এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সমাজ চিন্তন ও স্বদেশপ্রেমের আলোকে স্বামী বিবেকানন্দকলমে ঈশ্বর অধ্যাপক ডক্টর নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়

    Saheli Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১১৫ বার পঠিত
  • | | | | অন্তিম পর্ব
    অন্তিম পর্ব

    বাংলাদেশের হৃদয় মন্থন করা স্বামীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত জননেতা সুভাষচন্দ্র বসুর অপূর্ব মূল্যায়ন তুলে ধরি —” স্বাধীনতার অখন্ড রূপের আভাস রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের মধ্যে পাওয়া যায়। Freedom, freedom is the song of the sou। -- এ বাণী যখন স্বামীজীর অন্তরের রুদ্ধ দুয়ার ভেদ করিয়া নির্গত হয় তখন সমগ্র দেশবাসীকে মুগ্ধ ও উন্মত্তপ্রায় করিয়া তোলে। “ যুবকদের উদ্দেশ্যে নেতাজি বললেন— “ সাম্যবাদ ও স্বাধীনতা মন্ত্র প্রচার করিবার জন্য তোমরা গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়ো …… স্বাধীনতার পূর্ব-স্বাদ নিজের অন্তরে পাইলে সকলেই পাগল হইয়া উঠিবে …. নিজের অন্তরে এই আলোক জ্বালো – সেই দীপ্ত হস্তে লইয়া দেশবাসীর দ্বারবর্তী হও – চাষার পর্ণকুটিরে, মজুরদের আবর্জনা পূর্ণ ভগ্নগৃহে …আর যাও মাতৃজাতির সমীপে, যাহারা শক্তিরূপিনী, অথচ সমাজের চাপে আজ হইয়াছেন অচলা। নেতাজির কন্ঠ যেন স্বামীজীর সঙ্গে সমস্বরে কথা বলেছে। বিবেকানন্দের ভাই ডক্টর ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত যথার্থই তাঁকে “Patriot and Prophet” আখ্যায় ভূষিত করেছেন। অ্যানি বেসান্তও লিখলেন... “ Vivekanda roused the strongest fee।inf of Nationa।ity.” স্বামীজীর সক্রিয় নেতৃত্বের কাল মাত্র পাঁচ বছর। এই নেহাতই অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের মুক্তিযজ্ঞের ঋত্বিক রূপে তিনি যে পবিত্র হোম।নল জ্বালিয়েছিলেন, উত্তরকালে হাজার হাজার নিবেদিত প্রাণ মানুষের পূত হবিঃ নিক্ষেপে তো সহস্র শিখায় জ্বলে উঠেছিল। দেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইতিহাস তার নির্ভুল সাক্ষ্য দেয়।

    সে যুগের অন্যতম দেশ নেতা বিপিনচন্দ্র পালের লেখাতেও তার সুস্পষ্ট সমর্থন মেলে –” তিনি আমাদের জাতীয়তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক ও প্রফেট। তিনিই আমাদের সর্বপ্রথম দেশ ও সংস্কৃতির সম্বন্ধে জ্বলন্ত বাসনার সুর তুলেছিলেন – তীব্র অনুভূতিময় সেই দেশপ্রেম যা গত দশকের জাতীয়তা বাদী প্রচারের মধ্যে প্রধান আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্বামীজীর বয়োজ্যেষ্ঠ লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের মারাঠি পত্রিকা এর আগেই লিখেছিল... “Swami Vivekananda is the real father of Indian Nationalism. He wanted to deve।op a modern India. Every Indian is proud of this father of Modern India.”
    ভারতের জাতীয়জাগরনের অন্যতম অগ্রপথিক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের দ্বিধাহীন স্বীকারোক্তি... “ We are all products of Swamiji’s influence.”
    স্বাধীনতাসংগ্রামী বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ লিখেছেন --- সুভাষচন্দ্র বসু আমাকে বলেছিলেন — “ ভারতবর্ষকে আমি ভালোবেসেছি বিবেকানন্দ পড়ে আর বিবেকানন্দকে আমি চিনেছি নিবেদিতায় লেখায় সিস্টার নিবেদিতার ভাষায় —”Swamiji was himse।f the।iving idea on which the word “nationa।ism conveys—--he was the incarnation of India's national life ..

    হেমচন্দ্র ঘোষের উদ্দীপ্ত ভাষায় তার আদর্শের প্রেরণাতেই পরাধীন ভারতবর্ষের কাপুরুষতার বিরুদ্ধে, অত্যাচারী ব্রিটিশ-রাজশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে সামিল হয়েছিল। তিনি প্রত্যক্ষভাবে এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু ভিন্নভাবে, প্রেরণার দিক দিয়ে সমগ্র জাতিকে তিনি ফায়ার করে দিয়েছিলেন। তিনি সংগ্রামের পটভূমি রচনা করে দিয়েছিলেন। তাঁর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মাহুতি দিতে এগিয়ে এসেছিল সহস্র-সহস্র সৈনিক এবং এই সংগ্রাম পরিচালনার জন্য যোগ্য সেনাপতিরা। নিজের স্বতন্ত্র স্বকীয়তাকে বিসর্জন না দিয়ে সম্পূর্ণ অনুদান দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে দেশের জন্য যা মঙ্গলকর তাকে অকপটে গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে স্বামীজীর স্বচ্ছ অভিমত “কলকাতার অভিনন্দন উত্তরে” ৮ই নভেম্বর ১৮৯৪ আমেরিকা থেকে লেখা পত্রে উল্লেখিত রয়েছে — ”আমার দৃঢ় ধারণা কোন ব্যক্তি বা জাতি অপর সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখে বাঁচতে পারেনা। আমার মতে, ভারতের পতন ও অবনতির এক প্রধান কারণ — জাতির চারিদিকে আচারের বেড়া দেওয়া। এর ভিত্তি অপরের প্রতি ঘৃণা।...আদান-প্রদান ই প্রকৃতির নিয়ম। বিস্তারই জীবন, ঘৃণায় মৃত্যু। যেদিন থেকে আমরা গুটিয়ে নিতে আরম্ভ করেছি সেদিন থেকে আমাদের মৃত্যুর সূচনা। যে মৃত্যু কিছুতেই থামানো যাবে না যতদিন না আমরা সম্প্রসারণের জীবনকে অবলম্বন করছি।

    ভন্ড প্রতারক স্বার্থান্বেষী দেশপ্রেমিকদের মুখোশ স্বামীজী বারে বারে খুলে দিয়েছেন।। নকল সৌখিন তিনদিনের সাজা তথাকথিত দেশদেশব্রতীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন —” প্রকৃত দেশ প্রেমিক হতে গেলে চাই তিনটি জিনিস : হৃদয়, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠা “। অন্তরের সমস্ত স্নেহ প্রেম ভালবাসা নিঃশ্বাসে উজাড় করে দিয়ে দেশকে পরম আগ্রহে আঁকড়ে ধরতে হবে, প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাসের বলিয়ান হয়ে দৃঢ় সংকল্পে ব্রতী হতে হবে এবং পবিত্র মন নিয়ে আত্ম নিবেদনের পাত্র উপুড় করে দিতে হবে দেশ মাতৃকার চরণে। অবসাদগ্রস্ত জাতির ক্লীবতাকে তিনি ভাঙতে চেয়েছিলেন এই অমোঘ বাণীতে — ” আগামী পঞ্চাশ বছর আমাদের গরিয়সী ভারতমাতাই আমাদের আরাধ্য দেবতা হন। অন্যান্য অকেজ দেবতা এই কয়েক বছরের ভুলিলে কোন ক্ষতি নেই। অন্যান্য দেবতারা ঘুমাইতেছেন তোমার স্বজাতি এই দেবতায় একমাত্র জাগ্রত। “ খাঁটি দেশ প্রেমিকের সমস্ত গুণাবলী বিবেকানন্দের চরিত্রে প্রকট হয়ে উঠেছিল। বৈদ্যান্তিক সন্ন্যাসী হয়েও দেশের স্বাধীনতার কথা তিনি অবিরত চিন্তা করতেন। দেশপ্রেমিক এবং মানবপ্রেমিক এই দৈত্য সত্তার সম্মিলিত রূপকে দেখতে পেয়েছিলেন গান্ধীজী বিবেকানন্দের মধ্যে। তিনি যে দরিদ্র নারায়ণ শব্দটিকে বারবার ব্যবহার করতেন তা বিবেকানন্দের কাছ থেকে নেওয়া। তিনি একটি ভাষণে বলেছিলেন “ বিবেকানন্দের নাম যাদুমন্ত্র। ভারতবর্ষের জীবনের তার অনপনেয় প্রভাব। “ দেড়শ শত বছর অতিক্রম করেও তিনি নিঃশেষিত হয়ে যাননি, বরঞ্চ তার উদ্দীপ্ত তেজগর্ভ বাণী এবং নৈতিক জীবন আচরণ এখনো পর্যন্ত শুধু ভারতবর্ষে নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে পথ -খুঁজে- না -পাওয়া বিভ্রান্ত মানুষের সঠিক নিশানায় চলার প্রেরণা জুগিয়ে চলছে।

    ভারতীয় সমাজ দেশের প্রতি বিবেকানন্দের নিখাদ অনুরাগ সর্বব্যাপী এই অস্থিরতার যুগে বিশেষভাবে স্মরণ করার মত। সার্বিক নৈতিক অধঃপতনের চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়া, কুসংস্কার আচ্ছন্ন অন্ধকারে ডুবে থাকা ও ধর্মের নামে ঘোর তামসিকতার ঘনঘটার শিকার হওয়া স্থবির বর্তমান ভারত বিবেকানন্দের প্রজ্জ্বল ও চরিত্র উদ্ভূত জ্ঞান কর্ম ও বাণীর দ্বারা কিছু পরিমাণেও উদ্ভূত হতে পারবে কিনা বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সময় সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    (Copyright January 2006)
    কন্যা সহেলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় প্রকাশিত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | অন্তিম পর্ব
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন