অন্ধকারে কিছু কন্ঠস্বর
[ 14 বছর আগে বাম সরকারের আমলে লালগড়ে যৌথবাহিনীর অপারেশন চলার সময় গুরুর পাতায় এই লেখাটি লিখেছিলাম। তারপর সুবর্ণরেখা এবং কংসাবতী নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অনেক মুখোস খসে পড়েছে। অনেক মুখে নতুন মুখোশ সেঁটে বসেছে।
আজ এই লেখাটি চোখে পড়ায় আমার বেশ হাসি পেল, কুলকুলিয়ে।
আপনাদেরও যদি হাসি পায় এই আশায় এটা কপি পেস্ট করে দিলাম। অবশ্যি আজকের বঙ্গে হাসির অন্য অনেক উপলক্ষ দেখা যাচ্ছে। ]
ডি: যেমন স্বপ্নাদ্য মাদুলি হয়, ছাগলাদ্য ঘৃত হয়, তেমনি কমরেড ভোদকা এই ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে মহাদেবের জটায় গঙ্গার মত মাথায় চড়ে বসলে ঝিমুনির ফাঁকে ফাঁকে কিছু অলৌকিক বা আধিভৌতিক দৃশ্যাবলী দেখা যায়। সেই সব চরিত্রের ভাষার বা রাজনীতির শুদ্ধতার জন্যে আমি দায়ী নই। )
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদ। রাত্রি, তৃতীয় যাম। বঙ্গদেশের জঙ্গলমহলে শালবনের ভিতর খানিকটা ফাঁকা জায়গা। হাওয়া নেই। না, কোন শিবারব নেই। গুমোট গরম। শুধু শোনা যায় কিছু কন্ঠস্বর
কোরাস: যুযূধান দুই শিবিরে যোদ্ধারা নিদ্রামগ্ন। জেগে আছে কিছু মশাল, ঘুমে ঢুলছে প্রহরী। তবু জেগে থাকে কিছু চোখ। কিছু চোখের পাতা কখনই বন্ধ হয় না।
---- এস, যারা জেগে আছ। এস, কথা বল। শব্দের অমোঘ শক্তি।এস, শব্দব্রহ্মের ওপর আমরা আস্থা রাখি।
প্রথম কন্ঠ: বিগত চারদিনের অভিযান সফল। ঝিটকার জঙ্গল ভেদ করে লালগড় থানা দখল করেছে আমাদের সশস্ত্র বল। বিশেষ প্রশিক্ষিত কোবরা ফোর্স, সিআরপিএফ আর অভিজ্ঞ কোলকাতা পুলিসের সম্মিলিত বাহিনীর সামনে মাওবাদীরা পালিয়েছে। তথাকথিত পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি কোন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। জনগণ মাওবাদীদের সাথে নেই। তিনটে জেলার আঠেরোটি থানাকে মাওবাদীদের প্রভাব মুক্ত করা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আসলে মাওবাদী কমিউনিস্ট বলে কিছু হয় না। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে মার্কসের নাম আছে,মাওয়ের নেই। খোদ চীনদেশে মাওয়ের নাম কেউ নেয় না, কয়েকমাস পরে বঙ্গদেশেও নেবে না।
দ্বিতীয় কন্ঠ: খিক্-খিক্-খিক্। এরা কাকে বোকা বানাচ্ছে? চারদিক দিয়ে এগুতে থাকা দলগুলোর মধ্যে মাত্র একটা দল লালগড় থানায় পৌঁছেচে।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় তিনদিন ধরে আটকে আছে একটা দল। অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়িকে উড়িয়ে দিয়েছি। লালগড় থানায় রাত্তিরে হামলা হয়েছে। কাঁটাপাহাড়ি ও আরো কিছু জায়গায় গুলির লড়াই চলেছে। একজন সি আর পি এফ জোয়ান মারা গেছে, বেশ কয়েকজন আহত। আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। আমরা পালাই নি। আমরা সব রণক্ষেত্রে আছি।
কোরাস: মোগল-শিখের রণে, মরণ আলিঙ্গনে,
কন্ঠ পাকড়ি, ধরিল আঁকড়ি, দুইজনা -দুইজনে।
দংশনক্ষত শ্যেনবিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গসনে।
প্রথম কন্ঠ: যদিও দিল্লি সরকার এই মাওবাদীদের গোটা দেশে নিষিদ্ধ করেছে তবু আমরা বঙ্গদেশে এদের রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করবো।
দ্বিতীয় কন্ঠ: কোথায় ? কোথায় মোকাবিলা করবে?
প্রথম কন্ঠ: কেন? জনগণের কাছে যাব, যাব তৃণমূলে। জনতাকে বোঝাবো। এইসব সন্ত্রাসবাদীদের মুখোশ খুলে দেব। জনতা বুঝবে---- কেবল আমাদের পার্টিই পারে জনগণের সমস্যার সমাধান করতে।
কোরাস: আমরা পথে পথে যাব সারে সারে,
তোমার নাম নিয়ে ফিরিব বারে বারে।
দ্বিতীয় কন্ঠ: জনগণ পশ্চিম মেদিনীপুরে তোমাদের ঘরছাড়া করেছে, পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। তোমাদের হোলটাইমার অনুজ পান্ডের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। জনতা তোমাদের খুব বুঝেছে।
প্রথম কন্ঠ: বাজে কথা। এক পরিবারের মধ্যেও মনকষাকষি- ভুলবোঝাবুঝি এসব হয়। আমাদেরও কিছু ভুল ছিল। এবার শুধরে নিচ্ছি। তারপর জনগণ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঠিক আমাদের কাছেই ফিরে আসবে। বাইচুং ফিরে আসেনি লাল-হলুদ শিবিরে? আদিবাসী খেটে খাওয়া মানুষও ফিরে আসবে লাল শিবিরে। বাকিটা মিডিয়ার প্রচার।
আমরা ঘরছাড়া মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। রেশন ডিলারদের বলেছি কোটার অতিরিক্ত চাল দিতে। এবার পশ্চিম মেদিনীপুরে কলেজ হবে, ইউনিভার্সিটি হবে। জঙ্গলমহাল-লালগড়ের নাম সামনের সারিতে উঠে আসবে।
কোরাস: যেমন আমলাশোল, যেমন নন্দীগ্রাম, যেমন সিঙ্গুর---- এদের নাম এখন সারা ভারত জানে। এখন গোটা দেশ শুনছে----লালগড়, সারেঙ্গা,পিড়াকাটা, ভীমপুর,গোয়ালতোড়।
দ্বিতীয় কন্ঠ: বাপধন আমার! অ্যাদ্দিন কেন এসব হয়নি? তোমাদের অফিসছাড়া, ঘরছাড়া না করা অব্দি মনে হয়নি এইসব ছোটলোকদের এলাকায় কিছু করা উচিৎ? এই এলাকায় কেন, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সীমানা জুড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ সারা বছর আধপেটা খেয়ে থাকে। এগুলো অমর্ত্য সেনের প্রতীচী সংস্থার স্টাডি বলছে, ইপিডব্ল্যু পত্রিকা বলছে, তোমাদের নিজের বিশেষ স্টাডি রিপোর্ট বলছে,-- তারপরও কোন কাজ হয় নি কেন?
প্রথম কন্ঠ: কাজ একেবারে হয় নি এমন তো না। মানছি এই ব্যবস্থায় ডেলিভারি সিস্টেম বেশ উইক। প্রত্যন্ত এলাকায় আরও । কিন্তু তোমরা? তোমরা কি দিয়েছ আদিবাসী জনতাকে? আতংকের ছায়ায় জীবন কাটানো ? মানুষের আদিম প্রবৃত্তিকে ওস্কানো? কী পেলে পার্টির একজন হোলটাইমারকে মেরে? বাড়িতে আগুন লাগানো আর কিছুই নয়, লুম্পেন মানসিকতাকে উস্কে দেয়া। লুম্পেন প্রোলেতারিয়েতকে দিয়ে বিপ্লব হয় না, এটা তো মানবে?
দ্বিতীয় কন্ঠ: আরে, বিপ্লব তো তোমাদের এজেন্ডাই নয়, ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বরং ভাব আগামী দিনে কোন কোন দলকে প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তকমা দিয়ে একসঙ্গে ভোটে যাবে। আর অনুজ পান্ডে? বিহার থেকে এসে সুদের কারবারে ফুলে ফেঁপে ওঠা ঠিকেদার যার তেত্রিশ বিঘা জমি সিলিংয়ে গেছে, যে পঞ্চায়েতের মোনোপলি ঠিকেদার। একশ' দিনের রোজগারের ফান্ড, মিড্ডে মিলের সরকারী ফান্ড যার পকেটে সেই তোমাদের দলের নেতা? এটাই তো তোমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ওদের কী দিয়েছি? দিয়েছি আত্মসম্মান। সরকারি ডোলের ভিক্ষের ওপর ভরসা না করতে শিখিয়েছি। তোমরা যেগুলো ৩২ বছরেও করনি, সেগুলো আমরা করা শুরু করেছি। তোমাদের রাজত্বে হাসপাতালে ডাক্তার আসতো না, এখন আছে। রাস্তাঘাট ছিল কাগজেকলমে। এখন হয়েছে রাস্তাঘাট-স্কুলবাড়ি সব।
প্রথম কন্ঠ: তাই নাকি? শুনতেও ভালো লাগে। বেশতো, চালিয়ে যাও। অনেক এনজিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এইসব কাজ করছে। সরকারের পক্ষে তো আর সবকিছু দেখা সম্ভব নয়। আমরা তো বাধা দিইনি। এখন ভালো ভালো কাজকম্ম ছেড়ে পুলিশ আর আমাদের দলের লোককে এলাকা ছাড়া করার ব্রত শুরু কল্লে কেন?
দ্বিতীয় কন্ঠ: পুলিশ আর তোমাদের মোটরবাইকওলা হার্মাদবাহিনী ঘরে ঘরে ঢুকে আদিবাসী মেয়েপুরুষ,নাবালিক সবাইকে পেটাচ্ছে, থালাবাসন, হাঁড়িকুড়ি সব ভেঙে দিচ্ছে। যাকেতাকে ধরে এনে কেস দিচ্ছে। এই একচোখো হার্মাদের বড়ভাই জল্লাদ পুলিশবাহিনীকে আমরা মানবো কেন?
প্রথম কন্ঠ: আচ্ছা! তোমরা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবে আর আমরা রামধুন গাইবো? পেয়েছটা কি ? দেশে আইনকানুন বলে কিছু আছে কি নেই? জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের বঙ্গের অধীশ্বর করেছে। আমরা সংবিধানের শপথ নিয়ে কাজ করছি। কাজ করলে কিছু ভুল হতেই পারে। তার জন্যে অনেক ফোরাম আছে। আইন-আদালত আছে, সেসব পথে না গিয়ে নিজেদের হাতে কানুন তুলে নেয়া? কেউ বরদাস্ত
করবে?
কোরাস: আইন-আদালত? , সব জানে সোরেন-মেঝেন-মুর্মূ-কিস্কু-মাহাতোদের মেয়েরা। লালগড়ে পুলিশ অফিসার সন্দীপ সিংহরায় যা বলে তাই আইন, যা করে তাই আদালত। আইন-আদালত? "" লালা, বাংলা ছেড়ে পালা।''---- বঙ্গে আমরা যা বলি তাই আইন, যা করি তাই আদালত।
দ্বিতীয় কন্ঠ: যে মাইন পেতেছে তাকে ধর গিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে হামলা হয়েছে বলে গাঁকে গাঁ পেটাবে? আবার এখন বড় মুখ করে বলা হচ্ছে আমরা যৌথ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি মিনিমাম বলপ্রয়োগ করতে। জনগণের ওপর যাতে অযথা অত্যাচার না হয়।
প্রথম কন্ঠ: কথাটা সত্যি, এমনি নির্দেশই দেয়া হয়েছে যৌথ বাহিনীকে। খিল্লি করতে পার, কিন্তু ভেবে দেখ গত সাতদিনে লালগড় থানার দখল নিয়েছে বাহিনী। ওদের ওপর চলেছে চোরাগোপ্তা গুলি । ফেটেছে মাইন, কাটা হয়েছে রাস্তা । আহত হয়েছে কয়েকজন আর সর্দিগর্মি হয়ে মারা গেছে একজন। উল্টোদিকে? একজন আদিবাসীও মরেনি, বা আহত হয় নি। উল্টে আশ্রয় পেয়েছে আমাদের ত্রাণ শিবিরে, পেয়েছে চাল।
দ্বিতীয় কন্ঠ: টিভি দেখা বন্ধ করেছ নাকি? সার্চ করার নামে যে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পেটাচ্ছে,দোকানের চালা ভাঙ্ছে, বাসন-কোসন ভেঙে দিচ্ছে--- তারবেলা?
প্রথম কন্ঠ: ওগুলো অপ-প্রচার। টি আর পি রেট বাড়ানোর জন্যে মিডিয়ার চক্রান্ত। কোনসময়ের শট কোথায় জুড়ে দেখাচ্ছে, কে জানে? আজকালকম্প্যুটারের কারসাজিতে ষাট বছরের বুড়ির শরীরে জুড়ে দেয়া যায় ঐশ্বর্য্যার মুখ। আর একটা কথা ভাব। যে মহল্লায় মাইন ফেটেছে বা গুলি চলেছে সেখানে প্রত্যেকটি মানুষ সাস্পেক্টেড মাওবাদী, প্রত্যেকটা বাড়ি সাস্পেক্টেড হাইড আউট। কাজেই যদি--।
দ্বিতীয় কন্ঠ: আর অপর্ণা সেনের মুখ, শাঁওলি মিত্রের মুখ? সেগুলো ও কি কম্প্যুটারে----।
প্রথম কন্ঠ: হুঁ: ! ঐ না সুশীল, না বিদ্বজ্জন? এরা শুরু থেকেই আমাদের সরকারের পেছনে লেগেছে। সেই নন্দীগ্রামের সময় থেকেই। ওরা ঘাসফুলের আরেকটা ফ্রন্ট। ওখানে যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলছে, ১৪৪ ধারা আছে। সেখানে গেছে ফাজলামি করতে। কালো কাঁচের আড়ালে মাওবাদী গৌর চক্কোত্তিকে কোলকাতা নিয়ে আসতে। লালগড় কি নন্দন, না বলিউড? যার যেটা কাজ সেটা না করে খালি সরকারের পেছনে কাঠি করা। এই জন্যেই তো বঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে।
কোরাস: কেমন তোদের পুলিশ? ওরে, কেমন তোদের পুলিশ?
সার্চ করছে স্কুটার- গাড়ি, কালোচশমা, সাদা দাড়ি
তবু বেড়াল যায় পালিয়ে-- এসব মানতে বলিস?
এরা যদি ফুল হয়, তো ওরা কিন্তু ফুলিশ।
দ্বিতীয় কন্ঠ: তাই এখন দাদা-দিদিদের ১৪৪ ধারার কেস দেবে? এত ভয় পেয়েছো কেন?
প্রথম কন্ঠ: কোন শালা ভয় পেয়েছে? ভয় পেয়েছে মাওবাদীরা। ওরা নিরস্ত্র জনগণকে একে-৪৭ দেখিয়ে মিটিংয়ে নিয়ে যায়, মিছিলে নিয়ে যায়। মানবঢাল তৈরি করায়। তারপর যখন আমাদের বন্দুক কথা বলতে শুরু করে তখন জঙ্গলে পালিয়ে যায়। আমরা কমিউনিস্ট,ভেড়ুয়া নই, মারতে পারি, মরতেও পারি।
দ্বিতীয় কন্ঠ: আস্তে কইয়েন কর্তা, ঘুড়ায় হাসবো। সেইসব দিন গেছে। এখন পুলিশ থাকলে আপনারা থাকেন। পুলিশ না থাকলে নাই। ধরমপুরে কী হয়েছিলো? আদিবাসীদের মিছিলের ওপর অনুজ পান্ডেরা গুলি চালিয়ে তিনজনকে মারলো। মিছিল ছত্রভঙ্গ। এল মাওবাদী স্কোয়াড, পাল্টা লাশ পড়লো। আনন্দে উন্মত্ত আদিবাসী জনতা আগুন লাগালো পান্ডের বাড়িতে, তোমাদের অফিসে। লালগড় থানার সেপাইয়েরা থানার মধ্যেই রইলো। আচ্ছা, একট কথা বলতো। খেজুরি আর কোথায় কোথায় যেন তোমাদের দুই কমরেডের বাড়ি থেকে ভালরকম অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে তোমাদের পুলিশ। তা আইনের চোখে তো সবাই সমান, তাহলে ঐ দু'জন এখনও জেলের বাইরে আছে কি করে?
প্রথম কন্ঠ: এখানে ওসব হাতিয়ার পুলিশ ধরেনি, কমরেডরা নিজেরাই পুলিশকে জানিয়েছেন। তোমরাও খবর দাও কোথায় কোথায় মাইন পোঁতা আছে, কোথায় আছে গোলাগুলির স্টক, কোন গর্তে লুকিয়েছে কিষেনজী, কার বাড়িতে রাত কাটাচ্ছে ঘাসফুলের ছাতাবরদার? দেখ, তোমাদের পুলিস কিচ্ছু করবে না। আইনের চোখে সবাই সমান।
দ্বিতীয় কন্ঠ: আর ১৪জুলাইয়ের সরকারের সাথে বৈঠক?
প্রথম কন্ঠ: বল্লাম তো, আগে হাতিয়ার ফেলে দাও, তারপর।
দ্বিতীয় কন্ঠ: কই, নাগা-মিজো ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার জন্যে ভারত সরকার তো এমন পূর্বশর্ত রাখেনি!
প্রথম কন্ঠ: অ্যাই! একদম ফালতু কথা বলবে না। তোমরা কোন নাগা-মিজো না, তোমরা বাঙালী। আর আমরাও কোন আমেরিকার ধামাধরা দিল্লী সরকার নই। কোন ঘাসফুল-নেকু-পুষু নই। শোন, কাল আমাদের যৌথ বাহিনী রামগড়-লালগড় ২৫ কিলোমিটার সড়ক মুক্ত করবে। ভালো চাও তো হাতিয়ার সারেন্ডার কর। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমাদের সাহায্য কর।
দ্বিতীয় কন্ঠ: নইলে?
প্রথম কন্ঠ: নইলে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়বে। হয় তোমরা , নয় আমরা। এর মাঝামাঝি কিছু নেই। চল্লাম।
কোরাস: ধিক তোর ভ্রাতৃদ্রোহ! পান্ডবের কৌরবের এক পিতামহ , সেকি ভুলে গেলি?
( সাউন্ড ট্র্যাকে সাঁজোয়া গাড়ি চলার শব্দ, কনভয়ের শব্দ। ইতস্তত: কিছু র্যাট্- ট্যাট্-ট্যাট-। কিছু স্লোগান, ভারী বুটের মার্চ। সন্নাটা)
কোরাস: কেটে গেছে সাতদিন। কয়েক হাজার অর্ধসৈনিক বল। কোবরা, বি এস এফ, সি আর পি, গ্রে-হাউন্ড-- কত নাম। কয়েক হাজার গ্রামবাসী। ত্রাণশিবিরে, চালের লাইনে, পাত পেড়েছে রাজনৈতিক দলের খিচুড়ি খেতে। ক্ষুধাতুর শিশুরা তো চায়না স্বরাজ, চায় দুমুঠো ভাত, একটু নুন; বেলা বয়ে যায়, খায়নিকো বাছা! কচি পেটে তার জ্বলে আগুন। কে জাগে? এই গুমোট দমচাপা রাত্তিরে কে জাগে? লালকমল না নীলকমল? কথা বল, লালকমল- নীলকমল কথা বল।
তৃতীয় কন্ঠ: তো? এই তোমাদের গেরিলা যুদ্ধ?
দ্বিতীয় কন্ঠ: হ্যাঁ, এই আমাদের গেরিলা যুদ্ধ। গেরিলা যুদ্ধ এমনিই হয়।
তৃতীয় কন্ঠ: কেমনি হয়? লালগড়ে যৌথবাহিনী, রামগড়ে যৌথবাহিনী। এত একেবারে"" বিনা সংগ্রামে আজমের গড় দিবে মারাঠার করে''।
দ্বিতীয় কন্ঠ: স্টারানন্দ দেখ?
তৃতীয় কন্ঠ: হ্যাঁ, কেন বলতো?
দ্বিতীয় কন্ঠ: ছাই দেখ। খেয়াল করেছ যে রামগড় দখল মানে ঐ থানা থেকে আমাদের লাগানো তালাটা খুলে নেয়া মাত্র। খেয়াল করেছ যে রাত্তিরে ঐ বিজয়ীবাহিনী লালগড়ে ফিরে গেছে? অর্থাৎ রাত্তিরে রামগড় আমাদের। দেখছ না যে আগের দিনেও আমরা রামগড়ে বিরাট জনসভা করেছি। আজকে কাঁটাপাহাড়িতে। প্রতিরোধ জনতাকে সাথে নিয়ে। আমরা মাওবাদী গেরিলারা জলের মধ্যে মাছের মত।
তৃতীয় কন্ঠ : মানে ?
দ্বিতীয় : উফ্! এখন মানে বোঝাও। পড়াশুনো ছেড়ে দিয়েছ নাকি? এর চেয়ে তো বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের রিটায়ার্ড ডায়রেক্টররা বেশি জানে।
কোরাস : "" মানিক, ওরে মানিক রে!
নামতা পড় খানিক রে।''
দ্বিতীয়: শোন। গেরিলা যুদ্ধের প্রাথমিক এবং মধ্যপর্যায়ে সরকারী বাহিনীর ফায়ার পাওয়ার, ব্যাক আপ, সাপাÔই লাইন, সবই গেরিলা দের থেকে একশ' গুণ বেশি থাকে। ফলে গেরিলা কখনই সামনা সামনি খন্ডযুদ্ধ বা ট্রেঞ্চে থেকে লড়াই করেনা। গেরিলা ওয়ারফেয়ার একেবারেই পজিশনাল ওয়ারফেয়ার নয়। এরা জায়গা দখলের লড়াই লড়ে না। এরা করে চলমান যুদ্ধ। লক্ষ্য জায়গা দখল নয়, লক্ষ্য দুশমনের শক্তিক্ষয়, একটু একটু করে, এখানে ওখানে ব্লিডিং। আর গেরিলারা নিজেদের শক্তি বাঁচায়, সংহত করে। একটু একটু করে।
তৃতীয়: বুঝলাম না।
দ্বিতীয়: ধেত্তেরি! ফিলিমে দ্যাখনি বক্সিংয়ের রিংয়ে একটা দানবের সঙ্গে রোগাপট্কা হিরো কেমনি করে লড়ে? সে দানবের নাগালের বাইরে নেচে নেচে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। দানবকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়--- রিঙের একোণ থেকে ওকোণে। সুযোগমত ছোট ছোট জ্যাব্-- রিবস্ এ, হাতের বাইসেপস্ এ। নির্ণায়ক লড়াই হয় অনেক পরে।
এখনো হাঁ করে আছ? মাওয়ের লাইন শুনিয়ে দিচ্ছি। এরপরে না বুঝলে ভাঁড় মে যাও।
----শত্রু আক্রমণ করে, আমরা পালাই। শত্রু তাড়া করে, আমরা ছড়িয়ে পড়ি। শত্রু ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আমাদের অনুসরণ করে, আমরা বড় দল হয়ে পালটা আক্রমণ করি। শত্রু পালায়, আমরা তাড়া করে নিকেশ করি। এরপর বুঝ লোক, যে জান সন্ধান।
তৃতীয়: এভাবেই জিতবে? চল্লিশের দশকের চীন আর আজকের ভারত এক?
দ্বিতীয়: এভাবেই বস্তারে জিতেছি। এভাবেই নেপালে জিতেছে, এভাবেই শ্রীলংকায়--------।
তৃতীয়: থামলে কেন? লিট্টের কথা থাক। খেয়াল করেছ কি যে বস্তারে তোমাদের বিরাট সাফল্য শুধু গভীর জঙ্গল আর প্রত্যন্ত এলাকায় সীমিত।
দ্বিতীয়: লালগড়-জঙ্গলমহলও তাই। কাজেই যত কোম্পানি আসুক না কেন-- যে পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল, সে পথ দিয়ে ফিরবে নাক তারা। দিবে আর নিবে, মিলাবে-মিলিবে, যাবে না ফিরে।
তৃতীয়: আমি অন্যরকম ভাবি,"" হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনতশিরে''।
দ্বিতীয়: বাতেলা ছাড়। গরীব আদিবাসী জনতা যুগযুগ ধরে নতশির হয়েই রয়েছে।এবার উল্টো শেখার সময়।
কোরাস: "" হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর, হও উন্নতশির নাহি ভয়।
ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান, হও সবে আগুয়ান, সাথে আছে ভগবান,
হবে জয়।''
তৃতীয়: হুঁ:, মানবঢাল? নারীশিশুদের এগিয়ে দেয়া? "" হও সবে আগুয়ান''? হয়েছে। সরকারী চাল পেতে লাইন লাগিয়েছে, তারপর ঘাসফুলের লঙ্গরে খিচুড়ি খেতে বসেছে।
দ্বিতীয়: তুমিও যেমন! তোমাদের মত লোকের জন্যেই চ্যানেলের টি আর পি রেট বাড়ে। কোথায় নারীশিশুদের ঢাল করে সামনে এগিয়ে দেয়া হয়েছে? হ্যাঁ, আমাদের দলে নারীপুরুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে লড়ে। আর খিচুড়ি খাওয়া? চাল নেয়া? আরে, গত নির্বাচনে পাব্লিক বামেদের লঙ্গরে খেয়ে ডাইনে ভোট দেয় নি? ঐ চাল তো গেরিলারাও খাচ্ছে! এটাই তো মজা।
তৃতীয়: একটা জন-আন্দোলনকে স্যাবোটাজ করলে? উস্কে দিলে রাষট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে?
দ্বিতীয়: বাজে কথা। এই আন্দোলন থেকে যতটুকু হবার তা হয়ে গিয়েছিল। ছত্রধরদের বারোটা দাবির মধ্যে প্রায় দশটাই সরকার মেনে নিয়েছিল। সন্দীপ সিংহ রায়ের ওপর বিভাগীয় অ্যাকশান শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাকি রইল মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া বা পুলিশের এস পি এবং অন্যান্য দের কানধরে ওঠ্বোস করা। ওটা যে হবে না সে তো তুমিও জানো, আমিও জানি। শালারা থাড্র্ফ্রন্ট নৌটংকী নিয়ে জনতার কাছে ক্ষমা চায়নি তো চিন্তামণিকে কানা করে দেয়া নিয়ে চাইবে। তারপর?
তৃতীয়: তারপর এর রাজনৈতিক প্রভাবে এলাকায় পরিবর্তন আসতো। একদিনে নয়, দিনে দিনে। সেই ধৈর্য্য নেই কেন?
দ্বিতীয়: অ্যাই! আমাদের সঙ্গে ধৈর্য্য মারাবে না। ধৈর্য্যের তুমি কী জান হে? লালগড় একদিনে হয়েছে? দশটি বছর, দশ বছর দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে গেছি। হার্মাদদের দাদাগিরি সহ্য করেছি। আর রাজনৈতিক প্রভাব? আমরা না হলে এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে সবুজ পার্টি। তাতে আদিবাসী জনতার কী বাল আসে যায়?
তৃতীয়: সে কি? তোমরা দিদিদের হয়ে দাদাদের মারনি?
দ্বিতীয়: গোল্লায় গেছ। সিরিয়াস ব্যাপারকে টিভি চ্যানেলের দাদাদিদিদের লড়াই বানিয়ে দিলে। আমাদের কাছে ফিকেলাল , গেরুয়া আর সবুজ-সবার শ্রেণীচরিত্র এক। কোঈ নাগনাথ তো কোঈ সাঁপনাথ! কাজেই আগে কেশপুর ঘটনার লক্ষণ শেঠদের কাছ থেকে গোলাবারুদ নিয়ে ঘাসফুলদের পেঁদিয়েছি, আবার নন্দীগ্রামে ঘাসফুলদের থেকে নিয়ে নকলী লালদের। তোমরাও মাইরি!খালি লালকাপড়ের কানি দেখে সেন্টি হও ক্যানো? এমনিভাবে তো একদিন বজরঙ্গবলীর মন্দিরে গিয়ে ভজন গাইবে। ওনার ঝান্ডাও লাল কি না!
তৃতীয়: বেশ! তবে প্যাঁদাপেঁদির মহান পরম্পরা? খুন কা বদলা খুন? এইসব তোমাদের রণনৈতিক লক্ষ্য? বোকচন্দরের মত কথা বোল না।
দ্বিতীয়: বল্লাম তো, ঐ আন্দোলনের আর কোন ভবিষ্যৎ ছিল না। আমরা অ্যাকশানের মাধ্যমে একে লড়াইয়ের উচ্চস্তরে নিয়ে গেলাম।
তৃতীয়: মানে? তোমরা কি তাহলে ক্ষমতাদখলের লড়াই শুরু করেছ?
দ্বিতীয়: তুমি খালি বোকচন্দর নও, ন্যাকাচৈতনও বটে! আমরা কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী কেন? পার্লিয়ামেন্ট নামক শুয়োড়ের খোঁয়াড়ে গিয়ে খানকিবাজি করবো বলে?
তৃতীয়: তুমি বিশ্বাস কর যে আজকের বিশ্বেওই ভাবে বিপ্লব হতে পারে? পরিবর্তন আসতে পারে?
দ্বিতীয়: তুমি বিশ্বাস করতে যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়তে পারে? লেম্যান ব্রাদার্স, জেনারেল মোটর্স দেউলে হতে পারে? অপারেশন করে ছেলেরা মেয়ে বা মেয়েরা ছেলে হতে পারে? জন্তু-জানোয়ারের ক্লোন হতে পারে?
তৃতীয়: দুটো এক কথা হল?
দ্বিতীয়: তোমার যেমন প্রশ্ন, তেমনি আমার উত্তর। যাকগে, তুমি বল এছাড়া অন্য কোন বিকল্প মডেলের সন্ধান জানা আছে? কি করতে পারতো এই মাহাতোরা?
তৃতীয়: আমার জানা নেই। আমি সবজান্তা মাস্টারমশায় নই। তবু মনে হয় বাকি দুটো দাবিকে ধরে রেখে আন্দোলন বছরখানেক টানতে পারতো। এই সুযোগে চাপ সৃষ্টি করে কিছু পুলিশ অফিসারের ওপর অ্যাকশান নিতে বাধ্য করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতো। অন্য রাজ্যে হচ্ছে।এই ব্যবস্থার মধ্যেও , জন -আন্দোলনের চাপে। সবচেয়ে বড় কথা গ্রাসরুট লেভেলে জনগণের সমিতি গড়ে উঠতো সরকারি এবং পঞ্চায়েতের কাজকম্মের তদারকির জন্যে। সেটা কম কথা নয়
দ্বিতীয়: কোথায় হচ্ছে? গুল মেরো না।
তৃতীয়: আমি অল্পই জানি। তবু রাজস্থানের অরুণা রায়- নিখিল দে , এঁদের মজদুর-কিসান সংঘর্ষ সমিতি যেভাবে আন্দোলন করে ""রাইট টু ইনফর্মেশন অ্যাক্ট'' পাশ করালো, সারা দেশে ছড়িয়ে দিল।
দ্বিতীয়: তাতে কচু হবে। কাগজপত্তরে লেখালিখিতে সময় নষ্ট হবে। জনতাকে বোকা বানানো হবে। উকিলের পকেট ভারি হবে।
তৃতীয়: তুমি ঠিক করে ঐ কানুনের ধারা গুলো পড়নি। এর জন্যে কোন উকিলের দরকার নেই। মাত্র শুরু হয়েছে। এটা হল সরকারী আমলাতন্ত্রকে পাব্লিকের কাছে দায়িত্বশীল করার প্রথম ধাপ, সরকারী কাজের সোশ্যাল অডিট করার প্রথম কদম।
দ্বিতীয়: হরি! হরি! কোথায় বিপ্লব আর কোথায় আইন তৈরি! বন্দুক ফেলে দিয়ে উকিল হব?
তৃতীয়: কে বলেছে উকিল হতে? বলা হচ্ছে দীর্ঘকালীন জন-আন্দোলনে বিশ্বাস রাখতে। অনেক সময় মূলত:অহিংস আন্দোলনকে বাঁচাতে সশস্ত্র প্রতিরোধ দরকার হয়। সেটা ভুল নয়। কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রাম যদি আন্দোলনের প্রধান রূপ হয়? কিছুদিন পরে কী হয়? আজকে কানু সান্যাল নকশালবাড়িতে আছেন। কি করছেন? ওনার আন্দোলন কোথায়? জঙ্গল সাঁওতাল মিনিবাসের পারমিট পেয়েছিলেন। মদে চূর হয়ে থাকতেন। নকশালবাড়ির ২৫বছর পূর্তিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন-- একসময় মনে হল আমার কাঁধের ওপর বোঝাটা বড় বেশি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকে তোমরা লালগড়ে তেমনি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছ না?
কোরাস: এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও,
ভারের বেগেতে চলেছি কোথায়,
এ যাত্রা মোরে থামাও।।
দ্বিতীয়: বিপ্লবের পথ মহাপ্রস্থানের পথ। একসঙ্গে চলা শুরু হলেও পথের বাঁকে ওরকম অনেকেই হারিয়ে যায়, ঢলে পড়ে। তাতে লড়াই থেমে যায় না।
তৃতীয়: একটা কথা সোজাসুজি বল। আজকে থানা-পুলিশ বয়কট করছ, তোমাদের রাজত্বে কি হবে? থানা-পুলিশ থাকবে কি থাকবে না?
দ্বিতীয়: আলবাৎ থাকবে। ওরা হবে জনগণের মিলিশিয়া।
তৃতীয়: থাকবে? কোর্ট-কাছারি, জেল থাকবে? পাগলা গারদ? তাও থাকবে? ক'টা রাজনৈতিক দল থাকবে?
দ্বিতীয়: সব থাকবে, । ওরে পাগলা! ভাল করে পড়। পুঁজিবাদ থেকে সাম্যবাদ একটা বিরাট লাফ। এর মাঝে কিছু ট্রানজিটরি স্টেজ আছে। আমরা ওদের রাষ্ট্র্যন্ত্র ভাঙ্ছি, নিজেদেরটা গড়বো বলে। সেটা হবে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কতন্ত্র। তাতে সবই থাকবে
খালি অধিকাংশ জনগণের পক্ষে সামান্য মাইনরিটির বিরুদ্ধে দমন চলবে।
কোরাস: সেদিন আসবে কবে?
যে মাসেতে রোববার নেই
সেই মাসেতে হবে।।
দ্বিতীয়: তফাৎটা হল রাজনৈতিক দল একটাই থাকবে। আমরা অন্য কোন বুর্জোয়া দলকে স্বীকার করি না।
তৃতীয়: তাহলে তো সেটা খালি তোমাদের দলের একনায়কতন্ত্র দাঁড়ালো। কিন্তু,সমাজবাদ হল গণতন্ত্রের উচ্চতম রূপ; যদি বহুদলীয় ব্যবস্থা না থাকে, আমার ভিন্নমতের অধিকার না থাকে, কোন চয়েস না থাকে-- তাহলে সেটা কেমন গণতন্ত্র? তোমাদের রাজত্বে আমার মত লোকের স্থান কোথায়?
দ্বিতীয়: পাগলা গারদে। খামোখা জ্ঞান দিয়ে আমার সময় নষ্ট করলে। তোমাদের পরে দেখছি।
কোরাস: "" আমরা দুজনা দুইটি ডালের পাখি,
একটি রজনী, একটি শাখার শাখী।
তোমাতে-আমাতে মিল নাই, মিল নাই,
-- তাই বাঁধিলাম রাখী।''
জুন ২৯, ২০০৯