এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সুকান্তর কথকতা

    Amlan Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ আগস্ট ২০২৩ | ৪৫২ বার পঠিত
  • সুকান্তর কথকতা
    অম্লান সরকার

    সেদিন কোন একটা উপলক্ষে সংবাদপত্র অফিসের ছুটি। পরের দিন সকালে কাগজ ছাপা হয়ে বেরোবে না। তাই সারারাত কাজ করে সেদিনকার সকালের কাগজ ছেপে বের করার দায়িত্ব সামলে সকালের দিকে একটু ঘুমিয়ে ধানবাদ থেকে কোলফিল্ড এক্সপ্রেস ধরে সুকান্ত এসে পৌঁছালো আসানসোল শহরে। সুকান্তর পুরনো কর্মভূমি এই আসানসোলে থাকে এককালীন সহকর্মী ও বন্ধু মানস সেনগুপ্ত। স্থানীয় একটি সংবাদপত্র অফিসের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্ণধারের কাজ ছাড়াও মানসের নিজস্ব একটি ছাপাখানাও আছে। সেখানে সে সিল্ক স্ক্রীন প্রিন্টিং তথা ট্রেডল মেশিনে ছোটখাটো কিছু কাজকম্মো করে থাকে।

    সুকান্ত আসানসোলে কোলফিল্ড এক্সপ্রেস থেকে নেমে সোজা চলে গেল হাটন রোডে অবস্থিত বন্ধু মানসের এই ছাপাখানায়। তারপর সারাদিন গল্পগুজব, আড্ডায় দিনটা অতিবাহিত করে সন্ধ্যায় আকন্ঠ পান করে একটু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধানবাদে নিজের ডেরায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাজির হল আসানসোল স্টেশনে।

    সেই জমানার আসানসোল স্টেশনের সামনে এক পাশে একটা বেশ বড় চত্বর ছিল। সেখানে অল্প কয়েকটা খাবারের দোকান, রুটি তরকারি ভাত ডাল মাছ মাংসের হোটেলও ছিল। ঈষৎ নেশায় বিভোর সুকান্ত আপন মনে দরাজ গলায় রফি সাহেবের গান গাইতে গাইতে এই চত্বরে প্রবেশ করলো - “কিসকো শুনাউ হাল দিলে বেকরার কা, বুঝতা হুয়া চরাগ হু অপনে মজার কা, এয় কাশ ভুল যাউ মগর ভুলতা নেহি, কিস ধুমসে উঠা থা জনাজা বাহার কা”।

    তখন সন্ধ্যা রাত্রি। সামনের এক হোটেলে জোরদার খাওয়া দাওয়া চলছে। সেখানে সমঝদার, গুণগ্রাহী শ্রোতার অভাব নেই। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাহ বাহ করে সুকান্ত কে স্বাগত জানিয়ে তাদের সঙ্গে সুকান্তকে খাওয়া দাওয়া করার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। মোটামুটি হল্লা পার্টি এই দলটির সঙ্গে মিশে গিয়ে সুকান্ত তার নিজের রাতের খাওয়া সম্পন্ন করে একটু রাতের দিকে তার দ্বিতীয় কর্মস্থল ধানবাদের উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরে রওনা হয়ে গেল।

    মাফিয়া শহর ধানবাদ। আশেপাশে ঝরিয়া তথা অন্য আরো কিছু প্রমুখ কয়লা খনির অবস্থিতির কারণে কয়লা পাচার, কয়লা মাফিয়াদের স্বর্গ রাজ্য এই ধানবাদ শহর। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখনও ঝাড়খন্ড রাজ্যের জন্ম হয়নি। ধানবাদ তখনও পর্যন্ত বিহার রাজ্যের অধীন। এই শহরের বদনাম কিছু কম নেই। কয়লা মাফিয়া, মাদক চোরাচালান এই ধরণের বহু রকম অসামাজিক, অপরাধমূলক কাজের পীঠস্থান ছিল এই শহর। নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যখন কেন্দ্র সরকার প্রথম স্মার্ট সিটির তালিকা বানানো শুরু করেছিল, তখন এই শহরের স্থান হয়েছিল ভারতের সবথেকে অপরিষ্কার, নোংরাতম, নিকৃষ্ট শহর হিসাবে।

    অসামাজিক কার্যকলাপ, গুন্ডাগর্দি, মারপিট, খুন জখম ইত্যাদি সবরকম মাত্রাতেই ধানবাদের নাম থাকতো সবসময়েই ভারতের সমস্ত শহরের মধ্যে একদম শীর্ষে। অন্ধকার জগতের দাপটে এই শহর ছিল সাধারণ মানুষের জন্য এক বিভীষিকা।

    সুকান্ত যখন তার দ্বিতীয় চাকরী নিয়ে ধানবাদের হরিমন্দির রোড স্থিত বাঙালি এলাকা কালা হীরা সমাচার সংবাদপত্র অফিসে যোগ দিল, তখন তার স্থান হলো অফিস বিল্ডিংয়ের ওপরেই নির্মিত দুটো ঘরের একটিতে। ক্রমে ক্রমে আরো কিছু বাঙালি ও অবাঙালি কর্মী এসে সুকান্তর ওই পাশাপাশি দুকামরার ঘর দুটোতে স্থান গ্রহণ করলো।

    এই অবাঙালি কর্মীদের মধ্যে গোয়ালিয়রের দৈনিক সমাচার পত্রিকায় সহকারী প্লেট মেকারের পদে কাজ করা কুশল সিং নামে এক ভোজপুরি ছেলে প্লেট মেকার পদে ধানবাদের এই কালা হীরা সমাচার পত্রিকায় যোগ দিল এবং সুকান্তর ঘরের দ্বিতীয় সহআবাসিক হিসাবে সুকান্তর অস্থায়ী ওই বাসস্থানে স্থান গ্রহণ করলো।

    ধানবাদের এই কালা হীরা সমাচার পত্রিকা শহরের অনেক পুরনো সংবাদপত্র। এতদিন এই কাগজ ছাপা হতো পুরনো জমানার স্টিরিও রোটারি প্রক্রিয়ায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে লাইনোটাইপ কোম্পানির গ্রেট ব্রিটেন স্থিত ফ্যাক্টরিতে প্রস্তুত বিশাল প্রাগৈতিহাসিক চেহারার এই স্টিরিও রোটারি প্রিন্টিং মেশিন। মধ্য রাতের পর চালু হয়ে ভোর পর্যন্ত ওই মেশিনে সংবাদপত্রটি ছাপার কাজ শেষ হয়। তার আগে তৈরি হয় ভাট্টিতে সিসা গলিয়ে স্টিরিও রোটারি মেশিনে ছাপার উপযুক্ত গোল লম্বা নলাকৃতি সিসার তৈরি প্লেট। সেই প্লেটে খবরের কাগজের এক একটা পাতার যে প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয় সেটা মাঝখানে একটা ব্ল্যাংকেটের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয় সংবাদপত্র ছাপার জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত নিউজপ্রিন্ট কাগজের ওপর।

    কালা হীরা সমাচার একটি অংশীদারি সংস্থা। অনেক জন অংশীদার নিয়ে এই কাগজের মালিকানা। মালিক বা অংশীদাররা বেশীর ভাগ সবাই বিহারী ভোজপুরী। বিহারের এই ভোজপুরী সম্প্রদায় আবার নিজেদের একটু রুক্ষ, কর্কশ, বাগাড়ম্বর প্রিয়, ভোজন বিলাসী, লড়াই প্রিয় সংস্কৃতির জন্য কুখ্যাত।

    সুকান্তকে এই কোম্পানি নিয়েছিল তাদের খবরের কাগজের ছাপার প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণের জন্য। রোটারি স্টিরিও প্রক্রিয়ার স্থান নেবে অফসেট পদ্ধতিতে ছাপার প্রক্রিয়া। এই নব্য প্রক্রিয়ায় রূপান্তরের জন্য প্রথমেই সুকান্তকে দায়িত্ব দেওয়া হলো বর্তমানে পুরোনো যে সব কর্মচারী ছাপার কাজকর্ম গুলো সমাধা করছে তাদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের মধ্যে নব্য প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত কুশলী কর্মী খুঁজে বার করা।

    সেই অনুযায়ী এক রাত্রে ১৮০ মিলিলিটারের একটা ক্ষুদ্র ডিপ্লোম্যাট হুইস্কির বোতলের তরল টুকু পুরোটা মেরে দিয়ে অল্প একটু ঘুমিয়ে মধ্যরাতের পর সুকান্ত হানা দিল নিজের তলার শপ ফ্লোরে, যেখানে সংবাদপত্র ছাপার প্রস্তুতি তখন পুরো মাত্রায় চলছে। তখনও পর্যন্ত সুকান্তের সঙ্গে ছাপার কাজের সঙ্গে যুক্ত কোন কর্মচারীরই কোন পরিচয় ঘটেনি। কাজেই প্রথমে সুকান্ত দিশেহারা ভাবে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো কোথায় কি কাজ চলছে। এক জায়গায় ভাট্টিতে সীসা গলানোর কাজ চলছে, তো অন্য একজায়গায় পলিমার প্লেট থেকে সীসার তৈরি স্টিরিও রোটারি প্লেটের ওপর এক একটা পাতার প্রতিচ্ছবি রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। কেউ সেই নলাকৃতি প্লেট নিয়ে মেশিনে প্লেট সিলিন্ডারের ওপর লাগানোর ব্যবস্থা করছে তো কেউ ওই ধাতব প্লেটের উঁচু অনাবশ্যক অংশ গুলো কেটে ফেলে রাউটিং করার কাজ করছে। এক সময় বিশালাকৃতি সেই মেশিনে ছাপার কাজ শুরু হলো। সুকান্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখে যাচ্ছে, সব লক্ষ্য করে যাচ্ছে। কার হাত কতটা দড়, কে কতটা কুশলী, কে কাজের ব্যাপারে ফাঁকিবাজ, কার কাজের প্রতি সমর্পন কতটা বেশি, সব। তারপর প্রথম রাতের ওই অভিজ্ঞতার পর আরও বেশ কিছু রাত সুকান্ত শপ ফ্লোরের কাজের পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো এবং সেই সঙ্গে ওখানে কার্যরত বাকি কর্মীদের সঙ্গেও তার ভাল ভাবে পরিচয় হয়ে গেল। অফসেট এদের জন্য একটা সম্পূর্ণ নতুন রকম প্রক্রিয়া। কারোর কোন ধারণাই নেই এই সম্বন্ধে। আর সুকান্তকে মেশিনে ছাপার কাজের জন্য এদের কি দিয়েই কাজ চালাতে হবে।

    এর মধ্যে অফসেট মুদ্রণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ওয়েব অফসেট মেশিন, প্রসেস ক্যামেরা ও প্লেট তৈরি করার আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদিরও আগমন হয়ে গেছে। তার সঙ্গে এসে গেছে এই সব মেশিন বসিয়ে চালু করে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ইঞ্জিনীয়ার এবং তাদের সহকারী বৃন্দ। বিশ্ববন্ধু গুপ্তার বন্ধু মেশিন কোম্পানির ওয়েব অফসেট মেশিন বসানোর জন্য এসেছে আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা নিজাম আহমেদ ও তার সহকারী দিল্লীর ছেলে সাগর এবং এদের সর্বময় কর্তা ইদ্রিস। ওদিকে প্রসেস ক্যামেরা বসানোর কাজের জন্য এসেছে দীনেশ সিং। এদের সঙ্গে একসঙ্গে থেকে পুরো নতুন একটা ইউনিট স্থাপন করার কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পেরে সুকান্তও খুব খুশী।

    একসময় নতুন ইউনিট বসানোর কাজ পুরো সম্পূর্ণ হয়ে গেল। তার ট্রায়াল নিতে হবে। তার জন্য কাঁচা মাল তথা ছাপার জন্য প্রস্তুত অফসেট প্রিন্টিং প্লেট দরকার। এই কাজের জন্য সুকান্ত পাড়ি জমালো কলকাতায়। সঙ্গে সংবাদপত্র অফিসের আরো কিছু অধিকারী এবং ইঞ্জিনীয়ারদের গ্রুপ। কলকাতার গণশক্তি সংবাদপত্রের মেশিন ম্যানের সঙ্গে সুকান্তর বেশ ভাল জানাশোনা ছিল। সেই জানাশোনাকে কাজে লাগিয়ে গণশক্তি সংবাদপত্র অফিস থেকে সংগ্রহ করা হলো ছাপার জন্য প্রস্তুত ওয়েব অফসেট প্লেট। বাকি কাঁচা মালের বন্দোবস্ত হল টেকনোভা কোম্পানীর কলকাতা অফিস থেকে। প্রতি মাসে একবার সুকান্ত নিজে কলকাতা এসে ছাপার জন্য প্রয়োজনীয় এই সব কাঁচা মাল কলকাতা থেকে ধানবাদ নিয়ে যাবে সেই রকম কথাবার্তা পাকা হয়ে গেল।

    অচিরেই ট্রায়াল দৌড় সম্পন্ন হয়ে রোজকার নিয়মিত কাগজ ছাপার কাজও শুরু হয়ে গেল। সুকান্তর সুবিধা এটাই ছিল যে সে যেমন মেশিনে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যে সমস্ত কারিগরী কাজ গুলো করতে হয় সেগুলো যেমন করতে সিদ্ধহস্ত ছিল তেমনি আবার নিজের হাতে মেশিন চালিয়ে ছাপার কাজও ভাল ভাবেই সে করে নিতে পারতো। কাজেই সেই ভোজপুরী প্লেট মেকার ও আরো দুজন বাঙালী প্রসেস টেকনিশিয়ানের সহায়তায় মেশিনে ওঠার আগে পর্যন্ত ছাপার কাজকর্ম গুলো ভালো ভাবেই করা হয়ে যেত।

    যে ভোজপুরী কুশল সিংয়ের কথা বলছিলাম, তার পড়াশোনার দৌড় কতটুকু সে ব্যাপারে সুকান্তর যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। গোয়ালিয়রের খবরের কাগজের ছাপাখানায় ঘষে ঘষে প্লেট তৈরির প্রক্রিয়াটা মোটামুটি সে শিখে নিয়েছিল। যদিও নতুন যুগের নতুন ফর্মুলায় প্লেট তৈরি করতে সেই শিক্ষা আর ওর কোন কাজে আসেনি।

    এই কুশল ছিল অত্যন্ত বাগাড়ম্বর প্রিয় লোক। ওর এই বড় বড় কথা আর কথায় কথায় হ্যায় কি নেহি বলার মুদ্রাদোষটা ছেলেটার সঙ্গে ঘর ভাগ করে নিতে বাধ্য হওয়া সুকান্তর জন্য বিশাল এক শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সুকান্তর নিজের দোষের মধ্যে ছিল নেশা করার বস্তুর প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ, সে তরল, বায়বীয় বা রাসায়নিক যে কোন রূপেই হোক না কেন।

    একদিন কুশল সুকান্তকে বিস্মিত ও হতচকিত করে একটা ছোট প্লাস্টিকের কৌটায় কিছু ধাতব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বল টাইপের দেখিয়ে সেই বল গুলিকে ইউরেনিয়াম বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করলো। সুকান্ত পুরো ব্যাপারটাকে কুশলের একটা মিথ্যে বাগাড়ম্বর ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও মনের মধ্যে একটু খিঁচ রোয়েই গেল।

    কিছু দিন পরে কুশলের সঙ্গে এই ইউরেনিয়াম সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা করে সুকান্ত যা জানতে পারলো তাতে সে স্তম্ভিত হয়ে গেল। ধানবাদ থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে জাদুগোড়া ইউরেনিয়াম খনি। ভারতের হাতে গোনা দুচারটে ইউরেনিয়াম খনির মধ্যে অন্যতম এই খনি। ধানবাদ থেকে সাড়ে চার ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় এই জায়গায় যে কোন গাড়ি করে। জাদুগোড়ার এই খনি থেকে ইউরেনিয়াম পাচার করার জন্য একটা বিশাল আকারের মাফিয়া চক্র কাজ করছে। এই চক্রের কাজ সূদুর বিস্তৃত। জাদুগোড়া ইউরেনিয়াম খনি থেকে ইউরেনিয়াম পাচার করে প্রথমে সেগুলি ধানবাদের সন্নিকটে এক গুপ্ত গুদামে রাখা হতো বিকিরণ প্রতিরোধক কিছু আধারে। তারপর সেগুলিকে সেই অবস্থাতেই আসাম, মণিপুর হয়ে মায়ানমারের ভেতর দিয়ে কাম্বোডিয়ার সীমান্ত এলাকা ছুঁয়ে ম্যাকাও, হংকং এর ভেতর দিয়ে চীনের সীমান্ত এলাকার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তর কোরিয়ার মিলিটারী শাসকদের হাতে। কোরিয়ার পারমানবিক বোমা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজে লাগতো পাচার করা এই ইউরেনিয়ামের ভান্ডার।

    ইউরেনিয়াম পাচারের এই মাফিয়া চক্রের কিছু চুনোপুটির সাথে ইয়ারি দোস্তি ছিল এই কুশলের। সেই সূত্রেই নিষ্ক্রিয় কিছু ফেলে দেওয়া ইউরেনিয়াম খনির আবর্জনা কুশলের হাতে এসেছিল এবং কুশল সেই আবর্জনা গুলোকে সগর্বে ইউরেনিয়াম বলে প্রচার করে লোককে দেখিয়ে একরকম আত্মশ্লাঘা উপলব্ধি করতো। ইউরেনিয়াম পাচার চক্রের এই কাহিনী কুশলের মুখ থেকেই সুকান্ত জানতে পেরেছিল। সেই সঙ্গে সুকান্তকে কুশল এটাও জানিয়েছিল যে এই চক্রের লোকেরা কতটা ভয়াবহ ও নৃশংস। এদের বিন্দুমাত্র স্বার্থে আঘাত পড়লে চরম ব্যবস্থা নিতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না।

    এর পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুকান্ত এই সংস্থার কাজ ছেড়ে দিয়ে কলকাতার এক ইংরেজী সান্ধ্য দৈনিকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই মত একদিন ভোর বেলা কাগজ ছাপার কাজ শেষ হতে না হতে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ধানবাদ থেকে কলকাতা যাওয়ার ভোরবেলার ট্রেন ব্ল্যাক ডায়মন্ডে চেপে বসে। পেছনে রয়ে যায় তার দশ মাসের ধানবাদে কাজ করার স্মৃতি ও দেশ থেকে ইউরেনিয়াম পাচার হয়ে যাওয়ার মত গুপ্ত একটি তথ্য।

    (এই গল্পের সব চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। কোন বাস্তব চরিত্র ও ঘটনার সঙ্গে এই গল্পের কোন মিল খুঁজে পাওয়া গেলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয় বলে গণ্য করতে হবে।)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ০২ আগস্ট ২০২৩ ২৩:০৯522022
  • অসাধারণ। খুব ভাল।
  • Supriyo Mondal | ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১০:৪৮522093
  • ধানবাদ থেকে কলকাতা সকালে তো কোল ফিল্ড এক্সপ্রেস চলে না? ব্ল্যাক ডায়মন্ড তো সকালে হাওড়া থেকে ধানবাদ রায়।
  • kk | 2607:fb91:87b:8018:218e:a5ce:8244:***:*** | ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৩৫522101
  • ধানবাদ থেকে কলকাতা যায় তো কোলফিল্ড এক্সপ্রেস সকালে। ধানবাদ থেকে ছাড়ে সকালে পাঁচটা পঞ্চান্নয়। আসানসোলে সকাল সাতটায় আসে, সাতটা তিনে ছাড়ে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন