এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অস্থাবর

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৩২০ বার পঠিত
  • "কবে তৃষিত এ মরু ছাড়িয়া যাইব তোমার রসালো নন্দনে"। চোখ দিয়ে বারিনবাবুর জল গড়িয়ে পড়ছে, বারিনবাবুর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে লক্ষ্য করছে। তাদের চোখও ভিজে গেছে। বারিনবাবু কিন্তু গেয়েই চলেছেন, "কবে তাপিত এ চিত করিব শীতল, তোমারি করুণা চন্দনে"। প্রতিদিনই ঠাকুরঘরে কালীমায়ের ছবির সামনে বসে বারিনবাবু শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে থাকেন এই সন্ধ্যাবেলায়, একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি কালীমায়ের। তবে আজকে তিনি রজনীকান্তের গান গাইছেন, যদিও এটাও সমর্পণেরই সঙ্গীত। গানের গলাটাও চমৎকার বারিনবাবুর। এইসময় তাঁর কোনো বাহ্যিক জ্ঞান থাকেনা। স্ত্রী ও ছেলে বহুবার লক্ষ্য করে দেখেছে। বাহ্য জ্ঞান তিনি হারিয়ে ফেলেন, যখন তিনি নিজেকে সমর্পণ করেন মায়ের শ্রীচরণে। আজকে তাঁর গলায় গানটাও যেন অন্যদিনের চেয়ে বেশী ভালো লাগছে, চতুর্দিকে একটা স্নিগ্ধ, স্বর্গীয় ভাব এনে দিয়েছে। মায়ের ছবির সামনে প্রদীপ জ্বলছে, ধুপ জ্বলছে, একটা মোহময় পরিবেশ হয়ে উঠেছে চতুর্দিকটা। তারমধ্যে বারিনবাবুর দ্বরাজ গলায় রজনীকান্তের এই বিখ্যাত গানটা এই সন্ধ্যায় ঠাকুরঘরে যেন স্বর্গের পরিবেশ এনে দিয়েছে। তাঁর সমর্পণের মাত্রাটাও যেন মনে হচ্ছে আজকে ভাব-সমাধির কাছে পৌঁছে গেছে। বারিনবাবু গেয়ে চলেছেন, "কবে তোমাতে হয়ে যাব আমার আমি হারা, তোমারি নাম নিতে নয়নে বহে ধারা"। অঝোরে তাঁর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, শরীর স্থির হয়ে আছে, শুধু গান গাইবার জন্য মুখের যতটুকু নড়াচড়া হওয়ার দরকার সেইটুকু ছাড়া। স্ত্রী আর ছেলে ঠাকুরঘরের এককোণে বসে করজোড়ে মায়ের ছবির দিকে চেয়ে আছে। তাদের খুব যে একটা ভক্তি আছে ঠাকুরের প্রতি তা নয়, তবুও বারিনবাবুর নির্দেশ সকাল আর সন্ধ্যাবেলায় ঠাকুরঘরে আসতে হবে সবাইকে। যতক্ষন তিনি সাধন-ভজন করবেন ততক্ষণ তাদেরও এই ঠাকুরঘরেই থাকতে হবে। মা, ছেলে দুজনেই লক্ষ্য করে, তাদেরও এই সময়টাতে কিছুটা হলেও হৃদয়ে যেন একটা ভক্তিভাব তৈরী হয়। সেটা বারিনবাবুর গানের কারণে বা ধুপ প্রদীপসহ একটা মোহময় পরিবেশের কারণেও হতে পারে। কারণ যাই হোক, হৃদয়ে একটা ভক্তিভাব কিন্তু তৈরী হয় তাদের প্রতি সকাল, সন্ধ্যায়। প্রথমদিকে একটু বিরক্ত ভাব থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের এখন সকাল, সন্ধ্যায় ঠাকুরঘরে আসতে বেশ ভালোই লাগে। তারমধ্যে অন্ততঃ ঘণ্টা দুই বারিনবাবু ঠাকুরঘরে সাধন-ভজন করেন প্রতি সন্ধ্যায়। এই সময়ে তাঁর গান গাওয়া প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অবশ্য ব্যতিক্রমও হয় মাঝেমাঝে। শুধু সাধন হয় সেদিন, তবুও বউ, ছেলেকে থাকতে হয় বারিনবাবুর নির্দেশ মতো। কিন্তু কারণ বোঝা যায়না ভজন না হওয়ার। তেমনি ভক্তিভাবটা কোনোকোনোদিন একটু বেশীই লক্ষ্য করা যায়। যেমন আজকের দিনটা, বারিনবাবু প্রায় ভাব-সমাধি নিয়েছেন আজকে। ঠাকুরঘরে মনে হচ্ছে স্বর্গটাই নেমে এসেছে। বারিনবাবুর দেহ থেকে একটা জ্যোতি বেরোচ্ছে মনে হচ্ছে। বউ, ছেলে দুজনেই লক্ষ্য করছে অবাক চোখে, একটা নীলাভ জ্যোতি যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে বারিনবাবুর গোটা শরীর থেকে। "এ দেহ শিহরিবে, ব্যাকুল হবে প্রাণ বিপুল পুলক-স্পন্দনে", বারিনবাবুর চোখ দিয়ে অশ্রুধারার পরিমানটা আরও বেড়ে গেল, লাইনদুটো শুনে বউ, ছেলের চোখেও অশ্রুধারা নেমে এলো। আজকে বউ, ছেলেরাও যেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। নিজেদের অজান্তেই ভক্তিভাব বেড়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে, নিজেদেরকে মায়ের শ্রীচরণে সমর্পন করতে ইচ্ছে করছে। বারিনবাবু তো বউ, ছেলেকে মায়ের শ্রীচরণে পুরোপুরিভাবেই সমর্পণ করতে বলেন। এর মধ্যে অবিশ্বাস আর অর্ধ-বিশ্বাসের কোনো দামই নেই। সমর্পণ আর সমর্পণ, নিজেকে মায়ের চরণে বা ঈশ্বরের চরণে পুরোপুরিভাবে সমর্পণ। মনে কনামাত্র সন্দেহের বিষ যেন না থাকে। সুচাগ্র পরিমাণের বিষও সমস্ত অমৃতের অমৃতগুনকে নষ্ট করে দেয়। 

    বারিনবাবুর এখন পঞ্চাশ বছর বয়স, সংসারে আপনজন বলতে শুধু বউ আর ছেলে। ছেলের বয়স বাইশ বছর, স্ত্রীর বিয়াল্লিশ। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, কারণ বারিনবাবু প্রায় কিছুই করেননা। পুরো নাম বারিন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। প্রতিবেশীরা বারিন বলেই ডাকেন, অবশ্য বাবা-মায়ের দেওয়া ডাকনামটাও বারিন। তিনি ডাকনামেই পরিচিত, আসল নামটা বোধহয় এখন আর কেউ জানেনা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, বাবাও প্রায় কিছুই করতেন না। জজমানি হলো তাঁদের বংশানুক্রমিক পেশা। বাবাও তাই করতেন, ফলে সংসারে অভাব ছিল একনম্বর সদস্য। কিন্তু বাবা-মায়ের সেইকারণে কোনো ঝগড়া, অশান্তি বা মনোমালিন্য ছিলোনা। অভাব থাকলেও অপার শান্তি ছিল বাবা-মায়ের সংসারে। পাড়া প্রতিবেশীর আলোচিত বিষয় ছিল বাবা-মায়ের সংসারের শান্তি এবং পাশাপাশি যথেষ্ট হিংসার কারণ। অভাবের কারণে বারিনবাবুর পড়াশোনাও খুব বেশীদুর হয়নি। তা নিয়ে বারিনবাবুরও কোনো আক্ষেপ ছিলোনা বা বাবা-মায়ের প্রতি কোনো অভিমানও ছিলোনা। ক্লাস নাইনের পরে আর পড়াশোনা হয়নি বারিনবাবুর। নাইনে পাশ করতে না পেরে তিনি পড়াশোনায় ইতি টানতে বাধ্য হন। এরপরে তাঁর বাবা তাঁকে পুরোহিতের কাজকম্ম শেখাতে থাকেন। বাবা তাঁকে বাড়ীতে দুইবেলাই শেখাতেন, আবার যে সব বাড়ীতে পুজো করতেন সেখানে সঙ্গে নিয়ে যেতেন যাতে হাতেকলমে শিখতে পারেন। অবশ্য শুধু পুজো নয়, বিয়ে পৈতে, অন্নপ্রাশন সব কিছুতেই। আস্তে আস্তে বারিনবাবু সব কিছুই শিখে যান এবং তিনি নিজেও বিভিন্ন বাড়ীতে এককভাবে পুজো ইত্যাদি করতে থাকেন। তাঁদের সংসারে একটু হলেও অভাবের পরিমানটা কমতে থাকে। কিন্তু বিধি বাম, তাঁর বাবা হঠাৎ করেই একদিন জগৎ সংসারের মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে। বাড়ীতে তখন অকাল বিধবা মা আর বারিনবাবুর বয়স তখন মাত্র বাইশ। অকুল পাথারে পড়লেন দুজনেই। ছোট বয়স থেকে বাড়ীতে পুজো অর্চনা দেখে দেখে বারিনবাবুর মন কখন যে ঈশ্বর ভক্ত হয়ে গেছে তা তিনি নিজেও জানতেন না। তাঁর বাবাও অবশ্য কালীমায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত ও সমর্পিত প্রাণ ছিলেন। সংসার চলতে চাইছে না, কিন্তু বারিনবাবু লক্ষ্য করেন যে তাতে তাঁর মন যেন আরও বেশী করে কালীমায়ের শ্রীচরণে সমর্পিত হতে চাইছে। ধীরে ধীরে অবশ্য তাঁরা এই দুঃসময় থেকে উদ্ধার পান। সংসার আবার আগের মতো কষ্টেশিষ্টে চলতে থাকে। বারিনবাবু বলেন কালীমায়ের কৃপাতেই তিনি সেই দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। মা-ছেলের সংসার কোনোক্রমে চলছিলো তখন। দুবেলা দুমুঠো সেদ্ধ ভাত জুটে যাচ্ছিল দুজনের। কিছু বাড়ীতে আর দোকানে নিত্যপুজো, সারা বছর জুড়ে কিছু বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি আর কিছু দুর্গাপুজো, কালীপূজা, লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতীপূজা, মনসাপুজো ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া নিজের বাড়ীর নিত্যপূজো তো আছেই। এই সময় থেকেই বারিনবাবুর মানসিকতায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বাড়ীর পুজো করার সময় ঈশ্বর চিন্তা বাড়তে শুরু হয় প্রথমে। দুবেলাই নিষ্ঠাভরে পুজো করার চেষ্টা করেন বারিনবাবু। ঠাকুরঘরে মূল ঠাকুর বলতে তাঁর বাবার আমলের কালীমায়ের একটি বিরাট বাঁধানো ছবি। তাঁর বাবা এই ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনিও এই কালীমায়ের ছবিতেই পুজো করেন দুইবেলা। প্রথমদিকে পুজো করার সময় চোখ বন্ধ করলেই কালীমায়ের ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পেতেন। কিন্তু খানিকপরেই মিলিয়ে যেত। তখন তাঁর খুব মন খারাপ হয়ে যেত। এরপরে খেয়াল করলেন তিনি, চোখ বন্ধ করলেই মায়ের শুধু মুখটা দেখতে পাচ্ছেন স্পষ্ট। এরও কিছু পরে তিনি খেয়াল করলেন, চোখ বন্ধ করলেই মায়ের শ্রীচরণ দেখতে পাচ্ছেন, একদম স্পষ্ট। এরপরে খেয়াল করলেন, চোখ বন্ধ করার পরে প্রথমে পুরো কালীমায়ের ছবিটা, তারপরে মুখটা, তারপরে শ্রীচরণ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। আবার কিছুটা সময় পরে সবকিছু কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে আর ক্রমশ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ছবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। চতুর্দিকে কেমন সব গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। যতক্ষন তিনি পুজো করছেন চোখের সামনে সব ভেসে বেড়াচ্ছে, চোখ খুললেই সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। তিনি আস্তে আস্তে পুজোর সময় বাড়াতে থাকলেন। মনের আনন্দে তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে পুজো করতে লাগলেন। মনে তাঁর ঈশ্বর চিন্তা বাড়তে থাকলো। কালীমায়ের শ্রীচরণে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করে দিলেন। জগৎ সংসারের প্রতি টান, মায়া সবকিছুই কমতে থাকলো।

    এইরকম ভাবেই দিনগুলো চলে যাচ্ছিল বারিনবাবুর। মায়ের চোখকে কে কবে ফাঁকি দিতে পেরেছে? মায়ের চিন্তা বাড়ছিল, ছেলে বোধহয় সন্ন্যাসী হয়ে যাবে! সংসারের কোনো ব্যাপারেই যে তার কোনো মন নেই, এমনকি লোকেদের বাড়ী গিয়ে যে নিত্য পুজো করতে হবে তাও ভুলে যাচ্ছে ছেলে। সারাদিনের বেশীরভাগ সময়টাই তো ছেলের ঠাকুরঘরে কেটে যায়। একে বাঁধতে না পারলে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে, জগৎ সংসারে এর কোনো টান নেই যে। ছেলেকে সংসারের মধ্যে বেঁধে রাখার জন্যই একপ্রকার জোর করে ছেলের বিয়ে দিলেন। বারিনবাবুর কোনো ইচ্ছাই ছিল না বিয়ে করার, কারণ তাহলে ঈশ্বর চিন্তায় বিঘ্ন ঘটবে। তাছাড়া এই অভাবের সংসারে আবার বাড়তি লোক এনে অভাৱকে আরও বাড়ানোর কোনো মানেই হয়না। কিন্তু এ যে মায়ের আদেশ, ফেলতে পারেননি বারিনবাবু। মাকে যে তিনি কালীমায়ের সাথেই তুল্য মনে করেন। অগত্যা বিয়ে করতে হলো বারিনবাবুকে। মেয়ে মায়েরই পছন্দ করা। সেও অতি সাধারণ ঘরের। অভাবী ঘরের মেয়ে কিন্তু স্বভাব অতি নম্র, ভদ্র। একদমই উগ্র নয়। বিয়ের পরে কিছুদিনের মধ্যেই সে এই সংসারের দ্বায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। শ্বাশুড়ীকে কোনো কাজ করতে দেয়না। স্বামীর খেয়াল রাখে, সেবা যত্ন করে। উঁচু স্বরে কখনও কথা বলতে শোনা যায়না। বারিনবাবু কিন্তু সংসার আর ঈশ্বর চিন্তা দুটোই পাশাপাশি সুন্দরভাবে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মায়ের দুশ্চিন্তা তাতে দূর হয়েছিল অনেকটাই। সংসারকে জগৎ সংসারের একটা ক্ষুদ্র রূপ হিসেবে তিনি দেখতেন। চেষ্টা করতেন দুটোর মধ্যে সাযুজ্য বজায় রাখতে। মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই খেই হারিয়ে যেত, কিন্তু তখন সংসারের চেয়ে ঈশ্বর চিন্তাই এগিয়ে থাকতো। অবশ্য এতে বারিনবাবুর মা বা বউ কেউই বিরক্ত হতেননা কোনোদিন। ছেলেকে যে সংসারে আঁটকে রাখতে পেরেছেন বারিনবাবুর মা, এতেই তিনি খুশি। বারিনবাবু যে আর পাঁচজনের মতো নয়, তিনি কোনো সাতেপাঁচে থাকেননা, সংসারের কাজকম্ম যেটুকু বলা হয় তা তিনি সুষ্ঠ ভাবে করার চেষ্টা করেন, কোনো খারাপ নেশা বা সঙ্গ তাঁর নেই, দিনের বেশীরভাগ সময় ঈশ্বরচিন্তা আর পুজো নিয়েই কাটিয়ে দেন, এতে তাঁর বউ খুব খুশী। আবার বউ তাঁর মাকে কোনো কাজ করতে দেয়না, মায়ের সাথে নিজের মায়ের মতোই আচার আচরণ করে, সেবা যত্ন করে এতে বারিনবাবুও খুব খুশী। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তি ও সুখ ছিল।

    এইভাবেই বারিনবাবুর বউ আর মাকে নিয়ে সংসার চলে যাচ্ছিল। অভাব থাকলেও কারুর কোনো অভিযোগ ছিলোনা। অভাবের মধ্যেই তারা সুখ, শান্তি খুঁজে নিয়েছিলো। বিয়ে হওয়ার দুবছরের মধ্যে ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে ছেলে হলো বারিনবাবুর। মা, বউ দুজনেই খুব খুশি, আনন্দ তাদের আর ধরে রাখা যায়না। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে জানান হলো সংসারে নাতির আগমনের কথা। কিন্তু বারিনবাবুর প্রথমেই মনে হলো যে তিনি ক্রমশঃ সংসার আবর্তে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি সাধন-ভজনের সময় আরও বাড়িয়ে দিলেন। সন্তানের দেখভালের পুরোপুরি দ্বায়িত্ব এসে পড়ল বউয়ের ওপর। বারিনবাবু প্রতিদিন যেটুকু বাড়ী বাড়ী গিয়ে পুজো অর্চনার ব্যাপার থাকে সেইটুকু পালন করে বাকী সময় সাধন-ভজন নিয়েই কাটিয়ে দেন। বারিনবাবুর স্ত্রীর, ছেলের বিভিন্ন ব্যাপার আর সংসারের নানা কাজ নিয়ে সারাদিন কেটে যায়। শ্বাশুড়ীও অবশ্য যতটা পারেন তাকে সাহায্য করেন। তবে এই নিয়ে কারুর কোনো আক্ষেপ বা অভিযোগ ছিলোনা। এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। ছেলের নাম রাখা হলো সমর্পণ। অর্থের অভাবে কালীমায়ের প্রসাদ খাইয়েই ছেলের মুখে ভাত দেওয়া হলো। আর পাঁচটা ছেলের মতো সমর্পনও বেড়ে উঠতে থাকলো। এরপরে তাকে স্কুলেও ভর্তি করে দেওয়া হলো। নিতান্তই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সমর্পণ রেজাল্ট ভালোই করছিল স্কুলে, শিক্ষকদের কাছে ভালো ছেলে বলে প্রশ্রয়, ভালোবাসা সবই পাচ্ছিল সে। প্রাথমিক ছেড়ে সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হলো সমর্পণ ক্লাস ফাইভে। হাইস্কুলেও সমর্পণ খুব ভালো ফল করছিল। ভালো রেজাল্ট করলো সে মাধ্যমিকেও। আবারও সরকারী স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলো। ভালো ফল করেছিলো বলে সহজেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারলো। বারিনবাবু একটু ভেবেছিলেন বটে খরচ সামলে উঠতে পারবেন কিনা তাই নিয়ে, কিন্তু মনের মধ্যে ছেলের ভালো-মন্দের ব্যাপারটাও ছিল। তাই শেষ অব্দি তিনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ায় মত দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য আলাদা করে মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়া বা দুতিনটি রেফারেন্স বই পড়া, সে তো আর সমর্পণের হয়নি অর্থাভাবের কারণে। এই ব্যাপারগুলো তো বারিনবাবুর জানা ছিলোনা। ফলে সমর্পণ ভালো ছাত্র হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে পারলোনা। পরে আর পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা অনুভব করেনি সমর্পণ। বারিনবাবু এরপরে তাঁর ছেলেকে নিজের পেশায় আনতে উদ্যোগ নেন। কিন্তু সমর্পণের মনের ইচ্ছা অন্য কিছু করবে তবু এই পুজো-আচ্ছার দিকে যাবেনা, কারণ সে মন থেকে কোনো টান অনুভব করেনা ঠাকুর দেবতার প্রতি। তবু বারিনবাবু ছেলেকে একপ্রকার নির্দেশ দেন তাঁর সাথে থেকে পুজো-আচ্ছার ব্যাপারগুলো শেখার জন্য। বাবার নির্দেশ তো ফেলতে পারা যায়না, ফলে সমর্পণ অনিচ্ছাস্বত্বেও বাধ্য হয় প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় ঠাকুরঘরে যেতে, বাবার সহকারী হতে।

    ছেলের অসফলতাকে বারিনবাবু ও তাঁর স্ত্রী মেনে নিয়েছিলেন কালীমায়ের ইচ্ছা বলে। অভাৱকে তাঁরা দায়ী করেননি কারণ সেটাও যে কালীমায়েরই ইচ্ছা। এই জগতে কোনোকিছুই কালীমায়ের ইচ্ছা ছাড়া ঘটেনা। এইভাবেই দিনগুলো চলে যাচ্ছিল। বারিনবাবুর মাও অভাবের মধ্যেই সুখী ছিলেন ছেলে, বউ আর নাতিকে নিয়ে। বয়স যদিও বাড়ছিল তাঁর, কিন্তু শরীরে বা চেহারায় সেইরকমভাবে জানান দিচ্ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, হয়তো অভাবের সংসারে দীর্ঘদিনের না খাওয়া বা কম খাওয়ার কারণে। ডাক্তার দেখানোর পয়সাও যে বারিনবাবুর নেই, তাই পরিচিত গাছগাছালি আর তুকতাক ভরসা। এসবের ফলে রোগ প্রথমদিকে একটু কম মনে হলেও ফিরে ফিরে আসতে লাগলো। কিছুদিনের মধ্যে বারিনবাবুর মা শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। ডাক্তার দেখাতে গেলে অনেক টাকার ধাক্কা, শেষ অব্দি তাই পাড়াতেই একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে মাকে দেখালেন বারিনবাবু। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করার পরেও উন্নতি কিছু হচ্ছেনা দেখে পাড়া প্রতিবেশীদের উপদেশ মতো বারিনবাবু তাঁর মাকে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সেখানে চিকিৎসা শুরু হলো বটে তবে অনেকগুলো টেস্ট করতে দিলেন ডাক্তারবাবুরা। সব টেস্ট আবার হাসপাতালে হয়না, বাইরে থেকে করাতে গেলে অনেক টাকার ধাক্কা। এলাকার কউন্সিলরকে ধরে সেসব বিনা পয়সায় করানো, অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই কিছুটা দেরী হয়ে গেল। হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা সবকিছু দেখে বললেন ক্যান্সার। কলকাতা ছাড়া সরকারী হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়না সেরকমভাবে। কলকাতা যাওয়া, সেখানে চিকিৎসা করানো যতই সরকারী হাসপাতাল হোক, অনেক টাকার ব্যাপার। বারিনবাবুর মাও কোনোভাবেই যেতে চাইলেন না কলকাতায়। তাঁর একটাই কথা, "মরতে হলে এই শ্বশুরবাড়ীর ভিটেতেই মরবো। চিকিৎসা করিয়ে ছেলে আমার জন্য অকুলে পড়বে, সেটা আমি চাইনা"। ছোটবেলা থেকে বারিনবাবু কোনোদিন বাবা-মায়ের কথায় দ্বিমত করেনি, আজও করলেননা। মায়ের শরীর দিনদিন খারাপ হতে থাকলো। বছর খানেক রোগভোগের পর একদিন বারিনবাবুর মা, ছেলে, বৌমা, নাতিকে ফেলে রেখে অনন্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন।

    এরপরে বারিনবাবু পুজো আচ্ছায় সময় আরও বাড়িয়ে দিলেন। বাবা-মা অন্ত প্রাণ ছিল তাঁর, দুজনেই আর পৃথিবীতে নেই। কালীমায়ের শ্রীচরণে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করলেন। প্রতি সন্ধ্যায় পুজোর সময় শ্যামাসঙ্গীত গাইতে শুরু করলেন, নিজের বেদনা থেকে মুক্তি পেতে। শ্যামাসঙ্গীত বা সমর্পণের যে কোনো সঙ্গীত গাওয়ার পরে পুজো শেষ করে ওঠেন বারিনবাবু, তখন নিজেকে অনেকটা হাল্কা বোধ করেন। ফলে সান্ধ্য পূজায় গান গাওয়াটা রুটিনে পরিণত হলো। এই ভাবেই দিনগুলো চলে যাচ্ছিল বারিনবাবুর। সমস্যা দেখা দিলো, নিজের পৈতৃক বাড়ীটা। সেটা অবশ্য বারিনবাবুর নিজের নয়, বউ, ছেলের সমস্যা। এই বাড়ীটা আসলে বারিনবাবুর ঠাকুরদাদার বাবা বানিয়েছিলেন। তখন বলে বারিনবাবুদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্টই স্বচ্ছল ছিল। বারিনবাবুর ঠাকুরদাদার আমল থেকেই আর্থিক অবস্থায় টান পড়তে শুরু হয়। আর্থিক অবস্থা আর ফেরেনি তাঁদের। এই বাড়ীটা শেষবার সারানো ও রং করা হয়েছিল বারিনবাবুর ঠাকুরদাদার আমলে। তারপরে এই বাড়ীতে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারুর ছিলোনা। দেড়শো বছরের বেশী হয়ে গেল এই বাড়ীর বয়স। ফলে বর্তমানে কোনোভাবেই আর বসবাসের যোগ্য নেই। যদিও বারিনবাবুর তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, তিনি দিব্যি আছেন তাঁর নিজস্ব জগৎ নিয়ে। সেখানে ভিটে, মাটি নিতান্তই কিছু জাগতিক মূল্যহীন ব্যাপার স্যাপার। বারিনবাবুর স্ত্রী একবার বলে ফেলেছিলেন তাঁকে, বাড়ীটায় আর যে থাকা যায়না। চতুর্দিক থেকে সব দেওয়াল, ছাদ খসে খসে পড়ছে। উত্তরে অনেকক্ষন চুপ করে থাকার পরে বারিনবাবু স্বগোক্তি করেছিলেন,
    বসত বেঁধেছি আমি, কালীমায়ের চরণে, 
    নেইকো তুলনা মাগো, এই বিশ্বভুবনে।
    আজকে আছি নদীর কুলে, কালকে সাগরে,
    কিম্বা হয়তো আছি আমি, দুর্গম পাহাড়ে।
    তোমার বসত স্থায়ী মাগো, আমরা যাযাবর,
    বসত নিয়ে ভেবে মরি, সবটাই অস্থাবর।
    এরপরে তাঁকে তাঁর বউ আর কিছু বলেনি। কিন্তু এবাড়ীতে থাকা মানে ঘাড়ের ওপরে যমদূত নিয়ে বাস করা। যেকোনো সময় একটা দেওয়াল বা ছাদ মাথার ওপরে খসে পড়বে আর ভবলীলা সাঙ্গ হবে। আবার এটাও ঠিক, এই বাড়ীর বর্তমান অবস্থায় সারানো শব্দটা কোনোভাবেই আসেনা। একে ভেঙে ফেলে নতুন করে বানালে তবে বাস করার যোগ্য হবে। সে তো অনেক টাকার ব্যাপার, ফলে এই অবস্থাকে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও নেই তাদের কাছে। এরপরেও একদিন রাত্রে শোয়ার আগে বউ বারিনবাবুকে বলেছিল, দেখো, আমরা বাড়ীটা বিক্রিও তো করে দিতে পারি। সেই টাকার মধ্যে নাহয় খাস জমিতে একটা মাটির বাড়ী বানিয়ে নেব আর বাকী টাকাতে আমাদের অভাব খানিক মিটবে। বারিনবাবু যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এইরকম রাগতে তাঁকে কোনোদিন দেখেনি বউ বা ছেলে কেউই। একটুক্ষন চুপ থেকে মাথা আগে ঠান্ডা করলেন বারিনবাবু, তারপরে বললেন, "দেখো, এটা হলো পৈতৃক বাড়ী, আমার ঠাকুরদাদার বাবা বানিয়েছিলেন। এখানে তিনি বাকী জীবনটা ছিলেন, এরপরে আমার বাবা এখানে জন্মেছেন, সারা জীবন বাস করেছেন, আমি এই বাড়ীতে জন্মেছি। আমাদের অভাবের সংসার বলে পৈতৃক বাড়ী বিক্রি করে দেব, এ আমি পারবো না। পূর্বপুরুষেরা আমাকে কেউ এতে আশীর্বাদ করবেন না। আমি কালীমাকে কি জবাব দেবো? আমার যা হবে, তোমাদেরও তাই হবে এই ভাঙা বাড়ীতে থাকলে। বরং আমি চলে গেলে তুমি আর ছেলে সামনের দিকটা ভেঙে ফেলে একটা মাটির বাড়ী বানিয়ে নিও। সঞ্চয় তো আমাদের কিছু নাই বললেই চলে, তবুও যেটুকু আছে সেটুকুও ভেঙে ফেললে ছেলের জন্য কি রেখে যাবো? ছেলে যদি কোনো কাজকম্ম করতে পারে তখন সঞ্চয়টুকু ভেঙে সামনের দিকে একটা মাটির বাড়ী বানিয়ে তোমরা দুজনে বাস করো"। এরপরে আর কোনোদিন বারিনবাবুর বউ তাঁকে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি।

    বারিনবাবু প্রায় ভাব-সমাধির অবস্থায় গেয়ে চলেছেন, "কবে ভবের সুখ সুখ চরণে দলিয়া, যাত্রা করিব গো শ্রীহরি বলিয়া"। বউ, ছেলের মুখ থেকেও নিজেদের অজান্তেই বেরিয়ে এলো, "শ্রীহরি"। বউ, ছেলেও যেন আকর্ষিত হয়ে আছে পুরোপুরিভাবে বারিনবাবুর ভাবের  কাছে। এ এক অমোঘ আকর্ষণ, মনের ওপর আর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এখন। বারিনবাবুর ভাবের কাছে তারাও সমর্পণ করেছে। বারিনবাবু পুনরায় গাইলেন, "কবে ভবের সুখ সুখ চরণে দলিয়া, যাত্রা করিব গো শ্রীহরি বলিয়া"। বউ, ছেলের মুখ থেকেও নিজেদের অজান্তেই আবারও বেরিয়ে এলো, "শ্রীহরি"। সমর্পণের এ এক চূড়ান্ত দশা, ঠাকুরঘরে এক অলৌকিক পরিবেশ তৈরী হয়েছে। বারিনবাবু গেয়ে চলেছেন, "চরণ টলিবে না, হৃদয় গলিবে না, কাহারো আকুল ক্রন্দনে"। বারিনবাবুর চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রুধারা ঝরে চলেছে। বউ, ছেলেরও চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে চলেছে। তারাও আজকে পুরোপুরি সম্মোহিত অবস্থায়। গান শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করে বারিনবাবুর একটা হেঁচকি উঠলো এবং তিনি কালীমায়ের শ্রীচরণে ঢলে পড়লেন। একটা কিছুর আচমকা শব্দে বউ, ছেলে জেগে উঠলো। দেখলো বারিনবাবু মেঝেতে অর্ধশায়িত অবস্থায় পড়ে আছেন। প্রাণপাখি ততক্ষনে কালীমায়ের শ্রীচরণে স্থায়ী বসত করেছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন