এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • মিলেনিয়াম মলঃ পর্ব পাঁচ

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪২৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • দ্বিতীয় অধ্যায়

    ক্যামেলিয়ার কথাঃ



    সাত সক্কালে মেজাজ খিঁচড়ে গেল। কতবার নীতাকে বলেছি রোববার সকালে কাউকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিবি না। শনিবার বিছানায় গিয়ে হাত-পা ছড়াতে বেশ দেরি হয়ে যায়।
    বলেছি যেই হোক, রোববার সকালে আমি ফোন-টোন ধরবো না। নীতা রামানী আমার ম্যানেজার ও বন্ধু। বুঝদার মেয়ে। ও সাধারণতঃ দুপুর দেড়টা নাগাদ আসে। তখন আমরা বিছানায় পা ঝুলিয়ে আইরিশ কফি খাই। ও কিছু ফ্রুট নিয়ে আসে। এ দিন আমি জিমেও যাইনা।
    কফি খেতে খেতে ও সেদিনের কাকে কাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছে জানিয়ে দেয়। আর ও হল দারুণ গসিপ। এই লাইনে নানা জায়গায়, বিজনেসের অলিগলিতে ওর অবাধ যাতায়াত। ও বলেও বেশ মজা করে। আমরা দুজনেই হাসি। হেসে গড়িয়ে পড়ি।
    এই সেদিন ও বলছিল কানের পাশে সাদাচুল, টেকো এক প্রবাদপ্রতিম নাট্যকারের কথা।
    গত গ্রীষ্মে একটি স্পন্সর্ড সেমিনারে ইউরোপ ঘুরে এসেছিলেন। দলের চ্যালাচামুন্ডাদের কাটিয়ে দিয়ে উনি ওঁর বুড়োবয়সের প্রেমিকা এক মেয়ের বয়েসী হুকারের সঙ্গে মাদ্রিদের একটি হোটেলে সাতদিন কাটিয়েছিলেন। কিন্তু বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ হলে যা হয়!
    শরীর চলে না কিন্তু ওই দিল-হ্যায়-কি-মানতা-নহীঁ। তারপর হাভাতের মত মদ গেলা! লুজ মোশন! কোথায় বেড়াতে যাবেন কি খালি পটি যাচ্ছেন আর আসছেন। বাঁ-হাত আর শুকোয় না। তো সেই মেয়েটি বিরক্ত হয়ে শেষের চারদিন ওঁকে সারাক্ষণ হাগিস্‌ পরিয়ে রাখল।
    কিস্‌সাটা নাকি দেশেও মেয়েদের কানেও পৌঁছে গেছে।
    হাসতে হাসতে আমার চোখে জল এসে গেছিল।
    --- “সব পুরুষগুলো একরকম, না রে নীতা? মারাঠি, গুজরাতি, বাঙালী, তামিল, জাঠ, সর্দার সব এক। কতই তো দেখলাম , আলাদা কিছু তো পাইনি। অবশ্যি তোদের সিন্ধিদের কথা জানিনে। হয়তো--?”
    --- “জ্যাদা শোচোঁ মত জেসমিন! আলাদা কিছু না। পুরুষ হল এক বিচিত্র প্রজাতি। ভাল ভাল কথা, আর্ট-ফার্ট, সব কিছুর আড়ে একই চিন্তা, একই মতলব। তাই দেখনি শংকরজী কৈলাসপতির সিম্বল কী ? একটি উত্থিত লিঙ্গ। অ্যাপ্রোপিয়েট। কারণ এটা হল গোটা পুরুষ প্রজাতির লোগো।
    একবার হল কি, সমস্ত মেয়েরা কৈলাসে পার্বতীর কাছে জয়েন্ট পিটিশন নিয়ে গেল যে--”।
    আমি হেসে ফেলে হাত তুলে বাধা দিই।
    -- “এই চুটকুলা আগেও শুনেছি। ওসব ছাড়। এবার কাজের কথা বল।”
    ও চট করে ডায়েরি দেখে নেয়।

    --- “আজ বেশি নেই। তিনটে তিরিশে ডারবান হোটেলের ম্যানেজার এগ্রিমেন্ট রিনিউয়ালের কাগজপত্র নিয়ে আসবে। ৫টায় সমশের। নতুন গানের লিরিক শোনাতে চায়। আর বুড়ো ডি কস্টা ছুটি চাইছে, একমাসের। বাইরে যাবে। তাই সন্ধে সাতটায় একজন অল্প বয়েসী ছেলেকে ফুরনে কাজ করার জন্যে নিয়ে আসবে। লীড গিটারে কাজ চালিয়ে নেবে।ব্যস্‌! তারপর ডিনার।”
    ---- “আর লা মেগাপোড? ওদের কি হল? ওদের এই উইক এন্ডেই আসার কথা ছিল না? ফোন করিস নি?”
    --- “ওরা কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করবে না, আজ জানিয়ে দিয়েছে।”
    --- “বাস্টার্ড! অ্যাদ্দিন ধরে ঝুলিয়ে রেখে এখন--! মরুক গে! ভবিষ্যতে ডাকলেও যাব না। আর দলবিন্দরের নামটা নোট করে রাখবি।আমার প্রোগ্রামের কোন ফ্রি-পাস ইন শালোঁ কো নহীঁ মিলনা চাহিয়ে।”
    -- “সওয়াল হী নহীঁ, প্রশ্নই ওঠে না।”
    ইদানীং বড় ক্লান্ত লাগে। বয়স হচ্ছে বুঝতে পারি। সবগুলো রোববার কেমন একইরকম হয়ে যাচ্ছে।

    কিন্তু আজকের রবিবারটা যে অন্যরকম হবে কে জানত?
    নীতার জন্যে আলাদা করে রাখা মোবাইলটা কোঁ কোঁ করে বারবার এস এম এস পাঠাচ্ছে। ঘুমচোখে স্ক্রীনে নীতার নাম। ঘড়ি বলছে মাত্র সাড়ে দশটা।
    অবাক হওয়ার চেয়েও ভয় পেলাম বেশি। ওর অসুখ-বিসুখ? বা ইম্পর্ট্যান্ট কারো ডেথ?

    -- “জেসমিন, আমি কল ফরওয়ার্ড করছি, কথা বলে নাও।”
    -- “এখন? কী ব্যাপার? হয়েছেটা কী?”
    -- “আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোন সিকিউরিটির মামলা। ভদ্রলোক তোমার সঙ্গে ডিরেক্টলি কথা বলতে চান।”
    বিরক্ত হই।
    -- “তুই বললি না, বিকেল চারটের সময় কথা বলতে? আমাদের সিকিউরিটি নিয়ে কোন প্রবলেম নেই তো! কোন বাউন্সার বা কাস্টমারের সঙ্গে কোন ঝামেলা হয় নি। তাহলে তাড়া কিসের?”
    --- “না, জেসমিন, লোক্যাল কোন পেটি লফড়া না। এটা এসটিডি কল। নাম বললেন সদাশিবন। কিসের একটা হাই সিকিউরিটির মামলা। বললেন মিস ক্যামেলিয়া যদি পূর্বজীবনে সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের টিচার জেসমিন ম্যাম হন তবে যেন এই ফোনটা ধরেন। ভদ্রলোক কিন্তু বেশ নাছোড়বান্দা। আমার মনে হল মামলা অন্যরকম। তাই বলছি ফোনটা ধর।”

    হ্যাঁ, ধরেছিলাম ফোনটা। নীতা রামাণীর কথা মেনে। ও আমার সেক্রেটারি বল্লে কম বলা হয়।
    একটা ভারি পুরুষালি গলা। সাতসকালে কেন জ্বালাচ্ছে বাবা! কী চায়?
    নাম বলছে সদাশিবন! সদাশিবন? সদাশিবন? কোন সদাশিবন? দক্ষিণী মন্ত্রীর পিএ? মুম্বাইয়ের ফিনান্সিয়ার?
    আবার জানতে চাইছে আমি আর হরিয়ানার ক্যাথালের সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের মিস জেসমিন একই ব্যক্তি কি না?
    সতর্ক হয়ে যাই। সিকিউরিট? আই বি? স্পেশাল ব্রাঞ্চ? এই পরিচয় তো সবার জানার কথা নয়। সতের বছর আগে সেসব চুকে বুকে গেছে, আমি মনে রাখতেও চাই না।
    গলায় একটা প্রফেশনাল টোন আনি। বলি, “কাম কী বাত কীজিয়ে। আপনার এসব কথার উত্তর দেব কেন?”
    ওদিক থেকে একটা শান্ত প্রত্যুত্তর এলো।
    -- “না, না। বিব্রত হবেন না। আপনি জেসমিন ম্যাম না হলে আমি মাপ চাইছি। এই কনভার্সেশন ভুলে যান। আপনাকে একটুও বিরক্ত করতে চাইনি। কিন্তু আমি খুঁজছি এমন একজন মহিলাকে যাকে প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে আমি স্কুল টিচার জেসমিন নামে জানতাম। পরে তিনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে পেশাদারি গানের জগতে পা রাখেন।”
    -- “তারপর?”
    -- “তারপর আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি। আজ তাঁকে আমার খুব দরকার।”
    -- “বেশ। কিন্তু আপনার কেন মনে হল আমিই সেই ? আমাদের পেশাদারি গানের জগত বিশাল। অনেকেই আসে আবার হারিয়ে যায়। হরিয়ানার মফঃস্বল থেকে কোন মেয়ে আসতেই পারে। হয়তো টিকতে পারেনি। ফিরে গেছে। সেখানে খোঁজ করুন। আর আমি তো হরিয়ানার নই। বিলাসপুরের।”
    -- “না, মানে ওই মেয়েটিও বিলাসপুরের। ক্যায়থালের স্কুলে ঘটনাচক্রে চাকরি করছিল মাত্র।”
    (লোকটা কি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছে? দেখাচ্ছি বাছাধনকে।)
    -- “শুনুন, আপনি আবার ভুল করছেন। ভারতে চার-চারটে বিলাসপুর আছে। পাঞ্জাবে, হিমাচল প্রদেশে, হরিয়ানায় এবং ছত্তিশগড়ে।আপনি যাকে খুঁজছেন সে হরিয়ানার বিলাসপুরের; আর আমি ছত্তিশগড়ের।”
    -- “আমার ভুল হয় নি। জেসমিন ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরের রেল কলোনির মেয়ে। চাকরিসূত্রে হরিয়ানার ক্যায়থালে। আমি ওকেই খুঁজছি।”
    -- “কেন? বলতে আপত্তি আছে?”
    -- “না, না! একসময় ওকে ছোটখাট সাহায্য করেছিলাম। আর আজ আমারই কিছু সাহায্যের দরকার।”
    --- “কী রকম সাহায্য? কিছু আর্থিক লেনদেন? ধারশোধ? আমার তো কারো কাছে কিছু ধারকর্জ নেই! যদি বড় রকম ডোনেশন এর কথা ভেবে থাকেন তবে তার জন্যে সাতসকালে আমার ঘুম ভাঙানোর দরকার ছিল না। নীতার সঙ্গে কথা বললেই পারতেন। ভাল কথা, আপনার ট্রাস্টের নামটা কী? ইনকাম ট্যাক্স বেনিফিটের জন্যে রেজিস্ট্রি করা আছে তো? নইলে বড় ডোনেশন দেওয়া সম্ভব হবে না।”

    (আমি এত কথা বলছি কেন? লোকটার গলার আওয়াজ ভাল লাগছে বলে? না, অন্য কিছু? লোকটা আমার পুরনো জীবন সম্বন্ধে বেশ কিছু জানে বুঝতে পারছি। কিন্তু কতটা? আর মতলবটা কী? ব্ল্যাকমেল? কথা বলতে বলতে বোঝার চেষ্টা করছি।)

    -- “ম্যাডাম। আর্থিক নয়। অন্যরকম সাহায্য দরকার। সেসব ফোনে সম্ভব নয়। যদি আগামীকাল এই সময় বা দুপুরে একবার সামনাসামনি কথা বলা যায়।”

    এবার বিরক্ত হই। লোকটা কি ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে!
    -- “কাইন্ডলি আমার পিএ রামানীর সঙ্গে কথা বলুন। অ্যাপো ওই ঠিক করে দেবে। গুড ডে!”
    --- “আরে শুনুন, শুনুন! জেসমিন! আমার কোড ওয়ার্ড হল-- বেতলপুর চার্চ, ফাদার মনোহর লাল।”
    আমার শরীরে বিশহাজার ভোল্টের শক্‌।
    ---“আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকে এফ অফিসার?”
    -- “যাক, চিনতে পেরেছেন তাহলে! তাহলে কাল দেখা হতে পারে?”
    -- “হ্যাঁ, দুপুরে আমার সঙ্গে লাঞ্চ করুন।”



    সদাশিবনের কথা

    আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। ওরা দুজন নয়, একজন। হরিয়ানার ক্যায়থালের স্কুল টিচার জেসমিন ম্যাডাম আর দিল্লির ডিস্কো কুইন মিস্‌ ক্যামেলিয়া ।
    সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলে কিছু নিরীহ এনকোয়ারি -- যেমন জেসমিন ম্যাডাম কোন বছরে স্কুল থেকে রিজাইন করেছিলেন ; তারপর দিল্লিতে খোঁজখবর-- গানের লাইনে ক্যামেলিয়া কবে উদিত হলেন, প্রথম ম্যানেজার কে ছিল, ব্যস্‌। সব খাপে খাপে মিলে গেল। তবু সন্দেহ থেকে যায়। একই রকম পরিস্থিতি, একই নাম দুজন আলাদা ব্যক্তিরও হতে পারে। যেমন ভারতবর্ষে চার-চারটে বিলাসপুর। চার আলাদা রাজ্যে, তিনটে আবার পাশাপাশি। তেমনি একাধিক ক্যামেলিয়া হতে বাধা কোথায়?
    কিন্তু উল্টো কোশ্চেনের উল্টো জবাব দিতে গিয়ে ফাঁদে পড়ল ক্যামেলিয়া। বলেই বসল আসলে ও হরিয়ানার নয়, ছত্তিশগড়ের। এটাই ছিল ডিসাইডিং ফ্যাক্টর। আর তখনই আমাকে চিনতে পারল।
    ---‘আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকেএফ অফিসার?’
    ওর গলার আওয়াজে ছিল বিস্ময়, ভালোলাগা আর কি একটা যেন? ভয়? রাগ ? নাকি ঘৃণা? বুঝতে পারছি না।
    ভয় কেন হবে? আমি কি ব্ল্যাকমেলার?
    আর আমি তো কোন থ্রেট করিনি। বরং স্টার্টার শেষ হতে হতে বুঝিয়ে দিয়েছি ওর আগের জীবন, অর্থাৎ কনভেন্ট স্কুলে টিচারের প্রেডিক্টেবল ছায়ায় ঘেরা শান্ত জীবন ছেড়ে এই হাজার ওয়াটের আলোয় ঝলমলে উদ্দাম জীবনে আসার রোডম্যাপ নিয়ে আমার কোন কৌতূহল নেই।
    কথাটা কি বিশ্বাস করল? বুঝতে পারিনি। হয়ত ভেবেছে সবই আমার জানা। না জানার ভান করছি। আসলে সত্যিটাই বিশ্বাস করানো কঠিন।
    সেই একটা ঘটনা। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ ছিল না। আমিই চাইনি। কোন উপায় ছিল না। চাকরি বদলে অনেক দূরে চলে গেছি। তাই আই পি কে এফ --- জাফনায় যাওয়া।

    কিন্তু ও কথাটা কী বলল যেন?
    -- ‘আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকেএফ অফিসার?’
    তার মানে ও বহুদিন আমার খবর রেখেছে। শুধু জাফনা যাওয়া নয়, সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়াও,
    -- হ্যাঁ, এক্স-আই পি কে এফ!
    কিন্তু আমি এখন রায়পুরের মিলেনিয়াম মল প্রোজেক্টের সিকিউরিটি কনসাল্ট্যান্ট। সেজন্যেই দিল্লি আসা। মিস ক্যামেলিয়াকে ওখানে পারফর্ম করতে রাজি করানো আর ওর সিকিউরিটির ব্যবস্থা। সবটাই আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
    কিন্তু তার চেয়েও বড় কৌতূহল ছিল -- কেন ও মিলেনিয়াম মল উস্বোধনের প্রোগ্রামে রায়পুর যেতে রাজি হয় নি। কেউ ভয় দেখিয়েচে? না যাওয়ার জন্যে আলাদা টাকার অফার করেছে? কে সে? রাজকুমার গুলবচন্দানী বা ওর লোক? আমাকে যে সব সম্ভাবনার কথাই খেয়াল রাখতে হবে। আঘাত যে কোথা থেকে আসতে পারে!
    হ্যাঁ, আঘাত আসবেই। আমি গন্ধ পাই।

    ডিনারের সময় কিছু টুকটাক কথাবার্ত; বক্সিং রিংয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সতর্ক পদক্ষেপ। ছোট ছোট জ্যাব, ফেইন্ট, এক-দুবার ডাক করা, এর বেশি নয়।
    হ্যাঁ, এই ডিনারের তুলনা শুধু বক্সিং রিংয়ের সঙ্গেই চলে। দুজনেই স্বেচ্ছায় এসেছি; দুজনেই একে অপরের ক্ষমতা খানিকটা জানি। কিন্তু দুজনেরই টান টান স্নায়ু; জিততে হবে। অপরপক্ষকে মাটিতে পেরে ফেলতে হবে। ডিনার সার্ভ হল যেন প্রথম রাউন্ড শেষের বেল বাজল। ডিনার শেষ। জেসমিন একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েসী ভঙ্গিতে রিং ছাড়ল। অর্থাৎ , তৃতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হল। আমি দ্বিগুণ সতর্ক। ওর চোখে চোখ রাখি। চোখ অনেক কিছু বলে।
    প্রথম ওপেনিংটা আমার।
    -- “মিলেনিয়াম মলের প্রোগ্রামের অফার অ্যাক্সেপ্ট করলে না?”
    সোজাসুজি একটি স্ট্রেট লেফট, ওর চোয়াল লক্ষ্য করে।
    একটু অবাক হলেও সামলে নিল।
    -- “আপনার ইন্টারেস্ট?”
    হিটটা সামলেছে ডানকাঁধের ওপর নিয়ে।
    --- “বললাম না, আমি মলের ইনগারেশন প্রোগ্রাম শেষ হওয়া অব্দি গুলাবচন্দানীদের সিকিউরিটি কন্সালট্যান্ট। ভুলে যাচ্ছ কেন?”
    চটুল ফুটওয়ার্কে আমি সার্কলটা ছোট করে আনি।
    --- “ও!”
    পিছিয়ে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে, ওপেনিং খুঁজছে।
    -- “তাই কোনরকম অস্বাভাবিক কিছু দেখলে কারণ জানতে চাইব না?”
    রাইট হ্যান্ড জ্যাব, বাঁদিকের রিবসে।
    --- “অস্বাভাবিক কী দেখলেন?”
    লেফট হুক, তৈরি ছিলাম। ডাক করে সামলে নিয়েছি। কিন্তু গার্ড নেমে গেছে।
    -- “স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে প্রোগ্রামে আসছেন তাতে লোকে ফি না নিয়ে পারফর্ম করতে চায়। অথচ তুমি রাজি হলে না। ফিরিয়ে দিলে। কারণটা কী? তুমি এখন অনেক বড় আর্টিস্ট, এদের নাগালের বাইরে? নাকি অন্য কোন কিছু?”
    দ্রুত কয়েকটি পাঞ্চ, ও একেবারে দড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। তারপর জড়াজড়ি করতে করতে দম নেয়।
    --- “আমাকে কী ভেবেছেন? সম্মান ও আত্মমর্যাদা কম্প্রোমাইজ করে শুধু পয়সার জন্যে যে কোন জায়গায় যাব?”
    আচমকা এক আপার কাট্‌! ঠিক থুতনির ওপর। হড়বড়িয়ে রোপের সাহায্য নিই।
    -- “শুধু তাই?”
    -- “শারীরিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা ছিল।“
    একটি দুর্বল রাইট হুক; ইম্প্রেসড্‌ হইনি। কাউন্টার পাঞ্চে ওকে ঠেলে দিই।
    ---- “ছোট ভাই? রাজকুমার গুলাবচন্দানি?”
    এটা কনুই থেকে আচমকা হুক; তৈরি ছিল না। চোয়াল নড়ে যায়, শুধু মাথা নাড়ে।
    আমি ছাড়ি না। জয়ের গন্ধ পেয়েছি। দুর্বল হলে চলবে না। টেকনিক্যাল জিত নয়,আমি চাই নক আউট ।
    কিন্তু রাউন্ড শেষের বেল বাজে। ও ওয়াশ রুম থেকে ঘুরে আসার অনুমতি চায়।

    (চলবে)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kishore Ghosal | ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২৩741023
  • বাঃ হচ্ছে বেশ টানটান উত্তেজনা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন