এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গম্বুজ বানানোর গল্প

    Srijani Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৪২ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব
    সান্তা মারিয়া ডেল ফিওরে তার বিশালাকৃতির গম্বুজ সহ স্বমহিমায়  আসীন

    ফ্রান্সের ক্যাথিড্রাল নটরডেম দি রিমস এ ফ্লাইং বাট্রেসের মাধ্যমে বাইরে থেকে সাপোর্ট 

    স্থান- ফ্লোরেন্স শহর
    কাল - ১৯ শে অগাস্ট ১৪১৮ খ্রীষ্টাব্দ।

    ইতালির ফ্লোরেন্স শহর ও তার চারপাশে যত স্থপতি ছিলেন তাঁরা নড়েচড়ে বসলেন একটি প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণে। ফ্লোরেন্সে সবচেয়ে বড় ক্যাথিড্রাল তৈরি হচ্ছে প্রায় এক শতাব্দী ধরে। নাম তার সান্টা মারিয়া ডেল ফিওরে। সেই ক্যাথিড্রালের প্রধান গম্বুজটি কিভাবে তৈরি হবে তার কূলকিনারা পাচ্ছেন না কেউ। তাই এই প্রতিযোগিতার আহবান। শুধুমাত্র গম্বুজ তৈরির নকশা দিলেই হবে না, তার সাথে বলতে হবে গম্বুজ তৈরির ভারী বেলেপাথর ও মার্বেল কিভাবে অত উঁচুতে তোলা যায়। এবং সেই সাথে বলতে হবে মিস্ত্রীদের কাজের জন্য সাময়িক দাঁড়ানোর জায়গা এবং কাঠের টেম্পোরারি ভার নেওয়ার স্ট্রাকচারই বা কিভাবে তৈরি করা যায়। পুরস্কারের মূল্য কম নয়। দুই শত ফ্লোরিন্স। যা কিনা একজন স্থপতির দুই বছরের রোজগারের সমান।
    সান্টা মারিয়া ডেল ফিওরে নির্মাণের পিছনে রয়েছেন ফ্লোরেন্সের উল মার্চেন্টরা। ১২০০ শতক থেকে ফ্লোরেন্স শহরে উলের ব্যবসার রমরমা শহরটিকে প্রভূত বিত্তশালী করে তোলে। যার ফল স্বরূপ শহর জুড়ে নানান অট্টালিকা তৈরী হতে থাকে। সোনালী স্যান্ডস্টোনের পাথরখাদান তৈরি হয়েছে শহরের মধ্যে। পাশ দিয়ে বয়ে চলা আর্নো নদীর সূক্ষ্ম বালি, মর্টার তৈরিতে খুব কাজে লাগে।

    এমতাবস্থায় শহরের বিত্তশালীদের মনে হল পুরানো ক্যাথিড্রাল সান্টা রিপার্টার জায়গায় একটা নতুন বিশাল বড় ক্যাথিড্রাল বানালে কেমন হয়? যা ভাবা তাই কাজ। সান্টা মারিয়া ডেল ফিওরে হবে খ্রীস্টসমাজের সবচেয়ে বড় ক্যাথিড্রাল। পাশের বিশাল জংগল কেটে প্রয়োজনীয় কাঠ এবং আর্নো নদীতে নৌকা করে বিশাল বিশাল বড় বড় মার্বেল আনা হল দূরদূরান্ত থেকে।

    ক্যাথিড্রালের দক্ষিণে একটা ৩০ ফুট লম্বা মডেল বানানো হল। ক্যাথিড্রাল বানানো শেষ হলে ঠিক দেখতে কেমন হবে সেটা বোঝানোর জন্য। কাজ শুরু হয়ে গেল পুরোদমে। ১২৯৬ খ্রীস্টাব্দে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রথম পঞ্চাশ বছর নিরুপদ্রবে কাজ চলেছিল। কিন্তু স্কেল মডেলে একটি অতিকায় গম্বুজ ছিল যেটি সত্যিকারে কিভাবে বানানো যাবে তার আইডিয়া প্রথম স্থপতিদের ছিল না। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন ভবিষ্যতে প্রযুক্তি এত উন্নত হবে যে এই গম্বুজটি বানানো সম্ভব হবে। তারপর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল কিন্তু গম্বুজটি যে কিভাবে বানানো হবে তার কোন কূলকিনারা কেউ খুঁজে পান নি।

    ইতিমধ্যে ফ্লোরেন্সে আসা জেনোয়া দেশের বাণিজ্যতরী এশিয়া থেকে বহন করে আনল ইঁদুর দ্বারা বাহিত বুবোনিক প্লেগ বা ব্ল্যাক ডেথের জীবাণু। সেটা ১৩৪৭ সাল। বুবোনিক প্লেগের দাপটে ফ্লোরেন্সের জনসংখ্যা অনেকটাই কমে গেল। দীর্ঘ এক দশক ক্যাথিড্রাল নির্মাণের মত অর্থ বা লোকবল কোনটাই তখন অবশিষ্ট ছিল না। পরবর্তী দশ বছরে শহরটি অনেকটা আগের জায়গায় ফিরে এলে আবার ক্যাথিড্রাল নির্মাণের কাজ শুরু হল। গম্বুজের নকশা তৈরির দায়িত্ব পড়ল প্রধাণ স্থপতি জিওভান্নি ডি লাপো ঘিনির উপর। সেই সাথে উল মার্চেন্টরা দ্বিতীয় মতামত নেওয়ার জন্য আরেকজন স্থপতি নেরি ডি ফিওভান্তিকেও বললেন একটা নকশা বানাতে। দুজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া স্বাধীন ভাবে নকশা বানানোর কাজে যোগ দিলেন।

    জিওভান্নি তাঁর আঁকা নকশায় টিপিক্যাল গথিক স্টাইলে গম্বুজটি তৈরির কথা ভাবলেন। সরু দেওয়াল, লম্বা লম্বা জানলা আর গম্বুজকে সাপোর্ট দেওয়া হবে বাইরে থেকে বাট্রেসের সাহায্যে। নিচে বোঝার সুবিধার জন্য একটি গথিক চার্চের গম্বুজ ও তার চারপাশে বাট্রেসের ছবি দিলাম।

    অন্যদিকে নেরি দি ফিওভান্তি কিন্তু বাইরে থেকে বাট্রেস সাপোর্ট দেওয়ার বিরোধিতা করলেন। কারণ ফ্লোরেন্সের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য দেশ যেমন জার্মানি ও ফ্রান্সে এর বহুল ব্যবহার। তিনি যে আইডিয়াটা দিলেন সেটা খুব অদ্ভুত। তিনি বললেন গম্বুজের চারপাশে চেইনের মত করে কাঠ বা পাথরের সাপোর্ট দেওয়া হবে। গম্বুজের সমস্ত পরিধি জুড়ে এই সাপোর্ট থাকবে। কিন্ত সেগুলোকে এমনভাবে সাধারণ দর্শকের দৃষ্টির অগোচরে রাখা হবে যে দেখে মনে হবে গম্বুজের কোন সাপোর্টই নেই। 

    তীব্র বাদানুবাদ ও বিতর্কের পর নেরির মডেলটাই গ্রহণ করা হল যদিও একটা তীব্র ভয় সকলের মনের মধ্যে ছিল যে গম্বুজটি ভেঙে পড়ে যাবে না তো? জিওভান্নিও এই ভয় ও সংশয়ের কথা বলতে তখন ঠিক হল যে নেরির মডেলের সাপোর্টগুলো আরো চওড়া করে দেওয়া হবে যাতে ওরা ভারটা নিতে পারে। 

    ( চলবে )

    তথ্যসূত্র :
    1. Brunelleshi's Dome by Ross King
    2. Wikipedia
    3. https://science.howstuffworks.com/engineering/architecture/brunelleschis-dome.htm
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম পর্ব
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন