গল্প নাম্বার :- ১৪
পরের বউ অতি সুন্দর।
(সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জিত।)
গল্পকার :- শংকর হালদার শৈলবালা।
◆ রচনার শ্রেণী :- সামাজিক শিক্ষামূলক অনুগল্প। পরকিয়া প্রেমের কাহিনী।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
◆ পুরুষের মনে নিজের বৌয়ের থেকে অন্যের বউকে দেখতে সুন্দর লাগে। পল্লী বাংলার এক যুবক অখিল ঘোষ দুধের ব্যবসা করে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়িতে বাড়িতে গরুর দুধ দেওয়া ও নেওয়ার কাজ করে আবার সময় মতো বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা। তার মধ্যে সুযোগ বুঝে কুড়ি লিটার দুধে পাঁচ লিটার জল মেশানো ঘোষেদের বংশপরম্পরায় ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
◆ অখিল এক পল্লী গাঁয়ের অপরূপ সুন্দরী যুবতী শিখা বৌদি কে নিয়মিত এক লিটার করে দুধ দেয়। দুধ দিতে দিতে এক সময় বহু টাকা বাকি পড়ে যায়।
◆ শিখা বৌদির বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে অখিল চিৎকার করে বলে :- বৌদি; দুধ নিয়ে যান ।
◆ শিখা বৌদি দ্রুত দুধ নেওয়ার বালতি নিয়ে অখিল ঘোষের সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলে :- ঘোষ, আজ এক লিটার বেশি দেবে কারণ বাপের বাড়ির লোকজন আসবে।
◆ অখিল দুধ মেপে দিতে দিতে আড্ডা করে বলে :- বৌদি; তোমার রূপ যৌবনের মাধুর্য দাদা বুঝতে পারল না ,সারা বছর বিদেশে পড়ে থাকে।
◆ শিখা বৌদি হাসতে হাসতে বলে :- পরের বৌকে শুধু দেখে যাও কিন্তু নিজের বৌয়ের মতো করে কোন দিন কাছে পাবে না, আর ভেবে ভেবে শরীর ও মনকে খারাপ করোনা।
◆ অখিল বলে :- বৌদি দুধের দাম কিন্তু অনেক টাকা বাকি হয়ে গিয়েছে। দেবো, দেবো করে এক বছর ধরে ঘুরাচ্ছে তা দেবে কবে ? আমার তো চিন্তায় চিন্তায় সব শুকিয়ে যাচ্ছে।
◆ শিখা বৌদি, দুষ্টুমি করার মাধ্যমে হাসি হাসি মুখে বলে :- বর্তমানে তো মাসে মাসে পেয়ে যাচ্ছে আর কোন কারণবশতঃ হয়তো হাজার দুয়েক টাকা পাবে। কিন্তু চিন্তা করেছো কেন ?
◆ অখিল বলে :- এই বাজারে ২০০০ টাকা তোমার কাছে কম মনে হচ্ছে। এই টাকায় কোন বাচ্চা দিচ্ছে না, তাহলে ফেলে রেখে আমার লাভ কি?
◆ শিখা বৌদি বলে :- এমন ভাব করছো, যেন টাকা না দিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে চলে যাবে, এবার তোমার দাদা একাউন্টে টাকা পাঠালে কিন্তু আগে তোমাকে টাকা দিয়ে দেবো।
◆ শিখা বৌদি দুধ ঘরে রেখে এসে বলে :- এই ঘোষ, রৌদ্রের মধ্যে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছো, কিছু সময় বসো- চা জল পান করে যাবে।
◆ অখিল ঘোষ বলে :- না, থাক! যেতে হবে বহুদুরে ঐ উত্তর পাড়ায় ।
◆ শিখা বৌদি ঘোষের হাত চেপে ধরে আদর করে বলে :- তোমার ঘরের বৌ, আমার মতো আদর করে এই কাঠফাটা রোদ্দুরে লেবু জলের শরবত ও চা বিস্কুট খেতে দেবে না। সাইকেল রেখে চলে ঘরে, আমার হাতের চা পান করলে কিন্তু তোমার শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
◆ শিখা বৌদির ব্যবহারিক ছলাকলায় মুগ্ধ হয়ে ঘোষ অখিল বাকি টাকার জন্য চাপাচাপি করে না। দুধের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে ৫,৪৫৬ টাকা বাকি হয়ে যায়।
◆ অখিল ঘোষ ভাবে মনে মনে :- বৌদির রূপ যৌবন ও সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। মিলনের ইচ্ছা জাগে মনে কিন্তু সম্ভব হবে কি করে ?
◆ একদিন দুপুরে ঘোষ দুধ মেপে দিতে গিয়ে, শিখা বৌদির সদ্য স্নানের মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে দুধ দিতে গিয়ে মাটিতে পড়তে থাকে।
◆ শিখা বৌদি বলে :- এই ঘোষ, তোমার কি হয়েছে! আমার অঙ্গের দিকে তাকিয়ে দুধ ফেলে চলছে।
◆ অখিল ঘোষ বলে :- বৌদি; আমার বুকের জ্বালা পোড়া বুঝতে পারে না!
◆ শিখা বৌদি বলে :- অপেক্ষা করে জল নিয়ে আসছি, পড়ে যাওয়া দুধে জল দিতে হবে। না হলে নাকি সংসারে অমঙ্গল হয়।
◆ অখিল ঘোষ বলে :- থাক, আমার মন প্রাণ উত্তপ্ত করে আর মাটিতে জল ঢালতে হবে না।
◆ শিখা বৌদি ভাবে মনে :- স্বামী ঘরে থাকে না কিন্তু দেহের সুখ পাওয়ার জন্য একমাত্র রাস্তা ঐ যুবক ঘোষ । হয়তো কিছু সময়ের জন্য পরকীয়া ভাবে যদি স্বামী সুখ লাভ করা যায়।
◆ অখিল ঘোষ ভাবে মনে সবই কি বৌদির ছোলা কলা? না ভালোবাসার কোন বহিঃপ্রকাশ।
◆ শিখা বৌদি বলে :- বুকে বুক রেখে ভরিয়ে দেবে ক্ষুধার্ত যৌবনের আগুন নিভিয়ে। তারপর মনে ভাবে, ঘোষ যে ভাবে আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, মনে হচ্ছে কিন্তু আমার প্রতি আসক্ত হয়েছে। প্রস্তাব দিলে হয়তো কাজ হতে পারে, দুধের টাকা আর শোধ করতে হবে না।
◆ শিখা বৌদির বাড়িতে ঘোষ, প্রতিদিনের অভ্যাসের মতো দুধ দিতে আসে কিন্তু কেউ কারোর কাছে প্রস্তাব রাখতে পারে না ।
◆ ঘোষ দুধ মেপে দেওয়ার পর বলে :- বৌদি, দুধের দাম অনেক টাকা বাকি হয়েছে কিন্তু দেবো দেবো করে দিচ্ছে না।
◆ শিখা বৌদি, ঘোষের অঙ্গে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে :- টাকা, আমি দিতে পারবে না কিন্তু টাকা পরিশোধের রাস্তা আছে।
◆ তোমার দেহ স্পর্শ করে বুকে মাথা রেখে মিলনের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে চাই,যদি রাজি থাকো তবে এসে রাতে পিছনের দরজা দিয়ে। আমি তোমার ভাব দেখে বুঝতে পেরেছি, তুমি আমার ভীষণ ভালোবাসো।
◆ অখিল আনন্দিত মনে বলে:- তাহলে গাঁয়ে গাঁয়ে টাকা শোধ।
◆ শিখা বৌদি বলে :- তাই হোক, এসে রাতে তোমার জন্যই থাকবো জেগে।
◆ অখিল ঘোষ ভাবে মনে :- আমার বৌ কালো, রোগা পটকা বিশ্রী তার চেহারা। সারাদিন কাজকর্ম করার পরে রাতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে আমার সমস্যাগুলো সমাধান হয় না। বৌদির দেহ কত না সুন্দর, মিলনে দেবে হয়তো নতুন নতুন সুখের সন্ধান ।
◆ অখিল ঘোষ রাতের অন্ধকারে মিলনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শিখা বৌদির ঘরে মনের আনন্দে আসে।
◆ অখিল মিলনের শেষে ভাবে মনে মনে :- হে ঈশ্বর, এ আমি কি ভুল করলাম! কালা-ধোলা (অর্থাৎ কালো ও সুন্দরী নারীর পার্থক্য নির্ণয়) সব এক জিনিষ, এই করোনা ভাইরাসের দুর্যোগপূর্ণ লকডাউনের বাজারে আমার কেবল দুধের দাম কয়েক হাজার টাকা নষ্ট করলাম।
◆ অন্যের ধন-সম্পত্তি, ঐশ্বর্য সুন্দর রূপ যৌবন দেখে, নিজের মনুষ্যত্ব কে বিসর্জন দেওয়া ঠিক নয়।
◆ দৈহিক সুখ কিন্তু পরম সুখ নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
◆ রচনাকাল :- ২০ জুন ২০০০ খ্রিস্টাব্দে। দত্তপুলিয়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ।
◆ সংশোধনের তারিখ :- ১৪ আগস্ট ২০২৩ সালে। রানাঘাট, নদীয়া।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।