এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গনবিদ্রোহ নামক কাঁঠালকে কিলিয়ে পাকানোর চেষ্টা চলছে -- কল্যাণ সেনগুপ্ত

    kalyan sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৩০৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গণবিদ্রোহ নামক কাঁঠালকে কিলিয়ে পাকানোর চেষ্টা চলছে
    -- কল্যাণ সেনগুপ্ত

    পরপর তিনটি নির্বাচনের ফলে মহাশূন্যে বিরাজমান সিপিএম দল তাদের শেষ ভরসার নেতা বুদ্ধবাবুর চিরবিদায়ের দিনই দেহদানের পর প্রায় সাথে সাথেই পেয়ে গেলেন তাদের অকল্পনীয় কাঙ্খিত একটি বিষয় - হাসপাতালের মধ্যেই এক ডাক্তার ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের এক ভয়ংকর নির্মম ঘটনা। ফলে এরকম একটি হাতে গরম বিষয় নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে সময় লাগলোনা। যুব নেত্রী মিনাক্ষী বিশাল দলবল নিয়ে তৎক্ষণাৎ সটান পৌঁছে গেলেন NRS থেকে RGKar হাসপাতাল। কারণ, লোকজনকে খবর দিয়ে যোগাযোগ করার পর সংগঠিত করার জন্য কোন সময় নষ্ট করতে হোলনা, বুদ্ধবাবুর কারণে আগে থেকেই সবাই ভিড় করে জড়ো হয়েছিল। ফলে ঘটনাস্থলে দ্রুত সদলবলে পৌঁছে গিয়ে সক্রিয় হস্তক্ষেপ করতে সময় লাগেনি।

    এই নির্মম ঘটনার সাথে সাথেই RGKar এর জুনিয়র ডাক্তাররাও কর্মবিরতি ও ধর্না অবস্থানে বসলেন বিচারের দাবিতে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সমাজের সর্বত্র যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হোল। এরই সাথে একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটলো। কিছু সমাজসেবী সংগঠনের কয়েকজন মহিলা কর্মী ১৪ই আগষ্ট মহিলাদের রাত দখলের প্রোগ্রাম নিয়ে প্রচার শুরু করলেন সোস্যাল মিডিয়ায় এবং এই প্রোগ্রামে এক অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেল সর্বত্র। উদ্দেশ্য ছিল, নারীদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নারীশক্তির আত্মাধিকারের সোচ্চার উচ্চারণ। বলা হয়েছিল, মাত্র তিনটি নির্দিষ্ট স্থলে মহিলাদের সবাইকে জড়ো হয়ে এই নির্মম ঘটনার  প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে, কিন্তু শেষমেশ সেটি প্রায় সাড়ে তিনশো জায়গায় এবং প্রায় ৩/৪ লাখ মানুষ তাতে সামিল হন অর্থাৎ মহিলাদের সাথে বহু পুরুষ মানুষও সামিল হয়েছিল স্বতস্ফূর্তভাবে। সংগঠকরা চেয়েছিলেন প্রতিবাদ আন্দোলনটির চরিত্র সম্পূর্ন অরাজনৈতিক রাখতে, কিন্তু সেটি সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। বেশ কিছু জায়গায় বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটে ও বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। কেষ্টপুর অঞ্চলে পুলিশের উপর আক্রমণ ও গাড়ি ভাংচুর হয়। এক মহিলা পুলিশ কর্মী চোখে বেশ গুরুতর আঘাত পান। কিন্তু পুলিশ খুবই সংযত ছিল। 

    মহিলাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল বলেই পুলিসের প্রতি কড়া নির্দেশ ছিল শুধুই উপস্থিত থাকার, নজর রাখার ও আইন শৃংখলার বিশেষ সমস্যা না হলে কোন প্রকার কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ না করার। সেই সুযোগ নিয়ে মিনাক্ষী ও কলতান বাহিনীর লোকজন RGKar এর ভেতরে থাকা মাত্র দু চারশো পুলিসের ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে ভাংচুর চালায় এবং তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, ফলে ওই ঘটনায় ধরপাকড়ে ধৃতরা জামিনে মুক্ত হবার পর তাদের সম্বর্ধনা দেবার মধ্য দিয়ে বিষয়টা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। এই ভাংচুরের ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, DYF এর পতাকা নিয়ে যারা ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকলো, তারপর তারা কি করলো, চুপচাপ বসে ভাংচুর দেখলো? স্বাস্থ্য ভবনের আন্দোলনে মারদাঙ্গা করে তৃণমূলকে দোষী সাব্যস্ত করার চক্রান্ত ইতিমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে কলতানের অডিও মারফৎ। অর্থাৎ তৃণমূলকে ভিলেন বানাতে সিপিএমের চক্রান্ত থেমে নেই। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, চালাকির দ্বারা কোন মহৎ কাজ হয়না। সিপিএম বিবেকানন্দকে মানেও না, ফলে ওদের কাছে  ওসব ফালতু(!) কথার কোনও মূল্যও নেই।

    ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এক মর্মান্তিক ও  অতীব শিহরণ জাগানো ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে। এক সাইকিক ক্রিমিনাল এটি ঘটিয়েছিল এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়ে। একথা অনস্বীকার্য যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমেই হাসপাতালে যাতায়াতের সুযোগ ছিল তার। কিন্তু তার এই ভয়ংকর রূপটি সম্বন্ধে কেউই সম্ভবত আগেভাগে অবগত ছিলনা। ফলে এই চরম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটে গেল। সরকারের তরফেও কিছু ভুল প্রাথমিক ভাবে ঘটে। যথা, হাসপাতালের অধ্যক্ষকে ঘিরে এক দুর্নীতি ও ভয়ের পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ ছিল অনেকের মতো শাসকদলেরই একাংশের তরফেও। প্রশাসনে তার অন্যায় প্রভাবও ছিল যথেষ্ট এবং সেটি তিনি নিজ স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন পুরো মাত্রায়। সেসময় তিনি সরকারের গুড বুকে। সরকারের এরকম ভুল হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সরকারের যে ভুলটির জন্য মারাত্মক মূল্য চোকাতে হোল সেটি হচ্ছে, এমন এক সাঙ্ঘাতিক দুর্ঘটনার পরেও তাকে অন্য একটি হাসপাতালে ট্রান্সফার করা। এই ঘটনার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের ফলে সিএম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুল ভাঙে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অচিরেই তার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিট (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করেন। যদিও কিয়ৎকাল পরেই কোর্টের নির্দেশে সেটি সিবিআইয়ের হতে যায় এবং সেটার পূর্ণতদন্ত করছে।
     সন্দীপ ঘোষের উপর সরকারের আস্থা জ্ঞাপন একটি বড় ভুল সন্দেহ নেই। কিন্তু এমন ভুলতো সর্বক্ষেত্রে ও সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। একটি উদাহরণ দিই। সিপিএম জমানায় মেডিক্যাল কাউন্সিলে ছিলেন সব আলিমুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন প্রবীণ ডাক্তাররা। সেসময় গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দন্ডমুন্ডের কর্তা ছিলেন তাঁরাই। সেইসময় ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে তুলনাহীন অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছিল। তাঁকে তাঁর আবিষ্কার, বিশ্বে প্রথম নলজাতক শিশুর জন্মের কৃতিত্বকে নাকচ করে দেবার জন্য সম্ভবত তিনি নোবেল পুরস্কার থেকেও বঞ্চিত হন। এরপরেও তাঁকে রেহাই দেওয়া হয়নি, ট্রান্সফার করা হয় সুদূর বাঁকুড়ায়। একদল পরশ্রীকাতর দলদাস ডাক্তারদের পাল্লায় পড়ে তাঁকে চরম অপমান, বঞ্চনা ও হতাশায় আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়। এই অন্যায়ের কোন সদুত্তর আছে সিপিএম নেতাদের? এর সাথে মমতার এই ভুল কি  কোন ভাবেই তুলনীয়?

    ১৪ আগস্ট মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচিতে যে মহিলা জাগরণের স্বতস্ফূর্ত সাড়া মিলেছিল, পরবর্তীকালে সেই  আন্দোলনের রেশ টেনে ধীরে ধীরে তাকে সম্পূর্ন কব্জা করে অরাজনৈতিক ভাবের আড়ালে ঝান্ডাহীন রাজনৈতিক কার্যক্রমে পরিণত করতে সচেষ্ট হয় সিপিএম এবং ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতের প্রোগ্রাম থেকেই তা পরিষ্কার হতে থাকে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে হেনস্থা করে ভাগিয়ে দেওয়া, তৃণমূলের পতাকা পোড়ানো এবং পরে বিজেপির পতাকাও পুড়িয়ে  রাজনীতির উলংগরূপ প্রকাশিত হবার ফলে রাজনীতি সচেতন মানুষের আর কিছু বুঝতে বাকি থাকেনা। আর এখন কিছু JDr দের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

    সমাজের বহু রাজনীতিতে অনাগ্রহী মানুষ একসময় খানিকটা গণউন্মাদনায় বা হুজুগে পরে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল গোটা রাজনীতির গভীরে না গিয়ে এবং সেটি মূলত ছিল শহর কেন্দ্রিক। কিন্তু অচিরেই সিপিএমের দাপাদাপিতে বিষয়টা বুঝতে পেরে তাদের ভুল ভাঙে। তবু কিছু মানুষ এখন JDr দের আন্দোলনের সমর্থনে দাঁড়িয়ে সরকারকে কিছুটা শিক্ষা দিতে চায়। আন্দোলনে এখন যথেষ্ট ভিড় হচ্ছেনা বলে সিপিএম নেতৃত্বকে সরাসরি বলতে হচ্ছে অংশ গ্রহণের জন্য। সিপিএমকে যারা ভোট দেয়, তাঁদেরই একটা বড় অংশকে দেখা যাচ্ছে এই আন্দোলনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এদের লম্ফঝম্প আর গালাগালির বহর দেখলে মনে হয় যেন এরা ক্ষমতায় এসেই গেছে শুধু ফল ঘোষণা বাকি। 

    সিবিআই কোর্টে চার্জশিট জমা দেবার পরে দেখা যাচ্ছে, এদের উৎসাহ উদ্দীপনা গায়েব, বরং উল্টে এখন সিবিআইকেই দুষছে। অথচ দুদিন আগেও পুলিসকে গালি দিয়ে সিবিআইয়ের প্রশংসায় ছিল পঞ্চমুখ। মৃতার মা বাবা থেকে সিপিএম বিজেপি এমনকি বিচারপতিদেরও অগাধ আস্থা ছিল সিবিআইয়ে। কিন্তু এখন সত্যটা সামনে আসতেই এতদিনের বিশ্বাস থেকে গড়ে ওঠা নানা ভাবনার কল্পকাহিনী ভেঙে চুরমার। 

    তবুও একথা মানতেই হবে যে, মমতা বিরোধী সমস্ত শক্তি সমূহের সম্মিলিত প্রচারের ফলে সমাজের একটা বড় অংশের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, তৃণমূল সরকার ও দলের একটা বড় অংশ যথেষ্ট দুর্নীতিগ্রস্থ এবং এইসব অভিযোগের কোন সারবত্তা নেই, এমনটাও নয়। দুর্নীতি আছে, অবশ্যই আছে কিন্তু বাজারি মিডিয়া যেভাবে চিত্রিত করে তেমনটা আদপেই নয়।  তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতারের পর যেভাবে  দু পাঁচশো কোটির গল্প ছড়ানো হয়, কিন্তু পরবর্তীকালে চার্জশিট দাখিলের পর দেখা যায় সেটা দু পাঁচ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এতদসত্বেও দুর্নীতি আছে এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি।

    ধর্ষনের মতোই দুর্নীতিও এক সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি তৃণমূল জমানায় শুরু হয়নি এবং সম্পূর্ন শেষ হওয়াও প্রায় অসম্ভব। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্নীতিকে সম্পূর্ন নির্মূল করে জিরো করা যাবেনা। জিরো করতে হলে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করতে হবে বলেই বিশ্বাস করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। শুধু তৃণমূল কেন, কোন বড় রাজনৈতিক দলই দুর্নীতিমুক্ত নয়। কংগ্রেস বিজেপির কথা ছেড়েই দিলাম, সিপিএম নেতারা কি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবে, তাদের দল দুর্নীতিমুক্ত? সবাই জানে ৩৪ বছরের বহু ঘটনা আছে, উদাহরণের অভাব হবেনা। মনে পড়ছে, সেই জমানাতেও বালি অঞ্চলে একজনের বাথরুমের দেওয়াল ভেঙে উদ্ধার হয়েছিল বহু নোটের বান্ডিল। আর মানুষ সিপিএম জমানার কুশাসনকে মনে রেখেছে অনেক বেশি নিয়মিত খুন জখম ও গণহত্যার ঘটনায়। ফলে দুর্নীতি বিষয়টি, আলোচনায় বিশেষ প্রাধান্য পায়নি। আর একটি বাস্তব সত্যি হচ্ছে ক্ষমতায় থাকলে ভূতে টাকা যোগায়। সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আর এখনকার তফাৎটাতো সাদা চোখেই ধরা পড়ে। মনে আছে নিশ্চয়ই রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে বোফর্স দুর্নীতি নিয়ে বছরের পর বছর  সংসদে তুলকালাম করেছে সিপিএম, বিজেপি সহ অন্যরা। পরে কিন্তু কিছুই প্রমাণ হয়নি। রাজীব গান্ধী বলেছিলেন, জ্যোতিবাবু জানেন দল চালাতে সবারই অর্থ লাগে, তবে এটুকু হলফ করে বলতে পারি যে, আমি বা আমার পরিবারের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। এখন সেসব মনে পড়লে সিপিএম লজ্জা পাবে।

    হাসপাতালের দুর্নীতি চিরকালই ছিল এবং দুর্ভাগ্যবশত এখনও আছে। এর কারণ, বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সত্বেও সমগ্র চাহিদার তুলনায় ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে দুর্নীতি ঠেকানো খুবই কঠিন। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে ও বর্তমানে সেবিষয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে, সেনিয়ে কারও কোন বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কিন্তু এই সময়কালে মমতা সম্বন্ধে যেভাবে তাঁর চরিত্র নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কুৎসা করা হয়েছে সেটা ভাবতেও গা ঘিন ঘিন করে। মমতা বিরোধীরা তাঁকে ভোটে হারাতে না পেরে এভাবে গায়ের জ্বালা মিটাচ্ছে। শিক্ষিত ভদ্রলোকদের(!) এমন অবনতি ও হীনমন্যতা তুলনাহীন। তবে অতীতে  যারা অতুল্য ঘোষ, প্রফুল্ল সেনের মতো চূড়ান্ত সৎ রাজনীতিকদের চোর, দুর্নীতিগ্রস্থ বলে দাগাতে পারে, তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। 

    JDr দের এই আন্দোলন যে এখনও টিকে আছে এর পিছনের একটি বড় কারণ হচ্ছে এক বাজারি মিডিয়া।এদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া একেবারে হাত ধুয়ে আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে। পুজোর সময় যখন প্রায় সব চ্যানেল পুজোর ভিড় বা প্যান্ডেলের ছবি দেখাচ্ছে  এরা তখন ব্যস্ত অনশন আন্দোলনের ছবি দেখাতে। টিভিতে মুখ দেখানোর লোভ সবারই থাকে, তাই কিছু লোকতো জুটে যাবেই। এদের এই যুক্তিহীন একবগ্গা প্রচার দৃষ্টিকটুরূপে অস্বাভাবিক। দুর্মুখেরা বলে এর পেছনের অজানা কারণটি হচ্ছে, বাইপাসের ধারে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের জমি, সরকারের আইনি বাধায় যার অন্যায় বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা। শুধুমাত্র মিডিয়া আর ৬% সমর্থন নির্ভর দলের মদতে কোন আন্দোলন সফল হতে পারেনা। অতীতের সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে এদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ন বিরোধী, কিন্তু আন্দোলন জয়যুক্ত হয়েছিল। এদের সমর্থনের উপর নির্ভর করেনা কোন আন্দোলনের সাফল্য এবং এদের শত চেষ্টাতেও যে উৎরোবেনা এই আন্দোলন, সেটা এখন পরিষ্কার।

    বাংলাদেশের ঘটনায় উৎফুল্ল সিপিএম বিজেপি ভেবেছিল এখানেও গনবিদ্রোহ তৈরি করে মমতাকে অনায়াসেই ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে। তাই কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানোর চেষ্টা চলেছে। কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত ভোটেই প্রমাণিত যে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন এখনও মমতার প্রতিই আছে। রাজ্যের ধনী, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত মানুষদের একটা বড় অংশই মমতার উপর বিরূপ এবং তার প্রতিফলনও এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেখা গেল। কিন্তু মধ্যবিত্ত সমাজের কিছুটা ছোট অংশ হলেও রাজনীতি সচেতন অংশ সহ গরীব বিশেষত মহিলারা ও সংখ্যালঘুদের প্রায় সবাই মমতাকেই সমর্থন করে। ভোট চালচিত্রের এই বাস্তব অবস্থাটি না বুঝে শুধু আবেগে ভাসলেও  লাভ বিশেষ হবেনা। বিজেপি নেতারা এতটাই নিজেদের মধ্যে বিভক্ত যে ধৈর্য ধরে সবাই মিলে একজোট হয়ে কিছু করা প্রায় অসম্ভব। শুভেন্দু ছাত্র সমাজ নাম দিয়ে একটা হিংস্র আন্দোলন করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছু পুলিসের উপর আক্রমণ করা ছাড়া তার কোন সদর্থক প্রভাবই ফেলতে পারেনি জনমানসে। আর সিপিএম ক্রমশ হতাশ হয়ে এখন বুঝতে পারছে যে, যত কিলিয়েই পাকানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, এ কাঁঠাল পাকার সময় এখনও সুদূরপরাহত।

    """""""""""
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন