এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সফল ব্রিগেডের উৎসাহ সিপিএম ধরে রাখতে পারবে কি?

    kalyan sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৭৪ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • সিপিএমের ব্রিগেড অভিযান সফল হলেও সেই ভিড় কিন্তু অতীতে মমতার নেতৃত্বাধীন যুব কংগ্রেসের ডাকে মৃত্যুঘণ্টা বাজানোর ব্রিগেড সমাবেশকে ছাপাতে পারেনি কোনভাবেই। সেদিনের ভিড়ে স্ট্যাম্পপ্যাড হবার জোগাড় হয়েছিল এবং মঞ্চ থেকে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর বারংবার ভয়ার্থ সাবধান বাণী ঘোষণার ফলে সেই বিপদ শেষ পর্যন্ত কোনক্রমে এড়ানো যায়। কিন্তু এতদসত্বেও সিপিএমকে সরাতে মমতাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘকালের ব্যবধানে ২০০৬-০৭এ সংগঠিত সিঙ্গুর - নন্দীগ্রাম পর্বে শাসকদলের মহাভুল ও সীমাহীন অত্যাচারজনিত ফলশ্রুতির জন্য ২০১১ পর্যন্ত। অর্থাৎ সফল ব্রিগেডের ভিড়ই যথেষ্ট নয় ভোটের লড়াইয়ে জিততে হলে প্রয়োজন আরও অনেকগুলি বিষয়ে সফলতা। যথা, শাসকের মহাভুল সিদ্ধান্ত ও সেই সুযোগ গ্রহণ করে সফল আন্দোলন গড়ে তুলে মানুষের মনে ছাপ ফেলতে সমর্থ হওয়া। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বোধকরি শাসকদলের ভুল সিদ্ধান্ত ও তদজনিত আন্দোলনকে সঠিক সময়ে সঠিক রূপে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়া।

    সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী দলগুলির সাফল্য বিবেচিত হয় অনেকখানিই নির্বাচনী ফলাফলের উপর। সিপিএম ইন্ডিয়া জোটে আছে স্রেফ কংগ্রেসকে খুশি রেখে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু গুরুত্বকে ধরে রাখতে এবং তামিলনাড়ু, বিহার বা অন্যত্র যদি ২/১টি আসন জোগাড় করা যায়, সেই আশায়। কারণ যে রাজ্যে তারা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী, সেখানে তারা জোট শরিকদের বিরুদ্ধেই লড়ছে। কেরলে লড়ছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আর বাংলায় জোটের স্থানীয় বড় শরিক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ত্রিপুরায় তো বিজেপির কাছে সম্পূর্ন আত্মসমর্পন করে বসে আছে বহু আগেই। ওখানে লড়াই স্রেফ নাম কা ওয়াস্তে। ফলে ইন্ডিয়া জোটের সভায় সিপিএম সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মঞ্চ আলো করে বসে থাকা ও অবিরাম রাহুল গান্ধীর কানের কাছে মুখ নিয়ে পরামর্শ দান কতখানি ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে শুভ না তৃণমূলের পক্ষে অশুভ, তা বোঝা মুশকিল। বাংলায় সিপিএম আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে অধীর চৌধুরীর সহায়তায় যদি কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট গড়া ব্যর্থ হয়, তবেই সিপিএমের কৌশল আপাতত সফল হয়। তবে শেষ পর্যন্ত দুদলের জোট হলে কিন্তু সিপিএম আবার শূন্য এবং সেটা হবে শূন্যের হ্যাটট্রিক।

    সিপিএম নেতাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আগামী দেশব্যাপী নির্বাচনে যদি মোদী পরাজিত হয় এবং তৃণমূল দল চাপমুক্ত হয় তখন দলকে এরকমই চাঙ্গা রাখা। কারণ মোদীমুক্ত দেশের পরিস্থিতি যে হয়ে উঠবে অনেক বেশি তৃণমূলের পক্ষে অনুকূল, তা সহজেই অনুমেয়। ২০০৯এর আগে পর্যন্ত সিঙ্গুর - নন্দীগ্রাম পর্বে তৃণমূলকে যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে লড়াই আন্দোলন করতে হয়েছে, তেমনটা করার মানসিকতা দেখাতে পারবে তো সিপিএমের ছাত্র যুবরা? মনে রাখতে হবে, ২০২১এর ভোটে হেরে যাবার পর যেভাবে মোদী সরকার কেন্দ্রের অপার ক্ষমতার ফলে প্রশাসনের সম্ভাব্য সমস্ত রকম দাঁত নখ বার করে রাজ্যের সরকার ও শাসকদলের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে, তা প্রায় নজিরবিহীন। যার ফলে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দল যথেষ্ট বিপদগ্রস্থ ও ব্যাকফুটে। সুতরাং এহেন পরিস্থিতিতে বর্তমানে যা বেশ সহজ, আগামীদিনে পরিস্থিতি বদলালে সবটা এমন সহজ নাও থাকতে পারে। মীনাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী মাঠ দখলের লড়াইয়ের খেলা তখন অনেক কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মাঠ দখলের সেই লড়াইই হবে আসল পরীক্ষা।

    সিপিএম নেতৃত্ব জানে, রাজ্যের মানুষের মন থেকে অতীত সিপিএম জমানার বারংবার কৃত নানাবিধ গনহত্যা, খুন, জখম, অগ্নিসংযোগ, অত্যাচার ও ভয়ভীতির রাজনীতি তথা এমন দুষ্কর্মের রেশ হয়তো সম্পূর্ন মুছে যায়নি, কিন্তু নব প্রজন্ম এবিষয়ে কিছু জানেনা। ফলে দলীয় ছাত্র যুবদেরকে সামনে এগিয়ে দিয়ে পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু তাঁরা হয়তো ভুলে গেছেন যে, স্বামী বিবেকানন্দের একটি বাণী আছে - চালাকির দ্বারা কোন মহৎ কার্য হয় না। তবে সিপিএম নেতারা হচ্ছেন বিপ্লব ধর্মে দীক্ষিত, ফলে এসব কথায় গুরুত্ব না দিলেও চলে। সে কারণেই হয়তো অতীত দুষ্কর্মের জন্য কোনরকম ভুল স্বীকার বা ক্ষমা প্রার্থনা করার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি। মানুষের স্মৃতি দুর্বল ভেবেই বিষয়টি সম্পূর্ন অস্বীকার করে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছে। কিন্তু আজকের এমন আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পুরনো দিনের সংবাদপত্রের ফটোকপি বা টিভির ক্লিপিংস দেখানো কি অসম্ভব? প্রয়োজনে সবই সম্ভব এবং মাথায় রাখতে হবে অতীতের অন্ধকারকে এত সহজে তুড়ি মেরে নস্যাৎ করা সম্ভব হবেনা। সবচেয়ে বড়কথা, শত্রু পক্ষকে নির্বোধ বা দুর্বল ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

    ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে জরুরি অবস্থার অন্তে ১৯৭৭সালে আচমকাই এক অপ্রত্যাশিত সুযোগ প্রাপ্তির ফলে সিপিএম রাজ্যের ক্ষমতা লাভ করে এবং সরকারের নেতৃত্বে জ্যোতি বসুর যথেষ্ট দক্ষতার ফলে সিপিএমের অভাবনীয় শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু এর দেড় দুদশক পর থেকেই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তের অঘটন ঘটতে থাকে ও দলকে তার মাসুল দিতে হয়। সংগঠনে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে গোষ্টিতন্ত্রের শিকার হয় দল। যে সাংগঠনিক ধাঁচায় দল পরিচালিত হয়, তার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বহু আগেই দাবি করে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন প্রয়াত সইফুদ্দিন চৌধুরী। সুতরাং আজও সঠিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গোলক ধাঁধায় ঘুরছে সিপিএম নেতৃত্ব। দেশের সামনে সর্ববৃহৎ বিপদ ও প্রধান শত্রু নির্ধারণেও এরা ব্যর্থ। এর মাসুল না দিয়েই কি এরা পার পেয়ে যাবে, মনে হয়না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন