এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পথের পাঁচালীর থিম মিউজিক ঃ একটি সম্ভাবনাময় বিতর্ক 

    Arkarup Gangopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ আগস্ট ২০২২ | ৮৫৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • জ্ঞানীগুণী মাত্রেই জানেন গত ২৬ তারিখে, ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী মুক্তি পেয়েছিলো, ইত্যাদি ইত্যাদি। জানা তথ্য আবার বলে অজন্তায় দাগা বুলিয়ে কাজ নেই। একটা অন্য জিনিসে আলোকপাত করা যেতে পারে। 

    পথের পাঁচালীর থিম মিউজিক নিয়ে  বাড়াবাড়ির অন্ত নেই। কিন্তু সেই অমর সুরকেও অমৌলিকত্বের সন্দেহে পড়তে হয়েছিলো। সন্দেহ করেছিলেন স্বয়ং ঋত্বিক ঘটক। তারপর সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিয়াছে। বাজালে লোকে বলবে সত্যজিতের করা সুর। পরিচালকের ডেবিউয়ের মহিমা। দুর্ভাগ্য রবিশঙ্করের; একে বাঙালি তার আন্তর্জাতিক আইকনদের তালিকায় ভদ্রলোককে (সঙ্গত প্রায়োগিক কারণ থাকলেও) রাখতে চায় না, মোটামুটি রবি-সত্য-অমর্ত্য-সৌরভ কোয়াড্রাতেই কাজ চলে যাচ্ছে। উপরন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনার কাজে  নিজস্বতা ঢেলে দিয়েও কল্কে টল্কে পাচ্ছেন না। ইদানিং বাজারে চালু বক্তব্য - ক্ল্যাসিকাল শিল্পীরা ছবির সুর করতে পারেন না, পথের পাঁচালীতে আসলে সব সত্যজিৎই করেছেন। এই নিয়ে প্রবন্ধ অন্য সময়ে লেখা যাবে, অনেক যুক্তি, তক্কো আর গল্প নিয়ে। 

    মূল প্রসঙ্গে এসে পড়লে ভালো। এখানে শুধু থিম মিউজিকটুকুই দেখার বিষয়।  

    পথের পাঁচালী নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের এদিক সেদিক মিলিয়ে কিছু আপত্তি থাকলেও থিম সুরের প্রশংসা করেছেন প্রাণ ঢেলে। 

    ১। "তেমনি ভালো লাগে বাঁশিতে পাগল-করা, পাকড়ে ধরা, মূলতানটির (theme) ব্যবহার, যেটা মোক্ষম সব জায়গায় ঠিক মনস্তত্ত্বগত উচ্চগ্রামে কানে এসে বাজে। এই মূলতানটি একেবারে ছবির প্রাণস্বরূপ"।  [ ২১০পাতা; সত্যজিৎ ঃ জীবন ও শিল্প; সঃ সুব্রত রুদ্র, প্রতিভাস ]  

    ২। পথ চলতে আপনি সে সুর শুনলেও চোখের সামনে ভাসবে গ্রামবাংলার আদিঅন্ত শ্যামলতা। [ পরিচয়, পৌষ সংখ্যা, ১৩৭২, ৬২৬ পৃঃ ] 

    অপরাজিত সিনেমায় এই সুরের একটিমাত্র প্রয়োগের মারাত্মক এফেক্ট নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস অনেকের মনে থাকার কথা। সেই সুরের ও তার স্রষ্টার কাজে আচমকা সন্দেহ কেন? ঋত্বিক কী বলেছিলেন সেটা আগে দেখে নিলে হয় ঃ 

    'পথের পাঁচালী'-র সংগীত খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু তার থিম মিউজিকটা (রবিশংকর) সোয়ান-স রিভার (নামে) একটি আমেরিকান নিগ্রো ফোক সং থেকে তুলে নিয়েছিলেন। আদারওয়াইজ ভদ্রলোকের কাজকর্ম 'পথের পাঁচালী'তে খুবই ভালো হয়েছিল।  [ কথাবার্তা সংগ্রহ; ছবি না করে বাঁচতে পারি না; ১২০ পৃঃ; প্রতিভাস ]

    বোঝো কাণ্ড!  আদ্যোপান্ত বাংলার সুর - তার উৎস মার্কিনি? ঋত্বিকের সাঙ্গীতিক বোধ কম ছিলো না - তিনি ফালতু কথা বলার লোক নন। এদিকে সত্যজিৎ নিজে যে বক্তব্য রেখেছেন সেটা, কিংবা পরে অ্যান্ড্রু রবিনসনের মন্তব্য - এমনকি সুব্রত মিত্র-র বয়ান পড়লে ভুরু কুঁচকে যেতে পারে। তিনজনেই বলছেন রবিশঙ্কর আগে থেকে একটা সুরের কাঠামো ভেবে এসেছিলেন। 

    সত্যজিৎ -  "The very first thing he told me was, 'I have a musical concept for your film'. He then proceeded to hum a tune. I was astonished. It was beautiful and just right for the film"  [ page 76 ; My Years With Apu; Satyajit Ray; Penguin; 1994 ]

    অ্যান্ড্রু রবিনসন - "He did not say, for instance, what may have influenced his creation of the main theme of Pather Panchali before he had seen the rough cut"  [ ৮৮পৃঃ, Working with Ravi Shankar; The Apu Trilogy : Making of an Epic; 1989 ]

    সুব্রত মিত্র - " রবিশংকর বিদেশ থেকে আসার সময় প্লেনে বসে কয়েকটা এর স্বরলিপি যেমন মনে এসেছিল প্লেনের টিকিটের ওপর লিখে এনেছিলেন।"  [ ১৯৭ পাতা; আলোকচিত্র গ্রহণ; পথের পাঁচালীঃ সৃজনের দুইমুখ; সম্পাদনা - সুধীর চক্রবর্তী, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়; পত্রলেখা; ২০১৭ ]
     
    এ ইঙ্গিত তো জলের মতো পরিষ্কার ! তাহলে এখানেও সেই 'অনুপ্রেরণা' কেস ! 

    এসব ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার আগে জেনে নেওয়া ভালো যে ব্যাপারটা একটু জটিল; ঋত্বিক বাইরের মিলটুকু দেখে মন্তব্য করে দিয়েছেন, ভেতরে ঢুকলে আরেকটা গভীর জিনিস দেখতে পেতেন।
     
    সেই গভীর ব্যাপারে যেতে হলে আমাদের আরেকজন নতুন মানুষ সম্পর্কে জানতে হবে। তাঁর নাম স্টিফেন কলিন্স ফস্টার। জন্ম ১৮২৬, মৃত্যু ১৮৬৪। আমেরিকান চারণগীতির একজন প্রাণপুরুষ। তাঁর লেখা এবং সুর করা নানা গান উনিশ শতকের আমেরিকায় স্টেজে গাওয়া হতো, থিয়েটারে জনপ্রিয়তাও ছিলো ভালোই। সেই স্টিফেন ফস্টারের সম্ভবত শ্রেষ্ঠতম কম্পোজিশন 'Old Folks at Home' নামক একটি গান। এই গান ও ইতিহাস সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার, নইলে ঋত্বিকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ফেলা শক্ত হবে। কিন্তু তারপরেও ফিরে আসতে হবে গানের  আলোচনায়। 

    গানটা লেখা হয় ১৮৫১ সালে; বাণীতে বারবার সোয়ানি নামে এক নদীর প্রসঙ্গ এসেছে। কথা ও সুরে মুগ্ধ হয়ে সেই সময়ের এক চারণদলের মালিক, এডুইন ক্রিস্টি গানটি তাঁর থেকে চেয়ে নেন। এই চারণদলগুলোকে বলা হতো মিনস্ট্রেল; উনিশ শতকের আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষী স্রোতে গা ভাসিয়ে মিনস্ট্রেলের সদস্যরা (সবাই শ্বেতাঙ্গ) মুখে কালো রং মেখে 'ব্ল্যাকফেস' আফ্রো-আমেরিকান চরিত্রে অভিনয় করতেন। নিতান্তই ছ্যাবলা, টিটকিরি জাতীয় নাচগান সম্বলিত নকশা যাকে বলে। সেসব দর্শকদের আমোদও দিতো। সেই কুনাট্য রঙ্গে যখন উনিশ শতকের শ্বেতাঙ্গ নাগরিক মজে; তখন ফস্টারের অসামান্য কম্পোজিশনটি আজকের ভাষায় 'ভাইরাল' হয়ে পড়েছিলো। সাদাকালো নির্বিশেষে গানের বক্তব্য ও সুরে মজে ছিলেন। কেন ও কিভাবে সেসব পরে বলছি। এবার আবার ঋত্বিকের কথায় আসি। 

    কী বলেছিলেন তিনি ? "আমেরিকান নিগ্রো ফোক সং" - কথাটায় কতোটা তথ্যগত ও বিষয়গত ভুল আছে সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। একমাত্র ঠিক তথ্য 'আমেরিকান'। বাকি সব ভ্রান্ত। ঋত্বিক গানটা শুনেছিলেন সন্দেহ নেই (নইলে আর মিল ধরতে পারবেন কী করে), কিন্তু মিনস্ট্রেলের ব্ল্যাকফেস অভিনয়ের জনপ্রিয়তা সব ঘেঁটে ঘ করে দিয়েছিলো মাঝখান থেকে। তাই গানের স্রষ্টার নামটাও জানতে পারেন নি। আসল ওল্ড ফোকস অ্যাট হোম নামের জায়গায় বাণীর সোয়ানী রিভারের সূত্র ধরে সোয়ান'স রিভার নাম বলেছেন, কিন্তু কথাটা আসলে সোয়ানী রিভার। দুয়ের অর্থে ফারাক বিস্তর। ব্ল্যাকফেস অভিনয়ের কালো চামড়ার অনুষঙ্গ তাঁর কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলো নিগ্রোত্বে, চারণদলের 'চারণ' শব্দের স্বাভাবিক ইন্টারপ্রিটেশন ও সুরের লোকঘেঁষা ছাপ থেকে তিনি ধরে নিয়েছিলেন এটা লোকগীতি। ওদিকে স্টিফেন ফস্টার, স্বয়ং স্রষ্টা আদ্যোপান্ত মার্কিন নাগরিক চরিত্র ও মননের মানুষ, এডুইন ক্রিস্টি বা মিনস্ট্রেলের গায়ক-অভিনেতারাও সেই শ্রেণির - কাজেই কোনোমতেই একে 'ফোক' বলা চলে না। 

    আচ্ছা বেশ , তিনি না হয় ভুল করেছেন। করতেই পারেন। তাহলে সুরের মিল? কোথায় এবং কিভাবে? 

    এইবার একটু গানের কথাগুলো পড়ে ফেলা যাক।  
     
    Way down upon the Swanee River,
    Far, far away.
    That's where my heart is yearning ever,
    Home where the old folks stay.
    All up and down the whole creation ,
    Sadly I roam.
    I'm a still a-longin' for the old plantation,
    Oh, for the old folks at home.
     
    গানের কথার 'অল আপ অ্যান্ড' থেকে 'স্যাডলি আই রোম'.পর্যন্ত অংশের সুরটা এরকম ঃ 
    নি র্সা র্রে র্রে । পা ধা পা র্সা । ধা পা মা ধা পা । গাসা গারে গারে । সা র্সা ধা র্সা । পা গাসা রে সা ।

    পঞ্চম-ধৈবত থেকে নিষাদ ছুঁয়ে তারসপ্তকের সা, মধ্যম-ধৈবত থেকে পঞ্চমে আসা এবং গান্ধার-রেখাব থেকে মূল সা-তে ফেরা। এই একই কাঠামোয় পথের পাঁচালীর থিম মিউজিকের সুর, অলোকনাথ দে-র বাঁশিতে মূল বাদন এবং সিনেমার ফাঁকে ফাঁকে রবিশঙ্করের সেতারে বাজে ঃ 
    পা ধা র্সা । নি পা ধা । মা ধা পা । মা পা গা । রে পা মা গা সা রে সা । 

    দুটো ফ্রেজেই পঞ্চম-ধৈবত থেকে একলাফে তারার সা-য় যাওয়া; নিচে নেমে মা-ধা-পা কম্বিনেশন করে ক্রমে মূল সা-তে নামায় হচ্ছে দুই সুরের মিল (পার্থক্যও আছে)। যাঁরা পড়ছেন তাঁদের সুবিধার জন্য লেখার শেষে ইংরেজি গান ও থিম মিউজিক, দুয়েরই ইউটিউব লিঙ্ক দেওয়া থাকবে। 

    এই মিলের কারণ খুঁজতে গেলে অশোক রুদ্র মশাইয়ের কথা ধার করে বলতে হয় - এই দুই সুরে যে মিল আছে, তেমন মিল দুনিয়ার হাজার গানের সুরে আছে। কাজেই এখান থেকে দেখতে গেলে গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চূড়ান্ত। 

    মিলটা আসলে দর্শনের ! 

    গানের কথাগুলো আরেকবার পড়ে নিন বরং, বাংলা মানে করলে দাঁড়াচ্ছে - বহুদূরে, অনেক দূরে সোয়ানী নদীর তীর। সেখানে আমার ঘরের লোকজন আছেন, ওই জায়গার জন্য আমার হৃদয় কাঁদে। সারা বিশ্বসৃষ্টি ঘুরে বেড়াই বুকে দুঃখ নিয়ে, কিন্তু তবু ওই জায়গা ও আপন লোকজনের জন্য প্রাণ কাঁদে। 

    এই গানের প্রসঙ্গে ফস্টারের জীবনীলেখক জোআন অ'কনেল খুব ভালো কিছু কথা বলে ফেলেছেন ঃ - 

    That the greatest home or travel song (এই গানটি) was written by a man who had lost his home and spent much of his youth wandering should come no surprise. "Roaming" and "home" were central themes in Foster's ... song , and the experience was understood intuitively by many in his generation for whom movement was seemingly constant and home was an unattainable quest... "Roaming", for instance, could be an all-encompassing metaphor for an existential journey toward self-realization, the search for moral perfection, security, happiness, social standing, or even freedom. And "home" could be an actual physical structure or that sense of wholeness, belonging and love that all people are seeking" [ The Life and Songs of Stephen Foster; Chapter 9, ১৩১ পৃ ] 

    অর্থাৎ ছোটবেলাতেই ফস্টার বাড়ির গণ্ডি ছেড়ে পা দিয়েছিলেন বড়ো জগতে, যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে ঘুরে বেড়িয়ে। রোমিং বা ঘুরে বেড়ানো (ছোট করে বললে যাত্রা) যেন আত্ম-উপলব্ধির পথ আর হোম বা ঘর হচ্ছে সমস্ত ইচ্ছাপূরণের রূপক। থামার উপায় নেই, এগিয়ে যেতে হবে, সারা জগত ঘুরতে হবে তবু মনে পড়বে নদীর ধারের বাড়ি আর পরিচিত লোকজনের কথা। 

    অপুর সঙ্গে কি মিল পাওয়া যাচ্ছে? এ তো সেই নিশ্চিন্দিপুরের বাড়ি, ছোট অপুর বেড়িয়ে পড়া, তারপর পথের দেবতার কাছে কান্নাকাটি এবং জবাবে দেবতার সেই অনির্বাণ বীণায় অনন্ত আকাশের কথা। অপুর স্রষ্টা বিভূতিভূষণের জীবনের ঘটনাসমূহও এই প্রসঙ্গে মনে পড়বে। অপুর মধ্যে স্বয়ং লেখকও আছেন প্রচ্ছন্ন বা প্রকট হয়ে। 

    আসল কথা, দেশ-কালের পার্থক্য থাকলেও ফস্টার ও বিভূতিভূষণ চালিত হয়েছেন একই মানসিকতার দ্বারা। উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র; সত্যজিতের সিনেমার রাশ দেখে উদ্বুদ্ধ রবিশঙ্কর যে সুর করলেন, তাতে মূল দর্শনের সাদৃশ্যেই  ফ্রেজের স্বরসমষ্টি কিছুটা হলেও মিললো ফস্টারের সঙ্গে। একই মনোভাব দ্বারা চালিত হলে এক্মাপ্রেশনের মাধ্যমে কিছু প্রভাব তো পড়েই।

    দেশবিদেশের প্রেমের কবিতায় সেই তো একই বক্তব্য। আসলে মিল দর্শনের।

    রবিশঙ্কর যখন এই থিমের সুর করেছিলেন, তখন ভাবনায় ফস্টারের থেকে খুব আলাদা ছিলেন না। সেটা তো টোকা নয়। বিষয়ের মিল। বক্তব্য। 

    ঋত্বিক এই দিকটা দেখেন নি, তাহলে হয়তো বুঝতেন কেন সাদৃশ্য। রবিশঙ্কর তাঁর ব্যাপ্ত জীবনে তালিম ছাড়াও হাজারো রকম গান শুনেছেন, সেই তালিকায় ফস্টারের গান ছিলো কিনা তা নিয়ে হাইপোথিটিক মন্তব্য করা অর্থহীন। কিন্তু দুই সময়ের পার্থক্য মেনেও এই সাধারণ বা কমন ফ্যাক্টরের জন্য চার শিল্পী একসঙ্গে গেঁথে আছেন। এটা নিয়ে অবশ্য খুব নাড়াঘাঁটা হয় না।  

    নাড়াঘাঁটা হয় না বলেই বিতর্ক হয় নি। একে গানবাজনা লোকে যে যার মতো বোঝে। সিনেমাও তাই। আজকের যুগ হলে খবরে খবরে অনলাইন পোর্টাল জ্বলতো - রবিশঙ্কর সম্পর্কে এ কী বললেন ঋত্বিক ! ইত্যাদি ইত্যাদি। দুই ভক্তকূলভাগ হয়ে কবির লড়াই শুরু হতো। কমেন্টে, মিমে, সিরিয়াস পোস্টে ছেয়ে যেতো।
     
    সেই ছেঁদো বিতর্ক বাদ দিলেও এই বিষয়ে বিতর্কের সম্ভাবনা থেকে যায়; বিষয়ের দর্শনের মিল থেকে কি ফাইন আর্ট, বিশেষ করে সঙ্গীতে সুর ও কথায় প্রভাব পড়ে? হলে কতোটা? না হলেই বা কতোটা ? মানুষের স্বাভাবিক সাঙ্গীতিক বোধ নিয়েও কাজের অবকাশ আছে। 

    সুস্থ তর্ক উঠতেই পারে। এই নিবন্ধে কিছু ব্যক্তিগত চিন্তা ভাগ করে নেওয়া গেলো। এইটুকুই। 

    খারাপ লাগে রবিশঙ্করের জন্য; প্রায় নীরবে শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেন। দু''চারটে ক্রোড়পত্র, হাতে গোনা বিশেষ সংখ্যা। ইদানিং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিলায়েত খাঁ-র পাশাপাশি রাখতেও অনেক ওজর-আপত্তি। যাক গে, সেসব অন্য প্রসঙ্গ। পরে কথা বলা যাবে। 

    বিঃ দ্রঃ - এই লেখাটি ছোট আকারে গত বছর বিচিত্রপত্র শারদীয়া প্রবন্ধবার্ষিকী (১৪২৮)-তে বেরিয়েছিলো। ভাষার খোলনলচে বদলে একটু বড়ো মাপে আবার লিখলাম। 
     
    বই/পত্রপত্রিকা -

    ১। পরিচয়, ৩৫ বর্ষ, পৌষ সংখ্যা, ১৩৭২ বঃ। (পিডিএফ) 
    ২। কথাবার্তা সংগ্রহ, ঋত্বিককুমার ঘটক, সঃ- পার্থ মুখোপাধ্যায়, প্রতিভাস , ২০১৯
    ৩। The Apu Trilogy : Making of an Epic, Andrew Robinson, I.B. Tauris, 2011
    ৪। The Life and Songs of Stephen Foster, JoAnne O'Connell, Rowman & Littlefield, 2016
    ৫। My Years with Apu - Satyajit Ray; Penguin; 1994 
    ৬। সত্যজিৎ ঃ জীবন আর শিল্প; সম্পাদনা - সুব্রত রুদ্র; প্রতিভাস; ২০২০ 
    ৭। পথের পাঁচালী; সৃজনের দুইমুখ; সম্পাদনা - সুধীর চক্রবর্তী ও দেবাশিস মুখোপাধ্যায়; পত্রলেখা ,২০১৭
     
    পরিশিষ্ট - দুই ইউটিউব লিঙ্ক 

    ১। ওল্ড ফোকস অ্যাট হোম - 
     


    ২। পথের পাঁচালী র থিম মিউজিক - 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৯:৩৪511495
  • এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো। সঙ্গীতের খুঁটিনাটি বা তত্ত্ব বুঝি না, কিন্তু যুক্তিসঙ্গত, আর পাঁচটা গান শুনে ফেললাম।
    তার ওপর সোয়ানী নদীর আশপাশ দিয়ে নিত্য যাওয়া আসা আটলান্টা গেলেই, সোয়ানী নদীর এদিক ওদিক নিয়ে একটু খুঁজে পেতে পড়তে হবে।

    "বিষয়ের দর্শনের মিল থেকে কি ফাইন আর্ট , বিশেষ করে সঙ্গীতে সুর ও কথায় প্রভাব পড়ে ? হলে কতোটা ? না হলেই বা কতোটা ? " - এইটা একটা অতি ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন।

    "খারাপ লাগে রবিশঙ্করের জন্য ; প্রায় নীরবে শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেন। দু''চারটে ক্রোড়পত্র , হাতে গোনা বিশেষ সংখ্যা। ইদানিং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিলায়েত খাঁ-র পাশাপাশি রাখতেও অনেক ওজর-আপত্তি। " - এইটা পড়ে খুব অবাক হলাম, কিন্তু মনে হলো, তাই তো। কিন্তু কন্টেক্সট জানি না, বিস্তারিত লেখা পেলে ভালো লাগবে। আজ থেকে বছর পনেরো আগেও তো তিনি বোধয় অন্যতম সেলিব্রেটেড আন্তর্জাতিক বাঙালী আইকন ছিলেন।
    সাধারন সঙ্গীত রসিকের নাগাল থেকে অবশ্য উনি অনেকটা দূরে চলে গেছিলেন বহুকালই, মঞ্চে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। অভিজাত বহুমূল্য ক্লাব টাব ছাড়া পাওয়া যেত না।
  • উড়নচন্দী | 45.64.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ২১:৫০511505
  • ভালো লাগলো। ঋত্বিক ঘটক এই নিয়ে কথা বলেছেন জানতাম না, এবার জানলাম। সুযোগ পেলে বাকিদেরও জানাবো। দর্শন বা বক্তব্য নিয়ে যে মিলটার কথা বলেছেন ওটাই লেখার usp। এভাবে সত্যিই ভাবার জায়গা আছে। তবে বিদেশে কিন্তু রবিশঙ্করকে কিছু অনুষ্ঠান, বই বেরোনোর মতো কাজ হয়েছে। নিশ্চই খবর রাখেন। কোভিড এসে গিয়ে আসলে মূল কেলেঙ্কারিটা হয়েছে, নইলে আপনাকে এতো হতাশা নিয়ে শেষ করতেই হতো না। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:41b8:83a3:6bca:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ২২:০৪511506
  • সুন্দর 
  • ক্ষপণক গুপ্ত | 117.194.***.*** | ৩১ আগস্ট ২০২৪ ২১:১৪537048
  • অনেক দেরি করে এখানে এলাম। দু'বছর আগের লেখা। খুব ভালো লাগলো পড়ে,অনেক নতুন চিন্তার খোরাক পেলাম। আপনি কিন্তু এই বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত কাজ করতে পারেন, অনেক সম্ভাবনা আছে। চট করে এইসব ব্যাপারে বঙ্গীয় লেখককূল মাথা ঘামান না। আর এই বিষয়ে যে আপনি পারদর্শী - সেটা পড়েই বোঝা যায়। ধন্যবাদ জানবেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন