এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০২২ | ৫৪৩৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    বড় সংকটে পড়িয়াছি। আমি জানিতাম বাঙালী ঘোর কালীভক্ত। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আমরা সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এবং অনেকের বিরচিত কালীকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনিয়া আশৈশব লালিত হই। কলিকাতায় এবং তার উপকণ্ঠে ঐতিহ্যশালী মন্দির বলিতে কালীঘাটের কালী মন্দির, বঊবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, ঠনঠনিয়ার কালীবাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির। কোনটি ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন, কোনটির বয়স ৩০০ বছর।

    বাঙালী প্রাচীন কালে ডাকাইতি করিতে, বর্তমান কালে নির্বাচনের অথবা ফুটবলের ময়দানে নামিতে আগে কালীমাতার প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকায়। বাঙালী কম্যুনিস্ট নেতা কংকালীতলার শ্মশানে পূজা দিয়া সগর্বে ঘোষণা করেন যে তিনি একাধারে বাঙালী,  কালীভক্ত এবং কম্যুনিস্ট। স্বাধীনতার সংগ্রামেও বাঙালী কালীমাতার দানবদলনী রূপ দেখিয়া প্রেরণা পায়। চারণকবি মুকুন্দদাস গাহিয়াছেনঃ

    “দানবদলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব রাখিবে বঙ্গে?
    সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান,  থাকে থাকুক প্রাণ,
    যায় যাবে রঙ্গে”।

    ইহার পর ঠাকুর রামকৃষ্ণ আসিয়া মা কালীর সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি সর্বত্র নারীর মধ্যে মা কালীর দরশন করিলেন। এমনকি চিৎপুরের পথে সন্ধ্যায় শান্তিপুরী শাড়ি পরা মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা শোভিতা পুরুষের মন ভুলাইতে ব্যস্ত নারীকে নমস্কার করিয়া সারদা মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাইলেন – ‘তোমার দখিণেশ্বরের শাশুড়ি’ বলিয়া। [1]

    কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নবদ্বীপের রাস্তায় দেয়ালে ঘুঁটে  দেয়ার সময় ঘোমটা খসিয়া পড়া নারীর লজ্জায় জিভ কাটিতে দেখিয়া সেই স্থানে ঐরূপ কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। [2]

    খর্বদেহ পাদুকা পরিহিত কৃশকায় বাঙালী আসলে শক্তি এবং তন্ত্রের সাধক। তাহার দেবী বিশালাক্ষী, নৃমুণ্ডমালিনী, লোলজিহ্বা, এক হস্তে খর্পর, অপর হস্তে ছিন্নমস্তক। তাঁহার ‘নিপতিত পতি শবরূপে পায়। নিগমে তাহার নিগুঢ় না পায়’।

    জনৈকা আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যাপিকা কলিকাতায় কালীমূর্তি দর্শনে উল্লসিত হইয়া খল খল হাসিয়াছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে তিনি  শায়িত শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বুকের উপর পদস্থাপন করিয়া দণ্ডায়মান ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি দেখেন নাই। [3]

    কিন্তু ইদানীং জনৈকা রাজনৈতিক বামা হররমার কালীমূর্তি বিষয়ক মন্তব্যে শুরু হইয়াছে তর্জা ঃ ধূম মচালে! ধূম মচালে!

    আসুন, কিঞ্চিৎ তলাইয়া দেখা যাক – শ্মশানবাসিনী দেবী কালিকার পুজায় আমিষ ও কারণবারির নৈবেদ্য কতদূর ঐতিহ্য সম্মত।

    “মজলো আমার মনভ্রমরা কালীপদ হৃদকমলে”

    বাঙালী বরাবরই কালীতে মজেছে। সারা ভারতের যেখানেই বাঙালীর পা’ পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি কালী মন্দির, সঙ্গে একটি অতিথিশালা, বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি ও ছোটখাট থিয়েটারের স্টেজ। এই হচ্ছে বাঙালীর পরিচয়।

    আমি নিজে কয়েক দশক আগে দিল্লির সবচেয়ে পুরনো কালীবাড়িতে টিকিট কেটে তিনদিন ছিলাম। পনের টাকায় তক্তপোষ, বিছানা, সকালের চা, জলখাবার ও দুবেলা ভাত ডাল মাছের ঝোল। ভাবা যায় !

    হ্যাঁ, কালীবাড়িতে মাছমাংস হয়, সে আপনি যতই নাক সিঁটকান গে’। বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পড়েছি পাঁচবছর। সেখানেও দু’বেলা আমিষ আহার।

    আর এইখানেই শুরু হয়েছে যত ঝামেলা! জনৈক বামা রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ কালীমাতার  আহারের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করায় শুরু হয়েছেঃ  হারে রে রে রে রে! কালীমাতার আমিষ ভোজন! এসব বলিস কী রে!

    গণ্ডগোলের মূলে হল  দুটো পুজোকে — কালীপুজো আর মহালক্ষ্মী পুজো - ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলার রাজনীতি।

    বাঙালীর কালীপুজো বনাম উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো

    নিঃসন্দেহে দুটো পুজোই দীপাবলীর রাতে হয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের দেবীর নাম মহালক্ষ্মী, তিনি আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দেবীর মত ধনদাত্রী।  

    তিনি আমাদের মা কালীর মত লোলজিহ্বা করালবদনী নন। তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ঝোলে না, তিনি নগ্নিকা নন। তাঁর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া, থুড়ি খর্পর,  থাকে না। পাশে  ডাকিনী যোগিনী, শেয়াল কিছুই নেই। তিনি আদৌ শ্মশানচারিণী নন, তাঁর প্রতিমার ধারে কাছে কোন যুদ্ধ বা রক্তারক্তি ব্যাপার নেই। তাঁর আবাস মানুষের গৃহে, সিন্দুকের পাশে।

    উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো করে দোকানদারেরা হালখাতা করে। অর্থাৎ ওদের গত বছরের দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ করে সেই খাতা বন্ধ করে লালশালুতে মোড়া নতুন খাতায় লিখে দেবীর পায়ে ছোঁয়ায়। কিন্তু বাঙালীর হালখাতা যে পয়লা বৈশাখে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে খর্চা আছে।

    কাজেই হিন্দি বলয়ে দেওয়ালির সময় নিরিমিষ খেতে হয়। আর আপনি যদি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে পুজোর বিধি নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চান তাহলে দেখবেন বলা হচ্ছে --

    কালীপুজোর সময় বাড়ির রান্নায় রসুন চলবে না। মাছ-মাংস দূর কী বাত! পাড়ায় ওসবের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

    আর একই বিধান দুর্গাপুজোর সময়েও, নবরাত্রির পুরো ন’দিন ধরে।

    আহা রে! বাঙালী অষ্টমীর দিন নবমীর দিন মাছ, কষা মাংস খাবে না, দশমীর দিন জোড়া ইলিশের দিকে তাকাবে না — এমন অলুক্ষুণে কথা কে কবে শুনেছে! আর সারাবছর কালীঘাটে মায়ের কাছে বলিপ্রদত্ত পশুর মাংস যে আমাদের মহাপ্রসাদ — এসব ভুলে যেতে হবে?

    মন ভাল করতে এবার একটি রামপ্রসাদী শুনুন। এই গানটি ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও বড় পছন্দ।

    ‘এবার কালী তোমায় খাব।
    ডাকিনী যোগিনী দুটা, তরকারি বানায়ে খাব,
    তোমার মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বলে সম্ভার চড়াব’।

    দেবী কালীর উৎপত্তি ও কালী মন্দির নিয়ে দুটি কথা

    দেবী কালী বৈদিক দেবী নন। বস্তুতঃ ঋগবেদে ইন্দ্র এবং অগ্নি হলেন প্রধান দেবতা। প্রায় ১০০০ শ্লোকের ৭০০ শ্লোকই এদের দুজনের মহিমা নিয়ে। বেদ পুরুষ প্রধান। দেবী বলতে উষা ও সরস্বতীকে নিয়ে দু’টি বা তিনটি শ্লোক।  আজকাল একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ তম সূক্তের (৮টি শ্লোক) মধ্যে কালীর উল্লেখ রয়েছে। কথাটি সর্বৈব ভুল। যে কেউ বেদের বই খুলে মিলিয়ে নিতে পারেন — ওই আটটি অনুবাকে দুর্গা বা কালীর কোন উল্লেখ নেই।

    কালীর উৎপত্তি পাওয়া যাবে তন্ত্রে এবং পুরাণকথায়। কালী হলেন দুর্গারই আরেক এবং প্রধান রূপ। দেবীভাগবতে বা আমাদের চণ্ডীপাঠে জানা যাচ্ছে যে শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং রক্তবীজের বধের জন্যে দেবী দুর্গার ক্রোধ উৎপন্ন হলে তাঁর ভ্রূকুটি থেকে ভীষণদর্শনা ভীমা কালীর উৎপত্তি।  যাতে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুর না জন্মায় তাই কালী এবং তাঁর দুই সহচরী ও সঙ্গের শৃগাল রক্ত পান করে নেয়।

    আবার পার্বতী বা সতী যখন নেমতন্ন না পাওয়া স্বামী শিবকে তাঁর শ্বশুরের যজ্ঞে জোর করে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইলেন তখন  তিনি দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে স্বামীকে দশদিকে আটকে দিলেন।

    শক্তিরূপা কালীর দশরূপ হল কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

    কালীর ছিন্নমস্তা রূপের বর্ণনা শুনুন।

    “ষষ্ঠে ছিন্নমস্তারূপ ধারণ করিলে,
    নিজ মুণ্ড ছিন্ন করি করেতে ধরিলে”।

    এবার কল্পনা করুনঃ দেবীর ছিন্নমস্তক  থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত তিনটি ধারায় উপচে পড়ছে, এবং তা পান করছে তাঁর দুই সহচরী এবং তিনি নিজে। কীভাবে? তাঁর বাঁ হাতে ধৃত নিজের ছিন্ন মুণ্ড নিজেরই রক্তধারা পান করছে!

    গড়পড়তা লোক এই দৃশ্যে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালী যে ভীষণের সাধনা করে।

    নজরুল গান বেঁধেছেন “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে দিতে কোল”।

    বিবেকানন্দ কবিতা লিখেছেনঃ
    “লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর, দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
    নাচে তারা উন্মাদ তাণ্ডবে, মৃত্যুরূপা মা আমার আয়”।
    (ইংরেজি থেকে অনুবাদ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

    “স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী”

    সর্বত্র কালী মূর্চ্ছিত শিবের বুকে এক পা তুলে দণ্ডায়মান। ডান পা তুললে দক্ষিণাকালী, বাঁ পা তুললে বামা। তাঁর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাই পুজোয় নৈবেদ্যে লাগে শুধু রক্তজবা নয়, কারণবারি (মদ), মৎস (মাছ), মাংস, মুদ্রা (শস্য, মতান্তরে আরাধনার বিশেষ আসনভঙ্গী)।

    কারণ তন্ত্রসাধনায় আবশ্যক উপকরণ হল পঞ্চ ম’কার। পাঁচটি ম --- মদ্য, মৎস্য, মাংস, মুদ্রা এবং মৈথুন। কালের প্রভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মৈথুন শুধু তন্ত্রমতে সাধনরত সাধক সাধিকার বা ভৈরব-ভৈরবীর জন্যে। এই শতাব্দীতে পশুবলি প্রথা প্রায় অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে কাপালিকদের নরবলি। কিন্তু এসব প্রথা যে ছিল তা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    মনে করুন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় নবকুমারকে বলি দেওয়ার চেষ্টা। কান পেতে শুনুন বিখ্যাত “নেচে নেচে আয় মা শ্যামা” গানটির দ্বিতীয় অন্তরাটি “মা, কোথায় পাব মহিষবলি, কোথায় পাব নরবলি”।

    কিন্তু মা কালীর নিত্যপুজোয় তন্ত্রমতে প্রথম চারটি ম’ আজও লাগে।

    দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র দেখুনঃ

    ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং দক্ষিণকালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং স্বাহা।।

    মন্দিরগুলোঃ

    অধিকাংশ প্রাচীন কালীমন্দিরের সম্বন্ধ সতীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই শক্তিপীঠের সঙ্গে। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে ১৮টি পড়েছে অবিভক্ত  বাংলাদেশে। পশ্চিম এবং পূর্বের ভাগ প্রায় সমান সমান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটিতে দেবীর নৈবেদ্য কী কী দেওয়া হয় দেখুন।

    * তারাপীঠ: একান্নটি পীঠের অন্যতম। আজও দেবীর ভোগে  দেওয়া হয় মাছের মাথা, কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংসের ভোগ, শোল পোড়া।

    * কালীঘাটঃ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যের বিচারে গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের পরেই কালীঘাটের কালীমন্দির। এখানে দেবীর ভোগ হয় মাছের কালিয়া  এবং পাঁঠার মাংসে। এছাড়া রয়েছে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই, ইলিশ চুনো মাছের টক।

    * বেহালার সিদ্ধ্বেশ্বরী কালী মন্দির ৩৫০ বছর পুরনো। এখানে বার্ষিক পুজোয় ভোগে দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, মাছ মাংস, চাটনি, পায়েস।

    * হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দুই শতাব্দী প্রাচীন। এখানে তন্ত্রমতে পুজো হয়, ফলে পঞ্চ মকারের প্রথম চারটি নিত্য ভোগে লাগে।

    * অম্বিকা কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের নিত্যদিনের অন্নভোগে মাছ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি ও ইলিশ।

    * ঘাটশিলার রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে আজও পশুবলি হয়, বলির বেদী ও হাড়িকাঠ প্রকাশ্যে রয়েছে।

    * উত্তরপাড়ার কাছে ভদ্রকালী মন্দির আনুমানিক ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়। সেখানেও তন্ত্রমতে মায়ের নৈবেদ্যে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। মা সারদা ঠাকুরের তিরোধানের পর একটি কালী মন্দির গড়ে তোলেন। তাতে ঠাকুরের প্রিয় জিওল মাছ ভোগ দেওয়া হয়।

    * বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা কালী মন্দিরে পশুবলি হয়, আগে নরবলি হত। আজকাল আঙুল কেটে মায়ের ঠোঁটে রক্ত ছোয়ানো হয়।

    * বোলপুরের কাছে সুরুলের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় বলি দেওয়া হয়; সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো-আখ।

    * বোলপুরের থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলার মহাশ্মশান। সেখানের কালীমন্দির ও একটি শক্তিপীঠ এবং তন্ত্রসাধনার জন্যে বিখ্যাত। ওখানে সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল। সুতরাং তন্ত্রমতে পুজোর সময় কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় তা পাঠকেরাই বুঝে নিন।

    * গুয়াহাটির স্টেশনের কাছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রসাধনার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।  পুরাণকথা অনুসারে এই শক্তিপীঠে সতীর যোনি পড়েছিল। এখানেও দেবীর ভোগে আমিষ দেওয়া হয়। পুজারীরা মনে করেন যে  আষাঢ় মাসে দেবী পার্বতীর মেন্সট্রুয়েশন হয়। তাখন তিন চারদিন ভক্তরা দর্শন করতে পারেন না। ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হয়ে যায়।

    * ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।

    * বাংলাদেশের যশোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বারো ভুঁইঞার অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্য  রায়ের নির্মিত। ওখানে ছাগবলি এখনও হয়। অন্যে পরে কা কথা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্বয়ং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের দু’দিনের সফরে গিয়ে ওই মন্দিরে দেবীদর্শন করে দেবীপ্রতিমার মাথায় মুকুট চড়িয়ে এসেছেন।

    * শেষ করছি রামকৃষ্ণদেবের  সাধনার সঙ্গে যুক্ত বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা বলে। ওখানে এখন বলি বহুদিন বন্ধ। তবে ১৯৬৮-তেও আমি মোষ বলি দেখেছিলাম। এখন দেবীর পুজোয় পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়, মাংস নয়।

    শেষ কথাঃ

    দেখতেই পাচ্ছেন, বৈদিক মন্ত্র এবং তন্ত্রসাধনার পথ সমান্তরাল। তন্ত্রমতের দার্শনিক ভিত্তি হল সাংখ্য দর্শন।  দেবী বা প্রকৃতি হলেন প্রধান এবং সক্রিয়। পুরুষ হলেন নির্বিকার এবং অচেতন। তাই অচেতন শিব বিনা দ্বিধায় শক্তিস্বরূপা কালীর পায়ের নীচে বুক পেতে পড়ে থাকেন।

    তন্ত্রের কালীমাতা  দিগম্বরী; হিন্দি বলয়ের কোন দেবী এমন নন। কোনও দেবীর হাতের খর্পর থেকে রক্ত ঝরে না। আমাদের মিশনের কালীকীর্তনে আছেঃ

             “বসন নাহিক গায়, পদ্মগন্ধে অলি ধায়,
            বামা চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে”।

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেখা যাচ্ছে মহিষাসুর বধের আগে দেবী দুর্গা সুরাপান করছেন এবং মহিষাসুরকে বলছেন “গর্জ গর্জ ক্ষণং মুঢ় মধু  যাবৎ পিবাম্যহং”।

    নে নে, যতক্ষণ মধুপান করছি, ততক্ষণ খুব গর্জন করে নে। তারপর তোর শেষ।
    মধুপানে দেবীর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠল। দেবী তারপর অসুরকে বধ করলেন।

    অর্থাৎ খাওয়াদাওয়া, পান করা নিয়ে আমাদের ধর্মে কোন বিরোধ নেই। এমনকি বৈদিক ধর্মের নিয়মবেত্তা মহর্ষি মনু তাঁর সংহিতায় বিধান দিচ্ছেনঃ ভোজনের যোগ্য পশুমাংস আহারে কোন পাপ হয় না। কারণ ব্রহ্মা খাদক এবং খাদ্য উভয়কেই ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছেন। (৫/৩০, মনুসংহিতা)।

    সেই খাদ্যগুলো কী? মাছ, হরিণ, কুক্কুট ভেড়া, খরগোস এবং বলি দিয়ে পবিত্র করা হয় এমন মাংস। (৩/২৬৭ থেকে ৩/২৭২; মনু সংহিতা)।

    আমার বিবেচনায় হিন্দুধর্ম এবং শাস্ত্র বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্র্যময়। যাঁরা দেওয়ালির রাতে কেবল ধনপ্রাপ্তির জন্যে নিরামিষ ভোগ দিয়ে মহালক্ষ্মীর পুজো করতে চান, তাই করুন। কিন্তু যে বাঙালীরা বারোয়ারি কালীপুজোয় খিচুড়িভোগ ছাড়াও ঘরে বা কালীমন্দিরে মায়ের পুজোয় মাছ-মাংসের নৈবেদ্য চড়াতে চান তাঁদের বাধা দেওয়া কেন?

    সবাইকেই কি জোর করে বাটা কোম্পানির সাত নম্বর মাপের জুতো পরাতে হবে? আপনারাই বলুন।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [1] গবেষক ও সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর প্রবন্ধ, ৪র্থ পিলার্স ডট কম, ৭ম জুলাই, ২০২২
    [2] ঐ
    [3] ঐ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:196c:2f33:778:5634:1232:***:*** | ১০ আগস্ট ২০২৩ ১১:২৪740495
  • ||মীনাক্ষী পঞ্চরত্নম্||

    উদ্যদ্ভানুসহস্রকোটিসদৃশাং কেয়ূরহারোজ্জ্বলাং
    বিম্বোষ্ঠীং স্মিতদন্তপংক্তিরুচিরাং পীতাম্বরালংকৃতাম্।
    বিষ্ণুব্রহ্মসুরেন্দ্রসেবিতপদাং তত্ত্বস্বরূপাং শিবাং
    মীনাক্ষীং প্রণতোঽস্মি সংততমহং কারুণ্যবারাংনিধিম্॥ 

    অর্থাৎ— ভগবতী মীনাক্ষী সহস্রকোটি উদীয়মান সূর্যসদৃশ জ্যোতির্ময়ী, তিনি কেয়ূর-হারাদিতে অলঙ্কারে সমুজ্জ্বলা, তাঁর ওষ্ঠাধর বিম্বফলের ন্যায় আরক্তিম, স্মিতহাস্যের ফলে তাঁর দন্তপংক্তির শোভা ঈষৎ প্রকাশিত, তিনি পীতাম্বরে অলঙ্কৃতা। তাঁর শ্রীপদ বিষ্ণু, ব্রহ্মা, সুরেন্দ্র আদি দেবনায়কগণের সেব্য, তিনি পরমতত্ত্ব-স্বরূপা, কল্যাণময়ী শিবকান্তা। সেই করুণাবারিধি মীনাক্ষীকে আমি সতত প্রণাম করি। 

    মুক্তাহারলসৎকিরীটরুচিরাং পূর্ণেন্দুবক্ত্রপ্রভাং
    শিঞ্জন্নূপুরকিঙ্কিণিমণিধরাং পদ্মপ্রভাভাসুরাম্।
    সর্বাভীষ্টফলপ্রদাং গিরিসুতাং বাণীরমাসেবিতাং
    মীনাক্ষীং প্রণতোঽস্মি সংততমহং কারুণ্যবারাংনিধিম্॥ 

    অর্থাৎ— ভগবতী মীনাক্ষী মুক্তাহার, কিরীট আদি অলঙ্কারে শোভিতা, তাঁর মুখমণ্ডল পূর্ণচন্দ্রসম প্রভায় সমুজ্জ্বল। শব্দায়মান নূপুর, কিঙ্কিণি ও মণিভূষণধারিণী দেবীর অঙ্গকান্তি পদ্মপ্রভার ন্যায় জ্যোতির্ময়ী। তিনি সমস্ত অভীষ্টফলদায়িনী গিরিনন্দিনী, তিনি লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দ্বারা সেবিতা। সেই করুণাবারিধি মীনাক্ষীকে আমি সতত প্রণাম করি। 

    শ্রীবিদ্যাং শিববামভাগনিলয়াং হ্রীঙ্কারমন্ত্রোজ্জ্বলাং
    শ্রীচক্রাঙ্কিত বিন্দুমধ্যবসতিং শ্রীমৎসভানায়কীম্।
    শ্রীমৎষণ্মুখবিঘ্নরাজজননীং শ্রীমজ্জগন্মোহিনীং
    মীনাক্ষীং প্রণতোঽস্মি সংততমহং কারুণ্যবারাংনিধিম্॥ 

    অর্থাৎ— ভগবতী মীনাক্ষী শ্রীবিদ্যা, তিনি ভগবান শিবের বামভাগে বিরাজিতা, হ্রীঙ্কারমন্ত্রোজ্জ্বলা। শ্রীচক্রের বিন্দুমধ্যে তাঁর নিবাস, তিনি শ্রীমৎ-সভানায়িকা। শ্রীষড়ানন কার্তিকেয় ও শ্রীবিঘ্নরাজ গণপতির জননী তিনি। তিনি সম্পূর্ণ জগৎকে মোহনকারিণী শ্রীমহামায়া। সেই করুণাবারিধি মীনাক্ষীকে আমি সতত প্রণাম করি। 

    শ্রীমৎসুন্দরনায়কীং ভয়হরাং জ্ঞানপ্রদাং নির্মলাং
    শ্যামাভাং কমলাসনার্চিতপদাং নারায়ণস্যানুজাম্।
    বীণাবেণুমৃদঙ্গবাদ্যরসিকাং নানাবিধামম্বিকাং
    মীনাক্ষীং প্রণতোঽস্মি সংততমহং কারুণ্যবারাংনিধিম্॥ 

    অর্থাৎ— ভগবতী মীনাক্ষী শ্রীমান সুন্দরেশ্বর নামধেয় পরমশিবের নায়িকা, তিনি ভয়হারিণী, জ্ঞানপ্রদায়িনী, নির্মলা। তিনি শ্যামকান্তিময়ী, কমলাসন ব্রহ্মা তাঁর শ্রীচরণের অর্চনা করেন, তিনি ভগবান নারায়ণের কনিষ্ঠা ভগিনী। তিনি বীণা, বেণু, মৃদঙ্গ আদি নানাবিধ বাদ্যধ্বনির রসোপভোগনিরতা অম্বিকা। সেই করুণাবারিধি মীনাক্ষীকে আমি সতত প্রণাম করি। 

    নানাযোগিমুনীন্দ্রহৃন্নিবসতীং নানার্থসিদ্ধিপ্রদাং
    নানাপুষ্পবিরাজিতাঙ্ঘ্রিযুগলাং নারায়ণেনার্চিতাম্।
    নাদব্রহ্মময়ীং পরাৎপরতরাং নানার্থতত্ত্বাত্মিকাং
    মীনাক্ষীং প্রণতোঽস্মি সংততমহং কারুণ্যবারাংনিধিম্॥ 

    অর্থাৎ— নানাবিধ যোগী ও মুনিরাজগণের হৃদয়ে ভগবতী মীনাক্ষী বাস করেন। তিনি নানাবিধ অর্থ ও সিদ্ধি প্রদান করেন। তাঁর পদযুগলে নানাবিধ পুষ্প বিরাজিত, তিনি শ্রীনারায়ণের দ্বারা অর্চিতা। তিনি সাক্ষাৎ নাদব্রহ্মময়ী, পরাৎপরতরা পরমাশক্তি। নানা অর্থ এবং নানা তত্ত্বব্যাখ্যান দ্বারা তাঁর আত্মমহিমার প্রকাশ। সেই করুণাবারিধি মীনাক্ষীকে আমি সতত প্রণাম করি। 

    (শ্রীমদাদিশঙ্করাচার্য বিরচিত মীনাক্ষীপঞ্চরত্নস্তোত্র)
  • দীপ | 2402:3a80:196c:2f33:778:5634:1232:***:*** | ১০ আগস্ট ২০২৩ ১১:২৯740496
  • শঙ্করাচার্য বিরচিত মীনাক্ষী পঞ্চরত্ন স্তোত্র। অদ্বৈতবাদী সন্ন্যাসীও শক্তিতত্ত্বকে অস্বীকার করতে পারেননি। দার্শনিক ভাবে কখনোই তা  সম্ভব নয়। কারণ ব্রহ্ম‌ই শক্তি, শক্তিই ব্রহ্ম ।
  • দীপ | 2402:3a80:196f:919c:878:5634:1232:***:*** | ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:০০740650
  • যিনি মহাকাল-শক্তিরও উপরে অধিষ্ঠিতা, যিনি সৰ্ব্বতোভদ্রস্বরূপা—নিত্য মঙ্গলময়ী, সেই ভদ্রকালী মা-ই—জীবের সকল ভার স্বহস্তে গ্রহণ করিয়া, জীবকে এইরূপে মূল অজ্ঞানের সন্ধান দিয়া, নিশ্চিন্ততার বিশুদ্ধ আনন্দ উপভোগের সুযোগ প্রদান করেন।

    (ব্রহ্মর্ষি সত্যদেব, 'সাধন-সমর বা দেবী-মাহাত্ম্য')
     
     
    শক্তিসাধকের দৃষ্টিতে শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
  • দীপ | 2402:3a80:196f:919c:878:5634:1232:***:*** | ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:২৭740651
  • তোয়োত্থং করকাদিকং জলময়ং দৃষ্ট্বা যথা নিশ্চয়স্তোয়ত্বেন ভবেদ্গ্রহো মতিমতাং তথ্যং তদৈব ধ্রুবম্।
    ব্রহ্মোত্থং সকলং বিলোক্য মনসা শক্ত্যাত্মকং ব্রহ্মতঃ শক্তিত্বেন বিনিশ্চিতা পুরুষধীঃ পারম্পরা ব্রহ্মণঃ।।'

    (জল থেকে উৎপন্ন করকাদি দর্শন করে তা যেমন বুদ্ধিমান ব্যক্তি দ্বারা জল রূপেই নিশ্চিত ভাবে গৃহীত হয়, তেমনি ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন সকল বস্তুকে শক্ত্যাত্মক দর্শন করার পর  জগৎকারণ ব্রহ্মও শক্তিস্বরূপ বলেই প্রতিপন্ন হন। এইভাবে পুরুষের ধী যখন শক্তিত্ব দ্বারা ব্রহ্মের স্বরূপ বিনিশ্চিত করে, তখনই তা ক্রমে ক্রমে ব্রহ্মতত্ত্ব উপলব্ধ করতে পারে।)
    -মহাভাগবত পুরাণ,অধ্যায় ১, শ্লোক ৩৪
     
    ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নত্ব।
  • দীপ | 2402:3a80:196f:919c:878:5634:1232:***:*** | ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:৩১740652
  • বন্দে মাতরম্
     
    —শ্রীঅনির্বাণ 
     
    মাতৃ আরাধনার মন্ত্র দিয়ে গেছেন শ্রীঅরবিন্দ: 'ওঁ আনন্দময়ী চৈতন্যময়ী সত্যময়ী পরমে'—তুমি ওঙ্কার, তুমি আনন্দময়ী, তুমি চৈতন্যময়ী, তুমি সত্যময়ী হে পরমা (পরম ব্যোমে)। 
     
    এই মন্ত্রে মাকে স্পষ্টতই বলা হয়েছে ব্রহ্মময়ী। ব্রহ্ম পরম পুরুষ, আর ব্রহ্মময়ী মা পরমা প্রকৃতি। ব্রহ্মের পরিচয়—তিনি সৎ চিৎ ও আনন্দ। আর মায়ের পরিচয়—তিনি চৈতন্যময়ী ও সত্যময়ী। দুটি ভাবনার তাৎপর্যে কোনো তফাত নাই, আছে কেবল ক্রমের তফাত এবং মায়ের মন্ত্রে ময়-প্রত্যয় যোগের একটি নিগূঢ় ব্যঞ্জনা। ব্রহ্ম সচ্চিদানন্দ আর মা সচ্চিদানন্দময়ী। ব্রহ্ম পরম পুরুষ, আর মা ব্রহ্মময়ী রূপে তাঁর স্বরূপশক্তি, তাঁর পরমা প্রকৃতি। ব্রহ্ম শক্তিমান আর মা তাঁর শক্তি—শক্তিমান এবং শক্তিতে স্বরূপত কোনো ভেদ নাই, ভেদ আছে কেবল তাঁদের যুগনদ্ধতার ব্যাপ্রিয়ায়।
     
    লক্ষণীয়, ব্রহ্মের সৎ চিৎ আনন্দ স্বরূপকে বিপরীত-ক্রমে বিন্যস্ত করেই শ্রীঅরবিন্দ ব্রহ্মশক্তিরূপিণী মায়ের পরিচয় দিচ্ছেন। এতে দুটি ব্যাপারের ইঙ্গিত আছে।
     
    প্রথমত, ব্রহ্ম আর তাঁর শক্তি অভেদ; দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপারে তাঁদের ক্রিয়াকে ওতপ্রোত উর্দ্ধ-ত্রিকোণ আর অধস্ত্রিকোণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। উর্দ্ধ-ত্রিকোণটি ব্রহ্মের আর অধস্ত্রিকোণটি শক্তির প্রতীক। দুটিকে মিলিয়ে পাই একটি ষট্কোণ-যন্ত্র, যা শ্রীঅরবিন্দ তার দর্শনের প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন।
     
    দ্বিতীয়ত, মাতৃমন্ত্রে আমরা প্রথম পাই আনন্দময়ীকে, তারপর চৈতন্যময়ীকে এবং সবার শেষে সত্যময়ীকে। এই ভাবনা আমাদের সাধন-জীবনের একান্ত অনুকূল।
     
    প্রাকৃত জীবনেও আমরা মাকেই পাই সবার আগে আনন্দময়ী রূপে, প্রেম বা সৌন্দর্য্যের উৎসরূপে। মা-ই আমাদের চিনিয়ে দিলেন পিতাকে। মা আনন্দ, পিতা চৈতন্য বা প্রজ্ঞান, আর দুয়ের অন্যোন্য-সম্মেলনই আমাদের সত্তার সত্য।
     
    মায়ের যে আনন্দ-স্বভাব, তার দুটি বিভাব আছে। একটিতে তিনি বিশ্বের জননী, অপরটিতে তিনি পরম পুরুষের প্রিয়া। তাঁর মহেশ্বরী বা পরমেশ্বরীরূপে এই দুটি বিভাবই সংশ্লিষ্ট। তিনি একাধারে দুর্গা এবং রাধা। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয় শ্রীঅরবিন্দের দুর্গাস্তোত্র এবং শ্রীমায়ের Radha's Prayer। দুটি একই অখণ্ড ভাবনার দ্বিদল প্রকাশ।
     
    মা বিশ্বরূপ জগন্মূর্তি। যুগে-যুগে, ঘরে-ঘরে, দেশে-দেশে তাঁর অবতরণ দেবকার্যের সিদ্ধির জন্য। ভারতবর্ষ আবহমানকাল এই মায়ের উপাসনা করে এসেছে। মাতৃ-সাধনা এদেশের—বিশেষ করে বাংলার—একটি বৈশিষ্ট্য। মাকে আমরা যেমন দেখি গর্ভধারিণীরূপে, তেমনি দেখি দেশমাতৃকারূপে, দেখি বিশ্বজননীরূপে। সর্বত্র একই মা। তাকেই বন্দনা করি 'বন্দে মাতরম্' এই অগ্নিমন্ত্রে, উচ্চারণ করি তাঁরই আরাধনার মন্ত্র:
     
    'ওঁ আনন্দময়ী চৈতন্যময়ী সত্যময়ী পরমে'
     
    —তুমি ওঙ্কার, তুমি আনন্দময়ী, তুমি চৈতন্যময়ী, তুমি সত্যময়ী হে পরমা।
     
    শ্রীঅনির্বাণের দৃষ্টিতে শক্তিতত্ত্ব।
  • দীপ | 42.***.*** | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৭740733
  • দীপ | 2402:3a80:42f8:6c26:778:5634:1232:***:*** | ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫২744026
  • রাত্রিসূক্ত আর দেবীসূক্তের মাঝখানে সপ্তশতীকে স্থাপনা করা হয়েছে। দু'টি বৈদিক সূক্তের মধ্যে পৌরাণিক তত্ত্বের বিন্যাস। সব মিলিয়ে একই রহস্য: অব্যক্ত হতে ব্যক্তের দিকে চেতনার অভিযান। রাত্রিসূক্তে অব্যক্তের বর্ণনা। এইটিরই বিস্তার করা হয়েছে প্রথম চরিত্রের গোড়ায়। উত্তর চরিত্রে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধই হল বিজয়া বা চরম সিদ্ধি। তারই উল্লাস দেবীসূক্তে। যেমন উপনিষদের মহাবাক্য 'সর্বং খন্বিদং ব্রহ্ম', ভাগবতদের মহাবাক্য 'বাসুদেবঃ সর্বম্', তেমনি শাক্তদের মহাবাক্য 'অহমেব জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা' (চণ্ডী)। এই মহাবাক্যে আদ্যাশক্তি গৌরীরূপিণী বাক্-এর যে-উল্লাস, তা-ই বিবৃত হয়েছে দেবীসূক্তে। দেবীসূক্তের শেষটায় বাক্ বলছেন, বিশ্বভুবনকে জড়িয়ে ধ'রে আমিই ঝড়ের মত বয়ে চলেছি, আমি রয়েছি দ্যুলোককে ছাপিয়ে, রয়েছি এই পৃথিবীকে ছাপিয়ে—আপন মহিমায় এই এতখানি হয়ে আমি সম্ভূত হয়েছি। এই শক্তির সাযুজ্যই শিবত্ব, যার সাধনা উপাখ্যানচ্ছলে চণ্ডীতে বর্ণিত হয়েছে।
     
    (শ্রীঅনির্বাণ, 'প্রবচন')
     
    শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
    শাক্তচিন্তায় বৈদিক দেবীসূক্ত ও রাত্রিসূক্তর গুরুত্ব।
    উপনিষদে যিনি ব্রহ্ম, শক্তিতত্ত্বে তিনিই আদ্যাশক্তি, মহামায়া।
  • দীপ | 2402:3a80:42f4:87a9:678:5634:1232:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:১২744029
  • শ্রীশ্রীচণ্ডী বলিলে তাঁহাকেই বুঝায় যিনি বেদের ব্রহ্ম ও পুরাণের মহামায়া; যিনি জ্ঞানীর নিকট ব্রহ্ম, যোগীর নিকট পরমাত্মা ও ভক্তের নিকট ভগবান; যিনি ব্রহ্মশক্তি; যিনি ব্রহ্মময়ী; যিনি অব্যক্তাবস্থায় তুরীয় নির্গুণ ব্রহ্ম, আবার ব্যক্তাবস্থায় ত্রিগুণময়ী প্রকৃতি; যিনি জীবদেহে ব্যষ্টিভাবে আত্মা, আবার সমষ্টিভাবে বিশ্বাত্মা, হিরণ্যগর্ভ ও বিরাট; যিনি নিজের স্বরূপ অক্ষুণ্ণ রাখিয়া সমকালে নির্গুণ, সগুণ, অবতার ও আত্মা; যিনি নিশ্চল অবস্থায় নির্ব্বিকার, নির্ব্বিশেষ ও নিরুপাধি ব্রহ্ম, আবার সচল অবস্থায় সবিকার, সবিশেষ, সৃষ্টিস্থিতিভঙ্গকারিনী ব্রহ্মশক্তি; যিনি সচ্চিদানন্দবিগ্রহ; যিনি জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি—এই তিন অবস্থার সাক্ষী; যিনি অঘটন-ঘটন-পটীয়সী; যিনি জীবদেহে সৰ্ব্বভাবময়ী, সৰ্ব্বপ্রবৃত্তিময়ী, সৰ্ব্ব-ইন্দ্রিয়-স্বরূপিনী, আবার চিৎবস্তু আত্মারূপে সংস্থিতা; যিনি অনন্ত নাম ও রূপ ধারণ করিয়া জড় ও চিৎ স্বরূপে প্রকাশিতা; যিনি ভক্তগণকে বরাভয়দান ও অভক্তগণকে মরণ-ভীতি প্রদান করেন; যিনি ভক্তগণকে সমকালে ভোগ ও মোক্ষ প্রদান করেন; যিনি লীলাময়ী; যিনি অবিদ্যা-মূৰ্ত্তিতে জীবকে সংসারে বদ্ধ করেন, ভোগে আসক্ত করেন, আবার বিদ্যামূর্তিতে বদ্ধজীবকে আসক্তির বন্ধন হইতে মোচন করেন, এবং তাঁর স্বরূপে অবস্থিতি করান; যিনি তাঁর আশ্রিত ভক্তগণকে মৃত্যুর কবল হইতে উদ্ধার করিয়া অমরত্ব প্রদান করেন বলিয়া মহাকালের সহিত "বিপরীত-রতাতুরা"; যিনি ভক্তগণের অভীষ্ট-পূরণের জন্য অতি সৌম্যমূর্ত্তি হইয়াও প্রয়োজন-মত অতিভীষণমূর্ত্তি ধারণ করিয়া ভক্তগণকে ভীষণ অসুরের অত্যাচার হইতে রক্ষা করেন; যিনি সর্ব্বশক্তি-সমন্বিতা; যিনি "শরণাগত-দীনাৰ্ত্ত পরিত্রাণ-পরায়ণা"; যিনি দেবগণের (বা সাত্ত্বিক ভাবযুক্ত ভক্তগণের) উপকারিনী; যিনি জগতের কল্যাণের জন্য নিত্য হইতে লীলায় অবতরণ করেন; যাঁহার একাংশে অবিদ্যাপাদে সবিকার ভাব, মায়ার খেলা, এবং অপর তিন অংশে বিদ্যাপাদে, নির্ব্বিকার ভাব, অপ্রাকৃত পরম ধাম; যিনি নিজে জন্ম-রহিত, কিন্তু যাঁহা হইতে সৃষ্টি-স্থিতি-ভঙ্গ-কাৰ্য্য হইতেছে; যিনি জগতের নিমিত্ত কারণ হইলেও আবার উপাদান-কারণ; যিনি সৎ ও অসৎ, নিত্য ও অনিত‍্য, অবিনশ্বর ও নশ্বর হইয়াও দুর্জ্ঞেয় তত্ত্ব; যাঁহার অপেক্ষা বড় আর কোন বস্তু বা শক্তি বা তত্ত্ব বা সত্ত্বা নাই; যিনি সর্ব্বকারণ-কারণ; যিনি ভক্তগণের প্রয়োজন অনুসারে কখন পুরুষ, কখন নারী, এবং কখন ক্লীব হইয়া আবির্ভূত হন, অথচ যিনি পুরুষ, নারী বা ক্লীব, কিছুই নহেন।
     
    (ব্রহ্মর্ষি সত্যদেব, সাধন-রহস্য)
     
    যিনি ব্রহ্ম, তিনিই আদ্যাশক্তি মহামায়া।
    শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
     
     
  • দীপ | 42.***.*** | ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৬744033
  • "সহসা তোতার মন উজ্জ্বল আলোকে বাঁধিয়া যাইয়া দেখিল- মা, মা, মা, বিশ্বজননী মা, অচিন্ত্যশক্তিরূপিণী মা; জলে মা, স্থলে মা; শরীর মা, মন মা; যন্ত্রণা মা, সুস্থতা মা; জ্ঞান মা, অজ্ঞান মা; জীবন মা, মৃত্যু মা; যাহা কিছু দেখিতেছি, শুনিতেছি, ভাবিতেছি, কল্পনা করিতেছি- সব মা! তিনি হয়কে নয় করিতেছেন, নয়কে হয় করিতেছেন! শরীরের ভিতর যতক্ষণ, ততক্ষণ তিনি ইচ্ছা না করিলে তাঁহার প্রভাব হইতে মুক্ত হইতে কাহারও সাধ্য নাই- মরিবারও কাহারও সামর্থ্য নাই! আবার শরীর-মন-বুদ্ধির পারেও সেই মা- তুরীয়া, নির্গুণা মা! -এতদিন যাঁহাকে ব্রহ্ম বলিয়া উপাসনা করিয়া তোতা প্রাণের ভক্তি-ভালবাসা দিয়া আসিয়াছেন, সেই মা! শিবশক্তি একাধারে হরগৌরী মূর্ত্তিতে অবস্থিত! -ব্রহ্ম ও ব্রহ্মশক্তি অভেদ!" 
     
    (রামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ)
     
    রামকৃষ্ণের বেদান্তসাধনার গুরু তোতাপুরী শঙ্করপন্থী বৈদান্তিক সন্ন্যাসী, পুরী সম্প্রদায়ভুক্ত।
     
    ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ।
    অদ্বৈতবাদী সন্ন্যাসীর চূড়ান্ত উপলব্ধি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন