এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা

    Argha Bagchi লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ জুলাই ২০২৪ | ১৫০ বার পঠিত
  • "ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা"

    আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন নিজের মুখ দেখি তখন আমার মাঝে মাঝে নিজেকে খুব চেনা চেনা মনে হয়। সমস্যাটা আমার একার নয়, আরো অনেককেই অনেক জায়গায় একই কথা বলতে শুনেছি। আমায় দেখে তাদের খুব চেনা চেনা লাগে।

    বাজার যেতে হবে বলে এটিএম এ ঢুকেছিলাম। হতাশ হতে হল, অফলাইন। দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি বৃষ্টি। সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। পাশেই আরেক ভদ্রলোক, মুখটা খুব চেনা চেনা। তিনিও আমাকে দেখে পরিচিতের হাসি দিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন আমি খানপুর স্কুলে পড়তাম কিনা। আমি বললাম, না আমি প্রতিবেশী নাকতলা হাই স্কুলে পড়তাম। তবে আমারও আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। তখন তিনি স্মৃতি হাতড়ে বললেন, মনে পড়েছে। শক্তি সঙ্ঘে সুকান্তকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে আপনি প্রতিযোগী ছিলেন। আমিও ছিলাম। আমি অবশ্য প্রাইজ পাইনি কিন্তু আমার মনে আছে আপনি খুব সুন্দর বলেছিলেন। শক্তি সঙ্ঘে একটা অনুষ্ঠানে আমি সেই ছোটবেলায় বলেছিলাম বটে। কিন্তু সেটা সুকান্তকে নিয়ে কিনা বা কি বলেছিলাম বা আদৌ কোন প্রাইজ পেয়েছিলাম কিনা সেসব কিছুই আজ আমার মনে নেই।

    আমার মুখটা হয়ত খুব কমন। ফলে এই আবছা পরিচিতির স্মৃতি বিভিন্নজন নিজের মত করে গুছিয়ে নেয় এবং আমাকে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়। আমি কখনোই বারণ করিনা, আপত্তিও জানাই না। কেননা আমার মনে আছে, যে বয়সটা হিরো ওয়ারশিপের বয়স, সেই বয়সে আমারও কিছু হিরো ছিল। রিয়েল লাইফ হিরো। স্কুলের দাদা, দারুণ ফিটফাট। সুন্দর দেখতে। সব সময় একটা স্মার্ট অ্যাপিয়ারেন্স। কেউ ভাল গান গায়, কেউ ভাল নাটক করে, কেউ দুর্দান্ত খেলে, কারো লিডারশিপ কোয়ালিটি আলাদা লেভেলের। তাদের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম আর ভাবতাম আমি খুব লাকি যে এইরকম হিরোদের আমার জীবনে পেয়েছি।

    অনেক পরে মাঝবয়সে, যখন আবার তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, হয়ত দেখেছি আমি যেমনটা ভেবেছিলাম তারা আর তেমনটা নেই, অনেকটাই বদলে গেছে। স্মার্টনেস ঝরে গেছে। কিন্তু তাদের প্রতি আমার যে সেই পুরনো মনোভাব সেটা কিন্তু একবিন্দুও নষ্ট হয়নি। আবার আমার জুনিয়র দু একটি ভাই, স্কুলের, তারা অনেক সময় আমাকে বলেছে তোমাকে আমরা খুব পছন্দ করতাম। কেবল জুনিয়র কেন, সিনিয়র কয়েকজনের কাছেও অনুরূপ ভালবাসা পেয়েছি। তাদের সে পছন্দের নির্মাণে আমার সচেতন কোন হাত নেই। তারা নিজের মনের মতো করে আমাকে গড়ে নিয়েছে ঠিক যেমন আমি আমার হিরোদের নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছিলাম। সেই অনুভব কখনো ক্ষয়ে যাবার নয়, তাই আপত্তি করার কোন অবকাশ থাকে না, মেনে নিতে হয়। একটা হালকা সুখের অনুভূতি বা গর্ব, আনন্দ এরকম কিছু একটা রেশ মনে থেকে যায়।

    আমার মনে হয় এই যে হিরো নির্মাণ এটা আমাদের জীবনে চলার পথে একটা বিশেষ অবলম্বন। আমরা যাকে হিরো বলে ভেবে নিই তাকে সত্যি সত্যি হিরো হতে হয় না। বরং তার মধ্যে যে সম্ভাবনাটা আমরা দেখি সেটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে মনের আসনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়। সে কারণেই পরে যখন সেই হিরোকেই অন্য বেশে, অন্য রূপে বা খুব সাধারণ পরিস্থিতিতে আবার দেখি তখনো আমাদের সেই অনুভূতির স্বপ্নভঙ্গ হয় না। সেই স্বপ্ন একান্তই ব্যক্তিগত। আমার কিছু হিরো আছে এবং আমিও কিছু লোকের হিরো এই পরম্পরা আজও চলছে চলবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mira Bijuli | ২০ জুলাই ২০২৪ ১৯:০৬535047
  • ভালো লাগল লেখাটা ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
এই সাইটটি বার পঠিত
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন।