এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিষয় : রঙ চরিত মানস : রঙ দুনিয়ার কিসসা কাহিনী

    সুন্দরম রু লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ এপ্রিল ২০১৭ | ২৯৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুন্দরম রু | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ১১:৫৯366206
  • প্রস্তাবনা

    আয়নায় প্রতিফলিত বিম্ব ভার্চুয়াল। ডাইনে বামে পাল্টাপাল্টি হয়। রঙ দুনিয়া তাই। রঙ দুনিয়ার রাজার নীতি, প্রজার নীতি, রাজায় রাজায় যুদ্ধ আর উলুখাগড়ার পটল তোলার বহমান নাটক; আয়নায় দেখার নিমিত্তই এই কিসসা কাহিনীর অবতারণা। এ আমাদের চেনা পৃথিবী, চেনা মানুষ, চেনা পরিবেশের গল্প নয়। কারণ, আমরা এমন হতেই পারিনা। আমরা ভীষণ ভীষণ ভালো। সহিষ্ণু। সহানুভূতিশীল। মানব হিতৈষী। স্বার্থ শূন্য। মানবতাবাদী। এই গল্পের, নাটকের, কিসসার চরিত্ররা এবং স্থান কাল পাত্র আমাদের সময়ের, কালের মিরর সিমেট্রি। এবং তার ল্যাটেরাল ও পারপেন্ডিকুলার ইনভারশনে উৎপন্ন। ফলে মিল খুঁজতে যাওয়া ‘বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটিবার’ সমান। তবু যদি কোনো আকস্মিক সিমিলারিটি কেউ পান, তাঁর জন্য প্রনম্য মন্টো রইলেন : “যে সময়ে আমরা বেঁচে আছি, তার সঙ্গে যদি আপনার পরিচয় না থাকে, আমার গল্পগুলো পড়ুন। আপনি যদি আমার গল্পকে সহ্য না করতে পারেন, তবে বুঝবেন, এই সময়টাই অসহনীয়।”

    গুরু ও স্পর্শকাতর কথা লঘু ছলে, ইঙ্গিতে বললে গুরুপাকে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এই মানস এ লেখায় আগাগোড়া বজায় রাখতে চেয়েছি। ধন্যবাদ পাঠক। নমস্কার।

    আসুন, আয়নায় ঢুকে দেখি রঙেদের কিসসা কাহিনী। রঙ চরিত।



    রঙেদের মধ্যে আকচাআকচি আকছার। সকলের বক্তব্য সমান। আমরাই প্রকৃত পরমার্থে রঙ, তোরা রঙ নোস। তোরা বিরোধী, তাই ষড়যন্ত্রী। কাফের। দেগে দেওয়া, বারণ, নিষেধ, রোধ, থুতু, একঘরে করা, খিস্তি-খেউর, কল্লা নামানো, ত্রিফলা শূলে চড়ানো, হরতাল, চাক্কা জ্যাম, ফেকু প্রোফাইল, নীতি পুলিশ, অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড, পাইয়ে দেওয়া, তছরুপ, দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদি হরেক-কিসমের রঙবাজি রঙ দুনিয়ার বৈশিষ্ট্য। এই দুনিয়ায় দুপ্রকার জীবের বসত। এক প্রকার কুশাসন কে সুনীতি, অপর প্রকার শোষিত হওয়াকেই সৌভাগ্য মেনে নিয়েছে! দ্বিতীয় প্রকারের কাছে যেগুলি সমস্যা --- গরিবি, জাতপাত, বেকারত্ব, খাদ্য-কাপড়-বাসস্থানের অভাব, সাম্প্রদায়িকতা, সম্পদের অসাম্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার দীনতা, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন, কালোধন, ধম্মীয় দাঙ্গা, অশিক্ষা, ইত্যাদি। প্রথম পক্ষ এগুলিকেই প্রশ্রয় দিয়ে, তোল্লাই দিয়ে ক্ষমতা কায়েম রাখে। শুধু তাই নয়, প্রথম পক্ষ, উক্ত মৌলিক সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি সরাতে, কোন্ মাংস সেবনে কত পাপ, কত পুণ্য, স্কার্টের, জামার, পাতলুনের ঝুল কতটা হবে, কে কাকে ভালোবাসবে, কার জন্মদিন পালন হবে, কার হবে না, কোন্ ধম্মো পালন করা যাবে, কোনটা করা যাবে না, এমন বিবিধ অদ্ভুতুড়ে সিউডো সমস্যা তৈরি করে দ্বিতীয় পক্ষের দিকে অনবরত ছুঁড়ে মারছে। এ এক আজব রঙ খেলার চিরস্থায়ী মরশুম। আমরা বিভিন্ন পরিচ্ছেদে এসব আনহোলি রঙ কেলির বিচিত্র খেলা ক্রমে ক্রমে দেখবো। হোলি হ্যায়।
    “আমি রঙের মধ্যে সেরা।” নিজেকে এমন ভাবতে ভালোবাসে লাল। তা কজনে আর না বাসে? সেরা মানেই এলিট, বুদ্ধিবীজী। আবার বুদ্ধিবীজী মানেই ছদ্মসেকু, দেশহীদ্রো, সেক্সম্যাকনিয়া, আলবাঁতেল, অং বং চং। অন্তত গেরুয়ারা তাই মনে করে। কারণ, তাদের নিজস্ব সংজ্ঞায় তারা উপরোক্ত গুণাবলীর বিপরীত মেরুতে। গেরুয়া মূত্র পানে বিশেষজ্ঞ। ডারউইনের ঠাকুরদা। বিভিন্ন জানোয়ার তার মা-বাপ-ভাই-বনাই-জ্ঞাতি-গুষ্ঠি-দেবতা। বিপ্রতীপে লাল আবার গদ-ভগমানে বিশ্বাসী নয় কিন্তু কল্লা যাওয়ার ভয়ে লাল্লায় বিশ্বাসী। এমন বিবিধ। তবে, নিজের সম্পর্কে সকলেরই সাফাই ও সার্টিফিকত আছে।

    সবুজ একটি আলাদা প্যারার দাবি রাখে। কারণ নাকি সে জীবন। সেই অনাদি থেকে বর্তমান। তাই অব্যর্থ। তাই পারিবারিক। উচ্চবর্ণ। প্রাগৈতিহাসিক। ডাইনো। সুতরাং নিজের প্রজাতির মাংসে ভরপুরপেট ও ফসিলতাপ্রাপ্ত। এক্ষণে সবুজ যেহেতু প্রাণ, দাবি তাই; তাই অনেক কটি বাচ্চা। তারা কেউ হাফ লাল, হাফ গেরুয়া, হাফ আকাশী থুড়ি আসমানি এবং ইত্যাদি। সকল বাচ্চা রঙের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে যে সবুজের পোঁচ, তা বলা বাহুল্য।



    রঙ সমাজে ইদানীং নতুন হুজুগ ‘বুফে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা’। প্রত্যেকে প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ বাঘ-স্বাধীনতা নিজের দেওয়ালে এবং বুফের বিভিন্ন গোয়ালে ফলাতে অতি ব্যস্ত ও সোচ্চার, ফলে দুর্গন্ধ অনিবার্য। প্রতি গোয়ালে এক বা একাধিক গোলকিপার আছে। তাদের কাজ রেফারিং। সুযোগ ও সুবিধে বুঝে রঙ ও দল পাল্টে পাল্টে খেলা এবং আনতাবড়ি লাল, হলুদ, নীল, গেরুয়া, সবুজ ইত্যাদি হরেকরকমবা তাস দেখানো। মোদ্দা কথা রাজা ও রেফারি aka গোলকিপার কখনো কোনো ভুল করতে পারে না, এই হচ্ছে প্রতি গোয়ালের ঈজম। যা নিজের বেলায় বাঘ-স্বাধীনতা, তা অন্যে বললে, ভাবাবেগ ও অনুভূতিতে আঘাত --- গোয়াল গুলির সংবিধান এমনই বলে।

    আর এইসব গোয়ালে, সকাল ও সাঁঝে, মাঝরাতে, রোদদুপুরে, জিরো আওয়ারে, খেঁউড়-পাঁচালী ও খিস্তি-কীর্তনের যে আসর বসে, তা-ই রঙমুখে ‘বুফে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা’। এখানে দুটি বর্গ। ব-বর্গ ও চ-বর্গ। সকল কথা বার্তার আদি, মধ্য, অন্তে চ-কার ও ব-কার ছাড়া এখানে কথা বলা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রায় চার হাজার বছরের আগে ছিল হায়ারোগ্লিফ। আবার সে এসেছে ফিরিয়া। ইমোজি, স্মাইলি, পিকচার ম্যাসেজের অবয়বে। আমরা বুফের দেওয়ালে এমন নজির প্রতি পায়ে পাবো। সৃজনশীলতার সে এক সিদ্ধাই অবস্থা। টোটাল চুথিয়াপ্পা, ঢং কানেকশান, সারকা-অর্গাজম, বিলা-বাউটি, আস্তে লেডিজ কাঁখে বাচ্চা, আমারে কেউ মাইরালা, দুষ্টু বালক ইত্যাদি পেজ গুলিতে একবার বিকেল বিকেল ভ্রমণে বেরোন, দেখেবন ছবিভাষার আবেদনের এলনিনো।

    ‘গুলাল’ এমনই এক গোয়াল। রঙমহলে ‘গুঌ’ নামে পরিচিত। নাম মাহাত্ম্যে দূর দূর তক গুঌ গুল খিলিয়ে আসছে। গুঌ রঙেদের বজ্র-বর্জ্য ত্যাগের, বাঘ-স্বাধীনতা, বুদ্ধিবীজীত্ব, আলবাঁতলামো ইত্যাদি ফলানোর ফলনশীল আস্তাকুঁড় বিশেষ। আর কে না জানে আস্তাকুঁড়ই জীবনের উৎস; পঙ্কে পদ্ম যেমন, সেই কবে বিজ্ঞানী বলেছেন। গুঌ’র মতো গোয়াল গুলিতে প্রথম পরিচ্ছেদে যে দ্বিতীয় পক্ষের কথা বলা হয়েছে, তারা ‘আশার ছলনে ভুলি’; প্রথম পক্ষ যেহেতু আগাগোড়া কানে তুলো গোঁজা; এখানকার দেওয়াল গুলিতে দেওয়াল লিখন চিপকিয়ে ভাবে, সমস্যার বোধকরি সমাধান হলেও হতে পারে! কিন্তু সে গুড়ে বালি। প্রথম পক্ষ প্ল্যাটফর্ম পাল্টাতে পারে, স্বভাব নৈব নৈব চ। এখানে প্রথম পক্ষের, অ্যাডমিন অবতার। তাদের বিচারের তুলাযন্ত্রের পাল্লা কখন কোন্ দিকে ঝোঁকে, তা দেবা না জানন্তি! অবশ্যি, মনের হদিশ কে বা জানে, খ্যাপা আগেই সতর্ক করেছেন। তা হোক। গোলকিপাররা যখন রেফারিং করতে নামে, তখন যদিও সব রঙ সমান, সকলের সমান অধিকার ধম্মে-কম্মে-বাতকম্মে-মতিভ্রমে --- এই মর্মে পোতিজ্ঞা; তবে, যেহেতু গুঌ লাল, এমনই নাকি শোনাটোনা যায়, তাই ঝোল লালের দিকেই। যদিও গেরুয়া, সবুজ, নীল, দোআঁশলা, হাইব্রিড, সকলেরই কিছু না কিছু কাঁইকুঁই উহারা গোয়ালে সাঁটতে দেয়, বাধ্য হয়। নইলে গোয়াল টেকানো দায়। বুফে সেলিব্রেতি হওয়া হয়না। হাতে থাকে হরিমটর, মুখে হরি দিন তো গেল... পার কর হরি-বুলি। তাই কিছু বেরঙি ক্যাওড়া সইতে হয়।



    তৃতীয় অধ্যায়ে ব্যক্তি পরিচয়ের প্রয়োজন এসেই পড়ল, স্বতন্ত্র লীলাখেলাগুলির ওপর আলাদা আলাদা লাইমলাইট প্রক্ষেপ করার অভিপ্রায়ে। এটি মূলত নামকরণ পর্যায়। তারপর নাহয় ধীরেসুস্থে চূড়াকরণ, খৎনা, উপনয়ন, পর্দা মায় সঙ্গীত ও এনগেজমেন্ট অবধি নানান সুন্নত, সদাচার হবে পরপর। তাছাড়া, রঙ সমাজে ছেলেমেয়ে বড় হয়েই যায় কম বয়সে এবং যৌনতা একটি প্রাকৃতিক নিয়ম, হাতে কলমে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে তেমন নাকি হয় না। এখানে একটি মাত্র একাউন্ট খুললেই অ্যাডাল্ট। তারপর যা ইচ্ছে পোষ্টাও। বিয়ে-শাদি-নিকাহ'র ব্যাপারটা আবার এখন রঙ দুনিয়ায় মনুষ্য প্রজাতির লেজের মতো, আছে কিন্তু নেই অথবা নেই কিন্তু আছে গোছের।

    সে যাই হোক, এক্ষণে পাত্রপাত্রীদিগের নাম সংকীর্তন করিতেছি; গলায় গামছা, গলবস্ত্র হয়ে শুনুন :

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : লাল
    প্রবর : মাকু
    নাম : চেয়ারম্যান

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : লাল
    প্রবর : ভ্যামপ্যান্টি
    নাম : লালচেখভ

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : লাল
    প্রবর : ছাগু
    নাম : লাল্লামতী

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : লাল
    প্রবর : ছদ্মসেকু
    নাম : বুর্জোঁ

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : গেরুয়া
    প্রবর : চাড্ডি
    নাম : যোগীনাথ

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : গেরুয়া
    প্রবর : দেশীসেকু
    নাম : আউলক্ষ্মী

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : গেরুয়া
    প্রবর : নবকমি
    নাম : গোরেবেল

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : সবুজ
    প্রবর : তিনু
    নাম : কোবিকা

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : সবুজ
    প্রবর : তিনু
    নাম : মদনা

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : সবুজ
    প্রবর : কঙ
    নাম : মম

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : সবুজ
    প্রবর : কঙ
    নাম : শাহজাদা

    # প্রজাতি : রঙ
    গোত্র : সবুজ
    প্রবর : জোহুজুর
    নাম : হনুকপি

    হাতের সামনে যাদের যাদের ঠিকুজী কুলজী যেমন যেমন পাইলাম, ঠিক তেমন তেমন তুলিয়া দিলাম। তাই বইল্যা এমন ভেবনাকো যে, নামগোত্র অনুপাতেই হক্কলে কাম করিবেক। পালটি খাওনই ঈদিকের লিয়ম বটেক। খেলে এগারো জনায়। আর থাকে তল্পি বাহক, বার-টেন্ডার, টুয়েলভথ ম্যান, জোহুজুর। মাত্র এই জনা বারো নিয়েই কি তবে শত সহস্র কোটির রঙ দুনিয়া? যাহ্‌ ইয়ার্কি করছেন! সক্কাল সক্কাল এমন ফাজলামো কইরেন না, নেশা টুটে যায়। ইয়ার্কি, ফাজলামো, হিউমার, সারকাজম কিচ্ছুটি নয় রে দোস্তো; ইহাই পরম সত্য। এই দুনিয়া জনা বারোর’ই খেল কি ময়দান। বাকি শত সহস্র কোটি, গাঁটের মাল্লু খরচ করে এনাদের কীর্তি দেখনের লগে আইস্যা ভনভন করে। এনাদের জন্য গলা ফাটায়, চেল্লায়, পূজা করে, ফ্যান ক্লাব করে, পেপার উঁচিয়ে ঝগড়া-লাথালাথি-খেয়োখেয়ি-খুনোখুনি-রেপ কি না করে! কি আশায়? কখন একবার হিরো আলম আলগোছে হাত নাড়বে ইহাদের মুখপানে চেয়ে। একবার যা তা হস্তাক্ষরে অটোগ্রাফ ছুঁড়ে দেবে। তেনাদের মর্জিমাফিক এঁটো কলাপাতায় পেসাদ জুটবে! শ্রমিক মৌমাছি কোটিতে, রাণী এক। ইহাই বায়োলজি। সারভাইভাল অফ ফিটেস্ট তত্ত্ব। মুষ্টিমেয়র আঙুলের ডগায় সসাগরা ধরণী ও দশটা পাঁচটার আম পাবলিক গড়াগড়ি যায়! ইতিহাস সাক্ষী, ফ্যারাওর কীর্তি পিরামিড। চাবুকের তলায় যাদের বাস ইতিহাস তাদের ভুলে মেরে দিয়েছে। তাই, এখেনে আমরা ছোঁ মেরে মাঝে মধ্যেই এনে ফেলব এইসব ম্যাসিভ কিন্তু প্যাসিভদের গল্প-গাথা। এখনো বহু পুঁথি অবশিষ্ট রহিয়া গেল। হউ ধৈর্যং। সময়ে সময়ে সে সকল গোচরে আনিব। জয়গুরু।



    গুঌ গোয়ালে হেব্বি চেল্লামিল্লি। বিভিন্ন রঙেরা আসরে নেমে পড়েছে। পরিবেশ, বর্ষাকালের কর্দমময় মাঠে ফুটবল খেলার সমান। লাথালাথি ও কাদা ছোড়াছুঁড়িই প্রধান, বল নিমিত্ত মাত্র। গোয়ালে কোনো LOC নেই। ফলে এখানে নব কলেবরে তৈয়ারি হচ্ছে এক নতুন ভাষা। যদিচ এই ভাষারই একটি রূপ চিরকালই সাবঅল্টার্ন তথা অবতলের, বর্তমানে ইহার নব্য সংস্করণটি এলিটদিগের। বুদ্ধিবীজী পরগণায় জাতে উঠতে এই নব্য ভাষায় তুবড়ি ছোটানো চাইই চাই। খিস্তি ও খেঁউড় এখানে প্রতি বাক্যে নব নব আবিষ্কৃত হচ্ছে। প্রত্যয়, সমাস, সন্ধি, নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে জন্ম নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ নতুন শব্দ। তাদের সকলকে পাঠকের সামনে আনতে হলে একটি পৃথক পুস্তক প্রকাশ করার প্রয়োজন পড়বে। অশ্লীলতার দায়ে ফাঁসিও হতে পারে এ মিয়াঁ কি মলহা’র।

    কুশীলব হক্কলেই আফনের চিনা। পূর্ব পরিচিত। ঝড় উঠিতেছে। এখন গুঌ গোয়ালে রঙের খেলা। যদিও ফাল্গুন, তথাপি এ রঙ-সকল বসন্তের নয়। আর বিলম্ব না করিয়া আসুন নাটকে প্রবেশ করি। রঙমঞ্চের পর্দা উঠিয়াছে, ওরে কে আছিস, ঘণ্টা বাজা...

    আজিকার যাত্রা পালা গান : ‘গো’।

    ডিজেবাবু উৎপটাং তান ধরেছেন। লাইমলাইটে, গোরেবেল।

    আলো বিষয়টি বোধকরি গোলমেলে। কখন কার গোপন ঝলকিত করে, তা প্রেডিক্টানো দায়। কারণ বুঝি, আদিতে সেই গো!

    সে যাহা হউক; লাইট ক্যামেরা অ্যাকশান :

    গোরেবেল : হোয়াট দ্য ফাক?! ঘুসুরেরা সায়ান্সকৃৎ পড়েনি, উল্টে আমার বাপের সম্পত্তি নিয়ে বগল ঘামাতে এয়েচো?

    লাল্লামতী : দড়িতে থাক। ছিঁড়ে বেরোনোর চেষ্টা করলে গোয়াল ছাড়া করবো। যত্তসব ঘুঁটেমাল। দূর বাল গো!

    গোরেবেল : বালস্য বাল বালা, বুদ্ধিবীজী ছুকরি, কুকুরী। গো মানে জানিস? রাস্তায় বেরোস... মত্তম্যান কলা ঢুকিয়ে দেব।

    লাল্লামতী : চোনা খা গো। গো মানে হাম্বা। তোর ঠাকুরদার নাম। কলা কেটে ঝুলিয়ে দেব গলকম্বলে। চুপ যা, নইলে মেন পয়েন্টে ক্যাঁৎ করে লাথ।

    মদনা : আমি কিন্তু চন্দনগড়ের মাল। মাস্তানি আমি কিছু কম করিনি। ছেলে ঢুকিয়ে দেব বিধর্মীদের ঘরে। সব কটা খানকি মাগীকে রেপিয়ে পেট করে দেবে।

    চেয়ারম্যান : এভাবে হয় না। একজন মহিলা কে এভাবে রেপের হুমকি ছোটলোকেরাই কেবল দিতে পারে। অশিক্ষিত মূর্খের দল।
    আমাদের সমস্যার গভীরে ঢুকতে হবে। গো একটি বৌদিক প্রাচীন পুঁজিবাদী ধারণা। গো মানে সম্পত্তি। লেনদেনের মাধ্যম। শ্রেণীশত্রুদের একচেটিয়া থাবা। আমি সকল রেডকম রঙেদের পক্ষ থেকে এর তীব্র পোতিবাদ কচ্চি।

    আউলক্ষ্মী : সব পূজোয় তোনকার এক মন্ত্র! না? তোরা যখন কপাৎ করে আস্ত গো খাস, তখন বুঝি পুঁজি লাগে না? তোরা তোদের এত্ত এত্ত পৈতৃক সম্পত্তি শ্রেণিহীন রঙেদের মধ্যে বিলিয়ে দিস না কেন? নিজের বেলায় আঁটিসাঁটি, লোকের বেলায় দাঁত কপাটি! আপনি আচরি ধর্ম শেখাও অপরে, জানিস না?

    বুর্জোঁ : ঐ দ্যাকো, চালুনি ছুঁচের বিচার করতেছে! তোদের পেটেও বিদ্যে নেই, মগজটাও হাঁটুতে। এত কতা কিসের রা তোর বিটিছেলে? পঙায় কাপড় নেই মুখ ঢাকছে ঘোমটায়! চুপ মার। আমাদের কার্লো ভগমান ঈয়া ম্যাক্স। পড়গে যা তাঁর বিজ্ঞান বানী। তবে বুঝবি পুঁজিহীন রঙ সমাজের কতা।

    যোগীনাথ : অনেকক্ষণ এসব নাদান বাচ্চালোগের বকওয়াস শুনছি। আমাদের বোদ কোনো পুঁটকি রঙের লেখা নয়, তা নিজে থিক্যা আবির্ভূত। তাই তা বোধের বাইরে, তাই বোদ। বোদই আমাদের ভগমান। ভগাই আমাদের পুঁজি। গো আমাদের অবতারি। ম্যা ম্যা ম্যা ম্যা গো...

    হনুকপি : গুরু গুরু। গুরুজি কি দিলেন! জয় গো, জয় গো, জয় গো, জয় গো। ম্যা ম্যা ম্যা গো ম্যা, সকলই তোর কৃপা ম্যা গো। রূপং দেহি, ধনং দেহি, পুত্রং দেহি, গো জীবনং দেহি... দেহি দেহি দেহি... ম্যা গো, ম্যা গো, ম্যা গো, ম্যা গো...

    বুর্জোঁ : এসে পড়েছে, এসে পড়েছে, এসে পড়েছে। হরেক মাল তিরিশ টাকা। আমাদের ভক্ত হনু এসে পড়েছে। দেখাশোনা ফ্রি, কেনাকাটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। দাদারা, বৌদিরা, মাসিরা, মেসোরা, খালারা, ফুফারা, চাচারা, চাচিরা, কিকিরা, দূরে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন? আসুন, দেখুন, তাপ্পর কপির পোঙায় ক্যাঁৎ ক্যাঁৎ লাথ ঝাড়ুন। যা ভাগ ভক্ত হনু। গোটাট্টি খা। খেয়ে জাবর কাট। ভাগ শালা বোকাচু ল্যাও।

    মদনা : চোদু কি বলেরে! দেশহীদ্রো পাকী, তোরা যদি এতই সেকুলার তাহলে ধুলানগড়ে চুপ ছিলি কেন? শুয়োর খাস না কেন গো খেকোর দল? তস্লিদি’র বই তোদের আমলেই ব্যান হয়েছিল। সাল্লু রুশের বই-ও। তখন কার গাঁড়ের গর্তে মুখ ঢুকিয়ে বসেছিলি ভ্যামপ্যান্টি?

    নবকমি : এ গোলকে থাকতে হলে, আমাদের সনাতন সমোসকৃতি মানতে হবে। ওসব চাঁদ, তারা, হাতুড়ি এখেনে চলবে না। সে যতই বুকের বাম দিক চীন চীন করে উঠুক...

    লাল্লামতী : তোরা বিপ্লবের কি বুঝিস? কিস্যু না। ওরে এসব ইতর জানোয়ারদের কম্ম নয়। আমার যা ইচ্ছে হবে তাই খাবো। গো খাই বলে শুয়োর খেতে হবে নাকি? এ তো চাড্ডি লজিক। তোরা বরং নিরামিষ ছেড়ে বিফ বিরিয়ানি খা। আহা! বাঁশের ডগায় একটা লাল ঝাণ্ডা, আমার বালা বেলার স্বপ্ন। আমি বিপ্লব করবোই।

    নবকমি : ছেকুদি, ঐ আঁছোলাটা রোজ পিছনে নেয় কি না, তাই এত বিপ্লব চোদানোর শখ। দেয় কে তোকে! একটা কথা ওখান দিয়ে ঢুকিয়ে নে রেন্ডি, এটা আমাদের গোলক। তোরা ভিনদেশী। না পোষালে ফোট। থাকতে হলে, আমাদের পায়ের নীচে থাক কুত্তী।

    বুর্জোঁ : লাল্লাদি’কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। অ্যাডমিনদের এ বিষয়ে আমি ফাস্ট অ্যাকশান দাবি করছি @চেয়ারম্যান, @লাল্লামতী। বিশেষ করে @মদনা, @নবকমি এবং @গোরেবেলকে গোয়াল থেকে তাড়ানো হোক, উইথ ইমিডিয়েট অ্যাকশান। ধিক্কার। #হোক বুফে বিপ্লব।

    গোরেবেল : @বুর্জোঁ সোনা ছেলে। কিচ্ছুটি বলেনি। খালি চুষিকাঠি চোষে আর লোম ছেঁড়ে। দুর বাল, কে থাকে এমন গোয়ালে...

    টাইপ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গোরেবেল উৎপাটিত হয় গুঌ গোয়াল থেকে। মদনা, নবকমি এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট বুর্জোঁকে শাসানি ও সতর্কবাণী পাঠিয়ে ইনবক্স করা হয়। আপাতত থ্রেডটিতে শান্তিজল ছেটানো গেল। যদিও ধিকি ধিকি ছাই চাপা হেটস্পিচ ও ঘৃণার আগুন, তৎসহ ভাপের টের পাওয়া যাচ্ছে। সেই বন-ফায়ারের আঁচ আমরাও বাঁচাতে পারবো না। কারণ ইহা বাড়বানল। ছ্যাঁকা খাওয়ার আগেভাগে অন্যান্য ভ্রমণ সেরে আসা যাক।



    প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ও চারিয়ে দেওয়ার চারা বোনা চলছে আম-রঙেদের মগজে। সামনে নির্বাচন। নিয়োগ হচ্ছে নতুন নতুন নির্বাচনী কৌঁশলী। তারা বাতলে দিচ্ছে নব নব স্ট্র্যাটেজি। জয়ের নিশ্চিত রেসিপি। যুদ্ধ শুরুর আগে শুরু হয় হাঁকডাক। শাঁখ, ঢাক, ঢোল, তুরী, ভেরি, কাঁসর, দামামা, সাইড্রাম, বিড্রাম ইত্যাদি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে এমন নাদ ও নিনাদের হুঙ্কার, যাতে বিপক্ষ যুদ্ধ শুরুর আগেই হেরে বসে। ঘাবড়ে যায়। ভিতরে ভিতরে পরাজয় মেনে নিয়ে সমর্পণ করে নিজেকে। এবং ব্যূহ। তার বিবিধ অবয়ব। ভিন্ন ভিন্ন রচনা কৌশল। জ্যামিতিক স্ট্রাকচার। বৃত্তাকার, দুই সমান্তরাল চতুর্ভুজ, বিষমবাহু বিস্তৃত ভূমি ত্রিভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি বিভিন্ন। ব্যূহের রচনা এমন, তিল কে মনে হবে তাল। দশ কে সহস্র। হাজার কে কোটি। ব্যূহ হবে অভেদ্য। দুর্লঙ্ঘ্য।

    তবে এসবই পুরাকালের রকম সকম। এখন টেকনো দানোর যুগ। হুজুগ। সোশ্যাল মিডিয়াতেই সম্ভব কুরুক্ষেত্রের বিশ্বরূপ দর্শন। সোশ্যাল মিডিয়া রঙ দুনিয়ার একাদশ অবতার। তার ক্ষমতা বিশ্বজোড়া। অসীম। অভূতপূর্ব। যুদ্ধের সমস্ত প্রকরণ তাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। নির্বাচনী রণের নেট প্র্যাকটিস ও অস্ত্রে শাণ এখানেই দিবারাত্র চলছে। চলছে টেকনো ব্যূহ রচনার তোড়জোড়।

    লাল, সবুজ, গেরুয়া, নীল প্রত্যেক দপ্তরে। হাই কম্যান্ড থেকে আকাশবাণী এয়েছে, “ফেকু প্রোফাইল ওয়ানাও। একজন কম-সে-কম একশোটা। নন রেসিডেন্সিয়াল দেশী, হাই প্রোফাইল একাডেমিক, স্কলার, শিল্পী, লেখক, আঁকিয়ে, গাইয়ে, নাটুয়া, খেলোয়াড় এবং অগুনতি জোহুজুর। তাপ্পর পার্টি লাইন মেনে বুলি, বুকনি, স্লোগান ---- ‘অচ্ছে দিন’, ‘শাইনিং সানসাইন’, ‘নাউ অর নেভার’, ‘জয় জোয়ান, জয় বেগম জান’, ‘গরিবি হটাও, বড়লোক লাও, দেশ বাঁচাও’, ‘যবতক সূরজ চাঁদ রহেগা, ড্যাশ তেরা নাম রহেগা’, ‘পা পার্টি পামসু’, ‘চা চটি চাবুক’, ‘বাচ্চা বাচ্চা রঙ কা, জন্মভূমি কে কাম কা’, ‘আমার নাম, তোমার নাম, আঃ কি আরাম’, ‘চিনির চেয়ারম্যান, আমাদের গদম্যান’, ‘নেই সোচ, নেই উমিদ’, ‘অবকি বার হামারি সরকার’ এবং পরিবর্তনের হড়পা বানে ভরিয়ে দাও সে সব অ্যাকাউন্টের দেওয়াল। গোয়ালে গোয়ালে নেমে পড়ুক ফেকুসেনারা তাদের এই বাকযুদ্ধ সাজিয়ে। মগজ ধোলাইর এ এক ফুল প্রুফ মেশিনগান। জেনো, যার ভাঁড়ারে যত বেশী রঙ, রঙ দুনিয়ায় তার তত বেশী কদর ও সমাদর। রং-বলই সব বলের উৎস। ক্ষমতার শেষ কথা।”

    তো চেয়ারম্যান, যোগীনাথ, মম, কোবিকা প্রভৃতি রং-ন্যাতাদের কম্যান্ডানুপাতে দলদাসরা ক্ষেত্রকুরুতে নেমে পড়েছে। ঐ দেখা যায় ময়দানের বামপ্রান্তে, লাল বাহিনী ---- এখন বেচারাদের বাজার মন্দা। যদিও তারা পোষ্ট কলোনিয়াল, পোষ্ট মডার্ন, বিজ্ঞান সাধক; এমনই ইস্তাহার। তথাপি টেকনোবাজিতে কিছু অপটু। তাই রিক্রুট কম। প্রায় একটি পুরো শতক, এঁরা দাপিয়েছেন গোলকের বিভিন্ন ট্যানজেন্ট বরাবর। তখন এনাদের ব্যূহ ছিল দেখবার মতো চিজ। হেথায় গেরিলা বাহিনী, হোথায় শ্রমিক-মজদুর ব্যূহ, ভেঙে দিচ্ছে পুঁজিবাদীদের ম্যানসন! কিন্তু ভুত থাকে সর্ষের ভেতরেই। বিজ্ঞানের কোনো দেবতা নেই। তা সতত পরিবর্তনশীল ---- সিস্টেমের সাথে, ধ্রুবের লক্ষ্যে, সত্যের লক্ষ্যে। বিজ্ঞানের কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই। লাল ধেড়িয়েছে এখানেই। লাল হেরে গেছে নিজের কাছে। তত্ত্ব কে বানিয়েছে দেবতা। লালবইর বাইরে আর কিছু ভাবতে আর করতে এখনো তারা রাজী নয়। এবং পুঁজি। তার কেবল হস্তান্তর ঘটেছে। শ্রেণি ভাঙতে গঠিত হয়েছে নতুন নতুন ক্লাস। এলিট শ্রেণি। লাল নিজেকে আপগ্রেড করার থেকে গেরুয়া, সবুজ, নীলসহ অন্যান্য রঙ-সাধারণকে হেয় ও নিজেকে সুপেরিয়র প্রতিপন্ন করতে বেশী উৎসাহী হয়েছে। তাই সাধারণ রঙেরা লাল থেকে ধীরে কিন্তু স্টেডি ওয়েতে দূরে সরে গেছে, যাচ্ছে। লাল পড়ে আছে তিমিরে, কবেকার খাওয়া ঘি ভাতের চর্বিত চর্বণ ও সোনালি অতীতের দিবাস্বপ্নে। তাই ইদানীং লালের রিক্রুট কম। ভোট বাক্সের রাজনীতিই ব্যুমেরাং হয়ে বুকে বিঁধেছে লালের। ফেকু প্রোফাইল যদিও লালের নেহাত কম নেই, খামতি যা, তা পথ নির্দেশিকার। নেতৃত্বের। এই বাজারে, লাল একটি ব্যূহ রচেছে, নেংচে নেংচে বকচ্ছপ জাতীয়, লাল্লামন্ত্র আর শ্রেণিশত্রুর মালা জপে।

    ক্ষেত্রের মধ্যভাগে, হৃদয়ে গেরুয়া। গেরুয়া এ গোলকে চিরকালীন। সেই বর্ণ বিভাগের আমল হতে। গেরুয়া জানে প্রতিটি ভোটের মূল্য সমান। তাই সংখ্যাগুরুকে তোল্লাই ও সংখ্যালঘুকে অনুশাসনে দাবড়ে রাখাই ভোট রাজনীতি। সে জানে ত্যাগের মহিমা অপার। ত্যাগী সাজবার জন্য দেদার খরচে তাই গেরুয়ার কার্পণ্য নেই। সে বোধহয় বুঝে নিয়েছে কার্লো ভগমানের সেই বানী : ‘ধম্মো হল অসহায়ের সহায়, আত্মাহীন জগতের আত্মাসম। শোষিত, অবহেলিতের আশ্রয়।’ ধম্মো এ গোলকে হট-কেক। বিজ্ঞাপন ও বিপণনের সেরা মাধ্যম। তুক বুঝে তাক করতে পারলে, জাল ভর্তি মাছ। হয়েছেও তাই। পরপারের পারানি বিনি পয়সায় পেতে লাইন পড়ে গেছে হেই মাথা থকে হুই চক তক। যার অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসের সামর্থ্য নেই, তার হোমিওপ্যাথি ও ওলাইচণ্ডীই ভরসা; এবং যদি এহেন রুগীই সংখ্যাগুরু হন, তবে ডাক্তারবাবু অ্যালো মাধ্যম পাল্টে হোমিও হবেন বৈকি! যস্মিন দেশে যদাচার বলে কি একটা বাত থি না! এ গোলক গো’র। সংখ্যা গুরুত্বে। পিওর যুক্তিবাদীর ফুল শার্টের তলে তাগা তাবিজ। লো রাইজ জিনসের কোমরে যুগপৎ জাঙিয়ার ব্র্যান্ড ও ঘুন্সি শোভা! গেরুয়া ঝোঁক বুঝে, হাওয়া বুঝে পাল তুলেছে। ধম্মের সাথে বিজ্ঞান (অপ) মিশিয়ে, যে তেলে জলের বিষম ককটেল বানিয়েছে, তা বিক্রি বাটায় সব কোলা-কেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। ঘরে ঘরে শুদ্ধ দেশী পট-অঞ্জলি! এই ঘর ঘর হর হর মন্ত্রে, গেরুয়া গড়েছে প্রায় দশ অক্ষৌহিণী ফেকু প্রোফাইল বাহিনীর এক বিশাল চক্রব্যূহ! ন্যানো সেকেন্ড অন্তর অন্তর গো গো মহারব ও ত্রিশিরা শিং বাগিয়ে আকাশের কানবুক ফেড়ে দিচ্ছে হরবখত।

    দশদিকে আত্মঘাতী বোমারুর মতো ছড়িয়ে আছে সবুজ। তার ব্যূহের নাম মাৎস্যন্যায়। সবুজের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া জ্যামে আটক; মায়ে, পোয়ে, ঝিয়ে, জামাইয়ে মিলিয়ে ভজঘট। কোনো নির্দিষ্ট লাইন এখনো তারা সালটে উঠতে পারেনি। পরিবার তন্ত্র ইহাদের উত্থান ও পতনের কারণ। এবং বিবিধ কেলেঙ্কারি। যদিও এই গোলকের ইতিহাসের একটি সম্পূর্ণ পর্ব, সবুজের পূর্বসূরিদের একচেটিয়া রঙবাজির ইতিহাস, বর্তমানে ইহারা ছন্নছাড়া। গোলকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ প্রকল্পে, কোনো ডেফিনিট দিশা নেই, যা ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হবে। মিথ্যে হলেও স্বপ্ন বিক্রি হয়। এনাদের সেই ঝুটা হি সহি, পল ভরকে লিয়ে প্যার তো করলো, কলিজাটুকুও নেই। ফলে ফেকু রিক্রুট মাঝারি গোছের। তবে সবুজ তো কোনো মোনোক্রোম নয়, তার কাচ্চা বাচ্চা অনেক। তাই মোট সংখ্যার নিরিখে অযুত নিযুত, ছড়িয়ে ছিটিয়ে, এপাড়ায় বেপাড়ায়। অন্য রঙেদের কা কথা। তারা স্বভাব অনুপাতে ছোঁক ছোঁক করছে সাধ্যমত ফেকু প্রোফাইল বাগিয়ে; কেহ লালের চোলিকা পিছে, কেহ গেরুয়ার কৌপীন তলে, কেহ বা সবুজের দু পা ফাঁকের অবারিত দোরে...



    লাইমলাইটটি কেবল সাতবর্ণী নয়, তাতে আছে অবলোহিত, অতিবেগুনি, রেডিও, তড়িৎ-চুম্বকীয় সহ সকল তরঙ্গমালার কম্পনওয়ালা কম্পাঙ্ক। আরো আছে থার্মাল সেন্সর। আছে মনমিটার। ফলে রঙেদের প্রতিটি উত্তেজনা, প্রতিক্রিয়া, মনের গোপন কতা, আঁতাত, প্রত্যেক অনুভূতি --- স-অ-ব ধরা পড়ে এই কিমাশ্চর্যম লাইমলাইট যন্ত্রে! এমন মার্কামারা লাইমলাইট নিজে অদৃশ্য থেকে অন্যকে আলোকিত করতে করতে এই মুহূর্তে সম্পাতিত লাল ডেরার গোপন কুঠুরিতে।

    বেসমেন্ট। ঊর্ধ্ব, অধঃ, পূব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, মোট ছয়তল। লালশালু মোড়া। চেয়ার, টেবিল, জলপাত্র, চা দানি, সকলই লাল। পশ্চিম দেওয়ালে লাল ফ্রেমে ফ্রেমে লাল লাল ছবি। মহান লাল বিপ্লবীগনের। সভায় উপস্থিত সকল সদস্য-সদস্যার চুলের ডগা থেকে নখের আগা পর্যন্ত লাল। দাঁত লাল। থুতু অবধি লাল। যেমন জলের মধ্যে গ্লিসারিনের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না, প্রতিসরাঙ্ক এক হওয়ায়; তেমনি এই বেসমেন্ট। লালে লালে গুলাইয়া যায়, কোনটি কি, কে কোনজন।

    আসুন, লালমঞ্চে। নাটক শুরু হল :

    চেয়ারম্যান : দেখুন, এই মাল্টিভার্সের প্রথম শ্রেণির কয়েকটি রাষ্ট্রে এখনো আমরাই ক্ষমতার রঙ। এই গোলকেও আমরা আমাদের রঙ ফলিয়েছি সুদীর্ঘ চার দশক। যদিও বর্তমানে আমাদের প্রজাতি থ্রেটের মুখোমুখি, তবে আমার রেডকম বন্ধুগন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বিদেশ থেকে আমাদের তাত্ত্বিক নেতা লালচেখভ মশায় এয়েছেন, আমরা আমাদের রঙতত্ত্ব ও দলতত্ত্ব তাঁর কাছ থেকে বিশদে বুঝে নেব। আমাদের যুবন্যাত্রী লাল্লামতী, লালচেখভ মশায় কে লালশাল পরিয়ে বরণ করে নেবে। তার আগে, আসুন আমাদের কার্লো ভগমানের উদ্দেশ্যে লাল্লাগীতি গাই ও দু মিনিট নিরাকার সাধন করে আমাদের বিজ্ঞান বিশ্বাস বাড়িয়ে নেই।

    সমবেত কণ্ঠে গান :

    কার্লো মোদের একমাত্র গদ,
    বাকি সব রঙ মাত্রেই ফ্রড।।

    লাল ঝাণ্ডায় চাঁদ তারা,
    লাল্লায় ভয় করি মোরা।।

    আমরা সবাই বীর রেডকম,
    মোদের মা ইভ, বাবা আদম।।

    নেই মোদের কোনো পৃথক শ্রেণি,
    সকলে এক পঙক্তিতে বসে পোড়োনি।।

    মোদের ক্ষমতার উৎস ভোটবাক্স
    রিগিংয়ে মোরা একাই একশো।।

    মোরা বিপ্লবী, মোরা পোতিবাদী
    মোরা এলিট, মোরা জেহাদি।।

    সবে মিলে এসো ভজি কার্লো ম্যাও
    পেটে খিদে তবু লালবইর জয় গাও।।

    পরে দু মিনিট মুখর নীরবতার ফাঁকে ফাঁকে হাই ও বাতকর্মের শব্দ। কিছু একঘেয়েমি সূচক চুকচুক। নাকে রুমাল। ইস বিশ ধানের শিষ, কে ব্যাটা পেদেছিস, আকারে ইঙ্গিতে। পাছে চেয়ারম্যানের ধ্যানভঙ্গ হয়!

    সময় পেরনোর বেল। ঘুম থুড়ি ধ্যান ভাঙে চেয়ারম্যানের কাশিতে, সমবেত রঙগনের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি মার্কা দীর্ঘশ্বাস পতন শব্দে। লাল নিয়ন আলো বোধহয় সে বাতাসে কেঁপে ওঠে! অতঃপর গলা খাঁকরি দিয়ে চেয়ারম্যান ----

    চেয়ারম্যান : আমি অনুরোধ করছি মান্যবর রেডকম মহোদয়কে তাঁর বানী বিতরণ করতে। আপনি যদি পোডিয়ামে আসেন...

    লালচেখভ : লালসেলাম আমার রেডকম রঙগন। আপনারা জানেন, আমাদের প্রজাতির শিকড়ই হলো তত্ত্ব। ব্যবহারিক দিক থেকে যতই ইহা অবসোলিট হোক, তবু আমাদের তত্ত্ব আঁকড়ে থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যুগ, স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে আমাদের তত্ত্ব প্রযোজ্য। ঐ ভক্ত প্রজাতির বোদের মতো আমাদের তত্ত্বও অবিনশ্বর সত্য। আর সত্য তাই, যার কিনা পরিবর্তন নেই। আমাদের তত্ত্বের দশটি কম্যান্ডমেন্টের মধ্যে একটি হলো, আমরা তত্ত্ব কপচাবো। যেমন --- শ্রেণিবিহীন সমাস, মজদুর মাত্রেই রেডকম (কিন্তু ব্যাটাদের গায়ে বড় গন্ধ), পৈতৃক পয়সায় আইফোন টেন বাগাবো এবং পুঁজি বিহীন সমাসের স্বপ্ন বিক্রি করবো। গরীব, দুঃখী, হাড় হাভাতে রঙগুলোর জন্য সস্তা দরে কুমীরের চোখের জল সাপ্লাইর কারখানা হবে আমাদের মহৎ শিল্প। নিজ সন্তানদিগকে পরদেশ পাঠিয়ে এলিট করিব, মগর দোস্তো, হাম মগর মাছ কি জাত, দেশবাসীর জন্য ইস্তাহার বাৎলাবো, মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ। আমরা গদ বা ভগমানে বিশ্বাসী নই। কার্লো ও লাল্লায় বিশ্বাসী। কারণ ওনারা মূর্ত বিজ্ঞান। তাই আমাদের বিজ্ঞানে কোনো ভুল নেই।

    (১৫ সেকেন্ড বিরতি)

    দ্যাশে আমাগো একখান প্রোজেক্ট আছিলো, তার নাম দেছিলাম : TO KNOW EVERYTHING. যাকে যাকে সন্দেহ, সন্দেহ হয়েছে মানেই উহারা বিরোধী না হয়ে যায় না, এমন সব বিরোধী রঙের বেডরুম, বাথরুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন, ব্যালকনি, স্টেয়ারকেস, কাজের জায়গা, চারচাকা, দুচাকা, জামা, প্যান্ট --- স-অ-ব, সব জায়গায় গোপন ভিডিও ক্যামেরা। সব দেখব, সব শুনবো। প্রাইভেসির মা’কে চুদি। ফ্রিতে মস্তি মারবো। তাপ্পর ধরে এনে ইন্টারোগেশন। গোপন সেলে রামঠাপ। আমরা এটি শিখেছিলেম হুইটলারের কাছ দিয়ে। আপনারা এখানে এটা চালু করুন ঐ গেরুয়া ও সবুজের কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি হিসেবে। ধন্যবাদ।

    এক নাগাড়ে বক্তিমে ঝেড়ে, লালচেখভ মশায় পকেট থেকে বের করিলেন দেড় হাত লম্বা মস্ত ব্র্যান্ডেড সিগ্রেট। শ্রেণিশত্রুদের নিকেশ করতে মগজের গোড়ায় দামি ধোঁয়া দেওয়া চাই বৈকি।

    এ সময় মেছুয়া বাজারের দৃশ্য চোখের সমুখে নাচে। কে যে কি বলছে, সঠিক বোঝা যায় না। সমবেত কণ্ঠস্বরের ক্যাকোফোনিতে হাহাকার ধ্বনিত হতে থাকে। লালচেখভ মশাইর বক্তিমের পর এখন সেই তূরীয় অবস্থা। সকলেই কিছু বলতে চায়। বিশেষত কচি লালরা। প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তর দেয় কে? তাই নিজেদের মধ্যে।

    কচিলাল ১ : কি রে কিচু বুইলি?

    কচিলাল ২ : কচু। ট্যান হয়ে গেল।

    কচিলাল ৩ : আমি কিন্তু কিচু কিচু বুইয়েচি।

    কচিলাল ১ ও ২ : মন্নে বুইলাম না, আর তুই বুইলি! তা কি বুইলি?

    কচিলাল ৩ : চেখভ মহাই অনেক জানেন। আমাদের চেয়ার বাউর তেকেও বেশী। আর একটা লাল বই কিনতে হবে। সাথে ভগমানদের পট।

    কচিলাল ১ : ও বাব্বা। ভারি বুয়েচিস তো। লাল্লাদি বয়েচে আলাদা কইরে আমানকার কিলাস নেবে। একটা বিড়ি দে। চ যাই...

    কচিলাল ২ ও ৩ : হুঁ। চ যাই।



    এই মুহূর্তে আমাদের একলব্যের কথা মনে পড়ুক। মনে পড়ুক সত্যকাম জবালের কথা। মনে পড়ুক শম্বুকের কথা। জীবনে এঁরা যতটুকু যা হয়েছেন নিজ প্রচেষ্টায়। গুরু এঁদের পথ চলায়, নিমিত্ত মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে অন্তরায়। এঁরা সেলফ-মেড। আরো মনে পড়ুক তাদের কথা, যাদের নাম ইতিহাসের মনে নেই। নামের প্রতি, যশের প্রতি, ক্ষমতার প্রতি ঝোঁক নেই যাঁদের। তাই আমরা ভুলে গিয়েছি তাঁহাদের নাম। খ্যাতি, মোহ, নাম, যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ইত্যাদি প্রবৃত্তি এঁদের গ্রাস করেনি। এঁরা শুধু নিজের কাজটুকু নির্লিপ্ত হয়ে করে যাওয়ার প্রয়াস করেছেন। এঁদের কোনো দেশ নেই। ধর্ম নেই। গণ্ডী নেই। এঁরা বিশেষ কারোর নয়, সকলের। সবাকার। যদিও মাণিক্য, তবু মহাসাগরের বেলাভূমে আর দশটা নুড়ির জীবন কাটাতে এঁদের কোন দ্বিধা নেই। এঁরা বিলুপ্তপ্রায়।

    মাভৈ এমনই একজন। তার জন্মের কোনো ইতিহাস নেই। সন, তারিখ নেই। সে কোন্ রঙ কেউ তাকে বলে দেয় নি, মাভৈ জানতেও চায় না। জন্মসূত্রে তার প্রাপ্ত কিছু নেই। অন্তত বংশমর্যাদা, কৌলীন্য গোছের গ্রাম্ভারি কিছু লেজ, তার নেই। তার কোনো পেডিগ্রি নেই। সে রাস্তার। পথের। ঘাটের। আঘাটার। মাভৈর শূন্য থেকে শুরু। তাই অবাধ। মাভৈর বড় হয়ে ওঠা নিজস্ব তাগিদে। সে বুঝতে চায় এই রঙ দুনিয়ার চরিত্র, কিসসা, কাহিনী নেতি নেতি করে। পরতে পরতে দাঁত বের করে থাকা দ্বিমুখীতা, দ্বিচারিতা, ক্ষমতার নির্লজ্জ শীৎকার, এই জটিল চক্রাকার আবর্ত, ল্যাব্রিন্থ, এই মাল্টি ডিমেনশনাল সিস্টেমকে সে আঁতিপাঁতি করে বুঝে নিতে চায়। এই ওয়ান ম্যান আর্মি মিশনে, স্বভাবতই তার গতিধারা নীরব ও সর্বমুখী। কোনো পুঁথিপড়া, একাডেমিক, প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যে ও তার গবেষণা রিপোর্ট বা পরিসংখ্যানে ভরসা তার নেই। সে গোড়া থেকে হাতে কলমে বুঝে নিতে চায় দুনিয়াদারি। তাই, প্রত্যেক রঙের মিটিং, মিছিল, চক্র, সভা, সমিতি, সমাবেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ও ছদ্মবেশে সে উপস্থিত থাকে নিঃশব্দে। সাধারণ রঙের প্রাত্যহিক জীবন প্রণালী, কাঁদা-হাসা, বাঁচা-মরা, দুখ-সুখ জানার জন্য, বোঝার জন্য, উপলব্ধি করার জন্য, অনুভব করার জন্য ---- নিজের জীবন দিয়ে, ইন্দ্রিয় সকল দিয়ে --- পরিব্রাজনই তার অবলম্বন। সে কোনো রঙের নয়। তার কোনো পার্টি লাইন নেই। হাদিস নেই। শাস্ত্রবচন নেই। ধর্ম নেই। সম্প্রদায় নেই। রঙে রঙে ভেদ করে এমন কোনো কিছুর সাথেই তার সম্পর্ক, সে ছিন্ন করেছে। সব রঙ তার অভ্যন্তরে বিকিরিত হচ্ছে, কিন্তু প্রতিসৃত ও প্রতিফলিত হচ্ছে না বিশেষ কোনো রঙ। মাভৈ নিকষ কালো একটি গহ্বর। যেকোনো রঙ-সত্তা তার অভিকর্ষ বলয়ে প্রবেশ মাত্রই বিলীন হয়ে একীভূত হয়। মাভৈ ভালো ও মন্দের বাইনারি ইকুয়েশন ছাড়িয়ে এক তৃতীয় অবস্থা। জীবনের নতুন অর্থ। আমরা ধীরে ধীরে তার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবো। আপাতত, মাভৈ লাল দপ্তরের গোপন মিটিঙে, ম্যাড ম্যাক্স নামে উপস্থিত। এখানে ম্যাক্স নামের মাহাত্ম্যই যে আলাদা!



    চক্রব্যূহের কেন্দ্রে, সর্বাঙ্গ সোনামুড়ে, দশলাখি স্যুটে জানুশিরাসন মুদ্রায় যোগীনাথ। এতে নাকি মূত্রাশয়ের দোষ মুক্ত হয়! বজরঙী ভাইজান নাম ধারণ করে মাভৈ লাল থেকে বেরিয়ে গেরুয়া শিবিরে। এখন সুবাহ চার। মুনিবরের দিন শুরু চিরতার এক কমন্ডূল রস সেবনে। বড়ই মিঠা স্বাদ। দেখাদেখি ভক্ত ও সংঘীরা নাক টিপে গলায় চালান যে যার পাত্র থেকে। এখন যোগের সময়। যোগীজি যোগ করবেন। কপিকুল যোগ কতটা করবে জানা নেই, তবে যোগনিদ্রায় সুপটু। এই যোগনিদ্রা শবাসন নামে বেশী পরিচিত। প্রতি প্রাণায়ামের ফাঁকে মিনিট পাঁচ যোগনিদ্রা। যোগীজি কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যাসার্ধে অগুনিত বৃত্ত। নিরামিষ ভোজন, ভজন, কোবরেজি চিকিৎসে, পঞ্চ গব্য সেবন, সদাচার ও ডোনেশন অঙ্কের নিরিখে সামনের, মাঝের কিংবা পেছনের অক্ষে ঠাঁই। বিজ্ঞান এথানে বিশ্বাসী। ফসিল হওয়া পুঁথিতে পুঁথিতে খোদাই, বায়ু মার্গে ভ্রমণ যানের নক্সা। চির যৌবনের অপার রহস্য। প্যারাইসোর অলৌকিক বর্ণনা। সেথায় যাওয়ার উপায়। কেবল মাত্র শ্বাস বায়ুকে সঠিক পথে চালনা করে সর্ব রোগ মুক্তির ম্যাজিকাল উপায়। যোগীজি এইসব বিশুদ্ধ যৌগিক প্রক্রিয়াই করে দেখাচ্ছেন ও গুণগান কীর্তন করছেন।

    ভালো থাকতে কে না চায়? যদি এই ভালো থাকার রেসিপি ফ্রি তে মেলে! কেবল নিজেরই হাত, পা, পেট, মাথা, ধড়, পাছা দুবেলা হেলিয়ে দুলিয়ে! কোনো ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই। আর যিনি এই লাইফস্টাইল শিখিয়ে দেন, কেন না তাঁকে গোলকাধিপতি নির্বাচিত করা হবে? যোগীজি এই সারসত্য বিলক্ষণ জানেন। সামনে ভোট। জমি প্রস্তুত হয়েই আছে। সংখ্যাগুরু মনে প্রাণে বিশ্বাসী; যা প্রাচীন,
    তা-ই সোনা। তিনি মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন কোটিতে কোটিতে ভক্ত। ভোট। জানুশিরাসন মুদ্রা থেকে চটপট পবনমুক্তাসন অর্থাৎ গ্যাস নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় যেতে যেতে তিনি আরম্ভ করলেন ভোট প্রচার তথা পরলোকে ভালো থাকার সদুপদেশ। আমাদের মনমিটার, লাইমলাইট এখন রঙ দে মোহে গেরুয়ার চক্রব্যূহে, যোগীনাথের বদনে আপতিত ----

    যোগীনাথ : হে আমার আখাঁকি হাফ পেন্টুল গোবৎসগণ, ভগমানের দয়ায় আমাদের চার চার খানা পাকস্থলী। তবে পাকস্থলী নামটির মধ্যে দেশদ্রোহের ছায়া আছে, তাই উহার নাম বদলে গৃহস্থলী রাখাই শাস্ত্রসম্মত মনে করেছি। কারণ, গৃহ তো উদরের সমান। কি? ঠিক কি না?

    সমবেত ভক্তবৃন্দ সম্মতি সূচক হাম্বা হাম্বা রবে চারশো কুড়ি ডেসিবেল ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে থাকলো... সাথে সাথে বাবাজী চলে এলেন তোলাংগুলাসনে; কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত মুক্ত হতে। এই নব যোগমুদ্রায় আশ্বস্ত হয়ে কহিলেন ----

    যোগীনাথ : তা যাহা বকিতেছিলাম; দেশহীদ্রো ছাগু, মাকু, ভ্যামপ্যান্টি লাল ও সবুজ মুখোরা ষড় কষছে। হামলোগ চুপ ব্যাঠেঙ্গে নেহি। চুনচুনকে বলাৎচমৎকার করেঙ্গে ঐসব নিমকহারামদের বিবিবেটি ঔরতদের, কবরিস্থান সে খিঁচকে লায়েঙ্গে। ছোড়েঙ্গে নেহি।

    আবার একপ্রস্ত হাম্বা হাম্বা সহযোগে টিকিচৈতন রব-নাচ, লঙোটি খুলে ভক্তদের মানদণ্ড বের হওয়ার উপক্রম; তবু উৎসাহে ভাঁটা নেই! বাবাজী যে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছেন। বত্রিশ পাটি ব্যাদনিয়ে যোগীবর উৎকটাসন মুদ্রায়, তথাস্তু ভঙ্গিতে বলতে লাগলেন ----

    যোগীনাথ : হে আমার বিশ্বাসীগণ, আমার হনু ভক্তবৃন্দ, ভজন ও কীর্তন ছাড়া নাচন কোঁদন বৃথা। আইস, আমরা ভক্তগীতি গাইতে গাইতে নাচি।

    জগঝম্প, অক্টাপ্যাড, বেস গিটার, কি-বোর্ড, কাঁসার থালা-বাসন সহযোগে একদল সুকুমারী তান ধরিলেন। তাহাদের ব্লাউজ বর্জিত গেরুয়া শাড়িতে কি রূপটাই না খুলিয়াছে, তায় কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে ও নাই কুণ্ডলী দরশনে কুল কুণ্ডলিনী জাগিয়া ওঠেন। যাহা হউক, গান শোনা যাক :

    খাও রোজ শাকপাতা ভজো পূজ গোমাতা
    জপ প্রাণায়াম রে।।

    যদি এদেশে রহিতে চাও তবে গেরুয়াকে ডরাও
    যোগাসন রোজ করোরে।।

    করিও না কভু প্রেম দেখিও না পানু আইটেম
    বীর্য ধরহ চিতে।।

    অজাতে কুজাতে বিয়ে রক্তে ভেজাল মিশায়ে
    না পারিবে বাঁচিতে।।

    গোমূত্র করহ পান নিরামিষে বহু ফান
    বীজমন্ত্রে রাখিও মতি

    নইলে খাপ পঞ্চায়েতে গলা যাবে মাঝরাতে
    চিতায় পুড়িবে সতী।।

    শোন শোন ভক্ত হনু কহিয়াছেন স্বয়ং মনু
    চারি বর্ণ ‘তাঁরই’ সৃষ্ট

    ভগমানে ভয় কর ‘তাঁকেই’ ভজন কর
    পরকাল হইবে সুমিষ্ট।।

    এমন সুমধুর গান কিন্নরী কণ্ঠে শ্রবণে ও ততোধিক মধুর আদিরসাত্মক রূপমাধুরী দর্শনে যোগীনাথ সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। সমাধিস্থ অবস্থায় তাঁর শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণী আপনারা শ্রবণ করুণ ---

    যোগীনাথ : আমরা একশ কোটি। ওরা ত্রিশ কোটি। আমরা সনাতন। ওরা ম্লেচ্ছ। আমরা পবিত্র। ওরা অপবিত্র। আমরা অহিংস, নিরামিষাশী। ওরা হিংস্র, আমিষাশী। ওরা আমাদের মা, বোনেদের ভাগিয়ে নিয়ে বে করে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। নিজের ঘর, নিজের সম্পত্তি হাতছাড়া করা উচিৎ কি? ওদের লাভ জিহাদ ব্যর্থ করতে আমাদের অস্ত্র অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড।

    (কিছুক্ষণ দম নিয়ে)

    এ গোলকের সবাই গেরুয়া। বেশ কিছু রঙকে জোর জবরদস্তি লাল, সবুজ, নীল করে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসে সব লেখা আছে। আমরা পাঠ্যপুস্তকে সেসব আনছি। আপনারা পড়ে লিবেন। সেইসব বেপথু রঙদের আমরা ফিরিয়ে নিতে চাই। আমাদের জেতান। আমরা আপনাদের ঘর ওয়াপস করে লিব। ঘর ওয়াপসী অনুষ্ঠানে যোগ দিন আর ডিজিটাল গোলকের সুবিধা নিন। ক্যাশ লেস মানে লেস ক্যাশ মানির নতুন কল খুলেছি আমরা। টোটাল শিল্পো। শিল্পার পতি হতে যারা চান, তারা আমাদের রঙে রাঙুন ও শিল্পোপতি বনে যান। নাহলে দেশ ছাড়া করে ছাড়ব। অচ্ছে দিনের মন কি বাত আমরা চায়ে পে চর্চা করবো এরপর।

    এমন স্বপ্নের ফেরিওলা বিশ্বাসীরা বহু বছর পায়নি। বিশ্বাস এমন এক বস্তু যা হাওয়ার চেয়ে আগে চলে। মুখে মুখে ফিরে তার বহর ফুলতেই থাকে। ফলে বহুদূর যেতে হয়না, বিশ্বাসেই মিলায় বস্তু।

    পূর্ণ-মৎস্যেন্দ্রাসন মুদ্রায় যোগীনাথ তাঁর দশলাখি স্যুট ও সিল্কের চাড্ডি সামলাতে সামলাতে কনক্লুডালেন,

    যোগীনাথ : হে আমার অতি প্রিয় ফেকুকুল, তোমরা ছড়িয়ে পড় সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশহীদ্রো ছাগু, মাকু, ভ্যামপ্যান্টি লাল ও সবুজ মুখোদের গোয়াল গুলিতে ধানিলঙ্কা কাণ্ড চালাও। তোমরা এই লেজে আগুন কাজে সেই পূর্ব পূর্ব পুরুষানুক্রমে ভিন্টেজ ঐতিহ্য দেখিয়ে আসছ! এবারও রঙ জন্মভূমি উদ্ধারে লাফিয়ে পড়। নজর রাখো প্রত্যেক ফ্রিজে। মায়ের মাংস দেখলেই অ্যাকশান নাও। রাবণ পোড়া কর। এরজন্য আখড়ায় মুগুর ভাঁজো। যোগ কর। ভস্তৃকা ও মর্কটাসন অভ্যাস কর গোধূলি লগ্নে। লগে রহো মিত্রোঁ। দেশহীদ্রোকো দেশ ছাড়া করকেই হাম শ্বাস লেঙ্গে মিত্রোঁ।



    হেটস্পিচ শুনে ইদানীং আর মাভৈর ক্রোধ হয়না, মাথায় রক্ত চলকে শিরা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় না, প্রকৃত অর্থে কোনো অনুভূতিই হয় না। কখনো ধর্মের নামে, কখনো তথাকথিত নিজ রাষ্ট্র, নিজ ক্ল্যান বাঁচানোর অজুহাতে, কখনো রমণী ধন, রাজ্য, দেশ, সসাগরা এই গোলক জয়ের মোহে এবং কখনো কোনো অজুহাত বা প্ররোচনা ছাড়াই সবল রঙ দুর্বল রঙের প্রাণ নিয়েছে। এই মাস ম্যসাকারের জাস্টিফিকেশনে সে তার নিজের সভাকবি দিয়ে ইতিহাস রচেছে। শাস্ত্র গড়েছে। ভাস দিয়েছে। বিধান দিয়েছে। রক্তের স্রোত মুছে দিতে চেয়েছে গ্ল্যামারে, ক্যারিশ্মায়। যুদ্ধ ও যুদ্ধে প্রাণ দেওয়াকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। প্রাণের কোনো দাম উলুখাগড়ার নেই, জীবনের মূল্য তো কেবল রাজার! এমনই ইতিহাস বুনে দিয়েছে সাধারণের মগজে। আর কেন জানি রঙ মাত্রেই রক্ত, যৌনতা, হিংসা, লাশ এবং গেম অফ থ্রোন’স দেখতেই সবচে মজা পায়! এ কি কেবল অ্যাড্রেনালিন ও পিটুইটারির খেলা নাকি লক্ষ, লক্ষ বছরের প্রাচীন জিনের অন্তর্গত পিপাসা? মাভৈ জানেনা। সে এই গোলকের তথাকথিত বহু মহান ও দৈব রঙের বাণী সম্বলিত বই, প্রতিটি শব্দ বুঝে বুঝে পড়ে দেখেছে; হেটস্পিচের জাঙ্ক ইয়ার্ড। জীবনের থেকে সেখানে মৃত্যুর ও মৃত্যুর পরের কোনো এক জীবন, যে জীবন আজ পর্যন্ত কেউ দেখেছে, এমন প্রত্যক্ষদর্শী’র বিবরণ নেই, সেই নেই জীবনের গ্ল্যামার গাথায় ভরপুর।

    এ তো গেল প্রাচীন পন্থী ও কালের কথা। কিন্তু বর্তমানে সমস্যা আরো গহীন। বিজ্ঞানের ছদ্মবেশে অপ বিজ্ঞান। প্রত্যেক কালে আমারা এমন কয়েকজনকে পাই, যারা, গেম চেঞ্জার। ইতিহাসের গতি প্রকৃতি পাল্টে দেন। তাঁদের সম্মোহনী ক্ষমতা অসীম। পঙ্গপালের মতো, এপিডেমিকের মতো, ভাইরাসের মতো, কোটিতে কোটিতে রঙেরা তাদের পায়ে হত্যে দেয়। আত্ম বিক্রয় করে। এমন নাম মাহাত্ম্যের ফায়দা না লুটে স্থির থাকেন, এমন ক্ষণজন্মার উদাহরণ মাইক্রোস্কপিক। তো যুগ বদলের সাথে এইসব মহাশয়েরা বুঝেছেন, নবযুগের মোস্ট পাওয়ারফুল ওয়েপেন, বিজ্ঞান। তাঁরা এও ভালোই জানেন, তাঁদের এই সম্মোহনী শক্তির উৎস, সাধারণ রঙেদের অন্ধবিশ্বাস। এই তত্ত্ব বুঝে, তাঁরা বিগত দুই শতকে এস্টাব্লিশ করতে সমর্থ হয়েছেন, এক নতুন অস্ত্রের --- বিজ্ঞানে বিশ্বাস নয়, বিশ্বাসে বিজ্ঞান। যা বিশ্বাস করবে, তা বিজ্ঞান। আগাগোড়া দূষিত, বিষাক্ত নদীতে স্নান, বিজ্ঞান, কারণ বিশ্বাস তাই। এক কালে যে তত্ত্ব, বিপ্লব এনেছে, সময় পাল্টানোর সাথে সাথে তা যতই অবসোলিট হোক, তবু তা বিজ্ঞান, বিশ্বাস এমনই। মহাকাশ চষে চষে যে প্যারাইসোর হদিশ আজো পাওয়া গেল না, তবু কোন্ বিজ্ঞান বিশ্বাসে তা না জানি কোথায় যেন আছে! আসলে সিউডো বিজ্ঞান এমন ভাবে সাধারণের মননে ছেয়ে গেছে যে, ভিত্তিহীন কুসংস্কারকেই ভাবা হচ্ছে বিজ্ঞান। এতে ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বার্থ আরো সহজে পূরিত হচ্ছে।

    ‘এ আর নতুন কি’ বলে বিষয়টি উড়িয়ে দিতে বা দাঙ্গা রোধ করতে আর একটা দাঙ্গা শুরু করতে মাভৈ চায় না। অথচ ঠিক এই পন্থাই চলে আসছে। ইটের বদলে পাটকেল। এক বিশ্বাসের মূল ওপড়াতে আরো এক উদ্ভট বিশ্বাস। তাই, সে, ভাবে। আনকোরা কোনো পথের। ভাবে, ভিতরে ও বাইরে সমানভাবে পচনশীল এই রঙ সিস্টেমটি কিভাবে পচাগলা জৈব বস্তু থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে বেঁচে আছে! শুধু বেঁচে নেই, অন্তত আপাতদৃষ্টিতে বেশ তরিবৎ আছে। প্রকৃত প্রস্তাবে নেই। যেখানে পোষক ও পরজীবীটি অভিন্ন, সেই প্যারাসাইটিক পুষ্টিচক্র আসলে নিজের রক্ত নিজে চুষে ভাবছে নিজের বহুত পুষ্টি সাধন হচ্ছে! ফলত ধ্বংস অনিবার্য। শুধু কিছু ইন্ধন ও অনুঘটকের আস্কারা, যা সিস্টেমটি নিজেকে রক্ষার তাগিদে খুঁজে নেয় এবং তা-ই কালে কালে দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষা ও ধ্বংসের কারণ হয়।

    ভাইরাস। ভাইরাস এই কাজটি বিবর্তনের মানচিত্রে নিপুণতার সাথে প্রতি এজে করে এসেছে। হ্যাঁ, ভাইরাস সেই কাঙ্ক্ষিত অনুঘটক। যা মৃত অথচ জীবিত। যা জড়ও নয়, জীবও নয়। যা প্রাণ, অথচ তার বহিঃপ্রকাশ ছাড়াই। যা সুপ্ত অথচ অরগ্যানিক আধারে প্রবল সক্রিয়। ঘুম ভাঙালেই, সে আরম্ভ করবে আরামসে বংশ বিস্তার। চেন রি অ্যাকশান স্টাইলে, মাশরুম অবয়বে। মাভৈ চিন্তা করে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ভাইরাসের নেচার। তার কালচার। অনুকূল পরিবেশ ও অপটিমাম টেম্পারেচার। একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় মাভৈ; ‘একটি শক্তিশালী “ঈজম” হলো সবথেকে মারণ ভাইরাস।’ একটি সুপরিকল্পিত ঈজমের অঙ্কুর যদি রঙেদের মনমাটিতে ঠিক ঠিক রুইয়ে দেওয়া যায়, তা কালে কালে, তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে মন্ত্রে হয়ে উঠবে সেলফ সাসটেইন্ড মহীরুহ। অজর অমর প্রায়। লাল্লা, গদ, ভগমান, কার্লো, বর্ণ, সমাজ, বিবাহ, ম্যাও, বিশুদ্ধ রক্ত, রেস, দেশ, জাতি, জাত ইত্যাদি যত ‘ঈজম’ তথা ‘বাদ’ রয়েছে, সবকটাই এমন ভাইরাস। যা ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে কেবল বেরোয়নি, এত হাজার হাজার বছর ধরে দিব্যি সারভাইভ করছে এবং নিত্য নতুন রঙ ফলাচ্ছে।

    মাভৈ তার এই একক চিন্তা ভাবনার একলা ভুবনে নিমজ্জিত হতে হতে উপায় খোঁজে। সমাধানের উপায়। অসীম সংখ্যক চলরাশিময় এই সমীকরণের সমাধানের জন্য প্রয়োজন অসীম সংখ্যক স্বাধীন সমীকরণ। তার সমাধান একার ও একদিনের কাজ নয়।

    ১০

    এখন মাভৈর একা থাকা প্রয়োজন। ভাবার জন্য। সে ভাবুক। ভাবুক, ঐসব শক্তিমান ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে আর এক শক্তিধর ভাইরাস বপনের কথা। বা অন্য কোনো মার্গ। ততক্ষণ আমাদের ভ্রমণে নিয়ে চলুক মনমিটার। লাইমালাইট। আমাদের পরবর্তী সফর, কাচের শিশি ভেঙে যেভাবে ছত্রাকার হয়ে পড়ে, সেইরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবুজ পরিবারগুলিতে, যা কোনো এক সময়ে একান্নবর্তী ছিল।

    এই গোলকের বুকের ওপর এখন আমাদের অর্ধবৃত্তাকার লাইমলাইট। একটি বৃদ্ধ-শিশু লবেঞ্চুস হাতে। মা তাকে শোনাইতেছে, রূপকথা। রাজকন্যে, রাজপুত্রের কথা। গোলকজোড়া রাজ্যপাটের স্বপ্নকথা। কিন্তু মুশকিল এই যে, যে শিশু বৃদ্ধ এবং যে বৃদ্ধ শিশু, উভয়েই কার্যক্ষেত্রে সকলই গুলাইয়া ফেলে। সুতায় সুতায় পাক খাইয়া ঘুড়িগুলি শূন্যে লাট খায়। তাদের ভোকাট্টা হওয়াও হয় না, করাও হয় না। রাজ্যপাটের দিবা স্বপন, কেবল জলে বুদ্বুদ কাটিয়া মিলাইয়া যায়! এবং বৃদ্ধ-শিশু নিজ ক্যালমায় জগতবাসীর খোরাকের পাত্র হইয়া উঠে। সে যাহা হউক, আমরা উহাদের পারিবারিক খানদানে, কর্ণ পাতিয়া, তাকিয়া পিঠে, গড়গড়া সহযোগে ফরাস বিছিয়ে বসি।

    শাহজাদা : মাম্মি দেখ আমি কেমন বাড়ছি!

    সবুজ স্যান্ডো গেঞ্জি ও সবুজ পাজামা পরা একটি বৃদ্ধ-শিশু, বারপোষ্টে দোল খাচ্ছে। রেসকোর্সের বিশাল ময়দান। তন্মধ্যে অট্টালিকা। লনে রাশভারী মম, ধেড়ে খোকার কাণ্ডজ্ঞানহীন কাণ্ড কারখানা করুণ আস্যে দেখছেন।

    মম : তা বাবা, খুব বাড়ই বেড়েছ। তোমার বক্তিমে দেওয়ার জাবদা খাতাটি কই? হোম ওয়ার্ক করেছিলে গতকাল মৌনমহানজী’র কাছে?

    শাহজাদা : নিয়ে যাইনি। ভুয়ে গেচিলাম। তাচাড়া, মাই মুখ ইজ মোর দ্যান এনাফ। আমি কেমব্রিজ ফেরৎ। আমার বিদেশী গার্লফ্রেন্ড আছে। আর কারুর আছে এমন, এ গোলকে?

    মম : থাক বাপ আমার। আর ছাতি ফুলিয়োনিকো। জাবদা খাতা নিয়ে যাওনি বলেই না এমন ছড়িয়েছ। আমাকে দেখেও তো শিখতে পারো চাঁদ! কি সুন্দর দেখে দেখে রিডিং পড়ে বক্তিমে করি। আর লক্ষ লক্ষ রঙ তাই শুনে পাতালি সহযোগে ময়দান উথলে দেয়!

    শাহজাদা : মাম্মি, আমার মুখস্থ বিদ্যা একদম আসেনা, আর রিডিং পড়তে গেলে জিভ জড়িয়ে যায়। তাই এসব কষ্টের মধ্যে না গিয়ে, মনে যা আসে তাই বলি। রঙেরা তো আমাকে কত্ত ভালোবাসে! যখনই বক্তিমে করি, রাশি রাশি ডিম আর টমেটো ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয়! আমি শুধু ভাবি, ওরা জানলো কিভাবে, আমি মামলেট আর কেচাপ এত্ত ভাওবাসি!
    মম : বাছা আমার, আগে ছিলেন মৌনমহান, এখন হয়েছ তুমি। আমাদের প্রজাতি বুঝি আর টেকে না! তোমার বাবা, তোমার ঠাকুমা, তোমার প্রপিতামহ, তোমার পদবি-দাদু --- এঁদের কাছে পরলোকে আমি কি জবাবদিহি করবো বাপ? সামনে ভোট। গেরুয়াদের আছে ধম্মো আফিম। লালদের আছে শ্রেণিহীন সমাজের ডুগডুগি। নীলেদের আছে সংখ্যালঘু তাস। বিছড়ে হুয়ে সবুজদের আছে দলিত সেন্টু। মোদের কি আছে বাপ? এবার তো বড়ে হো যা মেরি লাল!

    শাহজাদা : কেন মম? আমাদের অতীত গৌরবের ক্যালেন্ডার আছে! স্বাধীনতা সংগ্রামের কুমীর ছানা আছে। বিদেশী ডিগ্রি আছে। পারিবারিক পেডিগ্রি আছে। আর কি চাই মা? তাছাড়া আমাদের তো হাত আছে! মাম্মি, মাম্মি, আমি কবে রাজা হবো?

    মম : কুমার বাদুড় আমার, মোরা যে অ্যাহন কাঁকড়া আক্রমণে --- এক দাঁড়ায় চাড্ডি, দেশীসেকু, নবকমি, তিনু কাকা-কাকীরা ঠাপাচ্ছে, অন্য দাঁড়ায় মাকু, ভ্যামপ্যান্টি, ছদ্মসেকু, ছাগুরা ঠুসছে। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা কোন গোত্র ধারণ করবো। এভাবে ছন্নছাড়া, উদ্দেশ্যহীন হয়ে, কোনো নীতি ছাড়া রাজা হবি কি করে বাপ? দেখলি না, যে চানু রঙেদের জন্য দু দশক প্রাণপাত করলো, অনশন করলো, নিজের জীবন যৌবন উৎসর্গ করলো, সে পেল কি না কেবল হাতে গোনা একা নব্বই খানা ভোট। রঙ দুনিয়া তাকে রাজার আসন দিল না, কারণ সে কোনো স্বপ্ন বিক্রির সওদাগর হতে পারেনি। ঝুটমুট হোক তবু সব পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রঙেরা বড় পছন্দ করে। নেশা। নেশা। নেশা ধরিয়ে দে রঙেদের মনে। শয়নে, স্বপনে, নিশি জাগরণে তুই হয়ে ওঠ, ওদের নয়নের মনি। হার্টথ্রব। উপাস্য। তোর নলিতে নীলরক্ত। তোর চোদ্দগুষ্টি জীবৎকালে, পার্ট টাইম হলেও, রাজা হয়েচে! তুইও হবি নিশ্চয়। কোমরে ঘুন্সি এঁটে এইবেলা একটু ভোটের মাঠে নামো দিকি ধড়াচূড়া পড়ে; পারিবারিক ইতিহাসের গুণ কীর্তন করে, রঙেদের দিল দরিয়ায় তুফান মাচিয়ে দাও দেখি বাপ্টুসোনা আমার!

    শাহজাদা : তাই-তাই-তাই, কি মজা, কি মজা, আম্মো রাজা হমু! হাতেমতাই! কি মজা, কি মজা, কি মজা, রাজা হবো! মস্তি মারি লে... তাই-তাই-তাই...

    ১১

    সঙ্গমরত ভগমান ও ভগমানি। স্বভাবতই জামাকাপড়ের ছিরিছাঁদ নেই। তায় শিল্পকলা। চিত্র ও কল্প। তেলরঙ। কালার। এমন এক বস্তু, গুঌ গোয়ালে সক্কাল সক্কাল সেঁটে দিয়েছে বুর্জোঁ। কারণ সে নাস্তিক। বিশ্বাসীদের ঘেন্না করে। সে মনে করে শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের পক্ষে ধম্মো প্রধান অন্তরায়। কারণ তা বিভাজন তৈরি করে। বিভেদ করে রঙে রঙে। হক কথা।

    কিন্তু মুশকিল হলো, বুর্জোঁ লাল্লাপন্থীদের ব্যাপারে স্পিকটি নট, ওদের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সাইড কাটায়। তার এই দ্বিমুখী নীতি সাধারণ, ধাম্মিক রঙ সমাজকে লালেদের বিরুদ্ধে যেতেই উৎসাহিত করছে। কারণ, এ গোলকের শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, আপামর রঙ মনে প্রাণে ধাম্মিক। সংস্কারী। আস্থা চ্যানেলে ভরসা রাখে। তারা এক প্রকার গেরুয়া। ধম্মো গরীবের খড়কুটো, ডুবন্তের বাঁচার দড়ি। শেষ রক্ষা হবে না জেনেও, মানসিক, মানত, জল পড়া, থানে হত্যে, একাদশী, উপবাস, বলি ইত্যাদি। বিশ্বাসের ভীত ও কারবার বড় মারাত্মক। জীবন থাকতে তার নড়ন চড়ন খুব বেশী হয়না। কটা রঙ নাস্তিক? কটা? কর গুনে নাম বলে দেওয়া যায়। সংখ্যাতত্ত্বকে অস্বীকার করা বেকুবতা। লাল তাই করতে চেয়েচে। সংখ্যালঘুর মালা জপতে, সংখ্যাগুরুর ভরসা হারিয়েছে। এবং তার দ্বিমুখী ভেদ নীতি। যেখানে কল্লা যাওয়ার ভয়, সেখানে চুপ। এখন বাতাসে কান পাতলে রঙেদের মুখে লাল সম্পর্কে এইরকম অ্যাসেসমেন্ট শোনা যায়। মূল্যায়ন ঠিক নাকি ভুল, তা নিয়ে বুদ্ধিজীবদের মধ্যে তক্কো চলতে পারে, কিন্তু তক্কো করে মন পাল্টানো যায় কি? আবার এই নাস্তিক্য নীতি লালদের ক্ষেত্রে বুমেরাং আর গেরুয়াদের বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রেণিহীন সমাজ তৈরি করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে এলিট শ্রেণি। যারা সাধারণের ধম্মোকে ব্যঙ্গ করে। ঘেন্না করে। খিল্লি করে। ফলে সাধারণ রঙ সমাজ, যারা একদিন লালকে আপনার ঘরের লোক ভাবতো, তারা পিঠ দেখাচ্ছে। ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে। এর ভরপুর ফায়দা লুটছে গেরুয়া। গেরুয়া সাধারণ রঙদের অন্ধবিশ্বাসী হতে, কুসংস্কারী হতে, সিউডো সাইন্সে মজতে, ধম্মোকে মাথায় তুলে নাচতে নতুন করে তোল্লাই দিচ্ছে। অচ্ছে দিনের স্বপ্ন বেশ সফলতার সাথেই বিপণন করছে।

    অথচ লালের হাতে অফুরান সুযোগ ছিল। আছেও। প্রকৃত বিজ্ঞান কে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার। বিশ্বাসের অন্ধ পর্দা সরিয়ে বিজ্ঞানের আলো জ্বালানোর। রঙেদের মননে গেঁথে থাকা অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের জঞ্জাল সাফ করার জন্য সুপরিকল্পিত অ্যাজেন্ডা গঠন ইত্যাদি। সর্বস্তরে রেনেসাঁ আনার জন্য সহানুভূতি ও ধৈর্যের প্রয়োজন। আমি পণ্ডিত, আঁতেল; তোরা গোমূর্খ --- এই খিল্লি ও অপমানের পথে রঙেদের মন জয় করা দূরস্থান, বরং আরো দূরত্বই বাড়বে। শুধু গুটি কতক বিশ্ববিদ্যালয় আর সোশ্যাল মিডিয়ায় গলাবাজি ও এলিটগিরি ফলানোই সার হবে।

    ইদানীং মাভৈ যত রঙ দুনিয়ার গভীরে ঢুকছে, তত তার চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতাগুলি ডায়রি আকারে লিখে রাখার তাগিদ বোধ করছে। আজও বুফেতে লগ ইন করা মাত্র তার নজর পড়েছে এই ছবির দিকে। চাড্ডি, সংঘী, নবকমি, দেশীসেকু, কঙ, তিনু সহ মাকু, ছাগু, ছদ্মসেকু, ভ্যামপ্যান্টি ভাইলোগ তথা ইয়ারদোস্তোদের সক্কলকে ট্যাগিয়ে দিয়েছে বুর্জোঁ। এবার লাগ ভেল্কি লাগ। নোটিফিকেশন আর কমেন্টের বন্যা। লাগ লাগ লাগ। লগে লগে ময়রার মিষ্টিরসে মধু মক্ষীয়াঁ আ হি যায়েঙ্গে। আপাতত মাভৈর ডায়রি বন্ধ করে এইবেলা সাইড ফেন্সে আসন গেঁড়ে বসুন। নাটক চলতে থাকুক...

    মদনা : চোদনা শালা হারামি, তোর বাপ মা পানু করে তোকে বিইয়েছে না? নিজের বাপ মা’র সঙ্গমের ছবি লটকা গুমারানির ব্যাটা। মুলো খেলে মুলোর ঢেকুরই তো তুলবি স্লা।

    হনুকপি : বুর্জোঁ কিন্তু লাল্লা বা নবীনজীউ কে নিয়ে কিছু চিপকোয় না! তখন ভয়ে ভক্তিতে ল্যাও শুকিয়ে যায়। ঘর জ্বালানি পর ঢলানি কাঁহিকা। মাদারবোর্ডের বাচ্চা।

    লাল্লামতী : তোদের তো আশি প্রতিশত গোজিন। বুদ্ধি বাঁটে। ব্যক্তি আক্রমণ ছাড়া আর জানিস কি চাড্ডিচুডী।

    আউলক্ষ্মী : দেশহীদ্রো খানকি মাগী! চুপ মার। যা না কাঁটা তারের ওপারে। এখানে থাকতে হলে ভগমানে মতি রাখতে হবে। তোদের তো আবার শ্লীল অশ্লীল বোধ নেই। দুধের বাচ্চাকেও তোদের নবীনজীউ লাগিয়েছিল। শরীর বেচে খাস, লজ্জা শরমের তুই কি বুঝবি...
    লাল্লামতী : তোর যে দশটা বাপ আছে, তাদের পয়সায় আমি ছোঁচাই না রে ভাতারখাগি। শিল্পোর তোরা কিছু বুঝিস? তোদের ধম্মের স্থাপত্য গুলো দেখিস ভালো করে। ন্যাংটো দ্যাবা দ্যাবীদের সঙ্গমের মূর্তিতে ছেয়ে আছে। তোদের মুখে অন্তত যৌনতা নিয়ে এই নাকি কান্না মানায় না।

    যোগীনাথ : ওসব দাসী মূর্তি। অন্ত্যজদের জীবন চিত্র। আমাদের দ্যাবা দ্যাবীরা ওসব অসভ্য কাজ কদাপি করেননি। তাঁরা বাল বেহ্মচারী। তাঁদের কক্ষনো বীর্যপাত হতোনা। কেবল দৃষ্টি বিনিময় করেই তেত্রিশ কোটি পপুলেশন গড়েছিলেন।

    লালচেখভ : পড়াশোনা করে কথা বল গোহনুর দল। তোদের শাস্ত্রে বিস্তর যৌনতা আছে। প্রতিটা পাতায়। ইরোটিকা টিকটিকি সর্বত্র টিকটিক করছে তোদের গুহাচিত্রে, ধামে, কাব্যে, দর্শনে, যোগে, বিয়োগে, গীতিকায়, পালাগানে, প্রবচনে, পুরাণে... পড়গে যা। যত্তসব হেঁপো রুগী...

    যোগীনাথ : আর তোদের তো সবই ইনসেস্ট। ঘরের বাইরে যাওয়ার দরকার পড়েনা। ভাইতে, বোনেতে, মামাতে, বোনঝিতে, বাপে, বেটিতে, ছেলের বৌ, শ্বশুরে, মা’তে, পো’তে... বলে শেষ করতে পারবো না। হলেই হল। সবাই সবাইকে লাগাতে পারে। তোরা ঝাড়ে বংশে গোটা প্রজাতিটাই নাপাক।

    চেয়ারম্যান : আপনারা ইতিহাস অসচেতন। নিজের ইচ্ছেমতো মনগড়া কথা বলছেন। নিজদের ‘অহো রূপং’, ‘অহো রূপং’ বলে কঁকানো তিন মাথা দাঁড়িওলার কথা ভুলে গেলেন? তখন ইনসেস্ট মনে পড়েনি?

    কোবিকা : ওসব প্রক্ষেপ। বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। আমাদের খাঁটি, বিশুদ্ধ, পবিত্র সম্পর্কে, বিদেশীরা জল মিশিয়েছে। আমিও কোবতে লিখি। আঁকি। কোটি কোটি দামে সেসব শিল্পো সামগ্রী কেনার খদ্দের আছে। লাল্লা, নবীনজীউ, দ্যাবা, দ্যাবী, ভগমান কেউ এসব ইনসেক্ট না ছাতার মাথা --- এসব কিছু করতে পারে? কদাপি না। মুই তোনকার চে কিচু কম জানিনি...

    জোহুজুর : দিদি হক কইছেন। দিদি আমার কত্ত জানেন! চপ্পলে চপ্পলে পেন্নাম দিদি গো। ওরা নবীনজীউর জন্মদিনে মুয়ে, পঙায় সাইলেন্সার লাগিয়ে রাখে। আর মোনকার পবিত্র মোচ্ছবের দিনে, পুন্নিমের দিনে গোয়ালে এসব সাঁটিয়ে খিল্লি মারবে ভেবেছে? মাই কা লাল আছিস তো কলিজা ঠুকে দাঁড়া, আঁছোলা ঢুকিয়ে দেব। পোঁটা ফেটে ছেদরে পড়ে থাকবি।

    চেয়ারম্যান : এরা সব মোর্যােল পুলিশ। নীতি গোগুরু। আমাদের এই গোলক একদম আদিতে বিলকুল খুল্লমখুল্লা ছিল। কে কাকে লাগাতো, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতো না। হক্কলে হক্কলের ইচ্ছে মতো সেক্সাতো। লাল্লাপন্থীদের এ বিষয়ে এখনো কিছু মিল পাওয়া যায়। তারা উদার, অন্তত এ ক্ষেত্রে। তোরা যারা খ্যামটা নাচ নাচছিস ঘোমটা মাথায়, তারা নিজদের পুঁথিগুলো আঁতিপাঁতি করে পড়ে দ্যাখ।

    মদনা : পথে এসো বাওয়া। তোদের ঐ নবীনজীউর কডজন পোষা অঔরত ছিল যেন? তাদের মধ্যে অর্ধেকের আবার আট পেরোয়নি। ফুল খসেনি। তাও লাগিয়েছে। নিজের পঙায় গু থাকতে অন্যের গর্তে নজর কেন চাঁদ? তোদের কল্লা যাওয়ার খুব ভয়। এদিকে বিপ্লব মারানোর খুব শখ! তাই সস্তা পাবলিসিটি পেতে এসব চিপকাস।

    আউলক্ষ্মী : বিপ্লবী না ফুল্ললিত পল্লবী! ঝুটা মাল কাঁহিকা। পারবি এই গোলকের জন্য সচমুচ রক্ত ঝরাতে? পরদেশীদের জন্য মড়া কান্না কাঁদছিস? লজ্জা করে না? ন্যাকড়াবাজি পেয়েচ না? যত্তসব বুফে বিপ্লবী... কেঁচোর আবার কেউটে হবার শখ! ঐতো টিমটিমিয়ে কয়েকটা টিকে আছিস! তোদের আবার এত্ত কতা...

    লাল্লামতী : সংখ্যালঘু বলে যা ইচ্ছে বলবি নাকি চাড্ডি হনু? যুক্তিতে না পারলে তোদের মতো এঁড়ে তক্কে আর কে আছে! মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে আলবাল বকে চলেছিস তকন থেকে। বাই দ্য ওয়ে, সংবিধান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, নিজেদের মতো করে ভজার। তোদের এত মাতব্বরি কিসের? গোচনা খেয়ে খেয়ে বুদ্ধি শুদ্ধি একদম গোড়ালিতে নেমে এয়েচে তোদের। শিল্পো বুইস না, সাহিত্য বুইস না, কলা বুইস না... আমরা এলিট। আমাদের সাথে তোদের তুলনাও চলে না, এক সারিতে বসাও চলে না। যা, ঘাস পাতা চিবোগে যা...

    যোগীনাথ : আমরা সাধারণ। খেটে খাওয়া রঙ। আমরা আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করি। আমাদের সমোস্কার আলাদা। আমরা নিজেদের গোলককে জান দিয়ে ভালোবাসি। তার জন্য রক্ত ঝরাতে আমাদের ডর নেই। আমরা আমাদের ভগমান, ভগমানির জন্য সব করতে পারি। তোরা উগ্রপন্থী। বোম মারিস। জেহাদি। কোনো গোলক তোদের পছন্দ করে না। সব হাওয়াই বন্দরে তোদের সব ফুঁটো আর গর্ত চেক করে তবে পাসপোর্ট দেয়। তোরা বুদ্ধিবীজী, ছদ্মসেকু, দেশহীদ্রো, সেক্সম্যাকনিয়া, আলবাঁতেল। তোদের পেঁদিয়ে লাট করা উচিৎ। তোদের মুণ্ডু নিয়ে আমাদের ভগমান ডুগডুগি বাজায়। আমরাও বাজাবো। এই গোলকে থাকতে গেলে, আমাদের সমোস্কৃতি তোদের মানতেই হবে। তোরা কুত্তী কি ওঁলাদ, পাপী...

    ১২

    মৌলবাদ। রঙ দুনিয়ার নিউক্লিয়াস। এখানে যুক্তির জ্যাঠা বিশ্বাস। যুক্তি বলে যেটুকু অংশের দাবী, তা কু। আদপে তা যুক্তি নয়। তা আদতে বিশ্বাস। যুক্তির আলখাল্লায় ও মুখোশে। এই দুনিয়ায় বিশ্বাসই যুক্তি। বিশ্বাস যেমন যেমন, যুক্তি তেমন তেমন। যেন বিশ্বাস অনুযায়ী যুক্তি। বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তির অবতারণা; তা যতই অপযুক্তি, কুযুক্তি বা আদৌ যুক্তি না হলেও! রঙ দুনিয়ায় দু প্রকার বিশ্বাসী। এক, ভক্ত। দুই, নাস্তিক। দুই পক্ষের ভজ্য এক। তার নাম নানান। গদ। ভগমান। লাল্লা। ইত্যাদি অষ্টোত্তর শতনাম। প্রথম পক্ষ ভক্তিতে ভজে। দ্বিতীয় পক্ষ শত্রু রূপে ভজে। দুপক্ষের কেউ একটি বারের তরেও বলে না, ‘উহা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। আমার ঐ বিষয়ে মাথা ব্যথা নেই।’ এর বাইরে আছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তারা লুপ্তপ্রায়। এসব বিশ্বাসে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা এলিয়েন। অন্তত এই দুই বিশ্বাসী’র চোখে। এই তৃতীয় পক্ষের খবর পরের পর্যায়ের জন্য তোলা থাক। আপাতত আমরা বিশ্বাসীদের দুই প্রজাতির উপাখ্যান শুনি। বিশ্বাসীদের বিশ্বাস, তাদের বিশ্বাস একমাত্র যুক্তি যুক্ত, বাকিদের বিশ্বাস, ঠিক সঠিক বিশ্বাস নয়, সে বিশ্বাসে জল আছে, তাকে অবিশ্বাস করা চলে, কারণ সেই বিশ্বাসে এদের বিশ্বাসের মতো যুক্তি নেই। প্রত্যকে বিশ্বাসীর এক রা, ‘তোরা তোদের বিশ্বাস বর্জন করে আমার বিশ্বাসে বিশ্বাসী হ।’

    এবং এই বিশ্বাসের ভার, যা জগদ্দল প্রমাণ, তুমি বহন না করলেই তোমাকে দেগে দেওয়া হবে! “আমি বিশ্বাস করি” ---- এটি একটি ব্যক্তিগত বুলি। কিন্তু, “আমি যা বিশ্বাস করি, তা সকলকে ঘাড়ে ধরে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বো” ---- এটি ক্ষমতার ভাষ্য, মৌলবাদ। প্রথমটি ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ। দ্বিতীয়টি সমাজ, সংসার, সমষ্টির ওপর চাপিয়ে দেওয়া ফতোয়া, বিধান। অনাশ্চর্যের বিষয় এই যে, রঙ দুনিয়ায় ‘ফগ’ নয়, এটাই চলে। মৌলবাদ।

    এই মৌলবাদের একপিঠে চাড্ডি, সংঘী, ভক্ত, দেশীসেকু, ছাগুরা প্যারাইসো বাসের নিশ্চিত টিকিট, ব্ল্যাকে বিক্রির কারোবার ফাঁদে। সেই বিশ্বাসের খরিদ্দার না হলে, বিশ্বাসের প্রতিবাদে নিজ বিশ্বাসের কথা ঘোষণা করলে, কল্লা নামে। ধড় থেকে মুণ্ডু অলগ। জ্যান্ত শিক কাবাব বানানো হয়। উড়ে এসে মুখে বসে বেলুন ভর্তি অ্যাকোয়া রিজিয়া। বদন এমন পাল্টে দেওয়া হয়, কোনো প্লাস্টিক, কোনো সিলিকনেই মেক ওভার সম্ভব নয়। এনাদের বিশ্বাসের একটি উইং যদি ধম্মো হয়, আরেকটি উইং খাওয়ার-দাওয়ার। অমুক খেলে তশুক হয়। নিরামিষে এই গুণ। আমিষে ঐ বে-গুন। এটি আবার ধম্মো ভেদে বিপরীত ক্রমে সত্য! মাংস তো মাংস-ই, তার আবার আড়াই প্যাঁচ, তার আবার ঘুসুর কিবা গো! আছে আরো।

    বিশ্বাসীদের কথা মাত্র একটি। মরার পর কিভাবে অমর হওয়া যায়, তারই খলে প্রস্তুত বিশ্বাসে মিলায় প্যারাইসোর আশ্বাস। এই জীবন নাকি পরজীবনের গাঁঠরি বাঁধার জন্য। ঠিকঠাক বাঁধাছাঁদা হলে সেই অলৌকিক দুনিয়ায় ফ্রি সেক্স, চির যৌবন, এবং আরো যা যা গোপন ইচ্ছে থাকে, যা ইহ জনমে পাপের ভয় করে উঠতে পারে না রঙেরা, তার অবাধ লাইসেন্স। তো এহেন স্বপ্নের, আশ্বাসের, বিশ্বাসের বাজার ভালো হবে বৈকি! এ বিশ্বাসের সেই একটাই এডিশন। আকাশ মার্গ থেকে থুৎকারে উড়ে এসেছে, ইহ ও পরজীবনে ভালো থাকার অপৌরুষেয় বাণী! তাই তার এডিটিং সম্ভব নয়। পরিমার্জন সম্ভব নয়। পরিবর্তনে বিশ্বাসীদের বিষম ভয়। শুধু পুরানো জামাকাপড়ের বদলে নতুন বাসনের ক্ষেত্রে, পরিবর্তনে ছাড় আছে! বিশ্বাসী স্থাণু। জড়। প্রাগৈতিহাসিক। অলৌকিক প্রিয়। ‘সকল রোগের যখন পাঁচন এক, চন্নামৃত; তখন সকল রঙের বিশ্বাসই বা এক হইবে না কেন?’ এই ইহাদের যুক্তি! এই বিশ্বাস নিরেট। বিশ্বাসে না মিললে, সান্ধ্য প্রেয়ারের আখড়ায় উদ্বাহু নেত্য না নাচিলে; তোমায়, তোমার গুষ্টি শুদ্ধ বেটি-বৌ হক্কলকে, ন্যাংটো করে নগর সংকীর্তন করানোটাই রুল। তা আবার ভিডিও রেকর্ডেড হয়ে প্রসাদী ফুলের মতো ছড়িয়ে পড়বে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিমিষে এক্কেরে ভাইরাল। এপ্পর হাসি হাসি পরতে ফাঁসি, সকল ভিক্টিম বাধ্য। কারণ, এইসব সামাজিক শুদ্ধিকরণের পর জীবন ও মৃত্যু আর অন সেম পেজ।

    পাতার উল্টো পিঠে, বুদ্ধিবীজী, ছদ্মসেকু, মাকু, সবজান্তা, এলিট, আলবাঁতেল মহোদয়গনের অন্যরকম বিশ্বাসের ঠেলা সামলানো আর এক দায়। ইহারা বিপ্লবে বিশ্বাসী। অন্য গ্রহে কার একগ্লাস জলে একটি চুল পড়িয়াছে, তার জন্য এ গোলকে বিপ্লব। এদিকে নিজের পাড়ায় যদি অন্য বিশ্বাসের রঙ হাজারে, হাজারেও মরে, তখন কুছ পরোয়া নেহি। বুফে বিপ্লবী ইহাদের ডাকনাম। কেউ সেলাম ঠুকুক বৈ না ঠুকুক, তবু এরা স্বঘোষিত মোড়ল। এদের ষড়েন্দ্রিয়, সংবেদন, সিম্প্যাথি, অনুভূতি ইত্যাদি সকল প্রভেদক ভেদ্য। একচোখামো এনাদের লক্ষণ, প্রমাণ, বিশ্বাস। যদিও এঁদের বিশ্বাস, এনারা নিরপেক্ষ, তবে প্রাণের ভয় বড় ভয়। তাই পোতিবাদ করেন, বিপ্লব করেন, নাগরিক মঞ্চ গড়েন; যেখানে প্রাণের ভয় নেই। নিজ ঈজম ও ইমেজ প্রতিষ্ঠার জন্য যতদূর নীচে নামা যায়, এঁরা অলরেডি তারও বেশী নীচে নেমে গেছেন। ইহাদের অ্যাজেন্ডার মূল বিশ্বাস ---- চাড্ডি, সংঘী, ভক্তকুল যা বলবে, করবে, ভাববে ঠিক তার উল্টো পোঁ সাধা। এই নিদারুণ বিশ্বাসের দরুন, এঁরা হয়ে পড়েছেন চাড্ডিমুখাপেক্ষী। অপরেরে বিশ্বাসে আঘাত করাটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এঁদের বিশ্বাস। যেন ভক্তরা কর্তা আর মাকুরা কর্ম।

    আবার এনাদের কথায় ও কাজে বিস্তর ফারাক। যে আইন নিজে মানে না, তা অন্যকে মানিয়ে ছাড়ায়। এঁরা সেই শ্রেণির বুদ্ধিজীব, যাঁরা জ্যাঠামশাই না হওয়ার ভান করেন। এঁরা সরাসরি জ্ঞান দেন না, কারণ জ্ঞান বিতরণ স্বভাব গুনেই মন্দ। নীতি পুলিশ হওয়া থেকে কায়দা করে দূরত্ব রাখেন। বুদ্ধিজীবের সকল রাজনৈতিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষণ-প্রমাণ কপিবুক ও চোথাসহ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। কিন্তু, কথায় এক আর কাজে আর একের সূত্রপাত, ব্যক্তিজীবন থেকে। নিজ নিজ কাচ্চাবাচ্চা, পোলাপান পালনের ভূমিকায় ও ক্ষেত্রে। তখন আমদানি হয় সিকিউরিটি, কালো কাচ চারচাকা, পরদেশী গাড়ি। নিজ জীবন কায়দা যাপনে, কনিক্যাল ফ্লাস্কে মেপে স্কটল্যান্ডীয় স্কচ, হাফ পেগ, বীর্যবর্ধক! শুধু চা, হাফ কাপ... ইত্যাদি। বিষমদে আমগাড়লেরা মরলে, এঁরাই পুচ্ছ তুলে সর্বাগ্রে বলেন, ‘আমি জ্ঞান দেই না, কিন্তু বলেছিলাম বটে, পঞ্চ ম’কারের কুফল। মিললো তো!’ এঁরাই গাহি সাম্যের গান গান, পৈতৃক সম্পত্তির কোলে বসে, যা নাকি জমিদারী বনেদিয়ানায় হেরিটেজ। হেরি তেজ এহেন, ডাইনোরও চোখে পানি নামে। এঁরা অভিজাত। কিন্তু শ্রেণিহীন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই পরিচয়। এঁরা এলিট। তবে দেখান্তি বিড়ি ও গোপনে মার্লবোরো ফোঁকায় ওস্তাদ। দুর্ভিক্ষ এঁদের শিল্পসুষমা। এঁদের বিশ্বাস একাডেমিক। প্রতিষ্ঠান ভাঙার জন্য এঁরা আরো আরো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সিস্টেম ভাঙতে নিজেরাই হয়ে ওঠেন সিস্টেম। এঁরা চোরকে বলে দেন কোন্ গৃহস্থের বাড়িতে চুরি করলে ধরা পড়বে না, আবার গৃহস্থকে ইঙ্গিত দেন চোরের। এঁরা আগারও খাবেন, গোড়ারও গুড়োবেন। ভাসমান জীব দু নৌকার। প্রকৃত প্রস্তাবে ইহারা নিজ নিজ বিশ্বাস বিক্রির মোনোপলিওলা।

    হৃদয় ও মাথা, দুই এক করে, লেখায় মগ্ন মাভৈ। খস্তিপাঁচালী আর খেঁউড়কীর্তনের যে আসর চলছিল গুঌ গোয়ালে, নোটিফিকেশন মাঝপথেই মিউট করে দিয়েছে সে। সে জানে, এইসব বর্জ্যের কোনো নিকাশ নেই। ভিসিয়াস সাইকেলে চলতেই থাকে ধবংস নির্মাণের কাজ। এই ধ্বংসের ভিতর দিয়ে যাত্রার বোধহয় অন্ত নেই, আদি নেই। একটি সাইকেল শেষ হলে অটোমেটিক আর একটি সাইকেল শুরু হয়। পর্যাবৃত্ত গতিতে। যেন ইনফিনিটি লুপ। ফ্র্যাক্টাল স্ট্রাকচার।

    (প্রথম পর্যায় সমাপ্ত)
  • T | 229.75.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৪১366207
  • বোরিং।
  • সিকি | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫৪366208
  • এই অ্যাতোটা পড়তে হবে? কী দোষ করেচি আমি?
  • sch | 37.25.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:৩৬366209
  • এর executive summary তে যদি লিখি "বাল" - কেউ কি আমায় মারবে?
  • PM | 113.219.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:১২366210
  • ইস্টাইলটা মনে হচ্ছে লক্ষণের শক্তিশেল
  • dd | 59.207.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:৩৬366211
  • বড়ো করেই লিখি।

    লেখার স্টাইল তো দারুন। খুবই স্মার্ট।বেশ কিছু মনে রাখার মতন বাক্য আর শব্দবন্ধ।

    চন্দ্রিলের কথা মনে আসে। তারও দুর্দান্ত স্টাইল, কিন্তু নিজের লেখার প্রেমে পড়ে আর থামতেই পারে না। যেটা এক পাতায় ঝলমল করতো সেটা ক্লাস এইটের হিস্ট্রী পরীক্ষার খাতার মতন ফেনিয়ে ফেনিয়ে চলতেই থাকে। গোদা বাংলায় যাকে বলে ব্রেভিটি ইস দ্য সোল অব উইট - সেটা খেয়াল রাখে না।

    এটা সুন্দরমের লেখাতেও পেলাম। এহ বাহ্য। নিশ্চয়ই পরের লেখাটা খুব টান টান হবে। আশা করছি আর অপেক্ষাও।
  • সুন্দরম | 55.249.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ১০:১২366212
  • প্রিয় dd, আপনার বিশ্লেষণ মাথায় রেখেই বলি, কিছুক্ষেত্রে ভেঙে বলার জন্য, মাইক্রস্কপিক ভিউ দেওয়ার জন্য, ফেনিয়ে লিখতে হয়েছে। ধন্যবাদ, আপনি লেখাটা পড়েছেন বলে। আসলে কিছু বিষয় এমনই যে, বার বার মনে করিয়ে না দিলে লোকে ভুলে যায়...
  • সুন্দরম | 55.249.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ১০:১৪366213
  • ধন্যবাদ PM...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন