গল্প নম্বর :- ১১
বৌমার অত্যাচার শাশুড়ির।
(সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জিত।)
গল্পকার :- শংকর হালদার শৈলবালা।
(কবিতা দিবস ও কবির ভাবনা ২২ যৌথ কবিতা সংকলনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।)
◆ রচনার শ্রেণী :- সামাজিক অবক্ষয়ের শিক্ষামূলক বাস্তব অনুগল্প।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
◆ সুভদ্রা হালদার উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাদুড়িয়া থানার এলাকার সুভাষ পল্লী গ্রামে বসবাস করেন। দেড় বছর আগে স্বামী মারা গেছে। তেষট্টি বছরের বৃদ্ধা সুভদ্রা হালদার এখন বড় একা। বড় ছেলে-বউমা খেতে দেয়না। ছোট ছেলে দুমুঠো খাবার দিলেও কিন্তু ছোট বৌমার অত্যাচার লাগাম ছাড়া।
◆ একদিন তিন ছেলে মিলিত হয়ে মায়ের কাছে এসে বলে :- "মা, তোমার বয়স হয়েছে। তোমার নামের জমি বাড়ি আমাদের নামে লিখে দাও।
◆ মা সুভদ্রা বলেন :- জমি আছে তার জন্য ঘরে থাকতে পারি আর অবহেলায় হলেও এক মুঠো খেতে দিচ্ছে। তিন ছেলে ও তিন বৌমার ব্যবহার চোখে দেখছি, তাতে জমি ও বাড়ি লিখে দিলে রাস্তায় ভিখারীর মতন ঘুরে বেড়াতে হবে।
◆ বৌমারা উত্তেজিত হয়ে বলে :- এবার তোমার মজা দেখাচ্ছি। অত্যাচার করে তাড়াতাড়ি মরে ফেলবে।
◆ মা সুভদ্রা ঘরের বারান্দায় বসে ভাবে মনে:- এই বৃদ্ধার সাথে ছেলে ও বৌমা সহ কেউ ভাল করে কথা বলে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এক কাপ গরম চা, সেটাও আজকাল জোটে না।
◆ ছেলে-বউমা ধোঁয়া ওঠা কাপ হাতে নিয়ে গল্প করছে। এতো সুখের কথা নয় কিন্তু কাদের জন্য রক্ত জল করে তিলে তিলে এই সংসার গড়ে তোলা হয়েছে। বৃদ্ধা বয়সে ছেলে বৌমার হাতে একটু সেবা সুস্থতা পাওয়ার আশা কে না করে?
◆ আমার স্বামী মরে গিয়ে কিন্তু এই ছেলে বৌমার নরক যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমার স্বামীর জমি,বাড়ি ও ব্যবসা আর আমাকে করে চলেছে অবহেলা।
◆ রাতের শুকনো রুটি অনেক সময় ধরে হজম করতে হয়, তবুও শেষ বয়সে খিদের বড় জ্বালাতন করে। বেলা গড়িয়ে গেলেও কেউ ফিরে তাকায়না, অথচ সব কিছু ঘরে হচ্ছে।
◆ রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা ডালে সম্বার দেওয়ার গন্ধে খিদে চাগিয়ে ওঠে। চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করে, খিদে পেয়েছে কিন্তু লজ্জা লাগে। বাইরের কেউ যদি জানতে পারে, ভেবে গলার স্বর নেমে যায় কিন্তু তবুও বলতে হবে।
◆ শাশুড়ি সুভদ্রা আস্তে আস্তে বলে :- বড় বৌমা ভীষণ ভাবে খিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দাও না।
◆ বড় বৌমা রান্না করতে করতে শাশুড়ির কথা শুনা মাত্র তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে শাশুড়ির মুখে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে বলে :- সব সময় শুধু খাই খাই দেখতে পারছেন না, আপনাদের পিন্ডি রান্না করছি।
◆ সুভদ্রা হালদার ছেলে বৌমার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কিন্তু দুর্বল শরীর নিয়ে সুভাষ পল্লি গ্রাম থেকে দশ কিলোমিটার পথ হেটে বাদুড়িয়া থানায় অভিযোগ জানায়।
◆ পুলিশ অভিযোগ পেয়ে দুই বৌমা কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। আর বৃদ্ধা সুভদ্রা হালদার কে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার ব্যবস্থা করে।
◆ গ্রামে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় মেম্বার ও রাজনৈতিক লোকজন থাকে কিন্তু চোখের সামনে অত্যাচার দেখে চোখ বন্ধ থাকা সমাজের জন্য লজ্জাজনক সমস্যা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
◆ রচনাকাল :- ২৬/০২/২০২২ সালে। মেদিনীপুর।
◆ সংশোধনের তারিখ :- ১১ আগস্ট ২০২৩ সালে। দত্তপুলিয়া হাসপাতাল মোড় অলোকের কম্পিউটার দোকানে থাকাকালীন সময়ে, নদীয়া।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।