এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌশিক মজুমদার | 57.***.*** | ১৭ মে ২০১৭ ০৯:৫৩366822
  • বাহুবলীর প্রথম পর্ব যখন মুক্তি পাইয়াছিল তখন দেখা হয় নাই। দেখি নাই বলিলেই বোধহয় ঠিক হইবে। কারণ ছবিটি রিলিজ মাত্রে গোটা দেশের সুতীব্র হাহাকার "কাটাপ্পা নে বাহুবলী কো কিঁউ মারা" শুনিয়াই বুঝিয়াছিলাম যে পরিচালক নিশ্চয়ই ছবির শেষে মোক্ষম এক ক্লিফহ্যাঙ্গারে দর্শককে ঝুলাইয়াছেন। ফলে দ্বিতীয় পর্ব হিট হইতে বাধ্য।

    আমি এ ধরণের সাসপেন্স অপছন্দ করি। সর্দার খান, শার্লক হোমস কিংবা জন স্নো মরিবার পর প্রায় এক বৎসরকাল কি হইল কি হইল করিয়া কাটাইতে হইয়াছিল। শেষের দুজন বাঁচিলেও প্রথমজন বাঁচেন নাই। সে যাই হোক এবার সে রিস্ক নিই নাই। কে কাটাপ্পা আর কেই বা বাহুবলী না জানিয়াই এতদিন কাটাইলাম। এতদিনে দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাইল। ফলে একত্র দর্শনের সুযোগ ঘটিল।

    বাহুবলীর পরিচালক রাজামৌলি বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি বুঝিয়াছেন ক্লাসিকসের জুড়ি নাই। আর সে ক্লাসিক যদি স্বয়ং শেক্সপীয়র সাহেব বা ব্যাসদেবের লেখা হয় তবে তো কথাই নাই। তাই তিনি শেক্সপীয়র লইয়া মহাভারতের সঙ্গে মিশাইলেন, ঝাঁকাইলেন এবং অবশেষে shaken not stirred একটি ছবি উপহার দিলেন।

    মহাভারতে একটি সাধারণ সূত্র আছে। যিনি যত বড় বীর তাঁহার ছোটবেলাও তত কষ্টে কাটে। এই কষ্টের মধ্য দিয়েই তিনি পাবলিকের সিমপ্যাথি অর্জন করেন। কৃষ্ণ হইতে পান্ডব ভাইয়েরা সবার ক্ষেত্রে এ থিওরি খাটে। অবশ্য সুপারম্যান বা ব্যাটম্যানও তাই। কৃষ্ণ তো জন্ম মাত্রে পিতা মাতা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া আহির সমাজে মানুষ। তাহার মাতুল জানে তিনি মৃত। আসলে তাহার পিতা তাহাকে মাথায় লইয়া নদী পার করিয়া নন্দ গৃহে রাখিয়া আসেন। মহেন্দ্র বাহুবলীর সহিতও ঠিক একই ঘটনা ঘটে দেখিয়া আশ্বস্ত হই। পরিচালক তাহাকেও এক আদিবাসী সমাজে বড় করেন। তাহাকে পৌঁছাইয়া দিয়াই তাহার পিতামহী শিবগামিনী নদীতে ভাসিয়া গেলেন।

    মহেন্দ্র বড় হইতে লাগিল। তাঁহার নাম শিবা। সে দক্ষিণের বাঁটুল দি গ্রেট হইয়া হেলায় গ্যাস সিলিন্ডার অপেক্ষা ভারী শিবলিঙ্গ তুলিয়া এদিক ওদিক করে যেন ক্যাটারারের লোকেরা প্লাসটিকের চেয়ার সরাইতেছে। আর একটা বিষয় লক্ষণীয়। দুটি সিনেমা মিলাইয়া কোথাও কাহাকেও কোন subtle expression দিতে দেখিলাম না। আনন্দ ভয় ভালবাসা ঘৃণা - সব এত প্রকট যে দর্শকের মধ্যে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ থাকে না। মেড ইজি করিবার জন্য অনেকে একই expression দুই তিনবার দিয়াছেন। ভাবিলাম এইবার বুঝি কিউকার্ড আসিবে "বাহুবলী দুঃখ পাইলেন"ইত্যাদি।

    অতএব শিবা নাচিয়া নাচিয়া দিন কাটাইতে লাগিলেন। সমস্যা হইল পাহাড়ের ওপর হইতে একখানি কাঠের মুখোস যা দেখিয়া আমাদের কোন বোধ না হইলেও শিবা বুঝিলেন এ মুখোস এক সুন্দরী নারীর। তিনি দুর্গম গিরি পার হইয়া ওপারে গেলেন এবং জানিলেন সেটি মাহিস্মতী রাজ্য। রাজা বল্লালদেব সেখানে কুশাসন চালাইয়া আসল রাজা অমরেন্দ্র বাহুবলীকে হত্যা করাইয়া সিংহাসনে বিরাজমান। এক্ষণে পরিচালক "হ্যামলেট" এর স্মরণাপন্ন হইলেন।

    সেই দুই ভাই। এক ভাই দুষ্ট । অন্যজন যতটা মহান হওয়া সম্ভব-ততটা। ফলে তিনিই রাজা। দুষ্ট ভাই কিন্তু দুশ্চরিত্র নন। হইবার সুযোগও নাই। তাহার একমাত্র স্ত্রী শিবগামিনী খুব সম্ভব বিস্ফোরিত চক্ষুসহ গয়টারে আক্রান্ত। রাজ্যে এলট্রকসিন নাই। ফলে ওই চক্ষু নিয়া গোটা ছবিতে অভিনয় করিয়াছেন। দিবারাত্র ওই চক্ষু দেখিলে বড় বড় বীরের শুকাইয়া যায় (কি তা বলিলাম না),বেচারা স্বামী তো নেহাতই "বিবাহিত" পুরুষ। ফলে ভাসুর মরিবার পর রাজ্যে মাতৃতন্ত্র স্থাপিত। রাজমাতা কোন ভুল করেন না। তাহার কথাই আইন। কিন্তু তাহাকে কেহ আম্মা বা দিদি বলিয়া ডাকেন নাই। ফলে এ ছবিতে কেহ কোনপ্রকার রাজনৈতিক অ্যাঙ্গেল খুঁজিবেন না। তিনি নিজ পুত্র ও দেবর পুত্রকে সমান দৃষ্টিতে দেখেন- যদিচ দেবর পুত্রের প্রতি স্নেহ কিঞ্চিত বেশি। তাহাদের সেনাবাহিনীর বা দাসবাহিনীর প্রধান কাটাপ্পা। এই এক অদ্ভুত চরিত্র। তিনি শপথ করিয়াছেন মাহিস্মতীর রাজমাতা বলিলে গু চাটিয়াও খাইবেন। আর তাই রাজবংশের দিকে তাকাইয়া সর্বস্ব ত্যাগ করেন। তাহাকে কেহ "পোছে" না। তবু সে বৃদ্ধ নিজের ডিউটি করিয়া যান। মহাভারতে ভীষ্মের দশা আর কি।

    দুই ভাই বড় হইল। মাতা চক্ষু বিষ্ফোরিত করিয়া ঘোষনা করিলেন তাহার বায়োলজিকাল পুত্র নয় রাজা হইবে অমরেন্দ্র। আর কি! আবার শেক্সপীয়র আসিলেন। একই কায়দায় অমরেন্দ্র বাহুবলী অপসারিত হইল (সব চক্রান্ত!!!)। তবে যেটি হয় নাই সেটি হল অমরেন্দ্রর স্ত্রীর সহিত বল্লালদেবের প্রেম। ফলে তাহাকে শিকলাবদ্ধ হইয়া বন্দি থাকিতে হইল। ইহাও কিছু নতুন নয়। ডিজনি তাহার লায়ন কিং ছবিতে এই deconstruction দেখাইয়াছেন। যেটি রাজামৌলির অভিনব সেটি হইল অশোকবনের রাবনের ন্যায় বল্লালদেবের দেবসেনাকে ক্রমাগতঃ seduce করিয়া যাওয়া। দেবসেনাকে দেখিয়া চমকাইলাম। বহুদিন প্রখর সূর্যের নিচে থাকিলে চামড়ায় কি পরিমান ট্যান পরিতে পারে তাহা দেবসেনাকে না দেখিলে প্রত্যয় হয় না। বোতল বোতল ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখিলেও শেড কার্ডে উন্নতির সম্ভাবনা কম।

    বাকি কাহিনি সহজেই জানা। কি ভাবে মহেন্দ্র হৃতরাজ্য উদ্ধার করিলেন তার আখ্যান। শুধু টু বি অর নট টু বি কে মিস করিলাম। তবে যেটা বলিতেই হয় ছবি দেখিয়া আমার বারবার সিন সিটি বা ৩০০ এর কথা স্মরণে আসিতেছিল। দু একটা ড্রাগন থাকিলে বেশ GOT GOT বোধ হইত। ভারতীয় একটি ছবিতে এমন কারুকার্য দুর্লভ। কৃষ ছবিকে ভারতীয় সুপার হিরো বলিলেও আসলে তা বিদেশী নকলমাত্র। এ ছবিতে গল্প বা অভিনয়ের সুযোগ খুব না থাকিলেও পরিবেশনের গুণে মুখরোচক হইয়াছে। খাঁটি ভারতীয় সুপারম্যানের কথা আসিলে বাহুবলীর কথা ভাবা যাইতেই পারে। এমন কি এই চরিত্র লইয়া ফ্রানচাইজিও খোলা যায়। ভাল অঙ্কনশিল্পী পাইলে কমিকসও তৈয়ারী করা যায়…অপেক্ষায় রহিলাম।

    তিনটি কথা-

    ১: কেন আমি এই লেখা সাধুভাষায় লিখলাম? কারণ মহাভারত ও শেক্সপীয়র নিয়ে লিখতে গেলে সাধুটাই ডিমান্ড করে।
    ২: অমরেন্দ্র তাঁর স্ত্রীর থেকে প্রায় সাড়ে আট ইঞ্চি দূরে থেকে বলে - তাঁর মা একটি সন্তান হলেই তাদের আবার আপন করে নেবেন। জাম্পকাট দেবসেনার সাধভক্ষন অনুষ্ঠান। মাঝে কি পেহলাজ নিহলানি কিছু করে দিলেন?
    ৩: কাটাপ্পা নে বাহুবলী কো কিঁউ মারা-র উত্তর দিয়ে দিয়েছি। খুঁজে নেবার দায়িত্ব আপনার।
  • dd | 116.5.***.*** | ১৭ মে ২০১৭ ১০:৪৭366823
  • হা হা হা। এটা ভালো হয়েছে
  • সিকি | 158.168.***.*** | ০১ জুন ২০১৭ ১৬:৫৩366825
  • তুললাম।
  • swati | 127.194.***.*** | ০১ জুন ২০১৭ ২৩:২০366826
  • সিনেমাটা দেখার আগে একবার লেখাটা পড়েছিলাম. দেখে এসে আবার পড়লাম. রসের মাত্রাটা আগের থেকে বেশি লাগল. দারুণ.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন