এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • হিংসার অন্ধকারে ধর্মীয় প্যাঁচকের অসহিষ্ণুতার মাঝেও ভরসার তারার আলো অমলিন।

    Saikat Mistry লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৮ অক্টোবর ২০২১ | ১২৬৫ বার পঠিত
  • নিটশের একটা বই পড়তে পড়তে কবি ইয়েটস একটি পাতায় লিখে রেখেছিলেন -' রাতের কোন তারা নেই, আছে বাদুড়, প্যাঁচা আর অপ্রকৃতিস্থ চাঁদ।'  আজকাল আশেপাশে যেমন ঘনিয়ে ওঠা তমসায় বাদুড় আর প্যাঁচার দাপট দেখেছি তাতে একথাই বার বার মনে হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার নানুয়া দীঘির পাড়ে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে তমময় প্রকাশ দেখেছি তাতে ভরসা করার কিছু পাইনি।কয়েকদিন ধরে একদল ধর্মান্ধ মানুষ যেভাবে প্রান্তিক কিছু মানুষের উপর নির্মমতা ও নির্লজ্জ বর্বরতা প্রদর্শন করেছে সেকথা স্মরণ করলে আতঙ্ক জাগে৷ এর মাঝে রয়েছে বাদুড় আর প্যাঁচার দাপট। এই অন্ধকারের মাঝে দু একটা তারার আলো এসে পড়লে বড় ভালো লাগে। এই যেমন সদ্য  একদল ইসলাম ধর্মপ্রাণ মানুষ হাতে হাত রেখে অবশিষ্ট মণ্ডপের সামনে পাহাড়ায় দাঁড়িয়ে রইলেন সে ছবি দেখে বড় ভরসা জাগল। এই ছবি অন্ধকারের মাঝে যেন তারার আলোর মতো। 
     
    সংশয়ী বলবেন, যখন ধর্মীয় উদ্মাদনায় মণ্ডপের পর মণ্ডপ জ্বলছে, রাষ্ট্র শক্তি তাৎক্ষণিক  ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ, ধর্মের আলখাল্লা গায়ে হামকারীদের তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে নিন্দায় সবর হয়েছেন অনেকে - এতসবের পর এই  ভিন্ন ধর্মীদের হাতে হাত রেখে মণ্ডপ রক্ষার ছবি বানিয়ে তোলা, ড্যামেজকন্ট্রোল। এতে ভরসার কি আছে?  কই তখন তো তাঁদের দেখেনি! এ আলো নাকি! জবাবে বলব, অন্ধকারের মাঝে যেটুকু আলো কোথাও খুঁজে পাব, খুঁজে নেব সেখান থেকে ভরসা খোঁজাটা জরুরি।  নিজেদের জন্য জরুরি। রাতের আকাশে থাকনা প্যাঁচক, তবু তারার আলো থাকলে অস্বীকার করব কেন? বরং দুঃসময়ে এই আলোটুকু আমাদের পথ দেখাবে। পথ খুঁজতে সাহায্য করবে। আসলে সবটাই বানানো তো। বানিয়ে তোলা কাপড়ে কেউ রাজা, কেউ ভিখিরি।  হিংসা কেউ বানিয়ে তুলবে, আবার কেউ তাকে প্রশমিত করবে। এটাই তো দস্তুর। বছর কয়েক আগে আসানসোলে যখন ইমাম ছেলেকে হারিয়েছেন, তারপর দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে উঠেছিলেন হিংসায় - ইমামের শান্ত, সংযত ঘোষণা প্রশমিত করেছিল ক্ষোভ আর ঘৃণার আগুন গুলোকে। কুমিল্লা থেকে ছড়িয়ে পড়া হিংসার মুখে যখন গোটা দেশ জ্বলছে তখন এমন একদল মানুষের সংহত প্রত্যয়, অপর সহনাগরিকদের উপাস্য মণ্ডপ রক্ষার ছবিতে ভরসা পাব না!!!
     
    আশিস নন্দী গবেষণায় দেখিয়ছিলে, পৃথিবীর দাঙ্গার ইতিহাসে যারা প্রাণে বেঁচেছেন তার অন্তত চল্লিশ শতাংশ মানুষকে রক্ষা করেছেন বিবাদমান ভিন্মধর্মের কোন না কোন মানুষ। বাংলাদেশ বা ভারতে দাঙ্গা নতুন নয়। দাঙ্গা, ধর্মীয় উত্তেজনা কেন হয়? কোন শক্তি নেপথ্যে কাজ করে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনা সবার কমবেশি জানাও। তবু কোন সূত্র পেলে, বিচার না করে মানুষ যে হিংস্র হয়ে ওঠে - সেই মননের গভীরে আলো পৌঁছাতে বহু শতকের মনীষার কাজ। সেকাজ সমাজ অভ্যন্তরে চলছে, চলবেও।
     
    ১৯৭১ এর স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশটিতে  কোন ধর্মীয় পরিচয় সরকারি ভাবে তেমন করে পরিচিত পায়নি। উগ্র ধর্মবাদীরা ভিতরে ভিতরে ক্রিয়াশীল ছিল বহুকাল। ১৯৭৭  এ ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী এনে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটিকে বাদ দেন৷ ১৯৮৮ তে এরশাদ পাকাপাকি ভাবে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করলেন।তারপর অনেক জল বয়ে গেছে। ২০১০ এ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট  পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। সেই পর্যন্ত। মানুষের মনোভূমিতে যে ধর্মীয় জিগির ডালপালা মেলেছে তাকি আইনের অস্বীকৃতিতে মুছে যায়। এই  যেমন ভারত খাতাকলমে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদেশে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করলেন, চেষ্টা করে চলেছেন - তাতে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখা কঠিন। বিগত কিছু বছর ভারতের শাসকবর্গ যে ধর্মীয় হিংসার বাতাবরণ তৈরি করেছেন,  নানা দাঙ্গার ইতিহাস রচেছেন তাতে আশঙ্কা হয়। এই আশঙ্কার অন্ধকারে যতই বাদুড়, পেঁচার দাপাদাপি মাত্রা ছাড়াক বাংলাদেশের একদল ধর্মীয় মানুষ যেভাবে মণ্ডপ আগলালেন, এরাজ্যে আসানসোলের ইমাম যেমন সংযত গলায় নিরস্ত করলেন হিংসা - সেই আলোটুকু ভরসা হয়ে থাকুক।তমময় অন্ধকারেও এমন তারার আলো আলো দীপান্বিত হয়ে উঠুক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হুরিবাবা | 192.34.***.*** | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫৯735046
  • প্যাঁচকে গুরু ভরে গেল যে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন