এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কিসসা কিস (Kiss) কা:

    Amlan Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩৮৯ বার পঠিত
  • কিসসা কিস (Kiss) কা:
    চুমু খাওয়ার ইতিহাস :

    অম্লান সরকার

    চুমু খাওয়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন। গবেষণায় দেখা গেছে খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ২৫০০ বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও ইজিপ্টে চুমু খাওয়ার প্রচলন ছিল। একজন পুরুষ ও নারীর পরস্পরের প্রতি যৌন আকর্ষণজনিত আবেগের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে একজনের অধরের সঙ্গে আর একজনের অধরের এক মিলিত অবস্থা দিয়ে যাকে আমরা চুমু বা শুদ্ধ বাংলায় চুম্বন নামে অভিহিত করছি। তবে চুম্বনের আরো বিভিন্ন প্রকার ভেদ আছে।

    রোমানদের অনুসারে তিন রকমের চুম্বনের প্রকার হয়। হাতে বা গালে রাবার স্ট্যাম্প মারার মত আলগোছে চুমু খেলে তাকে বলা হয় অসকুলাম। আবার দুই বন্ধ ঠোঁটের পারস্পরিক মিলনে যে চুম্বনের সৃষ্টি হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে বেসিয়াম। আর এক জনের খোলা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে আর একজন নিজের জিভ ঢুকিয়ে সংযুক্ত দুই অধরের সুগভীর লেহন ও পেষণে যে চুমুর জন্ম তার নাম ফরাসী চুম্বন বা ফ্রেঞ্চ কিস। এই প্রকারের অনুরাগ সিক্ত চুম্বনকে রোমানরা বলতো সুয়াভিয়াম।

    এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক কম বয়সেই মানুষ জন্মানোর মত সুগভীর রহস্যময় একটা ব্যাপারের কারণটা বুঝে ফ্যালে। আমাদের সময় আমাদের মাথায় ব্যাপারটা অত সহজে ঢুকতো না। দেখতে পেতাম যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর পরই বাচ্চা হয়। সেটা কি করে হয় সেটা মাথায় ঢুকতো না। এই ব্যাপারে সে জন্য একবার মাকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম যে বিয়ে হলেই কি বাচ্চা হয়? মার কাছ থেকে একটা গম্ভীর হু ছাড়া আর বিশদ কোন উত্তর পাওয়া যায় নি।

    প্রসিদ্ধ সুইডিশ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান চুম্বনের এক উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল যে যখন শব্দের প্রয়োজন অর্থহীন হয়ে পরে তখন চুমু খেয়ে দুজনে দুজনকে নির্বাক করে দেওয়া প্রকৃতিরই এক মনোরম খেলা।

    সুমেরীয় সভ্যতার সময়কার কবিতায় ঠোঁট আর জিভ দুটোই দিয়ে চুমু খাওয়ার উল্লেখ আছে। এখানে এরকম একটি কবিতার বর্ণনা দিচ্ছি।

    My lips are too small, they know not to kiss,
    My precious sweet, lying by my heart,
    One by one "tongue making", one by one.
    When my sweet precious, my heart, had lain down too,
    Each of them in turn kissing with the tongue, each in turn.

    প্রাচীন ইজিপ্টের ডের এল মদিনা নামক একস্থান থেকে খুঁড়ে বার করা প্যাপিরাসের ওপর লেখা একটা কবিতাতেও চুম্বনের বর্ণনা পাওয়া যায়।

    Finally I will drink life from your lips
    And wake up from this everlasting sleep

    কবিতাটা অনেক বড়, তাই পুরোটা দিয়ে আর পাঠকের ধৈর্য্যচুতি ঘটালাম না।

    সুমেরীয় সভ্যতা খ্রীষ্ট জন্মের ২৫০০ বছর আগের ঘটনা। উপরোক্ত কবিতা গুলো থেকে আমরা সেই সুপ্রাচীন যুগেও চুমু খাওয়ার প্রচলনের ইতিহাস খুঁজে পাই।
    আমাদের মহাকাব্য মহাভারতেও অনেক রকম কামার্ত চুম্বনের রকমফের খুঁজে পাওয়া যায়। এদিকে আবার নৃতত্ত্ববিদ ভন ব্রায়ানটের হিসাবে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ শতকে মহান গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার যখন ভারতবর্ষ অভিযান করে তখন ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে চুম্বনের ব্যাপক প্রচলন প্রত্যক্ষ করে সেই অভ্যাস গুলো রপ্ত করে ইউরোপে নিয়ে গিয়ে চালু করে।

    আমাদের দেশে জনসমক্ষে চুমু খাওয়াটা পছন্দ করা হয় না। এমনিতেই যৌন জীবন বা যৌন মিলনের ব্যাপার স্যাপার গুলো এখনও পর্যন্ত একটা ট্যাবুর পর্যায়ে দেখা হয় আমাদের দেশে। ৫০-৬০-৭০ বা এমন কি ৮০ র দশক পর্যন্ত আমরা দেখেছি দুটো কমবয়সী ছেলে মেয়ে পরস্পরের সঙ্গে একটু কথাবার্তা বললেই পাড়া প্রতিবেশী, আশেপাশের লোকজনেরা সেটা নিয়ে হল্লা শুরু করে দিতো। সেই জমানায় লোকেরা ভাবতে রাজী ছিল না যে দুটো কমবয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্ক হতে পারে। তবে আজকের এই নতুন শতাব্দীর তৃতীয় দশকের তৃতীয় বর্ষের মধ্য গগনে আমাদের দেশেও প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের সমীকরণ অনেক বদলে গেছে। এখনকার কমবয়সী ছেলেমেয়েরা সমানে সমানে নিজেদের মধ্যে মেলামেশা ও বন্ধুত্ব করে। আর সেই মেলামেশা ও বন্ধুত্বের মধ্যে আজকাল সেক্সটাও ঢুকে গেছে অনেকটা জলভাতের মতই। নতুন প্রজন্মের কাছে সেক্সটা এখন আর ট্যাবু নেই। এখন ওটা রোজকার নিত্যকর্মের মতই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। তবে এই সেক্সের মধ্যে ভালোবাসা বা আবেগের ব্যাপারটা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এই ধরনের যৌন মিলন যেন খালি নিজের নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটা প্রয়াস মাত্র। অন্তরের আবেগের কোন ব্যাপার নেই এর মধ্যে। কাজেই এতে চুমু খাওয়ার মত একের আর এক জনের প্রতি ভালোবাসা জনিত আবেগ প্রদর্শনের একটা যে সুন্দর মাধ্যম, তার গুরুত্ব হ্রাস পেয়ে যাচ্ছে।

    ছেলেমেয়ের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি ইউরোপ বা আমেরিকার মত মহাদেশ গুলোতে আজ থেকে ৫০ বছর আগে থেকেই চালু আছে। সেই সংস্কৃতিকেই আমরা আজ ৫০ বছর পর নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করছি। এখন ছেলেমেয়েরা বিয়ে করার আগেই এক সঙ্গে কিছুদিন একই ছাদের তলায়, একই ঘরে, একই বিছানায় শুয়ে পরখ করে দেখে নেয় তারা একে অপরের জন্য যোগ্য বা উপযুক্ত কি না। একজন আর একজনের দূর্বলতা, মন্দ গুণ গুলো কতটা সইয়ে নিয়ে চলতে পারবে। আর এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ের মেলামেশার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের এই সংস্কৃতির ফলে বলি হয়ে গেছে চুমু খাওয়ার সেই আবেগঘন অনুভূতি, প্রেমের প্রকাশের বিশুদ্ধ সেই মাধ্যম।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2401:4900:1f2b:fc32:a1f3:74a6:ba6f:***:*** | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:০৮523440
  • অসহ্য বাজে লেখা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন