এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নতুন ধর্ম

    জাহিদুল ইসলাম সবুজ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯২ বার পঠিত
  • অনভিজ্ঞ সিফাত তার অনভিজ্ঞ প্রেমের দিনে কীভাবে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে শুধু সম্ভাব্য প্রেমিকার হাসির রেকর্ডিং শুনে শুনে আর গুনে গুনে হাসির শব্দ সেই আলাপ একা একা নিজের সঙ্গে করে জহু হলের পুকুর পাড়ে এক রাতের অন্ধকারের কোণে বসে আছে।

    প্রেমে পড়ার দিনগুলো এত ক্লান্তিকর তবু সব সহনীয় এসব ভেবে নতুন প্রেমিকাকে কল দিবে ভেবে পিছলা পিছলা বৃষ্টির রাতে পাগলের মতো হাসছে। সে হাসি ছড়িয়ে পড়ছে জহু হলের পুকুরের জলের ওপর ছলকে ছলকে । এই হাস্যকর তবু মানবীয় দৃশ্য চোখে পড়ল আরেক রাত জাগা হতাশ যুবক হলের ছোট ভাই শাব্রানের ।

    বড় ভাইকে এমন হাস্যকর ন্যাকা পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে চাওয়া বড় রকমের বেয়াদবি জেনে শুধু বলল—ভাই ধরাইছি দিবেন নাকি একটা টান। গাঁজা ফুল পোড়ানোর গন্ধ সংবিৎ ফিরে পায় সিফাত আর প্রথম দীর্ঘটানের পরই বলে বসল শাব্রান মেয়েদেরকে বানাইছে যে আল্লাহ সে আল্লাহ না জানি কত জটিল অঙ্ক। বুঝতে না পারলে সারারাত মাথার চুল ছিঁড়লেও কোনো লাভ নাই আর একটু বুঝতে পারলেই গণিতের রঙে হাসিখুশি গণিত। শাব্রান এই কঠিন কথা বুঝতে নিজেও আরেকটা দীর্ঘ টান দিল। এমন সে টান যেন দুনিয়ে শুষে নিবে আরেকটু সময় পেলে।

    আর সে চিরচারিত ছোট ভাইয়ের ভঙ্গি নিয়েই বলল, ভাই ঠিকই কইছেন। গাঙ্গের প্যাচ আর মাঙ্গের প্যাচ বোঝা সত্যিই কঠিন। একবার কোনো করুণ স্রোতে আটকাইছেন তো মরছেন— সাঁতারে ইংলিশ চ্যানেল আর বাংলা চ্যানেল যেইটাই পাড়ি দেওয়ার মেডেল থাকুক না কেন আপনি পড়ে যাবেন বিশাল হাবুডুবুতে। দম যেন মোর রয় না পরিস্থিতি।

    কথার প্রসঙ্গ চলে যায় তখন একদম অন্য দুনিয়ার সিফাত বলে বসে, অশ্লীলতা করো না শাব্রান, ধর্মের পথে আসো। ধর্ম আমাদের কী শিক্ষা দেয়? ধর্ম আমাদের বলে জবান ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে। এর ব্যতয় ঘটালেই জাহান্নাম কনফার্ম।

    শাব্রানেরও কঠিন দার্শনিকতা একলাফে নিচে নেমে যায় আর হুট করে বলে বসে আমাদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া দরকার, চলেন ভাই পুকুরে দুই ভাই গোসল করে তাহাজ্জুদ আর ফজরটা পড়েই ঘুমাই।

    সিফাতেরও মনে হলো কথা মন্দ না। পুকুরে নেমে পাক-পবিত্র হওয়ার দোয়া পড়ে পকেটে থাকা আতর মেখে ভেজা শরীরেই রাত ৩টায় ভেজা মাঠে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। যেন এক বেহেশতি আখ্যান তৈরি হয়ে গেল মাঠে।

    সুবহে সাদিকের কালে চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে ভেসে আসে। নামাজ পড়ে মনে হলো ঘুমানো দরকার রাত তো শেষ হলো ভোরটাকেও তো শেষ হতে দেওয়া যায় না নির্ঘুম। ভেজা পোশাক পাল্টে এক আরামের ঘুমে শরীর এলিয়ে দিলো দুজনেই। একটা বিশুদ্ধ ঘুম ভেঙে দুজনেরই মনে হলো গেল রাতটা ইবাদতের নামে ফাইজলামি হয়ে গেছে খুব। এবার অন্য কিছু হোক। বিছানার তলে স্কোরের অল্প একটু অংশ। সেইটুক দিয়ে একটা কুইন জয়েন্ট হলো। দুইজনের জন্য ফেয়ার এনাফ ওই ঘুম ভাঙার পর প্রথম সকালে। নিমাই স্টাইলে পট করে আবার নতুন দিগন্তের ধারে পৌঁছে গেল।

    শাব্রান বলল ভাই আমাদের আসলে সব ধর্মের প্রতি ইমান আনা প্রয়োজন কেননা আমরা তো জানি না কোন ধর্ম আমাদের উদ্ধার করবে শেষে। চলে গেল পূজা করতে। কোনো মূর্তির পূজা নয় সরাসরি সূর্যের কারণ সূর্য পৃথিবীর শক্তির আধার। জহু হলের মাঠের ওপর সুর্যটা প্রভু বেশে আলো আর তাপ দিচ্ছে। ওরা বলছে হে সূর্য বাড়িয়ে দাও মাধুর্য এ জীবনের ও জীবনের। জীবনের মানে হোক আরও সুন্দর আরও স্পষ্ট। পৃথিবীর সব এলোমেলো দিনকে রাঙিয়ে রাখো সব সময়। প্রার্থনা শেষ করার কোনো নিয়ম খোঁজে পাচ্ছে না। ক্রস একে আমেন বলে নাকি ওঁম শান্তি বলে কিংবা সাদাক্কাল্লাহুল আলিউল আজিম বলে শেষ করবে বুঝতে পারছে না। প্রার্থনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে হতেই থাকে। শেষমেশ কোনো নিয়মের ধার না ধেরেই শেষ করে প্রার্থনা। পেটে খবর হয় ক্ষুধার। খেতে হবে এখনই ক্যান্টিনের ভাত শেষের পথে যেহেতু। দুজনেই সয়াবিন ফলের অর্ডার দেয়। আর মন ভরে ভাত খায় তিন প্লেট করে।

    বেশ কিছু দিন বেশ কয়েকটা ধর্ম পালন করে বুঝল সময় এসেছে নতুন ধর্ম বানিয়ে পালন করার। কোনো ধর্মই তাঁদের সান্ত্বনা দিতে পারছে না। মনে হচ্ছে ধর্ম বানানো উচিত। আর সেই ধর্মের প্রচারও দরকার। কিন্তু সবাই গাঁজাখোর বলে তাড়িয়ে দিবে এই সম্ভাবনা নিয়ে তারা ভাবতে থাকতে পারসোনাল কোনো ধর্ম পালন করা উচিত। পৃথিবীতে কত হাজার হাজার ধর্ম। এরমধ্যে একটা খুব ছোট ধর্মও থাকতে পারে। যেখানে শুধু দুজন থাকবে। তাঁদের মৃত্যুর পর এই ধর্মটা বিলীন হয়ে যাবে। কিংবা এমন হতে পারে সেই রাতের মতো আর কেউ যদি পুকুরপাড়ে এসে প্রেমিকার জন্য কাঁদে আর সহানুভুতিশীল ছোট ভাই আসে তারাও এই ধর্মের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে কোনো আধ্যাত্মিক ছোঁয়ায়। কোনো চিহ্ন না রেখেও শুধু অদৃশ্য ভালোবাসা থেকে এই ধর্ম দুইজন দুইজন করে মানুষের ভেতর ঢুকে যেতেই পারে। নামহীন এই ধর্ম পালন কীভাবে হবে! এর আকিদাই বা কী থাকবে কিছুই ঠিক করল না তারা। কিন্তু তারা ভেবে বসল এই ধর্মই পৃথিবীতেই জোড়ায় জোড়ায় পালন হতে থাকবে।

    এরপর বহুদিন পর দুজনেরই পড়াশোনা শেষে একজন বিদেশ চলে যায় আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা হয় এই দেশেই। আর ওরা দুজন ভাবে এমন ধর্ম প্রতিদিনই হয়তো রাতের গোপনে কেউ না কেউ পালন করছে। ওরা মাঝেমধ্যে ফোনে হাসে। দুই দেশে বসে বসে। একজন সমুদ্রের পাড়ে ভেড়া দেখতে দেখতে ওয়াইন খায়। আরেকজন বারে বসে একের একের এক বিড়ি ধরায় প্রতি প্যাগের পরপর।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন