এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দূর্গা প্রতিমা গড়তে পতিতালয় মাটি কেন লাগে???

    Manab Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ আগস্ট ২০২২ | ৩৯৬৫ বার পঠিত
  • আমি বারবার বলার চেষ্টা করছি যে ধর্ম আসলে একটা সমাজ বিজ্ঞান। সমাজকে সুস্থ ভাবে চালানোর জন্য বিভিন্ন রীতিনীতি চালু হয়। দূর্গা প্রতিমা বানতে বেশ্যা পল্লীর মাটি লাগে। ভাবুন সমাজ যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড়সম দেওয়াল তুলেছে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের কিছুই জোটে না, তাঁদের ঘরের মাটি দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ!

    পুরুষমানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় তখন সে জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানে ফেলে আসে। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসা বাস করে পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ ও পবিত্র রাখেন। ফলে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি। 

    নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয়, অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করতে হবে। নারী কখনও অপবিত্র হতে পারে না, এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে।

    এবার আসি শ্রাস্ত্র কথায়। দেবীপ্রতিষ্ঠার সময় বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা দিয়ে মহাস্নান, অভিষেক করানোর যে বিধান আছে সেটাকে সাধারণ মানুষ মনে করেন বেশ্যাদ্বার মানে পতিতালয়ের দ্বারের মাটি। বহু ক্ষেত্রে তন্ত্রে শ্লোকে যে আক্ষরিক অর্থ দেখা যায় তা ঠিক নয়। ওগুলোর নিহিত অর্থ অন্য কিছু থাকে।

    বেশ্যা শব্দটি ব্যভিচারিণী কুলটা নারীকে বোঝায় না। কালী, ত্রিপুরা, তারা প্রভৃতি দশমহাবিদ্যা কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক। কুলকুণ্ডলিনী শক্তি বেশ্যা পদবাচ্য, কারণ কুণ্ডলিনী শক্তি মুলাধার থেকে সহস্রার পর্যন্ত্য প্রতিটি চক্রে ষড়শিবের সঙ্গে রমণ করতে করতে সহস্রারে পরমশিবে মিলিত হন। এই শক্তির দশধা প্রকাশ দশমহাবিদ্যা। তাই পূর্ণাভিষিক্ত শক্তি এই মহাবিদ্যাদের আবরণ দেবতার মধ্যে সন্নিবিষ্টা হন বলে তাকে 'বেশ্যা' বলা হয়।

    ‘‘এবংবিধা ভবেদ্দেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে। কুলটাসঙ্গমাদ্দেবী রৌরবং নরকং ব্রজেৎ॥"

    মহানির্ব্বাণ তন্ত্রে দেখা যায় পূর্ণাভিষিক্ত পুরুষ ও পূর্ণাভিষিক্তা স্ত্রী স্থানে চক্রানুষ্ঠান পূর্ব্বক সাধনমার্গের চূড়ান্ত স্তরে উপনীত হন সেই স্থানের মৃত্তিকাকে বেশ‍্যাদ্বার মৃত্তিকা বলে।

    ফলে গুরুগৃহের মাটি বা কোনও সিদ্ধপীঠস্থান বা সতীপীঠের মাটি ব্যবহারের অনুমতি আছে। দশবিধ অনুযায়ী মাটির অভাবে শুধুমাত্র গঙ্গামাটি দিয়েও মায়ের মহাস্নান সম্পন্ন করার বিধান আছে শাস্ত্রে কারণ গঙ্গা সর্ব তীর্থময়ী। 

    পুরাণ কাহিনী মতে, ঋষিবর বিশ্বামিত্র ইন্দ্রের সমান ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন। ইন্দ্ৰ তাকে বিরত করতে স্বর্গের অপ্সরাকে পাঠালেন। কঠোর তপস্যারত বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হল। ইন্দ্রের ইচ্ছায় পূর্ণ কামাতুর বিশ্বামিত্র মেনকার লোভের শিকার হলেন। মেনকা যদিও অষ্টসতীর কেউ নন, তবুও তিনি নারীজাতির প্রতিনিধি। তিনি নিজে কলঙ্কের বিষ ধারণ করেন, তাকে সম্মান জানানোই সামাজিক রীতি। কাজেই, দুর্গা প্রতিমা গড়ার মধ্যে গম্ভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও পতিতালয়ের মাটি - এই চারটি মূল উপাদান থাকে। তবেই মহামায়া নটিরূপে পূজিত হন। মা দুর্গা যেহেতু সমগ্র নারীশক্তির প্রতীক তাই এই রীতিটির মাধ্যমে, পতিতাকেও সমগ্র নারী জাতির এক অঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। তাই দুর্গাপুজোয় অষ্টকন্যার ঘরের মাটি নেবার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি সংগ্রহ করা হয়। এই নব কন্যা হলেন নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিনি, ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা। আর দূর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নারীজাতিকে সম্মান দেখানো তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2401:4900:1f2a:5536:bcc6:e02f:defb:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ০৮:৪৫511475
  • আমি বারবার বলার চেষ্টা করছি, ধর্ম আসলে একটা ঢপের চপ। বাকি গোরুর রচনাটা তার প্রমান। 
  • Amit | 120.22.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ০৮:৫০511476
  • যত ভাটের ন্যাকামি। পতিতা দ্বারের মাটি এতো পবিত্র নিয়ে উলুটপুলুত হ্যাজ নামানো হয়। এদিকে দুর্বার সংস্থা দুর্গাপুজা করতে গেলে তো প্রশাসন , সমাজের কেষ্টবিস্টু দের ফেটে যায়। 
  • nastik | 2405:8100:8000:5ca1::78:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ০৮:৫১511477
  • ধর্ম একটি ঢপের চপ। পতিতার আবার সম্মান! কাঁঠালের আমসত্ত্ব! ফোট বে।
  • পলিটিশিয়ান | 76.174.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ০৯:১৫511478
  • আবছা মনে পড়ছে কোন একটি উপজাতির মধ্যে নাকি গল্প আছে মহিষাসুর ছিলেন তাদের রাজা। মহিষাসুর আর্য্য দেবতাদের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের রাজ্য দখল করে। সম্মুখযুদ্ধে পেরে উঠবে না বলে দেবতারা বারাঙ্গনা দুর্গাকে পাঠায়। দুর্গা মহিষাসুরকে ভুলিয়ে নেশায় বিবশ করে খুন করে। স্যামসন ডেলাইলার গল্পের ভারতীয় চেহারা।
     
    এই গল্প যদি সত্যি হয়, তো পূজায় বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকার ব্যবহার হয়তো বা সেই বারাঙ্গনা দুর্গার স্মৃতি। 
  • গল্প | 2405:8100:8000:5ca1::7a:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১০:৪০511479
  • JNU উপজাতি।
  • Ranjan Roy | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫২511488
  • ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে আদিবাসী দের মধ্যে এই প্রথা রয়েছে।
     
    লেখকের হিসেবে পতিতা দের সম্মান জানাতে ওদের ঘরের মাটি আনতে হয়। বুঝলাম না। 
    তাই যদি হয়,  তাদের সম্মানের সংগে পুজো  করলে হয় না? কুমারী পুজোর মত?
  • পলিটিশিয়ান | 2607:fb91:398:c6c9:e618:9dc8:a6a9:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৮:৫৮511491
  • সম্মান বলিনি। স্মৃতি। দুটো এক জিনিস না।
  • Ranjan Roy | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৯:০৭511492
  • पॉलिटिशियन 
    আপনাকে নয়,  মূল লেখকের বক্তব্য দেখুন।  তাতে এই  মাটি প্রথা নাকি সমাজের পতিত মহিলাদের সম্মান প্রদর্শন!!
    সেই প্রেক্ষিতে বলা।
    শুধু huddur দুর্গা নিয়ে আপনার বক্তব্য के সমর্থন করে ঝাড়খণ্ড বলেছি। 
  • পলিটিশিয়ান | 2607:fb90:284a:26c8:7327:2b67:7208:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৯:১৭511493
  • ভুল বোঝার জন্য দুঃখিত। মাপ করবেন।
  • Ranjan Roy | ২৯ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৫511494
  • আরে,  আমরা এই পাতায় বন্ধু।  ওরকম ভুল আমি দশ বার করি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন