শঙ্খ ঘোষ নেই, বিশ্বাস হয়না। ঠিক যেমন বিশ্বাস হয়না, রবীন্দ্রনাথ নেই, বা ভারতচন্দ্র নেই। কারণ না থাকাটা অসম্ভব। এপিজেনেটিক্সই বলুন, আর মিউটেশন, মোদ্দা কথা হল, এঁরা বাঙালির হাড়-মজ্জা ছাড়িয়ে ডিএনএ তে ঢুকে গেছেন। আর বার করা সম্ভব না। এখনও কারো অপ্রাপ্তির আফশোষ দেখলে, আমরা তাকে রবীন্দ্রপংক্তি দিয়ে সান্ত্বনা দিই - নদীর এপার কহে... ইত্যাদি, কারও ঢক্কানিনাদ দেখলে বলি, মনে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির। আমাদের সন্তানের জন্য "যেন থাকে দুধে-ভাতে", আর "আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক" বলে প্রার্থনা মিলে-মিশে যায়। আমাদের শহরের মুখ আজও ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। আমরা আজও তোমাকে ভীষণ বকি আড়ালে, আর মাঝে মাঝে আফশোষ করি, তুমি আর নেই সে তুমি।
কিন্তু এ তো আমজনতার জিন এর গপ্পো। কবিরা কী ভাবেন? যাঁদের নিজেদের লেখার পংক্তিও আমজনতার উচ্চারণে মিশে আছে, তাঁদের উচ্চারণে কীভাবে থেকে যান পুরোনো কবিরা? কীভাবে রক্ত, মজ্জা এবং নতুন কবিতার সংশ্লেষে থেকে যান পুরোনো কবিরা, কবিদের ধারণাজগতে কীভাবে থেকে যান শঙ্খ ঘোষ, তাঁর নরম এবং দৃঢ়চেতা, সুমিষ্ট কিন্তু প্রত্যয়িত উচ্চারণ সহ? জানা অসম্ভব না একেবারেই, কারণ, এই নিয়েই গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশ করছে দুটি বই।
প্রথম বইটি লিখছেন জয় গোস্বামী, যাঁর পরিচয় দেওয়া অর্থহীন। তাঁর বইয়ের নামঃ "শঙখ ঘোষের কবিতাঃ চতুর্মুখী গতিপথ"। এই বইয়ে নতুন করে আরেকবার আবিষ্কার করছেন জয়ের শঙ্খ কে।
দ্বিতীয় বইটি একটি সংকলন। "আট পাঠে এক কবি - অন্য ভারতীয় ভাষার লেখকের চোখে শঙ্খ ঘোষের কবিতা"। শুধু শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে নয়, রবীন্দ্রনাথের পর কোনো বাঙালি কবিকে নিয়েই বাংলা ভাষায় এ ধরণের সংকলন হয়েছে বলে আমরা জানিনা। আমরা বাংলায় লেখা কবিতা, তার বাংলা পাঠ, এবং প্রতিক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত। এই লেখার শুরুতেও কেবল বাঙালি ডিএনএর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কবিতা ছড়ায় তার চেয়ে অনেক বেশি দূরেও। বোম্বের উচ্চকিত ছবি সর্বত্রগামী, এ এক অমোঘ সত্য, আমরা জানি। কিন্তু বাংলা কবিতা, তার নীরব উচ্চারণও যে, সারা ভারতের কবিচিত্তে আলোড়ন তোলে, সে খবর আমাদের, কেন কে জানে, অজানাই থেকে যায়। এই সংকলন, সেই আলোড়নেরই প্রতিবেদন। লিখছেন, ভারতের নানা ভাষার প্রতিষ্ঠিত কবিরা। লিখছেন, শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়ে, তাঁদের নিজস্ব অনুভূতির কথা। কেউ কেউ আঁকছেন ছবি। আর সেসবই ধরা থাকছে, এই সংকলনের দু মলাটের মধ্যে। এই লেখাগুলি যখন গুরুতে আসে, প্রাথমিক সম্পাদনা করেছিলেন নীলাঞ্জন হাজরা। আর বইটির সম্পাদনা করেছেন অভীক মজুমদার।
শঙ্খ ঘোষ সশরীরে আর নেই। আমরাও সবাই নশ্বর, কিছুদিন পরে আর থাকবনা। কিন্তু বাংলা ভাষা থাকবে। আর থাকবে ডিএনএ, যেখানে ঢুকে বসে থাকবে বাংলা কবিতার অমোঘ পংক্তিগুলি। এই দুটি বই সেই বহমান বংশগতিরই অংশ হয়ে থেকে যাবে নিশ্চয়ই।
যাঁরা গুরুর এই বইপ্রকাশের পদ্ধতিটা জানেন, তাঁরা এ-ও নিশ্চয়ই জানেন যে, গুরুর বই বেরোয় সমবায় পদ্ধতিতে। যাঁরা কোনো বই পছন্দ করেন, চান যে বইটি প্রকাশিত হোক—তাঁরা বইয়ের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অর্থভার গ্রহণ করেন। আমরা যাকে বলি দত্তক। এই বইটি যদি কেউ দত্তক নিতে চান, আংশিক বা সম্পূর্ণ, জানাবেন guruchandali@gmail.com এ মেল করে।
বইঃ
১। শঙখ ঘোষের কবিতাঃ চতুর্মুখী গতিপথ - জয় গোস্বামী
২। আট পাঠে এক কবি - অন্য ভারতীয় ভাষার লেখকের চোখে শঙ্খ ঘোষের কবিতা। লিখেছেন, অন্যান্য ভাষার কবিরা। সম্পাদনা অভীক মজুমদার।
প্রকাশ— বইমেলা, ২০২৩
প্রাপ্তিস্থান— বইমেলায় গুরু-র ৫০৭ নং স্টলে
পুঃ
১। এখানে যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে, সেটি কোনো বইয়েরই প্রচ্ছদ না। প্রচ্ছদ এখনও তৈরি হচ্ছে।
২। বংশগতি, ডিএনএ - এসবকে কেউ বৈজ্ঞানিক আখ্যান হিসেবে নেবেননা। ওগুলি আলঙ্কারিক প্রয়োগ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।