এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জাতির শিক্ষা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে দু-চার কথার টোকাটুকি

    Samir Karmakar লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মার্চ ২০২৪ | ৩৯৩ বার পঠিত
  • (বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এ লেখা নতুন কোন লেখা নয়। মৌলিকত্বের দাবী পেশ করতেও, এই লেখা লেখা হয় নি। শিক্ষা ব্যবস্থার একটি উৎপাদিত সামগ্রী হিসেবে - জনকল্যাণমুখী সর্বজনীন শিক্ষার প্রচারে ও প্রসারে নিযুক্ত কলের অংশ হিসেবে - আমার কিছু জোগাড় করা অনুভবের অগোছালো সংকলন এই লেখা।) 



    দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান প্রসঙ্গে বিতর্কটা আজকের নয়, দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক কালে তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা। প্রস্তাবনার শুরুতেই এক অন্যতম বৈশ্বিক লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ  “ensure inclusive and equitable quality education and promote lifelong learning opportunities for all” by 2030। বিগত শিক্ষানীতি গুলির ধারাবাহিকতা মেনেই সাম্প্রতিক নীতিটির প্রণয়ন করা হয়েছে - সে কথাটিও যেমন বলা হয়েছে ঠিক একই রকম ভাবে এই নীতিটির অনন্যতা বোঝানোরও চেষ্টা করা হয়েছে।

    সাম্প্রতিক কালের এই শিক্ষানীতির অন্ত:করণেও ফল্গুধারার মতো “এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত”-এর স্রোত বয়ে চলেছে।  একথা ঠিকই, 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর প্রসঙ্গকে আড়ালে রেখে প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির সমাজতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব বোঝা যাবে না। যে কোন নীতির মতোই, বর্তমানের প্রস্তাবিত নীতিটিও কয়েকটি পূর্বানুমানের উপর দাঁড়িয়ে - যার মধ্যে নিচের  পূর্বানুমানগুলি গুরুত্বপূর্ণ: (ক) ভারত বহু সংস্কৃতি ও ধর্মের দেশ, (খ) ভারত বহুভাষিক দেশ, এবং (গ) ভারতে বৈষম্য আছে। সর্বোপরি, 'ভারতীয়' নামক একটি “জাতি” সত্ত্বার প্রসঙ্গ রয়েছে। বহু সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষার এই দেশে উন্নয়নের ধারাকে সুনিশ্চিত করতে ও অব্যাহত রাখতে বৈষম্যের দূরীকরণ একান্তভাবেই আবশ্যক। “এক ভারত, উন্নত ভারত”-এর একটা ছবিকে জনসমক্ষে হাজির করতে এতো দিন পর্যন্ত যে কয়টি শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে তাদের কোনটিই “এক ভারত”-এর অন্তড়ালে লালিত হওয়া জাতীয়তাবাদী প্রকল্পটিকে অতিক্রম করে নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি সংক্রান্ত এ যাবৎ কালের যা কিছু বাক বিতণ্ডা - সে সমস্তই জাতি ও জাতীয়তাবাদকে স্বতঃসিদ্ধ ধরেই একটি জনকল্যাণমুখী সার্বিক শিক্ষানীতির সপক্ষে অথবা বিপক্ষে সওয়াল করেছে। ফলত, পক্ষের আর বিপক্ষের যুক্তিগুলি ঠিক কি ভাবে একে অপরের থেকে আলাদা - বা, আদৌ আলাদা কিনা - তা ব্যাখ্যার অবকাশ খোঁজে।

    জাতি ও জাতীয়তার নির্মাণে শিক্ষা

    ইউরোপীয়দের হাতে যে সাম্রাজ্যের পত্তন ভারতবর্ষকে সেদিন ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশে পরিণত করেছিল, সেই উপনিবেশের এন্তেকাল ঘোষণা করে ১৯৪৭-এর ১৫ই অগাস্ট এক নবীন রাষ্ট্রের জন্ম হল - “সাম্রাজ্যিকতা”র ক্ষয়রোগ ফুসফুসে নিয়ে। এই রোগ সম্বন্ধে আমরা যে আদৌ ওয়াকিবহাল ছিলাম না - বিষয়টা এমন নয়। এই রোগের নির্ণয় করে বেশ কিছু কাল আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বিশ্ববোধে লিখেছিলেন, "[...] এই চেষ্টা সাম্রাজ্যিকতাবোধে গিয়ে পৌঁছেছে। এক জাতির সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দেশে যে-সমস্ত রাজ্য আছে তাদের সমস্তকে এক সাম্রাজ্যসূত্রে গেঁথে বৃহৎভাবে প্রবল হয়ে ওঠবার একটা ইচ্ছা সেখানে জাগ্রত হয়েছে। এই বোধকে সাধারণের মধ্যে উজ্জ্বল করে তোলবার জন্যে বহুতর অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা হচ্ছে। বিদ্যালয় নাট্যশালায় গানে কাব্যে উপন্যাসে ভূগোলে ইতিহাসে সর্বত্রই এই সাধনা ফুটে উঠেছে।" লক্ষ করার বিষয়, এই সাম্রাজ্যিকতার জীবাণু রাষ্ট্রের শরীরে যে সকল রন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করে তাদের মধ্যে অন্যতম বিদ্যালয় ব্যবস্থা। স্বাধীনতা পূর্ব ভারতবর্ষের যাবতীয় শিক্ষা সংস্কার - এক ভাবে দেখলে সাম্রাজ্যিকতার প্রচারে ও প্রসারে বিশেষভাবে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না শিক্ষার সেই আলোকেই প্রাথমিক ভাবে আলোকিত ছিল আমাদের সেদিনের জাতি ও জাতীয়তার সদ্য আমদানি করা ধারনাগুলি। পরবর্তীকালের সকল শিক্ষানীতি, বিদ্যালয় ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করার মধ্যে দিয়ে, সাম্রাজ্যিকতার এই বোধকেই পোক্ত করেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, জাতি ও জাতীয়তার ধারণাটিকে মজবুত থেকে মজবুততর করেছে। ২০২০র জাতীয় শিক্ষানীতিও এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। জাতি ধারনার সাম্রাজ্যিকতার থেকে আমার আপনার তাই মুক্তি নেই। যাবতীয় দ্বন্দ্ব যাবতীয় বৈচিত্রকে নির্মূল করে প্রায় সমান মাপের মানুষ তৈরি করাতেই এখন যাবতীয় আগ্রহ। সেই সমান মাপের মানুষ পেতেই নীতির প্রণয়ন - নিত্য নতুন আইনের সংস্করণ। “জাতীয় ফুল”, “জাতীয় পশু”, “জাতীয় পাখি”র মতোই আচার সর্বস্ব  “জাতীয় শিক্ষানীতি” আসলে সেই “চেষ্টা” যা আমাদের নতুন নতুনভাবে “সাম্রাজ্যিকতাবোধে”ই কেবল নিয়ে যায়। এতে তাই জনকল্যাণকর কোন উপাদান খোঁজার চেষ্টা বৃথা। বহু ভাষার, বহু সংস্কৃতির, বহু জীবনাচারের দেশে একই ধরণের নীতি, একই ধরণের মূল্যায়ন, একই ধরণের ধাঁচা “জাতীয়তা”র দোহাই পেড়ে চাপিয়ে দেওয়াটা কতখানি বিচক্ষণতার পরিচয় দেয় - তা নিয়ে সংশয়টা আজকের নয়, অনেকদিনের। এ হেন শিক্ষায় ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ কেন বাজেটের ৬০ শতাংশ “বিনিয়োগ” করলেও ভাবগতিক যে খুব একটা সুবিধের হবে এমন ভাবাটাই অসঙ্গত। অষ্টম তফশিলের ২২টা ভাষায় যতই ৫টি করে বাক্য রচনা করে ছাত্রদের মুখস্ত করাই না কেন - অবস্থার হেরফের হওয়ার সম্ভবনা প্রায় নেই। এই ধরণের বাগাড়ম্বরকে “ভাষা সঙ্গম” বলে চালানো যেতে পারে, কিন্তু সমস্যার সত্যিকারের সমাধানের জন্যে রাজনৈতিক অলিন্দের সেই ভেদ বুদ্ধির নিকেশ হওয়াটা জরুরি যার জন্যে মহারাষ্ট্রে বিহারি, বা দিল্লিতে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা নিগৃহীত হন।

    বিষয়টি অবশ্য এই রকম আদৌ নয় যে প্রাচ্যের এক রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র সাম্রাজ্যিকতা বোধের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পাশ্চাত্যেরও অনেকেই শিক্ষাব্যবস্থার বলিষ্ঠ সমালোচনা রেখে গেছেন। ফ্রেডরিশ নিৎশে চলতি শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপযোগিতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন - "The true task of education, in this view, is to form people who are, as the French say, ‘au courant’—the same way a coin is courant, valid currency. The more of these ‘circulating’ people there are, the happier the nation is as a whole. And that is the goal of the modern educational institution: to make everyone as ‘current’ as it lies in his nature to be, to train everyone to convert his innate capacity for knowledge and wisdom, whatever it might be, into as much happiness and income as possible" (অ্যান্টি এডুকেশন: অন দি ফিউচার অফ আওয়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ১৮৭২)।  আমাদের দেশের এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যেটা, সেটা হল শিক্ষানীতির সমালোচকরা প্রায় সকলেই এই utilitarian view-এর ঊর্ধ্বে উঠে হয় তাঁদের বক্তব্য হাজির করতে পারছেন না, নয়তো পারলেও করতে চাইছেন না। পাছে যদি কেউ আবার “বেঁড়ে পাকা অতি বিপ্লবী” বলে দেগে দেয়, এই ভয়ে। অথচ, এই কথাই বা অস্বীকার করি কিভাবে, যে, জাতি ও জাতীয়তার প্রশ্নে যে শিক্ষানীতি সে অবধারিতভাবেই ব্যক্তিমানুষের বিযুক্তিকরণে বা বিনির্মাণে 'কল'-এর মতোই কাজ করে: "দেশের সমস্ত শিক্ষাবিধিকে সে এক ছাঁচে শক্ত করিয়া জমাইয়া দিবে, ইহাই তাহার একমাত্র চেষ্টা। পাছে দেশ আপনার স্বতন্ত্র প্রণালী আপনি উদ্ভাবিত করিতে চায়, ইহাই তাহার সবচেয়ে ভয়ের বিষয়" (শিক্ষা বিধি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।        

    এক শিক্ষা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা

    শিক্ষার জাতীয়করণের প্রসঙ্গ বুঝতে একটু পিছিয়ে যেতে হবে আমাদের। জানতে হবে “শিক্ষা” বলতে আমরা এখন যা বুঝি তার শুরুটা কিভাবে। প্রাচীন ভারতবর্ষের শিক্ষা পদ্ধতি ছিল মূলত শ্রুতিনির্ভর এবং  অ-সার্বজনীন। বিশেষ এক শ্রেণীর কুক্ষিগত ছিল শিক্ষা সেদিন। ভারতবর্ষ তখন নেহাতই এক জনপদ অধ্যুষিত ভূখণ্ড। একতা এবং অখণ্ডতার ধারণাতো দুরের কথা। হয় যুদ্ধ নয় রাজত্বের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বাদ বিসম্বাদ - এই নিয়েই সেদিনের ইতিহাস। রাজকীয় যুদ্ধ বা বিসম্বাদের থেকে দূরে জনজীবনের মতোই শিক্ষাও বাধ্যবাধকতাহীন। মাঝে মধ্যে দুই একটা ছুটকো ছাটকা রাজকীয় আক্রমণ ছাড়া শিক্ষার নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহকে প্রভাবিত করার মতো ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। খানিকটা পরে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থানে এই ধারা খানিকটা ভিন্ন খাতে বইলেও - তা মূলের পরিপন্থী হয়ে ওঠার অবকাশ খুব একটা খোঁজে নি। শিক্ষাও ব্যাপক হয়ে ওঠেনি। মুসলমান আধিপত্যের কালে মাদ্রাসা ব্যবস্থার প্রণয়ন হল বটে, কিন্তু অভিন্ন শিক্ষার  ব্যাপক বিস্তারে যে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো তেমন মনে হয় না। এই পর্বের শিক্ষাও অনাড়ম্বর অ-সার্বজনীন। এরপর, ব্রিটিশ বনিকদের হাত ধরে আরও এক বি-জাতীয় সংস্কৃতির আমদানি হলে, ১৩ই অক্টোবর ১৬৯৮-এ চার্টার অফ ইস্ট ইন্ডিয়ায় ভারতবর্ষের ইউরোপীয় এবং অ্যাংলো-ভারতীয়দের মধ্যে খ্রিস্টীয় ভাবনার প্রচার আর প্রসারের কথা বলা হল। একই সাথে বলা হল, কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যেও যেন ন্যূনতম পক্ষে গস্পেলের প্রচার আর প্রসারকে যেন সুনিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে যেটা মনে রাখা দরকার, খ্রিস্টীয় ভাবনার প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে জারি করা এই সনদ আগেকার সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে আলাদা ছিল। সেই যেন বা প্রথমবার আমরা অনুধাবন করলাম - শিক্ষার সাথে “income” আর “happiness”-এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কটুকু। শিশুশিক্ষার ছদ্মবেশে শিক্ষার সাথে উপার্জন আর সুখের অবিচ্ছেদ্য গাঁটছড়া আমাদের শিখিয়ে দিলো - “পড়া শোনা করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”।  পরবর্তীকালে ১৮১৩এর আইনে আমরা দেখতে পাবো ইউরোপীয় ব্যবস্থায় আরও সুসংহত ব্যাপক শিক্ষার প্রণয়নে “maintenance of sound learning and religious education”-এর উল্লেখ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাজক সম্প্রদায়ের উপর বাড়তি গুরুত্ব ন্যস্ত করার মধ্যে দিয়ে এক ভিন্ন পদক্ষেপের সপক্ষে পার্লামেন্টের অনুমোদন: “it is expedient that the Principal and some of the Professors of the said College should be Clergymen of the Established Church”। ১৮৫৪র ডেসপ্যাচে শিক্ষার বিস্তারে, হিন্দু ও মুসলমানদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে, স্থানীয়দের সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্ব মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকলের জন্যে অভিন্ন শিক্ষার প্রণয়নে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কার কোনো না কোনো একভাবে জাতীয়তার অটুট একটা কাঠামোকে তৈরিতে উদ্যোগী হলেও, অভিন্ন বিধি নিয়ে সংশয়ও রয়ে যে যাচ্ছিল না - এমনটা নয়। তারই প্রকাশ স্যাডলারের বক্তব্যে:  “And in India you stand on the verge of the most hazardous and inevitable of adventures—the planning of primary education for the unlettered millions of a hundred various races. I doubt whether the European model will fit Indian conditions. If you want social dynamite, modern elementary education of the customary kind will give it to you. It is the agency that will put the masses in motion. But to what end or issue no one can foretell” (স্যাডলার কমিশন, ১৯১৭-১৯১৯)। আমাদের আজকের নীতি নির্ধারকরা যে এটা বোঝেন না, এমনটা নয়। তাঁরাও বোঝেন - তবে সমস্যা হিসেবে নয়, কারবার করার সুযোগ হিসেবে বোঝেন। নানা জাতি, নানা ভাষার জটিলতাকে তাঁরা মূলধন বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে দেখেন। বিষয়ের থেকে আঙ্গিক সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে তাতে সংশয় কি? লক্ষ্য থেকে উপলক্ষ বড় হয়ে উঠবে - এটাই স্বাভাবিক। “ভাষা সঙ্গম”-এর নিদান মেনে শিক্ষার্থী ভাষা শিখুক আর না শিখুক শিক্ষকদের নিয়ম মেনে ছবি তোলা, আপলোড করার কাজ তো দেওয়া গেলো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যানন, সনি ইত্যাদির ক্যামেরা বিজনেসেও খানিকটা জোয়ার আসার সম্ভবনা। ভাষা আর শ্রেণীকক্ষের প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার বান না ডাকালেও বাজারে হয়তো বা গতি আনবে। রাষ্ট্রের ধমনীতে মুদ্রার আর মানুষের “circulation” খানিকটা হলেও বাড়ানো গেলো। এর ফলে জন্ম নেবে বহিরঙ্গে ভারতীয়, কিন্তু অন্তরঙ্গে বাজারি এক প্রজন্ম। আর, যাঁরা অতীত ভারতের সমুজ্জ্বল পুনরুত্থানের কথা ভেবে পুলকিত - তাঁদের কিন্তু “নাকের বদলে নরুন পেয়ে” এবারও সন্তুষ্ট হতে হবে। যেমনটা সন্তুষ্ট হ'তে হয়েছে জঙ্গলের বদলে ইকোপার্ক পেয়ে, চলমান জীবন্ত বহুভাষী ভারতের বদলে লিঙ্গুইস্টিক আর্কাইভ পেয়ে, গুরুকুলের বদলে বোর্ডিং স্কুল পেয়ে। আঙ্গিকে বৈদিক আর মর্মমূলে আগ্রাসী বাজারি মানসিকতার সেই ভারত কখনোই বলবে না, “সহনা ভবতু সহনৌভূনক্তু সহবীর্যং করবাবহৈ তেজস্বীনা বধীতমস্তু মা বিদ্বিষা বহৈঃ”। পড়শির দ্বেষ, ঈর্ষা, প্রতিযোগিতায় আপনার আমার ফুলে ফেঁপে বেড়ে ওঠার অকাট্য প্রমাণ। 

    স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার মান্যায়ন

    দাঙ্গা পীড়িত সময়ের মধ্যে দিয়ে যেহেতু ভারতবর্ষের ভারত হয়ে উঠতে চাওয়া, সেহেতু নতুন করে সমন্বয়ের কথা ভাবাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল সেদিন: “সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতির ভিতর দিয়ে মানুষের উন্নতির ইতিহাস হচ্ছে এই সামঞ্জস্যসাধনেরই ইতিহাস। যত-কিছু অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান শিক্ষা-দীক্ষা সাহিত্যশিল্প সমস্তই হচ্ছে মানুষের দ্বন্দ্ব সমন্বয় চেষ্টার বিচিত্র ফল” (দ্বিধা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।  এরই একটা স্বাভাবিক প্রতিফলন রাধাকৃষ্ণানের পৌরহিত্যে ১৯৪৮এর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিটির রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়েছিল।  শিক্ষার্থীর অন্তরের শক্তির বিকাশ আর গণতান্ত্রিক চিন্তার প্রসারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বন্ধেও সচেতন করে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা সেখানে বলা হয়েছিল। কৃষি, প্রযুক্তি, এবং বিজ্ঞানের চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা যেমন বলা হল, ঠিক তেমনই দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তার কথা আরও একবার তুলে ধরা হলো। মূল্যায়নের প্রশ্নেও ব্যতিক্রমি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। তাসত্ত্বেও, শিক্ষাকে ঘিরে মানুষের দুর্ভাবনা বেড়েছে বই কমেছে বলে তো খুব একটা মনে হয় না। সাধারণের আক্ষেপ, আমাদের শিক্ষা বিতৃষ্ণা, বিকল্প শিক্ষার অহরহ খোঁজ ইত্যাদি সকল কিছু তারই প্রমাণ। খোদ আজিম প্রেমজিও প্রশ্ন তুলেছেনঃ "Why is the ‘educated’ software professional unable to see that he should be bothered, directly and personally, by farmer suicides and melting Himalayan glaciers?" শিক্ষায় যে খামতি থাকলে কৃষকের আত্মহত্যা বা হিমালয়ের বরফ গ'লে যাওয়া উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে, সেই খামতি অতিক্রম করতে ঢের সময় বোধ হয় এখন বাকি।

    সেই রকম দুর্ভাবনার জায়গা থেকেই ১৯৮৬র  শিক্ষানীতিতে জাতীয় সংহতির এবং জাতীয় মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সওয়ালের ধরণটি লক্ষ্যনীয়ঃ "There is today, as never before, an upsurge in favour of national integration and adherence of certain national values and concerns: through introduction of a national core curriculum; an insistence on observance of secular, scientific and moral values; inculcation of an understanding of our composite culture, within rich diversity; creation of an awareness of the importance of protection of environment and observance of small family norm; and stress on commitment of the youth to manual work and social service" (National Policy on Education, 1986)। খেয়াল যেটা করা দরকার সেটা হল, প্রত্যেক নীতিতেই মোটের উপর প্রত্যেকেই যেটা বলছেন, সেটা হল তাদের সমসাময়িক ভারতীয় শিক্ষার সমস্যার স্বকীয়তার কথা। সমস্যাগুলো যেন বা ইতিহাস রহিত আলপটকা সব সমস্যা। তাই উন্নতির প্রশ্নে সংহতির প্রশ্নে নীতিগুলি যতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মনে হয়, তার থেকে অনেকাংশে কম তাদের ইতিহাস সচেতন অন্বীক্ষাটুকু। জাতীয় শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে যদি প্রশ্নই তুলতে হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠা উচিৎ, বারংবার শিক্ষার জাতীয়করণের এই প্রয়াস কেন? এবং, আর কতদিন? শিক্ষার প্রসঙ্গে জাতীয়তার প্রসঙ্গটুকুকে আমরা বুঝবোই বা কি ভাবে? কারণ এই বোঝার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের অভিন্ন পরীক্ষা, অভিন্ন পাঠক্রম, অভিন্ন শিক্ষাবর্ষ কিংবা অভিন্ন নীতিবোধের মতো বিভিন্ন বিষয়ের বিতর্কিত বীজ। 

    শুধুই কি রবীন্দ্রনাথ, জাতীয়করণের বিতর্কিত দিকটির কথা মাথায় রেখে খোদ “জাতির জনক” মহাত্মা গান্ধিকেও প্রায় সতর্ক বানী আওড়ানোর মতো বলতে শুনিঃ "Our nationalism can be no peril to other nations inasmuch as we will exploit none, just as we will allow none to exploit us" (ইয়ং ইন্ডিয়া, ১৬ই এপ্রিল, ১৯৩১)। কেন বললেন এই রকম কথা? তবে কি কোথাও জাতি আর জাতীয়তার প্রশ্নে কোন সংশয়ের কাঁটা থেকেই গিয়েছিলো?  খেয়াল রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথের মতো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মহাত্মা বলতে পারেন নি জাতি ও জাতীয়তাবাদের ক্ষতিকর দিকটুকুর কথা। স্বজাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বকীয়তা প্রমাণ করার অত্যুগ্র বাসনাকে কাঠগড়ায় তুলে রবীন্দ্রনাথ সেদিন লিখেছিলেনঃ “nationalism is a cruel epidemic of evil that is sweeping over the human world of the present age and eating into its moral vitality” (ন্যাশনালিজম)। অন্যদিকে তখনও 'জাতির জনক'-এর জবানিতে জাতির সেবার স্বপক্ষে এই বিবৃতিঃ "After nearly 50 years of public life, I am able to say today that my faith in the doctrine that the service of one's nation is not inconsistent with the service of the world has grown. It is a good doctrine. Its acceptance alone will ease the situation in the world and stop the mutual jealousies between nations inhabiting this glob of ours" (হরিজন, ১৭ই নভেম্বর, ১৯৩৩)। যদিও এই মহাত্মাই আবার রাষ্ট্রের প্রশ্নে আদৌ 'এক ও অভিন্ন ভারত'-এর ধারণায় আস্থাশীল ননঃ "India cannot cease to be one nation simply because people belonging to different religion live in it" (হিন্দ স্বরাজ)। পরস্পর বিরোধী গোলমেলে ভাবনাগুলো ভিড় করে আসে। একদিকে বলছেন পারস্পরিক দ্বেষরহিত এক মুক্ত স্বাধীন ভারতের কথা আবার একইসাথে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন বহুধর্মী সমাজের টানাপোড়েনের সঙ্কটেও। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর বাসিন্দা ছিলেন গোলওয়ালকর। জাতি আর জাতীয়তার প্রশ্নে প্রায় সংশয় রহিত ছিলেনঃ "We must be able to see through the game and revert to the truth of our nationalism as an ancient fact and the Hindus being the national society of Bharat, so clearly restated by our revered founder when he decided the word 'Rashtriya' for our organisation. We must once again stand up in our true and full stature and boldly assert that we shall elevate the Hindu National Life in Bharat to the peak of glory and honour which has been its birthright since hoary time" (বাঞ্চ অফ থটস)। গোলওয়ালকর রাষ্ট্রের সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদের কোন ভেদ দর্শানোর ঘোর বিরোধী। উপরন্তু, আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের প্রবল সমালোচকঃ “But unfortunately, our leaders are not prepared to revise and correct their territorial concept of nationalism which has led to the unprecedented tragedy of partition of our motherland, with all its continuing and growing dangers, and the uprooting of over two crores of our brethren resulting in their indescribable miseries of desolation, distress and dishonour”। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ হেন ভাবনার ছায়া জাতির নির্মাণে শিক্ষাক্ষেত্রে ‘national ethos’ এবং ‘mighty national heros’-এর প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতের ভাবাবেগ ও অনুষঙ্গের দ্বারা তাড়িত হবে। ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে কোন অঞ্চল বা প্রদেশ ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ঘোরতর বিরোধিতা আসলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বশাসনের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার প্রয়াস ছাড়া অন্য কিছুই নয়।  জাতি আর জাতীয়তার এই ব্যাপকতার থেকে সেদিন অরবিন্দও নিজের নিরপেক্ষতা সামলে রাখতে পারেন নি: “Nationalism has not been crushed. Nationalism is not going to be crushed. Nationalism survives in the strength of God and it is not possible to crush it, whatever weapons are brought against it. Nationalism is immortal; Nationalism cannot die, because it is no human thing. It is God who is working in Bengal. God cannot be killed, God cannot be sent to jail” (বন্দে মাতরম, পঞ্চম খণ্ড, বক্তৃতা সংগ্রহ, ১৯০৭-১৯০৮)। নেশনের প্রশ্নে, তুলনামূলকভাবে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভিন্ন মেরুর মানুষ। আর নেশনপন্থিদের মধ্যে গোলওয়ালকর যখন সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় আধিপত্যবাদের সমর্থক, গান্ধির ভাবনায় তখন ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এক মিশ্র জাতি সত্ত্বার অঞ্চলভিত্তিক সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের অনিবার্যতা। পাশ্চাত্যের নেশনের ধারণার বিরোধিতায় ভাবনার এই সকল সংস্করণই সেদিন অবশ্য একটি বিষয়ে অন্তত ঐক্যমত্যে পৌঁছেছিল। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধি, গোলওয়ালকার - প্রায় সকলেই পাশ্চাত্যের নেশনের প্রসঙ্গক্রমে হাজির করেছিলেন বেদ উপনিষদের সময়কালের (এবং, কোন কোন ক্ষেত্রে পরবর্তীকালেরও) ভারতীয় গ্রামজীবনের অনাড়ম্বর জীবনবোধকে। এঁদের প্রত্যেকের লেখার পরতে পরতে তাই আশ্রমিক ভাবনায় আজীবন জ্ঞান সাধনার তৃষ্ণা।     

    জাতি এবং জাতীয়তার মোড়কে সেদিন সেই যে নিজেদের মুড়ে ফেলেছিলাম আমরা - সেই মোড়কের নিশ্চয়তা নিয়ে আজও কোন সন্দেহের লেশমাত্র অবকাশ আমাদের মনে জন্মায় নি। আর তাই শিক্ষানীতির পক্ষের এবং বিপক্ষের - উভয়ই জাতি এবং জাতীয়তার গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ নির্মাণে আজও নিয়োজিত। ডান, বাম, উদারনৈতিক, মৌলবাদী - প্রায় প্রত্যেকেরই জাতি আর জাতীয়তার প্রশ্নে যে অবস্থান এক, তা কার্গিল বা গালওয়ান প্রশ্নে তাদের অবস্থান দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

    সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি এবং জাতীয়শ্লাঘা

    থমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে তাঁর ১৮৩৫-এর মিনিউটস অন ইন্ডিয়ান এডুকেশনে লিখলেন: “[...]a good European library was worth the whole native literature of India and Arabia. The intrinsic superiority of the Western literature is indeed fully admitted by those members of the committee who support the oriental plan of education”। পাশ্চাত্যের সেদিনের সেই জাত্যাভিমান ভারত ভূখণ্ডে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের বীজ যে বপন করে নি - সে কথা নিশ্চিত করে বলি কি করে! ২০২০-তে প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে হুবহু একই ধরণের জাতীয়শ্লাঘার কণ্ঠস্বরকে পাই, যখন শুনি - “Sanskrit, while also an important modern language mentioned in the Eighth Schedule of the Constitution of India, possesses a classical literature that is greater in volume than that of Latin and Greek put together, containing vast treasures of mathematics, philosophy, grammar, music, politics, medicine, architecture, metallurgy, drama, poetry, storytelling, and more (known as ‘Sanskrit Knowledge Systems’)”। জাতীয়শ্লাঘার বিষয়টি কোন একটা বা দুটো দশকে গড়ে ওঠে না। তার গড়ে ওঠার নেপথ্যে থাকে - এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।
    আসলে ব্রিটিশ উপনিবেশের সূচনা, ভারতবর্ষকে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি টেনে এনে দাঁড় করিয়েছিল। সংকটাপন্ন করে তুলেছিল সাবেকি জীবন যাপনের যাবতীয় ধরণগুলিকে। বহিরঙ্গের শাসন তন্ত্রের পরিবর্তনেই কেবল সীমাবদ্ধ ছিল না সেদিনের সেই অভিঘাত। উপমহাদেশীয় জীবনের অন্তরাত্মার ঝুঁটি ধরে টান দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল সে। শুরুর মধুচন্দ্রিমার ঘোর - যাকে কেউ কেউ সমন্বয়ের যুগ বলেন - কাটতে সময় লাগে নি খুব একটা। একটা রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথে পৌঁছোতে বাধ্য হয়েছিলো সেদিনের ভারতবর্ষ। যে বি-জাতীয়কে ‘European philanthropist’, ‘noble’, ‘gentlemen’, ‘worthy persons’ ইত্যাদি শব্দবন্ধে ভূয়সী প্রশংসায় রামমোহন নিজের ব্যাকরণ নিবেদন করলেন, সেই একদা সন্মানীয় বি-জাতীয়কেই রবীন্দ্রনাথ দু-চার কথা শুনিয়েই দিলেনঃ "You, the people of the west, who have manufactured this abnormality, can you imagine the desolating despair of this haunted world of suffering man possessed by the ghastly abstraction of the organising man? Can you put yourself into the position of the peoples, who seem to have been doomed to an eternal damnation of their own humanity, who not only must suffer continual curtailment of their manhood, but even raise their voices in paeans of praise for the benignity of a mechanical apparatus in its interminable parody of providence?” রামমোহনিয়ো দর্শন থেকে রাবীন্দ্রিক ভাবনায় উত্তরণের জন্যে আমাদের সময় লেগেছিল মাত্র বিরাশিটি বছর! - এর থেকেই বুঝে নেওয়া যায় পাশ্চাত্যের জাতি ও জাতীয়তার সংক্রমণ কী ত্বরিৎ গতিসম্পন্ন ছিল সেদিন! তার সেই গতি হ্রাস পাওয়া তো দুরের কথা, কালে কালে সে আরও সংহত করেছে নিজের শক্তি। জাতি আর জাতীয়তার বিকাশে সেদিন গাঁটছড়া বেঁধেছিল দেশপ্রেম। আর আজ কর্পোরেটের সাহচর্য্যে ও সখ্যতায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে সে উদ্যোগী। সে উদ্যোগ বুঝতে এক দীর্ঘ পর্যালোচনার অবকাশ রয়েই গেলো। আপাতত রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাবিধি সংক্রান্ত নিচের কথাটি দিয়ে এই আলোচনায় এখানেই ইতি টানছি: “‘জাতীয়’ নামের দ্বারা চিহ্নিত করিয়া আমরা কোনো একটা বিশেষ শিক্ষাবিধিকে উদ্ভাবিত করিয়া তুলিতে পারি না। যে শিক্ষা স্বজাতির নানা লোকের নানা চেষ্টার দ্বারা নানা ভাবে চালিত হইতেছে তাহাকেই জাতীয় বলিতে পারি। স্বজাতীয়ের শাসনেই হউক আর বিজাতীয়ের শাসনে হউক, যখন কোনো-একটা বিশেষ শিক্ষাবিধি সমস্ত দেশকে একটা-কোনো ধ্রুব আদর্শে বাঁধিয়া ফেলিতে চায় তখন তাহাকে জাতীয় বলিতে পারিব না — তাহা সাম্প্রদায়িক, অতএব জাতির পক্ষে তাহা সাংঘাতিক। ... যেমন করিয়া হউক, সকল দিকেই আমরা মানুষকে চাই; তাহার পরিবর্তে প্রণালীর বটিকা গিলাইয়া কোনো কবিরাজ আমাদিগকে রক্ষা করিতে পারিবেন না।”
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন