এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বেলা বালাজের থেকে সিনেমার কিছু টোটকা

    Jishnu Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১) ইম্প্রেশনিশটিক- ভিজুয়াল কন্টিনিউটি বজায় না রেখেও শুধু কিছু মুহূর্ত দেখিয়ে পুরো ঘটনার আভাস দেওয়া যায়। এক ব্যক্তির ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া, পরের শটে অগোছালো ঘর, তার পরের শটে একটা চেয়ার যার হাতলে রক্ত, এই তিনটি শটেই ঘটনা হয়ে উঠতে পারে বাঙ্ময়।

    ২) এক্সপ্রেশনিশটিক- হিচককের থার্টি নাইন স্টেপস বা রমেশ সিপ্পির শোলে, ট্রেনের আওয়াজ হয়ে উঠতে পারে অব্যক্ত ভয়ের চিৎকৃত অভিব্যক্তি।

    ৩) ভাষায় যেমন "আমি আজ ও কাল, দুদিন কামাই করেছি" লেখা যায়, সিনেমায় সবই ঘটমান বর্তমান।

    ৪) একটা ঘটনা ঘটতে বাস্তবে যতটা সময় লাগে, সিনেমায় তার সময় কমানো বাড়ানো যায়। গ্রিফিথ তার ছবির ক্লাইম্যাক্সে ইমেজের ভিতরের গতি এবং ইমেজ পরিবর্তনের গতি এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আনতেন। সাধারণত ইমেজ(শট) পরিবর্তনের গতি বেড়ে যেত এবং ইমেজের ভিতরের গতি হতো ক্রমহ্রাসমান।
    ধরা যাক মাংস কাটছে কসাই, ছুরি তুলল, মুরগীর চোখ, মোবাইল বেজে উঠল, দমকলের গাড়ী চলে গেল শব্দ করতে করতে, ছুরি মুরগীর গলায়, দমকল গাড়ির চাকা ফেটে গেল ইত্যাদি

    ৫) দুই চরিত্রের ঝগড়া চলছে, ক্যামেরা দ্রুত প্যান করে দুই চরিত্রকেই ফলো করছে, কথা-কাটাকাটি যখন চরমে, এক চরিত্র বার করে ছুরি, ক্যামেরার প্যানের গতি হল আস্তে, ধীরে ধীরে ক্যামেরা দ্যাখাল সামনের ব্যক্তির অভিব্যক্তি। এর ফলে একটি সাস্পেন্স তৈরি হল যা সিনেমার নিজস্ব।

    ৬) বাস্তবে এক চরিত্রর মানসিক অবস্থান পরিবর্তনের যে সময় তাকে একমাত্র সিনেমা ছুঁতে পারে, কারণ সাহিত্যে এই মানসিক পরিবর্তনের বিবরণ বেশি সময় নেবে।

    ৭) প্যাসেজওয়ে অর্থ্যাৎ চরিত্রর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার মাঝের রাস্তা, এটা অনেক পরিচালক অগ্রাহ্য করলেও এটা ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অনেক সময় মূল অ্যাকশনের মুহূর্তর থেকেও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন দুটো চরিত্রের পাশাপাশি চুপচাপ হেঁটে যাওয়া তাদের বৈপরীত্যকে প্রকট করতে পারে যা অতি দ্রুত ঘটে যাওয়া দ্বৈরথ দৃশ্য প্রকাশে অক্ষম।

    ৮) ক্লোজআপ সিনেমার অঙ্গ হলেও তার অপটু ব্যবহার সিনেমার গতি কমিয়ে দিতে পারে। লং শটে এক সদা হাস্যরত লোকের হাতের চাপে বিস্কুট গুঁড়ো হয়ে  যাওয়ার ক্লোজআপ হয়ে উঠতে পারে অর্থপূর্ণ।

    ৯) ল্যান্ডস্কেপের লং শট শুধু নাটকের ব্যাক ড্রপ এর মত নয় বরং তা চরিত্র ও গল্পের মুড প্রকাশ করতে ব্যবহার করা উচিত, উদাহরণ বলতে মনে পড়ছে বিশাল মোবাইল টাওয়ারের পাশে এক মানুষ, আধুনিক যোগাযোগের বিশাল জালে আবদ্ধ নির্বাক একাকী পোকামানব।

    ১০) নাটকের ক্ষেত্রে কোন চরিত্র যদি ফিসফিস করে কথা বলে তাহলে সেই চরিত্রকে মঞ্চের সামনে আনতে হবে অথবা বাকি সব শব্দ বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করতে পারি সাউন্ড ক্লোজআপ অর্থাৎ একটা বারে বসে থাকা প্রেমিক যুগল কী কথা বলছে তা আমরা বারের নয়েজের মধ্যেও আলাদা করে শুনতে পারি।

    ১১) যেহেতু আগে এখনকার মত 5.1 সারাউন্ড সাউন্ড ছিল না, একটি মাত্র লাউডস্পিকার ব্যবহৃত হতো তাই স্ক্রীনের বাঁ দিক থেকে ডানদিকে যেতে যেতে কোন চরিত্র কথা বলছে এটা দেখাতে বেলা বালাজের টোটকা হচ্ছে একটি কাট এবং নতুন শট যেখানে ক্যামেরা আবার চরিত্রর সামনে ও চরিত্র কথা বলছে।

    আগ্রহীরা বেলা বালাজ রচিত "ভিজিবল ম্যান" এবং "দ্য স্পিরিট অফ ফিল্ম" বই দুটি পড়তে পারেন। এই লেখা তার ধারেকাছেও যায়নি
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন