এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ২৪ শে ৬২ 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩২৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আজকে এবিপি আনন্দে সুমন্দে দেখি অন্যরকম একটা কোট পরে পিছনে লাইব্রেরি সাজিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখাচ্ছেন। একাত্তরে কী হয়েছিল সেই নিয়ে, সঙ্গে কিছু হুঙ্কার। হাতে আবার একটা বই। দেখে মনে হল, ঠিক যেন ৬২ সাল। সুমন্দে অবশ্য তখন জন্মাননি, আম্মো না, কিন্তু কী হয়েছিল, সবার জানা উচিত। হয়েছিল চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ। দেশে তখন এর চেয়েও বেশি মার-মার-কাট-কাট পরিস্থিতি। কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত দু-টুকরো, বুদ্ধিজীবীরা গর্জে উঠছেন, দেশ পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে সম্পাদকীয়, যার নাম "শত্রুকে ঘৃণা"। তার অংশবিশেষ এরকমঃ  "শ্রী নেহেরু ও রাষ্ট্রপতি শ্রীরাধাকৃষ্ণন দুজনেই উপদেশ দিয়াছেন, চীনা জনসাধারণ ও চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে বিরূপতা ও বিদ্বেব পোষণ করা আমাদের পক্ষে উচিত নয়। দেশের অগণিত সাধারণ লোক যারা প্রতিবেশী চীনের অহেতুক মারমুখী আচরণে বিচলিত,ক্রুদ্ধ হয়েছে, যারা স্বদেশরক্ষার জন্য সর্বস্ব পণ করতে প্রস্তুত তাঁদের কাছে স্বভাবতই শ্রী নেহেরু ও শ্রীরাধাকৃষ্ণনের  এই 'সুসমাচার' অবিশ্বাস্য, অবান্তর ...  (আমাদের) আছে চীনের বিশ্বাঘাতকর্তা ও দস্যুতাবৃত্তির বিরুদ্ধে সুতীব্র ঘৃণা,পবিত্র প্রচণ্ড ক্রোধ ... শত্রুর এই চিত্র-চরিত্র জনসাধারণের সামনে তুলে ধরলে তবেই পবিত্র ঘ্বণার ইন্ধনে প্রতিরোধ শক্তি অনির্বাণ প্রজ্বলিত রইবে।"

    এর উপর ছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। তারাশঙ্কর লিখলেনঃ "ধাতুগতভাবে যারা হিংস্র ও আমিষভোজী জন্তু তারা ছাড়া যেমন নরখাদকতার নেশা অন্য কোনও জন্তর পক্ষে সম্ভবপর নয় - তেমনি যেসব মানুষ বা জাতির জীবন-ধাতুতে এই হিংসা ও রক্তের নেশা নেই তাদের পক্ষেও এই ধরণের জাতীয়তা বা ম্বভাবধর্ম গঠন করা সম্ভব নয় ... শুধু প্রকৃতিই নয়, তাদের আকৃতির মধ্যেও এর ছাপ থাকে।" ভাবুন একবার, চিনেদের নাকি আকৃতি দেখেই বোঝা যায় ব্যাটারা হিংস্র।  

    তৈরি হয়েছে "স্বাধীন সাহিত্য সমাজ"। তারা একখানা ইস্তেহার লিখে ফেলেছে। "ললিতকলায় ও শুদ্ধ জ্ঞান চর্চায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের আত্মসমাহিতিও বিক্ষুব্ধ হয়েছে দেশপ্রেমের মতো সামষ্টিক অনুভূতির আলোড়নে। সেদিন হয়তো দূর  নয় যেদিন তাদের ডাক পড়বে যুদ্ধক্ষেত্রে, বা দেশরক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন বেসামরিক অথচ যুদ্ধের মতোই কোন কঠিন বিপদ-সঙ্কুল কাজে।" সই করেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, সুবোধ ঘোষ প্রমুখ। 

    লিস্টি বাড়িয়ে লাভ নেই। মৈত্রেয়ী দেবী পরে সময়টার একটা জ্যান্ত বর্ণনা দিয়েছিলেন "অচেনা চীন"এ। একটু ইয়ার্কিও করেছিলেন। আর তখনই, এই উন্মাদনায় গা ভাসাতে অস্বীকার করেন অন্নদাশঙ্কর রায়। আশ্চর্যের কিছু না। ভদ্রসমাজ যখন দেশভাগ চাইছেন মনেপ্রাণে, তখন উনি তেলের-শিশি লিখছেন। কিন্তু এইসব বলার জন্য এই লেখা না। কথাটা হল এই, যে, ভদ্রলোকেরা যুদ্ধে যাবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, দেশ পত্রিকা পবিত্র ঘৃণার অঙ্গীকার করে ফেলেছে, "সাধারণ মানুষ"এর ইজারা নিয়ে ফেলেছে, উন্মাদনা তুঙ্গে, বঙ্গে বিরোধী বামরা দুই-টুকরো, নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি করে চলেছে, কংগ্রেসের সামনে কার্যত ফাঁকা মাঠ, এর নিট ফলাফল কী হয়েছিল। একটা তো যুদ্ধের ফলাফল। চিন বহুদূর ঢুকে পড়েছিল, তারপর আবার পিছু হটে নিজেদের দাবীর এলাকা গুলো নিয়েই ভারত ছেড়ে চলে যায়। আর দুই হল ভোট। পরের নির্বাচন হল ৬৭ তে। কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল, তৈরি হল প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার। অজয় মুখার্জি মুখ্যমন্ত্রী, জ্যোতি বসু উপমুখ্যমন্ত্রী। দেখা গেল, ভদ্দরলোকের উন্মাদনার সম্পূর্ণ উল্টোদিকে লোকে ভোট দিয়েছে। 

    তো, হয় এসব সুমন্দের জানা নেই, কিংবা জানলেও কিছু করার নেই। আমরা জানি, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতায়, নানা অনাচারও হচ্ছে। আমরা জানি আরজিকরে সিভিক পুলিশ এসে কর্মরতা ডাক্তারকে খুন করে একটা ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু এর বাইরে যা কিছু, সবকটাই উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা, জনতার ঠিকা নেবার চেষ্টা। এইসব আরও বাড়বে। যারা এই মিডিয়ার ল্যাজ ধরে ঝুলে ছিলেন, বা আছেন, তাঁদের একটা কথা জানা দরকার, উন্মাদনা ৬৭তেও জেতেনি, এখনও জিতবেনা। গণভোট হলে দেশভাগটাও হতনা ৪৭ সালে। এসব ন্যক্করজনক জিনিসের সমূলে বিনাশ তখনই হয়ে যেত। হয়নি, আর কী করা যাবে। 
     
    সুমন্দে আর মেজর ময়ূখরঞ্জনের ভিডিওগুলো পারলে দেখে নেবেন। দর্শনীয় জিনিস। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • র২হ | 2607:fb90:e3b3:5481:5810:b6dc:7e64:***:*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:২৭539981
  • আচ্ছা মেজর ময়ূখরঞ্জন একটা সত‍্যি লোক? আমি ভাবি সাংবাদিক।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:d01:6b02:c8cd:***:*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯539982
  • হায়, আমিও তো ধাতুগতভাবে হিংস্র ও আমিষভোজী জন্তু :-(
     
    আর এই মেজর ময়ূখরঞ্জন কে? আগের দিনও সৈকতবাবুর একটা লেখায় এনার নাম পড়লাম। 
  • MP | 2401:4900:731a:c67f:e69d:e476:bfdf:***:*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫539987
  • তারাশঙ্করের এই সময়ে চীনের উপরে লেখা বইটা পড়েছি l ভদ্রলোকের মধ্যে এতো ভীষণ state স্পন্সর্ড sinophobia কাজ করছিলো যে তিনি সেসময়ে এরকম ছাইপাঁশ লিখতে পেরেছিলেন l কোলকাতার একমাত্র চীনা কমিউনিটিকে রাজস্থানের দেওলি কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয় এসময়েই l ব্রিটিশ আমলেও কখনো এসব হয়নি l এখনকার সময়ে যে স্টেট manufactured normalization of islamophobia দেখা যায় , মনে হয় তার সূচনা হয় ওই সময়ের সিনোফোবিক প্রোপাগান্ডার মধ্যে দিয়েই l 
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:১৮539999
  • ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ খুব ফেসবুকে লিখত। অনেকেই পছন্দ করত। এখন হঠাৎ দেখি একটি চাড্ডি চ্যানেলের সঞ্চালক। খুব লাফ ঝাঁপ দিয়ে খবর পরিবেশন করে। ফেসবুকে ও লেখে। গুরু সৈকত ওর 'রূপ' গুণ মুখধ বলে প্রায় সব লেখাতে পাওয়া যায়।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩540000
  • চীন ভারত যুদ্ধের সময় ভারতে বহু যুগ ধরে বসবাসকারী চিনাদের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গেছিল। খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। শুনেছি আজ ও ওদের ভারতের নাগরিকত্ব নেই।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৩540001
  • চীনারা ম্যাকমোহন লাইন মানত না। ১৯৬২ সালে ওই লাইন ডিঙিয়ে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। নেহেরু ভারতের যুদ্ধে প্রস্তুতি না খতিয়ে দেখে ওদের মেরে বার করতে গেল। সরাসরি যুদ্ধ না করে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল।  তৎকালীন কমিউনিস্টরা তাই বলতে লাগলো ভারত ই  আক্রমনকারী। ওদের নেতাদের জেলে পাঠানো হল। যুদ্ধে ল্যাজে গোবরে হয়ে নেহরু মার্কিনী বিমান বাহিনীর সাহায্য চাইল। ওরা কিউবা মিসাইল সংকটে সাহায্য করতে এল না। চীনারা বেশ কিছু এলাকা দখলে রেখে নেফা এলাকা ছেড়ে দিল। ওরা চাইলে কলকাতা অব্দি আসতে পারত। জাত পাত বিদীর্ন ভারতে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটানোর বাসনা ছিল না। তবে আজকের অরুণাচল ওদের হতে পারত। হয়ত আমেরিকার সাহায্য আসার আশঙ্কা করছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন