এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গল্প - পুঁজিবাদী পেরেক আর ৩য় বিশ্বের যীশু

    Debasis Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ মে ২০২৪ | ৩৬২ বার পঠিত
  • গল্প ## পুঁজিবাদী পেরেক আর ৩য় বিশ্বের যীশু ##

    দেবাশিস সরকার

    ।। এক ।।

    রূপম বললো,"নোয়া হারারি'র লেখা ' একুশ শতকের জন্যে একুশটি উপদেশ' বইটা পড়েছিস ? তুই তো লিখিস টিখিস, তাই এই কৌতূহল।"ভ্রূক্ষেপ না করে নির্ঝর ব্যাজার মুখে টুম্পাকে বলল,"দেখলি টুম্পা! রাস্তায় আসতে আসতে তোকে এই স্টাইলটার কথাই বলছিলাম না ? আঁতেলদের নিয়ে এটাই মুশকিল! শালারা ধান ভানতে শিবের গীত গাইবেই! আমি মরছি নিজের জ্বালায় আর তোদের এই নেতা এখন আমার পড়াশোনার পরিধি মাপতে চাইছে! না পড়িনি! তবে ওঁর 'স্যাপিয়েন্স ' বইটা পড়েছি। হোল ?"

    — পড়লেও এমন কিছু হাতি ঘোড়া লাভ হোত না! বিশেষ করে এই দেশে যখন পর্যাপ্ত পাঠাভ্যাস এবং অনুশীলন ছাড়াই সাহিত্য রচনা চলে। বাংলা সাহিত্য এখন উচ্চ ফলনশীল! প্রায় হাজার দেড়েক পত্রিকা তো ছাপা হচ্ছেই। বছরে হাজার ছয়েক গল্প আর হাজার দশেক কবিতা তো নিয়মিত ফলছেই!

    তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে নির্ঝর বলল,"খিস্তি শোনার শখ হয়েছে কি ? উৎপটাং না বকে কান খুলে শোন আগে! আরেকবার বলছি না হয়! আমাদের ব্যাঙ্কের প্রায় সব কটা ব্রাঞ্চেই নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করানো হচ্ছে! ডেইলি চারশো টাকার চুক্তিতে ছেলেমেয়েগুলো গাধার মতো খাটছে! তুই ভালো করেই জানিস রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এই আউটসোর্সিংয়ের এগেইনস্টে। এই টুম্পাকে সঙ্গে এনেছি যাতে তুই আমার কথাটাকে একটু হলেও গুরুত্ব দিস।! টুম্পা! তুমি তো দেখেছো ব্রাঞ্চে আমার উপর কি অত্যাচারটাই না হচ্ছে! তুমি ছাড়া আমার পাশে কেউ নেই। তোমাদের এই ন্যাতাটাকে ব্যাপারটা বোঝাও তো! আজকেই একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। সেইমতো এদের ইউনিয়নে থাকবো বা অন্য ইউনিয়নে জয়েন করবো শালা!"

    টুম্পা একটু বিড়ম্বনায় পড়ে যায়, হতে পারে কলিগ নির্ঝরদার পাড়ার দাদা ইনি, তবে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের অল ইন্ডিয়া সেক্রেটারিই তো! তাছাড়া তার গলাতে নির্ঝরদার মতন ঝাঁঝও নেই, কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিয়ে ক্লারিকেল ক্যাডারে ঢুকেছে সবে, নির্ঝরদার পরামর্শে তাদের অ্যাসোসিয়েশনটিতেই জয়েন করেছে। শুনেছিল তাদের অল ইন্ডিয়া সেক্রেটারি কম তন্ময় দাশ নির্ঝরদার পাড়ারই দাদা, তাই নিছক কৌতুহলেই আজ নির্ঝরদার সঙ্গে কলকাতায় এসেছে। নতুন চাকরি, এখনো কনফার্মেশন হয়নি, ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বা ইউনিয়নের সঙ্গেই হোক, নির্ঝরদার মতন লড়াই করার বুকের পাটা তার নেইও! আজ সকালে দুর্গাপুর থেকে কলকাতা আসার পথে নির্ঝরদা তাকে বলেইছিল,"এই তন্ময় ছেলেটা আমার চাইতে এক ক্লাসের সিনিয়ার আর পাড়ার দাদা হলে কি হবে, তুখোড় ব্রেণ! ওর নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ইথিওপিয়ায় তুলো চাষির আত্মহত্যা থেকে শুরু দক্ষিণ চীনের সমরসজ্জা সবকিছুর রেফারেন্স এত সুন্দর করে টেনে আনবে যে তোমার নিজস্ব যুক্তি টুক্তি সব বানের জলে ভেসে যাবে! সাধে কি আর অ্যাসোসিয়েশনের পাকা মাথাগুলো ওকে অল ইন্ডিয়া সেক্রেটারির পদটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে!"এখন বলতে শুরু করার আগে সে কথাগুলো মনে পড়ল, গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,"আমাদের ব্রাঞ্চে রমেশ নামে একটা ছেলে ডেলি চারশো টাকার চুক্তিতে কাজ করছে। ক্যাশ কাউন্টারে ওকে ঢুকতে দেওয়া হয় না, তবে ম্যানেজার বা ডেপুটি ম্যানেজারের পাসওয়ার্ড নিয়ে যে কোনো ডেস্কটপে বসে ও বীভৎস কাজ করে দেয়। আমরা তো পাঁচটার সময় বেরিয়ে পড়ি, ও নাকি ছটা সাড়ে ছটা পর্যন্ত থাকে! খুব স্বাভাবিকভাবেই ম্যানেজার ভরত রাম বা ডেপুটি ম্যানেজার লক্ষণ যাদবের খুবই প্রিয়পাত্র এই রমেশ। ভরত আর লক্ষণ এই দুই ভাই রমেশকে বাদ দিতে চায় নি। নির্ঝরদা চ্যালেঞ্জ করায় —"

    তন্ময় বলল,"কাস্টমারদের সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কিত যে কোন তথ্য গোপন রাখার গ্যারান্টিও ব্যাঙ্ক দিতে বাধ্য। কর্মচারী নয় এমন কোন ব্যক্তি ব্যাঙ্কের সেই সমস্ত ডকুমেন্ট ঘাঁটছে এমনকি কম্পিউটারে এন্ট্রিও করছে, এটা চূড়ান্তরকমের বিশ্বাসভঙ্গের কাজ। খোদ ম্যানেজারেরই চাকরি চলে যাওয়া উচিত। তাই রমেশের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে সেটা তো ফোনেই বলেছিলি। তা এবার তোর সমস্যাটা কি ?"

    তন্ময়ের প্রশ্নের উত্তরে নির্ঝর জানালো, তাদের ব্রাঞ্চে রোজ চারশো থেকে চারশো পঞ্চাশখানা যে ক্লিয়ারিং চেকগুলি জমা পড়ে সেগুলি এতদিন ধরে ওদের আরেকজন কলিগ স্বপনবাবু আর রমেশ দুজনে মিলে প্রসেসিং করে ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠাতো। নির্ঝর হুমকি দিয়েছিল নেক্সট ডে থেকে রমেশকে কাজে নিলে আরবিআই গভর্নরকে কপি সহ ব্যাঙ্কের হেড অফিসে কমপ্লেন করবে। রমেশকে আর কাজে নেওয়া হয়নি। তাতে টুম্পা বাদে সমস্ত স্টাফেরা নির্ঝরের উপর ক্ষেপে গেছে। রমেশ তো বুঝতে চাইবেও না তবে প্রতিটি ব্যাঙ্ক কর্মচারী মনে করছে নির্ঝর খামোখা রমেশের সামান্য বারো হাজার টাকা মান্থলি রোজগারটাও বন্ধ করে দিল!

    — হুঁ! সেটা ঠিক! একটা বেকার ছেলে, গাধার খাটনি খেটে দু পয়সা কামাচ্ছিল, ওর রোজগার বন্ধ করে দিয়ে তোর কি লাভ হল ? নির্ঝর বলল,"ওঃ! তোকে বারবার বলেছি, রমেশ ফ্যাক্টর নয়, এই ভয়াবহ বেকারত্বের যুগে চাকরি না দিয়ে সেই কাজগুলো অল্প পয়সার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিককে দিয়ে করিয়ে নেওয়া যদি আটকানো না যায় তাহলে তো সকলেই ওই রকম বেকারই থেকে যাবে! ক্রমে দেখা যাবে এই সমস্ত ঠিকে শ্রমিকরা এই অফিসে চার ঘন্টা তো ওই অফিসে চার ঘন্টা বা আরেকটা অফিসে চার ঘন্টা, মোট বারো ঘন্টা খেটে ভেঙ্গে পড়া শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরছে! এই রমেশদের পার্মানেন্ট এমপ্লয়ী হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না কেন ? আমার লড়াই এটাই! ঠিকা শ্রমিক প্রথা বন্ধ করার এই লড়াই আমার চলবে। আমি জানি, এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারলে প্রত্যেকটি অফিসে প্রতিটি কর্মচারী আমার পথই অনুসরণ করবে। চুক্তিশ্রমিক নয়, মাস মাইনের কর্মচারী নাও! আমাকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য তুচ্ছ গ্রাউন্ডে শোকজ করেছে, আমি হাল ছাড়ছি না, কোনো জায়গাতেই আউটসোর্সিং চলবে না!"তন্ময় হাসলো, বললো,"একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদিগড়! হাঃ!"

    ক্ষেপে আগুন হয়ে নির্ঝর বললো,"অ! আমার ধারণা তাহলে ঠিকই! হেড অফিসে বসে ম্যানেজমেন্ন্টের কাছে তোরা সব বিকিয়েই গেছিস! আমার লড়াইকে ঠাট্টা করছিস ? আরে কর্মচারীই যদি না থাকে তাহলে কিসের নেতাগিরি করবি তোরা ?"

    তন্ময় বললো,"শোনো বন্ধু! আজকের এই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ তোমার মতোই লড়ছি, কেউ আঠা শুঁকছি বা ড্রাগ খেয়ে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকছি, নয়তো কেউ ফ্লিপকার্ট অথবা অ্যামাজনের ভারি ভারি ব্যাগ কাঁধে বাইক ছোটাচ্ছি শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। হারারি ওই ' টোয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি' বইটিতে এই ভবিষ্যৎবাণীটিই করেছেন যে খুব শিগগিরই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বহু মানুষকে কর্মহীন করে দেবে। তখন সারা পৃথিবীতে বহু সংখ্যক হতাশ, কর্মহীন যুবক যুবতীকে কিভাবে মিনিংফুলি এনগেজ করে করে রাখতে পারা যায় সেটাই সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে! হারারির ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে! ওয়েব টু থেকে ওয়েব থ্রি জমানায় ঢুকে গেছি আমরা। আর মাত্র দশটি বছর, দশটি বছর পরেই পৃথিবীর এইট্টি পার্সেন্ট মানুষের আর কাজ করার প্রয়োজনে দরকারই পড়বে না! তারা কি করবেন ? প্রিগোঝিন আর নেই, তবে তার ছেলে আছে।
    তোম্বা মুখে নির্ঝর বললো,"এবার তো ইথিওপিযায় তুলো চাষির রেফারেন্স আনবি! শালা! ধান ভানতে শিবের গীত! তোদেরকে লোকে এত এড়িয়ে চলে কেন জানিস ? জ্ঞানের ঠেলায়! আমি বলছি সামান্য একখানা ছোট্ট ব্রাঞ্চে আউটসোর্সড এমপ্লয়ির কথা, তুই কোথায় প্রিগোঝিন, পুতিন নিয়ে চলে এলি!"

    তন্ময় চোখমুখ লাল করেই কি যেন বলতে মুখ ফাঁক করেছিল, হঠাৎ সংবৃত ভঙ্গিতে টুম্পাকে বলল,"এই টুম্পা! ও আমার ছোটবেলার বন্ধু তো, মুখ দিয়ে খিস্তি ফিস্তি বেরোতেই পারে, কিছু মাইন্ড করোনা, হ্যাঁ!"তারপর খানিক আগের গলার সেই ঝাঁঝ ফিরিয়ে এনে বলল,"গান্ডু! ইংরেজিতে না বললে বুঝতে পারো না! আউটসোর্সড মানে আমি ভাড়াটে সৈনিকের কথাই বলছি! ইউক্রেনে জেলেনেস্কির বিরুদ্ধে কারা লড়ছে জানিস ? নেপালের বেশ কিছু ভাড়াটে সৈনিক। কারগিলে ভারতের বিরুদ্ধে কারা লড়েছিল জানিস ? আফগানিস্তানের বেকার ছেলেরা! ব্যাঙ্কে কাজ করছে ডেইলি চারশো টাকায়, যুদ্ধের ময়দানে কাজ করছে হয়ত ডেলি হাজার টাকায়। এ আই নার্স বা এ আই টিচার তো এখন খুবই বাস্তব। করোনার সময় ভারতবর্ষের বহু হাসপাতালেই তো কৃত্রিম নার্সরা সার্ভিস দিয়ে গেছে, তারা এখনও বহাল তবিয়তেই কাজ করছে। রোবট বা কম্পিউটার কাজ করলে আপত্তি নেই, মানুষ কাজ করলেই আপত্তি! বহু স্কুলেই তো হিউম্যানয়েড টিচার দিব্যি কাজ করছে! গায়ের জোরে, সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধের জোরে আউটসোর্সিং কিছুটা আটকানো গেছে, ব্যাপারটা কোর্টে গেলে আমরা জোর পাবো না বলেই ধারণা!

    নির্ঝরদা তো সহজে তার পুরনো বন্ধুর যুক্তি মানবে না। তবে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে টুম্পার ভয় হচ্ছিল, সে জিজ্ঞেস করল,"তখন উপায় ? আমরাও কি ডেলি চারশো টাকার চুক্তিতে কাজ করব ?"তন্ময়দা বলল,"যন্ত্রমানবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানতালে কাজ করতে হবে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গলায় পিট সিগারের লেখা জন হেনরির গানটা শুনেছ ?"

    ।। দুই ।।

    অচিন বলল,"বাইকে চেপে আমাদের সমস্ত শহরটা ঘুরে দেখেছো কোনদিন ?"নির্ঝর হেসে ফেলল, তার বন্ধুভাগ্য এমন যে প্রত্যেকেই তাকে কিছু না কিছু ইনপুট দিতে চায়! বলল,"তোমার মতন না। তুমি এই শহরে জন্মেছো, বড় হয়েছো, তবে নয় নয় করে এই শহরে তো একুশ বছর ধরে রয়েছি তো! তাছাড়া তুমি জানো, এ বিশাল শহরটার এ প্রান্তে কোনদিন সকালে তো ও প্রান্তে কোনদিন বিকেলে, আবার কখনো কখনো সারাদিন ধরেই আমাদের আড্ডা চলে। ডাকে, যেতে হয়। কেন?

    — গত সাত আটটা বছর ধরে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছ কি ? চারদিকে ভালো করে তাকাও টাকাও? নাকি, হয় কোন সভাকক্ষে নয় কোন বৈঠকখানায় সোজা ঢুকে পড়ো ?
    নির্ঝর হাসলো।"বলো না কি বলতে চাইছো ? হ্যাঁ, ব্যাপক পরিবর্তন তো ঘটেছেই! আগে যেতে যেতে দেখতাম রাস্তার ধারে দুপাশে সারি সারি তোমাদের স্টিল প্লান্টের কোয়ার্টার্স। মাঝে মাঝে অনেকখানি ফাঁকা জমি, পার্ক, কোথাও কোথাও ফুটবল মাঠ। কোয়ার্টার্সগুলো বিবর্ণ, রংচটা, একঘেয়ে ডিজাইনের। এখন এখানে সেখানে বিশাল ছতলা, দশতলা ফ্ল্যাট, গোটা চারেক শপিংমল, আইনক্স শহরের কেন্দ্রে। একটা সাজো সাজো রব, ব্যস্ততা এই আর কি!"
    — আর কিছু নয় ?
    — হুঁ –! মানে যুবতীদের পোশাকে, বেশভূষায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে! কলকাতা গিয়ে সন্ধ্যেবেলায় তো বাজারে ঘুরিনি কখনো, তবে বইমেলা, লিটল ম্যাগাজিন মেলা, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এসবে প্রত্যেকবারই যাচ্ছি। এত উগ্রতা দেখিনি কখনো! টাইট টি -শার্টে স্ফীত স্তন বা টাইট জিনসে প্রশস্ত নিতম্ব দেখতে মন্দ লাগে না, তবে ওই মেয়েগুলির রূপমাধুর্য চোখে পড়ে না, বরং কামভাব জাগে। আশ্চর্য লাগে কখন জানো ? যখন দেখি এই উগ্র পোশাকে সজ্জিতা মেয়েটির মা যার যৌবনে অস্তরাগ লাগলেও সাজ পোশাকে যুবতীই রয়েছে কিম্বা তার নিতান্ত মধ্যবিত্ত বাপটিও বেহায়ার মতোই তার পাশে হাঁটে! মনে হয়, তাদের মেয়ে যে যৌনতার আঁচ ছড়াচ্ছে তাতে তারাও একটু গা সেঁকে নিচ্ছে! এটাও পরিবর্তন বই কি!
    — আর কিছু নয় ?
    — হ্যাঁ, ওই শপিংমলগুলোর আশেপাশে বা আরো কিছু জায়গায় ড্যান্স বার খোলা হয়েছে, ড্যান্সফ্লোর সহ! টিভিতে বা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেখানে কখনো ' রেইন ড্যান্স ' তো কখনো ' কুছভি না কহো ' ডান্স শো হচ্ছে! দেখতে যাই না অবশ্য! টাকা কই ? এবার হয়তো ' কুছ ভি না পেহনো ' ডান্স শো আয়োজন করা হবে, টিকিট মূল্য মাত্র দশহাজার টাকা হবে! হ্যা :!
    — ফক্কুড়ি না মেরে বলো না, আর কিছু দেখো কি ?
    — তুমি কি বলতে চাইছো ? স্পেসিফিক বলোনা কেন ?
    — আমাদের শহরের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছো গত পাঁচ ছ বছরে ? তুমি তো সাহিত্য টাহিত্য কর, তোমার তো আগেই চোখে পড়া উচিত!
    অচিনের এই কথায় নির্ঝরের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। প্রথমত সে জানে, শহরের বৃহত্তর জনসমাজ তাকে একটু দূরে রাখে, ঠিকঠাক আপনার লোক বলে মনে করে না। কিংবা এমনও হতে পারে, হয়তো শ্লাঘাবোধে সেই বৃহত্তর জনসমাজের সঙ্গে লগ্ন হতে পারে না। এমন তো নয় যে সে জানে না। বিশেষভাবে জানে যে সংলগ্নতাই সম্পর্ক। সামান্য একটা মোমবাতি জ্বালাতে গেলেও শিখাকে বা সলতেকে দীপের সঙ্গে লগ্ন হতেই হয়। তার একটা লেখাতেও এই লাইনটা সে ব্যবহারও করেছে। আপাতত যেহেতু সে সাহিত্য করে তাই সহকর্মী অচিন তাকে গাছ সম্পর্কে কিছু জানাতে চায়। তবে এই মুহূর্তে তাকে পীড়া দিচ্ছিল সাহিত্যের সঙ্গে ' টাহিত্য ' শব্দবন্ধটি। কেননা 'টাহিত্য' শব্দটি জুড়ে দিলে কেমন যেন একধরনের অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায় বলেই তার ধারণা। অথচ সে লক্ষ করেছে সাহিত্য, গল্প, কবিতার সঙ্গে অনিবার্যভাবে টাহিত্য, টল্প, টবিতা এসে যায়! না এসে পারে না! কলকাতার ট্রামের সঙ্গে যেমন রক্তাক্ত জীবনানন্দ এসে পড়েন! না এসে পারেন না! তেমনি! এখন তার সাহিত্যপ্রীতি থাকায় অচিন তাকে গাছ সম্পর্কে কিছু জানাতে চায়। সে গাঁয়ের ছেলে, তবুও গাছ সম্পর্কে ভীষণ অজ্ঞ! অজ্ঞতার সাফাই গায় সে এভাবেই যে 'সাহিত্যিকদের বোটানিস্ট হতেই হবে এমন কোন মাথার দিব্যি নেই।' বলল,"একুশ বছর আগে প্রথম যেদিন তোমাদের শহরে পা রাখি তখনই চোখে পড়েছিল ব্যাপারটা। রাস্তার আশেপাশে এখানে সেখানে কত গাছ! আমাদের গাঁয়েও এত গাছ নেই! পরে বুঝেছিলাম, চারদিকে এতো কারখানা, ধোঁয়া, দূষণ তাই হিসেব করে রাস্তার ধারে ধারে ফাঁকা মাটিতে গাছ লাগানো হয়েছে প্রচুর।”
    — এখন সেই গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দ্যাখো ?
    — বুঝলাম না! দেখার কি আছে ?
    সবগুলোই তো এখন মহীরুহ! মোটা কান্ড, প্রচুর ডালপালা, কি বলতে চাইছো বলতো ?
    — কোথাও চারফুট, পাঁচফুট দূরত্বে বিশাল বিশাল গাছ ?
    — হ্যাঁ! সে তো অনেক জায়গাতেই আছে!
    — সেরকম গাছগুলোর গায়ে হোর্ডিংগুলো কি দিয়ে সাঁটা আছে দেখেছো ?
    — না। কেন ?
    — সাঁটা আছে হোর্ডিংগুলোর চারটে কোণায় মোটা মোটা চারখানা করে গজাল পুঁতে!
    — সেকি!
    — বোকা! নাহলে হোর্ডিংগুলো ঝড়ে উড়ে যাচ্ছে না কেন ?
    — কি বলতে চাইছো ?
    — গাছের গায়ে মোটা মোটা গজাল পোঁতার আগে গাছের পারমিশন নেওয়া হয়েছে ? জগদীশ বসু তো প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন যে গাছেরও প্রাণ আছে! গাছের গায়ে ক্ষত করার পারমিশন কে দিল ?
    — হুঁ! পারমিশন না দিলেই তো অশান্তি! By His Wounds We Are Healed!
    অচিন ভাবল নির্ঝর প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,"কি বলছ বিড়বিড় করে ?"
    নির্ঝর বলল,"বাইবেল থেকে আওড়ালাম। তাঁর গায়ে বিদ্ধ পেরেক আমাদের সুস্থ করে! মুম্বাইয়ের দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত শেখ ওসমানের দেহ এই দুর্গাপুরে আমাদের সুস্থ রাখে!"
    — বোঝা গেল না প্রসঙ্গ কি!
    — তুমি কি বলতে চাইছ বল না!
    —পরিবেশ দিবস, একটি গাছ একটি প্রাণ, হ্যানো ত্যানো করে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দুচারবার বেশ কিছু টাকা খরচা করে, পোস্টার ফেস্টুন ছাপায়। এদিকে নাকের ডগায় গাছকে খুন করা হচ্ছে! মানুষ সচেতন হবে না ? দুটো খবরের কাগজের অফিস আর দুটো লোকাল সাপ্তাহিক ব্যুলেটিনের অফিসে আর গোটা পাঁচেক টিভি চ্যানেলের কাছে গেসলাম। আজ অব্দি কোন কাগজ ছাপেনি, কোন চ্যানেল আজ অব্দি টেলিকাস্ট করেনি। লোকাল কেবল টিভি চ্যানেল দুটো অবশ্য দেখাবো বলেছে।
    — তুমি কি করতে চাইছো ? গাছগুলোকে হোর্ডিংমুক্ত করতে চাইছি। চোখের সামনে থেকে আধ ন্যাংটো মেয়েছেলের বিশাল ক্লোজআপ খুলে ফেলতে চাইছি। তুমি তো শালা ঢ্যামনা! তোমার ভালো লাগে বোধহয়! অচিনের উগ্রতায় রেগে ওঠার বদলে হেসে ফেলল নির্ঝর! ক্ষমাসুন্দর হাসিতে দুপাটি দাঁত আলোকিত করে বলে উঠল,"তার জন্য শালা খিস্তি দিচ্ছ কেন ? বর্তমান রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা না থাকায় তোমাদের মানসিকতা এখন এরকম হয়ে গেছে যে আনুগত্য না দেখলেই তোমরা ক্ষেপে ওঠো! দীর্ঘকাল ধরে আধিপত্য করতে করতে তোমরা সকলেই এক একটি বাস্তুসাপ হয়ে বছরের পর গত্তে ঢুকে বসে আছো! গায়ে পা পড়লেই ফণা মেলে তুলে ধরো! বিষ নেই তবে তাতে এত্তোবড় চক্কর! মানুষের কাঁধে হাত রেখে তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করো যেটা ষাটের দশকে, সত্তরের দশকে করতে। মানুষ আবার জড়িয়ে ধরবে তোমাদের! তোমাদের পার্টিতে আর ক্লাস ফ্লাস হয় না, না ? যাক গে– থানা বা মেয়রকে বলেছ ?"
    অচিন নরম হয়, বলে,"স্যরি! নাও! সিগারেট ধরাও! ওই দুটো জায়গাই তো আল্টিমেট ডেস্টিনেশন। তবে আমি একা বললে তো এরা নাও শুনতে পারে, এটা গণসচেতনতা বা অনেকগুলো কণ্ঠস্বর দরকার। তাই এরকম বকতে হচ্ছে! তোমাকে বলা এ কারণে যে দুর্গাপুর সার্কেলের সাহিত্যিকদের মধ্যে যদি এই ক্ষোভটা সঞ্চার করতে পারো, তাহলে হয়তো লেখালেখি হতে থাকলে ক্রমে সরকার আর তারপর মেয়রের টনক নড়বে এই আর কি!
    অচিনের এই প্রত্যাশায় নির্ঝরের ন্যূব্জ চৈতন্যের গায়ে বল সঞ্চারিত হয়, সেটি চিত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করে! অচিন জানেনা, নির্ঝরকে ঠিক সাহিত্যিক বলা যায় না। খুব বেশি হলে তাকে একজন অক্ষরকর্মী বলা যায়! বিশ্বায়নের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে চালডালতেলসবজির দাম আকাশছোঁয়া অথচ নিষিদ্ধ ফটো বা সিনেমার পেনড্রাইভ আর সেটি প্রদর্শনের যন্তরসমূহ এবং পেনকাগজকন্ডোম খুব সস্তা! তাই সেগুলির ভোক্তাও ক্রমবর্ধমান! মা সরস্বতী এখন বহু প্রসবিনী! তিনপয়সার মহিলা কবি, সেও শালা লিখে ফেলছে, ''অপরাজিতা ফুলের পাপড়ির ন্যায় বিন্যাসবিশিষ্ট যোনি! '' লে হালুয়া! অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি এত কাল ঈপ্সিতা রমণীর ঠোঁটের বর্ণনায় ব্যবহৃত হতো, এখন এখন দেখা যাচ্ছে গোপন নারী অঙ্গটির সঙ্গে উপমিত হতে! ওঃ! কাজেই তার মতন একজন মধ্যমেধার অক্ষরকর্মীকে 'সাহিত্যিক ' বললে শব্দটির মহিমা যেন ক্ষুন্ন হলে বলে মনে হয়! দু চারটে পণ্যপত্রিকার সঙ্গে পাঁচ 'ছটা লিটিল ম্যাগাজিন সে মাইনের টাকা থেকে কেনে এবং প্রত্যেকটাই খুঁটিয়ে পড়ে। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে নির্ঝরের এটাই যা তফাত। তবু সামান্য একজন অক্ষরকর্মী হলেও সাহিত্যিকদের সম্পর্কে সমাজের অগ্রবর্তী অংশের এই প্রত্যাশা তাকেও উজ্জীবিত করে! সে জানে যে তাত্ত্বিক বীক্ষণে সমাজ ও সাহিত্যের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করার একটা প্রয়াস ক্রিয়াশীল থাকেই! তাই সে চায় সাহিত্য যেমন সমাজের কাছে আসবে, সমাজও তেমনি সাহিত্যমুখী হবে! মধ্যিখানে থাকবে সময়, দুলবে অভিজ্ঞতা! নইলে শিল্প হয় না, সৃষ্টি হয় না!
    সে জানে, অচিন হয়তো জানেনা আমাদের মেগাসিটিতে নানান অ্যাড এজেন্সির অফিস আছে। ' অমুক কমিউনিকেশন ' বা 'তমুক যোগাযোগ ব্যবস্থা' নামের সাইনবোর্ড লাগানো অফিস গুলিতে বসে এরা তাদের শহরের উষ্ণতম এবং সর্বোচ্চ মূল্যের কলগার্লটির মুখমন্ডল বাদ দিয়ে দেহের বাকি অংশের ফটোগ্রাফ এবং ফটোগ্রাফটির মালকিনের কোড নম্বর যেমন ইমেলে বহু দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে পাঠায় তেমনই সাইনবোর্ড আর হোর্ডিংগুলির প্রদর্শন স্থান নির্ণয় করে। তাদের শহরে সদ্য গজানো চারতারা বা পাঁচতারা হোটেলগুলির কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কোনো কোম্পানির কর্তা বা তাদের শহরের অমিত প্রভাবশালী মানুষ যখন একটা সন্ধ্যে বা একটা রাত আনন্দ করতে আসেন, তখন সেই ইমেল পাঠানো 'অমুক অমনিকেশন' বা ' তমুক যোগাযোগ ব্যবস্থা ' র ফোন নম্বরে ফোন আসে, '' অমুক কোড নাম্বারের কলগার্লটিকে তমুক হোটেলের এত নম্বর রুমে কাল রাত দশটায় পাঠাতে পারবেন ? তাহলে বলুন! গুগল পে ' তে আপনার পেমেন্ট আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি!"কোম্পানির কর্তারা যেমন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আনন্দবর্ধন করে এদের প্রত্যক্ষ সহায়তায়, তেমনই নিজেদের বিজ্ঞাপণগুলোও এইসব কমিউনিকেশনকে দিয়েই করায়। নিজের হাতে বা নিজেদের লোক দিয়ে তো করায় না! সুতরাং অচিনকে এখন লড়তে হবে শুধু রাবণের সঙ্গেই না, মেঘের আড়ালে থাকা মেঘনাদের সঙ্গেও! ও প্রত্যাশা করে নির্ঝরের মধ্যে বারুদ আছে, জ্বলে উঠবে, অগ্নিসংযোগের অপেক্ষা। ও জানে না নীতিআদর্শমূল্যবোধ এগুলো জিওল মাছ, জিইয়ে রাখতে হয় দীর্ঘদিন ধরে যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়! ও জানে না এগুলো প্রযুক্তির কল্যাণে সহজলভ্য, ক্রয়মূল্যও কমে গেছে অনেক! জিইয়ে রাখা তাই সময় ও মনোযোগের অপচয় মাত্র! ও জানে না, পেন আর কাগজ নিয়ে যে লোকটা সাহিত্যরচনা করতে বসল, সে এতক্ষণ ধরে কিরকম অন্যায় আত্মসমর্পণ করে এল!

    ।। তিন ।।

    নতুন বাড়িতে এসে বিড়াল প্রথমেই যে কাজটা করে সেটা হোল, পেচ্ছাপ করে করে নিজের চলাফেরা চৌহদ্দিটুকুর মাপ করে নেয়। পেচ্ছাপ করতে থাকে সর্বত্র ওই চতু:সীমা নির্ধারণ করার জন্যে! এখন বুঝতে পারি, একটা পশুর যে বিবেচনা আছে তাও বোধহয় নির্ঝরের নেই কেননা নতুন ব্রাঞ্চে এসে সে তাও করে নি! তার চৌহদ্দির মাপ না করেই সে খাপ থেকে তলোয়ার বার করে ফেলেছিল! পরে অবশ্য উদ্যত তলোয়ার খাপে ঢুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে।

    সেদিন ক্যান্টিনে দুপুরের খাওয়া সেরে বেসিনে হাতমুখ ধোবার সময় আয়নায় নির্ঝর দেখল পেছনে এঁটো হাতে রমেশ দাড়িয়ে! সে জানে রমেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের আড়ষ্টতা ঘুচবার নয়, কেননা দুটি মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের মৌলিক সামঞ্জস্য না থাকলে তাদের সম্পর্কের আয়নায় চিড় ধরে যায়! ভরত রাম, লক্ষণ যাদব বা তপনদা ছাড়াও কয়েকজন কলিগের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে রমেশের ডেলি চারশো টাকা করে রোজগার বন্ধ করে দিয়েছিল। পরিণতিতে তাকে বিপাকে ফেলতে ক্লিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করার আদেশ দেওয়া হোল, বেটার কাস্টমার সার্ভিসের কারণে। উন্নত গ্রাহক পরিষেবাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির শ্লোগান এখন! প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার একমাত্র অস্ত্র। একজন পুরনো কর্মচারী হিসেবে নির্ঝর এই জায়গা থেকে মুখ ফেরাতে পারে না, তাহলে কথায় আর কাজে ফারাক থেকে যায়! তাতে তাকে প্রথামাফিক কোন ট্রেনিং নাই বা দেওয়া হল! ক্লিয়ারিংয়ের টেবিলে ঘন্টা দুয়েক বসার পর থেকেই অবশ্য নির্ঝর বুঝে গিয়েছিল কেন এই জায়গাটায় আগে থেকেই দুজন স্টাফ আর গত ছ' মাস ধরে স্বপনদা আর রমেশ বসতো! রমেশ কাজ না পেলেও রোজই আসে, এর ওর সঙ্গে গল্প করে চলে যায়। একদিন নির্ঝর ওকে বোঝাতে গিয়েছিল যে সে ওর শত্রু নয়, বৃথা! নির্ঝর আর ওর সম্পর্কের মাঝে এখন বিস্তর পলি!

    আজ তো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে আজ আশাকরি ও তাকে ভুল বুঝবে না! এরকমই ভাবল নির্ঝর। মুখধোয়া শেষ হলে বেসিন ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই রমেশ ঝড়ের বেগে হাতমুখ ধুতে ধুতে বলে উঠলো,"যাবেন না দাদা! দুটো গল্প করি।"
    — না ভাই! প্রচুর চেক পড়ে আছে সাজাতে হবে, সব মিলিয়ে ফ্লপি রেডি করে তিনটের মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউসে না পাঠাতে পারলে তো আবার —
    — ছাড়ুন তো দাদা! আমি তো আছি। মানে, যখন মেনে নিতে চলেইছেন তখন টেনশন কেন করছেন ? সাজানো, গোছানো, মেলানোর কাজটা আমি করব। ততক্ষণে আপনি ফ্লপি রেডি করে ফেলবেন। দশ মিনিট গল্প করি সিগারেট টানতে টানতে। নিন, ধরান!"
    ধোঁয়া ছেড়ে রমেশই শুরু করল,"কখনো একজন, কখনো তিনজন ক্রিমিনাল লাস্ট ট্রেনটা ধরে আমার সঙ্গেই বাড়ি ফেরে। তাদের গল্পটাই করি প্রথমে!"
    নির্ঝর চমকে উঠল! "ক্রিমিনাল মানে ?"
    — মানে ওই কেপমারি, ছিনতাই, ট্রেণে কারো ব্যাগ নিয়ে সটকে পড়া, এসব করে করে যাদের নাম, ঠিকানা, ছবি পুলিশের পাকা খাতায় উঠে গেছে। যখন হাজত থেকে জামিন পায় তখন এসব ছ্যাচড়ামি করে আবার হাজতে না ঢোকা পর্যন্ত। ট্রেণে যাতায়াত করতে তো এদের টিকিট লাগে না। মাসে একবার দশ পনেরো দিন হাজত বাস করতে পারলে থানার ডাকবাবুর কাছ থেকে কমিশন যা পায় তাতে সারা মাস ফ্যামিলির খরচাটা উঠে যায়। তাই প্রত্যেক মাসেই এরা মুখিয়ে থাকে কবে আবার হাজতবাস হয় সেজন্যে! সব মাসেই তো হয় না তাই ছোটখাটো ছ্যাঁচড়ামিই ভরসা তখন!
    নির্ঝরের চোখ কপালে উঠে গেছে! ধুত্তোর ক্লিয়ারিংয়ের কাজ! চাকরি যায় যাক! রমেশকে চেপে ধরলো,"ডাকবাবু, ক্রিমিনাল, কমিশন এসব কি ?"
    রমেশও অবাক! বলল,"সেকি! আপনি নাকি সাহিত্য করেন! জানেন না ? তাহলে তো দশ মিনিটে হবে না! আচ্ছা! শর্টকাট করেই বলি। শুনুন! ক' মাস আগে এই স্টেট ব্যাঙ্কের ওই মায়াবাজার ব্রাঞ্চটায় সকাল এগারোটায় বারো লাখ টাকা ডাকাতি হলো না ? কদিন বাদে এখান থেকে একজন ব্যাঙ্ক ডাকাতকে ধরল পুলিশ, মনে পড়ছে ? এরপর তাকে জেরা করে কলকাতা থেকে একজন, পাটনা থেকে একজন আর রাঁচি থেকে দুজন ব্যাংক ডাকাতকে ধরা হলো। টিভিতে খবরের কাগজে দেখেছেন তো ?"
    — হ্যাঁ! দেখেছি তবে যেহেতু আমাদের ব্যাঙ্ক নয় তাই অতো মন দিয়ে দেখনি!
    — আপনার তাহলে ধারণা, আসল ডাকাত গুলোই ধরা পড়েছে, তাই না ?
    — তাই তো! ডাকাতের আবার আসল নকল কি!
    — যারা ধরা পড়েছিল তাদের মধ্যে দুজন আমার সঙ্গে ডেলি প্যাসেনজারি করে –
    — সে কি! কী হেঁয়ালি করে আমার টাইম বরবাদ করছ বলতো ? ঝেড়ে কাশবে কি ? নাহলে চললাম –
    — শুনুন!আসল ডাকাতগুলো তো ডাকবাবুকে হিসাব করে যা কমিশন দেওয়ার সেটা দিয়ে দিয়েছে। ডাকবাবুই তো কেসটা হ্যান্ডেল করেন, হিসাব করে নিজের জন্য থোক রেখে বড়বাবু, ছোটবাবু কনস্টেবল সব যার যেমন পোস্ট তেমন টাকা দিয়ে দিয়েছে! এবার বড়বাবুর শালী থাকে রাঁচি সেখানে বড়বাবুকে নিয়ে থানার জিপ আর দুজন কনস্টেবল গেল। কনস্টেবলরা হোটেলে বা যদি তাদেরও আত্মীয়রা থাকে সেখানে সেখানে গেল। প্রত্যেকেই তো হোটেলে থাকার বিল করবে। তেমনি ছোটবাবুর হয়তো বোন থাকে পাটনা। সব জায়গাগুলোতে পালা করে থানার লোকগুলোকে পাঠানো হলো। পাতি ক্রিমিনাল গুলোকে বলে দেওয়া হল পাটনা বা রাঁচিতে অমুক দিনে বেলা তিনটের সময় অমুক মোবাইল নম্বরে বুথ থেকে ফোন করে জায়গাটা জানিয়ে দিবি। তারপর সেই জায়গাটিতেই এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করবি! একসময় পুলিশের জিপ দেখলেই দৌড়াতে শুরু করবি! পুলিশ তোদের ধরে এনে জিপে ঢুকাবে।'
    — একি বলছো তুমি ? এটা হয় নাকি ? দেখি! তোমার মুখের গন্ধ শুঁকি! ভাঙ, টাং খেয়েছো কিনা দেখি!
    রমেশ হাসে। বলে,"আসল ক্রিমিনালগুলো যদি ধরাই পড়বে তাহলে পুলিশের ইনকামটা কি করে হয়! একজন কোটিপতি যদি রাগের মাথায় খুন করে ফেলে তাহলে তার ফাঁসি হতে পারে! ফাঁসি যাবে অন্য কোন লোক! হ্যাঁ! কোটিপতির হয়তো পঞ্চাশ লাখ টাকা বেরিয়ে যাবে! একি অন্য কোন দেশ! হ্যা :! এখানে এমন সিস্টেম চালু আছে যাতে কমিশনারএসপিথানারসব্বাই, আসল ক্রিমিনাল, পাতি ক্রিমিনাল সব্বাই খুশিতে থাকতে জানে। জানতে হয়! আমার গল্প শেষ! এখন আপনাকে কেন বলছি বলুন তো ?
    — কেন ?
    — আমি হচ্ছি সেই পাতি ক্রিমিনাল, আপনি হচ্ছেন থানার নতুন ওসি। পাতি ক্রিমিনাল ডেলি একবার করে নতুন ওসিকে তেল মারতে যায়,"চা আনবো স্যার ? সিগারেট এনে দিতে হবে স্যার ?"সে জানে ওসির নজরে না থাকলে তাকে পাটনা বা আসানসোল থেকে কোমরে দড়ি বেঁধে থাপ্পড় মারতে মারতে পুলিশের জিপে ঢোকানো হবেনা। তেমনি আপনি এখানে বিগড়ে গেলে, আমি আর কাজ পাবো না। এই থানার বড়বাবু, ডাকবাবু আমার উপরে খুশ। আপনি খুশি না হওয়ায় এই থানার বড়বাবু, ডাকবাবু আর কনস্টেবলরা কৌশল করে এমন অজ গাঁয়ের থানায় আপনাকে পোস্টিং দিয়েছিল যে আপনি মাসে একবারও নিজের বউ বাচ্চার কাছে আসতে পারছিলেন না! হেঃ হেঃ হেঃ! আপনি বুঝে গেলেন পাতি ক্রিমিনালটাকে হাজতে ঢোকাতে হবে। মানে আউটসোর্সিং চলবে! আপনি আমাকে মেনে নেওয়াতে ওই রঞ্জনা নামের মেয়েটাও চলে এল কাজ করতে আজকের থেকে। দেখছেন তো ও এখন বাবুদের টেবিলে ঘুরে ঘুরে কাজ শিখে নিচ্ছে! ওকে অবশ্য একটা এজেন্সি পাঠিয়েছে। রেট আমার চাইতে একটু বেশি, ডেলি সাড়ে চারশো। পঞ্চাশ টাকাটা অবশ্য ওর সাপ্লায়ার নেবে। এমএ পাস কম্পিউটার শিখেছে, হবে না ? এটা এতদিন বাধো বাধো ছিল, ম্যানেজার ভরত রাম স্যার ভাবছিলেন, ওকে কিভাবে এনে এখানে ঢোকাবেন! মানে কনস্টেবলগুলো বাগড়া দেবে কিনা! তো আপনার কেসটায় সবাই বুঝে গেছে যে ওস্তাদি করে লাভ নেই! যাকগে দাদা! চলুন, কাজে গিয়ে বসি। একটা শেষ কথা, এইসব শো কজ লেটার চামড়ার ঘায়ের র মতন। ঠিক সময় না সারালে পরে শালা আর সারতে চায় না! আপনার লোকাল ইউনিট আপনার উপরে খুশি নয়, বিকেলে ম্যানেজার সাহেবের সঙ্গে দেখা করুন, শোকজ তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।"
    নির্ঝরের স্বভাবে কিছু গ্রাম্য গোঁয়ার্তুমি আছে, বলে বসল,"এতক্ষণ বাহানা টাহানা করে কিছু ইনফরমেশন দিচ্ছিলে, উদ্দেশ্যটা ধরতে পারছিলাম না! এতক্ষণে ধরা গেল! কৌশলে থ্রেটনিং দিচ্ছ তো ? তবে শোনো, ওইসব শো কজ, ফো কজে আমার কিছু ছেঁড়া যাবে না! যাও, তোমার ম্যানেজারকে গিয়ে বলে এসো!"
    — এহঃ হে দাদা! ভুল বুঝবেন না! একটু আগে বললাম না ? আমি হচ্ছি সেই পাতি ক্রিমিনাল, তাই আপনাকে আমি তেল মারতে বাধ্য! এই ম্যানেজার থেকে রিজিওনাল লেভেলের সবাই চাইছে শো কজের ভয় দেখিয়ে আপনাকে দিয়ে এই ব্যাপারটা মানতে বাধ্য করানো হোক। এই ব্রাঞ্চে আউটসোর্সিং চালু হয়ে গেলে অন্য ব্রাঞ্চগুলিতে এটি এতদিন বাধো বাধো ছিল, সেগুলিতে খুল্লম খুল্লা চালু হয়ে যাবে! উদাহরণ, এই ব্রাঞ্চ। যাকগে – দাদা! সে যা হয় হবে আমি যতদিন কাজ পাব ততদিন আপনাকে আমি মানতে বাধ্য! ওই রঞ্জনাও জানে সেটা। চলুন! কাজে বসা যাক। বিকেলে ম্যানেজার সাহেবের কাছে যাবেন, উনি আপনার সঙ্গে একটা রিলেশন চাইছেন। নাকি খামোখা আকচা আকচি সম্পর্ক জারি রাখবেন ?

    ।। চার ।।

    গাছের পাতা নড়ার মধ্যে বাতাসটা যেমন ঠাওর করতে হয়, যত্ন করে খাবার বেড়ে দেওয়ার মধ্যে তেমনই পত্নীর প্রেমটি বুঝে নেওয়া যায়! পরিবেশপ্রেম বা বৃক্ষপ্রেম বোঝার সেরকম কোনো সরল উপায় নেই! মাইকে গলা ফাটিয়ে বা সদলবলে রাস্তা অবরোধ করার মধ্যে অবশ্যই সোচ্চার প্রেম বুঝে নেওয়া যেতে পারে, তবে তা গাছের পাতা নড়া বা পত্নীর খাবার বেড়ে যাওয়ার মতো নিরচ্চার নয়!

    অচিনের ভঙ্গিটি সোচ্চার তবে মেকি নয়! ডেপুটি মেয়রের রুমের দিকে অগ্রসরমান ছোট্ট দলটিকে সে বোঝাচ্ছিল, একদিন অফিস কামাই করে নির্ঝররা যেভাবে অজস্র মূক প্রাণীর মহৎ উপকার করতে নেমেছি সেটি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে।

    ডেপুটি মেয়র বললেন,"আসুন! দেখুন, আমার রুমটা এত ছোট যে মাত্র ছ খানা চেয়ার আছে। ছজনই বসুন, বাকিরা না হয় –"এদিকে ছ' জন আর ওদিকে ডেপুটি মেয়র বসলে পরে ডেপুটি বেশ ফ্যাকাশে এসে বললেন,"আপনারা কি 'সুবোধ সমাজ ' বা 'নাগরিক মঞ্চ' কিসব হয়েছে আজকাল, সেসবের দুর্গাপুর ইউনিট থেকে এসেছেন নাকি ?"অচিন হাসল, বলল,"আমরা জানি যে এখানে ছয় গোস্বামী, ছাত্র বসু বা শ্রীজাত ভদ্ররা মিটিং ফিটিং করতে প্রায়ই আসেন। না, আমরা তাদের দলে ভিড়িনি। আমরা এসেছি আপাতত কয়েকজন, কাজ না হলে ক্রমশ আরো বেশি বেশি মানুষ আসবেন। শুনুন! আমাদের ক্ষোভটা। দুর্গাপুরে প্রায় প্রতিটি বড় বড় গাছের গুঁড়িতে গজাল পুঁতে বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ড বা হোর্ডিং লাগানো হয়েছে! তার মধ্যে বেশ কটাতে নারীদেহের প্রায় নগ্ন প্রকাশ আছে। গাছগুলোর কষ্ট, প্রতিটা নাগরিকের চোখের কষ্ট! পরিবেশ সুস্থতা বা সামাজিক সুস্থতার কারণে হোর্ডিংগুলো তুলে ফেলার ব্যবস্থা করুন! গাছেরা নির্বাক তাই মানুষ তাদের ওপর অত্যাচার করবে এটা বরদাস্ত করা যায় না।"ডেপুটি ভুরু কুঁচকে ভাবেন একটু, গম্ভীরমুখে বললেন,"শুনলাম! উপলব্ধিও করলাম। মানছি, আপনাদের দাবি। অবশ্যই ভাবা হবে! তবে দেখুন, কর্পোরেশন এর জন্য দায়ী নয়, তবু কিভাবে আটকানো যায় তা নিয়ে সামনের সপ্তাহের মিটিংয়ে বসছি আমরা।"নির্ঝর বলল,"কর্পোরেশন দায়ী নয় বলছেন কি করে ? যে সব অ্যাড ডিসপ্লে করা হচ্ছে তার জন্যে কর্পোরেশন টাকা পায় না ?"
    — ঠিকই বলছেন মনে হচ্ছে! আসলে আমি এটা ঠিকঠাক জানিনা! কর্পোরেশন এখানে সেখানে অ্যাড দেয়, প্রেস মিডিয়া এবং অ্যাড সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো দেখার জন্যে একটা ডিপার্টমেন্ট আছে দোতলায়, একজন অফিসার আছেন কি সাম বসু, ইনকাম এক্সপেন্ডিচারের ব্যাপারটা তিনিই দ্যাখেন। প্লিজ! তাঁর কাছে যান! আর পাঁচ দিন বাদে দুর্গাপুরে শিল্পমেলা শুরু হচ্ছে! ডাটা গ্রুপ, কাম্বানি, অ্যালায়েন্স সব গ্রুপের চেয়ারম্যানরা এসেছেন, মেয়র বোস সাহেব তাদের নিয়ে মিটিং করছেন। শিল্পমেলা শেষ হলে মেয়র সাহেবের সঙ্গে বসে ব্যাপারটা নিয়ে ডিসিশন নেব। আপনারা চিন্তা করবেন না!

    হোর্ডিংগুলি যাদের উৎপাদিত পণ্য কিনতে মানুষকে প্রলুব্ধ করে তাদের নিয়েই মেয়র সাহেব ব্যস্ত থাকবেন ক'দিন ধরে! সুতরাং এখন ওঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব নয়, এই যুক্তি জজসাহেবও মানবেন। বিশেষ করে গাছ তো আর পথ অবরোধ করতে পারে না! তাছাড়া এইসব বাঘা বাঘা শিল্পপতিরা তো আর উড়ে এসে জুড়ে বসছে না, আমরা আদর করে ডেকে আনছি। হ্যাঁ! হোর্ডিং কালচার আমাদের সংস্কৃতিতে বহিরাগত। শিল্পায়নের সামগ্রিক ব্যাপারের ফলশ্রুতিকে একটি মাত্র ইংরেজি শব্দে ঠিকঠাক ধরা যায় না! তাছাড়া শব্দটির গায়ে যে নিন্দাসূচক লেভেল সেঁটে দেওয়া হচ্ছে তাও ঠিক কি ? অচিন ভাই! তোমার কথায় আবেগ আছে বেশি, যুক্তি কম। এখন তো ডেডবডি পোড়াতেও কাঠের দরকার প্রায় কমে গেছে! সুতরাং শুধু অক্সিজেন…

    ডেপুটি মেয়রের ঘরটির বাইরে টানা বারান্দা, হাঁটতে হাঁটতে এসব ভাবছিল নির্ঝর। কর্পোরেশনের পিওনটির চিৎকারে তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। পিওনটি তাদের পেছনে ছুটতে ছুটতে আসছে। তারা পেছন ঘুরতে সে বলল,"আপনাদের দু চারজনকে ডেপুটি সাব একবার ডাকছেন! একটা কথা বলতে ভুলে গেছেন উনি। অচিনের ইশারায় নির্ঝর সহ চারজন গেল। ডেপুটি বললেন,"স্যরি! তখন মনে পড়েনি। এখানে আসার আগে আপনারা 'বাঙালি জাগো ' আর 'বহুদর্শন ' নামের দুটো লোকাল কেবল টিভি চ্যানেলের কাছে গেছিলেন ?"অবাক হোল ওরা! টিভিতে দেখিয়েছে নাকি! ডেপুটি বললন,"এদের কাছে কেন যান ? আপনাদের একটা নীতিবোধ আছে। ওই চ্যানেলগুলোর দুজন মালিক গতকাল আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে এসেছিল। গোটা দুর্গাপুরের মানুষকে গাছের ছবি দেখিয়ে, নানান টাকা খাওয়ার গল্প শুনিয়ে ক্ষেপিয়ে দেবে। সামনে কর্পোরেশন ইলেকশন, ব্ল্যাকমেল করতে এসেছিল! হাঃ হাঃ হাঃ! দশ হাজার টাকা দিতে হবে। বদলে আমাদের একটা প্রচার ধর্মী সিডি আছে, ডেলি একবার করে সেটা দেখাবে। এখানে 'জয় বার্তা' আর 'কাজের কথা ' নামে দুটো সাপ্তাহিক খবরের কাগজ আছে না ?এবার হয়তো তাদের মালিক কাম সম্পাদক হয়তো আসবে! হাঃ! অত সহজে কি আর ব্ল্যাকমেল করা যায় রে ভাই!"

    ।। পাঁচ ।।

    একুশ শতকে নেশার জগতেও এমন বিবর্তন ঘটেছে যে তা নিয়েই একটা প্রবন্ধ লিখে ফেলা যায়! নেশার দ্রব্য এবং নেশার চরিত্র এতটাই পাল্টে গেছে যে গাঁজাখুরি গল্পের দিন শেষ! নেশা বর্তমানে দুটি জিনিস এসে দাঁড়িয়েছে ভোগ আর ক্ষমতা!এই অভাবিত পণ্যসংস্কৃতির যুগে একজন লোকাল কেবল টিভি চ্যানেলের মালিকের ক্ষমতালিপ্সা বা ভোগলিপ্সা কতখানি তা জানার জন্য 'বহুদর্শন' নামের লোকাল কেবল চ্যানেলের অফিসে গেল অচিন।"সুমন্তদা! ছোট থেকে দেখছি তোমাকে। তোমার এই অফিসঘর, যন্ত্রপাতি কেনার সময় আমাদের ব্যাঙ্ক থেকে লোনের ব্যবস্থা করলাম। সেই লোনের গ্যারেন্টারও তুমি জোগাড় করতে পারোনি। কেউ কেউ রাজি হয়নি, শেষে আমিই লোনের ব্যবস্থা করলাম আর গ্যারেন্টার হলাম। মনে পড়ছে ? সেই তুমি আমার সঙ্গে ট্রেচারি করলে! সামন্তদা হতবাক! সব শুনে রেখেও গেল বেশ! বলল,"lশোন! শুধু ডেপুটি মেয়র নয়, প্রায় প্রত্যেকের কাছেই বিজ্ঞাপনের জন্যে আমাকে যেতে হয়, যাই। আমরা তো ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে অফিস খুলে মাগী সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করি না! তাই সাহায্য চাইতে দৌড়াতে হয়। ডেপুটি মেয়রের কাছেও গিয়েছিলাম। তুইই তো সম্ভব হলে সবাইকে বলতে বলেছিলি গাছের ব্যাপারটা!একজনকে দিয়ে তো একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করাচ্ছি, ডকুমেন্টারি তৈরি হচ্ছে! ভাই, আমার তো ধারণা যে কোন ছাপোষা মধ্যবিত্ত পাবলিvকের চাইতে একজন রিপোর্টার অনেক বেশি সামাজিক দায়িত্ব পালন করে অথচ তাদের গায়েই কলঙ্কের কালিটা খুব সহজে লাগানো যায়!

    সুমন্তদা রেগে যাওয়ায় অচিন তাকে ঠান্ডা করতে পাশের দোকান থেকে কোলড্রিংস আর সিগারেট কেনে। বাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বিগবাজারে ঢোকে বউয়ের নির্দেশে। বাড়ির কাগজের সঙ্গে আসা লিফলেটে লেখা ছিল পাঁচ কেজি বাসমতি চালের সঙ্গে এক কেজি চিনি নাকি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে! লাইন দিয়ে নিতে নিতে আধঘন্টা। অফিস যাওয়ার তাড়া ছিলই, চারতলা থেকে নিচে নেমে বাইকে স্টার্ট দেওয়া মাত্রই চারদিক থেকে ছয়টি মোটরসাইকেল তাকে ঘিরে ফেলে! প্রচন্ড অবাক হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে ছ'জন অচেনা মানুষ তাকে মারতে উদ্যত! সে বুঝে নেয় অন্তত তিনজন যথেষ্ট বলশালী, ভয় পাওয়ার মতো চেহারা! তবু মরিয়া হয়ে অচিন বলে ওঠে, '"এই তোরা কারা রে ? বাজার এলাকায় শুধু নয় গোটা নিশ্চিন্দিপুরে সাতাত্তরের পর থেকে সমস্ত মস্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তোরা জানিস আমি কে ? কে পাঠিয়েছে তোদের ?"কালো, বেঁটে, কুৎসিত লোকটা বাইক থেকে নেমে অচিনকে বলে,"শালে! স্কুটারসে নীচে উতার! পেহলে তেরেকো আজ কুছ শিখানা হ্যায়।"অচিন ভিতরে ভিতরে শিউরে উঠে! চারপাশে প্রচুর মানুষ, কেউই এদিকে তাকাচ্ছে না। ভাবছে হয়তো, কয়েকজন বন্ধু গল্প করছে। সে মরিয়া ভঙ্গিতে বলে, "বাহারসে আয়া না তুম লোগ ? আমার কাছে খবর আছে ধানবাদ ঝরিয়াসে কুছ লাফাঙ্গাকো বুলায়া গায়া। শোন! তোদের কাছে গলদ খবর আছে। আমি কোন আয়পিসিআয় অথবা এডিবিসি ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিই নি কখনও! মেরা নাম অচিন, আমি একটা সরকারি ব্যাঙ্কের এমপ্লয়ী। তফাত যা! মুঝে নিকালনে দে!"গুন্ডাগুলোর মধ্যে একজন বাঙালি। সে বলল,"আজ তোকে মারবো না। শুধু চেতাবনী দিতে এলাম। শোন! গাছ নিয়ে বেশি গাঁড় পেঁয়াজি মারবি না। তোর বাড়িতে ঢুকে তোর লাশটা ফেলে দিয়ে তোর বউকে তুলে নিয়ে চলে আসব।"অচিন উদ্ধান্তের মতো লাফিয়ে বাইক থেকে নামে। সে শুনেছিল, মাসল পাওয়ারের দুনিয়াতেও আউটসোর্সিং চালু হয়ে গেছে! তবে আউটসোর্সড মাসল পাওয়ার যে তাকে নিয়েও পড়বে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি! প্রচন্ড আক্রোশে সে বলে,"পেহেলে তোদের এই সহবত শিখাতে হবে কি ক্যায়সে বাতচিত করতে হয়!", বলেই গুন্ডাটার কানের নিচে একটা সজোরে ঘুঁশি মারে। বাইক সহ গুন্ডাটা মাটিতে পড়ে যায়। গুন্ডাটাকে সজোরে একটা লাথি কষিয়ে এসে বলে,"তেরেকো আজ –"কথা শেষ করতে পারে না সে। পাঁচ দিক থেকে পাঁচজন তাকে হিংস্র ভঙ্গিতে মারতে শুরু করে! বেশ কিছু লোকের উল্টোদিকে দৌড় এবং দু একজনের এদিকে ছুটে আসার মুখে গুন্ডাদের কেউ একজন ভারী লোহার কিছু একটা দিয়ে সজোরে তার মাথায় মারলে সে জ্ঞান হারাবার আগে তার মাথার খুলিটা ফেটে যাওয়া শব্দটা পরিষ্কার শুনতে পায়! মাথায় বিদ্যুৎ ঝলক নিয়ে মাটিতে পড়তে পড়তে আধো চেতনার মধ্যে সে শুনতে পায়,"এটাকে কি ওই গাছের সঙ্গে বেঁধে লটকে দিবি কি ?"

    ।। ছয় ।।

    আমরা জানি বিড়াল সাধারণত মাটিতে থাবা আঁচড়ায় তাদের বর্জ্য জনসমক্ষে লুকিয়ে রাখার জন্যে। থাবাবিশিষ্ট প্রতিটি চতুষ্পদী প্রাণী দিয়ে এরকম থাবা আঁচড়ানোর আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা আছে তবে ভারতীয় আমলাতন্ত্রের অন্তর অন্তর্গঠনটা এমন যে আধিপত্যকামী আমলাবৃন্দের থাবা আঁচড়ানোর এরকম কোন কমন ব্যাখ্যা পাওয়া মুশকিল!
    আমি ম্যানেজারের রুমে ঢুকে বেশ দাপটের সঙ্গেই নির্ঝর বলল,"ডু ইউ ওয়ান্ট টু সে সামথিং ?"ভরতরাম চিফ ম্যানেজার অসহায় ভঙ্গিতে বলে উঠল"আপ হিন্দিমে বোলে তো আচ্ছা হোগা! বইঠিয়ে! কুছ বাতেঁ থা।কাল আপকো বুলায়া গয়া, আয়া নেহী কিঁউ ?"
    অর্ধশিক্ষিত আনকালচার্ড এই লোকটির ঔদ্ধত্যে মূত্রথলি দুটি মাথায় উঠে যেতে চায় তবু স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে তবে গম্ভীরভাবেই নির্ঝর বলল,"আমার ইমিডিয়েট অফিসার পার্থদা আমার কাজে হিসাব চান, দিই। আপনার যদি কোন পার্সোনাল কথা থেকেই থাকে তাহলে আপনি নিজেই আমার কাছে যেতে পারতেন, কথা হতো!"
    ভরতরাম আবার বলল,"আপ হিন্দি মে বোলে তো আচ্ছা হোতা।"তেএঁটে বিহারীগুলো লেখাপড়া না শিখুক এটা ভালোই শিখে নিয়েছে যে কিছুতেই বাংলা বলবে না! নির্ঝর বলো,"আমি বাংলা আর ইংরেজি ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানি না। আপনি তো অনেকদিন বাংলাতেই রয়েছেন বাংলা বুঝতে তো কোন অসুবিধা নেই ? আপনি চাইলে ইংরেজিতেই বলছি!"
    — নেহী জি! আপ বাঙ্গালামে বোলিয়ে!
    — বলুন! কি জন্যে ডাকলেন ?
    ভরতরাম বলল,"ওহি নয়ী লড়কি রঞ্জনা ইখানে আপনাদের মদত করনে কে লিয়ে আয়ী হ্যায়, উকে কাজকাম শিখিয়ে পড়িয়ে লিবেন। পেহলে তো আপ কুছু মানবার জন্য তৈয়ার ছিলেন না, ছোড়িয়ে! রামজি কি কিরপা যে আপনার সুবুদ্ধি ফিরে এসেছে, আপ সমঝোতা করনে কে লিয়ে তোইয়ার! ঠিক হ্যায়! প্রেমসে কাম কিজিয়ে! হামে আগে বাড়না হ্যায়। অর উও যো শোকজ লেটার, উটা আপনার পকিটে আছে কি ?"
    নির্ঝর ইতিবাচক ঘাড় নাড়লে ভরতরাম বললেন,"গুড! উটা নিকালকে ফাড় দিজিয়ে! ইটা কার্বন কপি। দেখুন! আমি ফাড়কে ফেক দিচ্ছি! পরেশানি গায়েব ? হাঃ হাঃ হাঃ! কুছ মনে লিবেন না, আপ জ্যায়সা হোনহার অর ইজ্জতবালা আদমি বহুৎ কম হ্যায় হামারে পাস। অর এক বাত! ওহী রঞ্জনা আগলা কুছদিন আপনার পাশে কুর্সিতে বসে থাকবে। কম্পিউটারমে এন্ট্রি অর প্রিন্ট ক্যায়সে নিকালা যায় উসকো শিখিয়ে পড়িয়ে লিবেন। লেড়কি সেয়ানি হ্যায় খুবসুরত ভি হ্যায়। উসকি সাথ ক্যায়সি সুলুক কোরবেন সে ব্যাপারে আমি কুছু বলবো না, শুনব ভি না! আঁ ? হাঃ হাঃ হাঃ! আইয়ে হাথ মিলাইয়ে।

    ম্যানেজারের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এরকম আপোষের জন্য অসহায় ভঙ্গিতে ড্রয়ার খুলে নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছিল নির্ঝর। ' শালা! পেটের জন্য আর পেটের নিচের অঙ্গটির জন্য পদে পদে আপস করে চলতে হয়! ' কাঁধে ব্যাগটি ফেলে বাড়িমুখী হচ্ছে, সে সময় রঞ্জনা এল,"স্যার! বাড়ি যাচ্ছেন ? একটু কথা বলতাম।"
    — বলুন!
    — স্যার ? কাল যদি আপনার চেয়ারটায় আমি বসি ? আপনি আমার পাশে বসলেন, আমার কাজে ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। ডাকলেই রমেশদা এসে হেল্প করব বলেছে! দুটো দিন নিজের হাতে কাজটা করলে কি হবে, কনফিডেন্সটা এসে যাবে। তারপর না হয় আপনি যেমন বলবেন সে রকম হবে! রাজি স্যার ?
    রঞ্জনার কথায় ভবিষ্যতের এক সর্বনাশা পরিণতির ইঙ্গিত পায় নির্ঝর। কি সুন্দর চক্রান্ত ম্যানেজমেন্টের! এভাবে কিছুদিন চালানোর পর এরকম কাতর ভঙ্গিতে নয়, একদিন দাপটের ভঙ্গিতে রঞ্জনা, রমেশরা বলবে, 'কাল থেকে আপনি আর এ চেয়ারটায় বসবেন না।' ঠিকমতো ভেবে উঠে জবাব দেওয়ার আগেই তার মোবাইল বেজে ওঠে, 'অচিন কলিং ' এপাশ থেকে সাড়া দিলে ওপাশ থেকে অচিনের বউ সুজাতা কাঁদতে কাঁদতে জানায়, অচিনকে দুর্গাপুরের নামকরা নার্সিংহোমটির আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে! কয়েকজন গুন্ডা ওকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার সময় ও ঘোরের মধ্যে বারবার শুধু আপনার নাম আর আউটসোর্সিং শব্দটা বলছিল! ঘটেছে সকালে। একটু আগে আইসিইউ এর ডাক্তারবাবু বললেন, তিনি আশা পাচ্ছেন তাই এতক্ষণে সমস্ত আত্মীয় আর আপনাদের ফোন করার কথা ভাবতে পারছি! উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে এসে বাইকে চাপে নির্ঝর।

    নার্সিংহোমের তিনতলায় আইসিইউ লেখা রুমটির বাইরে লম্বা বারান্দায় চারটি বেঞ্চ, সুজাতা ও অন্য বেশ কয়েকজন বসেছিল। তাকে লিফটের দরজায় দেখামাত্র ছুটে এলো সুজাতা। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,"কি হবে দাদা! মনে হচ্ছে বাঁচবে না! মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে! নির্ঝর সুজাতার মাথায় আলতো চাপড় মেরে বলে উঠল,"ঘাবড়িও না তো! ওর কইমাছের প্রাণ। একুশ বছর ধরে দেখছি তো! চিন্তা করো না। কোন বেডটায় দিয়েছে ? এখান থেকে দেখা যাবে কি ?"সুজাতা ব্যাগ্রভাবে বলল,"হ্যাঁ! হ্যাঁ! ওই তো কালো কাঁচের মধ্যে দিয়ে আবছা দেখা যাচ্ছে! আমি তো পা ধরে যাওয়া অব্দি দাঁড়িয়ে থাকছি। চলুন!"কালো কাঁচের মধ্যে দিয়ে খুব কষ্ট করে বুঝে নিতে হলো ওটা অচিন! কে জানে সুজাতার কান্না নাকি পরিবেশের দোষ, নির্ঝরও কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল,"ফাইট! অচিন ফাইট! প্রথম রাউন্ডে আমরা দুজনেই হেরে গেলাম। ঠিক আছে, কিন্তু ফুলহাতা জামা তো তুইও পরিস, আমিও! আস্তিনটা দর্জি কিসের জন্য তৈরি করে ?"সুজাতা মাথামুন্ডু কিচ্ছু না বুঝে ভ্যাবলার মতো জিজ্ঞেস করল,"কিসের জন্যে ?"যেন সুজাতা নয়, প্রশ্নটা অচিনই করেছিল, তাই কালো কাঁচের ওপারে শুয়ে থাকা আবছা অচিনের দিকে তাকিয়েই উত্তরটা দিল,"গুটোনোর জন্যে।"

    ##############
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন