এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হারায়ে খুঁজি

    sarmistha lahiri লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুন ২০২৪ | ২৩১ বার পঠিত
  • আজ সকালে বেশ সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখার মধ্যে দিয়ে ভোর হলো। মনেমনে আমি যেন আমার বিশ্বদর্শন করে আসলাম। আমার শৈশব, কৈশোর যৌবন সব যেনো এক চিত্রপটে আঁকা কল্প চিত্র। আজ ও চোখ বুঝে আমি যখন তখন সেই কল্প রাজ্যে স্বচ্ছন্দে হারিয়ে যেতে পারি।

    তখন আমাদের ওই জায়গাগুলোকে বলা হত শহরতলী। তখনও দমদম তার এখনকার জাত কৌলিন্য লাভ করেনি। বাবা শ্যামবাজার অতিক্রম করে আরো দু পা এগোলেই মাকে বলতেন কলকাতায় যাচ্ছি। আমরাও কলকাতা থেকে বাবার আনা মন্ডা মিঠাইয়ের অপেক্ষায় হাঁ করে বসে থাকতাম। তখন শহরটা সবে একটু একটু বাড়ছে তার আয়তনে। প্রতিটা পাড়ায় একটা করে পুকুর বা জলাশয় থাকতো। পুকুরের চারিপাশ দিয়ে সারি সারি বাড়ি। অনেক খালি জায়গা থাকায় খেলার মাঠ বা খোলামেলা পরিবেশের কোন অভাব ছিল না। পাড়ার ছেলে পিলেরা এই পুকুরেই দাপাদাপি করে সব সাঁতার শিখতে নিতো।

    পাড়ার মাঠেগুলো রোদ পড়ে গেলেই সব কচিকাঁচাদের প্রাণভূমি হয়ে উঠতো। সবার হাসিখেলার উল্লাসে আনন্দে সে যেন দেবশিশুদের চারণভূমি। প্রতিটি বাড়ির লোকেদের সাথে সবার এক অদ্ভুত পরিচিতি থাকতো। এই পরিচয়েই মাসি, কাকি, কাকু এইসব নিকট পরিচিতির ডাকের কোন অভাব ছিল না।

    এখনকার মতো তখন রাস্তাঘাটে এতো আলোর বাহার ও ছিল না। কিছু দূরে দূরে সেই পোস্টের মাথায় একটা করে সাধারণ বাল্ব ঝোলানো থাকতো। সেই আলোই যেন পাড়াটাকে হাজার বাতির ঝাড়ের মতো উজ্জল করে রাখতো।

    গরমের দিনে সন্ধে বেলায় বেলিফুলের মালা হাতে ঝুলিয়ে মালা চাই, মালা চাই ডাক দিয়ে ফিরতো। কুলফিওয়ালা মাথায় সেই ঢাউস লাল শালুতে মোড়া মটকা মাথায় নিয়ে কুলফি ফেরী করে যেত। আমরা আইসক্রীম ওয়ালার গাড়ির পাশে পাশে কতদূর হেঁটে হেঁটে যেতাম। কোনদিনও বা ত্রিশ পয়সা দামের সেই অমোঘ বস্তুটি ভাগ্যে জুটে যেত।

    সন্ধে বেলায় সুর করে প্রায় প্রতিটা বাড়ি থেকেই পড়ার আওয়াজ ভেসে আসতো। হারমোনিয়ম বাজিয়ে বাড়ির মেয়েটার গান গাওয়া সেসব সত্যিই সুখ স্মৃতি।

    তখন স্থানীয় বাজারগুলোর ছিল খুব জমজমাট চিত্র। বাড়ির মাসকাবারি বাজার থেকে শুরু করে সবজি বাজার, মাছের বাজার সব কিছু এক জায়গাতেই পাওয়া যেত। আর সবার সাথেই একটা পারিবারিক পরিচিতি গড়ে উঠতো। বাড়ি এসে দুধ দিয়ে যাওয়া গোয়ালা, কাপড় কাচতে আসা ধোপা, পাড়ার দোকান দেওয়া কাকু সবাই যেন ছিল আমাদের কত আপন।

    তখন এখনকার মত এই পিৎজা, বার্গারমোমো খাওয়ার কোন কষ্ট কল্পিত ধারনাই ছিল না। কচুরি ছোলার ডাল, ঘুগনি, মোগলাই, কাটলেট, ফিস ফ্রাই এই সব খাবার কখনো সখনো শিঁকে ছিড়তো আরকি। জন্মদিন তখনো হ্যাপি বার্থডে হয় নি। লুচি মাংস, বা ঘরে তৈরী পোলাও মাংসই ছিল ফেভারিট মেনু। আর পায়েস ছিল মাস্ট। বিরিয়ানির বাজার তখনও ঠিক খাতা খুলতে পারে নি। আর জন্মদিন বা যে কোন অনুষ্ঠানে একটি প্রধান উপহার সামগ্রী ছিল বই। যার বাড়িতে যত শোকেস ভরা বই তার সামাজিক সম্মান তত বেশী।

    তখনও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের এতো রমরমা হয়নি। পাড়ায় পাড়ায় বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়ই বেশি দেখা যেত। নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পঁচিশে বৈশাখ, নববর্ষ, নাট্যোৎসব, এই সবের মধ্যে দিয়ে জীবন কত রকম বৈচিত্র্যময় ছিল।

    আজ হয়তো সবই আছে। কিন্তু দেহ থেকে যেন আত্মাটাই হারিয়ে গেছে। পাড়া সংস্কৃতি তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। মানুষ মানুষের সাথে বন্ধন বিস্মৃত হয়েছে। তাই পুরানো স্মৃতি হাতড়ে তাকে খুঁজে পাবার কাতর প্রয়াস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somnath mukhopadhyay | ১৫ জুন ২০২৪ ০৭:০৩533180
  • সাত সকালেই পেছনের টান এসে এই ব্যস্ত সময়টাকে যেন থমকে দিল। লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের ঘটনা। লেখিকা নিজের স্মৃতি বিজড়িত সময়ের সাথে আমাদের যুক্ত করে খানিকটা নস্টালজিক করে তুললেন আমাদের। ধন্যবাদ তাঁকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন