এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শান্তনীড় রহস্য - ১৪ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ মে ২০২২ | ১০৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ( শেষ পর্ব ) 
    কলতান সস্নেহে নীলেশের কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ' আচ্ছা বাবু .... আখরি বার কব অ্যয়সা হুয়া থা ..... মতলব উও ঈশান বাবু আখরিবার কব উতনা আঁধারেমে আয়া থা ? '
    নীলেশ একটু ভেবে তার শিশুসুলভ সারল্যে বলে দিল ,  ' যিস রাতকো উনকো কাতিল হুয়া থা .... বহুৎ সতানে লাগা ..... ও : '  । কলতান লক্ষ্য করল নীলেশের মুখে আবার ট্রমার ছায়া পড়তে যাচ্ছে। সে নীলেশের সঙ্গে তার আলাপচারিতা আর দীর্ঘায়িত করতে চাইল না ।সে জিজ্ঞাসা করল না ' কিসকো সতানে লাগা '।
    একজন শিশুর ওপর এতটা মানসিক চাপ চাপানো অনৈতিক কাজ । তবে কলতানের মাথা এখন অনেক হাল্কা লাগছে । সে প্রসঙ্গটা একটু ঘুরিয়ে নিল ।  
    সে পকেট থেকে একটা কাগজের মোড়ক বার করল । প্রকাশ আর উমা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কাগজের মোড়ক খুলে দুটো চার ইঞ্চি সাইজের চকচকে নতুন পেরেক বার করল । নীলেশের দিকে এগিয়ে ধরে বলল , ' ক্যায়সা চিজ হ্যায় ইয়ে ? ' 
    ----- ' বাপরে ..... ফেক দো .... বহুৎ খতরনাক..... মেরা ভি দো থা ..... তালাও কি পাস সে মিলা থা । ইধারই ফেকা থা । কেয়া মালুম কৌন উঠাকে লেকে গ্যয়া । '
    ------ ' কাঁহা ফেকা থা ? '
    নীলেশ খুপরির এক দিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, ' ও বাজু .... '
    কলতান বুঝতে পারল এই পেরেক দুটোর কথাই বলছে নীলেশ যে দুটো কুড়িয়ে কলতান নিজের কাছে রেখেছিল । 
    সে আবার বলল, ' উধার তালাও কি পাস অর ভি বহুৎ পড়া হ্যায় ..... '
    নীলেশ পা দোলাতে দোলাতে বলল , ' হাঁ ... ও তো হ্যায় .... মাত উঠানা উসিকো ... '
    ----- ' আচ্ছা ঠিক হ্যায় জি .... ' কলতান হাসতে হাসতে বলে । 
    ----- ' আচ্ছা ..... মজ্জামে রহনা ....' 
    কলতান উঠে হাঁটতে থাকে বিল্ডিং অফিসের দিকে । উমা আর প্রকাশ তাকিয়ে থাকে চুপচাপ। 
     
     কলতান রুটি আর তড়কা খাচ্ছিল বিল্ডিং অফিস-এর ভিতরের ঘরে বসে । এক ভদ্রলোক  বাইরের ঘরে বসে কি সব টাইপ করছিলেন । 
     খেতে খেতে কলতান জিজ্ঞাসা করল, ' দাদা .... এখানে রাত্রে কোন সিকিউরিটি থাকে না ? '
    ভদ্রলোক টাইপ করতে করতে বললেন, ' না এখনও অ্যরেঞ্জ করা যায়নি .... খুব শিগ্গির দুজনকে রিক্রুট করা হবে বলে শুনেছিলাম । 
    এখন তো সব ঘেঁটে গেল। সামনের সপ্তাহে ম্যানেজমেন্ট বডির মিটিং আছে ..... এখন কে যে কখন ঢুকছে ..... কে যে কখন বেরোচ্ছে ....'
    ----- ' তাই তো ..... '
         কলতানের খাওয়া শেষ হতে না হতে তার মোবাইল বেজে উঠল । সে ভাবল , নিশ্চয়ই কুলচার ফোন । তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বার করে দেখল ---- বিকাশ বক্সি কলিং ।
    ----- ' হ্যা .... বলুন স্যার .... কেমন আছেন ? '
    ----- ' আমি তেমন ভাল নেই । শরীর একদম ভাল না । পার তো একদিন এস । অনেকদিন দেখা হয় না । কবে আছি , কবে নেই .... '
    ----- ' ও কথা বলবেন না একদম । কি হয়েছে আপনার ? আমি দু একদিনের মধ্যেই আপনার কাছে যাব ? '
    ----- ' কি আর বলব .... মাল্টিপল প্রবলেম । প্রস্টেট আছে, কিডনি আছে ..... আরও নানারকম .... কি আর বলব ..... ছেলেমেয়েরা অবশ্য খুব করছে ... মিথ্যে কথা বলব না । কিন্তু আমার মন তো পড়ে আছে অন্য জায়গায় ....'
    ----- ' কোথায় ? '
    ----- ' সুনন্দর কথা বলছি । ওকে নিয়েই আমার মত চিন্তা । এমন মায়ায় জড়িয়ে গেছি ..... জান তো ওর একটা ট্রম্যাটিক পাস্ট আছে । সেই মাধবপুরের খালপারের ঘটনাটা ..... আমি চলে গেলে কে যে দেখবে ওকে ...... কোথায় কখন পড়ে থাকে তার ঠিক নেই .... এখন তো শান্তনীড়ে আমার ফ্ল্যাটটায় আছে .... তাই বলছিলাম যে ..... ' 
    ------ ' না না .... মিস্টার বক্সি আপনি একদম চিন্তা করবেন না । সুনুর সঙ্গে একটু আগেই আমার দেখা হয়েছে ..... আমি এখন শান্তনীড়েই আছি ।'
    ------ ' তাই নাকি ? ' বিকাশ বাবুর গলা কিঞ্চিৎ উৎফুল্ল শোনায় ।
    ------ ' হ্যা স্যার .... আমার সঙ্গে কথা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ । ভাল আছে .... নিজের ঘরেই ছিল । আপনি একদম চিন্তা করবেন না । তবে .... ওর পাস্ট ট্রমা ইমপ্যাক্টটা এখনও পারসিস্ট করছে  ..... মাঝে মাঝে ফ্ল্যাশ আউট করে ..... তারপর অবশ্য নিজে থেকেই সাবসাইড করে যায় .....। তবে কয়েক মুহুর্তের জন্য আউট অফ দা ওয়ার্ল্ড হয়ে যায় । ওই সময় যে কোন ফেটাল কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে  .....
    ------ ' অ্যবসোলিউটলি কারেক্ট ...... সেই জন্যই
     তো আমার এত চিন্তা । ওখানে তো আবার একটা মার্ডার কেস হয়েছে । সুনন্দ আবার কেসটায় জড়িয়ে না পড়ে ..... খুব দুশ্চিন্তায় আছি .... '
    ------ ' আমার ইনটুইশান বলছে সুনু এ কেসটার মধ্যে নেই , অন্তত প্রাইমারি সাসপেক্ট হিসেবে ।'
    ----- ' যাক, তুমি আছ বলে তবু ভরসা ....হ্যা যেটা বলছিলাম  ....  যদি পার তো সুনন্দকে সঙ্গে করে নিয়ে একবার এস ।'
    ------ ' নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই যাব ..... এখানকার কেসটা আজ রাত্রের মধ্যেই ফয়সালা হয়ে যাবে আশা করছি .....তারপর যাব আপনার কাছে ।'
    ----- ' ফয়সালা হয়ে যাবে আজ ! '
    ------ ' আই হোপ সো .... এখন দেখা যাক ..... সবই তো আমার ইনটুইশনের ব্যাপার ।'
    ----- ' ওয়েল ওয়েল ... গো অ্যহেড ... অল দা বেস্ট .... '
    ------ ' থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ...' 
      এবার কুলচার ফোন এল । অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিল । এতক্ষণে লাইন পেল । 
    ----- ' কিরে .... কিছু পাওয়া গেল ? '
    কুলচা যা পেয়েছে সমন্যামবুলিজম সম্বন্ধে গুগল সার্চ করে সেটা বিশেষ কিছু নয় । গতানুগতিক তথ্য । এতে তেমন কিছু উপকার হল না কলতানের । 
    ------ ' আচ্ছা ..... ঠিক আছে , তুই রাখ । আজ রাত্রেই বিশেষ কিছু তথ্য পাব হয়ত .... '
    ------ ' কি বললে ? '
    ----- ' না  ... কিছু না ..... গুড নাইট ।' 

         রাত একটা বেজে গেছে । শান্তনীড় ঘুমিয়ে পড়েছে । গৃহস্থ মানুষের ঘুমোবার সময় এখন। কিন্তু সকলেই কি আর ঘুমোতে পারে ! পাঁচিলের ধারে একটা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে । আলো গড়িয়ে আসছে প্রকাশ তিওয়ারির খুপরির পাশ দিয়ে আবাসনের চত্বরে । নিশুত রাতে আবাসনের গাছগুলোয়, ডোবার পাশে বটগাছে কিছু রাতজাগা পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে মাঝে মাঝে । 
       নিশুত রাতে নিশাচর পেঁচার মতো অফিসঘরের বাইরের সিঁড়িতে প্রতীক্ষা করে বসে আছে কলতান গুপ্ত । একটা সম্ভাবনা শুধু , তার জন্য প্রতীক্ষা করে থাকা ।  
    হিসেব অনুযায়ী আজ কিছু ঘটার কথা । প্রণবেশ বলেছিল সাত আটদিন অন্তর হয় । অবশ্য কালকেও হতে পারে । দেখা যাক ..... কলতান ভাবতে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে ভাবতে থাকে এবং রাত সোয়া একটা নাগাদ কলতানের হিসেব মিলে গেল ।
    হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । মৃদু আওয়াজ, কিন্তু নিস্তব্ধ রাতে সেটাই জোরালো শোনায় । 
    বাঁদিকে তাকিয়ে দেখল  ওপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছে প্রণবেশ মুখার্জী । চোখে কেমন ঘোর লেগে আছে । সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রণবেশ ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল । ঘুমের ঘোরে হাঁটা । সামনে তাকিয়ে আছে যেন স্বপ্ন মাখা চোখে । কলতান একটা আড়ালে দাঁড়াল । প্রণবেশ অ্যপার্টমেন্টের গেটের দিকে হাঁটছে । ওদিক থেকে গড়িয়ে আসা আলো পড়েছে প্রণবেশের পায়ে । 
    কলতানের বুকের রক্ত চলকে উঠল অপ্রত্যাশিত চমকে ।  প্রণবেশের পায়ে নতুন ডলফিন স্নিকার ..... আট নম্বর সাইজ । 
    প্রণবেশ একটানা হেঁটে উমাদের ঘরের সামনে 
    গিয়ে দাঁড়াল।  ওরা তিনজনই ঘরের ভিতর ঘুমোচ্ছে। বোধহয় বাইরে খাটিয়া পেতে ঘুমোবার ঝুঁকি নিতে চাইছে না এখন ।
    কলতান একটু ফারাকে দাঁড়িয়ে প্রণবেশকে লক্ষ্য করতে লাগল । খুপরির কাছে একপাশে দাঁড়িয়ে রইল । তারপর দেখে মনে হল হঠাৎ যেন  অদৃশ্য কাউকে পিছন থেকে  বজ্র আঁটুনিতে জড়িয়ে ধরেছে প্রণবেশ। একটু এগিয়ে গেল কলতান । পরিষ্কার দেখতে পেল ক্রোধে উত্তেজনায় তার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে । কলতান এরকম ব্যাপার আগে কখনও দেখা তো দূরের কথা, শোনেওনি । 
    সে স্তম্ভিত বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল । দেখতে থাকল যে , সেই অদৃশ্য মানুষটাকে ( খুব সম্ভবত: বড়সড় চেহারার ) টেনে হিঁচড়ে , বোধহয় একহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ডোবাটার দিকে নিয়ে যেতে লাগল । কলতান নিঃশব্দে অনুসরণ করতে লাগল । ডোবাটার একপাশে ওই কর্ডনড জায়গাটায় বুকে পড়ল । কলতান ভাবল, সর্বনাশ .... এ তো বেআইনি কাজ । যাক, সে পরের ব্যাপার । 
    প্রণবেশের শারীরিক সঞ্চালন দেখে মনে হচ্ছে সে অদৃশ্য লোকটাকে উপুড় করে ফেলে তার কোমর বা পিঠে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছে । মাটি থেকে পাশে পড়ে থাকা একটা চার ইঞ্চি সাইজের নতুন পেরেক তুলে নিল । তারপর অদৃশ্য মানুষটার , অনুমান করা যাচ্ছে পায়ের নীচে ঢুকিয়ে দিতে লাগল । 
    কলতান ভাবতে লাগল সে কি কোন স্বপ্ন দেখছে !  অনেক কিছু অনুমান করলেও এ ধরণের অবিশ্বাস্য ব্যাপার তার কল্পনাতেও ছিল না । তার চোখের সামনে কোন নাট্যমঞ্চের পর্দা উন্মোচিত হতে লাগল এই নীরব রাত্রিবেলায়।
    ফরেনসিক রিপোর্টে ঈশানলালের পোশাকে চন্দনকাঠের গন্ধ আবিষ্কারের কারণ পরিষ্কার হয়ে গেল কলতানের কাছে।
    প্রণবেশ কাজ শেষ  করে ফেলার ভঙ্গীতে দুহাতে তালি মেরে ঝেড়ে ফেলে আবার এদিকে ফিরে  আসছে।
    চোখে কিন্তু সেই ঘোর লাগা দৃষ্টি ।  সে এবার একইরকম আচ্ছন্ন ভঙ্গীতে আবার বিল্ডিং-এর সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগল । মানে, আজকের মতো তার এই আশ্চর্যময় পরিক্রমা শেষ । আবার হয়ত এক সপ্তাহ বাদে .....
    কলতান প্রণবেশের কাছে গেল না । তাকে জাগাবার চেষ্টাও করল না । প্রণবেশ একইরকম আপনভোলা পথিকের মতো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল । 

    কলতান ডোবার কাছে গিয়ে শুকিয়ে যাওয়া ডলফিন স্নিকারের ছাপগুলো পায়ের জুতো দিয়ে এলোমেলো করে মাটিতে মিশিয়ে দিল ।
    তারপর ঘরে ফিরে গিয়ে চুপ করে বসে রইল একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে । অঙ্কটা এইভাবে সাজাতে লাগল ----
    ১) প্রণবেশ মুখার্জীর স্লিপ ওয়াকিং-এর ব্যাপারে তার স্ত্রী অনেকদিন ধরেই অভ্যস্ত । মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেও সে তেমন গা করে না কিংবা তার ঘুম ভাঙে না । সে খুব সম্ভবতঃ  তার এ ক'বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জেনে গেছে যে প্রণবেশের এ আবেশ বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না এবং খুব তাড়াতাড়ি সে নিজে থেকেই ফিরে আসবে । দূরে কোথাও চলে যাওয়ার ঘটনা , মনে হয় এখন পর্যন্ত ঘটেনি । সোলাঙ্কি তাই বিশেষভাবে সতর্ক হবার প্রয়োজন বোধ করেনি । এ ব্যাপারে বোধহয় চিকিৎসা এবং ওষুধ বিশুধ চলছে ।
     ২)  আবেশ শুরু হবার পর প্রণবেশ খালি পায়ে বেরিয়ে যায় না ।  ওই ঘোরের মধ্যেও সে জুতো পরতে ভোলে না ।
    ৩) আবেশের মধ্যে করা কোন কর্ম তার মনে থাকে না । নাহলে  কলতান তাদের ঘরে যাবার পর সে ওরকম প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারত না। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রণবেশ খুনের স্পট রিভিজিট করল কি করে সেই খটকাটা থেকে গেল। 
    ৪) স্লিপ ট্রান্সের মধ্যে করা কোন কাজ অন্তত পরের বার পর্যন্ত প্রণবেশকে পুনরায় চালিত করে । এই আজকে যেমন হল । তবে সেটা জাগ্রত হয় শুধুমাত্র পরবর্তী আবেশের সময় ।
    ৫) অনুমান করা যেতে পারে ট্রান্সের ঘোরের সময়ে দৈহিক শক্তি অনেক বেড়ে যায় কোন বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কারণে । নাহলে প্রণবেশ ঈশানকে কাবু করতে পারত না ।
    ৬) প্রশ্ন হচ্ছে, প্রণবেশ ঈশানকে মারতে গেল কেন । কারণটা মনে হয় সরল । তার অবচেতনে একটা নীরিহ , ভীতু এবং উৎকন্ঠায় ভোগা একটা চরিত্র আছে । সে স্বাভাবিক অবস্থায় কোন প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারত না এটা নিশ্চিৎ । কিন্তু আবেশকালিন অবস্থায় তার কুঁকড়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা সত্ত্বা সেদিন রাতে উমার ওপর অত্যাচারের চেষ্টা দেখে এক মুহুর্তে বিস্ফোরিত হয়ে যায় । তার বোধহয় এমন অনুভূতি হয়েছিল যে অবমাননা তাকেই করা হচ্ছে । আবিষ্ট শক্তি নিয়ে প্রণবেশের আচমকা আক্রমণের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি ঈশান।
       
        রাত তিনটে নাগাদ  দৈহিক ক্লান্তি এবং মানসিক ধকলের ফলে গভীর ঘুম নেমে এল কলতানের চোখে  । 

     সকাল নটা নাগাদ তিনতলায় গিয়ে সুনন্দর ঘরের দরজায় টোকা দিল । সুনন্দ দরজা খুলতে কলতান বলল , ' হ্যা শোন ..... এখন আর ভিতরে যাব না । আমার এখানকার কাজ হয়ে গেছে । তুমি তৈরি হয়ে থেক ।  আমি আধঘন্টার মধ্যে আসছি । তোমাকে নিয়ে বক্সি স্যারের বাড়ি যাব । ওনার শরীর খুব খারাপ ।'
    কথাটা বলে আর দাঁড়াল না কলতান ।
    ডি থ্রি-তে গেল কলতান । সোলাঙ্কি দরজা খুলল । 
    ----- ' আরে .... আসুন আসুন .... গুড মর্নিং ...'
    ------ ' গুড মর্নিং ম্যাডাম । আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি । তাই একবার দেখা করতে এলাম । আর আপনি কোন চিন্তা করবেন না । আমি আপনার ওই সামনের ঘরের দুশমনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি । ঠিক আছে ? '
    ----- ' আপনি চলে যাচ্ছেন ? এখানকার মার্ডার কেসটা ? '
    ----- ' পারলাম না কিছু করতে। অত্যন্ত দু:খিত ।'
    ----- ' কি হবে তাহলে ? '
    ----- ' কি আর হবে ? একটা শয়তান তো কমল পৃথিবীতে । প্রণবেশবাবু নেই ? '
    ----- 'হ্যা আছে .... অফিস যাবে ....তৈরি হচ্ছে '
    ----- ' ও আচ্ছা .... ঠিক আছে । তা'লে আর ডিস্টার্ব করব না । চলি ..... পরে এখানে কখনও এলে দেখা হবে । বৈশাখীদেবীকে চিন্তা করতে বারণ করবেন । আর কোন সমস্যা হবে না । আর হ্যা ... আপনার হাসব্যান্ডকে বলবেন দরকারি কাগজপত্র যেন যেখানে সেখানে পকেট থেকে পড়ে না যায় । সমস্যা হতে পারে ..... '
    ----- ' মানে ? '
    ----- ' না .... এমনি বললাম আর কি ..... উনি একটু আপনভোলা মানুষ তো .... তাই ..... '
    ----- ' হুমম্ ..... '
        প্রায় আধঘন্টা পরে সুনন্দকে নিয়ে আবাসনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল কলতান। দেখল নীলেশ আপনমনে খেলা করছে । উমা স্টোভে কি রান্না চাপিয়েছে । প্রকাশ খাটিয়ায় বসে কিসের হিসেব করছে । কলতান একটু দাঁড়াল । নীলেশের কাছে গিয়ে বলল,  ' মজ্জামে রহনা বাবু ...... ফির আউঙ্গা ..... টাটা .... '
    উমা ঘোমটা টানল মাথায় । প্রকাশ দাঁড়িয়ে উঠল । নীলেশ শরতের রোদ্দুরের মতো হাসতে লাগল ।
    গেট দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল কলতান। বেরিয়ে বলল, ' তোর কাছে দেশলাই আছে ? '
    ----- ' হাঁ  ..... কি দেশলাই .... লাইটার আছে ... এই যে .... '
    কলতান লাইটারটা নিয়ে একপাশে চলে গেল ।
    একটা হলুদ রঙের জুতোর দোকানের বিল পকেট থেকে বার করে লাইটারের আগুন ছুঁইয়ে দিল । সুনু জানে না 'পদার্পণ' -এর ওই হলুদ রঙের বিলটা ছিল ঈশানলাল খুনের মামলায় সবচেয়ে বড় সূত্র ।
        ( সমাপ্ত )
    ************************************************************************************

     

        

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ০৫ মে ২০২২ ১৫:২৬507258
  • দুর্ধর্ষ বড় রহস্য গল্প! দারুণ!! yes
     
    যদিও মানসিক রোগী খুনীকে ধরিয়ে দেওয়াই ভাল ছিল। নইলে পরের বার ঘুমের ঘোরে নিরীহ মানুষ খুন হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।...  আরও লিখুন ​​​
  • Ranjan Roy | ০৫ মে ২০২২ ১৯:২৩507260
  • কাতিল= খুনি, কতল= খুন।
    মজ্জেমে নয়, মজেমে= আনন্দে 
     
    এসব সামানৎ টাইপো। ভাল গল্প।
  • Ranjan Roy | ০৫ মে ২০২২ ১৯:২৩507261
  • কাতিল= খুনি, কতল= খুন।
    মজ্জেমে নয়, মজেমে= আনন্দে 
     
    এসব সামানৎ টাইপো। ভাল গল্প।
  • Mousumi Banerjee | ১৩ মে ২০২২ ২৩:১৭507589
  • প্রণবেশের চিকিৎসা র প্রয়োজন। নাহলে তো অনেক বিপদ ঘটতে পারে।
     
    আর ঐ বিশেষ চন্দনকাঠটির কি হল?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন