এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কামাখ্যা দেবীর কিছু কথা

    Manab Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ জুন ২০২৩ | ৭৯৬ বার পঠিত
  • মা কামাখ্যা দেবীর ইতিহাস কি.... ????
    অম্ববাচী মেলা কেন পালন করা হয়.......????

    যদি না জানেন তো জেনে নিন... পুরাণ মতে -স্বামীর অপমান সইতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করলেন। প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে, তাঁর দেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করলেন মহাদেব। চারিদিক তখন তোলপাড়। শিবের নৃত্যে সব ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এই জগতকে রক্ষা করতে দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু শিবের ক্রোধ দমন করার পন্থা বেছে নেন। বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। ৫১টি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এক একটি অঙ্গ। যা আজ ৫১টি পীঠস্থান। কামাখ্যা মন্দির সেই ৫১টি পীঠস্থানের একটি। সেখানে নাকি ছিটকে পড়েছিল সতীর যৌনাঙ্গ। তাই সেখানে দেবীর মূর্তি পুজিত হয় না।

    অসমের কামাখ্যা মন্দির, ধার্মিক কারণে তো বটেই, সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করে এই মন্দিরে। বিশেষ করে অম্বুবাচী মেলার সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। সেই সময় পুজিত ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে। মন্দিরের নালা দিয়ে বেয়ে যায় লাল জল। এই ঘটনাকে মায়ের ঋতুস্রাব বলে অনেকেই মনে করেন। এই সময় নাকি দেবী ঋতুমতী হন। তিনদিন ধরে এমনটা চলতে থাকে। মন্দিরের মূল কক্ষে তখন কারও প্রবেশে অনুমতি থাকে না। মা নাকি এই সময় কারোর সঙ্গে দেখা করেন না, এমনটাই বিশ্বাস অনেকের। এসবকেই মায়ের লীলা বলে মনে করা হয়। যদিও বিজ্ঞান অন্য কথা বলছে। ওই এলাকায় আয়রন অক্সাইডের প্রভাবের কারণেই ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে। মাটি থেকে ৮০০ মিটার উঁচুতে এই মন্দিরটি। নিলাচল পর্বতের পশ্চিমাংশে গুয়াহাটি শহরে এই মন্দিরটি। এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। ইতিহাস বলছে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়। পাল বংশের রাজারা নাকি ছিলেন কামাখ্যা মায়ের আদি ভক্ত। পরবর্তীকালে পালবংশের রাজত্ব শেষ হওয়ার পর মন্দিরটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। কামরূপের শাসন ভার আসে কোচবিহারের রাজ পরিবারের হাতে। বিশ্বসিংহ নামে কোচ বংশীয় রাজা পুনরায় ওই মন্দিরটির র্নিমাণ করেন। এমনই বহু ইতিহাস রয়েছে এই মন্দিরের স্থাপত্যকে ঘিরে। এই মন্দিরে রয়েছে চারটি কক্ষ। একটি গর্ভগৃহ ও তিনটি মন্দির। গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে সরু সিঁড়ি দিয়ে কক্ষের নীচে নেমে যেতে হয়। পৌরাণিক কাহিনি আজও মানুষকে ডেকে আনে এই মন্দিরের দর্শন করতে....

    "অম্বুবাচী" শব্দটি ভাঙলে অর্থ দাঁড়ায় জল বৃদ্ধি - অম্বু বা জল, আর, বাচী মানে বৃদ্ধি। একে বলে "রজোযুকক্ষ্মাম্বুবাচীয"। অম্বুবাচীর আগের দিনকে বলে "অম্বুবাচী প্রবৃত্তি", আর, তিন দিন পরে হয় "অম্বুবাচী নিবৃত্তি"। অম্বুবাচী সমাপ্ত থেকে বীজবপন ও ধান্যরোপন করা হয়। আমরা পৃথিবীকে মাতৃসমা দেবী মনে করি। দক্ষিণায়নের দিন থেকে তিনদিন সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে পরবর্তী সময়টিতে হয় অম্বুবাচী। সময়কালে ধরিত্রী মা ঋতুমতী হন। অর্থাৎ মনে করা হয় গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর বর্ষার আগমনে একজন মহিলার মত এই সময় ভূদেবী বা ধরিত্রী মা বা পৃথিবী রজঃস্বলা হন। কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে একরকম লাল রংয়ের তরল (ভক্তরা একে বলে মায়ের রজঃস্রাবের রক্ত) বের হয়। মন্দিরে চলতে থাকে কীর্তন। মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। বিভিন্ন মন্দির ও গৃহদেবীর প্রতিমা ঢেকে রাখা হয় ৷
    " আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং। সংগোপনে গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্তু বেষ্টনে। "
    কামাখ্যা মন্দিরের মূল উৎসব "অম্বুবাচী" বা অমাবতী। বাংলা প্রবাদ "কিসের বার কিসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী"।
    বাহিরে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে মাকে প্রণাম করা হয়। চতুর্থ দিন দেবীর স্নান ও পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মন্দিরে ঢুকে মাতৃদর্শনের অনুমতি পায়। অম্বুবাচীর দিনগুলিতে সব দেবীর পূজা বন্ধ থাকে। তবে নারায়ণ, কৃষ্ণ, শিবের পূজা করা যায়। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসেবা যে কোন নারী রজঃস্বলা অবস্থায় বা অশৌচ অবস্থায় যেমন করতে পারেন। ঐসময় ভূমি কর্ষণ, বীজ বপন, পিতৃ-তর্পণ, ঢাক-ঢোল বাজানো, ঘন্টা কাঁসরের আওয়াজ, গৃহপ্রবেশ, গৃহারম্ভ, ক্ষৌরকর্ম করা যায় না। জপ-ধ্যান, হরিনাম করতে হয়। এ সময় সাধু-সন্ন্যাসী, বিধবা মহিলারা তিনদিন গরম খাবার খান না। আগে রান্না করা খাবার বা ফল মূল খান। পান্ডারা ভক্তদের ওই রক্তভেজা কাপড়ের টুকরো দেন ৷ যা পুরুষেরা ডান হাতে বা গলায় এবং মহিলারা বাঁ হাতে বা গলায় মাদুলি করে পরেন ৷ মায়ের আর্শীবাদে এতে দুঃখ বিপদ দূর হয় ৷ এই রক্তবস্ত্র পরিধান করে শ্মশানে ও মৃতের ঘরে যেতে নেই ৷ তিনদিন পরে জামাকাপড়, বিছানা ধুয়ে নিজেরা সাবান শ্যাম্পু মেখে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথের পাশে ভূদেবীর মূর্তি রয়েছে। সেখানে অম্বুবাচীর প্রথম দিনটি "পহিলি রজো" এবং তৃতীয় দিন "ভূ-দহ" বা বাসি রজো হিসাবে পালিত হয়। অম্বুবাচীর পর পৃথিবী হলকর্ষণের উপযোগী হয়ে ওঠে। মাটি হয়ে ওঠে উর্বর। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা।

    ৫১ টি সতীপীঠের অন্যতম এখানে মাতৃ যোনি পরায় পাহাড়টি নীল রংয়ের হয়ে যায়। নাম হয় নীলকন্ঠ বা নীলাচল পর্বত। একে তাই বলে সৃষ্টি তীর্থ। বলা হয় "তীর্থ চূড়ামনি"। প্রাচীনকাল থেকে একে জাদুটোনা, তন্ত্রমন্ত্রের জায়গা বলা হয়। এখানে নাকি ভূত, পেত্নি, ডাকিনী ও যোগিনীদের রাজত্ব। পুরুষদের নাকি এখানকার নারীরা "ভেড়া" করে দেয়। আসলে তন্ত্র সম্বন্ধে না জানার ফল এগুলো। মা, কৃপাময়ী।



    কামদেবতা এখানে কামাখ্যা মন্দির স্থাপন করেন বলে নাম "কামরূপ কামাখ্যা"। স্বপ্ন পেয়ে কোচবিহারের রাজা বিশ্ব সিংহ প্রতি ইটে এক রতি করে সোনা দিয়ে সপ্ত রথ আকৃতির মৌচাকের আদলে তৈরী মন্দিরটি তৈরী করেন ৷ সাতটি গম্বুজে রয়েছে তিনটি সোনার কলসী ৷ মন্দিরের চারটি কক্ষ - গুহ্য গৃহ এবং চলন্ত, পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির নামের তিনটি মন্ডপ ৷ কালাপাহাড় মন্দিরের ক্ষতি করলে রাজা নরনারায়ণ তা পুনর্নিমাণ করেন ৷ মন্দির চত্বরে আছেন দশ মহাবিদ্যা ও তাঁদের ভৈরব ৷ কামাখ্যার ভৈরব উমানন্দ আছেন সামনে দ্বীপে ৷ অম্বুবাচীতে দর্শন বন্ধ থাকে ৷ ১৫ বছরে একবার মায়ের মুখ দেখা যায় ৷ বশীকরণ, বাণ মারার বুজরুকি করে জগৎজননী মাকে সন্তানদের থেকে দূরে রাখা বা ভয় পাওয়ানো অহেতুক ৷

    তাই গিয়েছি গৌহাটি শহর থেকে চল্লিশ কিমি দূরে মায়াং গ্রামে ৷ চারটি আদিশক্তি ও ১৮-টি মহাশক্তি পীঠের অন্যতম ৷

    জয় মা কামাখ্যা
    জয়শ্রী কামেশ্বর
    জয়শ্রী উমানন্দ ভৈরব
    জয় ব্রহ্মপুত্র নদ.......

    (মঙ্গলময় শুভ অম্ববাচী আগামী ২২/৬/২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত্রী ২:৩২ থেকে শুরু, ইঃ ২৬/৬/২০২৩ সোমবার বেলা ২:৫৬ সমাপ্ত)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন