এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • প্রতুলের গান - কেন শুনি

    Somnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৪৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • বিপ্লব থেমে গেছে কবে
    সেরকমই মুছে যাওয়া স্বদেশের প্রতি
    অনুকম্পাটি ছুঁড়ে বাজারের হট্টগোলে, ভিসাপ্রার্থীর কলরবে
    শুধু শান্তি ও গতি, শান্তি ও গতি, শান্তি ও গতি
    প্রগতির ময়দানে বিপ্লব কবে গেছে ঝুলে
    দেশের এই রাস্তাতে গা বাঁচিয়ে মূর্তির মাঠে
    এসেছে সেল্ফি তুলে
    রিল ছেড়ে, ফিরেছে এসির ঘরে, পুকুর বোজানো তার ফ্ল্যাটে
    তারপর মোবাইল অ্যাপে শেয়ারের দর
    ওঠে, ওঠে, নেমে গেলে গণতন্ত্রের এত ঝাঁট
    বেমক্কা এসব খবর
    কেন আসে, কেন দেখি এত সংঘাত
    এই যে কদিন আগে জঙ্গলে মরে গেল কারা
    কারা কাকে সুরক্ষা দিত
    কারা কার অরণ্যসম্পদ দিয়েছে পাহারা
    এসব খবরে আসেনি তো
    তাই ভারি নিশ্চিন্তে এসো স্ক্রল করি বিদেশের খবরের পাতা
    লাগে, তো বানিয়ে কিছু নিয়ো
    পুঁজির অ্যালগো মেনে খাতা
    লিখে দেবে কী কী করণীয়
    কীভাবে আবেগে জ্বলে ওঠা
    কীভাবে বা নির্লিপ্ত হয়ে যাবে তুমি
    দেখতেই পাবেনা কীভাবে জনপদ গোটা
    খাক হয়ে যাচ্ছে, মরেই যাচ্ছে মানুষের ভূমি
    দশটাকার নীচে যে কাদের মজুরি,
    কিম্বা দুপুরে কী খাচ্ছে ওরা, কেন যাচ্ছে না আর ইস্কুলে
    বেতালের অঙ্গুরি
    তাও আর দেখছি না, খুলিচিহ্ন, মুখোশ সব খুলে
    সাদা মানুষের দায়, কালো মন্ত্র ও যন্ত্রের নির্মিতি সব
    আমাকে নাচিয়ে রাখে
    এত আলো এত বাজি ডিস্কোর ঠেক জুড়ে এত উৎসব
    পরবর্তী পণ্যটি নির্মাণ হয়েই দেখো ডাকে
    তাকে কিনে আনো
    তাকে ঘরে তুলে নাও
    এই ঘর শিকড় উপড়ানো
    এসো এখানেই জম্পেশ করে বাজার বসাও
    জানো না পসরা পুরে বসে আছো মাথায় শরীরে জিভে
    পসরায় কিনে আনো গানের জন্য শোনা গান
    যতই আওয়াজ তোলো ক্লীব-হে
    এই মাঠ কখনও হবে না আর ধান
    আর তো ভাবিই না দেখব কোনওদিন
    বৃষ্টিশেষে সূর্যপথের সুদিন ভাবি না আসবে আর কাছে
    আমাদের বিদেশের ঋণ
    ভাবনাটি বন্ধক রাখা আছে
    রাগ হলে ফেসবুকে লিখি
    তার নিচে জুড়ে দিই ছবি, কালো ডিপি, লাল ডিপি, ঢিপি
    আরও উঁচু হয়, আর আমি বাস্তবিকই
    ভেবেছি এই তো সেরে দায়, এইবার কচুরি জিলিপি
    এভাবে দায়ের ভার ঠেলে
    চলো সবে নিজ নিজ কাজে
    বাজারে যদিও এলেবেলে
    তবু বেচেছি কান্না মাঝেমাঝে
    আনুপূর্ব অতিবৈতনিক, হোয়াটস অ্যাপে পেয়েছি বরাত 
    এইনিয়ে তর্কও করে থাকি
    আদতে কী আমাদের জাত
    আমাদের ধর্মই বা কী-
    মাঝেমাঝে পথে নামে ক্ষোভ, ড্রোন থেকে ঝকঝকে ছবি
    ব্যাকড্রপে হেভি করতালি
    চুটিয়ে শেয়ার হবে সবই
    আমিই আর দিই না স্লোগান, লিপসিংক করে দিই গালি
    কোথাও কি ডিঙা ভেসে যায়
    আবার কোথায় যেতে হব? আমি কেন ষাঁড়কে খেপাই
    বরং হাঁটি চেনা ম্যাপটায়
    ত্রাহিমাম, এসো হে এ-আই
    দেখো এই নতুনের ভাষা, শোনো এ নতুন গান
    নতুন শব্দে শেখো ভালোবাসাবাসি
    এই যে গ্লোবাল বয়ান
    আমি তারই হাত ধরি, সারা পৃথিবীর ব্যাবসার কাছে আসি
    কারা ভালো নেই, কারা মরে যাচ্ছে সে তুমি জানো?
    জানো কারা কুড়ি চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের আগে বেঁচে ছিল?
    আজ নেই?  না না ওরকম নয়, না না ওসবই বানানো
    সেই নদী মাঠ জনপদ কিচ্ছু ছিল না, পাখিদে ঝিলও
    তাহলে কোথায় ছিল? স্বপ্নে ছিল কি সেই স্বর্গের মতন বাগান?
    আজ সে-স্বপ্ন নেই। নেই।
    সেসব দৃশ্য আর মঞ্চে পাবে না স্থান
    নাটকের কোনও অঙ্কেই
    আজ শুধু নতশিরে দেখি মৃতদের উৎসব এই
    পৌনঃপুনিক শব্দ, গানের অবয়বে বাজে
    অশরীরী ছায়ামাত্রেই
    তবু তারা বাজে, বাজে একটানা, অবিরাম বাজে
    বেজে ওঠে যন্ত্রে যা মেকি
    বাজে পূর্বস্মৃতি মুছে, রোদ্দুর ঢেকে দেয় চোখে
    এখন কাচের ঘরে তৈরি স্বপ্নে আমি দেখি
    বৃদ্ধি ও বিকাশের সুখে বেজায় শান্ত আছে লোকে

    অথচ স্বপ্নে ছিল গান
    অথচ স্বপ্নে ছিল গেরিলার সাক্ষ্য বয়ান
    হাতে হাতে বেঁধে থাকা মাঠ, গোলাভরা ধান
    মেশিনের দেবতাকে শ্রমসঙ্গীতে আহ্বান
    যন্ত্রের অপলাপ চিরে
    মানুষের উচ্ছাসে ঘিরে
    শস্যে উচ্ছ্বলতা জেগে ওঠে গ্রামের কুটিরে
    যেমন পাহাড় পথে রোদ ওঠে  বর্ষার মেঘটিকে চিরে
    আমি তো দেখিইনি ওই আলো
    অথচ যুদ্ধে যারা গিয়েছিল,আমার ঘুমের চোখে তারা
    স্বপ্নের মত চমকালো
    আর তখনই তো গড়ে উঠছে পাহারা
    আমরা আধার দিয়ে ঘেরা
    আমরা মুনাফার হিসেবের গতে
    বেড়ি পরে যে যাহার মতো করি ঘোরাফেরা
    ব্যক্তিগত সুখের সংগতে
    আসলে ভাবলে দেখি পেপসির থেকে কোকাকোলা
    এটুকুই শুধু স্বাধীনতা
    আর  মেমফুর্তির সেই ফিরিওলা
    বলেছে অধিক কোনো কথা
    বলে যেতে পারো তবে শুনবে না বাকি কোনো লোকে
    এই ব্যবস্থাটুকু তার ব্যাবসার প্রাথমিক ধাপে
    নিশ্চিত করেছে সে ক্ষুরধার চোখে
    তবে সে রেখেছে ছুরি খাপে
    সুতরাং যুদ্ধও নেই আর,
    সুতরাং শান্তির এই গাঢ় পারাবার
    মেশিনের মতো নির্দেশ মেনে মেনে পার করে দিতে হবে দিতে হবে বহু বহু দিন
    আর সব ছবি মিলিয়েছে ক্ষীণতর ক্ষীণ
    আমি কি দেখেছি আভাসে- উত্তরাধিকার
    খানিক কি বুঝেছি আদল
    সম্মিলিত বিদ্রোহের, গণরোষ জানানোর, জোট বাঁধবার
    যে অধিকার প্রজন্ম হতে প্রজন্ম বয়ে যেত মানুষের দল-
    যেভাবে চারণ তার গানে স্থানের থেকে স্থানান্তরে
    জন্ম থেকে অন্য প্রজাতিতে 
    বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ ধরে
    বীজ পুঁতে দিয়ে যেত উর্বর মানবজমিতে
    যেভাবে শরীর দিয়ে, শিকড় দিয়ে তার
    পাথরসমাজ চিরে বুনে যেত ঘাস
    ক্রমশঃ সুরের থেকে ক্রমশঃ শব্দ থেকে শব্দাতীত দারুণ চিৎকার
    ছায়ার মতন সে মেলে দিত দেহাতীত কোনও মহাকাশ
    সেই শব্দ মন্ত্র হয়ে তন্দ্রার থেকে
    ডেকে দিত, ওঠো-ও, ওঠো হে, 
    দেওয়াল বাঁধতে হবে রোদ ছায়া জল মেখে মেখে
    আর কতদিন, লুকিয়ে রাখবে মুখ, বালিঢাকা আয়নার মোহে
    এভাবে গানের থেকে আলো ওঠে ঝলসিয়ে
    হঠাৎ কাজের ব্যস্ততা ভেঙে যেরকম প্রেম আসে
    সেরকমই হাতে হাত দিয়ে
    মানুষ আসে মানুষের পাশে
    মানুষ আসে বুঝে নেয় জল মাটি ফসলের ভাগ
    এইসব ইতিহাস এখন কি মনে পড়ে আর
    মৃত্যুঞ্জয়ীদের গল্প কি এখনও জাগায় অনুরাগ?
    এখনও কি মনে করি পৃথিবীর যত সম্ভার
    অনাগত প্রজন্মের জন্যে যে রক্ষা করে যেতে হবে-  ফের যদি  আসে-  ঐ ডাক
    বেড়ি-বন্ধন ভুলে
    আমাদের সূর্যস্পৃহা সব গ্লানি করে দেবে খাক
    পরাগ জাগাবে ফুলে ফুলে

    এসব সত্যি নয় তবু, স্বপ্নের থেকে রেশ তার
    আমি কি ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে, মেনে নেব বিকল্পহীনতার এই স্থান-
    নাকি সেই ডাক আমি শুনব আবার
    শুনে যাব প্রতুলের গান?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | 150.242.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:২৯541180
  • yes
  • Ranjan Roy | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৬541212
  • দারুণ বললে কম বলা হবে!!!
  • Somnath | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৬541236
  • ধন্যবাদ। আরেকটু এডিট ও দীর্ঘায়িত করলাম লেখাটা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন