এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শিক্ষা-টিক্ষা 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ মার্চ ২০২৫ | ২২৭ বার পঠিত
  • খবরে দেখছি, জায়গায়-জায়গায় এসএফআই ছাত্রদের উপর হামলা হচ্ছে। বিরাট বড় কিছু না, কিন্তু হচ্ছে। কলকাতায় এইটুকু হলেই ফেটে যেত, কিন্তু বাইরে বলে তেমন হচ্ছেনা, কারণ, আমরা তো কলকাতার বাইরে বিশেষ দেখতে পাইনা। অথচ বিষয়টা খুবই উদ্বেগজনক। ছাত্রসংসদ যাদবপুরে যতটা দরকার, ততটাই মেদিনীপুরে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কলকাতায় যতটা দরকার, মুর্শিদাবাদেও ততটাই। এখানে প্রতিহিংসা বা প্রতিক্রিয়া কথাগুলোও অর্থহীন, কারণ, উত্তরবঙ্গের কোনো ছাত্র তো এসে যাদবপুরে কোনো শিক্ষককে পেটাননি। যাদবপুরে ব্রাত্য বসু এসে নির্বিঘ্নে সভা করবেন, ইচ্ছে হলে যেকোনো বিরোধীর মুন্ডপাত করবেন তাদেরই সামনে, আর কল্যাণীতে ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ব্রাত্য বসুর পিন্ডি চটকিয়ে স্লোগান দেবেন, উত্তপ্ত তরজাও হতেই পারে, কিন্তু কেউ কাউকে আটকাবেনা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পক্ষে এই দুটোই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ।  

    এই কথাগুলো বলতে যাওয়া খুবই বিপদের। অথচ প্রশ্ন তো কত কিছুই থাকে। ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছেনা কেন? ক্ষমতার মধুভাণ্ডের ভাগ দেওয়া যাবেনা বলে? উপাচার্য নির্বাচনে রাজ্যপাল বাগড়া দিয়ে চলছেন কেন? গোলমাল যাতে পেকে ওঠে সেই জন্য? যাদবপুরের কথাই যদি ধরেন, সেখানে স্বপ্নদীপের কেসের কী হল? ছাত্রসংগঠনরা আইসিসি নিয়ে যতটা আলোড়িত, হস্টেলে র‌্যাগিং বন্ধে তার খণ্ডাংশও আওয়াজ শোনা যায়না কেন? হস্টেলবাসীই ক্ষমতার উৎস বলে? যার যেখানে জোর আছে, সেই সেখানে শেষ কথা বলবে, এইরকম একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তোই কি কাম্য? 

    এ তো নেহাৎই যৎসামান্য। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আরও অনেক গুরুতর প্রশ্ন তোলা যায়। রাজ্যসরকার শুনি ছাত্রের অভাবে ইশকুল বন্ধ করে দিচ্ছেন। ভাবটা এমন, যে, জারোয়ারা তো জুতো পরেইনা, ওখানে জুতো বেচব কীকরে। ওদিকে অন্য কোম্পানি, অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় বোর্ড, সেখানে রমরমিয়ে দামী জুতো বেচেই চলেছে। রাজ্যসরকরি ইশকুলগুলো থেকে মধ্যবিত্তরা একটু-একটু করে সরছেন, অন্তত শহরাঞ্চলে। তার জায়গা নিচ্ছে অদ্ভুতুড়ে কিছু বেসরকারি মাধ্যম। সরকারি ব্র‌্যান্ডের উন্নতি, প্রচার-প্রসার কিছুই চোখে পড়েনা। প্রাথমিক ইশকুলগুলো কেবলমাত্র প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীতে ভরে যাচ্ছে, আর শিক্ষকরা হাত উল্টে বলছেন, এরা কেউ পড়েনা। যেন পড়ার কাজটা বাড়িতেই হবার কথা। সব মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাটা লাটে তুলে বেসরকারি দিকে চলে যাবে ক্রমশ, এরকম একটা ইঙ্গিত চোখে পড়ছে। 

    অথচ এই প্রশ্নগুলো তোলার লোক নেই। সবাই যাদবপুর নিয়ে ব্যস্ত। আমরা, আমাদের ভাইবেরাদররা, অনেকেই যাদবপুর ফেরত, আমাদের ছেলেমেয়েরা কেউ সরকারি ইশকুলে পড়েনা, ফলে কেই বা তুলবে। লিখতে বলেও লাভ হয়না। কেউ লেখেন না। সন্দেহ হয়, একটা যে আপেক্ষিক স্থিতাবস্থা আছে, সেটা বজায় রাখতেই লোকে আগ্রহী। আপেক্ষিক বললাম, কারণ, এটা তো ঠিক স্থিতাবস্থা নয়, ধীরেসুস্থে একটা নির্দিষ্ট দিকে গড়াচ্ছে। এর মধ্যে যেখানে যেটুকু ক্ষমতার কেন্দ্র আছে, ভয়ে বা ভক্তিতে সেখানে জুড়ে থাকতেই লোকে আগ্রহী। যাদবপুরে বিপ্লবী না হলে কল্কে পাওয়া যায়না, তাই বিপ্লবীরাই সঠিক, র‌্যাগিং নিয়ে আওয়াজ তোলার লোক পাওয়া যায়না, একঘরে হতে হবে। রাজ্যজুড়ে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে দুচ্ছাই করে, কেবলমাত্র কর্মসংস্থানের, অনুগ্রহবিতরণের, কেন্দ্র হিসেবে ভাবাটাই দস্তুর, সবাই সেই দিকে। এর মধ্যে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কোন ব্যাটা? 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৪ মার্চ ২০২৫ ২০:৫০541490
  • যাদবপুরে বামপন্থীরা ফ্যাসিস্ট কায়দায় ডান পন্থী উত্থান আটকায়।ডান পন্থীরা যে কায়দায় অন্য রাজ্যে বামদের ক্যালানি দেয় এরা সেই পথ খুলে দিচ্ছে। সেদিন এদের বাঁচাবার কেউ থাকবে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন