এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যদি না ভিতর থেকে জ্বলি...

    Satarupa Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ নভেম্বর ২০২১ | ৮১৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • "যাক অবসাদ, বিষাদ কালো, দীপালিকায় জ্বালাও আলো” আজ দীপাবলী।

    আলোর আরাধনা, অথচ এই আরাধনার সূচনা অন্ধকারের হাত ধরে। বৎসরান্তের এই আলোর উৎসবের ডাকটি কি আসলে কি অশুভ বিনাশেরই ডাক? দীপাবলী কি আলোরই উৎসব? না কালোর? অবসাদ, বিষাদ ঘুচিয়ে শুভ, মঙ্গল ও আলোর আরাধনা, অথচ সে আরাধনা আদপে এক কালো মেয়ের পুজোকে কেন্দ্র করে? আলো ও কালোর দ্বন্দ্ব কি সবসমই শুভ ও অশুভের দ্বন্দ্ব? সুর ও অসুরের চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা? তবে কি কালো শুধুই অন্ধকার? শুধুই অশুভের প্রতীক? অন্ধকার সেই কারণেই আলোর উৎসস্থল, কালো থেকে আলোর দিকে যাত্রাই মানব জীবনের আরাধ্য যাত্রাপথ?

    "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই তো তোমার আলো" বা "আরো আলো, আরো আলো, মোর নয়নে তুমি ঢালো”, রবীন্দ্র কবিতায় আলোর অবস্থান কালোর ঠিক পাশেই, কালোর অবসান ঘটিয়েই আলোর যাত্রা শুরু, অশুভর বিনাশে শুভর পদক্ষেপ। অন্যদিকে জীবনানন্দের অন্ধকার বিলাসী মনটির কাছে এই কালো অন্যরকম, “গভীর অন্ধকারের ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত, আমাকে কেন জাগাতে চাও?” অন্ধকার তার কাছে অনন্ত মৃত্যুর মত, যার স্তনের ভেতর, যোনির ভেতর মিশে থাকতে চেয়েছেন উনি। অন্ধকার মৃত্যু, অন্ধকার বিষণ্ণতা, অন্ধকার ভয়াল সময়। আলো ও কালোর সাথে এই শুভ ও অশুভের যোগাযোগটির বয়সকাল পূর্বনির্ধারিত নয়। হিন্দু পুরাণ যেখানে বলে আলো জ্ঞানের প্রতীক, অন্ধকার অজ্ঞানতার, বাইবেল অনুযায়ী আলো শুভর প্রতীক, অন্ধকার ইভিল এবং সিন এর। এদের অবস্থান পরস্পরের পাশেই। অথচ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় কালোর সাথে যুক্ত ছিল উর্বরতা, শক্তি। যে শক্তি ও উর্বরতার প্রতীক হিসেবেই বৎসরান্তের এই বিশেষ দিনটিতে আমরা সেই কালো মেয়েটির আরাধনাতেই মেতে উঠি, যে মেয়েটি অশুভ বিনাশী অনন্ত নারীশক্তির প্রতিমূর্তি । শ্যামা কালো, কিন্তু তার পায়ের তলার আলোর নাচন নিছক অন্ধকার অবসানের গল্প শোনায় না, অশুভের বিনাশ আর শুভর জয়ের গল্পও নয়, এ কালো আমাদের অন্তরের নিরন্তর শক্তির উৎস, সেই অন্ধকার যা আমাদের চোখ ফোটায়, অন্তরের চোখে জ্বালিয়ে দেয় প্রজ্ঞানতার আলো, এ সেই 'darkness’ যা মানুষকে স্পষ্ট দেখতে সাহায্য করে, এমিলি ডিকিনসন বলেছিলেন “I see thee better in the dark, I do not need a light”, এ কালো আত্মার আলো, মর্মের প্রজ্জ্বলিত আলোকশিখা। সারাজীবন আলো না দেখতে পাওয়া মেয়েটির জন্য যখন Langston Hughes লেখেন “She / in the dark / found light / brighter than many ever see / She / within herself found loveliness / through her souls own mastery …”

    তিনি হেলেন কেলার, অন্ধকারের জগতে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।

    কালো মানে বঞ্চনা, কালো মানে শোষণ, কালো মানে অবহেলা, কালো মানেই আবার শোষকের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা বিশ্বজোড়া প্রতিবাদী মানুষের মিছিল।

    তাই আজকের দীপাবলী হোক আলোর নয়, কালোর উৎসব ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | ০৮ নভেম্বর ২০২১ ১৪:২০500921
  • কালোএবং অন্ধকারকে অশুভ ভাবা আধুনিক অর্গানাইজড ধর্মের আমদানি। পিছনে বর্ণবিদ্বেষের রাজনীতি একে স্ফুলিঙ্গ জোগায়। ইউরোপ বহুদিন অবধি মনে করত ককেশীয় সাদারা অন্যান্য জাতের চেয়ে উন্নততর এবং আফ্রিকানরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট (এখনো অনেকেই সেরকম ভাবে,নিঃসন্দেহে)। 
     
    রবিদাদু বাইনারিতে খেলতেন - কিন্তু উনি বাইনারিকে ব্যবহার করেছেন প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে - অ্যাবসোলিউট অর্থে নয়। কনট্রাস্ট ওনার প্রায় সব গান / কবিতায়,ছবিতে তো অবশ্যই। সেখানে উনি আলো আর কালোকে কোনো চূড়ান্ত ভালো / খারাপের খোপে ভরে ফেলেননি।
     
    মিশর ভারতের মত কৃষিপ্রধান সভ্যতার আদিকালে কালোর উপাসনা বহুল প্রচলিত - যবে থেকে এরা আধুনিক অর্গানাইজড রিলিজিয়নের আওতায় এসেছে,কালোকে ভয় পেতে ঘৃণা করতে শিখেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন