
এক বন্ধু প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বললো, "ঐ সিনেমাটা দেখিস নি, বেঁচে আছিস কেন?"
আরেক বন্ধু বললো, "এই ওয়েব সিরিজটা দেখ ভাই, জীবন পাল্টে যাবে।"
পাড়ার দিদি বললো, "এই বইটা এখনো পড়িস নি? নাবালক হয়ে আছিস তো! ছ্যাঃ!"
পাশের ফ্ল্যাটের বোন বললো, "এই র্যাপটা শোনো, দাদা। যা দিয়েছে না—উফফ্!"
এক ভাই বললো, "এই গেমটা খেলো নি এখনো, এ বাবা!"
এরসাথে পড়ে আছে হাজারটা বন্ধুর ইউটিউব চ্যানেলের কন্টেন্ট, তার সাথে নাটক করা বন্ধুদের শোয়ের বিজ্ঞাপন—কারো লেখা গল্প, কবিতা, বই, ছবি ইত্যাদি। এই চক্করে কত গান ভালোভাবে শোনা হয় নি, খেলার মাঠে নামা হয় নি, নাচটা তোলা হয় নি, দুর্দান্ত গল্পের কনসেপ্টটা নিয়ে লেখা শুরু করা হয় নি—আরো কত কিছু।
এমন এক অদ্ভুত সময়ে বাস করছি আমরা, যখন বিনোদন আর ইচ্ছেমত নয়, বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। চারিপাশে এত হাজার হাজার সৃষ্টিশীল মানুষ। তারা সবাই লক্ষ লক্ষ কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে—আর সেগুলো কনজিউম করানোর জন্য কোটি কোটি বিজ্ঞাপন আর প্রচেষ্টা।
এক সময়ে কাজ না থাকলে মানুষ বোর হয়ে উঠতো। সেই পড়ে পাওয়া সময় কাটানোর জন্য কিছু মানুষ কিছু শিল্প সৃষ্টি করতো, আর কিছু মানুষ তা উপভোগ করতো। বিনোদনের সেতু ধরে এক বিশেষ উপায় তৈরি হতো, যার প্রধান প্রয়োজন ছিল সময় কাটানো এবং কমিউনিকেশন।
তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বিনোদন হয়েছে ব্যবসা, শিল্প হয়েছে পণ্য, আর শিল্পী হয়েছে কেরানি। কিন্তু, যথেষ্ট উৎকৃষ্ট পরিমাণ শিল্প উপভোগ করতে হবে, নয়তো জীবন বৃথা—এই বিপুল সামাজিক চাপ বোধহয় সইতে হয় নি আগের প্রজন্মকে।
একটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা প্রয়োজন। আমার সময় আমি কিভাবে কাটাবো, তা আমি-ই বেছে নেবো। আমার উদ্বৃত্ত সময়ে আমি ফাঁকা দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে টিকটিকিটার পোকা শিকার দেখবো, নাকি চোখ বন্ধ করে আবোল তাবোল ভাববো, নাকি কিছুই করবো না—জাস্ট ল্যাদ খাবো। এগুলো আমার মন বেছে নেবে।
ফাঁকা সময় হলেই মোবাইল ঘেঁটে অ্যালগরিদম বা মানুষের রেকমেন্ড করা কন্টেন্ট গিলে যেতেই হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তন্ময় ভাট থেকে ট্যারান্টিনো হয়ে তারিণী খুড়ো—কারোরই গল্প আমার নিজের জীবনের গল্পের থেকে প্রয়োজনীয়, আকর্ষক, উৎকৃষ্ট নয়। আমি ও আমার মন—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, ব্যস!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।