এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হতভাগ্য মায়ের আকুতি

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০৩ বার পঠিত
  • "আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। সে একটা মেয়ে হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল বলেই কি, তার স্বপ্নপূরণ হওয়ার আগেই তার সঙ্গে নির্মম, নিষ্ঠুর, পৈশাচিক এই ঘটনা হল? তার স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করা হল? যে বা যারা এই ঘটনা ঘটাল, তাদের আড়াল করার জন্য, সব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হল?

    ঘটনার রাতে ১১টা ১৫ মিনিটে মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখনও ও হাসিখুশি ছিল। সকালে আমার মেয়ে আর নেই! যা-ই ঘটুক না কেন, মা-বাবা হিসেবে তো আমাদের জানানো উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওঁদের দায়িত্বেই তো আমরা মেয়েটাকে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। আমাদের কাছে হাসপাতাল থেকে প্রথম ফোন আসে সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে। বলা হয়, আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমরা তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। যেতে যেতে আবার ফোন আসে।— “অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলছি। আপনার মেয়ে সুইসাইড করেছে। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন।” আমাদের তো তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। আমাদের গাড়িচালক যত জোরে পারে চালিয়ে আমাদের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছায়। এক জন নিরাপত্তাকর্মী আমাদের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান। আমরা তখন মেয়েকে দেখার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। সেমিনার রুম-এর ভিতরে তখন অনেক লোকজন। এক জন পুলিশকর্মী দরজা আটকে দাঁড়িয়েছিলেন। আরও অনেক পুলিশ, লোকজন দরজার সামনে ছিলেন। আমি তাঁদের হাতেপায়ে ধরে বলি, “আমার মেয়েকে এক বার দেখতে দিন।” তাঁরা বলেন, “ভিতরে ফরেন্সিক তদন্ত চলছে। ঢুকতে দেওয়া যাবে না।” আমি বলি, “আমি কিছু করব না। এক বার মুখটা দেখে চলে আসব।” তা-ও দেখতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এসে ঘটনা নিয়ে কোনও আলোচনাই করেননি আমাদের সঙ্গে। অবশেষে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরে আমাদের সেমিনার রুম-এ ঢুকতে দেওয়া হয়।
    তখন সেখানে কলকাতা পুলিশের প্রধান ছাড়া কেউই ছিলেন না। তখন মেয়ের দেহ দেখে আমাদের মনে হয়, পুরো ঘটনা সাজিয়েগুছিয়ে আমাদের দেখানো হচ্ছে। কারণ, সেখানে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার পরে সব কিছু এই রকম সাজানো থাকতে পারে না। অপরাধ যেখানে হয়েছে, সেই জায়গা ঘেরা ছিল না। যথেচ্ছ ভাবে অপব্যবহার হয়েছে। আমরা সে দিন আমাদের মেয়ের দেহ রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশ এবং প্রশাসনের অতিসক্রিয়তার কারণে সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যতক্ষণ মেয়ের দেহ চুল্লিতে প্রবেশ করানো না হয়, তত ক্ষণ পুলিশি সক্রিয়তা বজায় ছিল, তার পরে আর কাউকেই দেখতে পাওয়া যায়নি।

    আমার সারা জীবনে কষ্ট করে যা অর্জন করেছিলাম, আর মেয়ের কষ্টার্জিত একরাশ স্বপ্ন— সব কিছু গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। একটা রাতে কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের পরিবার তছনছ করে দিল।

    আমরা আমাদের একমাত্র ডাক্তার মেয়েকে হারিয়ে ফেললাম। কেন এমনটা হল আমাদের সঙ্গে আর আমাদের মেয়েটার সঙ্গে? সে তো ‘ওটি’ ডিউটিতে ছিল। একটা সুরক্ষিত জায়গায় ছিল। মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজের জীবন এবং নিজের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন— ওর সব কিছু দুর্বৃত্তের হাতে বলি হয়ে গেল। এই দুর্বৃত্তেরা হাসপাতালের ভিতরের লোক। কারণ, বাইরে থেকে কেউ এসে এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারে না।

    অতএব, আপনার কাছে এই হতভাগ্য মা-বাবার কাতর প্রার্থনা, অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের কঠোর শাস্তির, কঠোর থেকে কঠোরতম সাজার ব্যবস্থা করুন। সেটা যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমাদের এক মাত্র মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা সামান্য লাঘব হবে।"
    বিনীত,
    হতভাগ্য মা

    https://www.anandabazar.com/west-bengal/narration-of-the-letter-of-the-mother-of-the-deceased-doctor-which-has-been-sent-to-the-president-prime-minister-wb-chief-minister-and-governor/cid/1543033
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:198f:e3cd:878:5634:1232:***:*** | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৬537254
  • মাননীয়া, আপনার কণ্ঠস্বরে কণ্ঠ মিলিয়ে বিচার চাইছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন