এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিনোদিনী অপেরা : অর্ধেক জীবন 

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গত ৩১শে জানুয়ারি কলকাতার আঙ্গীকের প্রযোজনায় ' বিনোদিনী অপেরা ' নাটকটি দেখলাম। যে কোনো থিয়েটারের মানুষের কাছেই বিনোদিনী চরিত্রটি আকর্ষণীয়। থিয়েটারের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে বিনোদিনী জড়িয়ে থাকায় তাকে নিয়ে নাটকে থিয়েটার উইদিন থিয়েটার করার সুযোগ একটা বড় কারণ। তারপর অবন্তী চক্রবর্তীর মত পরিচালক, নামভূমিকায় সুদীপ্তা চক্রবর্তীর মত অনুভবী অভিনেত্রী, তথাগত চৌধুরী, পদ্মনাভ দাশগুপ্তর মত অভিনেতা, গান, কোরিওগ্রাফি, মঞ্চর উচ্চ মান। নাটক জমাতে আর কী লাগে? এর সঙ্গে আছে বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ধর্মীয় আইকন রামকৃষ্ণদেবের বিনোদিনীকে আশীর্বাদপর্ব। ফলে নাটক শেষ বেশ পরিতৃপ্ত মন নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলাম। একটাই খটকা ছিল। নাটকে বিনোদিনীর প্রেমিক কুমার বিনোদিনীকে হত্যা করতে উদ্যত হলে খোলা তলোয়ার হাতে ওথেলো থেকে সংলাপ বলে। সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু মাঝখানে ম্যাকবেথের তিন ডাইনি আর বিনোদিনীর রেফারেন্সটা বুঝতে পারি নি। একি নিছকই শেক্সপিয়ার কোট করে দেখানো। যেভাবে ভারী প্রবন্ধে কোটেশন দেওয়া হয় পাণ্ডিত্য বোঝাতে। কারণ বিনোদিনীর সঙ্গে লেডি ম্যাকবেথের কোনো সাদৃশ্য কোথাও নেই, নাটকেও ছিল না।

    যাই হোক, বেশ হ্যাপি মুডে বাড়ি ফিরে বিনোদিনী দাসীর ' আমার জীবন' বইটির সফট কপি পড়তে শুরু করলাম। বাপরে, একি তিক্ততাবোধ! এই বই বিনোদিনী যখন লেখেন তখন তাঁর বয়স একচল্লিশ-বেয়াল্লিশ। তার অনেক আগেই তিনি থিয়েটার ছেড়ে দিয়েছেন। সেই নিয়ে স্মৃতিচারণ আছে, কিন্তু সেসব সুখস্মৃতি নিয়ে কোনো আতিশয্য তাঁর নেই। মনে রাখতে হবে জীবনের প্রথম অভিনয়ের দিন থেকে তিনি একজন বেতনভুক অভিনেত্রী। একজন পেশাদার অভিনেত্রীর জীবনে যে নিষ্ঠা আর পরিশ্রম প্রয়োজন তাই নিয়ে বিবরণ আছে, কোনো তৃপ্তিবোধের কথা নেই। এই আত্মজীবনী বেরোনোর পরও বিনোদ প্রায় চল্লিশ বছর আরো বেঁচেছিলেন। তার সামনে জীবনের নিরর্থকতা, অতৃপ্তি, শূণ্যতার বিবর। তার একমাত্র আদরের ধন কন্যাসন্তানের মৃত্যু নিয়ে তাঁর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অনু্যোগ।

    বিনোদিনীর গুরুমশাই মহাপ্রাণ গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং বিনোদিনীর অন্য সতীর্থরা মিলে স্টার থিয়েটারের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনোদিনীর গুণমুগ্ধ গুরমুখ সিংয়ের কাছে অর্থসংগ্রহের জন্য বিনোদিনীকে গুর্মুখের কাছে আত্মসমর্পণে প্রায় বাধ্য করেন। এটুকু তিক্ততার বিবরণ অবশ্য নাটকে আছে। জানিনা,একজন নারীর অসম্মানের বিনিময়ে আদায় করা একটি রঙ্গমঞ্চের কি গুরুত্ব! তার ওপর নামকরণ নিয়ে বিনোদিনীর সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা তার গুরুমশাইরা করেছেন সেটার উল্লেখ নাট কে আছে। গিরিশ ঘোষ যে বিনোদিনীর আত্মজীবনী সেন্সর করার কথা বলেছিলেন সেকথা বিনোদিনীর বইয়ের ভূমিকাতেই আছে। আবার গুরমুখ সিং যখন একসময় জেদ ধরে যে প্রস্তাবিত থিয়েটারের অর্ধে সত্ত্ব যদি বিনোদিনীকে দেওয়া হয় তবেই সে অর্থ দেবে তখন গিরিশবাবু বিনোদের মাকে বুঝিয়ে
    (বিনোদের মা,ওসব ঝঞ্জাটে তোমাদের কাজ নাই, তোমরা স্ত্রীলোক অত ঝঞ্জাট বহিতে পারিবে না) সে প্রস্তাবের বিনাশসাধন করেন।

    এইসব জাগতিক আর্থিক ব্যাপারে অবশ্য বিনোদিনীর খুব আক্ষেপ যে হয়েছে এমন নয়। এসব তিনি ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পারতেন। তাঁর সমস্যা অস্তিত্ববাদী সমস্যা, ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করতে পারার সমস্যা,ভালোবাসতে না পারার সমস্যা,জীবনভর শূণ্যতাকে বহন করে চলার সমস্যা। এসব নিয়ে নাটক করলে দর্শকের প্রফুল্লচিত্তে বাড়ি আসা হবে না,নাটকই আদৌ জমবে কিনা কে জানে। একসময় বার্গম্যান এসব বিষয় ডিল করতেন। সে অবশ্য সিনেমা। নাটকের ক্ষেত্রে তুলনীয় উদাহরণ আছে নিশ্চয়। স্বল্পজ্ঞানের কারণে আমার জানা নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন