এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভুতুড়ে গল্প

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫৩ বার পঠিত
  • গীতায় আত্মা আছে বলে। মার্ক্সবাদে ভুত নেই আত্মা নেই। তাই আমি ভুতে বিশ্বাস করতে পারি না। কিন্তু ছোট বেলা থেকে ভুতের গল্প শুনে বড় হয়েছি। যেমন শাশুড়ী ভুতের গল্প। এক কালে গ্রাম কে গ্রাম কলেরায় উজাড় হয়ে যেত। সেই সময় কোন এক জামাই না জেনে রাত্রী বেলা শ্বশুর বাড়ি এসেছে। ভাত খেতে বসে জামাই লেবু চাইতেই শাশুড়ী দশ হাত দূরের লেবু গাছ থেকে হাত বাড়িয়ে লেবু আনতেই জামাই বাবাজীবন ভয়ে দৌড় লাগালেন। গ্রাম পেরিয়ে অনেক দূরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সেখানকার লোকজন চোখে মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে সব শুনে বলল ওই গ্রামে কলেরায় সব মারা গেছে।

    আমার ঠাকুমা মারা যাবার পর অনেকেই নাকি মাঝরাতে তার কাপড় থুপ থুপ করার আওয়াজ শুনত। মেজ মামা আমাদের সঙ্গে থাকতেন। তিনি একবার দরজা ধাক্কা দেবার আওয়াজ শুনে বেরিয়ে এসে ওই সাদা শাড়ি দেখে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তখন টালিগঞ্জ এলাকার যেখানে থাকতাম সেখানে কেউ মারা গেলেই তার ভুত বা পেত্নী লোকে দেখতে পেত! কোন এক ঋষি বাবু বহুদিন জাম গাছে ব্রহ্ম দত্যি হয়ে ছিলেন।

    আমি তখন বেশ ছোট। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম। ফ্ল্যাট বাড়ি ছিল না সেযুগে। তাই রাতে পটি পাবার আতঙ্কে ভুগতাম। ভগবান কে ডাকতাম।

    বড় হয়ে প্যারিস এসে একটা বহু পুরোনো বাড়ির এটিক তলে ছিলাম। সারাদিন টো টো করে রাতে ঘুমাতে এসে প্রায়ই নানা আওয়াজ শুনতাম। ভুতে বিশ্বাস না থাকলেও একটা গা ছম ছম করত। শেষে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতাম। অনেক গল্পে পড়েছি লাইট নিবে গেল। একটা খুট করে আওয়াজ হল। না এমন কিছু হয় নি। যুক্তির আলোকে বিচার করে মনে হল প্রচন্ড হাওয়া আর ঠান্ডায় কাঠের কাঠামো নানা রকমের ভুতুড়ে আওয়াজ করতে পারে।

    যাদবপুরে চার তলায় আমার ঘরে শনিবার বসে কাজ করতে করতে মনে হয়েছে কেউ করিডরে চলাফেরা করছে। অথচ কেউ কোথাও নেই আর ফ্লোরের গেটে তালা দিয়ে আমার কাছে চাবি। অন্য কোন সহকর্মী শনিবার কাজ করতে এলে আমায় ফোন করবে আমি দরজা খুলে দেব। বুঝলাম সবই মনের ভুল!

    যাদবপুরে আমার নতুন ফ্ল্যাটে অনেক সময় মনে হত দুপুর বেলা রান্না ঘর থেকে কোন মহিলা অন্য বেডরুমে গেল। অথচ বাড়িতে কেউ নেই। বউ ও নাকি এমন অনেক বার অনুভব করেছে। এখন আর দুজনের কেউই এমন অনুভব করি না। ও কোন যজ্ঞ করার কথা বলেছিল। আমি রাজি হয়নি। হয়তো আমার অগোচরে করে থাকতে পারে (যখন আমি বিদেশে থাকি)।

    কেমব্রিজে বেশ কয়েকবার একটা গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করতে যেতাম। বিজনেস স্কুলের টপ ফ্লোরে একটা ব্লক ওদের দেওয়া হয়েছিল। আমি গেলে ওই ব্লকের একটা ঘর দেওয়া হত। ছ টার পর ওই ব্লক বন্ধ করে দেওয়া হত। কিন্তু কেউ চাইলে কাজ করতে পারত সারা রাত। সবার কাছে access কার্ড থাকত যখন খুশি ঢোকা বেরোবার জন্য। আমি রাত দশ টা অব্দি থাকতাম কারণ বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়া ছাড়া কিছু করার থাকত না। যখন চারিদিক নিঝুম হয়ে যেত আমি পরিষ্কার কারুর চলাফেরার আওয়াজ পেতাম। একদিন ওইরকম আওয়াজ পেয়ে আমি সব ঘরে নক করে খোঁজ নিলাম। কোথাও কেউ নেই! বুঝলাম মনের ভুল। তবে বিজনেস স্কুল বিল্ডিং বাইরে থেকে ভাল করে দেখে বুঝলাম এটা এক সময় এডেনব্রুক হাসপাতাল ছিল। সেই নাম এখনো খোদাই করা আছে উপরের দিকে। মানে অনেক রুগী এখানে মারা গেছে আর তাদের আত্মা ঘুরে বেড়াতে পারে। আমি আওয়াজ পেলেই দেখার চেষ্টা করতাম দরজা খুলে। কিছু দেখিনি।

    কোন কোন বার কেমব্রিজে ক্রিসমাস অব্দি থাকতাম। এরকম এক বার আমার অফিস শেয়ার করতে হচ্ছিল এক রাশিয়ান গবেষকের সঙ্গে। আমি সন্ধ্যার পর অন্য একটা ল্যাবে চলে যেতাম। ওখানে বার ডাইনিং হল কফি শপ ছিল। রাত দশটা অব্দি ভালোই কাটতো। ইংল্যান্ডে ক্রিসমাস আসার বেশ আগেই বিভিন্ন অফিসে ক্রিসমাস লাঞ্চ বা ডিনার পার্টি হয়। আসল ক্রিসমাসের দিন অফিস বন্ধ আর সবাই পারিবারিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করত। আমাদের গবেষণা কেন্দ্রের ও এরকম পার্টি হত। বেশ ভাল রকম চাঁদা দিতে হত। সেবার আমি চাঁদা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। শেষে কয়েকজন এক সঙ্গে ফিরছি। হঠাৎ কানে এলো ওই রাশিয়ান গবেষক তার রাতের অভিজ্ঞতা এডমিনিষ্ট্রেটর বুড়ি কে বলছে। বুড়িও স্বীকার করল ওই অফিসে ভুত আছে। আমিও তালে গুড় দিলাম। বললাম আগে রাতে কাজ করতাম কিন্তু বেশ কয়েকবার ভুত দেখে আর ওখানে থাকি না (ডাহা গুল!)। ভয়ে রাশিয়ানটার মুখ শুকিয়ে গেল। আর কোনদিন আসেনি। আমার অফিসে আমি একা বিরাজ করতে লাগলাম!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন