এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আম্বেদকরের উত্তরাধিকার

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ৪২ বার পঠিত
  • Mubi  ওটিটিতে এখন আম্বেদকরের উপর দুটি ছবি দেখানো হচ্ছে। তারমধ্যে একটিতে জ্যোতি নিশা পরিচালিত ১১০ মিনিটের  ডক্টর বি আর আম্বেদকরঃ নাউ অ্যাণ্ড দেন ছবিতে কিছু নতুন  তথ্য আছে। ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের দিল্লীস্থিত  সাংবাদিক মিঃ কুপারের প্রয়োজন হয় একজন দলিত সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলা। পি আই বি র ইনডেক্স ঘেঁটে, প্রেস ক্লাবে  খুঁজেও  একজন দলিত সাংবাদিকও দিল্লীতে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ২০০৬ সালে একটি সার্ভে করে দিল্লীর ৩৫ টি মিডিয়া হাউসের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ১০ জন ব্যক্তির জাতিপরিচয় খুঁজে আবার একই তথ্য--- একজনও দলিত খুঁজে পাওয়া যায় না ঐ সাড়ে তিনশ জনের মধ্যে, ওবিসি পাওয়া যায় মাত্র ৪ শতাংশ। অথচ সরকারী সাংবাদিকতা শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে, আই আই এম এম পর্যন্ত সব জায়গায় দলিত ছাত্ররা পড়ছেন, সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে বড় মিডিয়ায়, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে দলিতের কথা, তার দৃষ্টিভঙ্গী বরাবরই উপেক্ষিত।

     আচারসর্বস্ব হিন্দুধর্মের সংস্কার অসম্ভব বুঝেই যে আম্বেদকর বৌদ্ধধর্ম  গ্রহণ করেছিলেন এবং আম্বেদকরবাদের মানে মুক্ত চিন্তার চর্চা ছাড়া সম্ভব নয় সেকথা জানিয়েছেন পরিচালক। শ্রমণ সংস্কৃতি , বৌদ্ধ দর্শন, সহমর্মিতা , কারুণ্য এবং ভালোবাসার সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ডের বিরোধিতার কথা বলে মানুষের ধর্মের কথা বলেছেন জ্যোতি। ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৬ সালে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার অনুগামী সহ বাবাসাহেব বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে একজন আম্বেদকর অনুগামী যথার্থ পথ খুঁজে পান।
     মুম্বাইয়ের দাদার অঞ্চলে আম্বেদকরের একটি স্মৃতিসৌধ আছে।  আম্বেদকর প্রয়াণদিবস (৬ ই ডিসেম্বর ,ঘটনাচক্রে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনও বটে ) কেন্দ্র করে ঐ স্মৃতিসৌধ বা চৈত্যভুমি চত্বরে মানুষের যে সমাগম হয়, যে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মারক  বক্তৃতা ইত্যাদি হয় তার মধ্য দিয়ে  ‘ চৈত্যভূমি’ তথ্যচিত্রে আম্বেদকরের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারকে তাঁর ৬৬ মিনিটের ছবিতে খুঁজেছেন সোমনাথ ওয়াগমারে। এই উপলক্ষ্যে বাবাসাহেবের   প্রৌত্র প্রকাশ আম্বেদকরের বক্তব্যও এখানে পাওয়া যাবে।সংবিধানকে বাঁচানোর কথা বলেন যে দলিতরা তাদের কাছে মনুর আইন বনাম ভীমের আইন—এইটা বড় লড়াই।
     
      প্রতিনিধিমুলক বক্তব্য রাখার জন্য সোমনাথ বেছে নিয়েছেন ডক্টর রাহুল সোমপাল নামে এক সমাজবিজ্ঞানের গবেষককে যিনি অল ইণ্ডিয়া ইনডিপেন্ডেন্ট সিডিউলড কাস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি আম্বেদকর এবং বুদ্ধর শিক্ষার কথা বলেন । আম্বেদকরের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা  বলতে বলতে রাহুল উচ্চবর্ণীয় আপার কাস্ট লিবেরাল , উচ্চবর্ণীয় বাম, এমনকি উচ্চ বর্ণীয় র‍্যাডিকালের কথা বলেন। তাঁর মতে এরা কোনো সময় চায় নি যে আম্বেদকর জনস্মৃতির অংশ হয়ে উঠুন। কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশে আম্বেদকরের যত স্মারক বা স্ট্যাচু আছে তার প্রায় বেশিটাই দলিত সমাজের নিজেদের করা,সরকারি উদ্যোগে নয়। তার মতে  উচ্চ বর্ণ মনে করে পাবলিক স্পেস তাদের জন্য, দলিতের জন্য নয়। যদিও আম্বেদকর তার অনুগামীদের চেষ্টায় দক্ষিণ, মধ্য,বাম—সব দলের কাছে রাজনৈতিক বাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আগে তাঁরা আম্বেদকরের সমালোচনা করত আর আম্বেদকরপন্থীদের পাত্তাই দিত না। এখন তাঁরা আম্বেদকরের   প্রশংসা করে কিন্তু আম্বেদকরপন্থীদের সমালোচনা করে। কারণ আম্বেদকরবাদীরা নাকি তাদের জন্য বিপদ যেহেতু  তাঁরা জনস্মৃতিতে আম্বেদকরের জায়গাটা তৈরি করছেন।
     
    এই রাহুল সোমপালের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায় যে তাঁরা বামপন্থী , র‍্যাডিকাল সমেত সবাইকে তাদের শত্রু ভাবেন। তাঁরা আইসোলেশনিস্ট। একই সঙ্গে আম্বেদকরপন্থীদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কোনো আত্মসমালোচনা তাঁদের নেই । এই বিষয়টাই ভয়ের। গান্ধী, নেতাজী, নেহেরু, আম্বেদকর---- বলুন তো এই যে চারটি নাম একসঙ্গে করলাম তাঁরা একসঙ্গে সবাই ১০০ শতাংশ ঠিক হতে পারেন ? কারণ একজনকে ১০০ শতাংশ ঠিক বললেই তো আরেকজন তা আর থাকেন না। কারণ বহু ইস্যুতে এঁদের নিজের মধ্যেই মতভেদ হয়েছে। কাজেই অতীতে আম্বেদকরের সমালোচনা যদি অন্যান্যরা করে থাকেন সেটাই ছিল স্বাস্থ্যকর, এখনকার মত পূজার বেদীতে শুধু তুলে রাখা নয়। আর আম্বেদকরবাদীরা ? আম্বেদকরের প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকান পার্টি অব ইণ্ডিয়ার বিভাজনের ইতিহাস দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। আত্মসমালোচনার দরকার নেই তাঁদের ?  ভারতের বহুজন সমাজের অংশ ৮৫ শতাংশ। তাঁরা একজোট হলেই তো হত। আর কিছু লাগত না। তবুও  উত্তরপ্রদেশে ভোটের ক্রমিক অবক্ষয় কেন? বামপন্থীরা ব্যর্থ হচ্ছেন, জাত পাতের গুরুত্বকে অনুধাবন করতে পারেন নি, অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। আম্বেদকরপন্থীদের সমালোচনা কে করবে ? কেন তাঁদের সংগঠনে ব্যক্তিবাদের প্রাধান্য, গোষ্ঠীবিরোধ ? কেন বহুজন সমাজ পার্টির আসনসংখ্যা ২০২৪ সালের লোকসভায় গোটা দেশে ৪৮৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শুণ্য যেটা ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ২১ জনে পৌঁছেছিল ? কেন ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট শতাংশ নেমে এসেছে ১২.৮৮ শতাংশে  এবং যা ক্রমশ নিম্নগামী ?
    আসলে আইসোলেশনিস্ট অ্যাপ্রোচ দিয়ে এই যুদ্ধ জেতা যায় না। সবাইকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে মনুবাদী বলে অভিযুক্ত করলেও না। হ্যাঁ, জাতবৈষম্য দূর করার লড়াইতে  দলিতরাই নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু কাউকে লড়াইয়ের সহমর্মী হওয়ার, সহযোগী হওয়ার সুযোগটুকুও দেবেন না --- এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। এই মানসিকতা কিন্তু দলিত রাজনীতির মধ্যে যাঁরা সুবিধাভোগী তাঁদের মধ্যেই আছে। আমজনতার মধ্যে নেই। আমজনতা যে দেখেছেন জাতিগত বৈষম্য আর শ্রেণীগত বৈষম্যের মধ্যে কোনো অসেতুসম্ভব দূরত্ব নেই।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Das | 2a0b:f4c2::***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০৬542511
  • আম্বেদকরের বৌদ্ধধর্মের অনেক কিছুও পোষায়নি, নব্যন্যায় বৌদ্ধধর্ম বলে একটি জিনিস বানিয়ে কয়েকজনকে দীক্ষা দিয়েছিলেন।
    স্বাধীনতা আন্দোলনের যথাসাধ্য বিরোধিতাও করেছিলেন।
  • Sandipan Majumder | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:১৯542520
  • # Das আপনি দুটি বড় বিষয় উল্লেখ করেছেন। স্বল্প পরিসরে আলোচনা করাও মুশকিল। তবে তার বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ছিল,নাকি দলিতদের স্বার্থ না দেখা জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে ছিল? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন