে বসেছি। হ্রুম ক্রুম করে অদ্ভুত দর্শন বাজনা বাজছে আর মন্ত্রোচ্চারণ হচ্ছে। যার পুজো হচ্ছে সে ভদ্রলোজ বেশ ভয়াল দর্শন, কি যেন নাম বলল ভুলে গেছি। বুদ্ধদেবের শান্ত রূপ বোধায় পুজোর জন্য পারফেক্ট না। হিন্দু ধর্ম বৌদ্ধ ইনফ্লুয়েন্স যেমন বৌদ্ধও তাই বোধহয়। আমাদের কালী যেরম ভয়াল দর্শন (সে শ্যামাসংগীত এ যতই নরম সরম করে প্রকাশ করুক, হাতে কাটা মুন্ডু নিয়ে জিভ বের করা কাউকে দেখলে অপরিচিত কারোর কাছে ভয় না লাগার কিছু নেই, আমাদের অভ্যেস হয়ে চোখ সয়ে গেছে তাই) ওদেরও বহু আরধ্য এরম ভয়ানক রূপের। গুম্ফার ভিতর আলো অল্প, লোডশেডিং চলছিলো, বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সঙ্গে বাজনা আর তিব্বতি ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণ সব মিলিয়ে অদ্ভুত গা ছমছমে পরিবেশ। নেহাত লামারা সবাই বাচ্ছা তাই নাহলে ভিতরে বসে থাকতে ভয় লাগতো হয়ত।

    আশপাশে খুব কিছু দেখার ছিলো না সে মুহুর্তে সন্ধ্যে হয়ে গেছে, পরের দিন ভার্সে যাবো সে প্ল্যানিং করতে ভিতরে গেলাম প্রার্থনা শেষ হতে। আমার প্ল্যান ছিলো, হিলি থেকে ভার্সে ট্রেক করে ভার্সেতে থাকা। পরেরদিন ডেন্টাম নামবো ভার্সে থেকে ট্রেক করে ডেন্টাম। ওই রাস্তাটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, ছোট খাটো কিছু পাহাড়ি নালা পেরোতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো এটা বর্ষাকাল, তাই কতটা গাইড বা রেঞ্জার রাজী হবে বলা মুশকিল। বর্ষা কাল প্রজননকাল পশু পাখিদের, ফলে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেলে তাদের অসুবিধে হবেই। ধরা যাক মা ভাল্লুকি ছানাপোনা সহ পাড়া বেড়াতে বেরিয়েছে, আমি পড়লাম সামনে। এবার ভালোবেসে কি রে ছোকরা খবর কি, বলে হ্যান্ডশেক করলেই চিত্তির। যাই হোক কাল ভাবা যাবে সে কথা, আপাতত এটা জানানো হলো ভার্সে যাচ্ছিই আর ওখানে থাকবোও। আরেকটি যে ছেলে এসেছে সেও যাবে। হোটেল তো বন্ধ করে বন্ধু শেরপা নেমে এসেছে, ফলে দুজন লোক দিয়ে আমাদের সাথে পাঠাবে ফের ভার্সের ট্রেকার্স হাট গুরসকুঞ্জ খুলতে। কথাবার্তা বলতে বলতেই 'বেহেনজি' খাবার নিয়ে এলো। ভাত ডাল তরকারি মুলোর আচার আর মুরগির ঝোল। ছোট ছোট চালের গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত তরকারি অমৃত সমান, তাকে উপেক্ষা করে কাল কি করা হবে সে আলোচনা আর যেইই পারুক আমি পারিনা। সুতরাং আঅাক্রমঅঅন। আমি এমনিতে কিঞ্চিত কম খাই, মানে একবারে অনেকটা খেতে পারিনা। কারোর বাড়ি গেলে ভারী বিব্রত হই, তাঁরা ভাবেন তাদের খাবার বোধহয় পছন্দ হয়নি বা আমি লজ্জা পাচ্ছি। তা হোটেলে রেস্তোরাঁতে সে চাপ হয়না, কে কি খাচ্ছে কে দেখে। কিন্তু এ দূর দেশে এরম দিদি থাকে জানব কিভাবে। আমাদের খেতে দিয়ে উনি আর ওনার দুই বোনঝি পরিবেশন করছিলেন। আমার খাওয়া দেখে রীতিমতো হাঁ হাঁ করে বকে দিলেন। একে তো একা একা এরকম এসেছি তাতে যদি না খাই ঠিকমতো কিভাবে চলবে, দুবলা হলে হাঁটবোই বা কিভাবে সুস্থই বা থাকবো কিভাবে! সত্যি কথা বলতে কি, পরের বাঁক গুলো দেখা যায়না বলেই বোধায় জীবন এত ইন্টারেস্টিং। কোন পাহাড়ে আলো ছায়ায় আমার জন্য এমন স্নেহের ভান্ডার, এমন ভালোবাসার বকুনি বসে আছে কে জানত। কিছু জোরের কাছে হারতে মন্দ লাগে না তা সে তুমি যতই গোঁয়ার হও....
    (ক্রমশ)
  • ঋক আর কিছুনা | ০৪ জুলাই ২০১৭ ২২:০৩368154
  • হোং হোয়াং ছো টাইপ একটা গুরুগম্ভীর মন্ত্রের আর প্যাঁপ্পোর পোঁ আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। পর্দা সরিয়ে দেখি দিব্যি ছিমছাম একটা রোদ বেরিয়েছে। মেঘের সমুদ্রে পাহাড়ের চড়া পড়েছে। বিছানা ছেড়ে নেমে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে। দূরে সান্দাকফু দেখা যাচ্ছে নাকি, আমি অবশ্য ওটা মেঘ বলে ভুল করছিলাম। আবার ফের মেঘ করে আসতে নেমে গেলাম। মঠের পাশেই একটা পাহাড়ে ধাপ কেটে চাষের ক্ষেত। ভোরের কুয়াশায় মেঘে জড়ানো সে রাস্তা এক অদ্ভুত রহস্যময় পরিবেশ তৈরী করেছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি উপেক্ষা করে একটু এগিয়েই ফের ফিরে আসতে হলো, পিডি ভাই এসে গেছে ব্রেকফাস্ট করতে হবে, বেরোতে হবে।

    ভার্সে যাওয়ার জন্য বন্ধুর গাড়িতে দুজন হেল্পার, আমি আরেকটা যে ছেলে ছিলো সে মিলে ওঠা গেলো। হেল্পার দুজনের একজনের না মিংমা শেরপা আরেকজনের নাম খুব কঠিন মতো, বাচ্ছা শেরপা বলাই সহজ বরং। মিংমা কম কথার মানুষ, এমনি সময়ে সে গাইড হয় বটে ডেন্টামের রাস্তার কিন্তু বর্ষায় হবে না কিছুতেই। আসল কারনটা পরে জেনেছিলাম অবশ্য। সে যাই হোক, রেঞ্জার কিছুতেই গাইড ছাড়া ভার্সে থেকে ডেন্টাম যেতে পারমিশন দিলো না। কি আর করা! সই সাবুদ সেরে এগোনো গেলো। সঙ্গের ছেলেটা সদ্য কলেজ শেষ করেছে বেরিয়েছে একা কিন্তু বেজায় ভীতু দেখলাম। মিংমা আর বাচ্ছাকে কম করেও বিশ বার জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা বর্ষাকাল তোমরা সবাই নেমে গেছো এ জঙ্গলে তো ভালুক আসতেই পারে না? হ্যাঁ, ও দাদা আসতে পারেনা? প্রথমটা মজা পাচ্ছিলাম পরে বিরক্ত হচ্ছিলাম। এরম প্যানপ্যানে ছেলে বাড়ির খুঁটো ছেড়ে আসে কেন কে জানে! আমি একটু তফাতে হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছিলাম। ছেলেটার আবার নার্সিজিজম সিন্ড্রোম আছে। থেকে থেকে ছবি তুলে দিতে বলে। আর সে ছবি আবার তার পছন্দও হয়না। শেষে তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে, পর পর বেশ কিছু খারাপ ছবি তুলে দিলাম যাতে আর না দেয়। ওয়ান টাইম ইনভেস্টমেন্ট কিন্তু লম্বা সময়ের শান্তি।
    মেঘ কুয়াশা ঢাকা রাস্তা, বর্ষার জল পেয়ে জঙ্গল ঘন হয়ে উঠেছে। ফার্ন গুলো চকচকে সবুজ হয়ে আছে। রাস্তার ধারে নাম না জানা বুনো ফুল ফুটে আছে। পাতায় জলে রাস্তাটা পিচ্ছিল হয়ে আছে।সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগোতে হয়। সারা জঙ্গল সরগরম হয়ে আছে পাখির ডাকে, ঝিঁঝির আওয়াজে। কোলকাতায় ইঁট কাঠ এর মধ্যে বসে হাওয়া তবু এক আধবার পাওয়া যায় কিন্তু এই যে জঙ্গুলে বুনো গন্ধ আহ কতদিন পরে পারফিউম, খাবার, আবর্জনা এসবের বাইরে কোনো গন্ধ পেলাম। খুব শান্তি লাগছে, ফোনে টাওয়ার নেই তাই ফোন চেক করার বদরোগও নেই। বাড়িতে বলেই এসেছি টাওয়ার থাকবে না আর কেউ চিন্তা করবে না ফোনে না পেলে।
    এলোমেলো খচাং খচ করে ছবি তুলছি, আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। ওরা খানিকটা এগিয়ে গেছে। কুয়াশা মাখা জঙ্গল এক অদ্ভুত আদিমতা তৈরী করেছে। কি এক গভীর রহস্য যেন লুকিয়ে আছে, পথ ছেড়ে বেপথে পা দিয়ে দেখলেই যেন খোঁজ পাওয়া যাবে তার।

    এসময় হঠাৎ বনে হাওয়া দিয়ে গেলো, পাতায় জমে থাকা জল শিশির টুপটুপ করে ঝরে পড়লো গায়ে মাথায়। গাছেদের সমাজ মানে জঙ্গল যে অনেক উন্নত সে তো আমি জানিই। আমার মনের কথা টেলিপ্যাথিতে নিশ্চিত বুঝেছে, তাই এ আদর।
    ঝুম হয়ে একটা ভেজা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ শুনি খোকাটি মিংমা আর বাচ্ছা শেরপার সাথে হাঁক দিচ্ছে ভাই কোথায় গেলিরে। ধ্যার বাবা দিতে হয় এটার কানের গোড়ায়। আমি যদি ভালুকের পেটেই যাই যেতে দে তো বাবা শান্তিতে। যাকগে তক্ক করে খালি মেজাজ নষ্টই হবে তাই কথা না বাড়িয়ে ফের এগোলাম।

    মেঘের আড়ালে ওই যে বাড়িটা ওটাই বুঝি গুরসকুঞ্জ? বেজায় ভালো তো? বরদার গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। আহা একটা পেত্নী টেত্নী থাকলে খারাপ হতো না। মুশকিল হলো আমি শরীরকে একটা যন্ত্রই ভাবি, আর ব্রেনকে তার কন্ট্রোলার। হতে পারে সেই মস্তিষ্কএর অনেক কিছুই অজানা আমাদের কিন্তু তাই বলেই একটা এক আউন্সের আত্মা জাতীয় কিছু ভুস করে শরীর থেকে শরীরে বিরাজমান হয়ে বেড়াবে এ আমি ভাঙ খেয়েও হজম করতে পারবো না। তাই পেত্নী যে আসবে না তা আমার জানাই। তাতে কি, আমি যখন একা একা এখানে ঘুরবো রাক্ষুসে গাছ, রহস্যময় কুয়াশা, কোনো বিদেহিনী, সাপের মাথার মণি সব আবিষ্কার করব।

    চা খেয়ে বেরোনো গেলো। খোকাটি আমার সাথেই আসছিলো, কিন্তু বকবক করে কানের মাথা খাচ্ছিলো বলে আমি বাধ্য হয়ে বললাম, ভাই তুই ওদিকটা যা আমি এদিকটা একটু একা ঘুরে আসি। বললে বিশ্বাস করবেন না মশাই কি বলল আমায়!! বলে, ভাই তুই এরকম চুপচাপ আছিস কথা বলছিস না বেশী সুইসাইড ফাইড করে ফেলিস যদি তাই একা ছাড়ছিনা, মানে বুঝতেই পারছিস আমিও এসেছি এক সাথে কেস খেয়ে গেলে!! শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না, বললাম, ভাই আমার বাড়ির কাছে গঙ্গা আছে মেট্রো আছে সেসব ছেড়ে এখানে আসব কেন বলতে পারিস? তুই চল তোকে মিংমার সামনে রেখে আমি ঘুরতে বেরোই তাহলে আমি মরলেও তোকে খুনের দায়ে কেউ ধরবে না!!
    তাকে ছেড়ে এসে নিজের মনে এগোচ্ছি, দেখি একটা লাল আর একটা সাদা কুকুর আমার পিছন পিছন আসছে। মহা ঝঞ্ঝাট! আমায় কি মহাপ্রস্থান এর যুধিষ্ঠির ঠাওরালো নাকি সব? নকুলকে কাটাই তো ডবল ধর্মরাজ! আমি আবার একটু অধার্মিক কিনা তাই ধর্মরাজদের নিজের আশেপাশে ঠিক ভালো চোখে দেখিনা। উদাস মুখে আড়চোখে দেখলাম ব্যাটারা চলে গেলো হেঁউমেঁউ করে। যাক বাবা! রাস্তায় ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে, বোঝাই যায় টুরিস্টকাল শেষ। একটা স্ট্রবেরীর মতো দেখতে ফল। বর্ষাকাল ছোট ছোট পাখি জন্মেছে অনেক। কিচিরমিচির করে ডেকে ডেকে ওড়া প্র‍্যাক্টিস করছে। আমি দু এক বার ছবি তোলার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম। ও আমার দ্বারা হবার না। তার চেয়ে এই এখানটায় শুই লম্বা হয়ে পাথরের উপর। নীচে গাছ পালার ফাঁকে গুরসকুঞ্জ দেখা যাচ্ছে। জঙ্গলের আওয়াজ মাথার উপর নেমে আসা মেঘ নিয়ে আমি ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। টুপটুপ করে বৃষ্টি শুরু হতে ঘুম ভেঙে তড়াক করে উঠে হাঁটা দিলাম। খিদেও পেয়েছে মন্দ না। (ক্রমশ...)

    ছবি গুলো আসছে না :(
  • ঋক আর কিছুনা | ০৪ জুলাই ২০১৭ ২২:০৪368165
  • আগেরবারের পর আরো খানিক...
    মিংমা আর বাচ্ছা খুব, মানে খুবই খারাপ খাবার বানায়। লোকজন কিরম ফাঁকা বাংলোয় চমৎকার সব বাবুর্চি পায়। কেউ কেউ তো ভূতকেও বাবুর্চি হিসেবে পায়। যাকগে কচরমচর করে যা দিলো খেয়ে নিলাম। জলটা কাঠের আঁচে ফুটিয়েছে। ধোঁয়া গন্ধওলা জলটা অদ্ভুত লাগছিলো। খেতে খেতেই ছোকরার লেকচার শুনলাম খানিক। দু বোতল বিয়ারের এফেক্ট আর কি। সে নাকি মানুষকে চাইলেই প্রভাবিত করতে পারে। নেশাড়ুদের সাথে তক্কেযেতে নেই শুধু তাই না এইসব ক্ষেত্রে মজা নিতে হয় খালি চুপটি করে। আরো বলতে দিতে হয় আর খোরাক নিতে হয়।আমিও ঘাড় নেড়ে নেড়ে শুনলাম। তারপর দেখি আমাদের খাওয়ার ঘরের আধখোলা দরজা দিয়ে হু হু মেঘ ঢুকে আসছে।

    বাইরে গিয়ে দেখি পুরো এলাকাটা মেঘে ঢেকে গেছে। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। কোথাও আওয়াজ নেই। সে এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য। মেঘবন্দী হয়ে আছি মনে হচ্ছে যেন। মাঝে মাঝে সাদা কুকুরটা কেশে উঠছে, ব্যাস আর কোনো আওয়াজ নেই কিচ্ছু নেই। মেঘ ভেদ করে একবার ঢুকলেই যেন সেই অজানা কোন রহস্যময় দেশে ঢুকে যাবো। আর এই সময়েই টুপটুপ করে বৃষ্টি এলো। সে যে কি অদ্ভুত বলে বোঝানো যাবে না। যাদের চশমা।আছে তারা দেখেছেন নিশ্চয় এসি ঘর থেকে টপ করে গরমের মধ্যে বেরোলে চশমার কাঁচ কিরকম বাষ্প জমে ঝাপসা হয়ে যায়? তারপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়? ঠিক সেরকমভাবে দূরের পাহাড়টা প্রথমে দেখা গেলো এদিকে সামনেটা পুরো মেঘে ঢাকা তারপর মাঝের পাহাড়টা তারপর সামনেটা। দেখি মেঘ গুলো আকাশে ছুটেছুটে কোনো বিরহী যক্ষের চিঠি নিয়ে যাচ্ছে আর আকাশখানা মেঘের বোরখার ফাঁক পেয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। সেইরকম নীল মিষ্টি হাসি বড় একটা দেখা যায় না। আরে দেখ না দেখ দূর পাহাড়টা ফের মেঘে ঢেকে গেলো আর ক্রমে ক্রমে আমিও।

    মেঘের পোশাক পরেই চারপাশটা ছানবিন করতে বেরোলাম। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা বেরিয়ে গেছে ছোট ছোট গ্রামের পথে কিন্তু জঙ্গলে ঢেকে আছে রাস্তা আর টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জঙ্গলটা মেঘ মেখে হাতছানি দিচ্ছে। যেন কোন এক রহস্যময়ী রহস্য মেখে দাঁড়িয়ে। আমাদের ট্যুরিস্ট বাংলোটা ভুতুড়ে গল্পের প্লট হয়ে আছে যেন।বৃষ্টিটা জোরে আসতে বাংলোয় ফিরে চেয়ার নিয়ে বসে রইলাম অনেক্ষণ চুপটি করে। টাওয়ার হীন, কারেন্ট হীন এসব জায়গা মানুষকে নিজের সাথে কথা বলতে শেখায়। বড় দরকার মাঝে মাঝে এই দৌড়াদৌড়ি, লড়াই ঝগড়া সব সব কিছু থেকে তফাতে গিয়ে নিজের সাথে বসার, প্রকৃতিতে ডুব দেবার। অনেক্ষণ পর মিংমা দন্তরুচি কৌমুদী হয়ে পপকর্ন আর চা এনে দিলো। দুধ নেই লিকার চা। সেই কাঠের আঁচের ধোঁয়া গন্ধ জল দিয়েই। বললাম চল ব্যাটা এতো জবরদস্ত খাবার খাওয়াচ্ছিস একটু ঘুরে আসি চল। খোকাটি তো খুব একটা এদিক সেদিক যেতে ভরসা পাচ্ছে না তোমাদের ছাড়া। বেচারা প্রায় ঘরেই বসে আছে। ল্যাদ কাকে বলে এ মক্কেলকে দেখে শেখার।

    যাই হোক নড়ে চড়ে রওনা দিলো। সূর্য না দর্শন দিলেও তার আলো দেখা যাচ্ছে দিব্যি।
    ফেরার সময় হুড়মুড় করে সন্ধ্যে এসে গেলো। পাখিদের কিচিরমিচির বেড়ে গেছে। ঝুপ্সি অন্ধকার রাস্তা, পাতলা আলো পড়ছে তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে ফিরতে খুব ভালো লাগছে। টুপটাপ জলের আওয়াজ পড়ছে পাতা থেকে, সাদা আর লাল কুকুর দুটো দৌড়ে এগিয়ে গেলো। বাংলোয় ফিরে ফের বারান্দায় বসেছি। আশেপাশে দু তিনটে পাহাড়ের মধ্যে চারটে মানুষ। কারেন্ট নেই, জেনারেটরে তেলও নেই। মিংমা একটা মোম জ্বেলে রেখে গেলো ঘরের মধ্যে। বারান্দার দরজাটা বন্ধ করে বসে রইলাম। পাতলা অন্ধকার, আশেপাশে সব দেখা যাচ্ছে কিন্তু যেন সব ভারী দূরের। ঝিঁঝি ডাকছে। একটা কিসের যেন খড়মড় করে শব্দ হলো, কুকুর দুটো তাড়া করলো সেদিকে চিৎকার চেঁচামেচি করে। সঙ্গী ছোকরা আগেই ঘরের ভিতর সেঁধিয়ে গেছে। আমি টর্চ হাতে বসে রইলাম। একটু একটু গা ছমছম করছিলো না বলব না। অন্ধকারে শহুরে মানুষদের একটু অস্বস্তি লাগেই। তাছাড়া জঙ্গল তো পরিচিত হয়ে ওঠেনি এখনো। তবু এক অমোঘ টানে বসে আছি। আকাশে এক গাদা তারা ফুটেছে মেঘ কেটে, একটা বুনো গন্ধ ভেসে আসছে। সমাহিত শান্ত হয়ে বসেছিলাম। তারপর দেখি কুকুরগুলো বাড়াবাড়ি রকম চ্যাঁচামেচি শুরু করে তেড়ে তেড়ে যাচ্ছে গেটের দিকে। হাওয়াটাও বেশ জোরে দিচ্ছে। আমি গুটিগুটি পায়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম।

    বাচ্ছা শেরপা তার স্পিকারে নেপালী গান চালিয়েছে। কাঠের উনুনের পাশে বসে আগুনে ভিজে পা শেঁকতে শেঁকতে সেই গান শুনছি মোমের আলোয়। ছোকরাটিও এসে বসেছে এখানে। বেশ লাগছে, অন্ধকারে আগুনের আঁচে নেপালী গানে।
    এখানে নীচে একটা ঘর আছে ট্যুরিস্টদের জন্য আর হোটেলের লোকের থাকার ঘর আছে দুটো। উপরটা ডরমিটরি। এবার নীচের ঘর গুলো একটু অদ্ভুত। ঘরের সামনে একটা স্পেস আছে যেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। খোকার তো পুরো বাংলোয় অন্ধকারে একা থাকতেই হাল খারাপ মিংমাদের বলল, আমরা চারজনেই উপরে ডরমিটরিতে থাকিনা? মিংমা তো হাঁ হাঁ বলে দিলো। আমার নিজেরও নীচের ঘরটা একটু গুমোট টাইপ লাগছিলো, আমার আপত্তি নাই।
    উপরের ঘরে জানলার কাচটা ভাঙা, প্লাস্টিক দিয়ে মেরামত করা আছে বটে তবে তাও হাওয়া আসছে দিব্যি। রাতে মিংমা আর বাচ্ছা মিলে গরম গরম রুটি আলুভাজা ডাল আর ডিম বানিয়ে দিয়ে গেলো।মোমের নড়বড়ে আলোয় অমৃতের মতন লাগছিলো সে খাবার। আমি আর খোকন যার যার বিছানা পেতে টেতে শুয়ে পড়লাম ওরা পড়ে আসবে জিনিস টিনিস গুছিয়ে।
    মাঝরাতে হঠাৎ 'ভাই... এই ভাই ওঠ না' ডাকে ঘুম ভেঙে দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার। সে অন্ধকার শহরের লোডশেডিং এ বোঝা যাবে না। মোমটা শেষ হয়ে গেছে। হাওয়ার তেজ বেড়েছে, অদ্ভুত আওয়াজ হচ্ছে জানলায়। কুকুরগুলো খুব চেঁচামেচি করছে শুনতে পেলাম, মনে হচ্ছে যেন ভিতরে ঢুকে পড়েছে। টর্চের আলোয় দেখলাম বাকি বিছানা গুল ফাঁকা!! মিংমা আর বাচ্ছা আসেনি!!
    আমি ফের ঘুমানোর উদ্যোগ করতেই খোকন বলে কি 'ভাই এই অন্ধকারে ঘুমাবি?'
    - হ্যাঁ কি হবে এতোক্ষণ তো অন্ধকারেই ঘুমালি
    - না, মানে যতক্ষণ ঘুম ভাঙেনি একরকম এভাবে শোয়া যায় নাকি।
    -মিংমাকে ডাকবো তাই তো?
    - হ্যাঁ মানে অচেনা জায়গায় এভাবে অন্ধকারে...
    যা বুঝলাম এখন আমায় কম্বলের আরাম ছেড়ে বেরোতেই হবে, নইলে এ মাল জ্বালিয়ে খাবে।তাছাড়া সত্যি বলতে কি কুকুরের ডাকটাও ভয়ানক বেড়ে গেছে, অন্ধকারে অস্বস্তিকর।
    টর্চ জ্বেলে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামলাম। নামতেই খুব জোর চমকেছি। সত্যিই কুকুরদুটোর একটা ঘরে ডাইনিং হলে সোফার উপর উঠে এসেছে। ঘেউ ঘেউ করলো আমাদের একবার। মিংমারা দেখি দরজা বন্ধ করে ঘুমোচ্ছে। নাক ডাকার শব্দও শোনা যাচ্ছে। মেজাজ হেভভি খাপ্পা হয়ে গেল। হতভাগারা বলতে পারতো যাবে না। দরজা ধাক্কা দিচ্ছি মিংমা, মিংমা?
    -হাঁ কওন?
    -হামলোগ
    ব্যাস আর সাড়াশব্দ নেই।কিরম বদ রে ব্যাটা! এই মিংমা? কিছুতেই সাড়া নেই। ভেবেছে কি এম্নিই চলে যাবো, মোম না নিয়ে যাবোই না ব্যাটা আমার ঘুম ভেঙেছে আমিও ছাড়বো নাকি।
    মিংমা, মিংমা?
    অনেক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করে শেষে কেয়া মুসিবত বলে গজগজ করে উঠে মোম বের করতে গেলো। মোম বেরোলো তো দেশ্লাই নাই। উপায়?
    রান্নাঘরের দরজা খুলে বেচারী গ্যাস জ্বেলে মোম জ্বালিয়ে দিলো। তারপর খোকন যেই বলেছে তুমি উপরে চলো শুতে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ হিসি করেই যাচ্ছি।
    আসেনি যে তা পরদিন ভোরে জেনেছিলাম। (ক্রমশ)
  • গবু | 57.15.***.*** | ০৪ জুলাই ২০১৭ ২২:০৮368167
  • ছলছলে লেখা। অপেক্ষায় রইলাম। বিবমিষা উদ্রেককারী মারপিট দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্যে একটা রিলিফ, দারুন লাগছে।
  • dd | 59.207.***.*** | ০৪ জুলাই ২০১৭ ২৩:২৬368168
  • বাহ। খুব ভাল্লাগছে পড়তে।
  • ঋক আর কিছুনা | ০৫ জুলাই ২০১৭ ১০:৪১368169
  • dd গৰু দুজনকেই ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য :)
  • d | 59.203.***.*** | ০৫ জুলাই ২০১৭ ১০:৪৫368170
  • চলুক চলুক
  • গবু | 127.194.***.*** | ০৫ জুলাই ২০১৭ ২১:৫৯368171
  • ইয়ে, পরবর্তী কিস্তি কি উইকেন্ডে? ☺️
  • pi | 127.194.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৭ ০৭:৪৪368172
  • খাসা হচ্ছে। পরের কিস্তি কই?
  • ঋক | 94.246.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৭ ১৭:৫৮368144
  • থ্যাংকু সবাইকে আর বিস্তর দুঃখপ্রকাশ দেরি করার জন্য । শেষ কিস্তি আজ রাতেই বাড়ি ফায়ার :)
  • ঋক | 94.246.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৭ ১৭:৫৯368145
  • আরে ধ্যুত । ওটা ফিরে বলতে চেয়েছেন কবি -_-
  • ঋক আর কিছুনা | ০৬ জুলাই ২০১৭ ২১:৩৩368146
  • শেষ টুকু...
    ঘুম ভেঙে দেখি ফের সব মেঘে ঢাকা। মিংমা চা এনেছিল। বললাম কি হলো ভাই আয়া নেহি। উত্তরে যথারীতি ঘাড় নেড়ে দাঁত বের করে বলে 'নেহি আয়া'। আরে! নেহি আয়া তো পাতা হ্যায় নাকি কেন নেহি আয়া সেটা জিজ্ঞেস করছিরে মর্কট। ফের বললাম কিঁউ নেহি আয়া? 'নেহি আয়া'। আর বেশীক্ষণ প্রশ্নোত্তর চালালে হয়ত আমি লোটা কম্বল নিয়ে হিমালয় চলে যেতাম তাই তাড়াতাড়ি চুপ করে চা খেয়ে রেডি হয়ে ফের আশেপাশে ঢুঁ মারতে বেরিয়ে গেলাম।
    শেষ রাতে বৃষ্টি হয়েছে, গাছ গুলো চনমনে হয়ে আছে। আচ্ছা অসময়ে চান করলে গাছেদের সর্দি লাগার ভয় নেই না? কোনো মা গাছ কি তার ছানা গাছ কে বলে 'এক দিনে দু বার তিন বার ভিজছিস, বর্ষার জল জ্বর আসবে। যা মাথা মুছে নে শিগগির।' ছানা গাছ কি তখন বলে 'মা এক কাপ রোদ দাও না, সকালের রোদের ফ্লেভার দেওয়া'? এই সব হাবি জাবি ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি। চারদিকে পাখিদের বর্ষার ক্লাস চলছে। কিচমিচ কিচমিচ করে বাচ্ছা পাখি গুলো কুচুর কুচুর করে একটু উড়ছে, আমি ক্যামেরা তাগ করছি তারা ফের কিচ কিচ করে দুয়ো দিয়ে অন্য জায়গায় উড়ে পালাচ্ছে। ভোঁ ভোঁ করে ভোমরা উড়ছে, ভেজা মাটি গাছ সব মিলিয়ে চমৎকার একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা জায়গাটায়। এক জায়গায় বসে বসে পাখির ডাক রেকর্ড করতে গেলাম, হতভাগা পাখিটা কি বদ রে ভাই, যেই আমি রেকর্ড অন করছি ব্যাটা টের পাচ্ছে বোধহয় লম্বা একটা পজ দিচ্ছে তারপর আমি পজ করছি ও ব্যাটা ডেকে উঠছে। হলুদ হলুদ ফুল ফুটেছে এক জায়গায়, ছবি তুলতে গেলাম কিরম বিচ্ছিরি এলো!! ও আচ্ছা আচ্ছা, বেশ নাও এই ক্যামেরা মোবাইল সব রাখলাম তোমাদের দিকে পুরো ফোকাস নাও হে বলো কি বলবে। অনেক অনেকক্ষণ জঙ্গল কোনো কথা বলল না আমায়। পাখি নিজের মনে ডাকতে থাকলো, জঙ্গলে পাতা কোনো পাইপ থেকে ছিড়িক ছিড়িক জল ছিটকে পড়ার আওয়াজ আসতে লাগলো, পোকার আওয়াজ হতে থাকলো। চুপ করে জঙ্গল কি বলতে চায় শুনতে গিয়ে বুঝলাম আসলে এ সমবেত শব্দ শোনাতে চায় আমায় সে, আমার প্যান্টের, জ্যাকেটের পকেটে মুঠো ভরে দিয়ে দিতে চায় পাথেয় যাতে অনেক অনেক দিন আমার মন খারাপ না করে অকারণ। সেই যে সেবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ফ্রেন্ডলি আম গাছটার সাথে মোলাকাত হয়েছিলো, ওইই নিশ্চয়ই খবর পাঠিয়ে দিয়েছে বিষণ্ণতা ব্যাধির খপ্পরে পড়ে যাই আমি খালি খালি, অকারণ মন খারাপ সারারে আমার পথ্যি দরকার। প্রকৃতি আমাদের শেষ আশ্রয় আমরা সবাই জানি তবু তা ধ্বংস করার সে কি আশ্চর্য নেশা আমাদের। অদ্ভুত! স্যাডিস্ট না বোকচন্দর বোঝা মুশকিল। চলে যাওয়ার আগে সব্বাইকে থ্যাংকু বলতে ইচ্ছে করছে খুব, মন ভালো হয়ে গেছে আমার, কোনো অভাববোধ কোনো না পাওয়া কোনো রেস আমায় উত্তেজিত করছে না। গাছেরা যে আমাদের থেকে ঢের উন্নতপ্রাণ তা ফের টের পেলাম আরো খানিক পর। আমার আরো খানিকক্ষণ থাকতে ইচ্ছে করছিলো।।কিন্তু পারমিট একদিন এরই এনেছি আর বন্ধু শেরপাও একদিনের রসদ দিয়েই পাঠিয়েছে। মোবাইলে যোগাযোগ করা যাবে না টাওয়ার নেই। বাংলোয় যাবার আগে ইচ্ছেটা পড়ে ফেলেছিলো বোধহয়।
    বাংলোয় এসে দেখি লুচি তরকারি রেডি, খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এবার ফেরার সময় ইচ্ছে করে মিংমা, বাচ্ছা আর খোকনকে এগিয়ে যেতে দিয়ে পিছিয়ে পিছিয়ে হাঁটছিলাম। হাঁ কিরে কুয়াশা মেঘে ঘেরা রাস্তা দেখবো বলে, গাছ দেখবো বলে। বাঁশ গাছ গুলো কি রোগা চেহারা রে বাবা। এদের বাবা মা কি অন্য বাঁশ গাছ দের দেখিয়ে ওদের মতো হতে বলে? না মনে হয়, গাছেরা সভ্য জীব। আচ্ছা তলতে বাঁশ না কি পড়েছিলাম ছোটবেলায় নানান বইতে সেগুলো কি এই রোগা বাঁশ গুলোই? ব্যাগটা বেজায় ভারী লাগছে, কাল থেকে সমানে বয়ে চলেছি কিনা। একটু থামি। আচ্ছা গাছেরা হয়ত নিজেদের মধ্যে কথা বলে জোরে জোরে, চলাফেরাও করে তারপর যেই মানুষ দেখে অম্নি শিকড় গজিয়ে স্থির। হতেই পারে, কে আর জঙ্গলে সিসিটিভি অন রেখেছে।
    টুকটুক করে হিলি পৌঁছে গেলাম। মিংমা দেখি খুব লাফাতে লাফাতে এগোচ্ছে। বললাম কি এতো তাড়া কিসের? বলে, 'গাঁও মে জায়েঙ্গে লেড়কি দেখেঙ্গে মস্তি করেঙ্গে'। ও তাই বলো কাকা, এই জন্যই তুমি ডেন্টাম যেতে চাওনি। ব্যাটা নরকে লাউএর বিরিয়ানি পাবি হতভাগা দেখিস। যাকগে। খোকন এম্নিতে খোকন হলে কি হবে টাকাপয়সার ব্যাপারে বেশ চৌখস। বন্ধু শেরপাকে ফোনে পাকড়ে বলল, আমাদের ব্রেকফাস্ট বেজায় কম হয়েছে, মোটে তিনটে চারটে করে লুচি পেয়েছি। এখনই খিদে পেয়ে গেছে। এখানকার লোকেরা অত প্যাঁচাল না। বলে দিলো বেশ হিলিতে বাইচুং এর দোকান থেকে (ভুটিয়া না ইনি শেরপা) নুডলস খেয়ে নাও, পয়সা দিতে হবে না।
    ভাইচুং থাকে ওখানেই, ওর হোমস্টে আছে হিলিতে।চাষবাস করো।না? 'না প্রচুর খাটতে হয় , তার চেয়ে ট্যুরিজম এ টাকা বেশী খাটনি কম'।
    হিলি থেকে ফের ওখ্রে নামবো কিভাবে? হেঁটে বারো কিলোমিটার। বন্ধুকে গাড়ি পাঠাতে বলা যায় বা হেঁটেই নামা যায়। উৎরাইতে বারো কিলোমিটার চাপ হবে না খুব। 'কিরে তুই কি করবি?' খোকনকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল চল চল হেঁটেই যাই। খানিক দূর এগিয়ে এসেছি, পিচ রাস্তা দুধারে গাছপালা পাহাড়, ক্রমে হিলি আর দেখা গেলো না, মোবাইলের টাওয়ার ফের চলে গেলো আর আমাদের খোকনবাবুর ভয় করতে লাগলো। 'ভাই গাড়ি নিয়ে নিই চল, আরেকটু পিছলেই টাওয়ার পাবো, একটাও লোক নেই দেখছিস, বর্ষার জঙ্গল, এই দেখ কোনো জন্তুর টাটকা পটি। ঘুরতে এসেছিস ভাই লাইফ রিস্ক কেন নিবি।' কাল থেকে সমানে ঘ্যানঘ্যান শুনে অলরেডি বিরক্ত ধরে গেছিলো, খুব ঠান্ডা গলায় বললাম, 'আমি এই জন্যেই একা বেরিয়েছি, মদ খাওয়ার জন্য না। তুই তোর মতো ঘোর, আমায় আমার মতো ঘুরতে দে কেমন?'।
    গাড়ল হলেও বুঝেছে আমি গোঁয়ার টাইপ বেশী ঘাঁটিয়ে লাভ নেই। আমায় বলল তাহলে প্লিজ একটু পিছিয়ে চল, বন্ধুকে ফোন করে ডাকি, তারপর ও এলে তুই চলে যাস। খুব বিরক্ত হলেও নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে ভেবে পিছিয়ে গেলাম ফের এক কিলোমিটার মতো, বন্ধুকে ফোন করে ডাকা হলো। আমি বললাম, বসে না থেকে হাঁটি, কারন তোর জন্তু হাঁটলেও খাবে বসলেও খাবে কেমন? নেহাত অনিচ্ছাকৃত ভাবে হাঁটতে লাগল সে, একা বসে থাকবে এমন সাহস নেই। যাই হোক একটু পরেই বন্ধুর গাড়ি এসে নিয়ে গেলো তাকে। গাছেরা বুঝেছিলো বলেছিলাম না?
    আমি হাঁটছি টুকটুক করে। আর গাড়ি আসবে না বা যাবেনা এ পথে এখন। চওড়া পিচের বাঁধানো রাস্তা, গাছপালা দিয়ে ঢাকা, মাঝে মাঝে পাহাড়ের গা বেয়ে জল নেমে আসছে আহা আর কি চাই। বারো কিলোমিটার হোক কি যাই হোক আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। পিঠের ব্যাগটা ভারী এই যা।
    একটা কাঠবিড়ালি তুড়ুক তুড়ুক করে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটলো, হয় খেলা আছে নয় কাঠবাদাম পার্টি নয় ডেটিং নইলে এতো ফুর্তিতে লাফাবে কেন। একটা বাঁদর এক মনে গা চুল্কাচ্ছে, মানুষের কাছাকাছি জীব তো তাই সন্দেহবাতিক। আমার দিকে ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো। আমি না থেমে এগিয়ে গেলাম। একটা একটা বাঁক পেরোচ্ছি আর যেন মনের একটা একটা ফুর্তির দরজা খুলে যাচ্ছে। আশেপাশে কোলাব্যাঙ বা কুকুর নেই সঙ্গত দেওয়ার জন্য সেই ভরসায় গলা ছেড়ে গানও ধরে ফেলেছি। এই যাহ সাথে সাথে টুপটুপ করে বিষ্টি শুরু হলো যে হ্যাঁ। আচ্ছা আচ্ছা আর গাইবো না, মনে মনে গাইবো।অত ইয়ের কি হে, হ্যাঁ না হয় গলাটা ভেঙ্গেছে একটু বেশীই হেঁড়ে ভাব হয়েছে তাই বলেই গায়ে জল ঢেলে দিতে হবে!! আমিও ভেবেছিলাম ওখ্রে পৌঁছে তবেই হিসি করবো, জঙ্গল নোংরা করব না করে দেবো কিন্তু তার আগেই বৃষ্টি না থামালে। হুমকিতে কাজ হলো, অবশ্য সত্যি বলতে প্লাস্টিক ফেলার মতো খারাপ কাজের থেকে কম দূষণীয় কাজ হতো। যাই হোক ফের কাচ মুছে এগোলাম। আচ্ছা শোনো বৃষ্টিতে আপত্তি নেই এখন না কেমন আরেকটু এগিয়ে যাই। পাগল ভাবতে পারে গাছ কেটে গাছের গুঁড়ি দিয়ে পার্ক বানানো লোকজন আমায় কিন্তু গাছেদের সাথে কমিউনিকেশন করাটা শিখে গেলে মেঘ বৃষ্টি নদী পাথর সব কিছুর সাথে কমিউনিকেট করাই সহজ হয়ে যায়। আর একবার শিখতে পারলে একা একা ঘুরতে বেড়াতে ভারী মজা। নিজের মতো ঘোরো ভালো লাগলো অম্নি সেটা শেয়ার করে দাও গাছেদের সাথে রোদ্দুরের সাথে তারা সেটা ছড়িয়ে দেবে আর অদ্ভুত ভাবে তোমার খুশিটাও বাড়তে থাকবে।
    ওখ্রের সীমানা শুরু হতে হতেই বৃষ্টি মেঘ দিয়ে ঢাকা পড়ে গেলো সব। ভিজিবিলিটির চেঞ্জটা দেখার মতো, প্রথমে পাঁচশো মিটার তারপর একশো মিটার তারপর জিরো। মেঘ ভেদ করে করে মেঘনাদ হয়ে এগোচ্ছি। ক্রমে মেঘটা একটু দূরে সরল বৃষ্টি বাড়লো। রাস্তার পাশে একটা আধটা ছোটখাটো দোকানের মালিক/মালকিনরা অবাক চোখে দেখছে আমায়। পিঠে ব্যাগ, রেনকোট পরা, একা একটা ছেলে কোত্থেকে কোথায় যাচ্ছে এ বৃষ্টিতে!
    এবার একটু কষ্ট হচ্ছে, ওখ্রে মঠে পৌঁছতে চড়াই ভাঙতে হয়। একটা শর্টকাট নেবো বলে একজনের ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেই না এগিয়েছি, ঘেউঘেউ খেউমেউ করে একটা কুত্তো হাঁকডাক লাগালো। কুয়াশায় মেঘে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না হতচ্ছাড়াটা কতদূরে আছে। কামড়ে দিলেই চিত্তির।।মানে মানে কেটে পড়লাম সেখান থেকে। যে বীর হৃদয় জোঁক ভালুক কিচ্ছুর জন্য কম্পিত হয়নি সে সামান্য কুকুরের চিৎকারে পথ বদলালো তা নিয়ে অত খ্যাক খ্যাক হাসির কিছুই হয়নি মশাই, ছোটখাটো দুঃখই চিরকাল বেশী বিব্রত করে মানুষকে বড় শোক হয়ত সয়ে যায়।
    স্কুলের ছুটি হয়েছে সবে, অঝোর বৃষ্টির মাঝেই মস্ত মস্ত ছাতা মাথায় ছেলে মেয়ে গুলো ফিরছে। আমার সামনে তিনটে মেয়ে দুটো ছাতা মাথায় যাচ্ছে। কিশোরী মেয়েদের যেমন হওয়া উচিত তেমন, নিজেদের মধ্যে অনর্গল রহস্যময় বকবক করে করতে যেতে গিয়ে পিছন ফিরে যেই আমায় দেখেছে অমনি তাদের কারনহীন হাসির দমকে বৃষ্টিও থমকে যায়। যত্তসব! হুহ, এদিকে আমি খুব বুঝতে পারছি আমার পা জবাব দিয়েছে, আর হাঁটতে চাইছে না, জুতো ভিজে চুপ্পুর, পিঠের ব্যাগও ভিজে ঢোল। রেনকোট চুঁইয়ে জল আমার গেঞ্জি ভিজিয়ে দিয়েছে। পিঠের ব্যাগটা মনে হচ্ছে গন্ধমাদন। এমন সময় খামোখা হাসলে রাগ হবে না হ্যাঁ! হাঁটুর বয়সী সবকটার সামনে দিয়ে গম্ভীর মুখে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলাম। দলে থাকলেই মেয়েগুলো এরম খামোখা হাসে কেন কে জানে!
    রাস্তার পাশে একটা বাড়ি দেখে ঢুকে পড়লাম একজন লোক দেখা যাচ্ছে 'বসব ভাই একটু'? আমার হিন্দি শুনেই বোঝা যায় নিশ্চিত আমি বাঙালী। আলাপ জমে উঠলো। গনেশ নাম তার, আলু ব্যাবসা করে, ঘুরতে সেও বেজায় ভালোবাসে। আমায় বলল আমি যেন যত পারি ঘুরে নিই এখন, নইলে এরপর বিয়ে শাদী হবে বৌ বাচ্ছার চক্করে পরে খালি আলু ব্যাবসা করতে হবে নো ঘোরা ব্যাবসা। বিয়ের আগে সেভেন সিস্টার স্টেট সব ঘোরা রে ভাই এখন খালি শিলিগুড়ি গ্যাংটক আর আলুরক্ষেত! আচ্ছা শিলিগুড়ি গাড়ি তো যাচ্ছে না তুমি যাভে কিভাবে? আমার গাড়ি গ্যাংটক যাচ্ছে তুমি গ্যাংটক চলে যেতে পারো, ওখান থেকে তো টুরিস্ট ফিরবেই তাই না, জোড়থাং থেকে যেমন চান্স টা কম। আমি জানালাম যে অত চাপ নিচ্ছিনা কিছু না কিছু পেয়ে যাবো আশা করি দেখাই যাক। তখন সেও বলল হ্যাঁ হ্যাঁ একলা আছো, কিছু ব্যাবস্থা হয়েই যাবে, আর আমার নাম্বার রাখো কোনো অসুবিধে হলে গ্যাংটক এলে ফোন কোরো।
    -আপনি থাকেন কোথায়?
    -আরে আমার বাড়ি এখানে নাকি, আমি আমার বন্ধুর বাড়ি এসে থাকি আলু আনতে এলে। আমার কিরকম বন্ধু জানো? আমাদের এমএলএ এক, হা হা হা। যেমন কোলকাতার বাইরে গেলে স্টেট দিয়ে তুমি চেনা খোঁজো, আর দেশের বাইরে গেলে দেশ দিয়ে তেমনি আর কি। তা তুমি কোথায় থাকছ? আমার বন্ধুর বাড়ি থেকে যেতে পারো। টাকা পয়সা লাগবে না কিচ্ছু। আমার বন্ধু মানে তোমারো বন্ধু আবার কি।
    - না না ওখ্রে মঠে আমার থাকার কথা আছে। না গেলে ওনারা ভাববেন হয়ত।
    আপন করে নেওয়াই সহজ আসলে, সভ্য উন্নত সন্দেহবাতিক মন তাই যে কোনো সহজ কে জটিল করে তুলি। দেশের বাইরে গেলে দেশ দিয়ে পরিচয় খোঁজার মতো সত্যি আর কিই আছে। বাইরে থাকতে দেশী না দেশী না এইটুকুই তো প্রথম কথা হতো। হয়ত একদিন পৃথিবী ছেড়ে মানুষ দূর নক্ষত্রে পাড়ি দেবে তখন মানুষ দিয়ে মানুষ এর চেনা বেরোবে।
    ফের এগোতে লাগলাম টুকটুক করে, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তাও বৃষ্টিতে পাহাড়ে হাঁটতে ভালো লাগছে।
    পৌঁছতেই দিদি আদা দেওয়া চা দিলো, চান টান করে ঝুম হয়ে কাঠের আঁচের উনুনের পাশে বসে চা খেতে খেতে হাত পা জ্যাকেট সব শুকিয়ে নিলাম। তারপর পা কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে, বেশী হাঁটা না, তোর কষ্ট হলেই ফিরে আসবো ইত্যাদি স্তোক দিয়ে বেরোলাম ফের। পাহাড়ে ধাপ কেটে কেটে চাষ, মানুষের বাস। গরু, শুয়োর বাঁধা রাস্তার পাশে। কুয়াশা কেটে এগোচ্ছি দেখি দুই ভাই বোন বেরিয়েছে তাদের ছোট বোনের এক এক হাত ধরে ঝোলাতে ঝোলাতে। দাদাটি একটু বড়, আমার কোমরের কাছে হবে তাই একটু রাশভারী। সব চেয়ে মজার ক্ষুদেটা, দাদা দিদি মিলে ঝোলাচ্ছে তাতে এক্টুই কান্নাকাটি নেই বরং দিব্যি মজা পাচ্ছে। একটা গাড়ি এসে থামলো। মা একরাশ জিনিস নিয়ে আর ছানাকে স্কুল থেকে নিয়ে নামলো। পাহাড় বেয়ে অত জিনিস নিয়ে একা উঠবেই বা কি করে, ছানার ব্যাগটা ঝাঁকিয়ে দেখে নিলো কত ভারী, তারপর তাকে একটা মাদুর বা কার্পেট টাইপ কিছু একটা রোল করা জিনিস ধরিয়ে নিজে দু খানা মস্ত ভারী ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে চলল। ভুট্টা ক্ষেতের কাজ শেষে পিঠে ঝুড়ি বেঁধে মেয়েরা ফিরছে, কাস্তের মতো দেখতে একটা জিনিস হাতে। ক্রমে আলো কমতে লাগলো, কুয়াশা বাড়তে লাগলো। গুম্ফা থেকে ভ্রোঁম বুম বুম আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো। কাল পরীক্ষা আছে বাচ্ছা লামাদের। আজ প্রার্থনায় সময় কম কিন্তু ভক্তি বেশী দেখলাম। কালো কুকুরটার সাথে কোনো লামাই খেলছে না। দুজন বাচ্ছা লামা খুব মন দিয়ে পড়া মুখস্থ করছে। একটা পোকা দেখে বই সাইড হয়ে গেলো। পোকাটা উলটে পালটে খানিক পড়ার সময় কমানো গেলো। তারপর যেই না ছুঁড়ে মাটিতে ফেলেছে কুকুরটা লাফিয়ে লাফিয়ে খেতে ছুটেছে। ছাগল ভাব সম্পন্ন কুকুর আর কি। তারপর কুকুরকে নিরস্ত করতে গিয়ে পরীক্ষা দূরে চলে গেলো। ক্রমে রাত বাড়লো, লামারা নিজেরা খেয়ে কুকুরকে খাইয়ে শুতে গেলো। আমরাও খেয়ে নিলাম। আগেরদিন খাওয়ার পর রডোয়াইন খাইয়েছিলো আজ খাওয়ালো স্ট্রবেরী ওয়াইন। বাড়ির তৈরী। জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়েছে নাকি। ধ্যের কাল ভাববো।
    সকালে তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে গেলাম, না হলে শিলিগুড়ির গাড়ি না পেলে চাপ হয়ে যাবে। নুন চা বলে বস্তুটা খেতে কি অদ্ভুত মাইরি। সন্ধ্যেবেলা ট্রেন। এ দুদিন নেট অন করার চাপই নিইনি। কুয়াশায় মাখা মঠ, নীল ফুল, সবুজ পাহাড় পিছনে রেখে পিডিভাই এর গাড়িতে। নানান কিসিমের লোক ফের উঠলো নামলো, গল্প গুজব বাজারের দরদাম ঠাট্টা তামাশা করতে করতে জোড়থাং।
    একটাও গাড়ি নেই শিলিগুড়ি যাবে। একজন বলল বাস যাচ্ছে। জোড়থাং এর বাস টার্মিনাসটা বেড়ে। চারতলা, লাস্ট ফ্লোর থেকে বাস ছাড়ে। বাসের জন্য লম্বা লাইন। একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করতে বলে তুমি একা কেন? বাড়ির লোক কই? আমি যত বলি আমি একাই এসেছি কিছুতে বিশ্বাস করেনা, বন্ধু বান্ধব নিদেনপক্ষে? না রে বাবা একাই এসেছি। সারা ট্রিপেই এই অবস্থা বহুবার ঘটেছে আমি তাই হাসি হাসি মুখে খালি জানাচ্ছি একা রাগ করছিনা। শেষে বিশ্বাস করলো, তারপর বলল আচ্ছা ওই যে বাসের লাইন ওখানে দাঁড়াও আপাতত। গাড়ি ছাড়ছে তবে একটা গ্রুপ করে গাড়ি ঠিক করতে হবে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি দেখি দুটো বাঙালি পুরুষ মহিলা, আরে এদিকে এসো না তাড়াতাড়ি বলে দৌড়োদৌড়ি করে নীচে যাচ্ছে। আমি দোনোমনা করে পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা গাড়ি কি ছাড়ছে? সে তো আমায় দেখে হাঁ হাঁ করে উঠলো, আরে তুমি যাওনি, আচ্ছা দাঁড়াও। একজন লোককে ডেকে আমায় তার হাতে দিয়ে পাঠালো গাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তারপর দেখি সে নিজেই ফের হাজির হয়েছে, ড্রাইভারকে বলছে এ একা আছে একে নিয়ে যাও। সব্বার ভাড়া চারশো করে নিলেও আমার জন্য কম ভাড়ায় সামনের সিটে ব্যবস্থা করে সে ফিরে গেলো ফের।
    এই যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম হঠাৎ, ভার্চুয়াল টু রিয়েল কত মানুষ এ এরম অযাচিত ভালোবাসায় ভরে দিয়েছে আমায়। চারদিকে এতো ঝামেলা লড়াই তাই বিশ্বাস করতে ইচ্ছেই করেনা আমার। কি জানি আমি হয়ত হ্যাপ্পি প্রিন্সের মতো দেখতে পাচ্ছিনা তবু বলব চারদিকে ভালোটাই বেশী বোধহয়, সে ভালোরা রুট বাতলে দেয়, টিকিট এর ব্যাবস্থা করে দেয়, গাড়ি ঠিক করে দেয়, থাকতে দেয়, মাঝরাতে আলোর জ্বালিয়ে দেয়, বৃষ্টিতে ভিজে এলে গরম পানীয় দেয় আর মন খারাপ সরিয়ে দেওয়ার জন্য গাছ পালা দিয়ে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতি, মেঘ দিয়ে আদর করে দেয়, বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে দেয়। খারাপ যেটুকু সেটুকু ভ্রম সেটুকু ইলিউশান। সেই ইলিউশান মন ছাইলে ফের পালাতে হবে তদ্দিন আমার মুঠো ভরা ভালোটুকু থাক।
  • dd | 59.207.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৭ ২২:২০368147
  • খুব ফাসক্লাস হয়েছে।

    "শেষ রাতে বৃষ্টি হয়েছে, গাছ গুলো চনমনে হয়ে আছে। আচ্ছা অসময়ে চান করলে গাছেদের সর্দি লাগার ভয় নেই না? কোনো মা গাছ কি তার ছানা গাছ কে বলে 'এক দিনে দু বার তিন বার ভিজছিস, বর্ষার জল জ্বর আসবে। যা মাথা মুছে নে শিগগির।' ছানা গাছ কি তখন বলে 'মা এক কাপ রোদ দাও না, সকালের রোদের ফ্লেভার দেওয়া'?" - পুরো কবিতা তো।
  • ঋক আর কিছুনা | ০৬ জুলাই ২০১৭ ২২:৩১368148
  • আরে বাপ্রে , কবিতা বুঝতেই পারিনা লিখবো কি! ...থ্যাংকু ^_^
  • গবু | 57.15.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৭ ২২:৫১368149
  • বড় মায়া! বড় ভালো লাগলো, বড্ড!!
  • Atoz | 161.14.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৭ ০১:১০368151
  • কী ভালো কী ভালো!!!!
    পুরোটাই একটা অপূর্ব প্রেমের কবিতা। ঃ-)
  • pi | 127.194.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৮368152
  • তারিয়ে পড়ব বলে জমিয়ে রাখলাম।
  • ঋক | 125.187.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৭:২৫368153
  • Atoz থ্যাংকু
  • Du | 57.184.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৭:৫০368155
  • খুব ভালো লাগলো।
  • ঋক | 94.246.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৭ ১২:৩১368156
  • অনেক ধন্যবাদ Du
  • rivu | 80.194.***.*** | ১১ জুলাই ২০১৭ ১০:২৯368157
  • আরেঃ! এটা মিস করে গেছিলাম! ভারী সুন্দর হয়েছে, খুব ছলছলে, লীলা মজুমদার এর মতো কয়েকটা জায়গায়।
  • | 144.159.***.*** | ১১ জুলাই ২০১৭ ১১:২৪368158
  • ভারী ভাল। বড্ড বড্ড ভাল
  • ঘচাং ফুঃ | 131.24.***.*** | ১১ জুলাই ২০১৭ ১১:৪৭368159
  • এই জায়গাটায় আমি গেছি। তখন বর্ষার শুরু, কাজেই আকাশজোড়া সিঙ্গালিলা রেঞ্জ চোখে পড়েনি, তবে হিলে থেকে ভার্সে হাঁটাপথটা অদ্ভুত মায়াবী।
  • শঙ্খ | 52.***.*** | ১৩ জুলাই ২০১৭ ১১:২০368160
  • বাহ সুন্দর ঝরঝরে লেখা। কয়েকটা ভালো আইডিয়ার ব্যবহার দেখলুম। আপনি থাকচেন স্যার।
  • ঋক আর কিছুনা | ১৩ জুলাই ২০১৭ ১২:১৯368161
  • অনেক অনেক ধন্যবাদ ঋভু, দ , ঘচাং ফু: , শঙ্খ :)
  • aranya | 172.118.***.*** | ১৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৪৩368162
  • স্যার অবশ্যই থাকচেন, দারুণ লাগচে পড়তে
    ঋক-কে এট্টুস হিংসেও দিচ্চি যদিও, এভাবে বেড়ানো আমার আর হবে না মনে হয়
  • ঋক আর কিছুনা | ১৪ জুলাই ২০১৭ ১২:০৭368163
  • অরণ্যকে ধন্যবাদ । বেরিয়ে পড়লেই হয় কিন্তুক :D
  • de | 24.139.***.*** | ১৪ জুলাই ২০১৭ ১৪:০৩368164
  • ঋক - আহা আপনার এই দেখার চোখটুকু আর লেখার এই কলমটুকুকে যেন চিরদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেন -

    খুবই ভালো লাগলো - পুরোটা একদমে পড়ে ফেল্লাম-
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন