এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক যে ছিল রাজা

    Supriyo Jay Basak লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ মার্চ ২০২৪ | ১৯০ বার পঠিত
  • সার্কাস চইলছে বাবু, সার্কাস!

    আজব দেশের গজব রাজা সর্বক্ষন পাত্র-মিত্র, অমাত্যগণের সহিত আলোচনা করিয়া চলিয়াছেন, কী করিয়া অপরের পশ্চাতে কাঠি করা যায়। এতকাল দুর্নাম ছিল বাঙালির -- তাঁহার একমাত্র অস্ত্র নাকি কাঠি!!! সে মুড়ো ঝাঁটা কী দিয়াশলাই, জানা নাই -- কিন্তু বড্ড সূঁচালো, ফুটিলে লাগে। কিন্তু সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, আপামর বাঙালির সাধের এই একমাত্র অস্ত্রটি রাজা হস্তগত করিয়া নেন এবং বাঙালি অপেক্ষাও যথাযথ প্রয়োগ করেন -- যাহাতে অপরের প্রাণ ওষ্ঠাগত করিয়া তোলা যায়। এক্ষত্রে অনেকেই রাজাকে দুরাচারী বলিয়া গালমন্দ করিলেও, রাজা যে নিতান্ত মন্দ নন -- তাহার প্রমাণ ঝুড়িঝুড়ি আছে।

    রাজা সর্বত্র ঘুরিয়া অপরের খোঁজ খবর নেন। প্রয়োজনে খবর ক্রয় করেন। কিছুমাত্র বিরুদ্ধমত পোষণ হইলেই খবরীলালদের খবর পাওয়া যায় না। কান টানিলে যে মাথা আসিবে জানিয়াই মাঝে মাঝে কানও টানেন, তাহা হইলে রাজা মন্দ কী করিয়া হইল! রাজা বানিজ্য অসম্ভব পছন্দ করেন, ইহাতে সমৃদ্ধি লাভ হয়। সমৃদ্ধির খাতিরে এক সময় সকলই বেচেন -- জল, স্হল, বায়ু -- মায় রাজসম্পত্তি, যা আছে সব। রাজার বাচনভঙ্গী অত্যন্ত আনন্দদায়ক -- নাটুকেপনায় সিদ্ধহস্ত তিনি।

    রাজা বিজ্ঞানকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া দেশবাসীকে হাততালি অপিচ তৈজসপত্র বাজাইয়া নাচিতে বলেন। জনগণকে কদলী প্রদর্শন করানো রাজার এক মহৎ শখের অন্তর্গত। রাজা ফাঁকী দিয়া অপরের ধন করতলগত করেন। রাজা কিছু বিশেষ সুহৃদকে সুযোগ করাইয়া দেন বিদেশে চম্পট দিয়া পরধনে পোদ্দারী করার বিষয়ে। পুরাতন যা কিছু, তাহাই রাজার অপছন্দের তালিকাভুক্ত।

    রাজা ইতিহাসের বদল পছন্দ করেন, সেই হেতু নিজ পিতৃপুরুষের পরিবর্তে নিজ নাম আরোপ করিয়া পুস্তক প্রকাশনায় মনোনিবেশ করেন। স্থানের নাম হউক কিংবা মুদ্রা -- সকলই পরিবর্তিত হইয়া যায় রাতারাতি। ইহার পরেও নাকি রাজা মন্দ! রাজা সাজেন, রাজা গান বাঁধেন, রাজা রাঁধেন, রাজা কাঁদেন। রাজা সকলকেই বন্ধু ভাবেন। পরন্তু নিন্দুকে বলে ইহা না কী ধোঁকার টাটি।

    শুধুমাত্র রাজা বলিয়াই উনি দুইবার জন্মগ্রহণ করেন দুইটা পৃথক সময়কালে এবং ইহা শতাব্দীসেরা কৌতুক বলিয়া পরিগণিত হয়। মৃগয়ার চরম শখ হেতু শৈশবেই রাজা না কী কুম্ভীর সংক্রান্ত কী এক বিভ্রাট বাধাইয়া ছিলেন বলিয়া রটনা শোনা যায় -- তবে ইহার প্রমাণাদি পাওয়া যায় নাই। রাজা অগ্রে স্নাতক হইয়া পরবর্তীতে প্রাথমিকের শিক্ষালাভ করেন -- কীরূপে ইহা সম্ভবপর হইলো তাহা সম্বন্ধে জ্ঞাত হইলে সকলেই বিশেষ উপকৃত হইতে পারে। যদিও দুষ্ট লোকে বলে রাজার কথায় শতকরা একশ' ভাগই মিথ্যা।

    রাজার পারিষদরা অত্যন্ত বিশ্বস্ত, সেই কারণেই তাহারা রাজার সকল কথাকেই ব্যাদবাইক্য বলিয়া প্রমাণ করিতে চাহেন। উপরন্তু রাজার দীর্ঘ বিদেশ ভ্রমণকাল জুড়িয়া বিশেষ আগ্রহের সহিত দেশ শাসনও করেন। নিজ দেশের প্রতি অকৃত্রিম সম্ভ্রম বশতঃ রাজা দিশি পোষাক ও খাদ্যের প্রতি চূড়ান্ত অনাগ্রহী, বিলাতি ছাড়া তাহার এক্কেবারেই চলে না। রাজা অপরকে অসম্মান করিয়া নিজেকে কেউকেটা প্রমাণ করিতে সদাই উদগ্রীব থাকেন -- তা সে রাজা অমনধারা করতেই পারেন। রাজা নিজ নামকে অমর রাখিবার অছিলায় যাহা করিবার তাহা করেন না এবং যাহা না করিবার তাহাই করিয়া বসেন।

    রাজা নিজে যুদ্ধ করেন না বটে কিন্তু সকলকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করিয়া তুলিতে পিছপা হন না। সেনাদিগকে শহীদির শরবত পান করাইয়া রাজা দুঃখ লাঘবের হেতু পাশের রাজ্যকে তুলোধোনা করেন। রাজা এতটাই উদার যে বিনা আমন্ত্রণে পাশের রাজ্যের রাজার জন্মতিথি পালন করিতে ছুটিয়া যান। রাজা নিজে বিদ্যাগজ্গজ্ হইলেও জনগণকে শিক্ষিত করিয়া তুলিতে ভয় পান। রাজা মস্করাশাস্ত্রে অতীব পারদর্শী -- শিশুদের কর্ণমর্দন করিয়া আনন্দলাভ করেন।

    রাজা এত ভালো প্রতিশ্রুতি দেন যে চরম শত্রুও তাকে অবিশ্বাস করতে পারে না -- অবশ্য সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হয় সে খবরে আমাদের কোন প্রয়োজন নাই। যদিও নিন্দুকে বলে ঠাকুরের সামনেটা যতটা দর্শনীয়, কাঠামোটা ততটাই কুৎসিত। কিন্তু আমরা রাজার পক্ষে। অপরে বাঁচুক, না বাঁচুক -- রাজাকে বাঁচিতে হইবে, কারণ উনি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, দেবতুল্য। রাজার মতো এহেন পশুপ্রেমী নিতান্ত বিরল -- তিনি বিশেষ কিছু পুচ্ছবিশিষ্ট চতুষ্পদদের মধ্যেও আপন মাতাকে দর্শন করিয়া থাকেন। রাজা এতোটাই ধর্মভীরু, যে সর্বক্ষণ নিজ ধর্মকে বিপদের মুখে ঠেলিয়া দেন ও অপর যে কোন ধর্মাচরণের পথকেই কন্টকশূল করিয়া তোলেন।

    এহেন গুণধর রাজার কথাই যে আইন পরিগণিত হইবে এবং রাজার বিরুদ্ধে কথা বলিলেই তাহা দেশদ্রোহিতার সামিল হইবে ইহা বলাই বাহুল্য। অহঙ্কারই রাজার এক এবং একমাত্র অলঙ্কার। মানুষ খাইতে পাউক আর না পাউক রাজকর দেওয়া চাই। মানুষের রোজগার তলানিতে আসিয়া ঠেকিলেও সব কিছুর মূল্য বাড়িবেই। শিক্ষার মান আদিম যুগে পৌঁছাইয়া গেলেও রাজবাক্য শিরোধার্য করিতে হইবে। যে মানুষগুলা রাজাকে মুকুট পরাইয়াছিল তাহারাই রাজার দেশের জনগণ হওয়ার যোগ্যতা হারায়। রাজার আত্মতুষ্টির কারণে দেশ রসাতলে পৌঁছাইয়া গেলেও আমরা তাঁহার সঙ্গ পরিত্যাগ করিব না ইহাই স্হির করিয়াছি। রাজার চওড়া ছাতির গুণগান আমরা গাহিবোই, তাহাতে সেই ছাতির মাপে যতো জলই মিশিয়া থাকুক না কেন!

    অবশেষে একটি কথা জ্ঞাত করানো আবশ্যিক মনে করিতেছি -- কলঙ্ক না থাকিলে রাজা সাজার আমোদ কোথায়? তবে রাজা কী কারণে রাণীকে ত্যাগ করিয়া রাজসিংহনকেই রাণীর মর্যাদা প্রদান করিয়াছিলেন তাহা আমাদিগের ন্যায় অন্ত্যজ জনের না জানাই মঙ্গলকর।

    -- অ্যালবার্ট অবনীশ আনসারি
    ২০.০৩.২০২৪
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন