এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ বরফ ঢাকা স্পিতি

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ মার্চ ২০১৭ | ১৪১৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • S | 83.23.***.*** | ৩০ মার্চ ২০১৭ ১৭:০২365806
  • পড়ছি। খুব ভালো হচ্ছে।
  • r2h | 76.87.***.*** | ৩০ মার্চ ২০১৭ ১৯:৩১365807
  • আরে খুবই মন দিয়ে পড়ছি। মন্তব্য না করলে বোঝা যায় না তা ঠিক।
  • de | 192.57.***.*** | ৩০ মার্চ ২০১৭ ২০:০৮365808
  • পড়ি তো - রোজ একবার করে দেখে যাই -

    কিন্তু ছবিগুলো এখেনে দেবা যায় না? লিন্কে ক্লিকালে বড্ড সময় নেয় ওপেন হতে - অতো সময় কই জেবনে?
  • r2h | 174.114.***.*** | ৩০ মার্চ ২০১৭ ২১:১৬365809
  • অত্যন্ত ভালো লাগছে।
    এইসব উঁচু উঁচু পাহাড়ি পথঘাটের গল্প পড়ে আর ছবি দেখেই পায়ের পাতা কনকন করে। গতবছর সেই বেড়াতে গেছিলাম, সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে কমাইল যেন একটা লম্বা এক লেনের ব্রীজ ছিল। সে প্রায় মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কেঁদে ফেলার দশা। সাইডে দাঁড়ানোর জায়গা থাকলে নিশ্চয় দাঁড়িয়ে যেতাম। তার আগে হেমন্তশোভা দেখতে গিয়ে ভয়ের চোটে গাড়ি চালিয়ে পাহাড়ে ওঠাই কাটিয়ে দিলাম।
    পড়ে পড়ে যদ্দূর পারি রোমাঞ্চ করে নিচ্ছি।
  • swati | 52.***.*** | ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:১২365810
  • পড়ছি মানে? হা পিত্যেশ করে বসে থাকছি পড়ার জন্যে!
  • সিকি | ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ১৬:৩৮365811
  • এর পর? এর পর আর কী-ই বা থাকতে পারে লেখার? ছ'টা না আটটা রুটি খেয়েছিলাম মনে নেই, কিন্তু সেই হাড় হিম করা ঠাণ্ডা রাতে সদ্য কুকার থেকে নামানো চিকেন কষা আর গরমাগরম ফুলকো রুটি উনুনের পাশে বসে খেতে যে কী আনন্দ, কী বলব!

    বরফের রাজ্যে আপাতত আজই শেষ রাত্রি। কাল থেকে নিচে নামা শুরু। এ যাত্রায় ফুল সার্কিট হল না। কী আর করা, আবার আসা যাবে না হয়। এখন সেই রামপুর হয়ে শিমলা দিয়ে ফিরতেও দুদিন। কাল কাজায় থেকে গেলে সেখান দিয়ে মানালি হয়ে ফিরতেও দুদিনই লাগত।

    ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি, দিন ৪
    ----------------------------------

    ভোর হল। আজ এই গোটা হোমস্টে-তে আমি একা। রাস্তার ওপর উঠে এলাম ঘর থেকে বেরিয়ে। ঠাণ্ডা যেন সর্বাঙ্গে কামড়ে ধরল। ওপরে নীল আকাশ, তাতে ইতস্তত ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ, আর, আর চারদিকে বরফের ঔজ্জ্বল্য যেন আরও বেড়েছে। বেড়েছে পরিমাণেও। কাল সারারাত বরফ জমেছে প্রচুর। কাজাতে তুষারপাতও হয়েছে মনে হয়।

    বাইকের সীটেও বরফের লেয়ার। হাত দেবার আগেই জানি, আজও স্টার্ট নিতে সমস্যা হবে। আজ আর ঠেলে তোলার বা সেখান থেকে গড়িয়ে নামিয়ে দেবার আর কেউ নেই। কেরালিয়ান দুজন তো কালকেই চলে গেছে, সঙ্গের জনতাও কাজায়, কখন ফিরবে জানি না, আমাকে বেরিয়ে পড়তেই হবে নটার মধ্যে। চাবি লাগিয়ে স্টার্ট বাটন চেপে ধরলাম।

    না, বাইক স্টার্ট হল না। খ-খ-খ করে আওয়াজ দিয়ে বোঝাল, ঠাণ্ডা লেগে গেছে, এখন গরম হতে সময় লাগবে। হাল ছেড়ে দিয়ে লাভ নেই। একটু করে থামিয়ে আবার স্টার্ট দেবার চেষ্টা করি। চেপে ধরে থাকি। নিরন্তর খ-খ-খ-খ শব্দের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অভিজ্ঞ কান বোঝে, শব্দটা আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে, দু এক সেকেন্ডের জন্য জীবনের স্পন্দন আসছে যেন।

    হ্যাঁ, কুড়ি পঁচিশ মিনিট লাগাতার চেষ্টার পরে বাইক স্টার্ট নিল। এই ডিটিএসআই বাইকের একটা সুবিধে - এখানে শুধুই সুইচ টিপে স্টার্ট দিতে হয়, কিক স্টার্ট দেবার কোনও অপশনই নেই, ফলে এই ঠাণ্ডায় পরের পর কিক মেরে গা-গরম বা অক্সিজেন খরচ - কোনওটা হবারই উপায় নেই।

    সকাল আতটা বাজল। হোমস্টে-র ছেলেটার আসতে এখনও আধঘণ্টা। ও সাড়ে আটটার আগে আসে না। ধীরেসুস্থে একটা একটা করে লাগেজ ওপরে নিয়ে এলাম। অনেক কিছুই বাড়তি আনা হয়েছে, স্লিপিং ব্যাগ, স্নো-চেন। কোনওটাই কাজে লাগল না এ যাত্রা। এবার ফিরতি পথের বাঁধাছাঁদা। ধীরে ধীরে হালকা সোনালি রঙের রোদ এসে পড়ল আমার লাগেজের ওপর, সাড়ে আটটা বাজার একটু আগে হোম-স্টে-র ছেলেটা চলে এল (ওর নামটাই জানা হয় নি দুদিনে, বার বার হোমস্টে-র ছেলেটা বলতেও খারাপ লাগছে)। সাথে সাথে উনুন জ্বালিয়ে গরমাগরম চা করে খাওয়াল। দুদিনের হিসেবনিকেশ করে টাকাপয়সা বুঝিয়ে দিয়ে ঠিক নটার সময়ে বাইক স্টার্ট দিলাম। এবার মূলত নিচের দিকে নামা, আর খুব বেশি ওঠার নেই। প্রথম গন্তব্য পুহ্‌, যেখানে আসার দিনে মিলিটারির ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ খেয়েছিলাম। আজ আর সেখানে লাঞ্চ করার ইচ্ছে নেই, যতটা পারব এগোতে হবে, তবে দাঁড়াতে তো একবার হবেই। দুদিন মোবাইলের নেটওয়ার্কবিহীন - পুহ্‌তেই প্রথম এয়ারটেলের সিগন্যাল পাবো।

    নাকো থেকে নামতে শুরু করলাম, কিন্তু বরফের কমতি নেই। নামছি, নামছি, বেশ কয়েকটা হেয়ারপিন বেন্ড, রাস্তার ধারে ধারে বরফ জমে আছে, রাস্তার মধ্যে স্লাশ জমে আছে - বরফগলা জল আর কাদা। বেশ কয়েকবার পিছলে যেতে যেতেও সামলে নিলাম। এর মধ্যেই ওপর থেকে হুশহাশ করে এসে আমাকে ওভারটেক করে বেরিয়ে গেল হিমাচল ট্র্যান্সপোর্টের একটা বাস। কী করে ওই বরফের মধ্যেও অত তাড়াতাড়ি চালাচ্ছিল, কে জানে!

    বেশ অনেকটা যাবার পরে ফাইনালি বরফমুক্ত রাস্তা পেলাম। তবে স্পিড বাড়ানোর উপায় নেই, রাস্তা খুবই খারাপ চলবে পুহ্‌ পর্যন্ত। তার পরে একটু ভালো রাস্তা পাবো রিকং পিও পর্যন্ত, তার পরে ... সবই জানা এখন।

    পকেটে একসাথে পর পর বেশ কয়েকটা ভাইব্রেশন ফীল করতে পারার পরে বুঝতে পারলাম মোবাইলে প্রাণ এসেছে, আমি পুহ্‌ এসে গেছি। ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। Tri-Peak লেখা সেই আর্মি এসট্যাবলিশমেন্ট ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে রাস্তার ধারে বাইক থামালাম। পর পর মেসেজ ইত্যাদি চেক করলাম। আমার অফিসের এক জুনিয়র তাদের "বুলেট ক্যাফে"র দলবল নিয়ে আসছে এই রাস্তাতেই, ওরা আজ যাবে টাবো। ফোন করে জানলাম, ওরা ওদের কাল রাতের আস্তানা থেকে বেরিয়ে পড়েছে, যে কোনও মুহূর্তেই দেখা হয়ে যাবে।

    তা, দেখা হল। পুহ্‌ থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে স্পেলো বলে একটা জায়গা আছে, সেইখানে দেখা হল এই বুলেট গ্যাং-এর সাথে। সেই ছেলেটি তো আছেই, দলে শামিল তার বাবাও, সত্তর বছর বয়েসী এক সৌম্যদর্শন যুবক। তিনিও একটি বুলেট চালিয়ে চলেছেন দলের সাথে।

    সাড়ে তিনটে নাগাদ পওয়ারি বলে একটা জায়গায় থামলাম, ছোট্ট গ্রাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম, রিকং পিও অনেকক্ষণ আগেই পেরিয়ে এসেছি, এখন আমি রামপুর থেকে মাত্র পঁচানব্বই কিলোমিটার দূরে। ঠাণ্ডার ভাব আস্তে আস্তে কমে গেছে। দেখতে দেখতে এসে গেল করছাম, আর শেষ হল খারাপ রাস্তা। এর আগে প্রায় পনেরো কিলোমিটার রাস্তা প্রায় পাথরের ওপর দিয়ে চলতে হয়েছে। করছামের পরে অনেকটা রানওয়ের মত রাস্তা, শতদ্রু নদীর ধার ঘেঁষে, আর জায়গায় জায়গায় পর পর হাইড্রোইলেকট্রিক প্ল্যান্ট। ওয়াংটু পর্যন্ত অল্প খারাপ আর বেশির ভাগ ভালো রাস্তার আলোছায়া খেলা শেষ হল। তার পরে স্ট্যান্ডার্ড রাস্তা, এসে গেল সেই বিখ্যাত স্পিতির গেটওয়ে, কিন্নৌর জেলা ছাড়িয়ে ঢুকে পড়লাম শিমলা জেলায়। ভাবানগর পেরিয়ে জিওরি এসে গেলাম বিকেল সওয়া পাঁচটায়, আর সন্ধে ছটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম রামপুর।

    জার্নি যথেষ্ট হয়েছে, আজ একটু আরাম করতে মঞ্চায়। তাই যে সে জায়গা নয়, আশ্রয় নিলাম একেবারে হিমাচল টুরিজমের হোটেল রামপুরে। তবে কিনা ফেব্রুয়ারি মাস, টুরিস্ট তেমন নেই, তাই মেগা ডিসকাউন্ট। আঠেরোশো টাকার ঘর পেয়ে গেলাম আটশো টাকায়।

    ক্ষতি হয়েছে দুটো। এক, হোটেলের পার্কিং-এ বাইক রাখার পর থেকেই দেখতে পেলাম, বাইকের সামনের চাকার দুদিকে যে দুটো রড, মানে যেটার মধ্যে বাইকের সামনের দিকের শক অ্যাবজর্বার থাকে, সেখান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে তেলের ধারা। চাকা ভিজে যাচ্ছে। ওখানে বোধ হয় সাসপেনশন অয়েল থাকে কিছু, নাকি এটা ইঞ্জিন অয়েল? কে জানে, বোঝা যাচ্ছে না - শুধু দেখছি তেলের ধারা বেরিয়ে চলেছে। এটা পেট্রল নয় শিওর, কারণ পেট্রলের পরিমাণ কমে নি।

    দুই নম্বর ক্ষতি - আমার চিরুনিটি পেছন পকেট থেকে কখন ঝাঁকুনিতে বেরিয়ে পড়ে গেছে। এখন গত তিনদিন চান করি নি। মাথায় লাগাতার বাফ বেঁধে বাইক চালিয়েছি, চুলের তো দফারফা। একটু শেপে আনতে গেলে এইবারে চানের আগে ও পরে চিরুনি লাগানোটা আবশ্যিক।

    হোটেলটা শহরের একটু বাইরে। লাঘেজ টাগেজ খুলে একটু চা চেয়ে কাঁচুমাচু মুখে বললাম, এখানে স্টেশনারি দোকান আছে আশেপাশে? কঙ্গি খো গয়ি।

    রিসেপশনের লোকটা ততক্ষণে আমার একলা স্পিতি বিজয়ের সামারি শুনেটুনে আর আমার মোটরসাইকেল আর লাগেজ দেখে অলমোস্ট ফিদা, ঝটপট বলল, ও আপনাকে চিন্তা করতে হবে না - আপনি চা খান গিয়ে আরাম করে, আমি চিরুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি এক্ষুনি।

    তা এল। সুন্দর প্লাস্টিকের র‍্যাপে মোড়া, ওপরে সোনালি জলে লেখা হিমাচল ট্যুরিজম - একটা সাদা রঙের চিরুনি। এই ট্রিপে আমার পাওনা।

    চান করে ফ্রেশ হয়ে খানিক আরাম। চারদিন বাদে ফেসবুক খুলে দেখলাম দিল্লি আবার সরগরম। গুরমেহর কৌরকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছে বিজেপির আদরের হিন্দুত্ববাদী ট্রোলের দল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল। আঠাশ তারিখ দুপুরে মিছিল বেরোবে নর্থ ক্যাম্পাসে। স্বাতীকে জানালাম, আমি থাকব মিছিলে। আমি তো আগামীকাল, মানে সাতাশ তারিখ রাতেই বাড়ি পৌঁছচ্ছি।

    সাড়ে আটটার সময়ে খিদে পেল বেশ। ঝটপট উঠে গিয়ে অর্ডার দিলাম তন্দুরি নান আর চিকেন দোপেঁয়াজা। সঙ্গে তো কেউ নেই, এদিকে হাফ প্লেট অর্ডার করাও গেল না, তাই কী আর করা, গোটা এক হাঁড়ি (ছোট সাইজের হাঁড়ি আর কি, সার্ভিং হান্ডি) চিকেন দোপেঁয়াজা একাই খেয়ে ফেললাম। নান অবশ্য তিনটের বেশি খাই নি।

    নটার সময়ে ঘরে ফিরে লম্বা হলাম। কাল কি এই সময়ে বাড়ি পৌঁছতে পারব?
  • সিকি | ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৯:৩৭365812
  • সাতাশে ফেব্রুয়ারি, দিন ৫
    ----------------------------

    সক্কাল সক্কাল আবার উঠে পড়া, বানজি কর্ড দিয়ে আবার কষে বাঁধা লাগেজপত্তর। ছ লিটার পেট্রল নিয়ে এসেছিলাম তিনটে কোকাকোলার বোতলে করে, তার মধ্যে চার লিটারই বেঁচে আছে। ঢেলে নিলাম ট্যাঙ্কে। বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত আর পেট্রল কেনার দরকার পড়বে না। সাড়ে আটটায় বেরিয়ে পড়লাম।

    রামপুর থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে নারকণ্ডা। আসার সময়ে সেখানে প্রথম বরফ দেখেছিলাম, ফেরার সময়েও দেখলাম, তবে এবারে মনে হল বরফের পরিমাণ একটু বেশি। নারকণ্ডা পেরোলাম বেলা এগারোটা নাগাদ। তবে পেরোবার পরেও বরফের কমতি হল না। এখন এমনিতে একঘেয়ে রাস্তা - পুরো দিল্লি অবধি। তার মধ্যে একটু চোখের আরাম, ওই জায়গায় জায়গায় বরফ।

    বরফ পেলাম শিমলার পনেরো কিলোমিটার আগে একটা জায়গা পর্যন্ত, যেটাকে আমরা কুফরি বলে চিনি। মানে টন টন সাদা বরফে ঢাকা এলাকা নয়, রাস্তার ধারে ধারে বরফের চাঁই জমা হয়ে আছে, ধুলো আর গাড়ির ধোঁয়া খেয়ে খেয়ে ময়লা। এর পরেই ছোট্ট একটা টানেল, আর সেটা পেরোতেই শিমলা ঢুকে গেলাম।

    শিমলায় এমনিতে দাঁড়াবার নেই, কেবল কোথাও একটা থেমে লাঞ্চ করতে হবে। বেলা একটা বাজে। এমনিতে লাঞ্চের মূল জায়গাগুলো সব মল্‌এর ধারেকাছে, সে তো নিচে বাইক পার্কিংএ রেখে ওপরে হেঁটে উঠতে হবে। তা আমার বাইকে এখন লাগেজ বাঁধা, ও তো এমনি ছেড়ে রাখা যাবে না। রাস্তার ধারে, চোখের সামনে পার্ক করেই খেতে হবে। থাক, শিমলা ছেড়ে বেরোই।

    কিলোমিটার পাঁচেক এগোবার পরে একটা ছোট এলাকা পেলাম যেখানে পর পর কয়েকটা ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট। অ্যাপারেন্টলি সবকটাতেই নন ভেজ পাওয়া যায়। তারই একটায় ঢুকে অর্ডার দিলাম চিকেন কারি আর রুটি। খেয়ে দেয়ে একেবারে নন-স্টপ দিল্লি।

    মানে, এই খাবারের বর্ণনাটা না দিলে হয় তো আমার ট্র্যাভেলগ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। শুধু এইটা লিখব বলে এতগুলো লাইন ভুলভাল লিখে গেলাম।

    চিকেনের প্রথম টুকরোটা মুখে দেওয়ামাত্র মনে হল অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসবে। এমন বিকট একটা গন্ধ আর তার টেস্ট। পচা মাংস? নাকি আমি সারাদিন বাইক চালিয়েছি বলে আমার পেট ঘোলাচ্ছে?

    আবার একটু চেষ্টা করলাম, রুটির টুকরো দিয়ে মুড়ে। নাঃ, এ নির্ঘাৎ চিকেন নয়, শকুন বা কাক হতে পারে। পারা গেল না - উঠে পড়লাম। কাউন্টারে গিয়ে খুব মাপা গলায় প্রশ্ন করলাম, চিকেনটা কীসের?

    সে ছেলে তো দেবশিশু, খুব নিরীহভাবে দাবি করল, একেবারে ফ্রেশ জিনিস, এই ওই তাই - বললাম, তুমি খেয়ে দেখাও। সে তো খাবে না। আমি বললাম, আমিও দাম দেব না। চারটে রুটির আঠাশ টাকা - এই নাও।

    বোধ হয় ভেজিটেরিয়ান বলেই, কিংবা মনে হয় তো সত্যিই পাপ ছিল - এতটুকু প্রতিবাদ না করে তিনটে দশ টাকার নোট আমার হাত থেকে নিয়ে ক্যাশবাক্সে ভরে নিল। ... সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয় নি, এক কাপ চা ছাড়া, এখনও হল না। অবশ্য যতক্ষণ বাইক চালাই, আমার খিদে তেষ্টা ঘুম হিসি সেক্স - কিচ্ছু পায় না, তো, মনে হচ্ছে টেনে দিতে পারব বাড়ি অবধি এইভাবেই।

    দিলাম। সাড়ে চারটেয় চণ্ডীগড়, আটটা নাগাদ দিল্লির বর্ডার, তার পরে উইক-ডের জ্যাম। শেষ পঁচিশ কিলোমিটার টানতে সময় লাগল প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। নটা কুড়িতে বাড়ি। এইভাবেই টুক করে ঘুরে আসা হল "ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ট্রেচারাস রোড" হিসেবে পরিচিত স্পিতির রাস্তায়, যদিও অর্ধেকটা। আবার যেতে হবে। পুরোটা না করলে আর কীসের ট্রিপ?

    (শেষ)
  • শঙ্খ | 52.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:৫৬365813
  • হাততালি!!
  • swati | 127.194.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:৩৭365814
  • দারুণ লাগল। খুব হিংসেও হল সিকি কে। এমন ভারহীন ভ্রমণ আমরা পাই না বলে। একটা বাইক আর সঙ্গে হিমালয় - এ হল স্বপ্নের জুটি! সিকির নিরমেদ কলমের হাত ধরে একবার মানস ভ্রমণ হল। অনেক ধন্যবাদ সিকিকে আমাদের এই অভিজ্ঞতার শরিক করার জন্যে।
  • Pagla Dashu | 79.113.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১২365816
  • তেল পরা বন্ধ হোলো কোথা? আবার কবে বেরোনো হবে?

    প্রোস্চেন পেল।
  • সিকি | ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৬:৩৭365817
  • তেল পড়া বন্ধ হল দিল্লি ফিরে গাড়ি সারানোর পরে। বাইকের সামনের দিকের সাসপেনশন ফ্লুইড লিক করে গেছিল।

    মর্মপীড়ের দয়া হলে আজকেই বেরিয়ে পড়তে পারি। কিন্তু তিনি তেমন নিয়মিত দয়া করেন্না।
  • de | 69.185.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১১:০২365818
  • ধন্যি ছেলে!!
  • Manish | 59.203.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১২:৫৩365819
  • খুব ভালো লাগলো,
  • d | 144.159.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৩৫365820
  • পড়লাম।
    আমার কেমন ধারণা ছিল যে ছালচামড়া ছাড়িয়ে লঙ্কা পেঁয়াজ রসুন দিয়ে বেশ করে কষিয়ে রান্না করলে সব প্রাণীই খেতে ভাল্লাগবে।
    সেটা কি ঠিক নয় তাইলে?
  • সিকি | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫০365821
  • বোধ হয় নয়।

    তার আগে শুনি, গপ্পোটা ক্যামন লাগল জনতার। কারণ, সেশ হবার পরেও কহানিতে একটা টুইস্ট আছে, সেইটা বেশ রেলিশ করে বলতে চাই। :)
  • পুপে | 131.24.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:১৯365822
  • গপ্পো তো স্বাভাবিক ভাবেই ভালো লেগেছে। তবে তোমার বেড়ানোটা বড্ড তাড়াহুড়ো লাগলো। বাইকে রোড ট্রিপ কি সাধারণত এমনিই হয়? যাই হোক, পরে সময় নিয়ে ভালো করে ঘুরে নিও একবার। টাবো-কাজা তে স্টে, মনাস্ট্রি গুলো দেখা এগুলো মিস করলে।

    এবার চটপট টুইস্ট টা বলে ফ্যালো।
  • d | 144.159.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:১৪365823
  • উঁ এইটে, সেই গাড়ী করে ব্যান্ডেল ইত্যাদি নিয়ে আমার স্লাইট অসুবিধের একটা জায়গা আছে। সে কি এখানেই কব নাকি জনান্তিকে?
  • P | 212.142.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:২১365824
  • আমি মনে হচ্ছে সিকির প্রেমে পড়ে গেলাম। আর কিচ্ছু করা গ্যালো না।
  • সিকি | ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:৩৬365825
  • ইয়ে ... ASLটা জেনে গেলেই আমার তরফে ডিসিশনটা নিয়ে ফেলতে পারি। :)
  • ;-) | 52.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ১০:৫৪365827
  • 35FKolkata :-)
  • kumu | 69.178.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:০৯365828
  • খুব উপভোগ করলাম।যে পথ যে বাহনে কোনদিন যাওয়া হবে না এ জীবনে,সেই পথের গল্প,সেই পথের ছবি।

    প্রাঞ্জল লেখা,পরিমিত লেখা।
  • Nina | 83.193.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৬:১৪365829
  • বাপরে ক্ষী ডানপিটে ছেলে --খুব ভাল লাগল রে সিকি। একটু সাবধানে থাকিস দুর্গম সব পথঘাট --ছবিগুলো খুব সুন্দর।
    চলুজ চলুক সিকি অভিযান--------
  • সিকি | ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৮:৩১365830
  • এইবারে হাল্কা করে হাটে হাঁড়িটা ভাঙি।

    হয়েছিল কি, ঐ জীবনসন্ধি আর তার চার নাকি পাঁচ বুলেটবন্ধু - তাদের গল্পটা না, পুরোটাই ঢপ। আমার সাথে কারুরই যাবার ছিল না, কেউ যায়ও নি। বাড়ি থেকে বাড়ি পর্যন্ত পুরোটাই একা টেনেছি। জীবন সোঁধির গল্পটা টাইম টু টাইম ইনভেন্ট করে বাড়িতে স্টেটাস আপডেট দিতে গিয়ে বানিয়েছিলাম।

    :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন