এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সরকারী হাসপাতালে দৌড় করায় মরণাপন্ন রোগীকে

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ৬৭ বার পঠিত
  • শুভেন্দু দেবনাথের লেখা
     
    দুপুরবেলা বন্ধু Amrita Mukherjee  ফোন করেছিল। কিন্তু দাঁতের ব্যাথায় ধরতে পারিনি। পরে যখন ওকে ফোন করি তখনও ও অন্য কলে ব্যস্ত ছিল। অনেকেই জানেন অমৃতা জাগরী বলে একটা সংস্থা চালায় মূলত অটিস্টিক, ডাউনসিন্ড্রোম বাচ্চাদের নিয়ে। সন্ধ্যেবেলা যখন অমৃতা আমাকে ফোন করে ও পাগল অবস্থা। ওর একটা বাচ্চা পুড়ে গেছে। সেই বাচ্চাটিকে আরজি কর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওপিডিতে চিকিৎসা হলেও ওকে ভর্তি নিচ্ছিল না কিছুতেই। এরপর অমৃতা আমাদের পরিচিত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাদের সবার প্রিয় ডাক্তার রুমেলিকা কুমার তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তারপরও বাচ্চাটিকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। রুমেলিকার সঙ্গে আমারও কথা হয়। এরপর আমি অমৃতাকে কয়েকবার ফোন করি, কিন্তু ও তখন নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল, ফলে ফোনে ওকে পাইনি। এই মাত্র অমৃতা ফোন করল আমাকে ( রাত ১১টা ৫০ মিনিটে)। বাচ্চাটিকে এসএসকেএম এ নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়, বার্ন ইউনিট হাত তুলে দিয়ে পাঠায় মেডিসিন বিভাগে, মেডিসিন বিভাগ আবারও বাচ্চাটিকে পাঠায় বার্ন ইউনিটে, বার্ন ইউনিট পাঠায় ইএনটি বিভাগে। ইএনটি জানায় তারা যেটুকু করার করে দিয়েছে, তারা ইন্টারনাল কাজ করবে নাকি এক্সটার্নাল। তাদের হাতে কিছু নেই। অমৃতার মুখে যেটুকু শুনলাম প্রায় গত ৯ ঘণ্টা ধরে তারা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ছুটে চলেছে, এখনও পুড়ে যাওয়া ওই অবোধ শিশুটিকে ভর্তি কর‍তে পারেননি।

    মনে আছে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে শেষ মিটিংয়ে রাজ্য প্রধান জানিয়েছিলেন হাসপাতালে শুধু তুলো পাওয়া যায়  এই কথার জন্য নাকি বাংলার মুখ পুড়েছে। সেন্ট্রালের খাতায় চিকিৎসা পরিষেবা বিভাগে বাংলা নাকি এক নম্বরে। এই তো পরিস্থিতি। যেখানে একজন মেন্টালি চ্যালেঞ্জড বাচ্চা  পুড়ে গেলে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ছুটিয়ে মারা হয় কিন্তু চিকিৎসা হয় না। একটা পুড়ে যাওয়া শিশু অপেক্ষা করে থাকে কখন কোন হাসপাতাল তাকে দয়া করে ভর্তি নেবেন। কারা যেনো বলছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করছেন এখানে মানুষের কোনও স্বার্থ নেই? জুনিয়র ডাক্তাররা যে ১০ দফা দাবি করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল রেফারেল সিস্টেম, অর্থাৎ কোন হাসপাতালে কত বেড আছে, কী কী সুবিধা আছে, এক্সরে আছে কি না, ইসিজি আছে কি না তা পোর্টালের মাধ্যমে রোগীর বাড়ির লোক জানতে পারবেন, যার ফলে দ্রুত তারা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারবেন। এটা যদি মানুষের জন্য, রোগীদের জন্য দাবি না হয় তাহলে কাদের জন্য দাবি ছিল?

    রাজ্যের অন্যতম নামী হাসপাতাল যখন একটা পুড়ে যাওয়া শিশুকে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগ ঘোরায় তখন কী অবস্থা হয় সেই রোগীর পরিবারের? বাচ্চাটার যন্ত্রণার কথাটা আর লিখলামই না। এই লেখাটা শুরুর আগে অমৃতার সঙ্গে যা কথা হল, তাতে বাচ্চাটার কী অবস্থা এখনও জানা যাচ্ছে না, ভর্তিও হচ্ছে না। এটা অপরাধ নয়? দেশের কাছে, দশের কাছে মুখ বাঁচাতে শুধু বড় বড় বুলি, রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতলের ছবিটাই এই। একজন বয়স্ক মানুষ পুড়ে গেলে কী যন্ত্রণা হয়, নিজের জীবন দিয়ে আমি তা জানি, কারণ আমার দাদা জ্বলে গিয়েছিল বাজিতে। জানি সেই যন্ত্রণার ভয়াবহতা। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনার পর, ক্ষত পরিষ্কারের যন্ত্রণায় দাদার চিৎকারে আমি, আর আমার ঠাকুরদা কানে হাত দিয়েও থাকতে পারতাম না ঘরে। সারা পাড়া সেই সময় কানে আঙুল দিয়ে থাকত। আর এখানে তো একটা শিশু, তাও এমন শিশু যে নিজের যন্ত্রণার কথাটা ভালো করে বলতে পর্যন্ত পারে না। কেনো এমন সিরিয়াস অবস্থার রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ছুটতে হবে? নামে ভারি ভারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলি গেলো কই? কেনো আরজি করে ভর্তি নেওয়া হল না শিশুটিকে? এমনকী সন্ধ্যেবেলা ওপিডি থেকে কোনও লিখিত কিছু দিতেও অস্বীকার করা হল কেন? কেনো এনআরএসে দৌড়তে হল? পরে রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে কেনো এসএসকেএম যেতে হল? কেন ভর্তি না নিয়ে এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ঘোরানো হল রাজ্যের সবচেয়ে নামী সরকারি হাসপাতালে? প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর জানা নেই। যদি বাচ্চাটির কিছু হয় কে দায় নেবে? আমার প্রোফাইলে শাসক দলের অনেক সমর্থক আছেন জানাবেন আপনার বাড়ির শিশুটির সঙ্গে যদি এমন হয় (ঈশ্বর করুন যেনো না হয়) মেনে নেবেন তো? যদি শিশুটির কিছু হয় আমি জানি অমৃতা ছেড়ে কথা বলবে না, যতদূর যেতে হয় ও যাবে, দরকারে আমরাও যাব। খাতায় কলমে রাজ্যের সোনায় মোড়ানো স্বাস্থ্য পরিষেবা যে আসলে ঠুনকো এক অবোধ শিশুর পুড়ে যাওয়া সেটাই প্রমাণ করে। চুপ থাকুন এরপর আপনারা। পয়সা থাকলে বেসরকারি হাসপাতাল না হলে দৌড়ন আরজি কর থেকে এনআরএস, এনআরএস থেকে পিজি, পিজিতে বার্ন ইউনিট থেকে মেডিসিন ইউনিট, মেডিসিন ইউনিট থেকে ইএনটি, শুধু দৌড়ে যান।

    Suvendu Debnath
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন