তখন কলেজ টলেজে পড়ি। সরস্বতী পুজোর দিন নিয়ম করে মেয়েদের স্কুলের সামনে ঘোরাঘুরি করছি, যেমন আগের কয়েক বছর ধরে করে আসছি। সঙ্গে এক বন্ধু আছে। সে অবশ্য এইসব "বিষয়ে" বেশ পারদর্শী। আমরা তার পরামর্শ নিই, এবং সেই পরামর্শ অনেকেরই কাজে এসেছে। সে আমাকে বলল - শোন সরস্বতী পুজোর দিন কোন অচেনা স্কুলের মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে টুরতে যাবি না। জিজ্ঞেস করলাম কেন? সরস্বতী পুজোর দিনই তো ভালো, পবিত্র দিন, পড়াশোনার চাপ নেই, টিচাররা স্কুলের মধ্যেই ব্যাস্ত।বন্ধুটি বলল - তোর দ্বারা কিস্যু হবেনা ( ঠিকই বলেছিল, কিসুই হয়নি) বললাম অচেনা মেয়ের সঙ্গে।
- আরে অচেনা তো চেনা হয়ে যাবে, আগে তো কেউ রাজি হোক!
- ছাগল। সরস্বতী পুজোর দিন মেয়েরা কী পোশাক পরে?
- কেন, শাড়ি পরে। ছোট বড় সব মেয়েরাই। নার্সারি থেকে টুয়েলভ অবধি
- ঠিক বলেছিস। তোর অবজারভেশন আছে। আচ্ছা বলতো আজ কোন শাড়ি পরা মেয়েকে দেখে আন্দাজ করতে পারবি সে কোন ক্লাসে পড়ে?
- না, পারবো না
- ঠিক। এইজন্যই বলছিলাম যে হয়তো তোর ইশারায় কোন মেয়ে তাকিয়ে হেসে ফেলল আর তুই ভাবলি পটে গেছে। তারপর দুজনে ফুসুর ফুসুর করে বেড়াতে বের হলি। কিছুক্ষণ যাবার পর সে হঠাৎ ললিপপ খেতে চাইল।
- দুর! কী যে বলিস। ললিপপ তো বাচ্চারা খায়। বড় মেয়েরা ফুচকা খেতে চাইতে পারে বা এগরোল
- এই তো, তোর বুদ্ধি একটু খুলেছে। এই জন্যই বলছি শাড়ি পরা মেয়ে মানেই উঁচু ক্লাসের মেয়ে নয়, ধর তুই যাকে পটালি সে বড়জোর ফাইভ সিক্সে পড়ে, বয়সের তুলনায় লম্বা, ভেবেছিলি নাইন টেন এর মেয়ে, কিন্তু আসলে বাচ্চা। তোর প্রচেষ্টা পুরো জলে। ললিপপ খাবার পরে হয়তো বলবে আমার সঙ্গে রিঙ্গা রিঙ্গা রোসেস খেলতে হবে।
- অ
এরপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। চুলে পাক ধরেছে, চোখে চশমা উঠেছে। এক সরস্বতী পুজোর দিন বেলার দিকে কোন একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছি। ভাবলাম সেই গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে ঘুরে যাই, ছোটবেলায় কত ঘোরাঘুরি করতাম! স্কুলের সামনে যথারীতি মেয়েদের ও তাদের অভিভাবকদের ভীড়। হঠাৎই দুটি একরকম শাড়ি পরা মেয়ের দিকে নজর পড়ল। বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে, দুজনকে প্রায় একই রকম দেখতে শুধু একজন রোগা পাতলা আর একজন ভারিক্কি চেহারার। আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে রোগা পটকাটি পাত্তা দিল না, তবে ভারিক্কিটি আড়চোখে দেখে নিল। তার মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে পারলাম না (জীবনে কত কিছুই না বোঝা থাকে)। আবার চলতে শুরু করলাম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা শোভনীয় নয়। যেতে যেতে মনে পড়ল হ্যাঁ, ঐ ভারিক্কি চেহারার মেয়েটিকে বছর তিরিশ আগে দেখতাম বটে। তখন সে ঐ স্কুলের ছাত্রী। বর্তমানে তার কন্যা ঐ স্কুলেই পড়ে, অর্থাৎ রোগাসোগা মেয়েটিই তার কন্যা। দুজনকে প্রায় একই রকম দেখতে! কি করে বুঝবো বলুনতো?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।