গল্প নম্বর :- ৮
ফোনের নেশায় সন্তান বিক্রি।
লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
◆ রচনার শ্রেণী :- উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বিপর্যয়ের শিক্ষামূলক বাস্তব অনুগল্প।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
◆ ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পানিহাটি গঙ্গানগর এলাকার সাথী ঘোষ ও জয়দেব ঘোষ বাসিন্দা। আইফোন-১৪ কিনে রিল শ্যুট করবেন এই উদ্দেশ্যেই আট মাসের পুত্রসন্তান কে বিক্রি করে দেওয়া দেয়।
◆ আট মাসের পুত্রসন্তান ছাড়াও দম্পতির এক সাত বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
◆ সাথী ঘোষ তার স্বামীকে বলে :- আমার একটা আইফোন দরকার।
◆ স্বামী জয়দেব ঘোষ মোবাইলে চার্জ করে বলে :- আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স-এর ২৫৬ জিবি ভেরিয়েন্ট দাম ১,৪৯,৯০০ টাকা। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবো?
◆ সাথী ঘোষ বলে :- আইফোন হলে ইনস্টাগ্রামে রিল ভিডিও বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করা যাবে আবার লোকের কাছে সম্মান পাওয়া যাবে। আমি তো অন্য মেয়েদের থেকে কোন অংশে কম নয়। ভিডিও প্রকাশ করলে লাখ লাখ কমেন্ট, শেয়ার ও মন্তব্য আসতে থাকবে।
◆ স্বামী জয়দেব ঘোষ বলে :- আমারও তো অভিনয় করার ইচ্ছা আছে কিন্তু টাকা কোথায় পাবো।
◆ সাথী ঘোষ কিছু সময় চুপচাপ থেকে চিন্তা ভাবনা করার পর বলে :- আমাদের আট মাসের ছোট ছেলেকে কোন নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে দিলে কয়েক লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারব।
◆ স্বামী জয়দেব ঘোষ উত্তেজিত হয়ে বলে :- তা কখনোই সম্ভব না, আমি সন্তানকে বিক্রি করতে পারবো না।
◆ সাথী ঘোষ বলে :- উত্তেজিত হচ্ছে কেন! সন্তান উৎপাদন করার মেশিন যখন আমাদের কাছে আছে, তখন আবার সন্তান জন্ম দিয়ে দেবো কিন্তু বর্তমান সন্তান বিক্রি করে সংসারের দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত হয়ে অর্থনীতির স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। আর ছেলেকে বড় করে লাভ কি? বৃদ্ধকালে আমাদের দেখবেই না।
◆ স্বামী জয়দেব ঘোষ বলে :- সন্তান বিক্রি করা তো আইনত অপরাধের কাজ। দেখুক আর না দেখুক কিন্তু আমাদের কর্তব্য করে যেতে হবে।
◆ সাথী ঘোষ উত্তেজিত হয়ে বলে :- রাখো; তোমার আইন-কানুন আর সমাজের ব্যবস্থা। টাকা থাকলে কিন্তু সব আইন কানুন পকেটে ভরে রাখা যায়। দেশে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হচ্ছে তার কয়জনের সাজা হয়েছে।
◆ স্বামী জয়দেব ঘোষ বলে :- এই কাজে তোমাকে সাহায্য করতে পারব না।
◆ সাথী ঘোষ বলে :- তোমাকে কিছুই করতে হবে না, যা করার আমিই করব। আমি সন্তান পেটে ধরেছি আমার দুঃখ হচ্ছে না কিন্তু তোমার মনে হচ্ছে দুঃখে একদম হার্টফেল করে ফেলবে।
◆ ঘোষ দম্পতির মধ্যে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়। তবুও সাথী ঘোষ তার ছেলেকে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে শুরু করে। নিঃসন্তান দম্পতি প্রিয়াংকা ঘোষ নামের এক গৃহবধূর সাথে কথাবার্তা ও দর কষাকষি চলতে থাকে।
◆ পাড়া-প্রতিবেশীগণ হঠাৎ করে সাথী ও তার স্বামীর পোশাক আশাক কথাবার্তা ব্যবহার চালচলন পরিবর্তন সহ হাতে আইফোন দেখতে পায়। বিভিন্ন সময় প্রাইভেট গাড়ি করে বিভিন্ন জায়গায় আসা-যাওয়া করতে থাকে।
◆ প্রতিবেশীদের সন্দেহ হওয়ার কারণে তাদের বাড়িতে খোঁজ করে ৮ মাসের সন্তানের সন্ধান পায় না।
◆ প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসার উত্তরে সাত বছরের মেয়ে টুম্পা বলে :- ভাইকে কয়েক সপ্তাহ ধরে মা-বাবার সাথে দেখতে পাচ্ছি না। জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর দেয় না বরং বাবা-মা, আমার উপর বকাবকি করে ভয় দেখাতে থাকে। কাকু; আমরা হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে গিয়েছি। ভালো ভালো খাবার আর পোশাক সহ আরো কত কিছু আমার জন্য নিয়ে এসেছে।
◆ কয়েকজন প্রতিবেশী থানায় গিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ঘোষ দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাৎক্ষণিক তার দলবল নিয়ে সাথী ও জয়দেব কে খোঁজ করতে বেরিয়ে পড়ে।
◆ তারপর সাথী ও জয়দেবকে তুলে থানায় নিয়ে এসে জেরা করতে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘোষ দম্পতি তাদের সন্তান বিক্রির কথা স্বীকার করে।
◆ জয়দেব ঘোষ বলে :- সন্তান বিক্রির ব্যাপারে আমি সবসময় প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু স্ত্রী সাথীর কূটবুদ্ধির কাছে আমি হার মানতে বাধ্য হয়েছি। আমার অবর্তমানে পিয়াংকা ঘোষের সাথে গোপনে লেনদেন হয়েছে।
◆ সাথী ঘোষ উত্তেজিত হয়ে বলে :- ধরা পড়ে যত দোষ আমার কিন্তু টাকা নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করার সময় তো একবারও প্রতিবাদ করলে না।
◆ পুলিশ তাৎক্ষণিক ক্রেতা প্রিয়াঙ্কা ঘোষ ও তার স্বামী কে গ্রেফতার সহ শিশুকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়ে দেয় আর ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় দম্পতির নামে মামলা দায়ের করে কোর্টে চালান করে দেয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অবলম্বনে ও তথ্যসূত্র :- সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রি করে আইফোন কিনলেন দম্পতি! প্রবন্ধ। জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো। 28 জুলাই, 2023 সাল।
◆ রচনাকাল :- ৩ আগস্ট ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে। শ্রী শ্রী মা সেবাশ্রম। দোলন ঘাটা, খাটুরা, মাজদিয়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ।
◆ সংশোধনের তারিখ :- ৮ আগস্ট ২০২৩ সালে। দত্তপুলিয়া বাড়ি থাকাকালীন, নদীয়া।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।