এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  পর্যালোচনা (রিভিউ)  বই

  • হিন্দু দেবতা এক অনির্বেদ অডিসি : কিছু কথাঃ শিবাংশু দে

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | বই | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৬১৬ বার পঠিত
  • [ আমার বন্ধু সুলেখক এবং গুরুভাই শিবাংশু দে'র "হিন্দু দেবতাঃ এক অনির্বেদ অডিসি" বইটির ভূমিকা আজ সকালে ফের চোখ বুলোতে গিয়ে মনে হল আজকের কঠিন সময়ে এই লেখাটি বড় প্রাসংগিক। তাই এখানে পাঠকদের সামনে তুলে ধরলাম, শিবাংশুর অনুমতি না নিয়েই। আশা করি, তিনি আমার ধৃষ্টতা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন। ]

    হিন্দু দেবতা
    এক অনির্বেদ অডিসি : কিছু কথা
    ---------------------------------
    শিবাংশু দে

    'নির্বেদ' শব্দের নানা অর্থ আছে। তত্ত্বজ্ঞান, আত্ম-অবমাননা, বিষাদ, বৈরাগ্য, বিরক্তি ইত্যাদি। 'অনির্বেদ' শব্দের অর্থ বৈরাগ্যহীনতা। ‘ইন্দ্রিয়প্রবৃত্তির প্রতি অনুরাগী, উৎসাহবর্ধক, সন্তুষ্টি অর্জনে’র যাপনটিই 'অনির্বেদ'। জীবনপিয়াসী, সংগ্রামী, বিরাগমুক্ত মানুষের যাপনই প্রকৃত অনির্বেদ যাত্রা। শাশ্বত অডিসি। বিরাগী নয়, অনুরাগী মানুষই ইতিহাস রচনা করে। অনির্বেদ মানুষই সভ্যতার অগ্রগামী ঘোড়সওয়ার।

    ইতিহাসপূর্ব কাল থেকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা ধরনের প্রয়োজন পূরণ করতে মানুষের যাপনজগতে দেবদেবী ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক ঐশী প্রবণতাগুলি বেড়ে উঠেছিলো। বিবর্তনের পরম্পরায় এই প্রবণতাগুলি মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্ভুল ধরে রাখে।

    সংখ্যাগুরু মানবসমাজ সচরাচর ধর্মীয় লোকাচারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলিকেই 'আধ্যাত্মিক' চর্চা মনে করেন। বিরুদ্ধ মতে এইসব লোকাচার স্রেফ হেলাফেলার পুতুলখেলা। উভয়ক্ষেত্রেই রয়েছে একধরনের পরস্পর বিমুখ তীব্র বিরাগ। যার ফলশ্রুতি পারস্পরিক বোধ ও যাপনের প্রতি অবিশ্বাস, অনতিক্রম্য মানসিক দূরত্ব ও অহেতুক বৈরিতার আবহ। পরিণতি? মানবিক মূল্যবোধের প্রতি অনীহা, ঘৃণা ও হিংসার শষ্যে খামার ভরে ওঠা।

    আমাদের দেবতানির্মাণ ও বিবর্তনের বিশাল পরম্পরাটি মুক্ত, অনির্বেদ দৃষ্টি দিয়েই মূল্যায়িত করা যেতে পারে। আমাদের ঐতিহ্য মানে একান্তভাবে মানুষে মানুষে সমন্বয়ের ইতিহাস। দৈবী অজুহাতে সামাজিক বিভাজনের রাজনৈতিক অভিসন্ধি গুলি মানবতাবোধের উপর বড়ো আঘাত। ভারতবর্ষে দেবতাদের বিষয়ে আলোচনা করার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া উচিত।

    এদেশে ঠিক কারা দেবতা? কারা তাঁদের মান্য করে চলেন? এককথায় জবাব দিতে গেলে বলতে হবে এদেশে 'হিন্দু' সম্প্রদায়। প্রায় তিন হাজার বছর আগে এদেশে কোনও 'হিন্দু' ছিলেন না। তাই একথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো আমাদের দেবদেবীদের উৎপত্তি অন্য কোনও সভ্যতার উৎস থেকেই হয়েছিলো।

    প্রায় একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা তিনটি সভ্যতা, মিশরিয়, সুমেরিয় এবং সিন্ধু, আমাদের দেবতা ও বিগ্রহ ধারণার সূত্রপাতের মূল। প্রাগৈতিহাসিক কালে শুরু হওয়া পূর্বপুরুষের অশরীরী আত্মার প্রতি নিবেদিত পূজার্চনা শেষপর্যন্ত ‘দেবতা’ পূজায় পরিণত হয়।

    আধুনিক বিশ্বে দেবতা পরম্পরা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই বেঁচে আছে। গত আড়াই-তিন হাজার বছর ধরে এই ভূভাগের মানুষ দেবতাতত্ত্ব ও দৈবী বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল বিপুল, জটিল প্রপঞ্চ নির্মাণ করে ছিলো। 'ভারতীয়' মানসিকতা, বিশ্বাস, সৃজনশীলতা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি, এককথায় সামগ্রিক ভারতীয় যাপনের সঙ্গে দেবতাতত্ত্ব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে।

    ব্যক্তির মেধার অভিমুখ যেমনই হোক না কেন দেবতাদের উপস্থিতি তাকে বিভিন্ন ভাবে চালিত করে। তার গতিপথ আনুগত্য নিরপেক্ষ। ভক্তিবাদী অবস্থান বা দ্বান্দ্বিক বিচার, যার প্রতিই অনুরাগ থাক না কেন, এদেশের প্রাত্যহিক জীবনে দেবদেবীদের প্রভাব এড়িয়ে যাওয়া যায়না। তাঁদের স্বীকার করি বা নাই করি, ‘উপেক্ষা’ করার পরিসর এই দেশ আমাদের দেয়না।

    ভক্তিবাদীদের কাছে সমাধানটি খুব সহজ। কিন্তু যাঁরা অন্য চোখে সন্ধান করেন, তাঁদের জন্য বোধ হয় আমাদের কবি এই কথাগুলো বলে গেছেন।

    '....পথে চ’লে পারে- পারাপারে
    উপেক্ষা করিতে চাই তারে;
    মড়ার খুলির মতো ধ’রে
    আছাড় মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
    তবু সে মাথার চারিপাশে!
    তবু সে চোখের চারিপাশে!
    তবু সে বুকের চারিপাশে !
    আমি চলি, সাথে সাথে সেও চলে আসে !
    আমি থামি,-
    সে-ও থেমে যায়...

    (বোধ-জীবনানন্দ)

    যখন থেকে মানুষের মনে দেবতাসৃজনের আবেগ জন্ম নিয়েছিলো, তখন থেকেই দেবতাতত্ত্ব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গেছে। অসংখ্য, অগণন গ্রন্থ, নিবন্ধ, গবেষণাপত্রে মানুষের নিজস্ব বিচার ব্যক্ত হয়ে আছে। আমাদের দেশে শাস্ত্রবিচারের স্বীকৃত দুটি প্রান্ত, পূর্বপক্ষ ও উত্তরপক্ষ।

    সহজভাবে বলতে গেলে একটি পক্ষে প্রশ্নের সৃজন, অন্যটিতে তার সমাধান। কিন্তু ব্যাপারটি একেবারেই এতোটা সরল নয়। প্রশ্নের ভিতর থেকে প্রশ্ন, উত্তরের ভিতর থেকে অনুত্তর, সন্দর্ভমুখী বা বিমুখ চর্চা মানুষের সন্ধানের পথটিকে কুয়াশায় ঢেকে দেয়। শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক আলোচনা হলে ক্ষতি নেই।

    কিন্তু দেবতার নামে নিষ্ঠুর হননযাত্রায় প্রবৃত্ত হওয়া এদেশে নতুন কোনও কথা নয়। আদিকাল থেকেই হিংসা মানুষের প্রিয় রিপু। কে সে দেবতা? যার নাম নিয়ে নরহত্যাও বিধেয় হয়ে যায়। মধ্যযুগের হিংস্র, রক্তক্ষয়ী অনাচারও তুচ্ছ হয়ে যায় যার সামনে। দেবতার কাজ তো ক্লান্ত মানুষকে স্নিগ্ধ করা, বীতশোক করা।

    '...এ আগুন এত রক্ত মধ্যযুগ দেখেছে কখনও?
    তবুও সকল কাল শতাব্দীকে হিসেব নিকেশ করে আজ
    শুভ কাজ সূচনার আগে এই পৃথিবীর মানবহৃদয়
    স্নিগ্ধ হয়-বীতশোক হয়?

    (এই সব দিনরাত্রিঃ জীবনানন্দ)

    সামাজিক কর্তব্য হিসেবে সেই সব দেবতাদের সন্ধান আমাদের করে যেতে হয়। কিন্তু কীভাবে? নিজের খোঁজ নিয়ে এগোতে গিয়ে দেখি অধিকাংশ সারস্বত উৎসগুলি ভাববাদী, ভক্তিবাদী পল্বলে অবরুদ্ধ পুনরাবৃত্তি মাত্র।

    অন্যদিকে যাঁরা ‘যুক্তি’পথের যাত্রী, তাঁদের চর্চায় গর্বিত অহমিকা। তীক্ষ্ণমেধার তরবারি দিয়ে মানুষের দীর্ঘ আধ্যাত্মিক সন্ধানকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ‘তৃপ্তি’ ।

    সেই কবে বুদ্ধ বলে গেছেন চরম পন্থা দিয়ে কিছু অর্জন করা যায়না। রক্তমাংসের অনিত্য মানুষ মধ্যপন্থা ছাড়া আর কোথাও শুশ্রূষা পায়না। মধ্যপন্থা মানে অনুচিত আপোশ নয়, উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিত বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই ধারাটাই দ্বান্দ্বিক চিন্তা ও মননের ভিত্তি।

    হিন্দু দেবতা বিষয়ে আলোচনা করার আগে বৈদিক সভ্যতার পৃষ্ঠপটটি জেনে নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতায় দেবতাসংস্কৃতি কীভাবে উপ্ত ও বিকশিত হয়েছিলো সে বিষয়েও কিছু ধারণা থাকা দরকার। সভ্যতার আদিপর্বে মানুষের মননে নির্গুণ, নিরাকার,একক ঈশ্বরের কোনও অস্তিত্ত্ব গড়ে ওঠেনি।

    পৃথিবীর সব সভ্যতায় মানুষ প্রথম যুগে 'দেবতা' নামের একটি অতিমানবিক সত্ত্বার প্রয়োজন অনুভব করেছিলো। ইচ্ছাটির পিছনে দুটি চালিকাশক্তি কাজ করেছে। এক, মরণশীল জীবনের অনিশ্চিতি থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস। দ্বিতীয়টি, সমাজ বন্ধন গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক কাঠামো। এই কাঠামোটি কোনও নিয়ন্ত্রক সত্ত্বা ছাড়া টিকে থাকতে পারেনা। দেবতারা সেই কাজটি করতেন।

    আমাদের প্রাথমিক দেবতারা ছিলেন পূর্বপুরুষের প্রতিমূর্তি। সিন্ধু বা চিনা সভ্যতায় আদি দেবতারা সবাই ছিলেন প্রয়াত পূর্বজের আত্মার কল্পনা। আসিরিয়-সুমেরিয় সভ্যতার কাল থেকে পূর্ণাঙ্গ দেবতাদের মূর্তি কল্পিত হওয়া শুরু হয়েছিলো। পরবর্তীকালে হেলেনিক ও আর্যসভ্যতায় দেবধারণাগুলি সৃজনশীলতার শিখর স্পর্শ করে।

    তবে সমস্ত সমাজেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা দৃঢ়মূল হবার ফলে দেবতাদের অবলম্বন ছিলো মানুষজাতির পুরুষরূপ। নারী দেবতারা তখনও অবতীর্ণ হবার যোগ্যতা অর্জন করেননি। কিন্তু যখন তাঁরা আসরে এলেন, পুরুষদেবতাদের ছাপিয়ে না গেলেও তাঁদের জন্য মোটামুটি একটা সম্মানের স্থান নির্দেশ করা হয়েছিলো।

    পরবর্তীকালে হিন্দু সংস্কৃতির ভিত্তি ছিলো বৈদিক সাহিত্যের গর্ভে। বৈদিক পরম্পরার পবিত্রতাকে সমস্ত পার্থিব প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখা হতো। ঋগবেদের দশম মণ্ডলে ১৫ সূক্তে প্রয়াত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে বলা হয়েছে,

    "প্রেহি প্রেহি পথিভিঃ পূর্ব্যেভির্যত্রা নঃ পূর্বে পিতরঃ পরেয়ুঃ।
    উভা রাজানা স্বধয়া মদন্তা যমং পশ্যাসি বরুণং চ দেবম।। ৭
    সং গচ্ছস্ব পিতৃভিঃ সং যমেনেষ্টাপূর্তেন পরমে ব্যোমন।
    হিত্বায়াবদ্যং পুনরস্তমেহি সং গচ্ছস্ব তন্বা সুবর্চাঃ।।" ৮

    (আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে পথ দিয়ে, যে স্থানে গিয়েছেন, তুমিও সেই পথ দিয়ে সে স্থানে যাও। সেখানে দুই রাজা যম ও বরুণ স্বধা প্রাপ্ত হয়ে আমোদ করছেন, তাঁদের দর্শন করো। সেই সুন্দর স্বর্গধামে পিতৃলোকদের সঙ্গে মিলিত হও। যম ও তোমার ধর্মানুষ্ঠানের ফলের সঙ্গে মিলিত হও। পাপ পরিত্যাগ করে অস্ত নামক গৃহে প্রবেশ করে উজ্জ্বল দেহ ধারণ করো।)

    'দেবতা' শব্দের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা সব সময় এক হয়না। সেজন্য দেবতাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনার আগে জানতে হবে ‘দেবতা’ কারা? ঋগবেদের নিরুক্তকার যাস্কের পরিভাষায়, "দেবো দানাদ বা দীপনাদ বা দ্যোতমদ বা দ্যুস্থানো ভবতীতি বা।" (যাস্ক - ৭/১৫)
    (যিনি দান করেন, তিনি দেব। যিনি দীপ্ত বা দ্যোতিত হ'ন তিনি দেবতা। যিনি দ্যুস্থানে (দ্যুলোকে) বাস করেন তিনিও দেবতা)

    দানের সঙ্গে দেবতাকে যুক্ত করার চেয়ে মানুষ তাঁদের ‘দ্যুতি’ বা উজ্জ্বল আকারের সঙ্গেই অধিক স্বচ্ছন্দ ছিলেন। অন্যপক্ষে দেবতা মাত্রেই দ্যুলোকে বসবাস করতেন না। যেমন দুই প্রধান দেবতা পৃথ্বীস্থানের অগ্নি ও অন্তরীক্ষস্থানের ইন্দ্র। কিন্তু যাস্ক শুধু তিনজন দেবতার কথাই বলেছেন। অগ্নি, বায়ু বা ইন্দ্র এবং সূর্য।

    যাস্ক ছাড়াও ঋগবেদে 'দেবতা' শব্দের অসংখ্য ব্যঞ্জনা পাওয়া যাবে। ‘স্বর্গ’বাসী, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, দীপ্তিমান সত্ত্বাগুলিকে 'দেবতা' পরিচয়ে সম্বোধন করার প্রচলন হয়ে গিয়েছিলো। ঋগবেদের অষ্টম মণ্ডলে ৩৩ জন দেবতার কথা আছে (৮/২৮/১)। সেই অনুসারে শতপথ ব্রাহ্মণেও ৩৩জন দেবতার প্রসঙ্গ পাওয়া যাবে। ৩৩ 'কোটি', অর্থাৎ ৩৩ প্রকার দেবতার কিংবদন্তিটি এখান থেকেই শুরু হয়।

    তৃতীয় (৩/৯/৯) এবং দশম মণ্ডলের (১০/৫২/৬) দুটি ঋকে দেবতার সংখ্যা বলা হয়েছে ৩৩৩৯। এতো গোলমেলে হিসেব থেকে কিছুই বোঝা যাবেনা। তবে একসময় ঋষিরা বিভিন্ন প্রধান ও অপ্রধান প্রাকৃতিক শক্তিগুলির প্রতি দেবরূপ আরোপ করে সাতাশজন দেবতাকে চিহ্নিত করেছিলেন।

    এঁদের তালিকাটি অগ্নিকে দিয়ে শুরু হয়। সঙ্গে অন্যান্য প্রধান বৈদিক দেবতারা, যথা, মিত্র, বরুণ, মরুৎগণ, সোম, বিষ্ণু, আদিত্য, পূষন ইত্যাদি সবাই আছেন। সবার শেষে রয়েছেন সরস্বতী, তবে নদীরূপে। তিনি ছাড়া দুজন মাত্র দেবী রয়েছেন ঐ তালিকায়, অদিতি ও ঊষা। তবে তাঁদের ভূমিকা ছিলো অপ্রধান। ঋগবেদ দশম মণ্ডলের কালে পিতৃপুরুষরা দেবতাদের ‘সহচর’ হয়ে গেছেন। তার আগে তাঁরাই বংশধরদের কাছে 'দেবতা' হিসেবে মান্যতা পেতেন।

    পুরাণযুগের নৈমিত্তিক প্রার্থনা 'রূপং দেহি, ধনং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি', বহুপরে লেখা হলেও, প্রথম থেকেই আমাদের দেবতাচর্চার মূলে রয়েছে বুদ্ধকথিত এই সব তৃষ্ণার বাধ্যবাধকতা। দেবদেবীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ভঙ্গিতে অধ্যাত্ম আবেগ আর পাইয়ে দেবার আকুলতা, দুটো'ই একসঙ্গে কাজ করেছে। জনমনে প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে নানা দেবতা এগিয়ে এসেছেন, আবার পিছিয়েও গেছেন আর্থ-সামাজিক বাধ্যতায়।

    পৃথিবীর অন্য সভ্যতাগুলিতে, যেখানে একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রসার ঘটেছিলো, সেখানে বিগ্রহবাদী পরম্পরার দেবতারা মূল স্রোত থেকে ধীরে ধীরে অপসৃত হয়ে গেছেন। লোকযানের জগতে কিছু 'দেবতা' টিকে গেলেও তাঁদের মাহাত্ম্য কমে গেছে সঙ্গত কারণেই। আফ্রিকা, পলিনেশিয়া, লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার কিছু প্রান্তে উপজাতিক দেবতাদের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সেই সব দেবতা সীমাবদ্ধ পরিসরে বিরাজমান থাকেন। তাঁদের আদিম রূপ ও প্রকৃতির মধ্যে মানুষের মেধাগত যোগদান বিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়না।

    যেসব প্রাচীন ও প্রধান সভ্যতা দেবতাতত্ত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বহু শ্রম ও মেধা নিবেশ করেছিলো, পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন বিকশিত ধর্মবিশ্বাস আশ্রয় করে প্রাচীন পরম্পরার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যেমন মিশরিয়, আসিরিয় ও ব্যাবিলোনিয় সভ্যতার মানুষজন ইসলামের শরণ নেবার পর দেবতাদের সঙ্গে ছেদ টেনে দেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় গ্রিক, রোমক, ফিনিসিয়, টিউটনিক, স্লাভিক, আজটেক ও ফিনিশ সভ্যতার ক্ষেত্রেও। তাঁরা খ্রিস্টধর্মের আশ্রয়ে আসার পর প্রাচীন দেবতাচর্চার থেকে নিজেদের বিযুক্ত করে ফেলেন।

    চিন, জাপান ও দূরপ্রাচ্যের সভ্যতাগুলিতে দেবদেবী বলতে যা বোঝায়, তাঁরাও ভারতীয় মহাযানী ধর্মের অসংখ্য দেবতার বিবর্তিত রূপ। মৌলবিচারে তাঁরা সম্প্রসারিত ভারতীয় দেবতাজগতের গরিমা বহন করেন।

    সমাজতাত্ত্বিক নিরিখে মানুষের সমাজজীবনে দেবতাশিল্পের ধারাটি অনুসরণ করলে তার মধ্যে 'ধর্ম' ও 'অধ্যাত্মে'র অংশটি গৌণ বোধ হবে। সামাজিক নিরুপায়তা ও রাজনৈতিক তাড়না থেকেই আমাদের 'তেত্রিশ কোটি' দেবতার সুবিপুল জগৎ গড়ে উঠেছে। ইতিহাসে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যাবে। নির্বেদ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তার তল পাওয়া দুষ্কর।

    জটিলতা ও দুরূহতার অন্তহীন জটাজালে ইতর মানুষের ন্যূনতম আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসাগুলির দিশা হারিয়ে যায়। সবার উপরে 'ভক্তি' নামক একধরনের আবেগতাড়িত আত্মসমর্পণ মানুষের মৌল বোধবুদ্ধিকে অন্ধ করে রাখে। দ্বান্দ্বিক পরিপ্রেক্ষিত ও উচিত কার্যকারণ সম্পর্কের পথেই দেবতাদের প্রকৃত মূল্যায়ণ সম্ভব হবে।

    আমাদের কবি এ প্রসঙ্গে সম্ভবত শেষ কথাটি বলেছেন,
    'প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই,
    তাই দিই দেবতারে; আর পাব কোথা!
    দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।'
    (বৈষ্ণব কবিতাঃ সোনার তরী: রবীন্দ্রনাথ)

    দু-তিন বছর আগে অনার্য প্রেক্ষিত থেকে ভারতীয় হিন্দু দেবতাতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত আলোচনাভিত্তিক একটি কৃশ গ্রন্থ রচনা করেছিলুম। বইটির উদ্দিষ্ট পাঠক ছিলেন নবীন বয়সের আগ্রহী প্রজন্ম। বইটি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে আদৃত হয়েছিলো। এখনও শুনেছি সাধারণ পাঠক বইটির প্রতি আগ্রহ বোধ করেন। সেই সূত্রেই বহু পাঠকদের থেকে হিন্দু দেবতাসংস্কৃতি প্রসঙ্গে সামগ্রিক ও বিশদ আলোচনা দুই মলাটের মধ্যে প্রস্তুত করার আদেশ পেয়েছিলুম।

    বিষয়টির পরিধি সমুদ্রসমান। নিজের সীমাবদ্ধতা বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন কাজ ছিলো। কিন্তু ঋতবাক প্রকাশনের আগ্রহ আতিশয্যের কাছে আত্মসমর্পণ করাটাই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ালো।

    বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক চিন্তা করার সময় প্রশ্ন ওঠে 'তেত্রিশ কোটি' হিন্দু দেবতাদের আলোচনা কীভাবে করা সম্ভব। একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে নেওয়া প্রয়োজন, আমাদের সংস্কৃতিতে এখন কোনও বৈদিক দেবতা আর পূজিত হন না।

    এখন আমরা যেসব দেবতাদের সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের শিকড় রয়েছে পৌরাণিক সাহিত্যের মাটিতে। পৌরাণিক দেবতা সংস্কৃতি কোনও অচলায়তন নয়। ক্রমান্বয়ে নতুন দেবতারা এসেছেন। পুরোনো দেবতারা হয় নতুন দেবতাদের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে গেছেন, নয় বিলুপ্তির অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

    মানুষের ইতিহাসের মতো দেবতাদের ইতিহাসও সমান আকর্ষণীয়। দেবতাদের সৃষ্টি বা বিলুপ্তির কালচক্রটিও চালিত হয়েছে নানা রকম কার্যকারণ সম্পর্কের যুক্তিতে। ইতিহাসের কোনও একটি ক্রান্তিকালে সৃজিত দেবতা, যুগের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে অজান্তেই অন্তর্হিত হয়ে যান। মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিল্পনীতি বা মূল্যবোধের সূচকগুলি বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবতারাও বদলে যান। কালধর্মের সঙ্গে নিজেদের যথোচিত ভাবে মানিয়ে নিতে তাঁদেরও সংগ্রাম করতে হয়।

    একটা কথা শোনা যায় একুশ শতকের ভারতীয় মানুষ 'ধর্মীয় দেবদেবী' বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী ন'ন। তাঁদের 'যুক্তিবাদী' জগতে দেবতাদের অস্তিত্ত্ব গৌণ ও প্রান্তিক। কিন্তু নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি ঘটনাটি অতোটা সরলরৈখিক নয়।

    মানুষের সভ্যতা দেবতাদের সৃষ্টি করেছিলো নিজস্ব প্রয়োজনে। এক সময় তাঁদের সৃষ্টি করা হয়েছিলো আধ্যাত্মিক চাহিদায়। আবার একসময় তাঁদের অবিরাম ব্যবহার করা হয়েছে মানুষকে নিপীড়ন করার অস্ত্র হিসেবে। তাঁদের ভূমিকা কখনও ত্রাতা, কখনও বিধাতা, আবার কখনও বিনাশকর্তা।

    এটা সত্য, ব্যক্তিক ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্যই দেবতারা উৎপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু লোভী, নিষ্ঠুর মানুষের হাতে তাঁদের চূড়ান্ত নেতিবাচক ব্যবহারও নিয়ত চোখে পড়ে। রাষ্ট্রশক্তি চায় দেবতার কাছে ভক্তি-অন্ধ মানুষের শর্তহীন আত্মসমর্পণ। রাজা ও পুরোহিতকে দেবতার অংশ হিসেবে প্রচার করে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষকে নিপীড়ন করে আসা হয়েছে। সেই ‘ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলেছে’।

    এই ব্যবস্থাটি থেকে পরিত্রাণ পেতে সর্বশ্রেণীর মানুষকে দেবতার স্বরূপ বিষয়ে অবগত হতে হবে। সহস্র বছরের মানসিক অভ্যাস ও সংস্কার স্রেফ জাদুদণ্ড বুলিয়ে দূর করা যাবেনা। আমাদের দেশে সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে এই রণকৌশল নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাতে সাফল্য আসেনি। বরং উল্টো উৎপত্তি হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি মানুষের মনে দেব-আনুগত্যের ইতিবাচক তাৎপর্যগুলি অপহরণ করেছে। 'দেবতা'র নামে মানুষকে প্রাগৈতিহাসিক অজ্ঞানতার দিকে সজোরে ঠেলে দিতে চাইছে। 'দেবতা' বিষয়ে স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে মানুষ তাঁদের ইতিবাচক বাণীগুলি বুঝতে পারবে। তাঁদের নামে মূল্যবোধের অপমানকে প্রতিরোধ করতে পারবে।

    বর্তমান যুগের প্রধান হিন্দু দেবতারা প্রায় সবাই আদিরূপে আর্যেতর অধ্যাত্মসংস্কৃতির উৎস থেকে এসেছেন। পরবর্তীকালে আর্য-অনার্য সংস্কৃতির সমন্বয় ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের আধুনিক রূপটি গড়ে উঠেছে। মুখ্য দেবতারা এক একটি 'ঘরানা'র অধিপতি।

    উৎস অনুযায়ী আমাদের দেবতাদের তিনটি প্রধান ঘরানা রয়েছে। বিষ্ণুবাদী, তন্ত্রবাদী এবং লোকজ। অবশ্য এদের সীমারেখায় কোনও বন্দুকধারী সান্ত্রী বসে থাকেনা। ক্রমাগত আদানপ্রদান ঘটে। দ্বান্দ্বিকতার অমোঘ নিয়মে পরস্পর প্রভাবিত হতে হতে তাঁদের সম্পূর্ণ রূপবদলও হয়ে যায়।

    গভীর অভিনিবেশ সহ বিচার না করলে তাঁদের মূল রূপটি অধরাও মনে হতে পারে। তা ছাড়া প্রতিটি ঘরানার অসংখ্য উপঘরানাও থাকে। প্রধান দেবতাদের নেতৃত্বে অসংখ্য গৌণ দেবতারা দেবলোকের অধিবাসী হয়ে বিরাজ করেন।

    এই গ্রন্থটিতে পাঁচজন প্রতিনিধিমূলক মূলস্রোতের হিন্দু দেবতাকে নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সামগ্রিক চর্চা করার তাগিদে তাঁদের মধ্যে শৈব, শাক্ত, বৈদিক ও ভাগবত মূলের দেবতারা স্থান পেয়েছেন। তাঁরা শুধু বঙ্গদেশে নয়, সারা ভারতের মানুষের মনেই সমান গরিমায় বিরাজ করেন।

    আদিম মানুষদের মনের বীজতলায় কীভাবে দেবতাদের প্রথম ধারণাগুলি অংকুরিত হয়েছিলো, তার আখ্যান আমাদের টেনে রাখে। রাজনীতি বা অর্থনীতির সূত্র থেকে রসদ নিয়ে মানুষ তাদের আধ্যাত্মিক মানচিত্র নিত্য নতুন ফসলে ভরিয়ে তুলতো। দেবতা সৃজনের পরম্পরায় ভক্তি তদ্গত আবেগের বন্যাকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিলো মানুষের সৃষ্টিশীল মেধার শ্রম।

    ভক্তি নয়, মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক প্রয়োজন, বাধ্যতা থেকেই দেবতাদের মহিমা ও স্বভাবের গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয়েছিলো। দেবতাদের গড়ে ওঠার ইতিহাস আমাদের চিন্তাভাবনাকে ঋদ্ধ করে, সম্পন্ন করে।

    নিবন্ধগুলি যখন লিখতে শুরু করেছিলুম তখনও আমার কাছে স্পষ্ট ছিলো না প্রাসঙ্গিক অনুসন্ধানগুলি কী পরিমাণ মণিরত্ন আমার নসিবে এনে দেবে। কিন্তু যতো এগিয়ে গিয়েছি, শাশ্বত ভারতবর্ষের অর্থ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজন্মকাল ধরে শুনে আসা 'মহামানবের সাগরতীর' আমাদের দেশকে চিনতে পেরেছি। অনুভবের মধ্যে তার বৃহৎ রাজপাটটি ধরে ফেলা সহজতর হয়ে উঠেছে।

    নিবন্ধগুলিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার প্রয়াসে ফাঁকি দিইনি। তবু ত্রুটি থেকেই যায়। মনে রেখেছি এই গ্রন্থ নিছক গবেষণাপত্র নয়। মননশীল পাঠকের ধ্যানধারণার পরিপূরক হয়ে ওঠাই তার লক্ষ। আর নিহিত উদ্দেশ্যের কথা যদি ওঠে, তবে বলবো ভারতসভ্যতা যে সারা বিশ্বে সমন্বয়ের স্বর্গভূমি, সেই আর্ষবাক্যকে প্রমাণ করা ছাড়া আর কোনও উদ্দেশ্য নেই।

    এই দুঃসময়ে, যখন আমাদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন করার জন্য রাজশক্তি সদা তৎপর, তখন দেবতাদের প্রকৃত ইতিহাস-বর্তমান আমাদের কাছে মেধাগত লড়াইয়ের রসদ হয়ে উঠবে। সেই বিশ্বাস থেকেই আমাদের ভালোবাসার শ্রমদান; সাঁঝবেলায় সন্তানদের জন্য আকাশপ্রদীপ জ্বেলে রাখা।

    "…মানুষের অনিঃশেষ কাজ চিন্তা কথা
    রক্তের নদীর মতো ভেসে গেলে, তারপর, তবু, এক অমূল্য মুগ্ধতা
    অধিকার করে নিয়ে ক্রমেই নির্মল হতে পারে।
    ইতিহাস অর্ধসত্যে কামাচ্ছন্ন এখনো কালের কিনারায়;
    তবুও মানুষ এই জীবনকে ভালোবাসে; মানুষের মন
    জানে জীবনের মানে : সকলের ভালো ক’রে জীবনযাপন।"

    (এই সব দিনরাত্রিঃ জীবনানন্দ)

    কলকাতা
    শিবাংশু দে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • . | 2607:fb91:deb:c2c5:74ce:a626:c063:***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫৬740762
  • .
  • ! | 2405:8100:8000:5ca1::186:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৬740768
  • এখনো দীপ এখানে হাগতে আসেনি দেখে অবাক হলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন