এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সেন্সরশিপ নিয়ে কিছু কথা

    Ankur Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ জুলাই ২০১৭ | ২৩৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ankur Chakraborty | ১২ জুলাই ২০১৭ ১৩:২১367977
  • সেন্সরশিপ: চাই না চাই না?

    আজ সকালে টাইমস অফ ইন্ডিয়া যে একটা খবর পড়লাম;অনীক দত্তের আসন্ন ছবি "মেঘনাদবধ রহস্য" তে সংলাপে "রাম" এর নাম ব্যবহার হওয়ায় তাতে সরকারী সেন্সর বোর্ড আপত্তি তুলেছে। তার মানে এবার থেকে সংলাপে 'রাম' শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না! আচ্ছা,তাহলে সত্তর দশকে প্রকাশিত ফিল্ম "হরে কৃষ্ণ হরে রাম" এর নাম কি হবে "হরে কৃষ্ণ(দুদিন পরে এতেও আপত্তি তুলবে বিজেপি সেন্সর চিফ) হরে _ "? না কি রামানন্দ সাগরের রামায়ণের নাম হবে " _য়ন"?

    থাক সে কথা,যা বলছিলাম।

    সেটা হচ্ছে গিয়ে,কোনো সভ্য সমাজে(অবশ্য ভারতীয় সমাজ সভ্য কি না সেই নিয়ে আমি ভীষণ সন্দিহান) সেন্সরশিপ এর আদৌ প্রয়োজন আছে?
    "ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক" এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কি ধূমপান কমানো গেছে? না কি সিনেমা হলে শিশুরা গিয়ে পর্দায় কাউকে সিগারেট বিড়ি বা মদ খেতে দেখলে বাইরে এসেই বায়না ধরে,"বাবা,বাবা, সিগারেট খাবো?" আমি নিজে সিগারেট, বিড়ি খাইনি জীবনেও,তাই বলে কি ফেলুদা চারমিনার খেলে আমার 'ধূমপানানুভূতি'তে লাগছে? না। যার যা রুচি, সে সেটা খাবে। কিন্তু না,রামরাজ্যে(থুড়ি __রাজ্যে) কে কি খাবে সেটা সরকার বা গো রক্ষক বাহিনী ঠিক করে দেবে।
    ঠিক সেভাবেই,কোন ফিল্ম যদি প্রেম নির্ভর হয়,সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই প্রেমিক প্রেমিকার চুম্বন দৃশ্য আসবে (সত্তর আসি বা নব্বই দশকের ফুলে ফুলে ঠোকাঠুকি আজকের দিনে জোর করে চালালেও পাবলিক আর খায় না,এটা আশা করি পাহালাজ নিহালানি জানে) বা "পিঙ্ক" ফিল্মের মত ফিল্ম যেখানে ধর্ষণ হচ্ছে মূল উপজীব্য, সেখানে ধর্ষণের উল্লেখ বা ঘটনা প্রবাহে তার দৃশ্যায়ন থাকবে এটা ভেবেই বা জেনেই দর্শক হলে যাবে। কিন্তু না,দু দিন পরে কিন্তু ডিক্রি জারি হবে, ফিল্মে নায়ক নায়িকা বা ভিলেন ও নায়িকা একে অপরের 12.456 ইঞ্চির মধ্যে আসলেই রিলে কাঁচি চলবে। ব্যাস, ফিল্ম গেল খরচের খাতায়।

    এখন বলা হবে,যে এইসব ফিল্ম যাতে বাচ্চারা না দেখে তার জন্য A মার্ক সার্টিফিকেট অবশ্যই দরকার। তাহলে,প্রশ্ন, মালায়লাম বা ভোজপুরী ফিল্ম,যার অধিকাংশের দৃশ্যায়ন, গানের কথা ও তথাকথিত নায়িকাদের জোর করে নায়কের খাতে ওঠার উদগ্র বাসনা দিব্যি U সার্টিফিকেট নিয়ে পাশ হয়ে যায়। আচ্ছা,এটা কিভাবে মনিটর করবেন যে সেই ফিল্ম গুলো কোন বাচ্চার চোখে পড়ছে না? বা সেইসব ফিল্মের পোস্টার(যার অধিকাংশই "ভাইয়া ফৌজ মা,ভাউজি মৌজ মা" বা "পন্ডিত জি বাতাই না বিহা কবি হোয়ে" গোত্রের) তাদের নজর এড়াচ্ছে? অথবা এতকিছু সত্ত্বেও একজন তথাকথিত নাবালক ধর্ষক কে দিয়ে নির্ভয়ার মত কান্ড আটকানো গেল? গেল না।
    এগুলো সেন্সর করতে পারে যাবে তো?
    তখন বলবেন যে "না,যেখানে এত মানুষ,ওভাবে মনিটর করা সম্ভব না"। তাহলে এত মানুষ এলো কোথা থেকে? কৌশল্যা, কৈকেয়ী, সুমিত্রার মত পায়েস খেয়ে? না তো?

    যে দেশে সেক্স নামক বিষয় কে চাপা-ঢাকা দিয়ে প্রচার করা হয় যে সেক্স বলে কিছুই হয় না,সন্তান আসলে ঈশ্বরের "দান"(জানি না আপনার বেডরুমে ঈশ্বর কে দেখলে আপনার কি অনুভূতি হবে),সেখানে লুকানো বিষয় কে জানার আশ্চর্য রকমের পারভার্সন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আটকাতে হলে সেটা আটকান। তা না করে "রাম",ধূমপান, চুম্বন দৃশ্য বা বিপ শব্দে গালাগালি আটকাতে ব্যস্ত আপনারা। স্কুল স্তর থেকে চালু করুন যৌন শিক্ষা (অবশ্য পড়ানোর মত কাউকে পাবেন বলে মনে হয় না),প্রশিক্ষণ দিন সুস্থ, স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপনের। তবে যদি সমাজের মানসিকতা বদলায়। সেন্সরশিপ দিয়ে কিছু জোর করে আটকানো যায় না। যে ফিল্ম বাচ্চাদের নিয়ে দেখার,বাবা মায়েরা যেমন সেই ফিল্ম সবাই মিলেই দেখবে,তেমনই যে ফিল্ম একা বা আলাদা দেখার,তার দর্শকও জুটবে ঠিক সেভাবেই।
    2017 সালে দাঁড়িয়েও যদি ফিল্ম সেন্সর করতে হয় তাহলে কিছু বলার নেই। বরং যে টাকাটা সেন্সর বোর্ডের পিছনে ঢালা হয়,সেটা কোন গঠনমূলক কাজে লাগতে পারে।
  • pi | 57.29.***.*** | ১২ জুলাই ২০১৭ ১৩:৪৩367978
  • অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তথ্যচিত্র আটকে গেছে। উনি গরু, গুজরাত এসব শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, সেন্সর বোর্ড বলেছে এগুলো মিউট করতে হবে, নইলে নাকি বিদেশে ভারতীয় ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। পরিচালক রাজি না হওয়াতে তথ্যচিত্র প্রদর্শন বন্ধ।

    মোদিঠাকুরের আপন দেশে সেন্সর নিয়ম এমন সর্বনেশে হওয়াটাই বোধ্হয় লিখন ছিল।
  • এলেবেলে | 212.142.***.*** | ১২ জুলাই ২০১৭ ১৮:৪১367979
  • সেন্সর বোর্ড বেশি ঠ্যাঁটামি করলে পরিচালক তথ্যচিত্রটির অনলাইন প্রদর্শন করবেন বলেছেন ।

    গণ্ডগোল হচ্ছে এই লাইনটায় "মোদিঠাকুরের আপন দেশে সেন্সর নিয়ম এমন সর্বনেশে হওয়াটাই বোধ্হয় লিখন ছিল।"

    ১৯৫৯ সালে মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’ এবং ১৯৭৩-এ এম এস সথ্যুর ‘গরম হাওয়া’ যথাক্রমে দুই ও আট মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয় আর গুলজারের ‘আঁধি’ ১৯৭৫ সালে ২০ সপ্তাহ চলার পর হঠাৎই ব্যান হয় । তবে দুর্দান্ত দুষ্কর্মটি হয় ১৯৭৭ সালে ‘কিসসা কুর্সি কা’ সিনেমাটি নিয়ে । সেন্সর বোর্ডের অফিস থেকে ফিল্মটির মাস্টারপ্রিন্ট এবং সমস্ত কপি গুরগাঁওয়ের মারুতি কারখানায় নিয়ে গিয়ে জাস্ট পুড়িয়ে ফেলা হয় । একাজে জড়িত ছিলেন রাহুল গান্ধীর কাকা এবং তাঁর সহকারী ছিলেন তদানীন্তন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্লা । যোগ্য মন্ত্রী সন্দেহ নেই ! ও এটাও মনে থাক, ওই সময়েই নিষিদ্ধ হয় সত্যজিতের তথ্যচিত্র ‘সিকিম’ ।

    এ শতাব্দীও কম যায়না ! ২০০৫ সালে মীরা নায়ার ‘ওয়াটার’ ছবির শ্যুটিং নিয়ে যথেষ্ট ঝামেলায় পড়েন এবং শেষে শ্রীলঙ্কায় শ্যুটিং সারতে বাধ্য হন ।

    এবার সঙোস্কিতির পীঠস্থান কলকাতা ! ২০১০ সালে কিউ পরিচালিত ‘গান্ডু’ কিংবা ২০১৩ সালে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘কাঙাল মালসাট’কে নিয়ে কাণ্ডকারখানা সবাই ভুলে যায়নি নিশ্চয়ই ।

    রাজা বদলায়, রাজ্যপাট বদলায়না । সেই ট্রাডিশন সমানে চলতে থাকে, চলতেই থাকে ...
  • pi | 57.29.***.*** | ১৩ জুলাই ২০১৭ ১০:০৬367980
  • আগেও হয়েছে তো জানাঅ, তাই নিয়ে হইচই, এখানে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু এই গরু, গুজরাত এসভ ব্যানের মত আজগুবি বাড়াবাড়ি আচ্ছে দিন অসার আগে হয়েছে?
  • এলেবেলে | 212.142.***.*** | ১৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৪৫367981
  • 'কিন্তু এই গরু, গুজরাত এসভ ব্যানের মত আজগুবি বাড়াবাড়ি আচ্ছে দিন অসার আগে হয়েছে?'

    আচ্ছে দিন আসার আগে সুচিত্রা সেনের চূলের রূপোলী রেখা বা হাতে ধরা মদের গেলাসের জন্য আস্ত একটা সিনেমা কুড়ি সপ্তাহ চলার পর নিষিদ্ধ হয়েছে । সেখানে কোনও সংলাপ নিয়েই সমস্যা ছিল না ।

    'গরু' কিংবা 'গুজরাত' বিচ্ছিন্নভাবে সমস্যা করছে না, করছে ওই শব্দগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা অন্য শব্দগুলো । পুরোটা বাদ দিলে কেমন দেখায় তাই আংশিক বর্জন !

    আন্তিগোনে যখন নান্দীকার করেছিল তখন সেই নাটকের বিজ্ঞাপনী স্লোগান ছিল ‘থেবাইয়ের আকাশে শকুন, কলকাতার রাজপথে মৃতদেহ’। এই 'আপাত-নিরীহ' বাক্যবন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় । সিনেমা নয় নাটক, সংলাপ নয় বিজ্ঞাপনী স্লোগান । এটা যথেষ্ট আজগুবি মনে হয় না ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন